সব মিলিয়ে জেগে উঠুন বিস্মৃতির কৃষ্ণচক্র থেকে তাজউদ্দীন, তাঁর প্রবাসে বসেও বাংলাদেশের সময়মাখা হাতঘড়ি নিয়ে, তাঁর পরিবারের কাছ থেকে দূরে দেশের জন্যে আত্মনিয়োগের চিরকুট নিয়ে, তাঁর সুপ্রিম লিডারের প্রতি নিঃশর্ত সম্মান ও আনুগত্য নিয়ে, তাঁর লক্ষ্যাভিমুখিন দৃঢ়কঠিন সংকল্প নিয়ে, তাঁর ষড়যন্ত্র ছিন্ন করার ক্ষুরধার বুদ্ধি ও মেধা নিয়ে, তাঁর ট্র্যাজিক ভবিষ্যদ্বাণীর অমোঘ ক্ষমতা নিয়ে, তাঁর নিঃস্বার্থ দানের ও অবদানের উদারতম হৃদয় নিয়ে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের প্রজন্মের যে তাঁর কাছ থেকে এখনো অনেক কিছু শেখার আছে এখনো, চিরযুগজন্ম ধরে। [. . .]

অনাগত সন্তানের বা গর্ভজাত শিশু নিয়ে আশা বা শঙ্কাময় ভবিষ্যদ্বাণীর কথা পৌরাণিক, তবে অনাগত শিল্পকর্ম সম্পর্কে পূর্বাহ্ণে জ্ঞাত হলে দুচারটে কথা বলাই যেতে পারে। অনুভূতিটা এক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ অনন্য ও অদ্ভুত। তবে, দেয়ার ইজ অলোয়েজ আ ফর্স্ট টাইম ইন লাইফ। ঠিক মনে নেই আমি সুহানের লেখা আগে পড়ি নাকি দেখি ছেলেটাকে। পাপিষ্ঠ বোলগার হওয়ার সূত্রে তার লেখালেখি পড়া হয়েছে অনেক, এমনকি তার ব্যক্তিগত ব্লগস্পটেও এসেছি ঘুরে। তার সহপাঠীদের ভেতর কেউ কেউ আমার ছাত্র হওয়ায় ছেলেটা কখনো কখনো আমায় ডাকে স্যার, কখনো দাদা। এই দ্বিবাচিক সম্বোধনে ঘুরপাক খেতে খেতে একদিন জেনে যাই, সে একটি ফেসবুক গ্রুপেরও জন্মদাতা, যৌথখামারি হিসেবে। বইপড়ুয়া নামের এই দলটার সাথে আমারও জড়িয়ে আছে অনেক তিক্তমধুর সম্পর্ক, অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা, অনেক স্মৃতিবর্ণিলতা। কিন্তু, সুহানের সাথে সম্পর্কটা বরাবরই মাধুর্য বা সৌহার্দ্যের সীমারেখায় আটকেছে, বাইরে আসে নি বিশেষ। নিজস্ব মতামতে অকুণ্ঠ অথচ বিনয়ী, কৌতূহলী, মেধাবী (আবশ্যিকভাবে দরিদ্র নয়) ও প্রেমিক যুবাটি অনেকেরই প্রিয়মুখ, ধারণা করি। সুহান গল্প লেখে, সুহান ক্রীড়াপ্রেমিক বিধায় খেলা নিয়ে লেখে, একাত্তর টিভিতে ক্রীড়াযোগে সে যোগও দিয়ে তার সহাস্য চেহারা ও বিশ্লেষণ উপস্থাপনের ঈর্ষাঙ্কিত সুযোগ পায়, সুহান বই নিয়ে লেখে। তবে এতোকিছুর ভেতর উজ্জ্বল উপস্থিতি উঠে আসে একাত্তর নিয়ে তার ছোটোগল্পগুলোয়। মুনতাসীর মামুন নাকি ভাবতেন, হুমায়ূনের এক মিসির আলী নিয়ে লেখালেখিগুলোই টিকে যাবে। আমিও ভাবি, সুহান ভবিষ্যতে কী করে বসবে জানি না, তবে তার লেখনিসঞ্চয় হিসেবে এসব ছোটোগল্পগুলো টিকে যাবে এবং অনেকের হৃদয়ে জ্বালিয়ে রাখবে শিখা অনির্বাণ বা নামাবে নায়াগ্রার চাইতেও বেশি দেশপ্রেমের প্রপাত। সুহানকে আমি একাধিকবার অনুরোধ করেছি তার এসব গল্প নিয়ে এবং আরো কিছু বেশি লিখে একটা বই বের করার জন্যে, দেশের বড় কাজ হবে সেটাও। কিন্তু, সে বরাবরই হাসিমুখে এড়িয়ে গেছে তার মুকুটময় ম্যাগনাম ওপুসের কথা তুলে, আমারো কথা গেছে আটকে। এবার এই সুবাদে তাকে আবারো মনে করিয়ে দিলাম সেই গল্পগ্রন্থের প্রস্তাবটি। দীর্ঘদিন ধরে সুহান কাঁধে ব্যাকপ্যাক চাপিয়ে ও হৃদয়ের দাঁতে দাঁত চেপে পথ ও পাথেয় খুঁজে বেড়িয়েছে তার সাহিত্যজগতে অভ্যুদয়ের ও অভ্যুত্থানের গুরুভার ও গুরুত্বপূর্ণ ফসলটি তৈরির কাজে। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে শাহবাগের গণগ্রন্থাগার, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর থেকে তাজউদ্দীন আহমেদ পাঠচক্র, ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে ব্যক্তিগত স্মৃতি, সবখানে…

আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি জন্ম থেকে এ-ভাষায় অভ্যস্ত অন্য অনেক নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্তের মতো যারা জন্মসূত্রে এটি পায় এবং নিজের অজান্তেই এটি ভালোবেসে ফেলে। এ-ভাষায় কথা বলতে গিয়ে, এ-ভাষা নিত্যদিনের নানা কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে, এতে প্রেম-অপ্রেম, দ্রোহ, ক্রোধ, ভালোলাগা, মন্দলাগা ইত্যাদি প্রকাশ করতে গিয়ে কখন যে অন্তর্গত রক্তস্রোতের সাথে মিশে গিয়ে এটা মর্মে পশেছে, তার ইতিহাস বা পুরাণ নিয়ে কপচাই নি কখনো, কারণ, উত্তর নেই। পৃথিবীতে সন্তান জন্ম দিয়েছেন অনেকেই, কিন্তু, মা আমার একজনই, তেমনি মাতৃভূমিও একটাই, আর মাতৃভাষাও। তাই, আমি হাজার ভাষা জানলেও (যদি জানতাম কখনো!) এই একটি ভাষাতেই সাবলীল এবং থাকবোও আমৃত্যু, যেমন মায়ের কাছে আমি (যাকে হারিয়েছি এবং হারিয়েছি সে-আশ্রয়)। এই বাংলা ভাষায় সচ্ছন্দ হওয়ার জন্য, বাংলা আমৃত্যু উত্তরাধিকার হিসেবে বহন করার জন্মগত দুষ্টির জন্য, বাংলায় মনোভাব প্রকাশ করে সহজ আনন্দ পাওয়ার অক্ষম অপরাধের জন্য আমি আমার শাস্তি চাই, আমার দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড চাই, আমার প্রভূত প্রায়শ্চিত্ত চাই। ছেলেবেলা থেকে, সম্ভবত অন্য বিনোদনের অভাবে এবং একমাত্র সন্তান হওয়ায় আমার মাতাপিতার কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকায়, বই-ই হয়ে ওঠে আমার অবসর কাটানোর একমাত্র মাধ্যম। আজ যখন শুনতে পাই অহরহ বইবিমুখিতার তথ্য এবং দেখতেও পাই চারপাশে, তখন কেমন যেন অবাক লাগে। অথচ, এটাই হয়েছে আজ স্বাভাবিক। দু’টি মলাটের, মাত্র দু’টি মলাটের মাঝখানে একটি পৃথিবী দেখতে পাওয়ার অপার রহস্যের কথা, যা নানা রূপে, নানা রসে, নানা রঙে ধরা দেয় পাঠকের কাছে, তা যে কেউ এড়িয়ে যেতে পারে, তা ভাবাটাই আমার কাছে অবিশ্বাস্য। শিশুসাহিত্য থেকে উত্তরাধুনিক কথাসাহিত্য বা ছড়াপদ্যকবিতা বা প্রবন্ধ, সবকিছুই আমার মনোহরণ করে। যাঁরা লেখেন, তাঁদের প্রতিও শ্রদ্ধানত হই, ভাবি “তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী”। সময় কাটাতে বা মননের ঊর্ধ্বগামিতা অন্বেষণে বা প্রতিক্রিয়াশীলদের বীভৎস ছায়া এড়ানোর বা তাড়ানোর যুদ্ধে আমি সর্বদাই ‘পুস্তকং শরণং গচ্ছামি।’ আর, অবশ্যই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই গ্রন্থটি বা লেখাটি চাই বাংলায়। কারণ, ওটিই যে হৃৎকন্দরে পশে আকুল করে মনপ্রাণ। বাংলা সাহিত্য বা লেখালেখির প্রতি আমার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের জন্য, বাংলা ‘অপাঠ্য সব পাঠ্য’ পেলে তাতে মনপ্রাণ ঢেলে দেওয়ার জন্য, নিরন্তর বাংলায় অন্যদের লেখা পড়তে চাওয়ার নেহাৎ নগণ্য অথচ, ব্যক্তিগতভাবে তীব্র অলজ্জ বাসনা পোষণ করার জন্য আমি আমার…

আজ সুন্দরবন দিবস। পত্রিকায় এর বিবরণ দেখলাম কিছুটা। স্লোগানটাও সুন্দর। “বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসুন”। ওঃ, আজ তো বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও বটে। জানি, ওটা নেহাৎ বিশ্বায়ন বা বৈশ্যায়নের বাণিজ্যিক সত্য, তবে, অর্ধসত্য [...]

বর্ষা নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রমথ চৌধুরী শুরু করেছিলেন এমনিভাবে, “এমন দিনে কি লিখতে মন যায়?” আজকের এই নববসন্তের দিনে আমারও লিখতে মন পুরো যায় না, কিন্তু, কিছু কথা কইতে মন যায়। আজ সুন্দরবন দিবস। কে বা কারা এই দিবস চালু করেছেন জানি না। পত্রিকায় এর বিবরণ দেখলাম কিছুটা। আর যতটুকু দেখলাম, তাতে মনে হলো মূলত সুন্দরবনের কাছাকাছি জেলাতেই এটা উদযাপিত হয় বা হবে। স্লোগানটাও সুন্দর। “বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসুন”। ওঃ, আজ তো বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও বটে। জানি ভাই, ওটা নেহাৎ বিশ্বায়ন বা বৈশ্যায়নের বাণিজ্যিক সত্য, তবে, অর্ধসত্য। যে-যুবতী বা যুবক আজ অপেক্ষায় আছে একটি কথার দ্বিধাথরথরচূড়ে সাতটি অমরাবতী ভর-করতে দেখার বা সেগুলো সৃষ্টি করার, ব্যাকুল হয়ে আছে চিরচঞ্চল কালকে একটি নিমেষের জন্যে থামানোর, উন্মুখ হয়ে আছে মর্ত্যে ধ্রুবতারকাকে ধরে আনতে কিংবা প্রতিজ্ঞা করেছে প্রলয়ের হুমকিও তাকে থামাতে পারবে না, তাদের কাছে নিশ্চয় এর সত্যতা আজি প্রাতে-ওঠা সূর্যের চাইতেও উজ্জ্বল। ভালোবাসা তো সবারই চাই; ওটা ছাড়া বাঙালি আরো সুলভে পায় একটি মাত্র ব্যাপার-উপদেশ। ছোটবেলায় ঘরের লোকেদের ভালোবাসা, আরেকটু বড় হলে তাতে মন ভরে না। তাই যত্রতত্র খুঁজে ফিরি বিপরীত লিঙ্গের (বিরল কেউ-বা সমলিঙ্গেরও) ভালোবাসা। কেউ পায়, কেউ বা হারায়। সুখের জন্যেই তো, নিজের আত্মার সুখ, মানে নিজের সুখ। এই স্বার্থপর সুখের জন্যে অন্যকে কষ্ট দিতেও বাধে না। যাক। কিন্তু, শুধু নারী-পুরুষের প্রেম কেন? বা, ভালোবাসা, যা হুমায়ুন আজাদের ভাষায়, “মাংসের জন্যে মাংসের সোনালি আকাঙ্ক্ষা”? ভালোবাসা কি নেই সেই সন্তানের হৃদয়ে যে মায়ের বা বাবার রোগশয্যার পাশে বিনিদ্র রাত কাটায়, অনারোগ্য ব্যাধি জেনেও কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে অকাতরে? প্রেম কি নেই সেই মা-বাবার বা অন্য কোন আত্মীয়ের বুকে যে এমনিভাবে সন্তানের বা অন্য আত্মীয়ের জন্যে পালন করে একই ধর্ম? সেই বিদেশে পড়ে-থাকা একলা যুবক, যে শিশুসন্তানের মুখ দেখে নি অনেকদিন, প্রতিদিন যার দিনগত দুর্জয় পাপক্ষয়, তার বুকের ভেতর জমে-থাকা অপার প্রেমের ফল্গুধারার হিসেব করে কে? বা, সেই স্বল্প-আয়ের লেখক, যিনি বইমেলায় অনেকদিন ধরে জমানো টাকা একসাথে ব্যয় করে একখানি বই বের করেছেন এবং সমালোচকের শীতল অনীহায় যিনি তুমুল কাঁটায় আচ্ছন্ন, নিজের লেখার প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসার মূল্য কার কাছে তিনি চান?…

ইতিহাসের দীর্ঘতম অধ্যায় ধরে টিকে-থাকা হত্যাকারীর দল, যারা একতাবদ্ধ হয়েছিল ধর্মের নামে, আর শেষমেষ কোথায় যে মিলিয়ে গেল তেমন কোন হদিশ না রেখে, আজ তাদের কথা স্মরণ করতে চাই কিছুটা, শ্রদ্ধায় নয় অবশ্যই, নয় ঘৃণায়ও [...]

(ইহা শুষ্ক এবং নিশ্ছিদ্র ইতিহাস নহে; নিতান্তই ভালোলাগার এবং বিস্মিত হওয়ার কিছু ব্যক্তিগত উপাদান লইয়া ইহা রচিত। ভুলভ্রান্তি পাইলে নিজগুণে মার্জনা করিবেন) ইতিহাসের দীর্ঘতম অধ্যায় ধরে টিকে-থাকা হত্যাকারীর দল, যারা একতাবদ্ধ হয়েছিল ধর্মের নামে, আর শেষমেষ কোথায় যে মিলিয়ে গেল তেমন কোন হদিশ না রেখে, আজ তাদের কথা স্মরণ করতে চাই কিছুটা, শ্রদ্ধায় নয় অবশ্যই, নয় ঘৃণায়ও। নিজেদের ব্র্যান্ডিং করেছিল তারা অসাধারণভাবে, যদিও ওই শব্দের মানেটা নিশ্চয়ই তারা জানতো না। আজকাল যেমন হোন্ডা বলতে বুঝি মটরসাইকেল, কোকা-কোলা বা সংক্ষেপে কোক বললে বুঝি কোমল পানীয় বা প্যাম্পার্স শব্দটা হয়ে উঠেছে বাচ্চাদের ডায়াপারের প্রতিশব্দ, তেমনি তাদের সঙ্ঘটির নাম, তথা নামবাচক বিশেষ্যটি ইতিহাসের পাতায় তো বটেই, একটি টিউটোনিক/ জার্মানিক ভাষাগোষ্ঠীজাত ভাষার শব্দসম্ভার এবং অভিধানে চিরকাল অক্ষয় হয়ে থাকার দাবি নিয়ে রূপ নিয়েছে জাতিবাচক বিশেষ্যে, অর্থও ‘ধর্মীয় গোষ্ঠী’ থেকে হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘আততায়ী’। ভাষাটি ইংরেজি, শব্দটি এ্যাসাসিন (assassin)।ইতিহাসের পাতায়, পরিহাসমূলকভাবেই বোধকরি, গোষ্ঠীটির সাথে এমন দু’জনের নাম জড়িয়ে আছে, একজনের প্রত্যক্ষভাবে, অন্যজনের পরোক্ষভাবে, যাঁদের একজন কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদী এবং গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা, অন্যজন জগদ্ব্যাপী শিক্ষিত লোকেদের কাছে একজন কবি এবং বিজ্ঞানী হিসেবে সুপরিচিত। আর দু’জনের মাঝে যোগসূত্র বেঁধেছিল সেকালের এক অনন্য নগরী, যাকে কবিবরটি প্রিয়ার একটি গালের তিলের বিনিময়ে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন (সাথে আরো একটিকেও অবশ্য)। সমরখন্দ। কবিবর এবং বিজ্ঞানী ওমর খৈয়ামের সুখ্যাত কর্মভূমি। ওমরের জন্ম বস্তুত নিশাপুরে। ‘খৈয়াম’ কথাটা মূলত ‘তাঁবু প্রস্তুতকারী’ বোঝায়। সম্ভবত, ওমরের পিতৃপুরুষ ওই কাজ করতেন, কমপক্ষে তাঁর পিতা ইব্রাহিম, যদিও তিনি নিজে তাঁর চতুষ্পদীতে ওই পদবি নিয়ে বেশ ব্যঙ্গ করেছেন। ধরা হয় মোটামুটি ১০৭২ খ্রিস্টাব্দে ওমর পা রাখেন এই শহরে, যা তখন ত্রানসাজোনিয়া সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। রাজসিংহাসনে তখন তুরুক বংশধর নাসর খান। বলা হয়, ওমরের হাতে সমরখন্দের কাজি আবু তাহের তুলে দেন একটি সাদা পাতার বই, যা কালক্রমে বিশ্বের বহুলপঠিত বইয়ের একটি হয়ে উঠবে। তাই, ওটি পরিচিতই হয়ে উঠেছিল ‘সমরখন্দ পাণ্ডুলিপি’ নামে। মুসলিম সাম্রাজ্যে তখন সর্বাধিক ক্ষমতাধর নৃপতি তুর্কি সেলজুক বংশের অধিপতি আলফ আরসালান, বয়েস যাঁর প্রায় ৩৮, আর যাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত কাবুল থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত। এমনকি পূর্ব রোমের সম্রাট রোমেনাস দাইওজেনুসও হার মেনেছেন তাঁর কাছে, বাইজেন্টাইন সম্রাটও পরাভূত। অথচ, কাছের শহর সমরখন্দ…

কালঃ ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮, সকাল-৯/১০টা। স্থানঃ রাঙামাটির প্রবেশদ্বার-রাজারহাট ইউনিয়নের বনবিভাগের একটি বাংলো। উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের বিষয়ের প্রাগান্তিক পর্বের শিক্ষার্থীরা [..]

কালঃ ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮, সকাল-৯/১০টা। স্থানঃ রাঙামাটির প্রবেশদ্বার-রাজারহাট ইউনিয়নের বনবিভাগের একটি বাংলো। উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের বিষয়ের প্রাগান্তিক পর্বের শিক্ষার্থীরা এবং আমাদের একজন শিক্ষক। তিনি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষককে। তিনি কিছু বক্তব্য রাখবেন আমাদের কাছে একুশ নিয়ে (পদাধিকারবলে, যেহেতু ঐ-বিষয়ে তিনি মনোপলিস্ট: শিক্ষক এবং বাংলার শিক্ষক হিসেবে)। একটা হোয়াইট বোর্ডে আমার এক বন্ধু লিখলো ‌(সম্ভবত) ‘মহান একুশে ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৮’। বললাম, ভুল লিখেছিস। ফেব্রুয়ারি বানানটা হ্রস্ব ই-কার দিয়ে হবে। সে ঠিক করলো বানানটা(খুব সহজে নয়)। অধ্যাপক মহোদয় বেরিয়ে এলেন বক্তৃতা দিতে। প্রথম কথাটাই হলো এরকম, “আমি ভেতর থেকে শুনছিলাম বানান নিয়ে তর্ক হচ্ছে। কেন এমন হবে?‍” মানে, চলুক আগের বানানটা। এরপর আরো বেশ কিছু, নানা কিছু। আমার মাথা লজ্জায় কাটা যাচ্ছিলো, না বানান ভুল (তাঁর ভাষায়) করার জন্যে নয়, তাঁর ভুলটা ধরিয়ে দিতে না-পারার জন্যে। বেশ আহত হয় আমার পৌরুষ সেদিন। বার্নার্ড শ-এর একটা কথা আমি মনে রাখার চেষ্টা করতাম। “যদি কিছু জানো, তাহলে তা এমন করেই জানো, যেন কেউ তা নিয়ে তোমার ভুল ধরতে না পারে” (মানে, মূল কথা এটাই)। তবে, পারি না আর কি সবসময়। যাহোক, এরপর থেকে বেশ উৎসাহ নিয়ে বানান-সংক্রান্ত লেখালেখি পড়তে নেমে পড়ি। যথারীতি জোশটা মাঝপথেই থেমে যায় বিধায় খুব বেশি কিছু সংগ্রহ করে উঠতে পারি নি। তবে, প্রচুর ছাত্র-ছাত্রীদের বাংলা পড়াতে পড়াতে বানান ভুল সম্পর্কে বেশ ভালো একটা ধারণা তৈরি হয়ে গেছে এবং কখনো কখনো ভুল বানান দেখতে দেখতে শুদ্ধ বানান নিয়ে নিজেই বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই (শিব্রাম এমনই এক মাস্টার নিয়ে গল্প লিখেছিলেন যে ‘পৃথিবী’ শব্দের আটরকম বানান দেখে বানানটাই ভুলে গেছে)। তবে, এটুকু বলতে পারি, যেরকম সুনীল ‘প্রথম আলো’-তে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলেছিলেন, “ভুল বানান দেখলে রবির রীতিমত শারীরিক কষ্ট হয়”, তেমনটা না হলেও কাছাকাছি হয়। তাই, শুদ্ধ বানানের খোঁজে থাকি অহরহ। আর জ্ঞানমত ভুল বানান দেখলে শনাক্ত করার চেষ্টা করি। পাশাপাশি এ-ও চেষ্টা করি নিজে আরো জানার ও শেখার। কারণ, এখনো ভুল করি, ভুল লিখি। তাই ঠিক করার এই চলিষ্ণু প্রক্রিয়ায় অন্যদেরও একটু সতর্ক এবং ভ্রান্তিহীন হওয়ার পথে কিছুটা হলেও সহযাত্রী করার জন্যে আমার প্রথম ব্লগটি ‘বাংলা বানান ও…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.