না হলে ক্রিয়া থাকবে পদ থাকবে না [...]

আমার এক পঞ্চাশোর্ধ বন্ধু কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের পর সুশীলদের বাতচিত নেই কেন বলাতে তিনি বললেন, সুশীল = কোথায় গেল আমি বললাম এই তো বিপদে ফেললেন এখন তাহলে গানটা কিভাবে গাইব > আমার জীবনের এত হাসি, এত খুশি সুশীল? এভাবে? তিনি বললেন বাংলার তো কিছুই জান না দেখছি, বাংলার ক্রিয়াপদ চলে জুড়ে জুড়ে, হড়কালে কেন? গাইতে হবে > আমার জীবনের এত হাসি, এত খুশি সুশীল হল [কোথায় গেল হল] ?! তিনি বললেন তোমরা কেমন যেন ভয় পাও, বাংলা ক্রিয়াপদ বোঝ না, সুশীলরাও বোঝে না, ওদের মতো হয়ো না, জুড়ে জুড়ে চল, না হলে ক্রিয়া থাকবে পদ থাকবে না।

বিসদৃশ সব ভাবনা বেদনায় তাড়িত কিন্তু গদ্যের পথে পথ হারিয়ে আর সব ছেড়ে তখন [...]

আমাদের এখানে বাংলা ইংরেজি মেশানো একটা কথার খুব চল আছে, সিরিয়াস পড়াশোনা, একদিন আমিও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের গদ্যের রূপ ঠিক করার জন্য সিরিয়াস পড়াশোনায় নেমেছিলাম। সময়টা আমাকে লেখক হতে তাড়িত করছিল এবং ফরাসি ভাষার গদ্য সবেমাত্র টানা এক পৃষ্টা পড়তে পারছি এবং এই ভাষার গদ্য আমাকে গদ্যে জারিত হতে প্রবল অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে, আমি একটা তালিকা বানালাম, আমার বাংলা গদ্যের সিরিয়াস পড়াশোনার তালিকা : কালীপ্রসন্ন সিংহ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাজশেখর বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী, বুদ্ধদেব বসু, কমলকুমার মজুমদার। চলল টানা এদের বাংলা গদ্য পড়া আমার বাংলা গদ্য লিখতে শেখার জন্য। বুদ্ধদেব বসু ও কমলকুমার মজুমদার শেষ পর্যন্ত আমার টেবিলে টিকে ছিলেন সময়ের দাগ তরতাজা লাগছিল আমার অনেক কাছের লাগছিল তাদেরকে, সময়টা ছিল তিরান্নবই চুরানব্বই পঁচানব্বই সাল। কিন্তু কোথায় যেন দুজনের একজনকেও আমার সময়ের অভিঘাতে অতিষ্ঠ করা যাচ্ছিল না, তারা ভেঙ্গে যাচ্ছিলেন আমার সময়ের চাপ তাদের উপর তুলে দিলেই তারা নিতে পারছিলেন না আমাকে, আমি নিতে পারছিলাম না তাদেরকে। আরো একটা ব্যাপারও ঘটে গেল -- কালীপ্রসন্ন সিংহ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাজশেখর বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরীকে পড়তে যেএকটা ধারবাহিকতার যেএকটা প্রবাহমানতার ধারায় বাংলাকে অভিষিক্ত দেখেছি বুদ্ধদেব বসু, কমলকুমার মজুমদারে এসে কোথায় যেন একটা বিচ্ছিন্নতার সুর -- তাদের দুজনের দুধরনের ফর্মে তাদের চূড়ান্ত সফলতায় কোনো সন্দেহ ছাড়াই বাংলা গদ্যের চলনের নিজস্বতায় কোথায় এক নিবিড় দূরত্বের প্রান্ত স্পর্শ করছিল -- যেন আরেকটু সরলেই সেই দূরত্ব বাংলাকেই হারিয়ে বসবে যেকোনো সময়ে। আমি তখন সময়ের অভিঘাতকে দূরে সরিয়ে আরো বেশি উদ্ধার করতে সচেষ্ট কালীপ্রসন্ন সিংহ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাজশেখর বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরীকে। আমার গদ্যের দশা তখন অবয়বহীন, একবারে দুয়েক বাক্য ফরাসি গদ্য অনুবাদ করে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে গোপনভাবে টিকিয়ে রেখেছি লেখক হওয়ার তাড়না। বিসদৃশ সব ভাবনা বেদনায় তাড়িত কিন্তু গদ্যের পথে পথ হারিয়ে আর সব ছেড়ে তখন শুরু করলাম রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘ কবিতার গদ্য অনুলিপি তৈরি করা এবং জন কিটসের দীর্ঘ কবিতার বাংলা গদ্যে অনুলিপি তৈরি করা -- চিত্রশিল্পীরা যেমন ওল্ড মাস্টারদের অনুলিপি তৈরি করে হাত পাকান সেই আদর্শে। কিন্তু গদ্য তো আর হয় না, যেগদ্য চাই সেগদ্য তো আর…

corruption এর বাংলাটাই আমরা ভুল করেছি।[...]

টুইট করতে করতে অনেক সময় এমন কিছু গুচ্ছ টুইট হয়ে যায় যেগুলোকে পোস্টের রূপ সহজে দেয়া যায়। সেকাজটাই এখানে করা হল। আগে এরকম প্রচুর টুইট কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। এখন থেকে ভাবছি, এরকম টুইটগুলোকে ‘টুইট থেকে পোস্টে’ সিরিজে সংগ্রহ করে রাখব। এই পোস্টে সংকলিত টুইটগুলো ক্রমান্বয়ে : এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট। corruption এর বাংলাটাই আমরা ভুল করেছি। দুর্নীতি সুনীতির বিপরীত bad policy, good policyর বাংলা। bad policyর বিচার ও তদন্ত উন্নত বিশ্বেও হয় না,এটা হয়ত হবে পরবর্তী বিশ্বে। অথবা নাম বিভ্রাটে বাংলাদেশের 'দুনীতি দমন কমিশন' সেটা শুরু করার কথা ভাবতে পারে। ঘুষ, অর্থ আত্মসাৎ, টেন্ডারবাজি,অবৈধভাবে বড় বড় সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেয়া এগুলো অসততা, নির্বাহী দূষণ -- সংষ্কৃতে আরো যথার্থ শব্দ আছে, ভ্রষ্টাচার। হিন্দি ভাষায় সংস্কৃত এই শব্দটিই corruption বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। আমরা Anti-Corruption Commissionএর বাংলা করতে পারি 'অসততা দমন কমিশন'। অসৎ কর্মকর্তা, অসৎ ব্যবসায়ী খুব শুনি আমরা, কাজেই এতে কমিশনের অর্থ আরো পরিস্কার হবে। 'দুনীতি দমন কমিশন'কে আমরা রেখে দেব আমরা যখন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আরো বেশি খারাপ নীতি ভাল নীতি নিয়ে ক্রিটিক্যাল হব, ঢালাও নীতিনির্ধারণ করব না - তখন যখন সবকিছুর পরেও কেউ যদি দুর্নীতির (bad policy) প্রয়োগ করে বসবে তার বিচার করতে। এবং সেবিচার করা অনেক কঠিন কাজ হবে, কারণ দুর্নীতি অনুধাবন যেমন কঠিন দুর্নীতি অসততার চেয়ে অনেক ব্যাপকতা নিয়ে জনগণের ক্ষতি করে, সেক্ষতি নিরুপণ করা কঠিনতম কাজ হবে।

বাসায় এসে ভাবতে লাগলাম, এর সমাধান কী হবে?[...]

আজ এই লেখাটি Adaab in a Time of Allah Hafiz পড়তে গিয়ে নিজের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা এবং তা থেকে উদ্ভূত সিদ্ধান্তের কথা মনে পড়ে গেল। শিক্ষকের নাম আমি উল্লেখ করছি না, তখন মোটামুটি আল্লাহ হাফিজ এখনকার মতো না হলেও কিছু কিছু শুরু হয়ে গেছে, এই শিক্ষক চোস্ত উচ্চারণে আসসালামুআলাইকুম যেমন বলতেন অনেক দিন থেকে তেমনি কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি আল্লাহ হাফিজ বলতে শুরু করেছেন তার চোস্ত খুদা হাফিজ বাদ দিয়ে। পরিবর্তনটা প্রথম দিন থেকে আমার কাছে ধরা পড়লেও ভাবতে শুরু করেছি আরো কয়েকদিন পর থেকে, কী ব্যাপার – খুদার সাথে আল্লাহর কী সমস্যা? কয়েকদিনের মধ্যেই আমি বুঝতে পারলাম আসসালামুআলাইকুম-এর সাথে আসলেই খুদা/খোদা হাফিজ/হাফেজ একসাথে চলার নয়। জানতে পারলাম আমাদের এখানে মুসলমানদের আদাবতমিজ এসেছে উত্তর ভারত থেকে সেখানে মুসলমানরা বলতে অভ্যস্ত ছিল আদাব ও খুদা হাফিজ, সেরকম ভাবে আমাদের এখানেও একবারে প্রথমে খানদানি মুসলমানদের মধ্যে এই আদাব ও খুদা হাফিজই চলত – কিন্তু পরবর্তীতে পাকিস্তান দাবির সময় থেকে আদাবের জায়গা দ্রুত আসসালামুআলাইকুম নিয়ে নিলেও খুদা হাফিজটা চোস্ত উচ্চারণকারীদের কাছে ঠিক থেকে সাধারণের কাছে হয়ে গেল খোদা হাফেজ। বাংলাদেশে ইসলামের জন্মস্থানের উত্তরোত্তর জনপ্রিয়তায় আশির দশক থেকে খুব সীমিত পরিসরে শোনা যেতে শুরু করল আল্লাহ হাফিজ যা সাধারণের উচ্চারণে হল আল্লা হাফেজ। এসব জানার পর আমি একটা পরিকল্পনা করলাম, এই শিক্ষককে একদিন কয়েকজনের উপস্থিতিতে আমি আদাব ও খোদা হাফেজ বলে দেখব তার কী প্রতিক্রিয়া হয়। সুযোগ বুঝে একদিন আদাব বলার পরপরই তার যে অগ্নিশর্মা অবস্থা দেখলাম এবং তাতে আমার সাথে তার যে বাকবিতণ্ডা হল এবং পরবর্তীতে খোদা হাফেজ বলে বিদায় নেয়ার সময় তার মুখ থেকে যেগজব বের হল এসব সঙ্গী করে বাসায় এসে ভাবতে লাগলাম, এর সমাধান কী হবে? সেদিন রাতে আমি খুব সহজ একটা সমাধান পেয়েও গেলাম এবং তার পরের দিন থেকেই আমি কারো সাথে দেখা হলে বলি ‘কেমন আছেন/ আছ/আছিস’ এবং বিদায় নেবার সময় বলি ‘দেখা হবে’।

উর্দুভাষীদের ভাষার সমস্যা নিয়ে বলায় একজন আমার দেশপ্রেম নিয়েই প্রশ্ন তুললেন। আমি বোঝাতে ব্যার্থ হলাম উর্দুর সঙ্গে আমাদের সমস্যা হয়নি, হয়েছে পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে।

ভাষা-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদও এক ধরনের জাতীয়তাবাদ। আর জাতীয়তাবাদের একটি খারাপ দিক হলো নিজের ভাষা, সংস্কৃতিকেই শ্রেষ্ঠ ভাবা। এই ভাবনা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এমন ভাবনার মধ্যে একটা হিংসার চোরা স্রোতও কি থাকে না? বিষয়টা একজন হিন্দিভাষী বা ইংরেজিভাষী মানুষের দিক থেকে ভাবুন। ধরুন মি. জেমস নামের একজন ইংরেজ ভদ্রলোক বললেন ইংরেজিই পৃথিবীর সেরা ভাষা। এই ভাষা অন্যসব প্রান্তিক ভাষার সাহিত্যের ভিত গড়ে দিয়েছে। কেমন লাগবে কথাটা? এ তো ভাষা-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদেরই প্রকাশ। কিছুদিন আগে আমি কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বলছিলাম, চট্টগ্রামে উর্দুভাষী যাঁরা আছেন তাঁদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে বাংলায় পড়তে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে কি-না এটা আমরা ভাবি না। একইভাবে পাহাড়ি আদিবাসী শিশুদের নিজভাষায় লেখা পড়ার ব্যবস্থা এখনো সেভাবে হয়নি। ভাষা নিয়ে আমাদের অহংকার আছে, থাকতেই পারে। কিন্তু অন্যের ভাষার অধিকার নিয়ে এত উদাসীন কেন আমরা? উর্দুভাষীদের ভাষার সমস্যা নিয়ে বলায় একজন আমার দেশপ্রেম নিয়েই প্রশ্ন তুললেন। আমি বোঝাতে ব্যর্থ হলাম উর্দুর সঙ্গে আমাদের সমস্যা হয়নি, হয়েছে পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে। ভাষাঘৃণা কী করে এত বিস্তার লাভ করলো, ভাবতেই অবাক লাগে! অথচ অনেকেই উর্দু কবিতার ভক্ত, মান্টো কিংবা চুগতাইয়ের গল্প পড়েছেন। তবু ভাষাঘৃণা দূর হয়নি কেন!

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.