যতবার কাউকে কোথাও মুক্তচিন্তার জন্য লড়াইয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখবো - ততোবার আপনার কথা মনে পড়বে। আপনার সন্তানটির জন্য যে মুক্ত স্বাধীন ভুখন্ডের স্বপ্ন আপনি দেখতেন সেই ভুখন্ডে আজকে দীর্ঘ এক অন্ধকার রাত নেমেছে। কিন্তু এই প্রবল অন্ধকারেও আলোর যাত্রীদের পথ চলা থামবে না। কথা দিচ্ছি অভিজিৎদা।

অভিজিৎদা, আপনার সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের সূত্র যে লেখাগুলো, তার একটির শিরোনাম ছিল এটি। লেখালেখি, আইসিএসএফ, আর বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স (বিসিবিএ) এর প্রতিদিনকার কাজের সূত্র ধরে আপনার সাথে আলাপ হতো। কত দিনের কত না স্মৃতি! মাত্র চার দিন আগেও আলাপ করেছি আমরা ফেসবুকে। কথা হচ্ছিল প্রগতিশীল আন্দোলনের ভবিষ্যত আর আমাদের কর্মসূচী নিয়ে। রাজীবকে যেদিন মেরে ফেললো এই একই হিংস্র মৌলবাদীর দল, তখনও কি আপনি জানতেন যে একদিন এই একই পরিণতি আপনারও হতে পারে? জানলে কি আরেকটু সাবধান হতেন? লেখালিখি থামিয়ে দিতেন কি অভিজিৎ দা? আমার কেন যেন মনে হয় আপনি থামতেন না। সব জেনে বুঝে তারপরও লিখে যেতেন। মনে পড়ছে - একদিন আপনিই লিখেছিলেন - 'ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের মত জিনিস নিয়ে যখন থেকে আমরা লেখা শুরু করেছি, জেনেছি জীবন হাতে নিয়েই লেখালিখি করছি।' লিখেছিলেন, পরাজয় নিশ্চিত জানলে - 'এরা সব সময়ই ... শেষ কামড় দিতে চেষ্টা করে...এগুলো আলামত... তাদের অন্তিম সময় সমাগত।... বিজয় আমাদের অবশ্যম্ভাবী'। ১৯৭১ সালে শহীদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হান, মুনীর চৌধুরীরাও জানতেন। জানতেন - ওরা তাদের বাঁচতে দেবে না। তারপরেও তাঁরা তাদের পথ থেকে সরে দাঁড়াননি। লড়াই চালিয়ে গেছেন - আমাদের জন্য, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। রাজীবের মৃত্যুর পর যখন তথাকথিত প্রগতিশীলদের অনেকেই ভয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, আপনাকে দেখেছি সরব থাকতে। প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন যখন মৌলবাদীদের হুমকির মুখে 'রকমারি' নামের ব্যবসাদার প্রতিষ্ঠানটি একের পর এক মুক্তচিন্তার মানুষদের বইগুলো নামিয়ে ফেলছিল। মৃত্যুর হুমকি এসেছে আপনার কাছে বহুবার। তারপরও এক চুলের জন্যও ওদের জায়গা ছেড়ে দেননি আপনি। চার দিন আগে আপনার সাথে শেষ আলাপে বিদায় নেয়ার আগে আপনি বলেছিলেন - 'একটু গুছিয়ে নিন, আড্ডা হবে শিগগিরই।' নিশ্চয়ই আড্ডা হবে। প্রতীক্ষায় আছি অভিজিৎদা। জানি এটা কল্পনা। কিন্তু এও জানি - যতবার স্কাইপে বসবো, যতবার ফেসবুকের ফিডের দিকে তাকাবো, যতবার কাউকে কোথাও মুক্তচিন্তার জন্য লড়াইয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখবো - ততোবার আপনার কথা মনে পড়বে, আমাদের সেই না-হওয়া আড্ডাটার কথা মনে পড়বে। আপনার সন্তানটির জন্য যে মুক্ত স্বাধীন ভুখন্ডের স্বপ্ন আপনি দেখতেন সেই ভুখন্ডে আজকে দীর্ঘ এক অন্ধকার রাত নেমেছে। কিন্তু এই প্রবল অন্ধকারেও আলোর যাত্রীদের পথ চলা থামবে না। কথা দিচ্ছি…

ফারাবী নামধারী অনলাইনের এক ইতর শ্রেণির জঙ্গি সম্প্রতি "রকমারি.কম" নামের একটি বই বিক্রির ওয়েবসাইটের ওপর ফতোয়া জারি করেছে। সেই সাইটের তালিকায় অভিজিৎ রায়, রায়হান আবীরের মতো লেখকদের বই থাকায় সাইটের মালিকদের হুমকিসহ তাঁদের কার্যালয় আক্রমণের উস্কানি দিয়েছে এই জঙ্গি। [...]

৪৫১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। রে ব্রাডবারি-র এই নামের উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে এক বন্ধুর কাছ থেকে জেনেছিলাম — এই তাপমাত্রায় নাকি বই পোড়ে। পৃথিবীতে বই পোড়ানোর মচ্ছব নতুন না। সেই প্রাচীন যুগ থেকে শুরু। ব্যাবিলনীয়রা পুড়িয়েছে, এথেনীয়রা পুড়িয়েছে, রোমানরা পুড়িয়েছে। এমনকি গত শতকে নাজি জার্মানিতে রীতিমতো বনফায়ার করে বই পোড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্র বাহিনীও পিছিয়ে ছিল না। তাদের বোমারু বিমানগুলো টার্গেট হিসেবে প্রায়ই খুঁজে নিতো জার্মানির লাইব্রেরিগুলোকে। পঞ্চাশের অন্ধকার দশকে ম্যাকার্থিজমের বিশুদ্ধি অভিযানে আমেরিকান মননকে কমিউনিজমের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যও বই পোড়ানো হয়েছে। বই পোড়ানো ছাড়াও সেনসরশিপের আরও বহু রকম চেহারা দেখেছি আমরা। সেখানে যোগ হয়েছে আরও নতুন কয়েকটি পন্থা। ফারাবী নামধারী অনলাইনের এক ইতর শ্রেণির জঙ্গি সম্প্রতি 'রকমারি ডট কম' নামের একটি বই বিক্রির ওয়েবসাইটের ওপর ফতোয়া জারি করেছে। সেই সাইটের তালিকায় অভিজিৎ রায়, রায়হান আবীরের মতো লেখকদের বই থাকায় সাইটের মালিকদের হুমকিসহ তাঁদের কার্যালয় আক্রমণের উস্কানি দিয়েছে এই জঙ্গি। এই লেখকদের অপরাধ — তাঁরা নাস্তিক্যবাদী, তাঁরা বিজ্ঞান এবং প্রান্তিক দর্শনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিরিয়াস লেখালিখি করেন। হুমকি দেয়া হয়েছে — অচিরেই এইসব নাস্তিক্যবাদী চিন্তার প্রচার বন্ধ না করা হলে সাইটের সাথে যুক্তদেরও ব্লগার রাজীব হায়দারের মতোই ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে। হুমকি শুনে সাইটটির মালিক পক্ষ নতজানু তোষণ নীতির পথ ধরেছেন; তাঁদের পক্ষ থেকে হুমকি প্রদানকারীকে একরকম ক্ষমাপ্রার্থনা করেই আশ্বাস দেয়া হয়েছে — এমনটি আর কখনো হবে না। এ নিয়ে গত কয়েক ঘণ্টা ধরেই অনলাইনের ফোরামগুলো উত্তপ্ত। আহত প্রগতিশীলরা কেউ কেউ সাইটটির মালিক পক্ষের কাপুরুষতার সমালোচনা করছেন, কেউ হুমকি দিচ্ছেন সাইটটিতে নিজের একাউন্ট বাতিল করবার, কেউ সাইটটি বর্জনের ডাক দিচ্ছেন, চরম উদাস এবং রণদীপম বসুর মতো কেউ কেউ আবার প্রতিবাদ হিসেবে নিজেদের বইও সে সাইটের তালিকা থেকে প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। 'রকমারি ডট কম' দেখা হল। প্রবল ক্ষমতাধর রথী-মহারথীদেরও একসময় দেখা হয়ে গেছে। কখনো জঙ্গি অপশক্তি কখনো সরকারের সাথে 'মত প্রকাশ' ইস্যুতে আপোস করতে কেউ তাঁরা কারো চেয়ে কম ছিলেন না। জলপাই শাসনামলে সুশীল চিন্তার কাণ্ডারী মহান ডেইলি স্টার পত্রিকা তার নির্যাতিত সাংবাদিক তাসনীম খলিলের পাশে দ্বিধাহীনভাবে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে আমার মনে হয়েছে। বরং পত্রিকাটিকে দেখেছি উল্টো একের…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.