উর্দুভাষীদের ভাষার সমস্যা নিয়ে বলায় একজন আমার দেশপ্রেম নিয়েই প্রশ্ন তুললেন। আমি বোঝাতে ব্যার্থ হলাম উর্দুর সঙ্গে আমাদের সমস্যা হয়নি, হয়েছে পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে।

ভাষা-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদও এক ধরনের জাতীয়তাবাদ। আর জাতীয়তাবাদের একটি খারাপ দিক হলো নিজের ভাষা, সংস্কৃতিকেই শ্রেষ্ঠ ভাবা। এই ভাবনা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এমন ভাবনার মধ্যে একটা হিংসার চোরা স্রোতও কি থাকে না? বিষয়টা একজন হিন্দিভাষী বা ইংরেজিভাষী মানুষের দিক থেকে ভাবুন। ধরুন মি. জেমস নামের একজন ইংরেজ ভদ্রলোক বললেন ইংরেজিই পৃথিবীর সেরা ভাষা। এই ভাষা অন্যসব প্রান্তিক ভাষার সাহিত্যের ভিত গড়ে দিয়েছে। কেমন লাগবে কথাটা? এ তো ভাষা-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদেরই প্রকাশ।

ওরা আমাদের চোখে আটকে-পড়া পাকিস্তানি। ওদের ভাষা উর্দুও আমাদের শত্রুভাষা!

কিছুদিন আগে আমি কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বলছিলাম, চট্টগ্রামে উর্দুভাষী যাঁরা আছেন তাঁদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে বাংলায় পড়তে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে কি-না এটা আমরা ভাবি না। একইভাবে পাহাড়ি আদিবাসী শিশুদের নিজভাষায় লেখা পড়ার ব্যবস্থা এখনো সেভাবে হয়নি। ভাষা নিয়ে আমাদের অহংকার আছে, থাকতেই পারে। কিন্তু অন্যের ভাষার অধিকার নিয়ে এত উদাসীন কেন আমরা? উর্দুভাষীদের ভাষার সমস্যা নিয়ে বলায় একজন আমার দেশপ্রেম নিয়েই প্রশ্ন তুললেন। আমি বোঝাতে ব্যর্থ হলাম উর্দুর সঙ্গে আমাদের সমস্যা হয়নি, হয়েছে পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে। ভাষাঘৃণা কী করে এত বিস্তার লাভ করলো, ভাবতেই অবাক লাগে! অথচ অনেকেই উর্দু কবিতার ভক্ত, মান্টো কিংবা চুগতাইয়ের গল্প পড়েছেন। তবু ভাষাঘৃণা দূর হয়নি কেন!

Site Default

চট্টগ্রামে বসবাসরত। পেশা : লেখালেখি। জীবিকা : সাংবাদিকতা।

৭ comments

  1. রায়হান রশিদ - ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (৫:৫৫ অপরাহ্ণ)

    মুক্তাঙ্গনে অনেক দিন পর আহমেদ মুনির এর অপ্রিয় কথন! আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশের মূল বার্তা আসলে কি? একক ভাষার আধিপত্য এবং শ্রেষ্ঠত্ব জাহির? নাকি পৃথিবীর সকল ভাষার মর্যাদাপূর্ণ সহাবস্থান, চর্চা এবং বিকাশ?

  2. আহমেদ মুনির - ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (৫:২৬ অপরাহ্ণ)

    রায়হান,অপ্রিয় লোকের কথন অপ্রিয়ই তো হবে ।

    আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশের মূল বার্তা আসলে কি? একক ভাষার আধিপত্য এবং শ্রেষ্ঠত্ব জাহির? নাকি পৃথিবীর সকল ভাষার মর্যাদাপূর্ণ সহাবস্থান, চর্চা এবং বিকাশ?

    এসব প্রশ্নের মধ্যেই যে উত্তর আছে।

  3. মোহাম্মদ মুনিম - ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ)

    মুনির যে বিহারী বালিকাটির ছবি তার পোস্টে দিয়েছে সে মেয়েটিকে তানভীর মোকাম্মেল তাঁর ‘স্বপ্নভুমি’ তথ্যচিত্রে জিজ্ঞাসা করেছিলেন মেয়েটি বড় হয়ে কি হতে চায়। মেয়েটি অত্যন্ত শুদ্ধ বাংলায় উত্তর দিল সে বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায়, যাতে ‘আমরা সবাই গর্বের সাথে বলতে পারি আমাদের বাংলাদেশটা শিক্ষিতের দেশ’। মেয়েটি বাংলাদেশে নিজের অধিকার নিয়ে বড় হয়ে উঠুক, তাঁর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন সফল হোক, এ আশাই করি।
    কিন্তু প্রশ্ন হল মেয়েটিকে উর্দু ভাষায় পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিলে কি তার বাংলাদেশ নিয়ে এত সুন্দর স্বপ্ন গড়ে উঠতো? খুব সম্ভবত না। ‘উদার মানসিকতা’ দেখিয়ে বিহারী শিশুদের উর্দু ভাষায় শিক্ষা দিলে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া বিহারী শিশুরা মানসিকভাবে পাকিস্তানী হিসাবেই বড় হয়ে উঠবে। আর সেটা বাংলাদেশ আর বিহারী শিশু কারুর জন্যই ভাল হবে না।

    • আহমেদ মুনির - ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (২:৪১ অপরাহ্ণ)

      ‘উদার মানসিকতা’ দেখিয়ে বিহারী শিশুদের উর্দু ভাষায় শিক্ষা দিলে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া বিহারী শিশুরা মানসিকভাবে পাকিস্তানী হিসাবেই বড় হয়ে উঠবে। আর সেটা বাংলাদেশ আর বিহারী শিশু কারুর জন্যই ভাল হবে না।

      মুনিমের এই কথার সঙ্গে একমত হতে পারিছ না। কলকাতায় অনেকে উর্দুতে কথা বলেন তাঁরা পাকিস্তানি হয়ে যাননি। মাতৃভাষায় শিক্ষা না দিলে দুটো ঘটনা ঘটতে পারে। ১.শিশুরা ধীরে ধীরে তাদের মায়ের ভাষা ভুলে যেতে পারে। ২.সংখ্যাগরিষ্ট ভাষাভাষী শিশুদের তুলনায় পিছিয়ে পড়তে পারে। এটা সব ক্ষুদ্র ভাষা গোষ্ঠীর সদস্যেদর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

  4. মাসুদ করিম - ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (১০:২৬ পূর্বাহ্ণ)

    কোনো নির্দিষ্ট ভাষাকে শ্রেষ্ঠ ভাবা, এবার সেটা মাতৃভাষা হোক বা না হোক, সেভাবনায় হিংসার চোরাস্রোত থাক বা না থাক, ভাবনাটি দোষেরই। ভাষায় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ সম্ভব নয়।

    চাকমা ও অন্যান্য উপজাতীয় ভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব কারণ সেদাবি উঠেছে।

    কিন্তু উর্দু ভাষায় শিক্ষার সেদাবি কি উঠেছে? সবার আগে দেশের উর্দুভাষীদের কাছ থেকে সেদাবি উঠতে হবে। সেদাবি তোলার প্রথম পদক্ষেপ কিন্তু কমিউনিটি স্কুল, সেরকম কোনো কমিউনিটি স্কুল কি উর্দুভাষীরা এরমধ্যে গড়ে তুলেছে?

    ভাষার দাবি প্রাণের দাবি, সেটা অবশ্যই সেই ভাষায় যারা কথা বলে তাদের কাছ থেকে উঠতে হবে। পাকিস্তানের পাঞ্জাবিরা নিজেদের পাঞ্জাবি ভাষা ছেড়ে উর্দুভাষী হয়ে গিয়েছিল কিন্তু বাঙালিরা তা হতে চায়নি।

  5. মাসুদ করিম - ২ মার্চ ২০১২ (১:১৯ অপরাহ্ণ)

    চট্টগ্রামের পল্টন রোড কি সবাই চেনেন? চট্টগ্রাম ওয়াসা ও আলমাস সিনেমা হল তো সবাই চেনেন? এই এলাকা এবং আশেপাশের রোড পল্টন রোড নামেই পরিচিত ছিল, এখানেই ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেনাক্যাম্প। ওয়াসার পেছনে ও আলমাসের উল্টা দিকে যে জায়গাটি এখন উঁচু দেয়াল দিয়ে সেনাবাহিনী ঘিরে রেখেছে এটা আজ থেকে পনেরো ষোলো বছর আগে উন্মুক্ত ছিল। এখানে প্রধানত দর্জি মুচি মেথর ধোপাদের বসবাস, আজই আমার মনে পড়ল হঠাৎ করে, আরে এরাও তো বিহারি, কিন্তু এরা উর্দুতে কথা বলে না (ভোজপুরি বা এধরনের কোনো ‘বিহারি’ ভাষায় কথা বলে) এবং এরা হিন্দু। এদের পূর্বপুরুষ ব্রিটিশ আর্মির সাথে পল্টনে ছিল, সেনাবাহিনীর কাপড় জুতা সেলাইসহ নানা প্রয়োজনীয় কাজ করত এরা। পল্টন উঠে যাবার পর সেনাবাহিনীর এদেরকে আর প্রয়োজন ছিল না, তাই এরা রয়ে গেল এখানে। এখন কথা হচ্ছে, আমাদের চারপাশের ভদ্রলোক ও আটকে পড়া বিহারি যারা ‘উর্দুভাষী’ তারা ছাড়াও যে আরো বিহারি আছে, তা কি এই বিহারিরা ভেবেছে? বা আমরা ভেবেছি? এরা পড়াশোনার সুযোগ পায় কি না, তাও কি ভেবেছি? নাকি ভেবেছি দর্জি মুচি মেথর ধোপাদের আবার পড়াশোনা? কিন্তু ঠিক মতো গুণতে গেলে এই দলিত বিহারিরাই হয়তো সংখ্যায় ভদ্রলোক ও আটকে পড়া বিহারিদের চেয়ে অনেক বেশি হবেন।

  6. মাসুদ করিম - ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ (১২:৫১ অপরাহ্ণ)

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.