হুমায়ুন আহমেদের ‘দেয়াল’ উপন্যাস বিষয়ে ফেসবুকে এবং বিভিন্ন ব্লগে বেশ কয়েকটি লেখা এসেছে। যে দুটি অধ্যায় প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে তা নিশ্চয় অনেকেরই পড়া হয়ে গেছে, এই অধ্যায় দুটো পড়ে সে সময় সম্পর্কে যা ধারনা পাওয়া যায় তা মোটামুটি এমন:
• কর্নেল ফারুক মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন এবং বীরত্বের সাথেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, এ ছাড়াও তিনি একজন শখের ফটোগ্রাফার এবং রোমান্টিক ব্যক্তি ছিলেন (বৃষ্টি দেখলেই তাঁর ভিজতে ইচ্ছে হত) (ব্লগার হাসান মোরশেদ বলছেন মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার মোটে তিন দিন আগে ফারুক ‘মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন’।)
• ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর এজেন্টদের বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল এবং তারা প্রায়ই পান বিড়ি বিক্রেতা বা অন্যান্য ছদ্মবেশে তার সাথে দেখা করতে আসতেন এবং তাঁকে ইন্টেলিজেন্স ব্রিফিং দিতেন (তার মানে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি বঙ্গবন্ধুর কোন আস্থা ছিল না)
• বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা ‘র’এর এজেন্ট বলেছেন (তার মানে জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণের তথ্য ভুলও হতে পারে)।
• খন্দকার মোশতাক নিরীহ এবং নার্ভাস টাইপের মানুষ ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে তিনি অংশ নেননি (খন্দকার মোশতাক আমার ছোট খালুর চাচা, ৯৬ সালে মোশতাকের লাশ গ্রামের বাড়ী নেওয়ার পথে পাবলিক লাশের নানা অসম্মান করে বলে পত্রিকায় দেখেছিলাম, খালুকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বলেন ঘটনা সত্য এবং মোশতাকের এই অসম্মান প্রাপ্য ছিল)।
• রক্ষীবাহিনীর নির্যাতনে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ ছিল এবং বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে তাঁর গ্রামের বাড়ী লুট করে জনগণ মনের ঝাল মেটায় (এটা লিখতে হুমায়ুন আহমেদের বুক ফেটে গেছে, কিন্তু কোন উপায় নেই, তিনি ইতিহাস বিকৃত করতে পারেন না।)
• বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেলকে অন্যদের হত্যার সাথে সাথে ব্রাশ ফায়ারে মারা হয় (তাকে মারা হয় সবার শেষে মাথায় গুলি করে, সেই গুলিতে তার মগজসহ এক চোখ ছিটকে বেরিয়ে আসে, রাসেলকে মারার আগে বলা হয় “তোমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছি”।)
• বঙ্গবন্ধু রাস্তাঘাটে মুচি, ধোপা, নাপিত এই জাতীয় লোকজনের সাথে কোলাকুলি করে ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়েছিলেন (বঙ্গবন্ধু চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য আন্দোলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কৃত হয়েছেন, অসংখ্যবার জেলে গিয়েছেন, জেলে অনশন করেছেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মোকাবেলা করেছেন, ৬-দফার আন্দোলন করেছেন। এভাবেই একজন ‘বঙ্গবন্ধু’ তৈরি হন, রাস্তাঘাটে নানা জাতের পাবলিকের সাথে কোলাকুলি করে নয়। এই জাতীয় কোলাকুলি নিম্নশ্রেণীর রাজনৈতিক স্টান্টবাজী, ‘পল্লীবন্ধু’ এরশাদ যেমন করতেন, গুচ্ছগ্রামের কোন এক বৃদ্ধার বাড়ি গিয়ে একবার বলেছিলেন, “মা, আমি তোমার ছেলে এসেছি, ভাত দাও”।)
বঙ্গবন্ধুর জীবনের স্বাধীন বাংলাদেশ অধ্যায় নিয়ে অনেক গল্পই চালু আছে। সে গল্পগুলোও ‘দেয়াল’ উপন্যাসের বাকি অংশে অবধারিত ভাবে স্থান পাবে। সেগুলোর একটা তালিকা করা যাকঃ
• বঙ্গবন্ধু পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের ‘তোরা সব বাঙ্গালী হয়ে যা’ বলেন, এতে রেগে মেগে উপজাতীয়রা হাতে অস্ত্র তুলে নেয় (কাপ্তাই বাঁধ এবং জিয়াউর রহমানের আমলে বাঙ্গালী settlement এর ব্যাপারটা উল্লেখ না করাই ভাল।)
• বাংলার চে গুয়েভারা ‘টাইগার বাম’ সিরাজ শিকদারের মহাকাব্যিক মৃত্যু নিয়ে একটি অধ্যায় থাকবে, বঙ্গবন্ধুর সিরাজ শিকদারকে ‘লাথি মারার’ সময়ে কি বলেছিলেন আর সিরাজ শিকদার কি উত্তর দিয়েছিলেন এই বিষয়ক রেফারেন্সের জন্য হুমায়ুন আহমেদ ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ চলচ্চিত্রের সংলাপের আশ্রয় নিতে পারেন। ব্যাপারটাকে আরও পোক্ত করার জন্য সুনীল গাঙ্গুলীর চে বিষয়ক কবিতাটি ছেপে দিতে পারেন। (সুনীল গাঙ্গুলীর অনুমতির প্রয়োজন নেই, তবে ‘ফাদার অব অল বাম’ আব্দুল হকের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোকে ‘my prime minister’ সম্বোধন করে সামরিক সাহায্যের অনুরোধের ব্যাপারটা না আনাই ভাল।)
• ওরিয়ানা ফালাচী ম্যাডামের সমাজতন্ত্র বিষয়ক vivaতে বঙ্গবন্ধুর গোল্লা পাওয়া নিয়ে একটি বড় অধ্যায় অবশ্যই থাকবে। এ ব্যাপারে বর্ষীয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান বিপুল রেফারেন্স দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। ফালাচী ম্যাডামের viva তে A+ পেয়ে পাস করা জুলফিকার ভুট্টোর কথাও থাকতে পারে।
• রক্ষী বাহিনীর নারীধর্ষণ সহ অন্যান্য অপরাধ সংক্রান্ত রেফারেন্সের জন্য তিনি ঢাকা ডাইজেস্ট পত্রিকার পুরনো সংখ্যাগুলো ব্যাবহার করতে পারেন।
• হুমায়ুন আহমেদের নানার মত (যিনি নাকি মাথা থেকে পা পর্যন্ত নিখুঁত ভদ্রলোক ছিলেন) কিছু রাজাকারের চরিত্র এই উপন্যাসে থাকবে। এমন একটি চরিত্রের সাথে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা রাখতে পারেন, যেখানে বঙ্গবন্ধু রাজাকারের ব্রিটিশ আমলে বর্ণ হিন্দুদের কাছে নির্যাতিত হওয়ার কাহিনী শুনে কেঁদে ফেলেন এবং রাজাকারকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। এই সাক্ষাৎকারের পরে বঙ্গবন্ধু রাজাকারদের ‘ক্ষমা’ করে দেন।
• ‘তিথির লাল রুমাল’ জাতীয় উপন্যাসগুলোতে যেমন father daughter ডায়ালগ থাকে, বঙ্গবন্ধুর সাথে তরুণী শেখ হাসিনার ডায়ালগ থাকতে পারে, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকে ক্রমশ জন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ব্যাপারে ‘কঠিন কিছু কথা শোনাবেন’।
ইতিমধ্যেই মাননীয় আদালত হুমায়ুন আহমেদকে ভালভাবে পড়াশোনা করে উপন্যাসটি শেষ করতে অনুরোধ করেছেন। একটু আগেই দেখলাম ডঃ আনোয়ার হোসেন ‘মোহন যাদুকর’ হুমায়ুন আহমেদের থলির যাদুর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে বলেছেন। হুমায়ুন আহমেদের বহুল প্রশংসিত উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগারের’ একটি ছোট্ট অংশের প্রতি মাননীয় আদালত এবং ডঃ আনোয়ার হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। উপন্যাসের ‘রুনুর ডায়রির’ একটি অংশ
৫-৬-৭১
মন্টুটা তলে তলে এত। আমাকে বলছে তিন তিনটা ডিসিতে সিনেমা দেখাবে। যদি না দেখায় তাহলে সব ফাঁস করে দেব। তখন বুঝবে। মন্টুর একটা কবিতা ছাপা হয়েছে। কবিতাটি সে শুধু আমাকেই দেখিয়েছে। খুব অশ্লীল কিনা, তাই কাউকে দেখাতে সাহস হয়নি।
অনুগ্রহ করে রুনুর ডায়রির তারিখটি লক্ষ্য করুন, ৭১ সালের জুন মাসের পাঁচ তারিখ, পাক বাহিনী ইতিমধ্যে লাখ দশেক লোক মেরে ফেলেছে, লাখ খানেক নারী ইতিমধ্যে ধর্ষিত হয়েছে, সোনার বাংলা ছারখার হয়ে গেছে, আর উপন্যাসের রুনু সেই দেশের ঢাকা শহরে হৈ হৈ করে সিনেমা দেখতে যাচ্ছে, তার বিশ বছর বয়সী বড় ভাই কবিতা লিখছে ‘শুধু ভালবাসি’ আর ‘কিছু কিংশুক’, সেই কবিতা ছাপা হচ্ছে। কবি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সে গভীর রাতে বাড়ি ফিরছে। বাবা ওভারসীয়ার কাকুর ছেলের বউয়ের সাথে গল্প করছেন। ছোট খালা মেয়ে কিটকিকে নিয়ে আসছেন, পারিবারিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। একই সময়ে একই শহরে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম গণহত্যার লেশমাত্র এই ‘ক্লাসিক’ উপন্যাসে নেই।
ইতিহাসের বিকৃতি আর মানবতার অপমান এক ব্যাপার নয়। সম্রাট আওরঙ্গজেব বিষয়ক ইতিহাস ভিত্তিক উপন্যাসে তাঁর জীবিকার উৎসকে ‘টুপি সেলাই’ এর বদলে ‘জুতা সেলাই’ লিখলে সেটা ইতিহাস বিকৃতি হয়, কিন্তু ৭১ সালের জুন মাসে ঢাকা শহরে চব্বিশ বছরের দামড়া ছেলে খালাতো বোনের ফর্সা হাত ধরে ‘আশ্চর্য যন্ত্রণায়’ ছটফট করছে এটা লিখলে ইতিহাস বিকৃতির চেয়ে অনেক বড় কিছু হয়, তাতে মানবতার অপমান হয়। আজ যদি ইউরোপে কোন উপন্যাস প্রকাশ হয় ১৯৪২ সালে বার্লিন শহরের এক ইহুদি মধ্যবিত্ত পরিবারের নিস্তরঙ্গ জীবন নিয়ে, সেই উপন্যাসের লেখক ও প্রকাশককে ইউরোপীয় আদালত তাদের শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি তোয়াক্কা না করেই ‘holocaust denial’ এর অভিযোগে অভিযুক্ত করবে।
৭৩ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাস নিয়ে তরুণ হুমায়ুন লাজুক মুখে গিয়েছে বালিকা ছাত্রী গুলতেকিনের কাছে। ছাত্রী উপন্যাসে বানান ভুল ধরে ফেললো, হুমায়ুন লজ্জায় লাল হয়ে গেল। কি করে যেন এই লাজুক ছেলেটির সাথে সেই বছরই গুলতেকিনের বিয়ে হয়ে গেল। বালিকা বধূর সাথে বৃষ্টিতে ভেজা এবং অন্যান্য ঢং করতে করতে লাজুক ছেলেটি North Dakota State University তে বৃত্তি পেয়ে গেল। বৃত্তি পেয়ে সে আমেরিকায় গিয়ে polymar chemistry তে পিএইচডি করতে লাগলো। ৭২-৭৫ সালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কি ঘটছে না ঘটছে এই নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা ছিল না। দীর্ঘ ৩৫ বছর বাদে তরুণ হুমায়ুন এখন ‘কিংবদন্তি লেখক’, এতদিন বাদে তাঁর সেই ‘অগ্নিময়’ সময় নিয়ে লেখার খায়েশ হল কেন কে জানে? কিছু কিছু দুর্মুখ অবশ্য বলছেন শেখ হাসিনার দেওয়া দশ হাজার ডলার মানবিক সাহায্য নাকি নতুন বইয়ের সাইনিং মানি সেটা তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি।
যাই হোক, ‘দেয়ালে’ যেমন লেখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে ‘কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশের আত্মা দেশ ছেড়ে গেল’। না, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে বাংলাদেশের আত্মা যায় নি। শেষ বিচারে বঙ্গবন্ধু একজন ব্যক্তি মাত্র, ব্যক্তির মৃত্যু অবধারিত, বন্দুকের গুলিতে, না হলে অসুখে, না হলে দুর্ঘটনায়। গান্ধী মরেছেন, আব্রাহাম লিঙ্কন মরেছেন, লেনিন মরেছেন, হো চি মিন ভিয়েতনাম মার্কিন দখল দারিত্ব মুক্ত হওয়ার আগেই মরেছেন। মরে গিয়ে তারা অনেক বড় হয়ে গিয়েছেন, বিরাট সাদা মেঘের চেয়েও বড়, সেই মেঘের ছায়ায় তাদের দেশগুলো এগিয়ে গেছে। কিন্তু মৃত বঙ্গবন্ধু মেঘের মত বড় হতে পারেননি, তাঁকে ক্ষুদ্র করে ফেলা হয়েছে, ৬-দফার বঙ্গবন্ধু, ‘দাবায়া রাখতে পারবা না’র বঙ্গবন্ধু হয়ে গেছেন ‘আমার কম্বল কই’ এর হাস্যকর বঙ্গবন্ধু (যার কাছে ঠাট্টা করে পান-বিড়ি ওয়ালার ছদ্মবেশ নিয়ে ভিন দেশের গোয়েন্দারা এসে দেখা করে যায়)। তাঁর যুবক পুত্রদের নারী লিপ্সা আর ব্যাঙ্ক ডাকাতির গালগল্প চন্দ্র সূর্যের মত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে।
গলায় ফাঁস পড়িয়ে বাংলাদেশের আত্মা ধীরে ধীরে বের করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট। হাসতে হাসতে শিশু রাসেলের মগজ আর চোখ বের করে দিয়ে ঘাতকেরা বুঝিয়ে দিয়েছে আগামীর বাংলাদেশে কি হতে চলেছে। ১৫ই আগস্ট ট্রাজেডির শেষ নয়, ট্রাজেডির শুরু মাত্র। সেই ট্রাজেডির ৩৭ বছর চলছে। বাংলাদেশের আত্মা এখনো আছে, তবে সে আত্মা দুষিত। এতটাই দুষিত যে নারী এবং শিশু হত্যাকারী একজন ঘাতককে উপন্যাসের নামে রোমান্টিক বীর মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ফেললেও সুশীল সমাজের কেউ টুঁ শব্দটি করেন না। তবে একই সুশীল সমাজ দীর্ঘদিন রাজপথে থাকা রাজনীতিবিদদের বেকুব এবং ডঃ ইউনুসের নখের যোগ্য নয় বলে গালিগালাজ করতে এক মুহূর্ত দেরি করেন না। সুশীল সমাজের মুরুব্বী ব্যারিস্টার রফিক উল হক, সবক দিয়ে বেড়ান দু নেত্রীর মানসিকতা না পালটালে দেশের কিস্যু হবে না। (কলহপ্রিয় নিচু মানসিকতার দু নেত্রী আশির দশকে দীর্ঘ আট বছর পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়ে বিশ্ব বেহায়াকে তাড়িয়েছেন, রফিক উল হক সেই বিশ্ব বেহায়ার এটর্নি জেনারেল ছিলেন)।
এই পোস্টের শিরোনাম কি দেব? “Tear down this wall”? মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিগ্যানের সোভিয়েত নেতা গরবাচেভকে বার্লিন দেয়াল ভেঙ্গে দেওয়ার আহবান জানিয়ে বলা স্মরণীয় চারটি শব্দ। ক্ষমতাশালী গরভাচেভ দেওয়াল ভাঙ্গেন নি, ভেঙ্গেছে পূর্ব জার্মান তরুণেরা। বুল ডোজার দিয়ে নয়, হাতুড়ি দিয়ে। ফেসবুকে ‘দেয়াল’ সম্পর্কিত আলোচনায় যারা ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদ করছে তারা ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট যে দেয়াল গড়ে তোলা শুরু হয়েছিল তা ভেঙ্গে ফেলা শুরু করেছে। দেয়ালের পেছনে আছে ৭৫ পূর্ববর্তী বাংলাদেশ, আছে উজ্জ্বল ৭১, ৬৯, ৫২। সে দেয়ালের সামনে আছে ৩৭ বছর অন্ধকারে থাকা বাংলাদেশ। রফিক উল হকরা সেই দেয়াল বড়ই পছন্দ করেন, অন্ধকারে তিনি আশির আর নব্বইয়ের দশকে কি করেছেন তা দেখা যায় না। সেই দেয়াল ভেঙ্গে গেলে সবই দেখা যাবে। দেয়াল যারা ভাঙ্গছে এদের বেশিরভাগেরই জন্ম ৭৫ এর পরে, কেউই ইতিহাসবিদ নয়। যে যেভাবে পারছে রেফারেন্স দিয়ে দেয়ালে ছোট ছোট ফুটো করে ফেলছে। সেই ফুটো দিয়ে আলো আসছে আর ৭৫ পরবর্তী অনেক কুতুবকেই আর ততটা কুতুব মনে হচ্ছে না। দেয়াল পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়লে ৭১, ৬৯ আর ৫২র আলোতেই বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে। সে বাংলাদেশে রফিক উল হকরাও থাকবেন, তবে বটতলার উকিল হিসাবে, সুশীল কুতুব হিসাবে নয়।
পেশায় প্রকৌশলী, মাঝে মাঝে নির্মাণ ব্লগে বা ফেসবুকে লেখার অভ্যাস আছে, কেউ পড়েটড়ে না, তারপরও লিখতে ভাল লাগে।
