গল্পগুচ্ছের সাথে আমার পরিচয় বাল্যকালে, নীল কাপড়ে বাঁধাই একখানা মোটা বই, গোড়ার দিকে অরুণদা বলে কে একজন আমার বাবার অগ্রজপ্রতিম ভদ্রলোক বাবার বৌভাতে বইখানা উপহার দিয়েছেন -- সেটা বাঁকা বাঁকা হরফে লেখা। অতএব, গল্পগুচ্ছ প্রথমত আমার কাছে ছিল সেই সময়ের চিহ্ন [...]

গল্পগুচ্ছের সাথে আমার পরিচয় বাল্যকালে, নীল কাপড়ে বাঁধাই একখানা মোটা বই, গোড়ার দিকে অরুণদা বলে কে একজন আমার বাবার অগ্রজপ্রতিম ভদ্রলোক বাবার বৌভাতে বইখানা উপহার দিয়েছেন -- সেটা বাঁকা বাঁকা হরফে লেখা। অতএব, গল্পগুচ্ছ প্রথমত আমার কাছে ছিল সেই সময়ের চিহ্ন -- যখন লোকে বিয়েতে বই উপহার দিত। আর সবকিছুকে যেমন মা চিনিয়ে দেন -- ‘ন’ চেনান, ন-এ নদী চেনান… সেইরকম করে আমাদের মা আমাদের গল্পগুচ্ছ চিনিয়েছিলেন। বাইরে ঝুপঝুপ বৃষ্টি, ঘরের কোণে কোণে অন্ধকার আর এই দেয়াল থেকে ঐ দেয়াল অব্দি দড়ি খাটিয়ে ভেজা শাড়ি-কাপড় মেলে দেয়া, কাপড়ের মাড়-আর্দ্রতা-নীল-গুঁড়োসাবানের গন্ধ ঠাসা সেই ঘরে আমাদের দু’পাশে রেখে আম্মা পড়ে শুনিয়েছিলেন -- ‘কাবুলিওয়ালা’ আর ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’। ‘হামি সসুরকে মারিবে’ শুনে কত হেসেছিলাম। আর পদ্মাতীরে সেই কদমফুললোলুপ শিশুর করুণ মৃত্যু আমাকে কত যে কাঁদিয়েছিল। সে তো কেবল শুরু, এই পরিজ্ঞানের শুরু যে আমাদের সাহিত্য শিশুর মৃত্যুতে আকীর্ণ (বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’, ‘পুঁইমাচা’ কিংবা ‘কিন্নরদল’, রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’, শরৎচন্দ্রের ‘পণ্ডিতমশাই’), তারপরে আরেকদিন, আম্মার কাছে বসেই পড়া -- ‘বলাই’। মনে মনে বলাই যে আমার কী আপন, ঘাসিয়াড়া যেদিন আসে, সেদিন তার ‘শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর’, আর আমার বেলায় -- যেদিন কাগজওয়ালা আসে, পুরাতন কাগজ-বই-খাতা ওজন করে কিনে নিয়ে যায় -- এই বৈশ্য আচার আমার দারুণ অপছন্দ। ঘাসফুলের জন্যে -- কন্টিকারির জন্যে বলাইয়ের অপার ভালবাসা আমাকে স্পর্শ করে। তারপরে ক্রমেই ‘ইচ্ছাপূরণ’, ‘অতিথি’ আর ‘ফেল’। আস্তে আস্তে আমার দাঁত সবল হতে শুরু করেছে তখন, আমি নেড়েচেড়ে দেখছি তারাশঙ্করের ‘ধাত্রীদেবতা’ -- “বউ হাসিয়া বলিল -- কার আমার? -- বলিয়া শিবনাথের গায়ে হাসিয়া ঢলিয়া পড়িল। শিবনাথ চট করিয়া তাহার মুখে চুম্বন করিয়া বসিল। নান্তি মুখ মুছতে মুছতে বলল -- কি রকম ভাত-ভাত গন্ধ তোমার মুখে!...”। এর পরে তারাশঙ্করের ছোটগল্পগুলি, বাংলা সাহিত্যের যা চিরকালীন সম্পদ, ‘অগ্রদানি’, ‘না’, ‘তারিনী মাঝি’ এইসব। কিন্তু গল্পগুচ্ছ সেই রাঙামাটির এবড়োখেবড়ো পথের বাইরে, এ যেন ধ্রুপদ, তার তাল-লয় -- তার অবারিত বাক্যপ্রবাহ -- তার ঈষৎ শ্লেষ -- তার ব্যাজস্তুতি এইসব আমাকে ফেলে কখন সামনে চলে যায়, তার নাগাল মেলে না। এত শব্দ আছে বাংলায়, তাদের এমন রঙিন পরিচ্ছদ, তারা এমনি এসে ভেসে যায়? “মাল্যদান পড়, একটু সহজ ভাষায়…

কী বেদনায় ব্যথিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন[...]

কী বেদনায় ব্যথিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমস্ত ব্যবসায়িক নথিপত্র কেন তিনি পুড়ে ফেলেছিলেন, এর আগে এরকম আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দ্বারকানাথের পত্নী দিগম্বরী দেবী – তিনি দ্বারকানাথ ঠাকুর দ্বারা আয়োজিত সামাজিক বিবিধ ভোজসভায় মদ্যমাংসের প্রাচুর্য ও ঠাকুরের নিজের মদ্যমাংস গ্রহণের প্রতিক্রিয়ায় দ্বারকানাথের সাথে সাক্ষাৎসম্পর্ক ত্যাগ করেছিলেন – এরপর থেকে দ্বারকানাথ বৈঠকখানা বাড়িতেই থাকতেন এবং নিজ বাড়ির পরিবর্তে বেলগাছিয়ায় এক বাগানবাড়ি প্রতিষ্ঠা করে ভোজসভা নৃত্যগীত ইত্যাদির আয়োজন করতেন, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তো ধর্মচর্চায় লিপ্ত হয়ে বিষয়কর্ম থেকে দূরেই সরে গিয়েছিলেন, ঠাকুর পরিবারের যাবতীয় আর্থিক প্রতিপত্তির উৎস দ্বারকানাথ কী এমন করেছিলেন যে ঠাকুর পরিবার তাকে এভাবে ভুলতে চেয়েছে, এই যে ১৮৪২এ তিনি প্রথম বিলাতযাত্রা করেছিলেন এবং মহারাণি ভিক্টোরিয়ার অভ্যর্থনা ফ্রান্সের সম্রাট লুই ফিলিপের অভ্যর্থনা এডিনবরা মিউনিসিপ্যালটির মহানাগরিক উপাধি প্রাপ্তি এসবের পরে দেশে ফিরে এসে আবার ১৮৪৫এ বিলাত ফিরে গেলেন, কেন – দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্ত্রীবিয়োগ হয়েছিল ১৮৩৯এ, স্ত্রীর মতো সন্তানেরাও তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল – এসব বিষণ্ণ প্রশ্নের উত্তর আর কখনো পাওয়া সম্ভব নয় – অতলে হারিয়ে গেছেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। সেউত্তরের হয়ত আমাদের আর প্রয়োজনও নেই, ঠাকুর পরিবারের এসব একান্ত পারিবারিক ব্যাপারগুলো জেনে আমাদের কী কাজ। কিন্তু দ্বারকানাথ ঠাকুরের যে বিরাট কীর্তি – প্রথম ভারতীয় ব্রিটিশ যৌথ মালিকানায় কারটেগোর (Carr-Tagore) কোম্পানির প্রতিষ্ঠা, সেকোম্পানির যাবতীয় নথিপত্র কেন পুড়ে ফিলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কীসে তার লেগেছিল, দ্বারকানাথ ঠাকুরের আয়ের বিরাট অংশ এসেছিল অহিফেন রপ্তানি ও অহিফেন পরিবহনের মাধ্যমে, চীনে যেত অহিফেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আনুকূল্যে, যেত চীনের সাধারণ মানুষকে অহিফেন বিষে জর্জরিত করে দিয়ে চীনকে সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় করে দিতে, সেপ্রমাণ লোপাট করে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উচিত হয়নি, একবারেই উচিত হয়নি – ইতিহাসের এমন এক সূত্র ধ্বংস করে দেয়া উচিত হয়নি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। বিশ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় ও ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের অহিফেন ব্যবসা নিয়ে এক জার্মান লেখার ইংরেজি অনুবাদ থেকে লেখেন ‘চীনে মরণের ব্যবসায়’, লেখাটি জৈষ্ঠ ১২৮৮ (১৮৮২ সালে) ‘ভারতী’তে প্রকাশিত হয়েছিল। ভারতবর্ষীয় রাজস্বের অধিকাংশ এই অহিফেন বাণিজ্য হইতে উৎপন্ন হয়। কিন্তু অহিফেনের ন্যায় ক্ষতিবৃদ্ধিশীল বাণিজ্যের উপর ভারতবর্ষের রাজস্ব অত অধিক পরিমাণে নির্ভর করাকে সকলেই ভয়ের কারণ বলিয়া মনে করিতেছেন।…

মুক্তাঙ্গন-এ উপরোক্ত শিরোনামের নিয়মিত এই সিরিজটিতে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিংকের তালিকা। কী ধরণের বিষয়বস্তুর উপর লিংক সুপারিশ করা যাবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, মানদণ্ড বা সময়কাল নেই। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই তাঁরা মন্তব্য আকারে উল্লেখ করতে পারেন এখানে। ধন্যবাদ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার ও দার্শনিক। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। ১৯১৩ সালে তিনি তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য প্রথম এশীয় হিসাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি তার সারা জীবনের কর্মে সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে তিনি বিশ্বকবি ও কবিগুরু হিসেবে সম্মানিত ও খ্যাত। তিনি বিশ্বের একমাত্র কবি যিনি দু'টি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত 'জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্যবিধাতা' উভয়টির রচয়িতাই রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের হাতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, শিল্পকলা ও শিল্প চেতনা নতুনভাবে ও নতুনরূপে বিকশিত হয়েছে। কলকাতার পিরালী ব্রাহ্মণ সমাজের অন্তর্গত রবীন্দ্রনাথ প্রথম কবিতা লিখেছিলেন মাত্র ৮ বছর বয়সে। ১৮৭৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি প্রথম ছোট গল্প ও নাটক লিখেন। এর আগেই প্রথম প্রতিষ্ঠিত কাব্যের জন্ম দিয়েছিলেন যা ভানুসিংহ ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়। পারিবারিক শিক্ষা, শিলাইদহের জীবন ও প্রচুর ভ্রমণ তাকে প্রথাবিরুদ্ধ এবং প্রয়োগবাদী হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। তিনি ব্রিটিশ উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শাসন-শোষণের প্রবল বিরোধিতা করেন ও মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করেন। তার পুরো পরিবারের পতন ও বাংলার বিভক্তিরেখার নিদর্শন তাকে দেখতে হয়েছিল অনেকটা অসহায়ের মতোই। এদিক থেকে তার জীবনকে দুঃখী বলতেই হয়। কিন্তু তার কবিতা, অন্যান্য সাহিত্য আর বিশ্বভারতী প্রতিণ্ঠা তার জীবনকে মহিমান্বিত করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মা সারদা দেবীর ১৪ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন ১৩তম । জন্মের সময় তার ডাক নাম রাখা হয় রবি। ১১ বছর বয়সে তার উপনয়ন সম্পন্ন হওয়ার পর ১৮৭৩ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুর তার বাবার সাথে কলকাতা ত্যাগ করেন ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে যান তারা। এর মধ্যে ছিল শান্তিনিকেতনে দেবেন্দ্রনাথের নিজস্ব সম্পত্তি, অমৃতসর ও হিমালয় অধ্যুষিত পাহাড়ি স্টেশন ডালহৌসি। সেখানে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনী, ইতিহাস, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আধুনিক বিজ্ঞান ও সংস্কৃত অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও তিনি কালিদাসের ধ্রুপদি কাব্যের সাথে পরিচিত হন ও এর বিভিন্ন পর্যালোচনা করেন। ১৮৭৭ সনে তিনি প্রথম জনসম্মুখে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.