কী বেদনায় ব্যথিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমস্ত ব্যবসায়িক নথিপত্র কেন তিনি পুড়ে ফেলেছিলেন, এর আগে এরকম আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দ্বারকানাথের পত্নী দিগম্বরী দেবী – তিনি দ্বারকানাথ ঠাকুর দ্বারা আয়োজিত সামাজিক বিবিধ ভোজসভায় মদ্যমাংসের প্রাচুর্য ও ঠাকুরের নিজের মদ্যমাংস গ্রহণের প্রতিক্রিয়ায় দ্বারকানাথের সাথে সাক্ষাৎসম্পর্ক ত্যাগ করেছিলেন – এরপর থেকে দ্বারকানাথ বৈঠকখানা বাড়িতেই থাকতেন এবং নিজ বাড়ির পরিবর্তে বেলগাছিয়ায় এক বাগানবাড়ি প্রতিষ্ঠা করে ভোজসভা নৃত্যগীত ইত্যাদির আয়োজন করতেন, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তো ধর্মচর্চায় লিপ্ত হয়ে বিষয়কর্ম থেকে দূরেই সরে গিয়েছিলেন, ঠাকুর পরিবারের যাবতীয় আর্থিক প্রতিপত্তির উৎস দ্বারকানাথ কী এমন করেছিলেন যে ঠাকুর পরিবার তাকে এভাবে ভুলতে চেয়েছে, এই যে ১৮৪২এ তিনি প্রথম বিলাতযাত্রা করেছিলেন এবং মহারাণি ভিক্টোরিয়ার অভ্যর্থনা ফ্রান্সের সম্রাট লুই ফিলিপের অভ্যর্থনা এডিনবরা মিউনিসিপ্যালটির মহানাগরিক উপাধি প্রাপ্তি এসবের পরে দেশে ফিরে এসে আবার ১৮৪৫এ বিলাত ফিরে গেলেন, কেন – দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্ত্রীবিয়োগ হয়েছিল ১৮৩৯এ, স্ত্রীর মতো সন্তানেরাও তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল – এসব বিষণ্ণ প্রশ্নের উত্তর আর কখনো পাওয়া সম্ভব নয় – অতলে হারিয়ে গেছেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। সেউত্তরের হয়ত আমাদের আর প্রয়োজনও নেই, ঠাকুর পরিবারের এসব একান্ত পারিবারিক ব্যাপারগুলো জেনে আমাদের কী কাজ।
কিন্তু দ্বারকানাথ ঠাকুরের যে বিরাট কীর্তি – প্রথম ভারতীয় ব্রিটিশ যৌথ মালিকানায় কারটেগোর (Carr-Tagore) কোম্পানির প্রতিষ্ঠা, সেকোম্পানির যাবতীয় নথিপত্র কেন পুড়ে ফিলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কীসে তার লেগেছিল, দ্বারকানাথ ঠাকুরের আয়ের বিরাট অংশ এসেছিল অহিফেন রপ্তানি ও অহিফেন পরিবহনের মাধ্যমে, চীনে যেত অহিফেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আনুকূল্যে, যেত চীনের সাধারণ মানুষকে অহিফেন বিষে জর্জরিত করে দিয়ে চীনকে সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় করে দিতে, সেপ্রমাণ লোপাট করে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উচিত হয়নি, একেবারেই উচিত হয়নি – ইতিহাসের এমন এক সূত্র ধ্বংস করে দেয়া উচিত হয়নি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।
বিশ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় ও ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের অহিফেন ব্যবসা নিয়ে এক জার্মান লেখার ইংরেজি অনুবাদ থেকে লেখেন ‘চীনে মরণের ব্যবসায়’, লেখাটি জৈষ্ঠ ১২৮৮ (১৮৮২ সালে) ‘ভারতী’তে প্রকাশিত হয়েছিল।
ভারতবর্ষীয় রাজস্বের অধিকাংশ এই অহিফেন বাণিজ্য হইতে উৎপন্ন হয়। কিন্তু অহিফেনের ন্যায় ক্ষতিবৃদ্ধিশীল বাণিজ্যের উপর ভারতবর্ষের রাজস্ব অত অধিক পরিমাণে নির্ভর করাকে সকলেই ভয়ের কারণ বলিয়া মনে করিতেছেন। ১৮৭১/৭২ খৃস্টাব্দে এই বাণিজ্য হইতে সাড়ে সাত কোটি পাউন্ডেরও অধিক রাজস্ব আদায় হইয়াছিল। কিন্তু কয়েক বৎসরের মধ্যে তাহা ৬ কোটি ৩ লক্ষ পাউন্ডে নামিয়া আসে। এরূপ রাজস্বের উপর নির্ভর করা অত্যন্ত আশঙ্কার কারণ। ভারতবর্ষীয় অহিফেন নিকৃষ্ট হইয়া আসিতেছে, সুতরাং তাহার দাম কমিবার কথা। তাহা ভিন্ন চীনে ক্রমশই অহিফেন চাষ বাড়িতেছে। চীনে স্থানে স্থানে অহিফেন-সেবন-নিবারক সভা বসিয়াছে। ক্যান্টনবাসী আমীর-ওমরাহগণ প্রায় সহস্র প্রসিদ্ধ পল্লীতে প্রতি গৃহস্থকে বলিয়া পাঠাইয়াছেন যে, ‘তোমরা সাবধান থাকিয়ো যাহাতে বাড়ির ছেলেপিলেরা অহিফেন অভ্যাস না করিতে পায়।’ যাহারা অহিফেন সেবন করে তাহাদের সমাজ হইতে বহিষ্কৃত করিবেন বলিয়া ভয় দেখাইয়াছেন। তিনটি বড়ো বড়ো নগরের অধিবাসী বড়োলোকেরা সমস্ত অহিফেনের দোকান বন্ধ করাইতে পারিয়াছেন। এইরূপে চীনে অহিফেনের চাষ এত বাড়িতে পারে, ও অহিফেন সেবন এত কমিতে পারে যে, সহসা ভারতবর্ষীয় রাজস্বের বিশেষ হানি হইবার সম্ভাবনা। অতএব ওই বাণিজ্যের উপর রাজস্বের জন্য অত নির্ভর না করিয়া অন্য উপায় দেখা উচিত। এতদ্ভিন্ন অহিফেন চাষে ভারতবর্ষের স্পষ্ট অপকার দেখা যাইতেছে। অহিফেন চাষ করিতে বিশেষ উর্বরা জমির আবশ্যক। সমস্ত ভারতবর্ষে দেড় কোটি একর (Acre) উর্বরতম জমি অহিফেনের জন্য নিযুক্ত আছে। পূর্বে সে-সকল জমিতে শস্য ও ইক্ষু চাষ হইত। এক বাংলা দেশে আধ কোটি একরেরও অধিক জমি অহিফেন চাষের জন্য নিযুক্ত। ১৮৭৭/৭৮-এর দুর্ভিক্ষে বাংলার প্রায় এক কোটি লোক মরে। আধ কোটি একক উর্বর ভূমিতে এক কোটি লোকের খাদ্য জোগাইতে পারে। ১৮৭১ খৃস্টাব্দে ডাক্তার উইল্সন পার্লিয়ামেন্টে কহিয়াছেন যে, মালোয়াতে অহিফেনের চাষে অন্যান্য চাষের এত ক্ষতি হইয়াছিল যে, নিকটবর্তী রাজপুতানা দেশে ১২ লক্ষ লোক না খাইয়া মরে। রাজপুতানায় ১২ লক্ষ লোক মরিল তাহাতে তেমন ক্ষতি বিবেচনা করি না, সে তো ক্ষণস্থায়ী ক্ষতি। এই অহিফেনে রাজপুতানার চিরস্থায়ী সর্বনাশের সূত্রপাত হইয়াছে। সমস্ত রাজপুতানা আজ অহিফেন খাইয়া আত্মহত্যা করিতে বসিয়াছে। অত বড়ো বীর জাতি আজ অকর্মণ্য, অলস, নির্জীব, নিরুদ্যম হইয়া ঝিমাইতেছে। আধুনিক রাজপুতানা নিদ্রার রাজ্য ও প্রাচীন রাজপুতানা স্বপ্নের রাজ্য হইয়া দাঁড়াইয়াছে। অত বড়ো জাতি অসার হইয়া যাইতেছে। কী দুঃখ! আসামে যেরূপে অহিফেন প্রবেশ করিয়াছে, তাহাতে আসামের অতিশয় হানি হইতেছে। বাণিজ্য-তত্ত্বাবধায়ক ব্রুস্ সাহেব বলেন, ‘অহিফেন সেবন রূপ ভীষণ মড়ক আসামের সুন্দর রাজ্য জনশূন্য ও বন্য জন্তুর বাসভূমি করিয়া তুলিয়াছে এবং আসামীদের মতো অমন ভালো একটি জাতিকে ভারতবর্ষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধম, দাসবৎ এবং নীতিভ্রষ্ট করিয়া তুলিয়াছে।’ অহিফেন বাণিজ্য আমাদের ভারতবর্ষের তো এই-সকল উপকার করিয়াছে!
১৮৭১/৭২এ অহিফেনের ব্যবসা অনেক কমে গিয়েছিল সেই সময়েই রাজস্ব আয় সাড়ে সাত কোটি পাউন্ডের বেশি আর ১৮৩০-১৮৪২এ যখন অহিফেনের রমরমা বাণিজ্য তখন দ্বারকানাথ এই ব্যবসায় জড়িত হন ১৮৩৪এ কারটেগোর কোম্পানি গঠিত হওয়ার পর থেকে – তার ব্যবসায়িক নথিপত্রে এই ব্যবসার হদিস ছিল – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসমস্ত কাগজপত্র ধ্বংস করে দেন, কিন্তু কেন করলেন, ঠাকুর পরিবারকে অপমান অপবাদের হাত থেকে বাঁচাতে – আবারো বলব উচিত হয়নি – অহিফেন ঠাকুরের নথিপত্র ধ্বংস করা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উচিত হয়নি। ওই নথিপত্র থাকলে ব্রিটিশভারতের সাথে চীনের ন্যাক্কারজনক অহিফেন পর্বের ইতিহাস আরো স্পষ্ট হত – সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঐতিহাসিক নথিপত্র ধ্বংস করেছিলেন।
‘রামমোহন রায়’কে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম বক্তৃতা চব্বিশ বছর বয়সে, এরপর বিভিন্ন উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ ‘রামমোহন রায়’কে নিয়ে আরো বক্তৃতা করেছেন – আমি এরকম তিন/চারটি বক্তৃতা পড়েছি – এই বক্তৃতাগুলোর কোথাও একবারের জন্যও দ্বারকানাথ ঠাকুরের উল্লেখ নেই, অথচ ইতিহাস বলে রামমোহন রায়ের সমাজসংস্কারমূলক কাজের সবচেয়ে বড় পৃষ্টপোষক ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। দেখে শুনে তো মনে হচ্ছে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ও সচেতনভাবে রবীন্দ্রনাথ দ্বারকানাথ ঠাকুরকে মুছে ফেলেছিলেন। অহিফেন ঠাকুরকে রবীন্দ্রনাথ পারিবারিক কলঙ্কের ইতিহাসই ভেবেছিলেন, তার ব্যবসায়িক কীর্তির সবকিছু নিশ্চয় কলঙ্কের ছিল না, তিনি ব্যাঙ্ক বীমা জাহাজ কয়লা এসবের ব্যবসাও করতেন – অহিফেন ঠাকুরকে মুছতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পুরো দ্বারকানাথ ঠাকুরকেই পুড়ে ফেলেছিলেন।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১২ comments
Pingback: Tweets that mention মুক্তাঙ্গন | অহিফেন ঠাকুর | মাসুদ করিম -- Topsy.com
5th in the alfabet - ২ মার্চ ২০১১ (৮:৫৭ অপরাহ্ণ)
আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের গুরুত্বপুর্ন ধারক ঠাকুর পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আমার খুব আগ্রহ । আপনি ঠাকুরদের সম্পর্কে আমার অজানা এক বিষয় জানালেন ।
ইমতিয়ার - ২৭ মার্চ ২০১১ (৫:৫১ অপরাহ্ণ)
আত্মহননের আগে কাদম্বরী দেবী একটি চিঠি লিখেছিলেন। দীর্ঘ চিঠি। কিন্তু সেই চিঠিটি নাকি পুড়িয়ে ফেলা হয়। দেখা যাচ্ছে, ঠাকুর পরিবারের অন্ধকার দিক গোপন করার জন্যে ঠাকুররা সবসময়েই উদ্যমী ছিলেন। লিখেছেন,
হয়তো এরকম মোছামুছির ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বুদ্ধি যুগিয়েছিল কাদম্বরী দেবীর সেই চিঠি পোড়ানোর ঘটনা (?)… কিন্তু সত্যিই কি মুছে ফেলা গেছে? কাদম্বরী দেবীকে সারা জীবন রবীন্দ্রনাথ ফিরে ফিরে দেখেছেন, হয়তো দ্বারকানাথকেও।
মাসুদ করিম - ২৮ মার্চ ২০১১ (১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
আমার ধারণা দ্বারকানাথ ঠাকুরের নথিপত্রগুলো হয়ত আগে ধ্বংস করেছিলেন। ধারণা, ঠিক নাও হতে পারে। কাদম্বরী দেবীর আত্মহত্যার পর চিঠি পোড়ানো ও দ্বারকানাথ ঠাকুরের নথিপত্র পোড়ানো ভিন্ন ধাঁচের ঘটনা, এটা ভাবছি, দুটো মিলতে পারে কি না? আরো ভাবছি জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে খুব জানা উচিত, শিল্পবোধসম্পন্ন ও বিলাসী এই মানুষটার মধ্যে কোথায় যেন দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিল, এমানুষটিই কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পরে জাহাজ ব্যবসায় নেমে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রেরণায় বসনে ভূষণে কাদম্বরী দেবী অসাধারণ হয়ে উঠেছিলেন, কিন্তু কাদম্বরী দেবী জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সব কিছু কি নিতে পেরেছিলেন, বা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কি সহজে নিতে পেরেছিলেন ওরই প্রেরণায় উচ্ছ্বল হয়ে ওঠা কাদম্বরীকে? ‘নষ্ট নীড়’ ধরে রবীন্দ্রনাথ-কাদম্বরী সম্পর্ক বিচারে আমার সন্দেহ আছে — দেখা যাক কোনোদিন সে সন্দেহ ঘোঁচে কি না? তবে যেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সেটা কিভাবে করা যায় সেটাই ভাবছি — জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে কিভাবে গভীর ভাবে জানা যায় সেউপায় খুঁজছি।
Pingback: মুক্তাঙ্গন | চীনে অপমানিত রবীন্দ্রনাথ | মাসুদ করিম
কিশোরকুমার বিশ্বাস - ৮ মে ২০১২ (৮:০২ অপরাহ্ণ)
মাসুদ সাহেব
প্রীতিভাজনেষু, আপনি যে তথ্য দিয়েছেন সেটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক । আপনি এ বিষয়ে তথ্য সন্ধানের প্রেরণা যোগালেন । ধন্যবাদ ।
Pingback: মুক্তাঙ্গন | রবীন্দ্রনাথ | মাসুদ করিম
Pingback: হন্যতে : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোপন ডায়েরি | মাসুদ করিম
মাসুদ করিম - ৯ মে ২০১৫ (৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৬ মে ২০১৯ (৬:০৫ পূর্বাহ্ণ)
কে জানে অহিফেন ঠাকুরের সাথে অহিফেন জেজিভয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল কি না।
মাসুদ করিম - ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ (৪:৩৩ অপরাহ্ণ)
A ‘prince’, East India Company and the history of Bengal’s first bank fraud
In saying that, however, the history of bank scams in this part of the world is fairly long and rather intriguing.
Bank frauds and loan defaults have reached new heights in post-independence Bangladesh. Instances of embezzlement of depositors’ money by defaulters in collusion with bank high-ups make headlines every now and then.
In saying that, however, the history of bank scams in this part of the world is fairly long and rather intriguing.
In fact, the very first bank, The Union Bank, established in undivided Bengal during the rule of the East India Company, was plagued by swindles.
The history of the bank – founded by local capitalists, including Rabindranath Tagore’s grandfather Dwarkanath Tagore – is a history of deception.
Misappropriation of deposits was not the only menace that the bank faced, but it was also blemished by the fact that the source of wealth of almost all, if not all, of its investors and owners was indigo cultivation – infamous for atrocities on farmers.
Michael Kidron – an economist, Marxist theorist, writer and publisher – has done extensive research on the reference-based history of The Union Bank. He traces the origin of corruption in the bank that started its commercial activities in 1829.
In Kidron’s words, “The Union Bank was one of the largest businesses in Calcutta from 1830 to 1847. The joint venture company had hundreds of Indian and European investors. This institution became a symbol of financial power and prestige of the banian class in Calcutta.”
He further says the main objectives behind the establishment of the bank were to provide capital for the business class, increase credit, exchange banking, issue banknotes and control the prices of agricultural products. The Union Bank offered equal business opportunities for businessmen from both India and Britain. People of both nations were involved in the management of the bank.
He, however, identifies three major problems concerning The Union Bank – first, the main problem of the bank, like that of other financial institutions in Kolkata, was its over-reliance on the business of the lone export product, indigo; secondly, the then authority, East India Company, did not show interest in playing a regulatory role by providing support to the bank and ensuring proper surveillance; and thirdly, the directors of the bank were preoccupied with their own business and relied on others who could give time to run the bank, but those people were short-sighted and had character flaws.
However, in 1829 when Dwarkanath Tagore and his associates, the partners of Macintosh & Company, launched the new bank, they received a huge response from the local merchant community. At that time the only bank in Calcutta was the semi-government Bank of Bengal that used its capital mainly to buy government bonds.
Even though three private agencies operated somewhat like commercial banks in Kolkata, they were not in a position to carry on the credit business on a large scale as depositors had withdrawn their money at the beginning of the economic crisis of 1830-33.
As a result, there was a demand for new sources of funds among both local and foreign merchant communities. Dwarkanath and other founders of The Union Bank understood this very well.
First loan default
The total capital of the joint venture bank was Rs50 lakh. The total number of shares was 2,000, the price of each was Rs2,500. According to the founding contract, the accounts of the bank would be publicly discussed, there would be regular meetings of the partners and there would be a definite limit on the maximum number of shares owned by an individual. The bank started its operations when Rs12 lakh was raised in capital.
The bank faced a crisis at the outset of its journey. Dwarkanath was the most loyal business associate of the ruling East India Company. Other directors of the bank could not turn down the loan request of Dwarkanath, who earned the epithet of ‘Prince’ because of his majestic lifestyle and wealth. He personally advocated a loan of Rs6 lakh to John Palmer & Company. This loan was half of the total asset of the bank. As a result, when John Palmer & Co failed to repay the loan in January 1830, The Union Bank was almost on the verge of liquidation.
The bank’s then-secretary, William Carr, intervened to prevent the bank from collapsing. He made a cautious decision to take the indigo traders’ factory and fixed property (land) as collateral.
Although the bank’s declaration did not have a policy of taking fixed assets as collateral in this way, the step gave the bank a power to seize these properties if an indigo agency fails to repay its loan. But William’s decision was also inauspicious. As a result, the bank was unable to pay dividends to its shareholders during the commercial crisis of 1830-33. At that time, the share price, which was fixed at Rs2,500, was sold at almost half the price.
However, the situation improved by July 1833 and the bank paid an 8% dividend to its shareholders.
There were more problems. In the late 1830s, the bank’s board of directors made three wrong decisions after being persuaded by Dwarkanath. The first decision was to increase the capital of the bank from Rs15 lakh to Rs1 crore. Secondly, they decided to engage in a large-scale bill of exchange (hundi) business. And the third decision was to provide large loans to indigo traders.
In those days, hundi business was legal. However, due to not having enough capital to do this business profitably, the bank fell into a liquidity crisis. The bank’s assets became almost exhausted as the loan given out to indigo businesses continued to turn bad.
Dwarkanath himself was involved in indigo cultivation. He was also a big patron, financier of these indigo traders.
Kidron notes that from the outset Dwarkanath intended to involve The Union Bank in the sale and purchase of hundi bills for import and export of agricultural products, including indigo.
“At that time, the agency houses in Calcutta and the East India Company were jointly controlling the business. Dwarkanath was a representative of the indigo factory owners. New competitors in buying and selling of bills would actually benefit the indigo factories, and that is why Dwarkanath made this decision. In fact, his main goal was to create this facility rather than to sell bills.”
However, the bank’s partners involved in the bill business began to strongly oppose the decision.
Realizing that the situation was not in their favour, Dwarkanath and his associates adopted a new strategy. They did not directly propose to enter the hundi business, but focused on increasing the bank’s capital. As a result, even those who opposed the hundi business were compelled to decide in its favour eventually.
Thus, the capital of the bank increased from Rs15 lakh to Rs21.60 lakh by 1836. The capital increased to Rs32 lakh in 1837, Rs80 lakh in 1838, and Rs1 crore by 1839, says Kindron.
Nepotism and undue power practice
Dwarkanath had absolute control over the bank. As a result, since 1834, representatives from only six agency houses – Carr, Tagore & Company, Cockrell & Company, Gilmore & Company, Hamilton & Company, Ferguson Brothers and William Strom – were appointed as directors of the bank.
At the time when he had maximum control over the bank, Dwarkanath owned 700 out of its 2,500 shares.
Thus Dwarkanath kept the policy of the bank under his complete control till 1844.
Dwarkanath also appointed people of his choice to important positions in the bank through nepotism. Among them, the cases of accountant AH Sim and bank secretary George James Gordon were the most important. Sim forged accounts while Gordon used his position to lend money to companies that defaulted on loans.
Dwarkanath came forward to protect both the corrupt officials. Although the bank lost a total of Rs5,99,000 because of Gordon and Sim, he prevented the authorities from taking appropriate punitive action against them.
This control was not only due to his having maximum share ownership but also to the fact that he retained his friends, relatives and businessmen who depended on him by giving ownership of the bank’s shares. The biggest example of Dwarkanath’s control was an incident relating to a bureaucrat named AH Sim.
Sim was an accountant. He was fired in 1838 for minor misconduct. He was later reinstated by a vote of shareholders controlled by Dwarkanath. Then in May 1839, one of the Indian clerks told Dwarkanath that Sim had embezzled Rs1,20,600. Upon learning of the incident, Dwarkanath, in consultation with other influential directors William Carr, Longville Clark, and Chairman James Cullen, promised to pay the money himself, on condition of anonymity.
However, the matter was not kept secret and Dwarkanath paid it out of his own pocket to allay the panic of the depositors.
In 1840, Dwarkanath appointed his friend George James Gordon as bank secretary, replacing James Young. Gordon came to India empty-handed after losing everything in the 1830-33 London stock market collapse. He needed a high-paying job to survive the financial loss. Dwarkanath gave him a job, called another board meeting and increased his salary from Rs1600 to Rs2500. Here, too, the opposing partners lost by a large margin in the face of Dwarkanath’s influence.
Meanwhile, at a board meeting in 1840, a special loan classification was introduced for the purpose of giving unlimited loans to indigo cultivators. Indigo cultivation agencies could easily take out loans according to their needs and had the privilege to repay them at their convenience. This loan scheme was a breach of The Union Bank agreement. The agreement had a provision for confiscating the collateral if borrowers failed to pay installment for four months.
But to avoid that rule, indigo growers were given the opportunity to renew their loans every three months by paying interest.
During the commercial crisis of 1842, when several large indigo growers who had taken out loans from The Union Bank in this way went bankrupt, the bank incurred huge losses. The shareholders called the company secretary to explain the reasons for the loss. Secretary Gordon completely denied the loss. He had been making this false statement for over a year.
However, in 1843, the information of loss was leaked. At that time, a committee of the bank alleged that the bank lost the entire amount of Rs4,79,663, given out in loans to Gilmore & Company, due to either collaboration or negligence of James Gordon.
In 1840, Gilmore borrowed Rs2,71,095 from The Union Bank to buy a coal mine. But as the company failed to acquire the coal mine, its ownership changed.
Gordon lent the rest of the lost money to Gilmore & Company for the purposes of indigo, copper and sugar businesses. At that time, the bank did not only fake the prices of these products but also allowed the borrowers to get the goods released from the warehouse even after defaulting on loans.
The tragic end
By 1845, Dwarkanath Tagore sold all the shares of The Union Bank under his control. He was also raising enough money for a trip to England for a second time.
He made the decision after realising that the bank was sinking due to the excesses he and his associates committed. By that time his health had also deteriorated. Gradually, he sold his commercial assets and started buying zamindaris. He arranged for the distribution of these zamindaris among his sons.
He took his youngest son Nagendranath, nephew Nabin Chandra, personal physician, secretary, chef and three servants with him on his way to Britain. His physical condition became increasingly fragile due to the emotional impact of the collapse of his businesses. He died in London on 1 August 1848 at the age of 51 and was laid to rest at the Kensal Green Cemetery in London.
Meanwhile, The Union Bank also went broke by 1848 by giving loans to loss-making businesses. In this way, the first private bank in Bengal came to a tragic end.
মাসুদ করিম - ৩ জুন ২০২৪ (৭:০৪ পূর্বাহ্ণ)
আগে ‘অহিফেন ঠাকুর’ লিখে গুগল করলে প্রথমেই এই ব্লগপোস্টটাই [muktangon.blog/masudkarim/6353] আসত, এখন দেখছি আসছে এটা : ‘অহিফেন ঠাকুর’ দ্বারকানাথ এবং আফিম ব্যবসা : বিশ্বেন্দু নন্দ [https://pagefournews.com/afeem-tagore-and-his-trade-dawrokanath/]
//শোনা যায় যৌবনে বাপ-ঠাকুর্দার ওপর রাগ করে প্রথমে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর আর পরে রবীন্দ্রানাথ ঠাকুর দু-জনেই দ্বারকানাথের ব্যবসা সংক্রান্ত অধিকাংশ কাজগপত্র পুড়িয়ে দিয়েছেন। ‘প্রিন্স’রূপী দ্বারকানাথকে নতুন করে উপস্থিত করার অন্য উপায়ও আজ আর নেই। রবীন্দ্রনাথ, দ্বারকানাথের গুরু রামমোহনের স্মৃতি তর্পণ করলেও জ্ঞানতঃ দ্বারকানাথের উপাসনা তো করেনই নি, খুব কম তাঁর নাম উচ্চারণ করেছেন। এমনই ছিল ঠাকুর্দার প্রতি রবীন্দ্রবিতৃষ্ণা।
কোম্পানির পলাশী উত্তর সময়ে বাংলা দখল আর লুঠের পর নজর পড়ল চিনের সম্পদে। বাংলার আফিম চিনে বিক্রি করে সেই অর্থে চিনাংশুক আর পোর্সেলিন আর চা কেনার পরিকল্পনা করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। দ্বারকানাথ ঠাকুর তখন নীলের সঙ্গে আফিম ব্যবসা ধরলেন। যদিও ভারত-চিন আফিম ব্যবসায় বাংলার অংশিদারি ছিল খুবই কম। সব থেকে বেশি আফিম যেত মাদ্রাজ থেকে যার নাম মালওয়া আফিম। মূল ব্যবসাটার নিয়ন্ত্রণ ছিল পার্সিদের হাতে। সেই উদ্বৃত্ত অর্থে গড়ে উঠেছে আধুনিক মুম্বই (ওমর ফারিকি— দ্য ওপিয়াম সিটি)। কলকাতায় সাধারণ নাবিকের অবস্থা থেকে শুরু করে রুস্তমজী কাওয়াসজী তখন বিশাল ব্যবসায়ী। তাঁকে পাল্লা দিতে বিপুল অর্থ নিয়ে বাণিজ্যে নামলেন দ্বারকানাথ। দ্বারকানাথের তিনটি জাহাজ কলকাতা থেকে ক্যান্টন যেত। ১৮৩১ সালে কলকাতায় তৈরি ৩৬৩ টনের ওয়াটারউইচ কলকাতা-ক্যান্টন মাত্র ২৫ দিনে সফর করেছিল।
দ্বারকানাথ ছটি ক্লিপারের একটি বড় অংশিদারি অর্জন করেছিলেন। এরমধ্যে প্রধাণতমটি ছিল ৩৬৩টনের ওয়াটারউইচ। খিদিরপুর ডকে পরিকল্পনা করে বানানো। এটির অর্ধেক অংশিদারি ছিল তাঁর আর অর্ধেক ছিল দুই ইংরেজ উইলিয়ম স্টর্ম আর এন্ড্রু হেন্ডারসনের। এটি কলকাতায় তৈরি তৃতীয় ক্লিপার। এর আগে যে দুটি তৈরি হয়েছে হাওড়া ডকে সে দুটি হল বম্বের আফিম ব্যবসায়ী গুরু রুস্তমজী কাওয়াসজীর জন্য ১৮২৯-এর রেড রোভার আর ১৮৩১-এর সিল্ফ। সেই শতকের ত্রিশের দশকে চিনে অবৈধ আফিম চালানের পরিমান প্রায় তিনগুন হয়ে যায় এই ক্লিপারের দ্রুত পরিবহনক্ষমতায়। এবং উত্তর-পূর্ব বাতাস বয়ে ক্লিপারগুলি মাত্র ২৫ দিনে শীতের মধ্যেই যখন চিনে পৌঁছত সেখানে আফিমের দাম থাকত চড়া। এবং ক্লিপারের অনেকবেশি বোঝা নেওয়ার ক্ষমতার জন্যও আফিম ব্যবসায়ীদের কাছে ক্লিপার প্রধাণ পরিবহন হয়ে ওঠে।
দ্বারকানাথের আরও দুটি আফিম ক্লিপার ছিল ৩৭১ টনের ১৮৩৭ সালে খিদিরপুরে তৈরি এরিয়েল এবং ১১২ টনের মাভিজ। এরিয়েল চিনে আফিম ব্যবসা করতে গিয়ে প্রথম আফিম যুদ্ধে চিনা কমিশনার লিন-এর হাতে ধরা পড়ে। এরিয়াল চিন দখল করে এবং ভাড়ায় নেয়। আর একটি জাহাজ মাভিস বজ্রপাতে ধ্বংস হয়।
কলকাতায় তখন তাঁর নাম অহিফেন ঠাকুর। একইসঙ্গে মনেরাখতে হবে দ্বারকানাথের ব্যবসাগুলির মধ্যে আফিম ব্যবসার পরিমান বেশ কম ছিল।
আফিম বিষয়ে আরও কিছু মন্তব্য
১) নীলের মতই আফিম বাংলা-বিহারের খুব পুরোনো উৎপাদন। ব্রিটিশপূর্ব সময়ে বাংলা যে বিপুল কৃষি এবং শিল্প পণ্য একচেটিয়া রপ্তানি করত, তার একটা ছিল আফিম।
২) এশিয়াজুড়ে আফিম ছিল মূলত সামাজিক ব্যবহারের জন্যে — অর্থাৎ চিকিৎসকেরা টারমিনাল রোগী, যারা মৃত্যুপথযাত্রী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ইত্যাদিদের জন্যে আফিমের নিদান দিতেন। আফিমের মূল কাজই চিকিৎসার উদ্দেশে নিবেদিত। অশ্যই নেশ দ্রব্য হিসেবে পরিচিত ছিল, কিন্তু তার ভূমিকা খুবই গৌণ। আমার ছোটবেলায় দেখেছি বৃদ্ধবৃদ্ধারা সন্ধ্যের পরে দুধের সঙ্গে আফিমের গুলি খেয়ে ঝিমোতেন সকাল অবদি।
৩) পশ্চিম যেমন সব উৎপাদন বাজারের নিরিখে দেখা শুরু করল — তার আগে কোনও পণ্যই শুধু বাজারের নিরিখে তৈরি হত না, তারা নানান ডায়মেনশন থাকত, উতপাদকেরা পণ্যটিকে একটি জীবিত বস্তু হিসেবে পণ্য করত, সমাজে তার আলাদা স্থান ছিল — তারা প্রথম আফিমকে শুধুই নেশাদ্রব্য হিসেবে, বাজারি পণ্য হিসেবে বিক্রি শুরু করল। এবং নীলের আগেই আফিম হয়ে উঠল তাদের বিপুল লাভ করার হাতিয়ার।
৪) পলাশীর পরে বাংলার একটি টাকাও ইওরোপ থেকে না এনে, বাংলার রাজস্ব বিনিয়োগ করে সরকারি বলপ্রয়োগ করে ন্যুনতম মূল্যে বাংলার কাপড় আর আফিম দিয়ে সিল্ক, চা, পোর্সেলিনের মত হাজারো চিনা পণ্য কিনত ব্রিটিশ, সেই পণ্য তারা উচ্চদামে বিক্রি করত লন্ডনের বাজারে। চক্রটা দেখুন — বাংলায় প্রায় বিনামূল্যে পণ্য দখল এবং কিনেও বিনামূল্যে উচ্চমানের পণ্য দখল করে সেগুলি বিক্রি হত ইওরোপের বাজারে, ফলে ইওরোপের আজ যে চাকচিক্য দেখি সেটা শুধু বাংলা লুঠেই আসে নি, সেটা প্রায় বিনা অর্থ বিনিয়োজিত বাণিজ্যের উদ্বৃত্তেও তৈরি হয়েছে।
৫) ভারত থেকে চিনে আফিম যেত মূলত বম্বে হয়ে, বম্বের উত্থান ঐভাবেই পারসিদের হাত ধরে — আজ যে পারসিরা ধনী তার কারণ বম্বে হয়ে ব্রিটিশ হংকং হয়ে আফিম চিনা হংকং [সম্মানীয়] ব্যবসায়ীদের বিক্রি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে। টাটাদের অর্থ জোগাড় হয়েছে এইভাবেই। এপ্রসঙ্গে অমর ফারুখির দ্য ওপিয়াম সিটি মেকিং অব আর্লি বম্বে বইটা দেখতে পারেন — সেখানে যদিও টাটারা অনুপস্থিত।