যে-জীবন জীবস্রষ্টার শ্রেষ্ঠ দান, তা যে দান করে রাষ্ট্রের মতন একখানা আইডিয়ার জন্যে, সে মানুষ হোক কি পশু, তার সমূহ সম্মান দেখে প্রথমবার আমার যাঁর কথা মনে হয়েছিল, তিনি খোকা। কখনো না দেখা সেই বীরের জন্যে একখানা লালফুল এই লেখাটার শেষে রেখে গেলাম। [...]

প্রসঙ্গ : এদেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু… আমাদের বাড়ির বেড়ালেরা বড় আদরে থাকে। আমার বাড়িউলি তাদের ক্যামোমাইল শ্যাম্পু দিয়ে স্নান করায় সপ্তাহে একদিন, তাদের খাবার আসে ক্যানবন্দি টুনা-স্যামন-হেইক। তাদের নাশতা আসে মুড়কির মতো দেখতে ক্যাটফুডের গুলি, এমনকী তাদের মাতলামোর জন্যেও আছে সুবন্দোবস্ত, ক্যাটনিপ। তাদের বাইরের পায়ে ডোরা, ভেতরের পায়ে ফুটকি, তাদের গালে যাত্রার মাইকেল মধুসূদনের মতো গালপাট্টা। বাহার অন্তহীন। আমার আরেক বাড়ি বাংলাদেশে -- সেখানেও প্রচুর বিড়াল আসতো। এঁটোকাঁটা মাখবার সময় লুকিয়ে একটুকরো মাছ ভাতে মেখে তাদের খেতে দিতে নেমে দেখতাম -- ‘এলোকেশী’র আবার বাচ্চা হবে, ‘বরফজাদী’র নাকে কে যেন দা দিয়ে কোপ দিয়েছে আজ সকালেই -- কাল রাতে এই জখম ছিল না, ‘কালু’ আছে যেই কে সেই, তার গায়ে কেউ গরম ভাতের মাড় ঢেলে দিয়েছিল -- শাদা হয়ে ঘা হয়ে চামড়া প্রায় উঠে যাবার মতো হয়েও সে দিব্যি বেঁচে আছে, ‘এলোকেশী’র ভাগের ভাত থাবড়া মেরে খাবার জন্যে মুখিয়ে আছে।জীবের অজেয় জীবনস্পৃহার ডাকটিকিট হয়ে। প্রসঙ্গ : আমাদের ছেলেটি… পদাশ্রিত নির্দেশক হলো ‘টি’, ‘টা’, ‘খানা’, ‘খানি’; উদাহরণ : আমাদের ছেলেটি নাচে যেন গোপালটি ওবাড়ির ছেলেটা নাচে যেন বাঁদরটা এই ‘নাচে যেন গোপালটি’ মনে পড়লেই আমার মনে হয় আমার ভাইপোর কথা, লেমুরের মতো এক কোল থেকে আরেক কোলে গিয়ে ঝুলছে -- তাকে ‘ক্ষীরের পুতুল’ আর ‘বুড়ো আংলা’ পড়ে শোনানোর জন্যে আছেন আমার মা, জলপাই-তেল ডলে ‘বেলা দশটা বাইজাছে/মদনকুমার ছাআআআন করতে চইলাছে’ গাইবার জন্যে আছেন নানি। আরেক ‘গোপালটি’র মতন চেহারা ক্রিস-এর, ছুরি দেখিয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিল, ফেলথাম জেল-এ একবছর কাটিয়ে এইবার সে বেরিয়ে যাবে। কিশোর অপরাধীদের শোধনাগার থিকথিক করছে বাপে-তাড়ানো মায়ে-খেদানো ছেলেপুলেয়। এদের বেশিরভাগই ‘লিভ-ইন-কেয়ার’ শিশু ছিল। দুঃসহ দারিদ্র্যপীড়নে আমার দেশের লোকে সন্তান বিক্রয় করে, সন্তান পরিত্যাগও করে; এদেশে তো দারিদ্র্য দুঃসহ নয়, এখানে যা আছে তার একরকম আলতো নাম ‘অনটন’ হতে পারে। তাহলে? দারিদ্র্যের চেয়ে গভীর অসুখ -- হয় এই শিশুদের মা-বাপ ভয়ানক মাদকাসক্ত কিংবা শিশুটিকে গ্রহণ-প্রতিপালনে মনোদৈহিকভাবে অক্ষম। মাতৃস্তন জোটেনি তাতে কী, রাষ্ট্রের স্তন্য আছে, সোশ্যাল-সার্ভিস -- এই শিশুকিশোরদের তারাই পালে। কাউন্সিলের জন্যে তারা প্রথম পালনীয় দায়িত্ব। কিন্তু মানুষের সন্তান তো, তার বুঝি রাগ নেই, বিবমিষা নেই, অভিমান নেই! অতএব…

তোমার জন্ম কি তোমার মনে আছে? জন্মস্থানে কি তুমি কখনো সূর্যের আলো দেখেছিলে? [...]

তোমার জন্ম কি তোমার মনে আছে? জন্মস্থানে কি তুমি কখনো সূর্যের আলো দেখেছিলে? নাকি অন্ধকার জলের ভিতরে -- প্রবহমান রক্তের ভিতরে তোমার মা ফিসফিস করে তোমাকে জানিয়েছিল -- তুই হচ্ছিস জলেশ্বর। মহাসাগরে হেন প্রাণী নেই যার সাধ্য তোকে খায়! তোমাদের ছবি আমি প্রথম দেখি ছোট্টবেলায় একটা বইয়ে- বইয়ের নাম ‘দ্য সী’। শেষের দিকের এক পাতায় একখানা খুনে-তিমির ছবি আছে -- যে ফটোগ্রাফার সে ছবি তুলেছিলেন তাঁকে জলের তলে নিয়ে যাবার জন্যে সে হিমশীর্ষ ভেদ করে ভুস করে ভেসে উঠেছে। আমার মনে হয়েছিল এইরকম সুন্দর কালো আর শাদা -- এইরকম হাসকুটে বুদ্ধিমান চেহারা আমি আর দেখিনি। ছয়-টনের বিশাল শরীর বিশালতর সমুদ্রে আছড়ে বেড়াতে তুমি, জলমণ্ডলের বিপুল বালক, তেলতেলে সীলমাছ শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে লেজের বাড়ি দিয়ে মেরে খেতে, কেমন করে শেষ অব্দি অর্লান্ডোর অ্যাকুইরিয়ামে আটকে গেলে? কেমন করে তোমার দিন কাটে -- ‘খেলা দেখে যান বাবু’…করে করে। লোকে একটু আগেও তোমাকে দেখেছে খেলা দেখাতে, ট্রেইনারের হাত থেকে হাসিহাসি মুখে মাছ খেতে। ট্রেইনারকে জলের তলায় টেনে নিয়ে আছড়ে আছড়ে মেরে তুমি কী বোঝাতে চেয়েছিলে -- বোঝাতে চেয়েছিলে এইরকম লাগে স্বাধীনতাহীনতায়? এইরকম গুমরে গুমরে মরছো তুমি ওদের খেলায়।তুমি এইরকম আছো। মানুষ তোমার জ্বালা বোঝে কি? মানুষ তোমাকে আদুরে দেখতে চায় কি? মানুষ কি জানে না তুমি খুনে-তিমি? প্রবৃত্তির কারাগারে বন্দী, মানুষের মতই? তোমার তো মানুষকে চাই না, তার মাংস চাই না, তার হাততালিও না, মানুষের কেন তোমায় চাই? একদিন তুমি ডোডো পাখি আর প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন-এর সঙ্গী হবে, একদিন তুমি আইরিশ এল্ক আর গ্রে-হোয়েল-এর পাশে দাঁড়াবে। কঙ্কাল হয়ে। মিউজিয়ামে নিজের হাড়ের করতাল বাজিয়ে -- ‘খেলা দেখে যান বাবু’…করে করে।

আমরা সত্যই কি জানি 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হবার ইতিহাসটুকু? ইন্টারনেটে সার্চ করুন। এ নিয়ে কোন তথ্যই আপনি পাবেন না। এমনকি আন্তজার্তিক ভাবে পালিত ইউনেস্কোর পোষ্টার লিফলেট কিংবা নিউজ লেটারে কোথাও বাংলাদেশের ১৯৫২ সনের এই আত্মত্যাগের সংবাদটি আপনার চোখে পড়বে না [...]

(লেখাটি একটি ভিন্ন শিরোনামে আমি আমার ব্লগসাইটে পোস্ট করেছি। আশা করব, বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনায় এডমিন লেখাটিকে মুক্তাঙ্গনের নীতির পরিপন্থি বলে বিবেচনা করবেন না। সম্প্রতি মুক্তাঙ্গনের পক্ষ থেকে ওয়ার ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ের দলিলাদি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমি মনে করি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস নিয়ে যারা ভবিষ্যতে গবেষণা করবেন, যারা উইকিপিডিয়াতে কিংবা অন্যান্য জায়গায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাসকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে সন্নিবেশিত করতে চান - তাদের কাছে এই দলিলটি একদিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই আমার বিশ্বাস)। বাঙালি বড় বিস্মৃতিপরায়ণ জাতি। নিজেদের ইতিহাস ভুলে বসে থাকে। কখনো বিকৃতও করে অহর্নিশি। বাঙালি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে, স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে, শেখ মুজিবের অবদান নিয়ে… এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে বাঙালি বিতর্ক করে না। সেই বিস্মৃতিপরায়ণ জাতি হিসেবে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করি, উল্লাসে একে অভিহিত করি 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে, কিন্তু আমরা সত্যই কি জানি একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হবার ইতিহাসটুকু? ইন্টারনেটে সার্চ করুন। এ নিয়ে কোন তথ্যই আপনি পাবেন না। এমনকি আন্তজার্তিক ভাবে পালিত ইউনেস্কোর পোষ্টার লিফলেট কিংবা নিউজ লেটারে কোথাও বাংলাদেশের ১৯৫২ সনের এই আত্মত্যাগের সংবাদটি আপনার চোখে পড়বে না। বাহান্নের কথা নাহয় বাদই দিন। এমনকি আপনি জানবেন না কিভাবে ২১শে ফেব্রুয়ারির এই দিনটি কোন যাদুবলে হঠাৎ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়ে গেল ২০০০ সাল থেকে। জানার কোন উপায় নেই - কারা ছিলো এর পেছনে। ব্যতিক্রম বোধ হয় শুধু এই লেখাটি। হাসান মাহমুদের (ফতেমোল্লার) The Makers of History: International Mother Language Day নামের এই লেখায় ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে কি অক্লান্ত পরিশ্রম করে দু'জন পরবাসী বাঙালি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত করেছিলেন। ছোট্ট একটা লেখা ইংরেজীতে। কিন্তু অসামান্য দলিল। দলিলটি হারিয়ে যাবার আগেই আমার মনে হল একুশে ফেব্রুয়ারির এই দিনে সেই গৌরবময় উপাখ্যানটুকু বাংলায় বয়ান করা যাক। বিগত নব্বই দশকের শেষ দিক। সবকিছুর পুরোধা ছিলেন রফিক (রফিকুল ইসলাম) নামের এক ক্যানাডা নিবাসী বাঙালি। চেহারা ছবিতে অসাধারাণ কিছু মনে হবে না দেখলে। চিরায়ত বাঙালি চেহারা, আলাদা কোন বিশেষত্ব চোখে মুখে নেই। কিন্তু যে কেউ একটু…

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? ... এও তো আসলে এই ইতিহাসেরই অংশ। সেই গানটির অমর স্রষ্টা আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রতি ওই সূত্রে ভালোবাসারও কমতি নেই আমাদের [...]

ভাষার জন্য আলাদা কোনো মাস থাকতে নেই, ক্ষণও নেই। প্রতিটি মুহূর্তেই মানুষ আসলে ভাষামুখর এক প্রাণী। তবু ফেব্রুয়ারিতেই ভাষার প্রতি ভিন্ন এক আমেজ আমরা অনুভব করি। কারণ এর সাথে সংযুক্ত আছে আমাদের সাংস্কৃতিক এক ইতিহাস। আবার এর সাথে- ‌’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? …’ এও তো আসলে এই ইতিহাসেরই অংশ। সেই গানটির অমর স্রষ্টা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতি ওই সূত্রে ভালোবাসারও কমতি নেই আমাদের। কিন্তু তিনি যখন তার অবস্থান থেকে বিচ্যুত হন বলে আমাদের কখনও কখনও মনে হয়, তখন আমাদের কষ্টের আর শেষ থাকে না। গত ৮-০২-২০১০ খ্রীষ্টাব্দে জাতীয় প্রেসক্লাবে তিনি ফেনীর রাজনীতিবিদ জয়নাল হাজারীর একটা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন! তা তিনি করতেই পারেন। তবে ভাষার এই মাসে এ প্রোগ্রামটি একুশে মেলায় না করে তথায় কেন তারা করলেন, এ প্রশ্ন অবশ্য করাই যায়। যাই হোক, কথা কিন্তু তাও নয়। তিনি তার বক্তব্যে তখন জয়নাল হাজারীকে সন্ত্রাসী বলতে নিষেধ করেন। কারণ তাকে সন্ত্রাসী বলা যায় না! তাকে সন্ত্রাসী বলা বন্ধ করতে হবে। এবং তিনি এও জানান, সাংবাদিক টিপুর উপরও তার কর্তৃক কোনো নির্যাতন করা হয়নি। এর তীব্র প্রতিক্রিয়া যেমন পরবর্তীকালে প্রেসক্লাবে দেখা যায়, তেমনি ‘ফেনী জেলার নির্যাতিত পরিবারবর্গ’-এর পক্ষ থেকে ফেনী প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করা হয় এবং গাফ্ফার চৌধুরীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এখন কথা হচ্ছে, জয়নাল হাজারীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ব্যাপারে সারাদেশেই ব্যাপক প্রচার আছে। তার দলীয় ফোরামে‌ও অদ্যাবধি তিনি বহিষ্কৃত একজন নেতা। তাহলে গাফফার চৌধুরী এমন এক প্রচারণায় কেন নামলেন! তাহলে কি তিনি সন্ত্রাসবাদের আলাদা কোনো রূপরেখা দিতে যাচ্ছেন?! তাও তো হতেই পারে। সন্ত্রাসবাদ, নৈরাজ্যবাদ ইত্যাদির ব্যাপারে পজেটিভ ফিলসফি সম্পর্কেও তো আমরা জানতে পারছি। এক্ষেত্রে জয়নাল হাজারীর মতো বহুল আলোচিত সন্ত্রাসমুখর একজন ব্যক্তির বিষয়ে কোন্ কোন্ জ্ঞান বা কাণ্ডজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তিনি এসব বললেন, তা জানার প্রচণ্ড ইচ্ছা রইলো।

কিশোর-সংশোধনাগারের বাইরে অনন্ত সবুজে চোখ রেখে আমাকে একজন গৃহায়ন ব্যবস্থাপক বলেছিলেন- "আপনি জানেন, যুক্তরাজ্যের জেলখানাগুলিতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ? সব জেলখানায়ই একই চিত্র?” আমি তাতে সংকুচিত হই, আমার চোখে বারবার ধরা পড়তে থাকে- আলজেরিয়ানরা ফিন্সবুরিপার্কের বাসস্টপে মারপিট করছে, সোমালিরা স্টোক নিউয়িংটনে পকেট মারছে [...]

কিশোর-সংশোধনাগারের বাইরে অনন্ত সবুজে চোখ রেখে আমাকে একজন গৃহায়ন ব্যবস্থাপক বলেছিলেন- "আপনি জানেন, যুক্তরাজ্যের জেলখানাগুলিতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ? সব জেলখানায়ই একই চিত্র?” আমি তাতে সংকুচিত হই, আমার চোখে বারবার ধরা পড়তে থাকে- আলজেরিয়ানরা ফিন্সবুরিপার্কের বাসস্টপে মারপিট করছে, সোমালিরা স্টোক নিউয়িংটনে পকেট মারছে, তুর্কি কসাই হ্যারিংগেতে মাংস বিক্রির সময় ওজনে কম দিচ্ছে। আমার অবস্থা কুড়োল হারানো ঐ লোকটার মত হয়, কুড়োল হারানোর পরে তার প্রতিবেশীর ছেলেটার সব গতিবিধি সন্দেহজনক লাগে। ইয়া-দাড়ি (বুলবুল চশমেদার দাড়ি…) আর জোব্বা পরা পাকিস্তানি এক আইটি এক্সপার্ট খিঁচিয়ে ওঠেন, ক্রিশ্চিয়ানরা গাড়ির বুটে লাশ ফেলে রাখলে কোনো অসুবিধা নাই, একটা মুসলিম ছেলে মার্ডার চার্জে ধরা পড়লে সেইটা দুই-ইঞ্চি বড় হেডলাইন এ ছাপা হয়!” আমি মনে মনে বলি, তাইতো! মুসলিমরা কি মানুষ না? তাদের কী নরহত্যা করার অধিকার নাই?তাদের কী নারীধর্ষণের অধিকার নাই (যেখানে জীবজগতে প্রাইমেটদের মধ্যে মনুষ্যনারী ছাড়া কেবল আর একটিমাত্র স্পিসি শারীরবৃত্তীয়ভাবে ধর্ষোপযোগী)? তাদের কী মসজিদে আশ্রয় নেয়া আর্তমানুষকে কচুকাটা করার অধিকার নাই? আছে, সকল পাপে তাদের সম-অধিকার আছে, অতএব সকল শাস্তিতেও। সুমেরীয়-আক্কাদীয়-এসিরীয় এইরকম পাঁচখানা আদি সভ্যতার সকল চিহ্ন গুঁড়িয়ে ফেলবার পরে আমেরিকা আর বৃটেন যখন হাত মুছতে মুছতে জগতের কাছে সাফাই দিতে থাকে, তখন যুক্তরাজ্যের অনেকের অবস্থা আবার কুড়োল ফিরে পাওয়া ঐ লোকটার মত হয়, কুড়োল ফিরে পাবার পরে তার প্রতিবেশীর ছেলেটিকে আর সন্দেহজনক লাগেনা, রীতিমত সজ্জন মনে হয়। কেন লিভিংস্টোন ট্রাফালগার স্কোয়ারে গলা কাঁপিয়ে অসভ্য যুদ্ধকে অভিশম্পাত করেন। আমরা আহা-উহু করি। যেন আমাদের কুড়োলই খোয়া গিয়েছিল, অফেরতযোগ্যভাবে হারিয়ে যায়নি লক্ষলক্ষ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশু, ক্যালাইডোস্কোপের অফেরতযোগ্য নকশার মত। আমার আরেক বন্ধু ভবঘুরেদের আশ্রয়কেন্দ্রে কাজ করেন- হাসতে হাসতে বলেন - “জেলখানায় মুসলিম বেশী কেন হবেনা? একে তো মুসলিমরা স্বল্পপ্রজ একথা শত্তুরও বলতে পারবেনা, তায় খাওয়াদাওয়া ভাল দেয় - উপাসনার জন্যে বারবার সেল থেকে বেরুতে দেয় এইজন্যে জেলে গেলেই লোকে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়।” ধর্মাচরণকে সামনে রেখে আড়ালে প্রাকৃতিক সম্পদ দোহনের এই পন্থা নতুন নয়, এই পন্থার বলি ছিল মায়াসভ্যতার লোকেরা, ইনকারা, রেড ইন্ডিয়ানরা, এখন মুসলমানরা। অ্যাজটেকরা নরবলি দিতে পারে, নরমাংসের স্বাদ নিতে পারে, তা বলে তার জমিন-জল-হাওয়া তার সোনালী সুর্যাস্ত তার পুর্বপুরুষের ভিটা দখল করবার অধিকার আর কারো উপর বর্তায়না…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.