কাঁঠালতলী বাসস্টপে নামলেই খবরটা কীভাবে যে শরফুর কাছে পৌঁছে যেত, সে এক রহস্য। আধা ঘণ্টার মধ্যেই হাজির। টেলিপ্যাথি? হতেও পারে, বিষয়টিতে তার আগ্রহ ছিল। [...]

কাঁঠালতলী বাসস্টপে নামলেই খবরটা কীভাবে যে শরফুর কাছে পৌঁছে যেত, সে এক রহস্য। আধা ঘণ্টার মধ্যেই হাজির। টেলিপ্যাথি? হতেও পারে, বিষয়টিতে তার আগ্রহ ছিল। আমাদের কথোপকথনের কোনো শেষ ছিল না। হাঁটতে হাঁটতে, কোনো গাছতলায় বসে কিংবা চৌমাথার বাজারের চায়ের দোকানে। আলোচ্য বিষয়ের বৈচিত্র্য বোঝানো কঠিন, অদ্ভুত সব কথা বলত সে—কিছু বুঝতাম, কিছু বুঝতাম না। কেমন মানুষ এই শরফু, কতটুকু তার পড়াশোনা? স্কুলটা শেষ করেছিল, কলেজেও ঢুকেছিল, টিকতে পারেনি। দোষটা তারই। শিক্ষকদের সঙ্গে বেয়াড়া তর্ক বাধাত, তাতে শ্রেণীকক্ষে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সবাই মহাবিরক্ত। শিক্ষকেরা হাল ছাড়লেন, সে ছাড়ল কলেজ। এ ধরনের ছাত্রদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় টিকে থাকা কঠিন, চাই দক্ষ সংবেদনশীল বোদ্ধা শিক্ষক আর তাঁরা সব কালে সব দেশেই দুর্লভ। দেশ-বিদেশে দৃষ্টান্ত আছে ভূরি ভূরি। রবীন্দ্রনাথ, রামানুজন, ডারউইন, হাক্সলি, আইনস্টাইনের কথা আমরা জানি, তাঁরা সফল হয়েছিলেন। যাঁরা পারেননি, তাঁদের খোঁজ কেউ জানে না। শরফু কথা বলত কোয়ান্টাম তত্ত্ব, আপেক্ষিকতাবাদ, মস্তিষ্কের নিউরনে ইলেকট্রন ট্রান্সফার, মনোরোগ ও এর চিকিৎসা নিয়ে; কখনো নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়েও। সে মশা ও জোঁক নিয়ে পরীক্ষা করে নাকি দেখেছে, ওরা ধ্যানস্থ ব্যক্তিকে দংশন করে না। সে বলত, মানুষকে কুকর্ম ও কুচিন্তা থেকে বিরত রাখতে পারলে তারা নানা ক্রনিক রোগ থেকে মুক্তি পায়। এমন চিকিৎসাও সে করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। কেননা, আরোগ্যলাভের পর তারা দ্রুত দুষ্টবৃত্তে ফিরে যায় এবং পুনরায় রোগাক্রান্ত হয়। তাই বলে শরফু লোকচিকিৎসক হয়ে ওঠেনি এবং তা তার বৈদগ্ধের জন্য। এমন লোকের সংসারে টিকে থাকা কঠিন। সে টিকে ছিল এবং তা পরিবারবর্গের সহনশীলতা ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতার গুণে। শরফুর দাদা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ছিলেন ভারতবিখ্যাত মাওলানা, হায়দরাবাদের নিজামের সভাসদ, তাঁর নামে আমাদের গ্রামে একটি পাঠশালাও ছিল। আমিও সেখানে পড়েছি, এখনো সেটি আছে, তবে সরকারীকরণের ফলে নামটি বদলে গেছে। অদ্ভুত দেশ, অদ্ভুত নিয়ম। তাঁর জানাজার দৃশ্য ছেলেবেলায় দেখেছি। মাজারের ওপর কারুকার্যময় চমৎকার একটি মিনার ছিল, বড়ই আশ্চর্য মনে হতো আমাদের, একবার গেলে ফিরতে পারতাম না। এই মাজারে বার্ষিক ওরসে সারা ভারত থেকে মুরিদবর্গ আসতেন, জিকির চলত একনাগাড়ে তিন দিন। এই পরিবারের সন্তান শরফু, ধার্মিক ছিল অবশ্যই, নিখাদ ধার্মিক, তবে একই সঙ্গে বিজ্ঞানমনস্কও। শরফুর মৃত্যুর পর স্থানীয় নির্যাস…

এই লেখাটা লিখব না লিখব না বহুদিন ভেবেছি। কাছের মানুষরা ভয় দেখিয়েছেন কাকের মতন একতাবদ্ধ সাহিত্যিক দুর্বৃত্তদের। কিন্তু বারবার মনে হয়েছে যে, লেখা উচিত। [...]

এই লেখাটা লিখব না লিখব না বহুদিন ভেবেছি। কাছের মানুষরা ভয় দেখিয়েছেন কাকের মতন একতাবদ্ধ সাহিত্যিক দুর্বৃত্তদের। কিন্তু বারবার মনে হয়েছে যে, লেখা উচিত। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমার প্রথম বই কনফেশন বক্সের ভিতর। অটাম-দিনের গান প্রকাশিত হয়। বইটার মূলগল্পের কেন্দ্রে আছে একটি পরিবার, আজহারউদ্দিন আহমেদের পরিবার। আজহারউদ্দিনের স্ত্রীর নাম ফরহাত বানু। মেয়ে ঈশরাত বানু। ছেলে রঞ্জু। ঈশরাতের আরেকটি বোন আছে, তার নাম রওনক। রঞ্জুর একটি অজ্ঞাতনামা প্রেমিকা ছিল, তার ছদ্মনাম ক্রতু। রওনক বাদে এঁরা প্রত্যেকে স্মৃতিচারণ করেন। কেউ ডায়েরি লিখে। কেউ স্বগতঃভাষণে। কেউ চিঠিতে। এঁদের দৈনন্দিন জীবনে প্রেম-গ্লানি-প্রতারণা-প্রিয়বিয়োগের শোক এইসবই উপস্থিত। নিজের কাছে অবমুক্ত হবার সময় এঁরা প্রত্যেকে দেখতে পান এঁদের নিজস্ব স্খলন-পতন-ত্রুটি, এঁদের জীবনে ভালবাসা পাবার জন্যে অন্তিম হাহাকার। ব্যক্তিগত বেদনা ভুলতে আপাতঃস্বাভাবিক এইসব মানুষ প্রতিহিংসার আশ্রয়ও নেন, যেন তাতে স্থায়ী-শোক উপশমের উপায় আছে। এই বইটিতে আমার ভাষাব্যবহারের একটি উদ্দেশ্য ছিল ভাষাভাষীদের আলাদা করে দেয়া। যাতে প্রতিটি চরিত্রের জন্যে ভাষাও একটি চারিত্র হয়ে দাঁড়ায়। শুধু সাধু-চলিত নয়, পরিভাষা এবং বিদেশী শব্দও আলাদা করে বসিয়েছিলাম আমি। এক এক করে। অদ্যাবধি আমার জানামতে বইটার দু’খানা রিভিউ হয়েছে, একটি মশিউল আলমের করা (প্রথম আলো-তে) আরেকটা সালাহ্ উদ্দিন শুভ্রের করা, সাময়িকী ডট কম-এ। প্রথম রিভিউটির কোনো কপি আমার কাছে নাই। তবে মনে আছে, মশিউল আলম লিখেছিলেন -- 'বইয়ের নামে ইংরেজি কেন? তার মানে কি লেখক বাংলা ভাল জানেন না?' (এই সম্পাদ্য উনি শেষ অব্দি শেষ করেছেন এইমত যে, লেখকের বই পড়ে তাঁর মনে হয়েছে লেখক বাংলা ভালই জানেন।) মজার বিষয় হচ্ছে একইসময় আরেকটি বইয়ের রিভিউ হয়েছে, আমার বইয়ের রিভিউয়ের পাশেই, একইসময়-একসাথে, সে বইটির নাম ফেস বাই ফেস, লেখক মাহবুব মোর্শেদ। তাঁকে প্রশ্ন সইতে হয়নি কেন তাঁর বইয়ের নাম পুরোটাই ইংরেজিতে (এবং বলতে নেই এবইয়ের নাম ইংরেজিতেও অর্থহীন, আমি একাধিক ইংরেজিভাষীর সাথে এই 'পান'-এর যথাযোগ্যতা নিয়ে আলাপ করেছি, তাঁরাও পাননি। তবে আমি মনে করি বইয়ের নাম বিষয়ে লেখকের সার্বভৌমত্ব আছে, তিনি রাখতেই পারেন।), তিনিও কি বাংলা জানেন না? নাকি উপযুক্ত শব্দাবলির অভাবে দ্রুত ইংরেজির সহায়তা নেয়ার অভ্যাস (মশিউল আলম এই অভ্যাসের কথা লিখেছেন প্রথমেই)? ফেস বাই ফেস-এর রিভিউয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেও এরকম কোনো প্রশ্ন…

নরমান মেইলার একজন নেশা-ধরানো, মজার মানুষ। ইস্পাতের ফাঁদের মত মন তাঁর।

ওয়াল্ট হুইটম্যান আমার বন্ধু অ্যাবে রাটনার আর আমি যখন আমাদের আমেরিকাব্যাপী এয়ারকন্ডিশন্ড নাইটমেয়ার যাত্রা শুরু করি তখন আমরা ছিলাম লং আইল্যান্ড-এ, ওয়াল্ট হুইটম্যান যে খামারে জন্মেছিলেন সেটা থেকে খুব একটা দূরে নয়। আমরা ঠিক করি যাত্রা শুরু করার আগে তাঁর জন্মস্থানের পাশ দিয়ে গিয়ে আমাদের শ্রদ্ধা জানাবো। কথামত তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমরা গাড়ির গতি কমিয়ে মাথার টুপি খুলে নিই, তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে, মৃদু হেসে আমাদের অভিযান শুরু করি। আমার আমেরিকা পুনরাবিষ্কারযাত্রাটি এভাবে শুরু করাটাকেই সবচেয়ে সমীচীন বলে মনে হয়েছিল, এটা শুধু ওয়াল্ট হুইটম্যান হাড়েমজ্জায় একজন খাঁটি আমেরিকান ছিলেন বলেই নয়, গণতন্ত্রের প্রথম ও শেষ প্রতিভূ, একজন জনগণনন্দিত প্রকৃত জনগণের মানুষ, জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মানুষ ছিলেন বলেও। আমি হুইটম্যানকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম লেখক বলে মনে করি, এমনকি ইউরোপের যে-কোন শ্রেষ্ঠতমর চেয়েও শ্রেষ্ঠ । লীভ্স্ অভ গ্রাস একটি সত্যিকারের মাস্টারপীস, আত্মার সংগীতবিশেষ। তাঁর কবিতা সং অভ মাইসেল্ফ-এ স্বাধীনতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। এই মানুষটির তাঁর নিজের ও নিজের লেখার ওপর এতটাই বিশ্বাস ও আস্থা ছিল যে তিনি গেরস্থালি সামগ্রীর ফেরিঅলার মত দরজায় দরজায় ঘুরে তাঁর কবিতা ফেরি করতেন। আমি যখন প্রথম লেখা শুরু করি তখন তাঁর সাহসই ছিল আমার আত্মপ্রকাশের প্রেরণার উৎস। তিনি তাঁর জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে দেখিয়েছিলেন যে অনাহার ও জীবনসংগ্রামও গৌরবময় হয়ে উঠতে পারে যদি আপনি এর কাছে পরাজিত না হন। হুইটম্যানকে প্রায়শই সমকামী বলা হয়ে থাকে কিন্তু পুরুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল স্রেফ ভ্রাতৃসুলভ, তা কখনোই যৌনতাময় ছিল না। যৌনতার জগৎ থেকে তা অনেক উর্ধ্বে ছিল। তাঁর ছিল এক অদ্ভূত বিকিরণী ক্ষমতা, ভালোবাসার ও দান করার ক্ষমতা ছিল তাঁর এক কথায় সীমাহীন। তিনি ছিলেন একজন উল্লসিত মহাজাগতিক সত্তা- মানুষের কী হওয়া উচিৎ, কীভাবে চিন্তা করা ও বাঁচা উচিৎ তার সুন্দরতম দৃষ্টান্তবিশেষ। নুট হামসুন/এজরা পাউন্ড দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে নুট হামসুন ও এজরা পাউন্ড দুজনকেই উন্মাদাশ্রমে যেতে হয়েছিল তাঁদের কিছু মন্তব্যের কারণে। তাঁদেরকে হয়তবা জেলেই যেতে হতো, যদি না তাঁরা বৃদ্ধ এবং সম্মানিত লেখক হতেন। নুট হামসুন সবসময় তাঁর বইয়ে নরওয়েবাসীদের নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করতেন, ঠিক আমি যেরকম আমার বইয়ে মার্কিনিদের নিয়ে হাসি তামাশা করে থাকি। তিনি…

বন্ধুদের প্রতি আমার মনোভাবের যে দিকটার ওপর আমার জোর দেয়া উচিৎ সেটা হচ্ছে দ্বৈততা [...]

[হেনরি মিলারের ‘ভাবনাগুচ্ছ’ : ১, হেনরি মিলারের ‘ভাবনাগুচ্ছ’ : ২, হেনরি মিলারের ‘ভাবনাগুচ্ছ’ : ৩, হেনরি মিলারের ‘ভাবনাগুচ্ছ’ : ৪] বন্ধুত্ব বন্ধুদের প্রতি আমার মনোভাবের যে দিকটার ওপর আমার জোর দেয়া উচিৎ সেটা হচ্ছে দ্বৈততা। ভালো বন্ধু হবার জন্য আমার প্রশংসা জুটলেও, ক্ষেত্রবিশেষে আমি প্রচণ্ড অবিশ্বস্তও হতে পারি। আমি তাদের পেছনে কথা বলি, তাদের সমালোচনা করি এবং তাদের দোষ ও দুর্বলতা নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করি। বস্তুত যে জিনিসটা আমি সবার আগে খেয়াল করি সেটা তাদের খুঁতসমূহ। অদ্ভুত শোনালেও সত্য যে, তাদের খুঁতগুলিই আমাকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে। আমি দুর্বিনীত ও বদমাশ স্বভাবের লোকদের বেশি পছন্দ করি কেননা আমার স্বভাবচরিত্রও যে তাদেরই মত! আমি সেই মানুষগুলোকে সহ্য করতে পারি না যারা আমার ব্যাপারে বেশি উদ্বিগ্ন, যারা সরাক্ষণই আমার শরীর-স্বাস্থ্যের খবর নিতে থাকে। অথবা যারা আমাকে এজাতীয় প্রশ্নে বিরক্ত করে যে, "হেনরি তুমি আমার সঙ্গে দেখা করো না আজকাল, তুমি কি আমাকে আর পছন্দ করো না, আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি কোনভাবে ?" আমাকে তাদের কাছ থেকে চিরতরে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। একজন প্রকৃত বন্ধুর এজাতীয় প্রশ্ন করার দরকার পড়ে না। তোমার প্রয়োজনের মুহূর্তে সে ঠিকই তোমার পাশে থাকে আবার একইসঙ্গে নিজেকে কীভাবে সম্মানজনক দূরত্বে রাখতে হয় তা-ও তার অজানা নয়। একজন খাঁটি বন্ধু ঠিক সেই মুহূর্তটি থেকে শুরু করতে পারে যখন তোমার সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়েছিল, তা সেটা এক সপ্তাহ, এক মাস কী কুড়ি বছরই হোক না কেন! আমার এমন একজন বন্ধুও ছিল না আমি যার কাছ থেকে ভিক্ষা কিংবা ধার নিই নি, আমি এমনকি চুরিও করেছি তাদের কাছ থেকে। একবার আমি আমার ভালো বন্ধু আলফ্রেড পের্লে সম্পর্কে একটা প্যাম্ফলেট লিখি যার নাম দিই 'আলফ্রেড সম্পর্কে তুমি কী করতে যাচ্ছো?' আমি তাকে ইবজা পাঠানোর জন্য তহবিল সংগ্রহ করছিলাম, যেখানে গিয়ে তার ধারণা সে সস্তায় জীবনযাপন করতে পারবে এবং যে বইটা লিখছিল সেটা সহজে শেষ করতে পারবে। এই প্যাম্ফলেটখানি অসংখ্য লেখক ও শিল্পীর কাছে পাঠানো হয়েছিল যাদের অনেককেই আমরা চোখেও দেখি নি কোন দিন। যাঁরা টাকাসহযোগে আমাদের চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন আঁদ্রে জিদ ও আল্ডাস হাক্সলি, আপনারা…

ন্যুয়কের্র ফিফ্‌থ্‌ অ্যাভিন্যুর গা ঘেঁষে একটি বেশ উঁচুমানের দর্জির দোকানের মালিক ছিলেন আমার বাবা। [...]

[হেনরি মিলারের 'ভাবনাগুচ্ছ' : ১] আমার বাবা ন্যুয়কের্র ফিফ্‌থ্‌ অ্যাভিন্যুর গা ঘেঁষে একটি বেশ উঁচুমানের দর্জির দোকানের মালিক ছিলেন আমার বাবা। আমার মায়ের ইচ্ছেতে বাবার ওপর গোয়েন্দাগিরি করাই আমার সেই দোকানে কাজ করতে যাবার অন্যতম কারণ ছিল। আমার বাবা ছিলেন ভয়ংকর মদ্যপায়ী, যাকে বলে একেবারে অ্যালকহলিক। আমার বাবা যখন মদের আসরে যেতেন তখন আমাকেও তঁর সঙ্গে যেতে হত কেননা তিনি এতটা মাতাল হয়ে যেতেন যে বাড়ি ফেরার পথ চিনতে পারতেন না। দর্জির দোকানটা ছিল একটা ক্লাবঘরের মত যেখানে ব্যবসার কাজে কাপড়বিক্রেতারা আসতেন এবং কাজশেষে আমার বাবাকে মদ খাওয়াতে নিয়ে যেতেন। একদিন আমি ও বাবা যখন ব্রডওয়ের একটা ভদ্রস্থ পানশালায় যাই তখন এক খচ্চর গোছের ফরাসি বেয়ারা আমার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে "তুই একটি আস্ত মাতাল বদমাশ ছাড়া আর কিছু না।" সে এমন ভঙ্গিতে কথাটা বলে যে আমার ঘাড়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে তার গলা চেপে ধরি। আমি চাইছিলাম সে যা বলেছে সেটা যেন ফিরিয়ে নেয়। পানশালার লোকজন আমাকে টেনে সরিয়ে দেয় কেননা ততক্ষণে তার চোখ বেরিয়ে আসছিল প্রায়। আমি খুবই অপমানিত বোধ করছিলাম কেননা সে যা বলেছে সেটা আদতে সত্য। কিন্তু আমি এটা মানতে প্রস্তুত ছিলাম না যে আমার বাবা একজন মদ্যপ। এর পাশাপাশি, বইয়ের প্রতি, বিদ্যার প্রতি তাঁর অনাগ্রহও আমাকে খুব পীড়িত করতো। তিনি খবরের কাগজ ছাড়া আর কিছুই পড়েন নি কোনদিন। বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের কোন আকর্ষণ ছিলনা তার কাছে। হয়তবা আমার বাবামার অনাগ্রহের কারণেই আমি সেই জগতের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। এটি আমাকে তাঁদের থেকে আলাদা ও দূরবর্তী করে তুলেছিল। আমি তাঁদের মত হতে চাই নি কেননা একেবারে ছোটবেলা থেকেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তাঁরা আসলে মূর্খ। কিন্তু আমার বাবা সবসময়ই আমার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করেছেন। আমার মায়ের বিপরীতে তিনি ছিলেন দয়ালু ও সহিষ্ণু। তিনি মনের দিক থেকে একজন ভালো মানুষ ছিলেন। আমি কেন জানি সবসময় তাঁর জন্য দুঃখ অনুভব করেছি। আমার মায়ের সঙ্গে বাস করা এত কঠিন ছিল যে আমি জানি না কীভাবে তিনি তাঁর সঙ্গে থাকতে পেরেছিলেন কিংবা কেন তিনি তাকে ছেড়েছুড়ে একেবারে চলে যান নি। আমার মা এমন একজন মানুষ…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.