এই বিদঘুটে শিরোনাম কার জন্য দাগা হয়েছে সবাই নিঃসন্দেহে বুঝতে পেরেছেন[...]

এই বিদঘুটে শিরোনাম কার জন্য দাগা হয়েছে সবাই নিঃসন্দেহে বুঝতে পেরেছেন, হ্যাঁ, পদ্মা সেতুর মতো আর কে আছে যার জন্য এমন বিদঘুটে শিরোনাম দাগা যায়? এবার, আমি কেন এরকম বিদঘুটে শিরোনাম দাগলাম? আমি না জানি সংস্কৃত না জানি অর্থনীতি কিন্তু সবসময় অর্থনীতির ধ্রুপদী সংস্কার নিয়ে কথা বলি। তাহলে, আমি ছাড়া আর কে আছে যার মন থেকে এমন বিদঘুটে শিরোনাম বের হবে? কিন্তু এই বিদঘুটে শিরোনামের উদ্দেশ্য কী? এই আরেক আকাশকুসুম কল্পনা – ভাবছি এই বিদঘুটে শিরোনামের মন্ত্রপুত হয়ে সরকার পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প নিয়ে আরো সাবধানতা অবলম্বন করবে। ভয় পাবেন না, বিচি অনেক বেশি হয়ে গেলেও, কাঁকরোলটা ছোটই হবে।

পদ্মা সেতু এমন কোনো প্রকল্প নয়, যে তা এখনই এই মুহূর্তে যেকোনো উপায়ে করে ফেলতে হবে। পদ্মা সেতু এক সুবিশাল প্রকল্প, এই প্রকল্প সম্পন্ন করতে কোনো একটি কারণে বা কোনো বিবিধ কারণে যদি প্রকল্প ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, তাহলে মুদ্রাস্ফীতির ধারায় থাকা বর্তমান অর্থনীতির মুদ্রাস্ফীতির সূচক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তার খেয়াল আছে আমাদের? যদি খেয়াল থাকে তাহলে রোগনির্ণয় তো হয়ে গেল, এবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেই হয়। চিকিৎসা কী? একটাই। যেখান থেকে যেভাবে টাকা আসুক, সেটা আসতে হবে, আর সরকারকে সম্ভব সবগুলো উপায় পর্যালোচনা করে কোন ফাইনান্সিয়াল প্রস্তাবটি প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত করবে ও প্রকল্পের ঋণপ্রবাহের সুদকে সর্বনিম্নে বেঁধে রাখবে এবং শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পের প্রান্তিক ভোক্তাদের সবচেয়ে কম সেবামূল্যে সেতুটির সেবা ব্যবহার করার সুযোগ দেবে – এই ভাবনাগুলো সর্বাধিক বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া। চারিদিক দিক থেকে শুধু শোনা যাবে, পারে নাই – পারবে না। কিন্তু সরকারকে ভাবতে হবে এই প্রকল্প যেন মুদ্রাস্ফীতির বাঁধ ভেঙ্গে না দেয়। এবং এই ভাবনার সফলতায় যখন পদ্মা সেতু হবে তখন ‘পারে নাই – পারবে না’দের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

২৪ comments

  1. নুর নবী দুলাল - ৩ মার্চ ২০১২ (১০:১৮ অপরাহ্ণ)

    আপনার মত এত সোজা চিন্তা আমাদের রাজনীতির কর্তা ব্যক্তিরা যদি করতে পারতো, দেশটা আর অভাগা থাকত না।

  2. মাসুদ করিম - ২৪ জুলাই ২০১৩ (১২:৩৪ অপরাহ্ণ)

  3. মাসুদ করিম - ৩০ জুলাই ২০১৩ (১:৫৭ পূর্বাহ্ণ)

  4. মাসুদ করিম - ৬ ডিসেম্বর ২০১৪ (৯:২৭ পূর্বাহ্ণ)

    কোনো দেশ পাশে না থাকলে মরে যাব না: প্রধানমন্ত্রী

    যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির বিরোধিতার পরও মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ যদি স্বাধীন হতে পারে, তাহলে কোনো একটি দেশকে পাশে না পেলেও এখন বাংলাদেশের সমস্যা হবে না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    আর কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হলেই একটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন না।

    শুক্রবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেসাই বিসওয়ালের সাম্প্রতিক সফর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের এই প্রতিক্রিয়া।

    স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘দুই আনার মন্ত্রী’ বলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেতে পারে বলে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক সাংবাদিক।

    শেখ হাসিনা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের যে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন, তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। কেউ যদি কোনো মতামত দিয়ে থাকেন তাহলে সে দায়িত্ব তার। তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই তা করা হয়েছিল বলেও শোনা গেছে

    “আমাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সারা বিশ্ব তন্ন তন্ন করে খুঁজেও প্রমাণ পায়নি।”

    কোনো সমস্যা হলেই কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে বলে মনে করেন না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আর একটা দেশ পাশে না থাকলে আমরা একেবারে শেষ হয়ে যাব? … একাত্তরেও যুক্তরাষ্ট্র বিরুদ্ধে ছিল বাংলাদেশ শেষ হয়ে যায়নি।”

    গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য ‘সব রকম চেষ্টা’ যুক্তরাষ্ট্র করেছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।

    শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে। তাদের সহযোগিতা বাংলাদেশ সব সময় পেয়েছে।

    “মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি আমরা লড়াই করে টিকে থাকতে পারি তাহলে স্বাধীন দেশ হিসাবে এখনো পারব।”

    “প্রত্যেকটা নাগরিককে বলব, এটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। সে মর্যাদা নিয়ে চলতে হবে। কেউ পাশে থাকলে বাঁচব, না থাকলে মরে যাব, এটা ঠিক না।”

    ভাল থাকলে বন্ধুর অভাব হবে না বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

    তিনি বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্বচ্ছ। এটা পূর্ব না পশ্চিম, উত্তর না দক্ষিণ- তা আমি বিবেচনায় নিতে চাই না।… বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে কারো সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করতে হয়, তা করব।”

    কাউকে ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারবে না- এমন চিন্তা ‘না থাকাই ভাল’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

  5. মাসুদ করিম - ২৯ মার্চ ২০১৫ (১২:০৮ পূর্বাহ্ণ)

    তেলের সাশ্রয়েই হবে পদ্মা: ফরাসউদ্দিন

    জ্বালানি তেলের দাম না কমানোর পরামর্শ দিয়ে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, এ থেকে সাশ্রয় হওয়া অর্থ দিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচ হয়ে যাবে।

    শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে। আমদানি ব্যয় কমেছে। বাড়ছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ।

    “বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, যে পদ্মা সেতুর খরচ নিয়ে আমাদের যতো চিন্তা ছিল; সেই সেতু নির্মাণের জন্য যে অর্থ খরচ হবে তা জ্বালানি তেল আমদানির সাশ্রয়ের অর্থ দিয়েই হয়ে যাবে।”

    ফরাসউদ্দিন বলেন, “বিশ্বে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকোতে অতিকায় বৃহদাকার তেলের মওজুদ এবং এর উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আহরণ ও বিপণনের প্রক্রিয়ায় দশ বৎসর আগের তুলনায় তেলের দাম এখন এক তৃতীয়াংশ। এ প্রবণতা অব্যাহত না থাকলেও তেলের মূল্য আবার বেড়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই।
    “ফলে বাংলাদেশে বর্তমান প্রেক্ষিতে আগের তুলনায় বছরে অন্ততঃ ৩০০ কোটি ডলার (৩ বিলিয়ন ডলার; প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে ২৪ হাজার কোটি টাকা) সাশ্রয় হবে পিওএল আমদানি খরচে। যা দিয়ে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচের পুরোটাই হয়ে যাবে।”

    বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা জ্বালানি তেল আমদানি খরচ নিয়ে বলেছেন, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানি খাতে মোট ৩৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। বিশ্ববাজারে দাম কমায় এবার (২০১৪-১৫ অর্থবছর) তা ১৬ থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে।

    বিপিসি চেয়ারম্যানের দেওয়া এ হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে জ্বলানি তেল আমদানি খাতে সরকারের ২২ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হবে।

    এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা আছে ২৯০ কোটি ডলার (প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে ২৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা)।

  6. মাসুদ করিম - ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ (৩:০৪ অপরাহ্ণ)

    শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি-জামায়াত আর ব্যাংকের এমডি মিলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অনেক চেষ্টা ও অপকর্ম করেছে কিন্তু অগ্রযাত্রা বন্ধ করতে পারেনি। অহেতুক বিনা কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ বন্ধ করতে চেয়েছিল।

    “কিন্তু তারা সেতু নির্মাণ ঠেকাতে পারেনি, আমরা নিজেরাই এই সেতু নির্মাণ করছি।”

    পদ্মা সেতুর ১৩ ভাগ কাজ হয়েছে: মন্ত্রী

    পদ্মা সেতুর সাড়ে ১৩ ভাগ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

    নোয়াখালীর সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরনের এক প্রশ্নের জবাবে বুধবার জাতীয় সংসদে মন্ত্রী এই তথ্য জানান।

    মন্ত্রী বলেন, “মূল সেতুর ৩টি টেস্ট পাইল, ভায়াডাক্ট এর চারটি টেস্ট পাইল এবং ২৮টি অ্যাঙ্কর পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন হয়েছে।”

    সেতুর কাজের জন্য ২৪শত টন ক্ষমতার পাইল ড্রাইভিং হ্যামার জার্মানি থেকে এবং ১ হাজার টন ক্ষমতার ফ্লোটিং ক্রেইন চীন থেকে এসে পৌঁছেছে বলে জানান তিনি।

    “পাইল নির্মাণে ১২ হাজার ৪০০ টন স্টিলপ্লেট সাইটে পৌঁছেছে। আরও ৯ হাজার স্টিলপ্লেট চট্টগ্রাম থেকে এবং ৭০০০ টন স্টিলপ্লেট চীন থেকে সাইটের পথে রওনা হয়েছে।”

    এই বর্ণনা দিয়ে মূল সেতুর ভৌত অগ্রগতি সাড়ে ১৩ শতাংশ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী, যে সেতুর উপর দিয়ে ২০১৯ সালের মধ্যে চলাচল শুরুর আশা করছে সরকার।

    মন্ত্রী বলেন, সেতুর জন্য মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর এবং শরীয়তপুর জেলায় গত অগাস্ট পর্যন্ত ১২৩০ দশমিক ৯ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ৫৩৭ দশমিক ১৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত সহায়তা বাবদ ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয়েছে।

    পুনর্বাসন স্থানে ১৩৩১টি প্লট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬২টি প্লট ভূমিহীন ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।

    তিনি জানান, সেতুর জাজিরা সংযোগ সড়কের ভৌত অগ্রগতি সাড়ে ৪৮ শতাংশ, মাওয়া সংযোগ সড়কের ভৌত অগ্রগতি ৫০ শতাংশ, সার্ভিস এরিয়া-২ এর ভৌত অগ্রগতি সাড়ে ৪৬ শতাংশ, নদীশাসন কাজের ভৌত অগ্রগতি সাড়ে ৮ শতাংশ।

    পদ্মা সেতুর উভয় প্রান্তে প্রকল্প এলাকায় ৬৭ হাজার ৫৫০টি গাছ লাগানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

    প্রকল্প এলাকায় একটি জাদুঘর স্থাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

  7. মাসুদ করিম - ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ (১১:৪১ পূর্বাহ্ণ)

    Replying to critics, the governor said the government is constructing the Padma Bridge from its own resources. “The Bangladesh Bank will always be there with the government in implementing any infrastructure project if necessary. The BB can easily spend US$ 6-7 billion from its reserve if it serves the interest of people.”

  8. মাসুদ করিম - ৮ অক্টোবর ২০১৫ (১১:০৭ পূর্বাহ্ণ)

    পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি। সৌজন্যেঃ মাছরাঙা টেলিভিশন Work on Padma Bridge Progressing Briskly YouTube Link: https://www.youtube.com/watch?v=81gIRqoysssMassranga Television

    Posted by Bangladesh Awami League on Monday, October 5, 2015

    Work on Padma Bridge Progressing Briskly

    পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি। সৌজন্যেঃ মাছরাঙা টেলিভিশন Work on Padma Bridge Progressing Briskly YouTube Link: https://www.youtube.com/watch?v=81gIRqoysssMassranga Television

    Posted by Bangladesh Awami League on Monday, October 5, 2015

  9. মাসুদ করিম - ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ (৯:২৯ পূর্বাহ্ণ)

    পদ্মায় স্বপ্নপূরণের ‘আসল যজ্ঞ’ শুরু

    দেশের দক্ষিণ জনপদকে সড়কপথে সরাসরি রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করতে দেড় দশকেরও বেশি সময় আগে পদ্মায় সেতু নির্মাণের যে স্বপ্নের সূচনা হয়েছিল, এবার তাকে চূড়ান্ত আকৃতি দেওয়ার কাজ শুরু হল।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার জাজিরায় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নদীশাসন এবং পরে মাওয়ায় সেতুর মূল কাজের উদ্বোধন করেন।

    মাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর এক কিলোমিটার ভেতরে শুরু হয় সাত নম্বর পিলারের মূল পাইলিংয়ের কাজ। এরকম মোট ৪২টি পিলারের ওপর ভর দিয়েই প্রমত্তা নদীর দুই তীরকে যুক্ত করবে পদ্মা সেতু।

    সরকার আশা করছে, ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু আগামী তিন বছরের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে। সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনও চলবে।

    জাজিরায় নদীশাসন কাজের উদ্বোধনের পর এক সুধী সমাবেশে নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি চেয়েছিলাম, আমরা পারি- আমরা তা দেখাব।… আজ আমরা সেই দিনটিতে এসে পৌঁছেছি।”

    এই সেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ‘মিথ্যা অভিযোগ’ এবং নানা বাধা-বিপত্তির কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতি কারও কাছে মাথা নত করেনি, করবেও না।

    “আমরা সেই জাতি, যে জাতি সম্পর্কে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না’, আজকেও সেটি প্রমাণিত হতে যাচ্ছে।”

    প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই সেতু দিয়ে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলা।

    এ সেতু হলে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে, প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হবে বলে আশা করছে সরকার।

    প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে মাওয়া ও জাজিরার পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে নানা রংয়ের ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে ছেয়ে ফেলা হয় পুরো প্রকল্প এলাকা।
    সকাল পৌনে ১০টার দিকে হেলিকপ্টারে করে প্রধানমন্ত্রীর জাজিরায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও কুয়াশার কারণে তা বিলম্বিত হয়। পৌনে এক ঘণ্টা পর নাওডোবা মৌজায় হেলিপ্যাডে নেমে কয়েকশ গজ দূরে নদীশাসন কাজের ফলক উন্মোচন করেন তিনি।

    জাজিরার অনুষ্ঠান শেষে নদীপথে অন্য পাড়ের মাওয়ায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পথে নদীর মধ্যে সাত নম্বর পিলারের পাইলিং কাজের জায়গাটিও দেখেন তিনি।

    মাওয়ায় এসে সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের পাশে নিয়ে বোতাম চেপে পদ্মা মূল সেতু নির্মাণ কাজের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

    এ সময় তিনি সবার কাছে দোয়া চান, যেন ‘সময়মত’ নির্মাণ কাজ শেষ করা যায়।

    সেতুর মূল দুই নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। মূল অনুষ্ঠানস্থলের বহু দুরেও দেখা যায় ভিড়।

    পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা ভিটে-মাটি ও জমি দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তাদের জীবন-মানের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখারও প্রতিশ্রুতি দেন।

    বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর রহমান ও ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জাজিরা ও মাওয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
    আরও ছিলেন সেনা প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, পুলিশের আইজি শহীদুল হক, চিফ হুইপ আসম ফিরোজ, স্থানীয় সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ ও সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, দীপু মনি, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

    ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ই পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তা শুরু হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

    ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে পুনরায় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে আসে বিশ্ব ব্যাংক।

    কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে থাকে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-যোগ্যতা দরপত্র মূল্যায়ন করে পাঁচ দরদাতাকে বাছাই করে তা বিশ্ব ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য পাঠানো হলেও সংস্থাটি তা ঝুলিয়ে রাখে।

    এরপর পদ্মা সেতুতে ‘সম্ভাব্য’ দুর্নীতির’ অভিযোগ আনে বিশ্ব ব্যাংক। দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন জানায়, দুর্নীতির কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।

    শেষ পর্যন্ত নকশা অপরিবর্তিত রেখে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের জুনে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানিকে মূল সেতু নির্মাণের কাজ এবং সিনো হাইড্রো করপোরেশনকে নদী শাসনের কাজ দেওয়া হয়।

    সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রকল্পের প্রায় ২৭ শতাংশ কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। এই সেতু নির্মাণের পাশাপাশি মাওয়া থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত চার লেইনের সড়ক হবে। রাজধানীর বিজয়নগর থেকে ঢাকা-মাওয়া সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে হবে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার।
    এছাড়া জাজিরা পয়েন্ট থেকে খুলনা, বেনাপোল, কুয়াকাটা পর্যন্ত চার লেইনের সড়ক নির্মণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

  10. মাসুদ করিম - ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ (২:৩০ অপরাহ্ণ)

    In reply to a question, the WB chief economist said the past experience involving the Padma Bridge construction project with the World Bank (WB) has somehow become boon to Bangladesh.

    “Bangladesh is now building the bridge with its own funds. It proves Bangladesh has its own financial strength to implement such a big project,” he said.

    “Forget the (previous) history. Now the message is that Bangladesh can build the largest bridge with its own funds. I am sure it has boosted the confidence of the country,” Mr Basu stated.

    The economist said: “Just think could Bangladesh able to implement such a big project (with its own funds) 10 years ago? Now it can. So, thanks to the history (with the WB), the outcome has brought a good result for Bangladesh.”

    Sketching a better picture of Bangladesh’s macro-economy even after the impact of the global financial meltdown, Dr Basu said its economy has now taken off.

    “The people should know the strength of the economy. They should now be confident of their own country. They should now help their country to grow faster,” he added.

    “Twenty years ago, I visited Bangladesh. This time now I have seen a radical change. The export-GDP (gross domestic product) ratio has increased to 20 per cent from 7.0 per cent that time. The US$ 7-$8 billion foreign exchange reserve in 2009 has now swelled to $ 27 billion.”

    “I have already checked the statistical data of the Bangladesh’s economy. But after the last four-day visit here, now I feel that the country’s economy is much better than the statistics,” he told journalists.

  11. মাসুদ করিম - ২১ মার্চ ২০১৬ (৫:০৫ অপরাহ্ণ)

    মুহিতের বক্তব্যে দলের ভেতরে ক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রী অসন্তুষ্ট

    একটি বাংলা দৈনিকে পদত্যাগী গভর্নর আতিউর রহমানের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দেওয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পরিচালনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এক সভায় দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীসহ নেতৃবৃন্দ উষ্মা প্রকাশ করেছেন।

    প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে গণভবনে রোববার সন্ধ্যায় দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

    রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির পর মন্ত্রী মুহিত গত শুক্রবার বাংলা দৈনিক প্রথম আলোতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিদায়ী গভর্নরের সমালোচনা করেন।

    সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী বলেন,“সংবাদ সম্মেলনই করেছেন। বাড়িতে করেছেন এবং দুই দফা। একবার পদত্যাগের আগে,আরেকবার পদত্যাগের পর। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি ইনিয়ে-বিনিয়ে অনেক কথা বলেছেন। দুজন ডেপুটি গভর্নরের চাকরি গেছে তার কারণে। বোঝাতে চাইলেন যে তিনি একা দায়ী নন। দুজনের বাইরে আরও কয়েকজনের চাকরি খাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তা আর হয়নি,হবেও না।”

    সাবেক গভর্নরের অবদান ‘প্রায় শূন্য’ মন্তব্য করে মুহিত সাক্ষাৎকারে আরও বলেন,“তিনি (আতিউর রহমান) খালি পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছেন আর লোকজনকে অনুরোধ করেছেন বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তাকে সুযোগ দিতে ও দাওয়াত দিতে। এখন বেরোচ্ছে এগুলো।”

    সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর মন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, তার চূড়ান্ত অনুমোদন ছাড়াই প্রথম আলো কথাগুলো প্রকাশ করেছে এবং এসব বক্তব্য তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

    প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরাসহ সরকারি দলের নানা স্তরের নেতারা প্রায়ই পত্রিকাটির বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে থাকেন।

    রোববার দলের বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা উঠলে প্রধানমন্ত্রীও অশীতিপর মন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা।

    বিষয়টি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কোনো নেতা প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।

    আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহিতের এই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কোনো সুযোগ ছিল না।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী সংসদের বেশ কয়েকজন সদস্য কথা বলেছেন।

    নব্বই পরবর্তী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা দলীয় সভানেত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“মিটিংয়ে অর্থমন্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুরো হাউজই অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে এক সুরে কথা বলেছেন।”

    কার্যনির্বাহী সংসদের একাধিক সদস্যের বরাতে জানা গেছে বিস্তারিত।

    তারা জানান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন।

    হাছান মাহমুদ এই ঘটনার জন্য আমেরিকার ফেডারেল ব্যাংককে দায়ী করে বক্তব্য রাখেন।

    এসময় হাছান মাহমুদের বক্তব্যের ভুল ধরে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, “হাছান, তুমি ভুল বলছো।”

    এরপর জাফরউল্যাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও লেনদেনের পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।

    অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং দলের কোষাধ্যক্ষ ও মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এন এইচ আশিকুর রহমানও কথা বলেন।

    অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারের বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন,গভর্নরের পদত্যাগের পরও তাকে নিয়ে মন্ত্রীর এইরকম প্রকাশ্য বক্তব্য তার বোধগম্য নয়।

    আতিউর রহমানের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর ‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের’ বিষয়টি এভাবে পত্রিকায় না নিয়ে এলেই অর্থমন্ত্রী ভালো করতেন বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।

    বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিদায়ী গভর্নরের প্রশংসাও প্রধানমন্ত্রী করেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকরা জানান।

    “প্রধানমন্ত্রী এও বলেন, ‘আমি পদ্মা ব্রিজের সময় অর্থমন্ত্রীর কাছে টাকা চেয়েছিলাম। উনি বলেছিলেন, ‘আমি কোথা থেকে টাকা দেবো?’ সেই টাকার ব্যবস্থা আতিউরই করে দিয়েছিল’।”

    বৈঠকে সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মন্ত্রীদের ‘লাগামছাড়া’ বক্তব্যের বিষয়ে কথা বলেন।

    যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বক্তব্যের সমালোচনা করে নাসিম বলেন,“মন্ত্রীরা এভাবে কথা বললে সরকারের ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে।”

    যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের চূড়ান্ত রায়ের আগে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মীর কাসেমের আপিলের পুনঃশুনানির দাবি তোলেন কামরুল।

    এসব আলোচনার পর আবার গভর্নর নিয়ে আলোচনা উঠে। তাকে নিয়ে ফেইসবুকে দেওয়া দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিনের বক্তব্যের বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।

    ফেইসবুকে দেওয়া নিজের স্ট্যাটাস এবং একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে লেনিন বলেন, তার এই স্ট্যাটাস ও বক্তব্য দেওয়া ‘ঠিক হয় নাই’।

    রোববারের এই বৈঠকে ১০ ও ১১ জুলাই হতে যাওয়া আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের বিষয়েও আলোচনা হয়।

    সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দলের সকল সাংগঠনিক জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়।

  12. মাসুদ করিম - ১৫ অক্টোবর ২০১৬ (৩:২২ অপরাহ্ণ)

    পদ্মার ‘তিক্ত স্মৃতি ভোলাবে’ বিশ্ব ব‌্যাংক প্রেসিডেন্টের সফর

    পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্ব ব‌্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যে তিক্ত স্মৃতি রয়েছে, জিম ইয়ং কিমের সফর তা মুছে দেবে বলে আশা করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

    দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য দেখতে রোববার ঢাকায় আসছেন বিশ্ব সংস্থাটির প্রধান জিম। ‍দুই দিনের এই ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’ বাংলাদেশে পালনের পাশাপাশি ঢাকায় একটি বক্তৃতাও দেবেন তিনি।

    এক দশক পর বিশ্ব ব‌্যাংকের কোনো প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে করতে এলেও কিমের এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

    বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’ পালন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃষ্টান্ত হিসেবে মেলে ধরবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

    সর্বশেষ ২০০৭ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন বিশ্ব ব‌্যাংকের তখনকার প্রেসিডেন্ট রবার্ট জেলিক। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সংস্থাটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম‌‌্যাকনামারা এসেছিলেন ঢাকায়, এরপর ঘুরে যান পল উলফোভিৎজ ও জেমস উলফেনসন।

    যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলন শেষ করেই ঢাকায় আসছেন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আসা দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক কিম।

    গত ৭ থেকে ৯ অক্টোবর ওই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থমন্ত্রীরা যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীও মুহিত ছিলেন। দেশগুলো থেকে দুটি সংস্থার প্রতিনিধিরাও অংশ নেন এই সম্মেলনে।

    ভারতে বিশ্ব ব‌্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্ব নেওয়া বাংলাদেশের নাগরিক জুনাইদ কামাল আহমেদ ওয়াশিংটনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে যে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনা ঘটেছিল, তা এই সফরে দূর হবে বলে তিনি আশাবাদী।

    পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব‌্যাংকের অর্থায়নের কথা থাকলেও প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপড়েনের এক পর্যায়ে তাদের বাদ দিয়েই দেশের বৃহত্তম এই সেতুর কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার।

    ওই সময়কার তিক্ত অভিজ্ঞতা দূরে রেখে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে সংস্থাটিকে উন্নয়ন অংশীদার করতে নতুন উদ্যমে বাংলাদেশ কাজ করবে বলে আশা রাখছেন জুনাইদ।

    কয়েক বছর আগে পদ্মা সেতু নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার পর গত অর্থবছরে বাংলাদেশকে ঋণের অর্থ ছাড় আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি করেছিল বিশ্ব ব‌্যাংক।

    বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে। এর আগে কখনও সংস্থাটি এক বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ ছাড় করেনি।

    ওয়াশিংটনে সদর দপ্তরে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে কিমকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন জুনাইদ।

    তিনি বলেন, “উনি (কিম) খুবই পজিটিভ মাইন্ডের একজন মানুষ। একজন আশাবাদী মানুষ।”

    বাংলাদেশকে কী চোখে দেখেন কিম- জানতে চাইলে জুনাইদ বলেন, “পাঁচ বছর আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছেন।

    “এই পাঁচ বছর তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। আর সেই সাফল্য-অর্জন সরেজমিনে দেখতেই বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন।”

    বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের সফর যেহেতু বিশ্ব সংবাদ মাধ‌্যমেও শিরোনাম হবে, সেহেতু তা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে বলেও মনে করেন জুনাইদ।

    ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকে বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূইঞাও বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ভালো কাভারেজ পাওয়া যাবে। এতে বাংলাদেশের সুনাম বাড়বে।”

    কর্মসূচি

    রোববার রাতে ঢাকায় নামার পর র‌্যাডিসন হোটেলে উঠবেন জিম ইয়ং কিম।

    সোমবার সকালে অর্থমন্ত্রী মুহিতের সঙ্গে বৈঠকের পর বিকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বে বাংলাদেশ’ শীর্ষক পাবলিক লেকচারে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেবেন তিনি।

    ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার। বিশ্ব ব্যাংক সাউথ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানিটি ডিক্সনও বক্তৃতা করবেন।

    বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদের ‘এন্ড পোভার্টি’ শীর্ষক গান গাইবেন অনুষ্ঠানে। এ পর্বের শেষে #প্রসপার বাংলাদেশ (#ProsperBangladesh) শিরোনামে একটি প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করা হবে।

    সেখানে ‘এন্ড গ্লোবাল পোভার্টি বাই ২০৩০: শেয়ারিং বাংলাদেশ’স এক্সপেরিয়েন্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায়ও বক্তৃতা করবেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট।

    মঙ্গলবার সকালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য বরিশাল যাবেন কিম। ফিরে এসে একান্ত বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। বিকালে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিদায় নেবেন তিনি।

    কেন গুরুত্বপূর্ণ

    বিশ্ব ব‌্যাংকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে আসতে চললেও কেন কিমের এই সফর গুরুত্বপূর্ণ, তার ব‌্যাখ‌্যায় অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, তার উপস্থিতিতে ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’ পালন করে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

    ওয়াশিংটনে বৈঠকের ফাঁকে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচন এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে (এমডিজি) বাংলাদেশের সাফল্যে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট অভিভূত।

    “তাই নিজের আগ্রহেই আমাদের দেশ সফর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উপলক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস। বাংলাদেশে তাই এবার দিবসটি ভিন্ন আঙ্গিকে পালিত হবে।”

    কিমের আসন্ন ঢাকা সফরকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল‌্যের ‘স্বীকৃতি’ হিসেবে দেখছেন মুহিত।

    “বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। আমরা দারিদ্র্য বিমোচনে যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছি, সেটা সরেজমিনে দেখতেই তিনি বাংলাদেশে যাচ্ছেন।”

    বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করছেন ঢাকায় বিশ্ব ব‌্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফানও।

    ওয়াশিংটনে সম্মেলনের ফাঁকে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “‍যেভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।”

    নিজের সংস্থার প্রেসিডেন্টের সফর নিয়েও আশাবাদী বাংলাদেশে বিশ্ব ব‌্যাংকের মিশন প্রধান।

    “বিশ্ব ব্যাংকের আইডিএ-এর খুব ভালো ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ। আর সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে, দেশটির দারিদ্র্য বিমোচনে অভাবনীয় সাফল্য দেখে। সেজন্যই তো বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে সফরের জন্য বেছে নিয়েছেন।”

    বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে অতি দারিদ্র্যের হার মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে এ হার ছিল সাড়ে ১৮ শতাংশ।

    জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শূন‌্য থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে।

    দ্রুত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপর গুরুত্ব দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের দারিদ্র্য শূন‌্যে নামিয়ে আনতে কোনো মতেই ২০৩০ সাল লাগবে না। তার আগেই আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছে যাব।

  13. মাসুদ করিম - ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ (৬:৪০ অপরাহ্ণ)

    Canadian court finds no proof of Padma Bridge bribery conspiracy

  14. মাসুদ করিম - ২১ মে ২০২২ (৮:২৮ পূর্বাহ্ণ)

    মাহফুজ আনামের ব্যাখ্যা: বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনও বৈঠক করিনি
    https://www.banglatribune.com/others/744000/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%9C-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0

    পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের ‘ষড়যন্ত্রের’ সঙ্গে ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম জড়িত বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।

    প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য তথ্যনির্ভর নয় দাবি করে মাহফুজ আনাম বলেছেন, তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনও ধরনের বৈঠক বা যোগাযোগ করেননি।

    বৃহস্পতিবার (১৯ মে) ডেইলি স্টার পত্রিকার প্যাডে দেওয়া ব্যাখ্যায় মাহফুজ আনাম বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ মে বুধবার তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যে আমাকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘… ড. ইউনূস এবং যেটা আমরা শুনেছি—মাহফুজ আনাম। তারা আমেরিকা চলে যায়, স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়, হিলারির কাছে ই-মেইল পাঠায়। যাহোক… ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মিস্টার জোয়েলিক, যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার শেষ কর্মদিবসে, কোনও বোর্ড সভায় না, পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়।’ আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে আমি এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কখনও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাইনি, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাইনি, কখনও হিলারি ক্লিনটনকে কোনও ই-মেইল পাঠাইনি।’’

    মাহফুজ আনাম বলেন, ‘ওয়াশিংটনে বা বিশ্বের অন্য কোনও জায়গায় বা শহরে পদ্মা সেতুর অর্থায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কোনও বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনও ধরনের বৈঠক বা যোগাযোগ করিনি। বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, ‘আমার বিষয়ে করা মন্তব্য তথ্যভিত্তিক নয়।’

  15. মাসুদ করিম - ২৮ মে ২০২২ (৭:৪৪ অপরাহ্ণ)

    চাপ ছিল, প্রলোভনও ছিল: মসিউর
    https://bangla.bdnews24.com/politics/article2067661.bdnews

    পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর বিশ্ব ব্যাংকসহ ঋণদাতা সংস্থাগুলো দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি বিদেশে চাকরির প্রলোভনও দেখিয়েছিল বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান।

    বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ঠিক হয়ে যাওয়ার পর এক দশক আগের সেই কথা তিনি প্রকাশ্যে আনলেন আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে।

    বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, আইডিবি ও জাইকার অর্থায়নে ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরুর পর দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্ব ব্যাংক।

    তখন বিশ্ব ব্যাংকের চাপে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করতে হয়, ছুটিতে যেতে হয় সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসাইনকে। মামলাও হয়।

    তখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজর মসিউর রহমানের পদত্যাগের শর্তও দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু তিনি রাজি হননি।

    এরপর বিশ্ব ব্যাংক আর এই প্রকল্পে ফেরেনি; আর নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে কাজ শেষ করে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু।

    শুক্রবার রাতে ভার্চুয়াল ওই অনুষ্ঠানে সেসব ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর, যা আগে কখনও সামনে আসেনি।

    তিনি বলেন, “আমার ওপরে যে চাপ ছিল যেমন, এখানে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ছাড়া অন্য যারা এতে অর্থায়ন করছে- বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাইকা- এরা একদিন সকালে আগে সময় ঠিক করে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইল। প্রথমে তারা বলল যে, জাপানের অ্যাম্বাসির অফিসে।

    “আমি বললাম, দেখো জাপান অ্যাম্বাসির অফিসে আমি যাব না। আমার নিজের কাছে যুক্তি ছিল যে, জাপানি অ্যাম্বাসির কাছে যদি আমি যাই, তাহলে যেটা মানুষের ধারণা হবে এবং প্রচার হবে- সেটা হলো, আমি বোধহয় তাদের কাছে নতজানু হয়ে কোনো একটা সুবিধা চাচ্ছি। জাপানি অ্যাম্বাসেডরকে বললাম, তুমি তাহলে আমার এখানে আস। জাপানি অ্যাম্বাসেডর বলল- ‘না, তোমার ওখানে গেলে সাংবাদিকদের ফেইস করতে হবে, আমি সাংবাদিকদের ফেইস করতে পারব না’। আমি বললাম, সাংবাদিকদের আমি ফেইস করব, তুমি আস।”

    মসিউর রহমান বলেন, “ওরা এসে আমাকে বলল যে, আমাকে দায়িত্ব ত্যাগ করতে হবে, দেশও ত্যাগ করতে হবে। দেশত্যাগের শর্ত হলো তারা আমাকে বিদেশে বিশ্ব ব্যাংকে বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা কোথাও আমাকে একটা কনসালট্যান্সি জোগাড় করে দিবে এবং আমি যে বেতন চাই, সেই বেতনই তারা ব্যবস্থা করে দেবে। অথবা তারা কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কিছু কাজ ঠিক করে দেবে এবং আমাকে তারা টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করে দেবে।

    “আমার উত্তর হলো দেখো, আমার যদি টাকা করার ইচ্ছা থাকত, তাহলে তোমরা যে দোষারোপ করছ, সেখানেই তো আমি টাকা করতে পারতাম। ওদের যেটা প্রস্তাব, এটা হলো একটা সামঞ্জস্যহীন প্রস্তাব। যে ‘দোষ’ করেছে, তাকে আবার তারা পুরস্কৃত করবে।”

    সেসময় আওয়ামী লীগ নেতা ও বন্ধুরাও তাকে বিদেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানান মসিউর।

    তিনি বলেন, “যেটা আমার বলা উচিৎ হবে এবং না বলাটা অনুচিত হবে যে, এই শক্ত পজিশন নেওয়ার ক্ষমতাটা কোত্থেকে আসলো? বিশ্ব ব্যাংক বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কিছু গুরুজন স্থানীয়, যারা প্রভাবশালী, দু-একজন আমার বন্ধু, তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত- বন্ধু হিসেবে তারা আমাকে বলেছে যে, দ্যাখো তোমার নামে এসব ছড়াচ্ছে। তুমি কেন দায়িত্ব ত্যাগ করো না এবং দেশ ছাড় না কেন?

    “আমি বললাম, আমি দেশ ছাড়ব না এইজন্য যে, দেশের বাইরে গেলে আমার পায়ের তলায় মাটি থাকবে না।”

    ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাহস জুগিয়েছেন’ এ কথা বলতে বলতেই লাইভ অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলেন মসিউর।

    কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলে চলেন, “আমি যেটা বলি সেটা হল, আমার ওপর একটা বড় ছায়া আছে। সেই ছায়াটা হল- বঙ্গবন্ধুর ছায়া। ওই ছায়া যতদিন থাকবে, ততদিন আমি নিরাপদ।”

    মসিউর বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও সৎ সাহস না থাকলে পদ্মা সেতু হত না।”

    তিনি আরও বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট শেষ কর্মদিবসে এই ঋণ বাতিল করে দেন। ঋণের অনুমোদন দেয় বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড। বোর্ডকে নাকচ করার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের আছে কি না, এই একটা প্রশ্ন থাকতে পারে।”

    পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরু থেকেই এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এই উপদেষ্টা বলেন, “পদ্মা সেতু শুরু হওয়ার আগে বা এই দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংক সোচ্চার হওয়ার আগে যেটা অনুসরণ করা হতো- যে সংস্থা ঋণ দিয়েছে, প্রত্যেকে তাদের নিজের নিজের নিয়ম মেনে চলত।

    “কিন্তু এইখানে বিশ্ব ব্যাংক- এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা এদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যে, যদি বিশ্ব ব্যাংক কোথাও দুর্নীতির জন্য কোনো সহায়তা বন্ধ করে তাহলে এরাও সে সহায়তা বন্ধ করবে। এরকম চাপ তারা সৃষ্টি করল। এই যে আন্তর্জাতিক মণ্ডলে চাপ সৃষ্টি- এর বিরুদ্ধে একটা পজিশন নেওয়া, এটা অত্যন্ত সাহসী না হলে সম্ভব হত না।”

    পদ্মা সেতুর চালুর পর বাংলাদেশের উন্নয়ন কিভাবে ত্বরান্বিত হবে সে কথাও তুলে ধরেন তিনি।

    মসিউর বলেন, “উন্নয়ন ততক্ষণ শুরু হয় না, যখন না মানুষের মনে উন্নয়ন স্পৃহা জাগে। দ্বিতীয়ত যতক্ষণ না তাদের এই আস্থা জাগে যে, উন্নয়ন শুধু স্বপ্ন না, উন্নয়ন তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে। আর এই বাস্তবায়ন সম্ভব হয় দেশের নেতৃত্ব ও নীতি যদি সঠিক পথে চলে। জনগণের আস্থা ও স্পৃহাই হলো সব থেকে বড় শক্তি। এই স্পৃহার এখনকার উৎস শেখ হাসিনা।”

    বঙ্গবন্ধু সেতু যখন শুরু হয়, তখনও বিশ্ব ব্যাংক এটা ‘ভায়াবল’ হবে না বলে আপত্তি তুলেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যখন অনেক উন্নতি হবে, তখন বিশ্ব ব্যাংক আবার নিজে থেকেই ফিরে আসল।

    “বঙ্গবন্ধু সেতু জাতীয় আয়ে ২ থেকে ৪ শতাংশ অবদান রাখছে, যেটা সমীক্ষার থেকেও বেশি।”

    পদ্মা সেতু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প বাড়বে, মোংলা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং এশিয়ান হাইওয়ে সুবিধা ব্যবহার করে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ছাড়াও দেশের বাইরে যাওয়ার সুবিধা হবে বলে জানান তিনি।

    “এর মানে হলো বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য ও বিশ্ব অর্থনীতির একটা কেন্দ্রে এসে গেল। এই কেন্দ্রের যে ক্ষমতা, সেটা অর্জনের জন্য আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। সেই কাজের উৎস হল, বিশ্বাস ও আস্থা, যেটা এই নেতৃত্বের কাছ থেকে পেয়েছি।”

    এমন সেতু আগামী ৫০ বা ১০০ বছরেও আর একটি হবে না মন্তব্য করে মসিউর বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক একটি শতবর্ষী প্রকল্পের অংশীদার হওয়া থেকে নিজেকে বাদ দিয়েছে। বাংলাদেশ এককভাবে এই শতবর্ষী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এটা দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দেবে। এইটা একটা বড় অর্জন।“

    পদ্মা সেতু নিয়ে যে ‘ষড়যন্ত্র’ সেটা ‘আপতদৃষ্টিতে’ কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

    ‘রাজনীতির সাতকাহন’ নামে আওয়ামী লীগের এ সাপ্তাহিক আয়োজনে সঞ্চালনা করেন দলের উপ-প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম; বক্তৃতা করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

  16. মাসুদ করিম - ২৩ জুন ২০২২ (৭:০১ পূর্বাহ্ণ)

    পদ্মায় থই পেল না বিশ্ব ব্যাংক
    https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article2079188.bdnews

    পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল বিশ্ব ব্যাংক, ঋণের চুক্তিও হয়েছিল, কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর সরকারের সঙ্গে শুরু হয় সংস্থাটির টানাপড়েন। এরপর তাদের বাদ দিয়েই হল বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু।

    দুর্নীতির সেই অভিযোগের ভিত্তি কানাডার আদালত এবং দেশে দুদক না পাওয়ার পর বিশ্ব ব্যাংকের আক্ষেপ প্রকাশের কথা সম্প্রতি বলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। “শেষ পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, পদ্মা সেতু থেকে সরে যাওয়া ভুল হয়েছে,” বলেন তিনি।

    বিশ্ব ব্যাংক একটি শতবর্ষী প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নিজেদেরই ‘বঞ্চিত’ করেছে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং সেই সময় পদ্মা সেতুর ইন্টিগ্রিটি উপদেষ্টা মসিউর রহমান।

    প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে। এই সেতু জনপদের চালচিত্র বদলে দেবে বলে একে বলা হচ্ছে ‘স্বপ্নের সেতু’।

    নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, পদ্মা সেতু নিছক একটি সেতু নয়, এটা বাংলাদেশের ‘সামর্থ্য আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক’।

    বিশ্ব ব্যাংকের আসা ও যাওয়া

    দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতুর পরিকল্পনা, সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নের সময়ও বাংলাদেশের সরকার কখনোই ভাবেনি যে এই সেতু নিজস্ব অর্থায়নে হবে।

    নানা নাটকীয়তা ঘটনার মধ্যে সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকে সরে যাওয়ার পরই অনেকটা ‘জেদে’র বশেই নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয়েছে।

    পদ্মার উপর সেতু নিয়ে আলোচনা শুরু হয় অনেক আগেই। ২০০১ সালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন শেখ হাসিনা। তখনও তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

    এরপর এই সেতু নিয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি। সেতুটি মাওয়ায় হবে, না কি পাটুরিয়ায় হবে- তা নিয়েও অঞ্চলবাসীর মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়। ২০০৪ সালে জাইকা একটি সমীক্ষা চালিয়ে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেয়।

    এরপর এই সেতুর বিষয়টি অনেক দিন চাপা থাকলেও ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এই সেতু নির্মাণের আলোচনা নতুন করে শুরু হয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায়। তখন একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।

    ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার দায়িত্ব নিয়ে নতুন আঙ্গিকে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করে। কয়েক দফায় নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৯১ কোটি ডলার। সিদ্ধান্ত হয়, সড়ক ও রেল উভয় যান পারাপার হবে এই সেতুতে; উপরে চলবে গাড়ি, নিচে ট্রেন।

    কয়েক দফায় ব্যয় বাড়ানোর পর ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় পদ্মা বহুমুখী সেতু সংশোধিত নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এর আগেই নিশ্চিত করা হয় ঋণদাতাদের প্রতিশ্রুতি।

    এডিবি প্রধান উদ্যোক্তা হলেও সবচেয়ে বেশি ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘লিড ডোনার’ হিসেবে যুক্ত হয় বিশ্ব ব্যাংক।

    মোট নির্মাণ ব্যয় ২৯১ কোটি ডলারের মধ্যে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্ব ব্যাংক। এডিবি ৬১ কোটি ৫০ লাখ, জাইকা ৪১ কোটি ৫০ লাখ, আইডিবি ১৪ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। বাকি অর্থ সরকার দেবে বলে ঠিক হয়েছিল।

    ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পদ্মার বুকে ভাষাশহীদ বরকত ফেরিতে হয় বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আসা সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনগোজি ওকোনজো ইউয়েলা বলেন, বাংলাদেশের স্বপ্নে অংশীদার হতে পেরে তারা ‘গর্বিত’।

    বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি পরও অর্থায়ন ছাড় হচ্ছিল না এবং কাজও শুরু করা যাচ্ছিল না।

    এরইমধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার প্রথম খবরটি পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে, যখন কানাডা পুলিশ এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঘুষ সাধার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে।

    বিশ্ব ব্যাংক তখন জানায়, তারা নিজেরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

    পদ্মা প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে প্রাকযোগ্য তালিকায় থাকা পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের একটি ছিল কানাডাভিত্তিক লাভালিন। মূল্যায়ন কমিটির মনোনীত এই পাঁচ প্রতিষ্ঠান থেকে একটিকে নির্বাচিত করার কথা ছিল বিশ্ব ব্যাংকের।

    বিশ্ব ব্যাংকের মুখপাত্র লেসলি কুইন্টনের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে এ তদন্ত শুরু করেছে কানাডীয় কর্তৃপক্ষ।

    রয়্যাল কানাডীয় পুলিশ লাভালিনের আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ এবং পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে। মামলাও হয় তাদের বিরুদ্ধে। পরে বাংলাদেশের মামলায়ও আসামি করা হয়েছিল এই দুজনকে।

    ওই বছরের ১০ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, পদ্মা প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করেছে বিশ্ব ব্যাংক।

    ঢাকায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন জানান, ‘দুর্নীতির’ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেবেন না।

    বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর সরকারের পক্ষ থেকে তা বারবারই নাকচ করা হচ্ছিল। তবে প্রকল্পের কাজ বন্ধই থেকেছে।

    এই নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে ২০১২ সালের ২৯ জুন পদ্মা প্রকল্পে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করে বিশ্ব ব্যাংক।

    চুক্তি বাতিলের পক্ষে বিশ্ব ব্যাংক যুক্তি দেখায়, এই প্রকল্পে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ মিলেছে।

    ‘দুর্নীতির’ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছিল জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ সাড়া না মেলায় প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে।”

    দুদকের তদন্ত-মামলা

    ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্ত বদলানোর বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে তদন্তের শর্ত দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। তখন তদন্ত এবং প্রকল্পের কাজ একসঙ্গে চালাতে সরকার চাইলেও ২০১২ সালের ২ ডিসেম্বর বিশ্ব ব্যাংক সাফ জানিয়ে দেয়, মামলা না হলে ঋণ মিলবে না।

    এর মধ্যেই মন্ত্রীর পদ ছাড়েন সৈয়দ আবুল হোসেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

    এরপর ছুটিতে যান সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান।

    প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুদক জানিয়েছিল, মূল সেতু নির্মাণে প্রাকযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে কোনো রকম দুর্নীতি হয়নি।

    তবে বিশ্ব ব্যাংকের তাগিদে ‘ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে দুদক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল জাহিদ ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা করেন, যাতে সেতু বিভাগের তখনকার সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান করে সাতজনকে আসামি করা হয়েছিল।

    অন্য আসামিরা হলেন- সেতু কর্তৃপক্ষের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদী শাসন) কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালটেন্ট লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশে কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, এই সংস্থার আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহ ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস।

    মামলার আগে অভিযোগ অনুসন্ধানে মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ নূরে আলম চৌধুরীর ভাই নিক্সন চৌধুরী, সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এসএনসি-লাভালিনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াউল হকসহ ২৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক কর্মকর্তারা।

    কানাডার আদালতে এসএনসি-লাভালিনের বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ, কোম্পানির তিন কর্মকর্তা ও দুদকের মামলার আসামি কেভিন ওয়ালেস, রমেশ শাহ ও ইসমাইলের জবানবন্দি সংগ্রহ এবং রমেশের ডায়েরি সংগ্রহ করতে ২০১৩ সালের মে মাসে দুদকের তৎকালীন প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক এবং দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম কানাডা গিয়েছিলেন। তবে জবানবন্দি কিংবা ডায়েরি পাননি তারা।

    এর মধ্যে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা সরকার দিলে পরের বছরের সেপ্টেম্বরে দুদক ওই মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দেয়। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি’।

    তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেছিলেন, “মামলার মেরিট না থাকায়, তদন্তে পর্যাপ্ত তথ্য ও সাক্ষী না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তে মামলাটিকে এগিয়ে নেওয়ার মতো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই আদালতে চার্জশিট পেশ করা সম্ভব হচ্ছে না।”

    এরপর একই বছরের অক্টোবর দুদকের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতির আদেশ দেয় আদালত।

    এ মামলায় মোশাররফ হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার পাশাপাশি সরকারি চাকরি থেকেও সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। পরে তিনি মুক্তি পান। ২০১৩ সালের জুনে বরখাস্তের আদেশও প্রত্যাহার করে তাকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর অবসরে গিয়ে বর্তমানে জার্মানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত আছেন।

    কানাডার মামলায় অপ্রমাণিত

    ছয় বছর ধরে বিচারিক কাজের পর পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ বিশ্ব ব্যাংক তুলেছিল, তার প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানায় কানাডার আদালত।

    ২০১৭ সালে এই মামলার তিন আসামিকে কানাডার আদালত খালাস করে দেয়।

    কানাডিয়ান পত্রিকা দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানায়, ফোনে আড়ি পেতে সংগ্রহ করা যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রসিকিউশন মামলা সাজিয়েছিল তাকে গাল-গল্প ও গুজব বলে ছুড়ে ফেলেছেন বিচারক।

    নিজস্ব অর্থায়নে এগিয়ে চলা

    বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা এলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় সরকার। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ওয়াশিংটনভিত্তিক বহুজাতিক এই সংস্থার সমালোচনা আসে।

    তখনই ২০১২ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন।

    তিনি বলেছিলেন, “পদ্মা সেতু করার জন্য দেশে আমাদের ১৬ কোটি মানুষ আছে, ৮০ লাখ প্রবাসী আছে। বাংলার মানুষ সারা জীবন কি অন্যের সাহায্যে চলবে? নিজের পায়ে দাঁড়াবে না? আত্মনির্ভরশীল হবে না? পদ্মা সেতু আমরা করবই।”

    বিশ্ব ব্যাংকের সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, “যারা একটি পয়সাও ছাড় করেনি, তারা দুর্নীতির অভিযোগ করে! তাদের ভেতর যে দুর্নীতি তা দেখেন।”

    নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর ঘোষণা সারাদেশে যে সাড়া ফেলেছিল, তাতে অভিভূত হন প্রধানমন্ত্রী নিজেও।

    বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা টাকা তুলতে থাকে। সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি মেলে সহায়তার।

    অনুদান দেয়ার সুযোগ রেখে ওই বছরেই দুটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনগুলো এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ অনুদান হিসেবে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

    তবে এ পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহে সরকার আগ্রহ দেখায়নি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে নিতে বাজেট থেকে বরাদ্দ দিতে শুরু করে সরকার।

    অর্থ বরাদ্দ প্রথম আসে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর থেকে। এর আগে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ব ব্যাংককে জানিয়ে দেয়া হয় যে, এই প্রকল্পের জন্য তাদের ঋণ নেওয়া হবে না।

    পদ্মা সেতুর নকশা ঠিক রেখেই এরপর শুরু হয় সেতু নির্মাণের বাকি কাজগুলো। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকার পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ দেয় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। পরের বছরগুলোতেও প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দিয়ে গেছে সরকার।

    ২০১৫ সালের ১২ই ডিসেম্বর আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মূল সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল সেতু ছাড়াও টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও নদীশাসনের কাজ এগিয়ে যেতে থাকে।

  17. মাসুদ করিম - ২৩ জুন ২০২২ (৭:০৫ পূর্বাহ্ণ)

    পদ্মা সেতুতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
    https://bangla.bdnews24.com/samagrabangladesh/article2079925.bdnews

    পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে শেষ মুহূর্তের নানা খুঁটিনাটি কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নিয়োজিত কর্মীরা।

    শেষ মুহূর্তে কাজের মধ্যে রয়েছে নানা প্রতীক ও লতাপাতায় আঁকা রেলিং ও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো।

    সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামী শনিবার উদ্বোধনের আগেই অ্যালুমিনিয়ামের রেলিং বসে যাবে সেতুজুড়ে, আর এই কাজে কর্মীদের দম ফেলবার ফুসরত নেই।

    তিনি জানান, দুবছর আগে কোভিড মহামারী এবং তারপর চলতি বছরে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে বিদেশ থেকে রেলিং নিয়ে আসাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। পরে আকাশ ও সমুদ্র পথে রেলিং আনা হয় দুবাই ও যুক্তরাজ্য থেকে।

    “এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থাপন করা হচ্ছে রেলিং, বসানো হচ্ছে সিসি (ক্লোজড সার্কিক) ক্যামেরা,” বলেন শফিকুল ইসলাম।

    বিশেষভাবে তৈরি করা এই অ্যালুমিনিয়ামের রেলিং ‘শত বছর টেকসই’ হবে মন্তব্য করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, “নাট দিয়ে ফিটিং করা ১৫ ইঞ্চি উচ্চতার এই রেলিং স্থাপন করা হচ্ছে সেতুর দুই পাড়ের প্যারাপেট ওয়ালের উপরে। আশা করছি ২৪ তারিখ বিকালের মধ্যেও সব কাজ সম্পন্ন করা হবে।”

    ইতোমধ্যে সেতু এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেতুর রাস্তায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ নানা বিলবোর্ডও বসে গেছে।

    এদিকে, টোল আদায়ে যেসব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে সেসব ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা পরীক্ষা করতে পদ্মা সেতুতে টোল দিয়ে গাড়ি পারাপারে মহড়াও সেরে নিয়েছে সেতু বিভাগ। যান চলাচল মনিটরিং করতে সেতু এলাকার পুরোটা জুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে বলেন জানান পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান।

    প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম আরও জানান, সেতুর দুই প্রান্তে মাওয়া জাজিরায় দুটি টোল প্লাজা আছে, আর প্রতিটিতে বুথ আছে ছয়টি করে। এর মধ্যে একটিতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল আদায় করার ব্যবস্থা থাকছে। বাকি পাঁচটিতে যানবাহন থামিয়ে হাতে টাকা সংগ্রহ করে চলাচলের অনুমতি দেবেন টোল আদায়ে নিয়োজিত কর্মীরা। চাহিদা অনুযায়ী বুথ সংখ্যা বাড়ানো হবে।

    তিনি জানান, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় টোল আদায় করার বুথে গাড়ি থামবে না। এখানে টোল আদায়ের পদ্ধতি হলো – যানবাহন মালিকেরা অগ্রিম টাকা দিয়ে কার্ড সংগ্রহ করবেন, যানবাহন টোল প্লাজার কাছাকাছি এলে সেই কার্ড থেকে টাকা কেটে নেওয়া হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। তবে এ ব্যবস্থা চালু করতে মাস ছয়েক সময় লাগতে পারে।

    বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস জানান, পদ্মা সেতুর টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন এবং চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। ৬৯৩ কোটি টাকায় ৫ বছরের জন্য চুক্তি হয়েছে তাদের সঙ্গে। তারা আদায় করা টোলের টাকা জমা করবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে, আর সরকার চুক্তি অনুযায়ী তাদের পাওনা পরিশোধ করবে।

    সেতুতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য দুই পাড়ে রাখা হচ্ছে ফায়ার স্টেশন। এছাড়া ওজন স্টেশনও থাকছে। অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান নিয়ন্ত্রণ করা এই স্টেশনের কাজ। এছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে গাড়ি অপসারণে ব্যবহৃত রেকারও রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

    ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে; যদিও শুরুতে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল এই সেতুতে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করলে তাদের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে দেশের টাকায় এই সেতু নির্মাণেরে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেই সেতুর পদ্মা সেতু নির্মাণযজ্ঞ শুরু হলেও তার পরিকল্পনা তারও আগের।

    শনিবার সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এরপর সেতুর দুই পাড়ে নানা আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন তিনি।

  18. মাসুদ করিম - ২৩ জুন ২০২২ (৭:০৮ পূর্বাহ্ণ)

    পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যে পথে যেতে হবে
    https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article2080131.bdnews

    পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের অংশগ্রহণ বির্বিঘ্ন করতে যাতায়াতের পথ ঠিক করে দিয়েছে পুলিশ।

    আগামী শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের যাতায়াতের পথ নির্দেশনা বুধবার দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে।

    >> ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ মার্কেট এলাকা হতে আগত আমন্ত্রিত অতিথিদের গমনাগমন হবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন চাঁনখারপুল (নিমতলী) মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে প্রবেশ মুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-ধোলাইপাড় টোলপ্লাজা-ধোলাইপাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে।

    >> জিরো পয়েন্ট (বঙ্গবন্ধু এভিনিউ গুলিস্তান) থেকে আগত অতিথিদের গমনাগমন জিরো পয়েন্ট-গুলিস্তান আহাদ বক্স সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার প্রবেশ মুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-ধোলাইপাড় টোলপ্লাজা-ধোলাইপাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে।

    >> মতিঝিল শাপলা চত্বর ও ইত্তেফাক মোড় থেকে আগত অতিথিদের গমনাগমনের পথ মতিঝিল শাপলা চত্বর-ইত্তেফাক ক্রসিং হাটখোলা মোড় সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-ধোলাইপাড় টোলপ্লাজা-ধোলাইপাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে।

    >> কমলাপুর, টিটিপাড়া হতে থেকে আগত অতিথিদের গমনাগমন কমলাপুর, টিটিপাড়া ক্রসিং-গোলাপবাগ মোড়-ইনগেট সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-ধোলাইপাড় টোলপ্লাজা-ধোলাইপাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে।

    অনুষ্ঠান স্থলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে ঢাকা মহানগরী থেকে যাত্রা শুরু করার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।

  19. মাসুদ করিম - ২৩ জুন ২০২২ (৭:১০ পূর্বাহ্ণ)

    পদ্মা সেতু নিয়ে গান ও সিনেমা
    https://bangla.bdnews24.com/glitz/article2079900.bdnews

    পদ্মা সেতু নিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাদের মতো জনপ্রিয় শিল্পীরা যেমন গান কণ্ঠে তুলেছেন তেমনি এ সেতু নিয়ে সিনেমাও নির্মিত হয়েছে।

    শনিবার এ সেতুর দুয়ার খুলছে; তার আগেই ‘পদ্মার বুকে স্বপ্নের সেতু’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ শেষ করেছেন পরিচালক আলী আজাদ।

    পদ্মা সেতু এলাকায় সিনেমার দৃশ্যধারণ করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাঞ্জু জন, অলিভিয়া মাইশা, রায়হান মুজিব, হিমেল রাজ, খুকু, আনোয়ার সিরাজী, শান্তা পালসহ আরো অনেকে।

    সাবিনা ইয়াসমিন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাসহ দেশের ১০ শিল্পী পদ্মা সেতু নিয়ে লেখা এক গান কণ্ঠে তুলেছেন; সেতুর উদ্বোধনের দিন থেকে বিভিন্ন টেলিভিশনে গানটি প্রচার করা হবে বলে জানান সাবিনা ইয়াসমিন।

    গীতিকার কবীর বকুলের কথায় ‘তুমি অবিচল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তুমি ধূমকেতু’ শিরোনামে গানটির সুর ও সংগীত করেছেন কিশোর দাস।পদ্মা সেতুতে গিয়ে গানের দৃশ্যধারণ করে এসেছেন; গানের ভিডিওচিত্র নির্মাণ করছেন কামরুল হাসান ইমরান।

    বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ সেতু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ এ গানে সাবিনা ইয়াসমিন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ছাড়াও রফিকুল আলম, কুমার বিশ্বজিৎ, মমতাজ বেগম, বাপ্পা মজুমদার, দিলশাদ নাহার কনা, নিশিতা বড়ুয়া, ইমরান মাহমুদুল ও কিশোর দাস কণ্ঠ দিয়েছেন।

    পদ্মা সেতু নিয়ে বিটিভির উদ্যোগে আরেকটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন দেশের ছয় সংগীতশিল্পী- আঁখি আলমগীর, কিশোর, কোনাল, রাজীব, সাব্বির জামান ও ঝিলিক।

    ‘পদ্মা সেতুর বিজয়গাথা ইতিহাসে বিস্ময়, শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিলেন কেমন করে এগিয়ে যেতে হয়’-এমন কথায় গানটি লিখেছেন মোকাম আলী খান। সুর ও সংগীত পরিচালনায় মিল্টন খন্দকার।

    সমবেত গানের পাশাপাশি একটি একক গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন মমতাজ বেগম। ‘পদ্মা সেতু’ শিরোনামে তার একক গানটি লিখেছেন হাসান মতিউর রহমান। সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী।

    সম্প্রতি সুরকারের নিজস্ব স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করা হয়েছে।

    পদ্মা সেতু নিয়ে হিরো আলম ও তরুণ সংগীতশিল্পী ও সুরকার আকাশ মাহমুদসহ আরও অনেকে নিজেদের উদ্যোগে গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।

  20. মাসুদ করিম - ২৩ জুন ২০২২ (৭:১৪ পূর্বাহ্ণ)

    পদ্মা সেতু: সড়কে নতুন রুট, নতুন শুরুর অপেক্ষা
    https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article2079515.bdnews

    গোপালগঞ্জের উজানি গ্রামের মাছ চাষী খলিলুর রহমান সোহেল আশায় আছেন পদ্মা সেতু চালু হলে সরাসরি ঢাকায় মাছ পাঠাবেন; প্রতি কেজি মাছে ১০ টাকা করে বেশি পাবেন।

    তার মতো দক্ষিণের জনপদের অগণিত মানুষ উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা দেশের বৃহত্তম এ সেতুকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছেন; যে সেতু বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি যোগাযোগের পথ খুলছে।

    প্রমত্তা পদ্মাকে জোড়া দেওয়া এ সেতু সময় বাঁচানোর পাশাপাশি দূরত্বও ঘোচাবে। ফেরি পারাপার আর ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার দুর্ভোগের অবসান করবে।

    এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব অঞ্চলের যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন আনবে; ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে যা এ অঞ্চলের দিনবদলের যুগের সূচনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির বাঁক বদলেও ভূমিকা রাখবে দেশের বড় অংশের জনপদের এ উন্নয়ন।

    সবার মতো তারও দিন বদলাবে বলে মনে করছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার উজানি গ্রামের মাছ চাষী খলিলুর রহমান সোহেল।

    বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে সরাসরি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ পাঠাবেন তিনি। প্রতি বছর তার খামারে রুই, কাতলা, পুঁটি, তেলাপিয়া, বাটা ও কার্প মিলিয়ে হয় আড়াই হাজার মণ মাছ হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় গোপালগঞ্জেই এসব মাছ বিক্রি করতে হয়, বাইরে পাঠাতে পারেন না। স্থানীয় বাজারে দামও ঠিক মত মেলে না।

    “সেতু চালু হলে আমার মাছ ঢাকায় সরাসরি নিয়ে যেতে পারব। প্রতি কেজি মাছে ১০ টাকা করে বেশি পাব,” আশায় আছেন সোহেল।

    তার স্বপ্ন পূরণের আর বেশি দেরি নেই। আগামী ২৫ জুন শনিবারের পর থেকেই তিনি সরাসরি যেতে পারবেন ঢাকায়। ওই দিন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন থেকে এ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

    বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণের কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসে প্রথম স্প্যান। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় পূর্ণ আকৃতি পায় স্বপ্নের সেতু, যুক্ত হয় পদ্মার দুই পাড়।

    দেশের বৃহৎ এ অবকাঠামো আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    সময় বাঁচবে, দূরত্ব কমবে ১০০ কিমি, থাকবে না ঘাটের ভোগান্তি

    দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে পদ্মায় দাঁড়িয়ে গেছে দেশের বৃহত্তম সেতু।

    ইতোমধ্যে সড়কে ১৩টি বাসের রুট ঠিক করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস কোম্পানিগুলো দক্ষিণের জন্য আলাদা পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে আগেই।

    বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে বাসে করে সাড়ে তিন ঘণ্টায় বরিশালে যাওয়া যাবে, যেখানে লঞ্চে যেতে সারা রাত লাগে। সময় বাঁচবে বলে অনেকেই জরুরি কাজে নৌপথের বদলে সড়কপথে যেতে চাইবেন।

    হানিফ পরিবহনের ঢাকা বরিশাল রুটের বাস চালক সালাহউদ্দিন জানান, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া হয়ে বরিশাল যেতে এখন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে। এরমধ্যে পাটুরিয়া পর্যন্ত দুই ঘণ্টা, ফেরি পার হতে এক ঘণ্টা এবং নদীর ওপর থেকে বরিশাল যেতে লাগে আরও সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা।

    কোনো কারণে ফেরি পেতে দেরি হলে যাত্রার সময়ও বেড়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হলে সায়েদাবাদ থেকে বরিশাল পর্যন্ত যেতে সময় বাঁচবে তিন ঘণ্টার মত।

    ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস সেতু হয়ে পদ্মা পাড়ি দিলে দূরত্ব কমবে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি, আরিচা হয়ে ঘুরতে হবে না। সেইসঙ্গে ফেরি পারাপার ও ঘাটের যন্ত্রণা দূর হলে এখনকার চেয়ে কয়েক ঘণ্টা সময় কম লাগবে গন্তব্যে পৌঁছাতে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    নতুন রুটে বাস নামানোর অপেক্ষা

    ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-সিলেট-রংপুর রুটে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না বলে চিন্তায় আছেন বিভিন্ন কোম্পানির বাস মালিকরা। এখন তারা দিন গুনছেন পদ্মা সেতু চালুর পর নতুন ‍রুটগুলোকে ঘিরে। পরিস্থিতি বুঝে নতুন বাস নামানোর অপেক্ষা করছেন।

    বিলাসবহুল বাস সার্ভিস গ্রিন লাইন ইতিমধ্যে বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া জানিয়ে প্রচার শুরু করেছে।

    চট্টগ্রাম থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত দুটি বাস ১৬ জুন থেকে নামানো হয়েছে জানিয়ে ইউনিক কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হক বলেন, আরও দুটি বাস এই ‍রুটে নামানো হবে।

    পদ্মা সেতু চালুর পর সিলেট থেকে কুয়াকাটা দুটি বাস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। আর ঢাকা থেকে বরিশাল রুট নিয়েও ভাবছেন তারা।

    সোহাগ পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক তালুকদার সোহেল জানান, খুলনা, যশোর ও বেনাপোল রুটে সোহাগের ৫০টি বাস চলে। এরমধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতের জন্য ১০টি বাস নির্ধারণ করেছেন তারা, যেগুলো খুলনা পর্যন্ত যাবে।

    “সেতু চালু হওয়ার পর আমরা দেখব যাত্রীদের চাহিদা কেমন। চাহিদা বেশি হলে তখন বাসের সংখ্যাও হয়ত বাড়বে,” যোগ করেন তিনি।

    শ্যামলী এনআর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খুলনা ও বরিশাল রুটে প্রায় একশটি গাড়ির চাহিদা থাকলেও শুরুতে সায়েদাবাদ থেকে ১০-১২টি বাস চালাবেন।

    ড্রিমলাইন পরিবহনের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু একটি রুট হয়েছে। এই রুটে অনেক মানুষ যাতায়ত করবে বলে মনে হচ্ছে। তাই পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিব।

    তাদের মতই একইরকম ভাবনার কথা জানালেন অন্য কোম্পানির বাস মালিক ও সংশ্লিষ্টরা।

    সেতু উদ্বোধনের দিনই শরীয়তপুর-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে নতুন বাস নামানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন শরীয়তপুরের বাস মালিকরা। এজন্য এসি ও নন-এসি বাসে প্রায় ৩০০ কোটি বিনিয়োগ করা হচ্ছে বলেও তারা জানান।

    শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার মেয়র ও পরিবহন ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ জানান, পদ্মা ট্রাভেলস নামে তার ১২টি বাস এখন ঢাকা-শিমুলিয়া পথে পরীক্ষামূলক চলছে। উদ্বোধনের দিনই সেতু দিয়ে বাস সার্ভিস চালুর লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা।

    একই দিন ঢাকা-শরীয়তপুর পথে বাস নামানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহম্মেদ।

    সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু বেপারী বলেন, শরীয়তপুর-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে চালাতে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস, শরীয়তপুর ট্রান্সপোট, পদ্মা ট্রাভেলস, গ্লোরি এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসি ও ‘নন-এনি বাস কেনা শুরু করেছে।

    তাদের মোট বিনিয়োগ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মত, বলে জানান তিনি।

    যাত্রী সেবায় পরিবর্তনের আভাস

    দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ১১৫টি পরিবহনের প্রায় ১ হাজার ১০০ বাস ঢাকার গাবতলী টার্মিনাল থেকে চলাচল করে বলে মালিক সমিতির তথ্য । সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান থেকে মাওয়াঘাট হয়ে সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২৫টি রুটে প্রায় ১৫০টির মতো বাস চলাচল করে।

    পরিবহন মালিকরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে এসব বাসের একটা বড় অংশ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে চলাচল করবে। দক্ষিণাঞ্চলের জনপ্রিয় নৌপথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রী সেবা বাড়াতে বাস সেবায় নতুনত্ব আনার চিন্তা করছেন তারা।

    বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে নতুন কী ধরনের সেবা দেওয়া যায় তা ভাবছেন তারা। ঢাকা ছাড়াও সিলেট, চট্টগ্রাম থেকেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাস চালানোর পরিকল্পনা করছে তার কোম্পানি শ্যামলী পরিবহন।

    “আমরা রুটগুলো সার্ভে করবো যাত্রীদের চাহিদা কেমন আছে। কোথায় কোথায় কিভাবে কানেকটিং করা যায়। ওই অঞ্চলের যাত্রীদের একটা বড় অংশ লঞ্চে যাতায়াত করে। লঞ্চে আরামদায়ক কেবিন আছে। তাদেরকে বাসে আনার জন্য কী করতে হবে সে বিষয়টিও আমরা চিন্তা করছি।”

    সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এই সেবাও বন্ধ ছিল পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগার পর। কিছু বাস এখন মাওয়া ঘাটে যায়; যাত্রীরা লঞ্চে পদ্মা পার হয়ে ওপারে গিয়ে আবার ওই পরিবহনের বাসে চড়েন।

    বৃহ্ত্তর দক্ষিণবঙ্গ কোচ ও বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, সেতু চালু হলে বাসগুলো সরাসরি যাবে। এছাড়া নতুন করে আরও কিছু বাস নামানো হবে।

    “আমাদের ওই বাসগুলো বন্ধ ছিল। এগুলো এখন সেতু হয়ে যাবে। এছাড়া হানিফ, শ্যামলীর মতো বড় পরিবহনগুলোও সায়েদাবাদ থেকে বাস চালু করবে।”

    পদ্মা সেতু হয়ে নতুন আটটি রুটের অনুমোদনের জন্য পরিবহন মালিকরা আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর পরিচালক নূর মোহাম্মদ মজুমদার।

    শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আন্তঃবিভাগীয় এসব রুটের অনুমোদন দেয় বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি। কমিটির কাছেই আবেদন এসেছে। ওই কমিটি একটি বৈঠকও করেছে। পরের মিটিংয়ে এসব রুট অনুমোদন হতে পারে।

    প্রস্তুতি নিচ্ছে বিআরটিসিও

    সেতু চালুর পরদিন থেকেই দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে নতুন-পুরনো ২৩ রুটে বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন (বিআরটিসি)।

    শুরুতে এসব রুটে ৬৫টি এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) বাস দেওয়া হবে, পরে চাহিদা অনুযায়ী নন-এসি বাসও নামাবে সংস্থাটি।

    বর্তমানে ঢাকা থেকে ফেরি পারাপারের মাধ্যমে খুলনা এবং যশোর রুটে বিআরটিসির ১৮টি এসি বাস চলছে। এখন ঢাকা থেকে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, কুয়াটাকাসহ ২১ জেলায় বাস চালু করা হবে।

    বিআরটিসি চাইছে, সেতু চালুর পর আগামী এক মাস বিভিন্ন রাস্তার পরিস্থিতি এবং যাত্রীদের মতামত বিবেচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী রুটগুলো সাজানো হবে।

    করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন রুট চূড়ান্ত করতে কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক সেরে নিয়েছেন।

    সোমবারের ওই বৈঠকে পুরনো দুই রুটের পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত মোট ২৩টি রুটে সেতু উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন থেকেই বাস নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

    বহুমাত্রিক যোগাযোগের দিন শুরু

    বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নৌপথ আগে থেকেই জনপ্রিয়। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ একটি ভারমাস্যপূর্ণ বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা পাবেন।

    “শুধু নৌ, রেল বা নৌ-সড়কের ওপর নির্ভরশীল থেকে ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ গড়ে ওঠে না। তিনটির সমন্বয়ের মাধ্যমেই এটা হয়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ভোগান্তির পর বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে গেল। বাস, ট্রেন ও নৌপথ প্রথম পেল এই এলাকার মানুষ। সবচাইতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা পেল।”

    এ সেতুর মাধ্যমে এ অঞ্চলের এলাকার যোগাযোগে রূপান্তর ঘটবে জানিয়ে তিনি বলেন, কারণ এখানে বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা, ইকোনমিক করিডোর এবং ট্যুরিজম করিডোর হিসেবে কাজ করবে সেতুটি।

    সুদিন আসবে পণ্য পরিবহনে

    গোপালগঞ্জের মাছ চাষী সোহেলের মতো দক্ষিণের ২১ জেলার কৃষি ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদনকারীরা দামের বৈষম্য ঘুচবে বলে আশায় বুক বেঁধে আছেন।

    বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি মো. আবদুর রহিম জানান, যশোর ও আশপাশের জেলাগুলোয় প্রতি বছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ফুল উৎপাদিত হয়। তবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হত না।

    খবর > বাংলাদেশ
    পদ্মা সেতু: সড়কে নতুন রুট, নতুন শুরুর অপেক্ষা

    ওবায়দুর মাসুম, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

    Published: 23 Jun 2022 12:39 AM BdST Updated: 23 Jun 2022 11:17 AM BdST

    পদ্মা সেতু চালু হলে পাটুরিয়া ঘাটে এমন অপেক্ষার প্রহর ফুরাবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের।

    পদ্মা সেতু চালু হলে পাটুরিয়া ঘাটে এমন অপেক্ষার প্রহর ফুরাবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের।
    ১৪ জুন ২০২২: সন্ধ্যায় একসঙ্গে জ্বালানো হয় পদ্মা সেতুর সবগুলো সড়কবাতি।

    ১৪ জুন ২০২২: সন্ধ্যায় একসঙ্গে জ্বালানো হয় পদ্মা সেতুর সবগুলো সড়কবাতি।
    ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সময় নতুন রূপে গড়ে তোলা হয়েছে ভাঙ্গার এ গোলচত্বরকে। ঢাকা থেকে সড়কপথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় পৌঁছাতেও ভাঙ্গার গোলচত্বর হয়ে যেতে হয়। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

    ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সময় নতুন রূপে গড়ে তোলা হয়েছে ভাঙ্গার এ গোলচত্বরকে। ঢাকা থেকে সড়কপথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় পৌঁছাতেও ভাঙ্গার গোলচত্বর হয়ে যেতে হয়। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

    এক্সপ্রেসওয়েতে মুন্সিগঞ্জ সিরাজদিখান এলাকায় ওভারপাস। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

    এক্সপ্রেসওয়েতে মুন্সিগঞ্জ সিরাজদিখান এলাকায় ওভারপাস। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
    সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড।

    সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড।
    ছবি: পিএমও

    ছবি: পিএমও

    Previous
    Next
    গোপালগঞ্জের উজানি গ্রামের মাছ চাষী খলিলুর রহমান সোহেল আশায় আছেন পদ্মা সেতু চালু হলে সরাসরি ঢাকায় মাছ পাঠাবেন; প্রতি কেজি মাছে ১০ টাকা করে বেশি পাবেন।

    তার মতো দক্ষিণের জনপদের অগণিত মানুষ উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা দেশের বৃহত্তম এ সেতুকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছেন; যে সেতু বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি যোগাযোগের পথ খুলছে।

    প্রমত্তা পদ্মাকে জোড়া দেওয়া এ সেতু সময় বাঁচানোর পাশাপাশি দূরত্বও ঘোচাবে। ফেরি পারাপার আর ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার দুর্ভোগের অবসান করবে।

    এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব অঞ্চলের যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন আনবে; ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে যা এ অঞ্চলের দিনবদলের যুগের সূচনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির বাঁক বদলেও ভূমিকা রাখবে দেশের বড় অংশের জনপদের এ উন্নয়ন।

    সবার মতো তারও দিন বদলাবে বলে মনে করছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার উজানি গ্রামের মাছ চাষী খলিলুর রহমান সোহেল।

    বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে সরাসরি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ পাঠাবেন তিনি। প্রতি বছর তার খামারে রুই, কাতলা, পুঁটি, তেলাপিয়া, বাটা ও কার্প মিলিয়ে হয় আড়াই হাজার মণ মাছ হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় গোপালগঞ্জেই এসব মাছ বিক্রি করতে হয়, বাইরে পাঠাতে পারেন না। স্থানীয় বাজারে দামও ঠিক মত মেলে না।

    “সেতু চালু হলে আমার মাছ ঢাকায় সরাসরি নিয়ে যেতে পারব। প্রতি কেজি মাছে ১০ টাকা করে বেশি পাব,” আশায় আছেন সোহেল।

    তার স্বপ্ন পূরণের আর বেশি দেরি নেই। আগামী ২৫ জুন শনিবারের পর থেকেই তিনি সরাসরি যেতে পারবেন ঢাকায়। ওই দিন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন থেকে এ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

    ১৪ জুন ২০২২: সন্ধ্যায় একসঙ্গে জ্বালানো হয় পদ্মা সেতুর সবগুলো সড়কবাতি।

    ১৪ জুন ২০২২: সন্ধ্যায় একসঙ্গে জ্বালানো হয় পদ্মা সেতুর সবগুলো সড়কবাতি।
    বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণের কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসে প্রথম স্প্যান। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় পূর্ণ আকৃতি পায় স্বপ্নের সেতু, যুক্ত হয় পদ্মার দুই পাড়।

    দেশের বৃহৎ এ অবকাঠামো আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    সময় বাঁচবে, দূরত্ব কমবে ১০০ কিমি, থাকবে না ঘাটের ভোগান্তি

    দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে পদ্মায় দাঁড়িয়ে গেছে দেশের বৃহত্তম সেতু।

    ইতোমধ্যে সড়কে ১৩টি বাসের রুট ঠিক করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস কোম্পানিগুলো দক্ষিণের জন্য আলাদা পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে আগেই।

    বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে বাসে করে সাড়ে তিন ঘণ্টায় বরিশালে যাওয়া যাবে, যেখানে লঞ্চে যেতে সারা রাত লাগে। সময় বাঁচবে বলে অনেকেই জরুরি কাজে নৌপথের বদলে সড়কপথে যেতে চাইবেন।

    হানিফ পরিবহনের ঢাকা বরিশাল রুটের বাস চালক সালাহউদ্দিন জানান, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া হয়ে বরিশাল যেতে এখন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে। এরমধ্যে পাটুরিয়া পর্যন্ত দুই ঘণ্টা, ফেরি পার হতে এক ঘণ্টা এবং নদীর ওপর থেকে বরিশাল যেতে লাগে আরও সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা।

    ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সময় নতুন রূপে গড়ে তোলা হয়েছে ভাঙ্গার এ গোলচত্বরকে। ঢাকা থেকে সড়কপথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় পৌঁছাতেও ভাঙ্গার গোলচত্বর হয়ে যেতে হয়। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

    ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সময় নতুন রূপে গড়ে তোলা হয়েছে ভাঙ্গার এ গোলচত্বরকে। ঢাকা থেকে সড়কপথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় পৌঁছাতেও ভাঙ্গার গোলচত্বর হয়ে যেতে হয়। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
    কোনো কারণে ফেরি পেতে দেরি হলে যাত্রার সময়ও বেড়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হলে সায়েদাবাদ থেকে বরিশাল পর্যন্ত যেতে সময় বাঁচবে তিন ঘণ্টার মত।

    ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস সেতু হয়ে পদ্মা পাড়ি দিলে দূরত্ব কমবে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি, আরিচা হয়ে ঘুরতে হবে না। সেইসঙ্গে ফেরি পারাপার ও ঘাটের যন্ত্রণা দূর হলে এখনকার চেয়ে কয়েক ঘণ্টা সময় কম লাগবে গন্তব্যে পৌঁছাতে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    নতুন রুটে বাস নামানোর অপেক্ষা

    ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-সিলেট-রংপুর রুটে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না বলে চিন্তায় আছেন বিভিন্ন কোম্পানির বাস মালিকরা। এখন তারা দিন গুনছেন পদ্মা সেতু চালুর পর নতুন ‍রুটগুলোকে ঘিরে। পরিস্থিতি বুঝে নতুন বাস নামানোর অপেক্ষা করছেন।

    বিলাসবহুল বাস সার্ভিস গ্রিন লাইন ইতিমধ্যে বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া জানিয়ে প্রচার শুরু করেছে।

    চট্টগ্রাম থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত দুটি বাস ১৬ জুন থেকে নামানো হয়েছে জানিয়ে ইউনিক কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হক বলেন, আরও দুটি বাস এই ‍রুটে নামানো হবে।

    পদ্মা সেতু চালুর পর সিলেট থেকে কুয়াকাটা দুটি বাস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। আর ঢাকা থেকে বরিশাল রুট নিয়েও ভাবছেন তারা।

    সোহাগ পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক তালুকদার সোহেল জানান, খুলনা, যশোর ও বেনাপোল রুটে সোহাগের ৫০টি বাস চলে। এরমধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতের জন্য ১০টি বাস নির্ধারণ করেছেন তারা, যেগুলো খুলনা পর্যন্ত যাবে।

    “সেতু চালু হওয়ার পর আমরা দেখব যাত্রীদের চাহিদা কেমন। চাহিদা বেশি হলে তখন বাসের সংখ্যাও হয়ত বাড়বে,” যোগ করেন তিনি।

    শ্যামলী এনআর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খুলনা ও বরিশাল রুটে প্রায় একশটি গাড়ির চাহিদা থাকলেও শুরুতে সায়েদাবাদ থেকে ১০-১২টি বাস চালাবেন।

    ড্রিমলাইন পরিবহনের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু একটি রুট হয়েছে। এই রুটে অনেক মানুষ যাতায়ত করবে বলে মনে হচ্ছে। তাই পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিব।

    তাদের মতই একইরকম ভাবনার কথা জানালেন অন্য কোম্পানির বাস মালিক ও সংশ্লিষ্টরা।

    সেতু উদ্বোধনের দিনই শরীয়তপুর-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে নতুন বাস নামানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন শরীয়তপুরের বাস মালিকরা। এজন্য এসি ও নন-এসি বাসে প্রায় ৩০০ কোটি বিনিয়োগ করা হচ্ছে বলেও তারা জানান।

    শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার মেয়র ও পরিবহন ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ জানান, পদ্মা ট্রাভেলস নামে তার ১২টি বাস এখন ঢাকা-শিমুলিয়া পথে পরীক্ষামূলক চলছে। উদ্বোধনের দিনই সেতু দিয়ে বাস সার্ভিস চালুর লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা।

    একই দিন ঢাকা-শরীয়তপুর পথে বাস নামানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহম্মেদ।

    সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু বেপারী বলেন, শরীয়তপুর-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে চালাতে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস, শরীয়তপুর ট্রান্সপোট, পদ্মা ট্রাভেলস, গ্লোরি এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসি ও ‘নন-এনি বাস কেনা শুরু করেছে।

    তাদের মোট বিনিয়োগ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মত, বলে জানান তিনি।

    যাত্রী সেবায় পরিবর্তনের আভাস

    দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ১১৫টি পরিবহনের প্রায় ১ হাজার ১০০ বাস ঢাকার গাবতলী টার্মিনাল থেকে চলাচল করে বলে মালিক সমিতির তথ্য । সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান থেকে মাওয়াঘাট হয়ে সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২৫টি রুটে প্রায় ১৫০টির মতো বাস চলাচল করে।

    পরিবহন মালিকরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে এসব বাসের একটা বড় অংশ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে চলাচল করবে। দক্ষিণাঞ্চলের জনপ্রিয় নৌপথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রী সেবা বাড়াতে বাস সেবায় নতুনত্ব আনার চিন্তা করছেন তারা।

    বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে নতুন কী ধরনের সেবা দেওয়া যায় তা ভাবছেন তারা। ঢাকা ছাড়াও সিলেট, চট্টগ্রাম থেকেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাস চালানোর পরিকল্পনা করছে তার কোম্পানি শ্যামলী পরিবহন।

    “আমরা রুটগুলো সার্ভে করবো যাত্রীদের চাহিদা কেমন আছে। কোথায় কোথায় কিভাবে কানেকটিং করা যায়। ওই অঞ্চলের যাত্রীদের একটা বড় অংশ লঞ্চে যাতায়াত করে। লঞ্চে আরামদায়ক কেবিন আছে। তাদেরকে বাসে আনার জন্য কী করতে হবে সে বিষয়টিও আমরা চিন্তা করছি।”

    সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এই সেবাও বন্ধ ছিল পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগার পর। কিছু বাস এখন মাওয়া ঘাটে যায়; যাত্রীরা লঞ্চে পদ্মা পার হয়ে ওপারে গিয়ে আবার ওই পরিবহনের বাসে চড়েন।

    এক্সপ্রেসওয়েতে মুন্সিগঞ্জ সিরাজদিখান এলাকায় ওভারপাস। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

    এক্সপ্রেসওয়েতে মুন্সিগঞ্জ সিরাজদিখান এলাকায় ওভারপাস। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
    বৃহ্ত্তর দক্ষিণবঙ্গ কোচ ও বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, সেতু চালু হলে বাসগুলো সরাসরি যাবে। এছাড়া নতুন করে আরও কিছু বাস নামানো হবে।

    “আমাদের ওই বাসগুলো বন্ধ ছিল। এগুলো এখন সেতু হয়ে যাবে। এছাড়া হানিফ, শ্যামলীর মতো বড় পরিবহনগুলোও সায়েদাবাদ থেকে বাস চালু করবে।”

    পদ্মা সেতু হয়ে নতুন আটটি রুটের অনুমোদনের জন্য পরিবহন মালিকরা আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর পরিচালক নূর মোহাম্মদ মজুমদার।

    শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আন্তঃবিভাগীয় এসব রুটের অনুমোদন দেয় বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি। কমিটির কাছেই আবেদন এসেছে। ওই কমিটি একটি বৈঠকও করেছে। পরের মিটিংয়ে এসব রুট অনুমোদন হতে পারে।

    প্রস্তুতি নিচ্ছে বিআরটিসিও

    সেতু চালুর পরদিন থেকেই দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে নতুন-পুরনো ২৩ রুটে বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন (বিআরটিসি)।

    শুরুতে এসব রুটে ৬৫টি এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) বাস দেওয়া হবে, পরে চাহিদা অনুযায়ী নন-এসি বাসও নামাবে সংস্থাটি।

    বর্তমানে ঢাকা থেকে ফেরি পারাপারের মাধ্যমে খুলনা এবং যশোর রুটে বিআরটিসির ১৮টি এসি বাস চলছে। এখন ঢাকা থেকে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, কুয়াটাকাসহ ২১ জেলায় বাস চালু করা হবে।

    বিআরটিসি চাইছে, সেতু চালুর পর আগামী এক মাস বিভিন্ন রাস্তার পরিস্থিতি এবং যাত্রীদের মতামত বিবেচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী রুটগুলো সাজানো হবে।

    করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন রুট চূড়ান্ত করতে কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক সেরে নিয়েছেন।

    সোমবারের ওই বৈঠকে পুরনো দুই রুটের পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত মোট ২৩টি রুটে সেতু উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন থেকেই বাস নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

    সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড।

    সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড।
    বহুমাত্রিক যোগাযোগের দিন শুরু

    বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নৌপথ আগে থেকেই জনপ্রিয়। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ একটি ভারমাস্যপূর্ণ বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা পাবেন।

    “শুধু নৌ, রেল বা নৌ-সড়কের ওপর নির্ভরশীল থেকে ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ গড়ে ওঠে না। তিনটির সমন্বয়ের মাধ্যমেই এটা হয়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ভোগান্তির পর বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে গেল। বাস, ট্রেন ও নৌপথ প্রথম পেল এই এলাকার মানুষ। সবচাইতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা পেল।”

    এ সেতুর মাধ্যমে এ অঞ্চলের এলাকার যোগাযোগে রূপান্তর ঘটবে জানিয়ে তিনি বলেন, কারণ এখানে বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা, ইকোনমিক করিডোর এবং ট্যুরিজম করিডোর হিসেবে কাজ করবে সেতুটি।

    সুদিন আসবে পণ্য পরিবহনে

    গোপালগঞ্জের মাছ চাষী সোহেলের মতো দক্ষিণের ২১ জেলার কৃষি ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদনকারীরা দামের বৈষম্য ঘুচবে বলে আশায় বুক বেঁধে আছেন।

    বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি মো. আবদুর রহিম জানান, যশোর ও আশপাশের জেলাগুলোয় প্রতি বছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ফুল উৎপাদিত হয়। তবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হত না।

    ছবি: পিএমও

    ছবি: পিএমও
    তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে।

    “দেশের চাহিদার ৭০ শতাংশ এই এলাকায় হয়। সেগুলো ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। পাশাপাশি এখান থেকে প্রচুর সবজি যায়। ঘাটে জ্যাম থাকার কারণে দেরি হয়, অনেক সময় গাড়িতেই ফুল পঁচে যায়। একই অবস্থা হয়েছে সবজির। ঘাটের সঙ্কটের কারণে ব্যবসা করতেও আগ্রহী হত না। এখন কৃষকরাও চাইলে সরাসরি ঢাকায় যেতে পারবে।”

    বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুস্তম আলী খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কারণ ঘাটে এখন আর দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হবে না ফেরির জন্য। ঘাটে আসলে যতই ক্লিয়ার থাকুক পণ্যবাহী ফেরিতে সঠিক সময়ে ওঠা যেত না। কমপক্ষে একদিন বসে থাকতে হয় ফেরির জন্য। কোনো কোনো সময় এটা দুদিন-তিনদিন পেরিয়ে যায়।

    “সেতু চালু হলে সবচেয়ে উপকারভোগী হবে সবজি মাছসহ পচনশীল পণ্য পরিবহনে। তারা দিনে দিনে ঢাকায় চলে আসতে পারবে। যশোরের দিক থেকে ঢাকায় কাঁচামাল এক্ষেত্রে বিশাল উন্নতি হবে।এক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।”

    তিনি বলেন, পণ্য পরিবহনের মালিকরা বিষয়টি চিন্তা ভাবনা করছেন। সেতু চালু হলে আরও নতুন নতুন ট্রাক চালু করা হবে।

  21. মাসুদ করিম - ২৩ জুন ২০২২ (৭:২১ পূর্বাহ্ণ)

    কেন ‘তাদের’ আত্মবিশ্বাসের এত অভাব, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
    https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article2079917.bdnews

    দুর্নীতির কথিত অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংক সরে যাওয়ার পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলে দেশে যারা সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, নাম ধরে ধরে তাদের বক্তব্যের জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    যুদ্ধ করে বিজয়ী জাতির মনোবল কেন তাদের নেই, সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যে পারে’ পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।

    পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তিন দিন আগে বুধবার সকালে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই তার বক্তৃতার একটি বড় অংশে ছিল পদ্মার স্বপ্ন পূরণের ইতিবৃত্ত।

    যারা বাংলাদেশের নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি না কেন এদের ভেতরে আত্মবিশ্বাসের অভাব? তারা ভুলে যান যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে এদেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে। আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা যখন একটা কথা বলি, ভেবে চিন্তেই বলি। কারণ বিজয়ী জাতি হিসেবে সেই মানসিক শক্তি নিয়েই কথা বলি।

    “কিন্তু উনাদের ভেতর যেন একটা পরাজিত মনোভাব। মনে হয় যেন পাকিস্তানি আমলে এই প্রদেশে একটা যে পরাধীনতার গ্লানি, তারা সব সময় সেই আত্মগ্লানিতেই ভোগেন। এজন্য তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “কিন্তু আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি যেটা পারব, সেটাই বলব। যেটা বলব, ইনশাল্লাহ সেটা আমি করব। সেটা আমি করে দেখাতে পারি, সেটা আমরা করেছি। এজন্য দেশবাসীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”

    বিশ্ব ব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়নের চুক্তি করলেও পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে, যা নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন চলে। কিন্তু সেই অভিযোগ তারা প্রমাণ করতে পারেনি।

    পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায় নির্মিত এ সেতুতে এখন যান চলাচাল শুরুর অপেক্ষায় পুরো দেশ।

    সেই সব বচন

    প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর কে কোন ভাষায় তার সমালোচনা করেছিলেন, তার বিস্তারিত তালিকা প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে।

    প্রথমেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেত্রী বললেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না।’ পদ্মা সেতু হয়েছে।”

    তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খানের বক্তব্য মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৯৬ সালে যখন সরকারে ছিলাম, তিনি আমাদের অর্থ সচিব ছিলেন। তিনি ২০১২ সালে বললেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের পক্ষে পরবর্তী ঋণ সহায়তা পাওয়া খুব দুষ্কর হয়ে পড়বে। যখনই কোনো দাতা সংস্থা কোনো নতুন প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী হবে, তারা দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখবে। সরকার যদি বিকল্প অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে, তাহলে খরচ অনেক বেড়ে যাবে, কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে।’’

    শেখ হাসিনা বলেন, “আশা করি পদ্মা সেতুর কাজের মান নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। কাজেই, যে কথা তারা বলেছে, এ কথার কোন ভিত্তি নাই।”

    তিনি বলেন, “এখানে খালেদা জিয়া আরেকটা কথা বলেছিল, যেটা ছিল ১৭ অক্টোবর, ২০১১। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বাতিল করল।

    “খালেদা জিয়া নিজেই ভুলে গেছে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টের টাকা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছিল দুর্নীতির কারণে আর সেই দুর্নীতির সাথে তিনি, তার পুত্ররাও জড়িত ছিলেন… এটা আমাদের কথা না, এটা আমেরিকার এফবিআই কিন্তু এই তথ্যটা বের করেছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ওই দুর্নীতির কারণে।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বদিউল আলম মজুমদার (সুজন সম্পাদক) বলেছিলেন, দুর্নীতি যে আমাদের পেছনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের উন্নয়নের ধারাকে নষ্ট করছে, এই ঘটনা তারই আরেকটি উদাহরণ।’

    “ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মামলা করেও কিন্তু দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারে নাই। কিন্তু তারা দুর্নীতি দেখেছে।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “ড. আহসান এইচ মনসুর, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেছেন… ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করতে পারলেও শেষ করার গ্যারান্টি থাকবে না।’

    “আমরা কিন্তু শেষ করেছি, তাকেও দাওয়াত দিচ্ছি।”

    সরকারপ্রধান বলেন, “ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি। ‘বিকল্প উৎস হতে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা দৃষ্টি সরানোর উপায় বলে মনে হতে পারে। যদি এই সিদ্ধান্ত সফলও হয়, তাতেও সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে না।’

    “বর্তমানে বাংলাদেশের বা আওয়ামী লীগ সরকার আমি চালাচ্ছি। আমাদের গ্রহণযোগ্যতা আন্তর্জাতিকভাবে আছে কিনা আপনারাই বিচার করবেন, বাংলাদেশের জনগণ বিচার করবেন।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “প্রয়াত বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ার বলেছিলেন, ‘নিজস্ব অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের নাই।’

    “বিএনপি কী বলেছে ওটা আমি ধর্তব্যে নিই না।… ওটা বলে আর সময় নষ্ট করতে চাই না। তবে আমাদের অর্থনীতিবিদ বা বড় বড় জ্ঞানী, গুণীরা কি বলছেন, সেটাই আমি বলি।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ড. সালেহ উদ্দীন, প্রাক্তন গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেছিলেন, ‘নিজ অর্থায়নে সরকার পদ্মা সেতু করার যে পরিকল্পনা করেছে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে সরকার ইচ্ছা করলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারবে, কিন্তু শেষ করতে পারবে না।’

    “আমি চাই তাকেও দাওয়াত দিতে। এটা যে শেষ হয়েছে তিনি যেন পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে একটু যান। আমি দাওয়াত দিচ্ছি। সবাইকে দাওয়াত দেব। যারা যারা এই কথা বলেছেন, সবাইকে দাওয়াত দেব বলেন তিনি।

    শেখ হাসিনা বলেন, “আইনজীবী শাহদীন মালিক। উনি সব সময়ই স্বাধীন। সব সময় স্বাধীনই থাকেন এবং স্বাধীন মালিক তিনি।…

    শাহদীন মালিক স্বাধীন কথা বলেন। তিনি বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু দেশী অর্থায়নে হবে না। সম্ভব নয়।’

    “সম্ভব হয়েছে। তাকে দাওয়াত দিচ্ছি। তিনি যেন পদ্মা সেতুতে আসেন।”

    সরকার প্রধান বলেন, “ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডি, সম্মানীয় ফেলো। তিনি বলেছেন, এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন, যা জোগান দিতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ পড়বে। এর দায় সরকার এড়াতে পারবে না।’

    “আমাদের রিজার্ভ কিন্তু এখনো ৪২ বিলিয়ন। আর বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ পড়েনি। সাথে অন্য প্রকল্পগুলো কিন্তু আমরা করে যাচ্ছি।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডি, সম্মানীয় ফেলো। তিনি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু শুরু করা হলে দেশের অন্যসব অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য যে কাজগুলো করা যেত সেগুলো আর হবে না।’

    “সব কাজগুলো কিন্তু চলছে। কোনটা কিন্তু থেমে যায়নি।”

    ‘কিন্তু তারা সাহস দেখিয়েছেন’

    সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রথম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান ও দেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেলেও নেতৃত্ব দেওয়া প্রয়াত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

    তিনি বলেন, “আমাদের বিশেষজ্ঞ প্যানেল আজকে জামিলুর রেজা সাহেব নেই, আমি তাকে শ্রদ্ধা জানাই, যখন বিশ্ব ব্যাংক থেকে এই রকম… মহারথীরা সরে গেল কিন্তু তারা কিন্তু সরে যাননি। তারা কিন্তু সাহস দেখিয়েছেন এবং তারা এই উপদেষ্টা প্যানেল, তারা কিন্তু কাজ করেছেন এবং তারা যদি আমাদের পাশে না দাঁড়াতেন, হয়তো আমরা এটা করতে পারতাম কিনা সন্দেহ। তারা কিন্তু পিছু হটেননি।”

    যারা ওই সময়ে সাহস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সিদ্ধান্তের পাশে ছিলেন, তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

    তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত খুশী হতাম, যদি আজকে জামিলুর রেজা সাহেব বেঁচে থাকতেন, এই সেতুটা দেখে যেতে পারতেন।”

    https://twitter.com/urumurum/status/1539627563185623040

  22. মাসুদ করিম - ২৩ জুন ২০২২ (৭:৩০ পূর্বাহ্ণ)

    সেই ওকাম্পো এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত: শেখ হাসিনা

    পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে পর্যবেক্ষণে আসা বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো নিজেই এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    নিজেদের অর্থায়নে নির্মিত বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু ‍উদ্বোধনের তিন দিন আগে বুধবার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন সরকার প্রধান।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল চেয়ারম্যান লুই মোরেনো ওকাম্পোকে ঢাকায় পাঠায়। ওকাম্পো ঢাকায় এসে আমাদের দুর্নীতির খোঁজ করে। এবং বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

    “তিনি অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে আলাপ করে এবং তাদেরও দোষী সাব্যস্ত করে।

    “এমনকি আমাদের দুর্নীতি হয়েছে বলে তারা তদন্ত করতে আসে।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা বোধহয় একটা জিনিস জানেন, ওকাম্পো কিন্তু নিজেই এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। এটা কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা। সে কিন্তু এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত।”

    বিশ্ব ব্যাংকসহ চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের ওপর ভর করে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার।

    সেতুর নির্মাণ কার্যক্রম এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে বিশ্ব ব্যাংক। টানাপোড়েনের মধ্যে সংস্থাটি অর্থায়ন স্থগিত করলে তদন্ত শুরু করে দুদক।

    ওই তদন্ত পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রধান আইনজীবী ওকাম্পোর নেতৃত্বে ২০১২ সালে দু’দফায় বাংলাদেশে আসে তিন সদস্যের বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষক প্যানেল।

    পর্যবেক্ষক দলের পরামর্শে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দুদকের করা মামলায় জেল খাটতে হয় সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে। পরে অবশ্য দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

    ২০১৭ সালে কানাডার একটি আদালতও বিশ্ব ব্যাংকের আনা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের প্রমাণ পায়নি বলে জানায়। যদিও দীর্ঘদিনের টানপোড়েনে এই প্রকল্পে দাতাদের অর্থায়ন আর হয়নি।

    বিশ্ব ব্যাংক পর্যবেক্ষক দলের প্রধান গাব্রিয়েল ওকাম্পোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংকের অন্য অভিযোগের ফলাফল নিয়েও বুধবার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

    তিনি বলেন, “আমরা দুদককে তদন্ত করার নির্দেশ দেই। দুদক তারা তদন্ত করে কোনো দুর্নীতি পায় না। এরপর বিশ্ব ব্যাংক কানাডার আদালতে একটা মামলা করে, এই দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এসে।

    “কিন্তু কানাডার আদালত সেই তদন্তে কিছুই পায়নি। এবং তারা যে রায় দেয়, সেখানে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, বিশ্ব ব্যাংক যে অভিযোগ করেছে সেটা সম্পূর্ণ ভুয়া, মিথ্যা এবং বানোয়াট।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সেতু নির্মাণে আমাদের কেউ দুর্নীতি করবে এটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। তাছাড়া, তখন পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংক কিন্তু কোনো টাকাও ছাড় দেয়নি।

    খবর > বাংলাদেশ
    সেই ওকাম্পো এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত: শেখ হাসিনা

    নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

    Published: 22 Jun 2022 07:37 PM BdST Updated: 22 Jun 2022 07:58 PM BdST

    লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো। ফাইল ছবি

    লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো। ফাইল ছবি

    Previous
    Next
    পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে পর্যবেক্ষণে আসা বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো নিজেই এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    নিজেদের অর্থায়নে নির্মিত বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু ‍উদ্বোধনের তিন দিন আগে বুধবার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন সরকার প্রধান।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল চেয়ারম্যান লুই মোরেনো ওকাম্পোকে ঢাকায় পাঠায়। ওকাম্পো ঢাকায় এসে আমাদের দুর্নীতির খোঁজ করে। এবং বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

    “তিনি অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে আলাপ করে এবং তাদেরও দোষী সাব্যস্ত করে।

    “এমনকি আমাদের দুর্নীতি হয়েছে বলে তারা তদন্ত করতে আসে।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা বোধহয় একটা জিনিস জানেন, ওকাম্পো কিন্তু নিজেই এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। এটা কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা। সে কিন্তু এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত।”

    বিশ্ব ব্যাংকসহ চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের ওপর ভর করে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার।

    সেতুর নির্মাণ কার্যক্রম এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে বিশ্ব ব্যাংক। টানাপোড়েনের মধ্যে সংস্থাটি অর্থায়ন স্থগিত করলে তদন্ত শুরু করে দুদক।

    ওই তদন্ত পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রধান আইনজীবী ওকাম্পোর নেতৃত্বে ২০১২ সালে দু’দফায় বাংলাদেশে আসে তিন সদস্যের বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষক প্যানেল।

    পর্যবেক্ষক দলের পরামর্শে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দুদকের করা মামলায় জেল খাটতে হয় সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে। পরে অবশ্য দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

    ২০১৭ সালে কানাডার একটি আদালতও বিশ্ব ব্যাংকের আনা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের প্রমাণ পায়নি বলে জানায়। যদিও দীর্ঘদিনের টানপোড়েনে এই প্রকল্পে দাতাদের অর্থায়ন আর হয়নি।

    বিশ্ব ব্যাংক পর্যবেক্ষক দলের প্রধান গাব্রিয়েল ওকাম্পোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংকের অন্য অভিযোগের ফলাফল নিয়েও বুধবার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

    তিনি বলেন, “আমরা দুদককে তদন্ত করার নির্দেশ দেই। দুদক তারা তদন্ত করে কোনো দুর্নীতি পায় না। এরপর বিশ্ব ব্যাংক কানাডার আদালতে একটা মামলা করে, এই দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এসে।

    “কিন্তু কানাডার আদালত সেই তদন্তে কিছুই পায়নি। এবং তারা যে রায় দেয়, সেখানে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, বিশ্ব ব্যাংক যে অভিযোগ করেছে সেটা সম্পূর্ণ ভুয়া, মিথ্যা এবং বানোয়াট।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সেতু নির্মাণে আমাদের কেউ দুর্নীতি করবে এটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। তাছাড়া, তখন পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংক কিন্তু কোনো টাকাও ছাড় দেয়নি।

    “কিন্তু তারপরেও, আপনারা জানেন, এটা নিয়ে আমাদের কয়েকটা বছর সময় নষ্ট করে।”

    বিশ্ব ব্যাংক পর্যবেক্ষক দলের প্রধান গাব্রিয়েল ওকাম্পো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রথম প্রধান প্রসিকিউটর ছিলেন। আশির দশকে নিজ দেশ আর্জেটিনার সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিচারের সময় ডেপুটি প্রসিকিউটরও ছিলেন তিনি।

    এক সময় হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের কার সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস পলিসি’র সিনিয়র ফেলো হিসাবে দায়িত্ব পালন করা ওকাম্পো’র অভিজ্ঞতা আছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর।

    আইসিসি’র প্রসিকিউটর থাকাকালে অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং করস্বর্গ (ট্যাক্স হেভেনস) নামে পরিচিত দেশ ও এলাকায় তার কোম্পানি থাকার তথ্য উঠে আসে ২০১৭ সালে ফাঁস হওয়া নথিতে।

    ওই সময় ওকাম্পোকে নিয়ে কূটনৈতিক তারবার্তা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের ভাষ্য সম্বলিত ৪০ হাজার নথি হাতে আসার কথা জানায় ফরাসি অনলাইন জার্নাল মিডিয়াপার্ট।

    ওইসব নথি পর্যালোচনার ভিত্তিতে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টিগেটিভ কোলাবোরেশনস (ইআইসি) বলছে, আইসিসির দায়িত্ব ছাড়ার পর সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষে কাজ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন ওকাম্পো।

    ওকাম্পোর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

    ৭০ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন আইনজীবী ওকাম্পো প্রথম আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসেন তার দেশের সামরিক জান্তাকে বিচারের মুখোমুখি করায় ভূমিকা রেখে।

    ২০০৩ সালে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রথম প্রসিকিউটর হন তিনি, এই দায়িত্বে ছিলেন নয় বছর।

    তার লক্ষ্য ছিল গণহত্যার দায়ে উগান্ডার গেরিলা নেতা জোসেফ কনি ও সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য লিবীয় নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফিকে বিচারের মুখোমুখি করা।

    লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের এক পর্যায়ে ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলার মুখে পালিয়ে যাওয়া গাদ্দাফি বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়ার পর হত্যা করা হয়। চরম নিষ্ঠুরতা ও শিশুদের যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য আলোচিত কনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

    রোমানিয়াভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট বলছে, আইসিসির দায়িত্ব ছাড়ার পর প্রচুর ‘অর্থ কামাচ্ছেন’ ওকাম্পো।

    ওই সময় নিউ ইয়র্কভিত্তিক আইন সংস্থা ‘গেটনিক অ্যান্ড গেটনিক’ এ কাজ করার পাশাপাশি ভাইয়ের সঙ্গে ‘মোরেনো ওকাম্পো কনসাল্টিং’ নামে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি।

    এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই গাদ্দাফি পরবর্তী লিবিয়ায় যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এলএনএ) অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ধনকুবের হাসান তাতানাকিকে আইনি সহায়তা দিতে চুক্তি করেন ওকাম্পো।

    গাদ্দাফি ও তার ছেলে সাইফের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা ওকাম্পো সাবেক গাদ্দাফি অনুসারী তাতানাকির সঙ্গে এই চুক্তি করেন ২০১৫ সালে। তিন বছর সেবা পেতে তিন মিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি দৈনিক মজুরি হিসেবে তাকে পাঁচ হাজার ডলার দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন এ ধনকুবের।

    ২০১৫ সালের ১২ মে ওকাম্পো তার পক্ষে কাজ শুরু করার ছয় দিনে মাথায় আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর ফাতোস বেনসোডা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির হাতে বেসামরিক নাগরকিদের হত্যা-নির্যাতন ও তাদের হাতে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

    ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী ও তাতানাকিকে যাতে আইসিসির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে না হয় সেজন্য গাব্রিয়েল ওকাম্পো একটি পথ বাতলে দিতে চেয়েছিলেন বলে তার একটি ইমেইলে উঠে এসেছে।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে জার্মান অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ডের স্পিইগেল’কে ওকাম্পো ২০১৭ সালে বলেছিলেন, হাসান তাতানাকির সঙ্গে কাজ করা ‘ভালো হবে’ বলে তিনি ভেবেছিলেন।

    “তিনি আমাকে বলেছিলেন, তিনি লিবিয়ায় শান্তি ফেরাতে চেষ্টা করছেন।”

    লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নেতা জেনারেল খলিফা হাফতারকে পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে তাতানাকিকে সতর্ক করেছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।

    অফশোর কোম্পানি

    ওকাম্পো আইসিসির দায়িত্ব ছাড়ার দুই মাস পর ডাচ ব্যাংক ‘এবিএন আমরো’ তে তার অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার ডলার আসে সুইজারল্যান্ডের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে। ‘টেইন বে করপোরেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ওই অর্থ পাঠানো অব্যাহত থাকে।

    ‘টেইন বে করপোরেশন’ এর নিবন্ধন রয়েছে পানামায়, এই অফশোর হেভেনে কোম্পানিগুলোর মালিকদের নাম গোপন থাকে। ওকাম্পো ও তার স্ত্রী ওই কোম্পানির মালিক বলে ফাঁস হওয়া নথিতে বেরিয়ে এসেছে।

    করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে ‘ইয়েমানা ট্রেডিং’ নামে ওকাম্পোর এবং আরেক করস্বর্গ ‘বেলাইজে লুসিয়া এন্টারপ্রাইজেস’ নামে তার স্ত্রীর একটি কোম্পানি থাকার তথ্যও উঠে এসেছে।

    দক্ষিণ আমেরিকায় অফশোর হেভেন হিসেবে বিবেচিত উরুগুয়েতে ‘মোরেনো ওকাম্পো কনসাল্টিংয়ের’ প্রতিষ্ঠান ‘ট্রান্সপারেন্ট মার্কেটস’ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।

    আইসিসির দায়িত্বে থাকাকালে অফশোর কোম্পানি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ওকাম্পো ডের স্পেইগেলকে বলেন, “অফসোর কোম্পানি অবৈধ নয়। সেগুলোর মাধ্যমে আপনি অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাতে পারেন। কিন্তু সেগুলো অবৈধ নয়।”

    নিজের দেশ আর্জেন্টিনায় কোনো ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ নয় দাবি করে ওই সময় তিনি বলেন, “বৈধ এবং অবৈধ উভয় কারণেই আপনার অফশোর কোম্পানি থাকতে পারে।

    “অর্থ বা ঘুষ নেওয়ার জন্য আপনি একজন দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি হতে পারেন। আবার একজন সৎ আইনজীবী হিসেবে আপনি বাইরে অর্থ রাখতে পারেন।”

  23. মাসুদ করিম - ২৫ জুন ২০২২ (৬:২৭ অপরাহ্ণ)

    বর্ণিল উৎসবে দুয়ার খুললো ‘গর্বের’ পদ্মা সেতু
    https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article2081284.bdnews

    প্রমত্তা পদ্মার তীরে উন্মোচিত হল ফলক, বাতাসে উড়ল রঙিন আবির, দিকে দিকে উঠল জয়বাংলা স্লোগান; বর্ণিল উৎসবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    তিনি বললেন, “এই সেতু শুধু একটি সেতু নয়, এই সেতু দুই পাড়ের যে বন্ধন সৃষ্টি করেছে তা নয়, এই সেতু শুধু ইট, সিমেন্ট, স্টিল, লোহা, কংক্রিটের একটা অবকাঠামো নয়, এই সেতু আমাদের অহংকার, এই সেতু আমাদের গর্ব। এই সেতু আমাদের সক্ষমতা, আমাদের মর্যাদার শক্তি।

    “এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয় যে আমরা এই সেতু তৈরি করবই। সেই জেদ, সেই প্রত্যয়।”

    স্বপ্ন বোনার শুরুটা হয়েছিল দুই যুগ আগে; নানা টানাপড়েন আর অপপ্রচার পেরিয়ে, ষড়যন্ত্র আর প্রতিকূলতা প্রতিহত করে এ দেশের মানুষের টাকায় বাস্তব রূপ পেয়েছে পদ্মা সেতু।

    শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করে দেশের মানুষকে ‘স্যালুট’ জানালেন শেখ হাসিনা, বললেন, জনগণের সমর্থন আর সাহসেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কঠিন কাজটি করা সম্ভব হয়েছে।

    এই সেতু যে কেবল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে- তাই না, পুরো দেশের সামনে খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার, যে পথ ধরে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

    বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এবং পরে সেতু পেরিয়ে জাজিরা প্রান্তে ফলক ও ম্যুরাল উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। দুই দশক আগে তিনিই দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের এ সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। সেতুতে টোল দিয়ে তিনিই এ সেতুর প্রথম যাত্রী হয়েছেন।

    উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে পদ্মার দুই তীরের তিন জেলার পাশাপাশি সারা দেশেই ছিল উৎসবের রঙ। বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশ সাজানো হয় অসংখ্য ব্যানার-ফেস্টুনে, যেখানে শোভা পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।

    পদ্মাপাড়ের আনুষ্ঠানিকতা সাজানো হয়েছিল মূলত দুই ভাগে। মাওয়ায় রাষ্ট্রীয় আয়োজনে হয় সুধী সমাবেশ, যেখানে সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা, কূটনীতিকসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

    এই সমাবেশ থেকেই পদ্মাসেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট, স্মারক নোট, স্যুভেনির শিট, সিলমোহর ও উদ্বোধন খাম উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সেতুর দুই তীরে ফলক উন্মোচন করে সারেন উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা।

    পরে তিনি যোগ দেন মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের বিশাল সমাবেশে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকেও বাস, আর লঞ্চে করে কয়েক লাখ মানুষ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন সকাল থেকেই। কোনো অবকাঠামোর উদ্বোধন উপলক্ষে এত বড় উৎসব, এত বড় আয়োজন আর কখনও বাংলাদেশ দেখেনি।

    বলা হয়েছিল, শনিবার উদ্বোধন হলেও এ সেতুতে ওঠার সুযোগ সবার থাকবে না। রোববার পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে যানবাহন চলাচলের জন্য।

    কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শিবচরে থাককেই সেতুর দুই প্রান্তে উৎসুক জনতার ঢল নামে। কাউকে কাউকে রেলিংয়ে উঠে সেলফি তুলতেও দেখা যায়। পরে তাদের সরাতে সক্রিয় হতে হয় পুলিশকে।

    ‘লিখব নতুন ইতিহাস’

    সকালে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে মুন্সীগঞ্জরে মাওয়ায় পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়ায় সুধী সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। আমন্ত্রিত অতিথিরা সকালেই উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে।

    সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামও ছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে।

    মঞ্চের দুই পাশে দুটো ডায়াস আর তার দুটো জায়ান্ট স্ক্রিন। এক পাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, অন্য পাশে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।

    স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন অতিথিদের আসনে।

    আরও ছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন, ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী।

    পদ্মা সেতুর থিম সং ‘মাথা নোয়াবার নয়, বাঙ্গালি যেহেতু; বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন দেশ, তুমি দিলে পদ্মা সেতু’ বাজিয়ে সুধী সমাবেশ শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য দেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব। পদ্মা সেতু গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট এবং বন্ধুর পথ পরিক্রমা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। তারপর বক্তৃতা দেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সবশেষে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ান শেখ হাসিনা।

    অনেক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করেই যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ সম্ভব হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।

    “বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কেউ ‘দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, আমরা বিজয়ী হয়েছি।”

    বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা মাথা নোয়াইনি। আমরা কখনও মাথা নোয়াব না। জাতির পিতা শেখ মুজিব কখনও মাথা নোয়াননি, মাথা নোয়াতে শেখান নাই। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি জীবনের জয়গান গেয়েছেন।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “ষড়যন্ত্রের কারণে সেতু নির্মাণ করতে প্রায় দুই বছর দেরি হয়। আমরা কখনও হতোদ্যম হইনি। হতাশায় ভুগিনি, আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলেছি এবং শেষ পর্যন্ত সকল অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি।

    “আজকে পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি রঙের আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।”

    যারা বলেছিলেন, পদ্মা সেতু একটি স্বপ্ন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করা সম্ভব না, তাদের বিরুদ্ধে তার ‘কোনো অভিযোগ নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমার কোনো অনুযোগ নাই। তাদের হয়তো চিন্তার দৈনতা আছে, আত্মবিশ্বাসের দৈন্যতা আছে বলে আমি মনে করি। আজ থেকে আমি মনে করি, আজ থেকে তাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে যে বাংলাদেশ পারে।

    “আমি আশা করি, সেতুর কাজ বন্ধ করতে যারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছে বা বাধা দিয়েছে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তাদের হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। দেশের মানুষের প্রতি তারা আরও দায়িত্ববান হবে।”

    পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের মানুষ, যারা নির্দ্বিধায় তাদের জমি হস্তান্তর করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

    “তাদের ও তাদের পরিবারকেও আমরা পুনর্বাসন করেছি। কিন্তু যারা নিজের জায়গা ছেড়ে চলে যায়, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তাদের ত্যাগ ও সহযোগিতা না হলে হয়ত এ সেতু নির্মাণ করা কঠিন হত।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। বাঙালির ইতিহাসের প্রতিটি বাঁক রঞ্জিত হয়েছে ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্ত ধারায়। কিন্তু বাঙালি আবার সদর্পে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

    খবর > বাংলাদেশ
    বর্ণিল উৎসবে দুয়ার খুললো ‘গর্বের’ পদ্মা সেতু

    নিজস্ব প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

    Published: 25 Jun 2022 12:30 PM BdST Updated: 25 Jun 2022 07:22 PM BdST

    পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

    পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

    পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে শনিবার নিজ হাতে মাওয়া প্রান্তে সেতুর টোল প্লাজায় টোল দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

    পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে শনিবার নিজ হাতে মাওয়া প্রান্তে সেতুর টোল প্লাজায় টোল দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি
    পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সেতুর উপর আকাশে উড়ল বাহারি রঙের আবির। ছবি: পিআইডি

    পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সেতুর উপর আকাশে উড়ল বাহারি রঙের আবির। ছবি: পিআইডি

    Previous
    Next
    প্রমত্তা পদ্মার তীরে উন্মোচিত হল ফলক, বাতাসে উড়ল রঙিন আবির, দিকে দিকে উঠল জয়বাংলা স্লোগান; বর্ণিল উৎসবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    তিনি বললেন, “এই সেতু শুধু একটি সেতু নয়, এই সেতু দুই পাড়ের যে বন্ধন সৃষ্টি করেছে তা নয়, এই সেতু শুধু ইট, সিমেন্ট, স্টিল, লোহা, কংক্রিটের একটা অবকাঠামো নয়, এই সেতু আমাদের অহংকার, এই সেতু আমাদের গর্ব। এই সেতু আমাদের সক্ষমতা, আমাদের মর্যাদার শক্তি।

    “এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয় যে আমরা এই সেতু তৈরি করবই। সেই জেদ, সেই প্রত্যয়।”

    স্বপ্ন বোনার শুরুটা হয়েছিল দুই যুগ আগে; নানা টানাপড়েন আর অপপ্রচার পেরিয়ে, ষড়যন্ত্র আর প্রতিকূলতা প্রতিহত করে এ দেশের মানুষের টাকায় বাস্তব রূপ পেয়েছে পদ্মা সেতু।

    শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করে দেশের মানুষকে ‘স্যালুট’ জানালেন শেখ হাসিনা, বললেন, জনগণের সমর্থন আর সাহসেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কঠিন কাজটি করা সম্ভব হয়েছে।

    এই সেতু যে কেবল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে- তাই না, পুরো দেশের সামনে খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার, যে পথ ধরে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। ছবি: পিআইডি

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। ছবি: পিআইডি
    বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এবং পরে সেতু পেরিয়ে জাজিরা প্রান্তে ফলক ও ম্যুরাল উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। দুই দশক আগে তিনিই দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের এ সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। সেতুতে টোল দিয়ে তিনিই এ সেতুর প্রথম যাত্রী হয়েছেন।

    উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে পদ্মার দুই তীরের তিন জেলার পাশাপাশি সারা দেশেই ছিল উৎসবের রঙ। বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশ সাজানো হয় অসংখ্য ব্যানার-ফেস্টুনে, যেখানে শোভা পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।

    পদ্মাপাড়ের আনুষ্ঠানিকতা সাজানো হয়েছিল মূলত দুই ভাগে। মাওয়ায় রাষ্ট্রীয় আয়োজনে হয় সুধী সমাবেশ, যেখানে সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা, কূটনীতিকসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

    এই সমাবেশ থেকেই পদ্মাসেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট, স্মারক নোট, স্যুভেনির শিট, সিলমোহর ও উদ্বোধন খাম উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সেতুর দুই তীরে ফলক উন্মোচন করে সারেন উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা।

    পরে তিনি যোগ দেন মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের বিশাল সমাবেশে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকেও বাস, আর লঞ্চে করে কয়েক লাখ মানুষ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন সকাল থেকেই। কোনো অবকাঠামোর উদ্বোধন উপলক্ষে এত বড় উৎসব, এত বড় আয়োজন আর কখনও বাংলাদেশ দেখেনি।

    বলা হয়েছিল, শনিবার উদ্বোধন হলেও এ সেতুতে ওঠার সুযোগ সবার থাকবে না। রোববার পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে যানবাহন চলাচলের জন্য।

    কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শিবচরে থাককেই সেতুর দুই প্রান্তে উৎসুক জনতার ঢল নামে। কাউকে কাউকে রেলিংয়ে উঠে সেলফি তুলতেও দেখা যায়। পরে তাদের সরাতে সক্রিয় হতে হয় পুলিশকে।

    পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

    পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
    ‘লিখব নতুন ইতিহাস’

    সকালে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে মুন্সীগঞ্জরে মাওয়ায় পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়ায় সুধী সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। আমন্ত্রিত অতিথিরা সকালেই উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে।

    সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামও ছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে।

    মঞ্চের দুই পাশে দুটো ডায়াস আর তার দুটো জায়ান্ট স্ক্রিন। এক পাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, অন্য পাশে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।

    স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন অতিথিদের আসনে।

    আরও ছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন, ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী।

    পদ্মা সেতুর থিম সং ‘মাথা নোয়াবার নয়, বাঙ্গালি যেহেতু; বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন দেশ, তুমি দিলে পদ্মা সেতু’ বাজিয়ে সুধী সমাবেশ শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য দেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব। পদ্মা সেতু গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট এবং বন্ধুর পথ পরিক্রমা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। তারপর বক্তৃতা দেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সবশেষে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ান শেখ হাসিনা।

    অনেক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করেই যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ সম্ভব হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।

    “বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কেউ ‘দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, আমরা বিজয়ী হয়েছি।”

    বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা মাথা নোয়াইনি। আমরা কখনও মাথা নোয়াব না। জাতির পিতা শেখ মুজিব কখনও মাথা নোয়াননি, মাথা নোয়াতে শেখান নাই। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি জীবনের জয়গান গেয়েছেন।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “ষড়যন্ত্রের কারণে সেতু নির্মাণ করতে প্রায় দুই বছর দেরি হয়। আমরা কখনও হতোদ্যম হইনি। হতাশায় ভুগিনি, আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলেছি এবং শেষ পর্যন্ত সকল অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি।

    “আজকে পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি রঙের আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।”

    যারা বলেছিলেন, পদ্মা সেতু একটি স্বপ্ন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করা সম্ভব না, তাদের বিরুদ্ধে তার ‘কোনো অভিযোগ নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমার কোনো অনুযোগ নাই। তাদের হয়তো চিন্তার দৈনতা আছে, আত্মবিশ্বাসের দৈন্যতা আছে বলে আমি মনে করি। আজ থেকে আমি মনে করি, আজ থেকে তাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে যে বাংলাদেশ পারে।

    “আমি আশা করি, সেতুর কাজ বন্ধ করতে যারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছে বা বাধা দিয়েছে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তাদের হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। দেশের মানুষের প্রতি তারা আরও দায়িত্ববান হবে।”

    পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের মানুষ, যারা নির্দ্বিধায় তাদের জমি হস্তান্তর করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

    “তাদের ও তাদের পরিবারকেও আমরা পুনর্বাসন করেছি। কিন্তু যারা নিজের জায়গা ছেড়ে চলে যায়, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তাদের ত্যাগ ও সহযোগিতা না হলে হয়ত এ সেতু নির্মাণ করা কঠিন হত।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। বাঙালির ইতিহাসের প্রতিটি বাঁক রঞ্জিত হয়েছে ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্ত ধারায়। কিন্তু বাঙালি আবার সদর্পে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

    “যতবারই হত্যা করো, জন্মাবো আবার; দারুণ সূর্য হবো, লিখবো নতুন ইতিহাস,” কবির ভাষায় বলেন তিনি।

    উন্মোচন-উদ্বোধন

    সুধী সমাবেশে বক্তব্য শেষে স্মারক ডাক টিকিট, স্মারক নোট, স্যুভেনির শিট, সিলমোহর ও উদ্বোধনী খামের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলীদের সঙ্গে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গ্রুপ ছবি তুলতে দাঁড়ান ক্যামেরার সামনে।

    মাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটে ৭৫০ টাকা টোল দিয়ে প্রথম যাত্রী হিসেবে পদ্মা সেতু এলাকায় প্রবেশ করেন সরকার প্রধান। শুধু নিজের গাড়ির নয়, বহরে থাকা সবগুলোর গাড়ির মোট ১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল মেটান তিনি।

    টোল প্লাজা থেকে বেরিয়ে বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটে পদ্মা সেতুর দিকে এগিয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। সেতুতে ওঠার আগে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। বাতাসে রঙিন আবীর উড়িয়ে বর্ণিল পরিবেশে উদ্বোধন হয় বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর।

    ফলক উদ্বোধনের পর মোনজাত পরিচালনা করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সেখানে লাল গালিচায় ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদও ছিলেন এ সময়। এই উৎসবের ক্ষণে মায়ের সঙ্গে তাকে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলতে দেখা যায়।

    সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন এ সময়। এ ছাড়া ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ ওঠায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং তখনকার যোগাযোগ সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়াও উপস্থিত ছিলেন এ সময়। যদিও সেই অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।

    মাওয়ায় ফলক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর মূল সেতুতে ওঠে বেলা ১২টা ৭মিনিট। কিছুক্ষণ পর বহরের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। সেখানে প্রায় ১৫ মিনিট সময় কাটান তিনি, উপভোগ করেন বিমান ও হেলিকপ্টারের ফ্লাইং ডিসপ্লে।

    কয়েকটি হেলিকপ্টার পতাকা উড়িয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। বিমান থেকে ছড়ানো লাল, সবুজ, নীলসহ নানা রঙের ধোঁয়া।

    সেতুতে দাঁড়িয়ে মিগ-২৯ জঙ্গি বিমানের প্রদর্শনীও উপভোগ করেন সরকার প্রধান। উৎসবের এ মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরায় ধারণ করতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীও সেতুর ওপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন এ সময়।

    ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের সেতু পাড়ি দিয়ে ১২টা ৩৪ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছান শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে। সেখানে সেতুর আরেকটি ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী, পরে যোগ দেন মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের বিশাল সমাবেশে।

    সেখানে তিনি বলেন, সেতু নির্মাণে যারা বাধা দিয়েছিল, তাদের ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়া হয়েছে। পদ্মাসেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ দেখিয়েছে, ‘আমরাও পারি।”

    বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর জনগণের ‘সাহস ও শক্তি নিয়েই’ সেতুর কাজ শুরু করেছিলেন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “এই খরস্রোতা পদ্মা নদী পার হতে গিয়ে আর কাউকে সন্তান হারাতে হবে না, বাবা-মাকে, ভাইবোনকে হারাতে হবে না। আজকে সেখানে আপনারা নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।”

    পদ্মা সেতুকে ‘প্রাণের সেতু’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ পাশে ছিল বলেই সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

    https://twitter.com/urumurum/status/1540678770431909889

  24. মাসুদ করিম - ২৬ জুন ২০২২ (৩:৪৮ পূর্বাহ্ণ)

    https://twitter.com/albd1971/status/1540582905209966592

    Padma Bridge a symbol of pride: PM, World watches as Bangladesh’s ‘dream bridge’ opens undeterred – MUNIMA SULTANA with MIR MOSTAFIZUR RAHAMAN

    Bangladesh steps into a new era of development as a communications mega-infrastructure, the Padma Multipurpose Bridge, becomes a reality undeterred by multiple headwinds.

    The defining moment was ushered in when a visibly jubilant Prime Minister Sheikh Hasina opened the longest bridge in the country, and a unique one in the world, through paying toll herself for the maiden drive across it at 11.48 am amid countrywide festivities and celebrations.

    With this, a long-cherished dream of some 30 million people of 21 districts in the southwestern part of the country came true. The bridge will be opened to public traffic this (Sunday) morning, ending ages of agonies and frequent tragedies associated with crossing the world’s second-most turbulent river by ferries.

    The inauguration of the 6.15-km bridge, which connects the southwestern part of the country with the capital through Munshiganj, Shariatpur and Madaripur, ends seven-year-long herculean task carried out by a 5000-strong workforce with the spending of 3.1 billion US dollars.

    “The bridge is not merely a structure of steel, cement and concrete–it is a symbol of the country’s capability, pride and dignity. The 42 spans of the bridge are the reflections of an audacious Bangladesh,” an emotion-choked Hasina told the citizen gathering held at the Mawa end of the bridge prior to heading towards her dream bridge.

    The Prime Minister has already been acclaimed at home and abroad for her ‘bold and courageous’ decision to implement the project with domestic funds despite opposition from many.

    After opening a mural titled ‘father and daughter’, portraying the faces of her father Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and herself, the Prime Minister started crossing the bridge in a motorcade at 12:07 pm.

    Flanked by her daughter Saima Wazed Putul, Sheikh Hasina took a 15-minute break in the middle of the bridge to enjoy a spectacular flypast conducted by a fleet of 31 jets and helicopters of Bangladesh Air Force.

    Top rung of her government and party, and chiefs of army, navy and air force also joined her in the on- bridge ceremony. Ministers, State Ministers, Deputy Ministers, Members of Parliament, diplomats, secretaries and political leaders followed her on 13 buses.

    She reached the Jajira point of the bridge at 12.34 pm and then joined a huge joy rally organised by her party.

    Earlier, addressing the inaugural function at Mawa point, the Prime Minister said that the bridge signifies the emotion, resilience, endurance and creativity of Bangladesh.

    Hasina said the bridge project was completed through demolishing a web of ”conspiracies”.

    “It is a symbol of our pride and self-esteem.. our emotion, courage and vision that we will do the Padma Bridge and will certainly be able to do,” she told the gathering of the dignitaries comprising top officials of the government, party and diplomats and other professionals.

    She said the bridge again proved Bangabandhu’s words that ‘no one can suppress’ the Bengalis as they made the bridge building happen.

    Narrating the background ballad of the biggest infrastructure project of the country, the prime minister said that her government did not back out from its implementation when the World Bank withdrew its funding for the project.

    She said that it was the strength of the people of her country from where she got the encouragement to implement the project with own funding.

    The Prime Minister thanked the local people who sacrificed their land and ancestral homes for the project.

    Referring to the ‘conspirators’ she said that she has no complaint against them. ”Let good sense prevail upon them and I hope they will be responsible to the wellbeing of the people.”

    She mentioned that due to the false allegations and accusations of corruption by the World Bank her family members and senior officials faced embarrassment and top officials related to the project faced humiliation.

    “A person who was a Managing Director of a bank was asked to quit as his age did not permit him to hold the post,” she told her audience.

    “He was offered the post of Adviser Emeritus but he felt offended and then the World Bank withdrew the funding,” Hasina said in an oblique reference to the then Grameen Bank Managing Director, Dr Yunus.

    The Prime Minister noted that the highest standard was maintained in constructing the bridge and no compromise was made in maintaining the quality.

    An emotion-choked Sheikh Hasina said that she could not have completed the mammoth task sans blessings of her father Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and mother Begum Fazilatunnesa Mujib.

    “I always feel the hands of their blessings on my head,” she added.

    The Prime Minister said though it was estimated that the Padma Bridge would contribute 1.2 per cent to the GDP growth of the country, she felt that it would be much higher.

    She mentioned that her government has been able to keep the growth momentum on track braving the onslaught of corona pandemic and the Ukraine war.

    The Prime Minister also talked about her government’s various ongoing infrastructure projects and visions and said the goal to be developed country by 2041 is achievable as well as SDG goals.

    After her speech she released a commemorative postage stamp and a 100-taa banknote.

    Earlier, a theme song and a presentation on the Padma Bridge were presented during the function. China Major Bridge Engineering Company, the contractor of the main bridge, handed over a Padma Bridge replica to the Prime Minister.

    Road transport and bridges minister Obaidul Quader and Cabinet Secretary Anwarul Islam also spoke at the inaugural function.

    Mr Quader, who is also general secretary of the ruling Awami League, said that by constructing the Padma Bridge, the government gave a fit reply to those who conspired against the project. He said the Padma Bridge is the symbol that tells Bengalis can do everything.

    Anwarul Islam lauded the project officials, including Project Director M Shafiqul Islam, for their sincerity and devotion in implementing the bridge project and said all of all sectors responded to the project’s implementation positively.

    Around 10,000 people have worked on the project sites on various occasions to build the main bridge, do river-training work, construct approach roads on both sides, and for resettlement-site development. Some 120 engineers and staff of the PMB project have been engaged since the beginning.

    Besides, some 3,000 consultants from national and international levels, including a 10-member of Panel of Experts, supported the megaproject at various levels. People from 14 different countries also worked in making the highly challenging project a success.

    However, the project has passed through challenges after the first funding arrangement under the leadership of the World Bank was withdrawn in 2012.

    The then bridge secretary, Mosharraf Hossain Bhuiyan, and project’s senior engineer Quazi Ferdous were sent to jail for several months to satisfy the WB which demanded resignation of the then Communications Minister, Syed Abul Hossain, raising allegations against him of possible corruption in the selection of Construction Supervision Consultant in September 2011.

    The inaugural function at the Mawa site was attended by World Bank Country Director Mercy Miyang Tembon, Syed Abul Hossain and Mosharraf Hossain Bhuiyan.

    The WB Country Director told the media that the bank as a close development partner of the government is happy with the achievement of the Padma Bridge. Ms Mercy, who wore sari on the occasion, hope that a ”long-term benefit will be enjoyed by the country due to the construction of the Padma Bridge”.

    Initiative to build the bridge over the mighty river was taken first in 1998-99 through pre-feasibility study. In her speech, the Prime Minister, however, said Japan did the feasibility study of the bridge when she requested the Japanese government during her visit to that country in 1997.

    But the BNP government did not accept the feasibility study as they wanted to construct the bridge through Aricha -Paturia, not the Mawa-Janjira point. That study also recommended the bridge at the same point as earlier study referred.

    The Padma Multipurpose Bridge project was first approved by the ECNEC in 2007, which was revised with the increase in the length to 6.15 kms from 5.8 kms. It was then proposed to build the bridge in two-tier options keeping road on top and rail below in 2011.

    The PMB project reached the current stage after two more revisions till 2021, escalating the cost to Tk 301.93 billion.

    The CMBE built the steel-truss composite bridge against its financial proposal of Tk 121.33 billion and Sinohydro Corporation Limited the river-training work at Tk 87.07 billion which is yet to complete.

    Abdul Monem Ltd-Hygenic Corporation of Malaysia did the work on Mawa and Janjira approach roads along with service-area development.

    However, the Padma Multipurpose Bridge has been ready when the project’s panel of experts’ chairman, Prof Jamilur Reza Chowdhury, and two other PoE members– Alamgir Mojibul Hoque and Dr AMM Shafiullah– left the world.

    The Padma Bridge is now recognized for its huge volume of works making four new world records, three first time in bridge construction in the world and seven for the first in Bangladesh.

    https://twitter.com/urumurum/status/1540884588838682624

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.