আমি বুঝেছিলাম আদাব খোদা হাফেজ আমাদের জন্য সমাধান নয়

বাসায় এসে ভাবতে লাগলাম, এর সমাধান কী হবে?[...]

আজ এই লেখাটি Adaab in a Time of Allah Hafiz পড়তে গিয়ে নিজের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা এবং তা থেকে উদ্ভূত সিদ্ধান্তের কথা মনে পড়ে গেল। শিক্ষকের নাম আমি উল্লেখ করছি না, তখন মোটামুটি আল্লাহ হাফিজ এখনকার মতো না হলেও কিছু কিছু শুরু হয়ে গেছে, এই শিক্ষক চোস্ত উচ্চারণে আসসালামুআলাইকুম যেমন বলতেন অনেক দিন থেকে তেমনি কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি আল্লাহ হাফিজ বলতে শুরু করেছেন তার চোস্ত খুদা হাফিজ বাদ দিয়ে। পরিবর্তনটা প্রথম দিন থেকে আমার কাছে ধরা পড়লেও ভাবতে শুরু করেছি আরো কয়েকদিন পর থেকে, কী ব্যাপার – খুদার সাথে আল্লাহর কী সমস্যা? কয়েকদিনের মধ্যেই আমি বুঝতে পারলাম আসসালামুআলাইকুম-এর সাথে আসলেই খুদা/খোদা হাফিজ/হাফেজ একসাথে চলার নয়। জানতে পারলাম আমাদের এখানে মুসলমানদের আদাবতমিজ এসেছে উত্তর ভারত থেকে সেখানে মুসলমানরা বলতে অভ্যস্ত ছিল আদাব ও খুদা হাফিজ, সেরকম ভাবে আমাদের এখানেও একবারে প্রথমে খানদানি মুসলমানদের মধ্যে এই আদাব ও খুদা হাফিজই চলত – কিন্তু পরবর্তীতে পাকিস্তান দাবির সময় থেকে আদাবের জায়গা দ্রুত আসসালামুআলাইকুম নিয়ে নিলেও খুদা হাফিজটা চোস্ত উচ্চারণকারীদের কাছে ঠিক থেকে সাধারণের কাছে হয়ে গেল খোদা হাফেজ। বাংলাদেশে ইসলামের জন্মস্থানের উত্তরোত্তর জনপ্রিয়তায় আশির দশক থেকে খুব সীমিত পরিসরে শোনা যেতে শুরু করল আল্লাহ হাফিজ যা সাধারণের উচ্চারণে হল আল্লা হাফেজ। এসব জানার পর আমি একটা পরিকল্পনা করলাম, এই শিক্ষককে একদিন কয়েকজনের উপস্থিতিতে আমি আদাব ও খোদা হাফেজ বলে দেখব তার কী প্রতিক্রিয়া হয়। সুযোগ বুঝে একদিন আদাব বলার পরপরই তার যে অগ্নিশর্মা অবস্থা দেখলাম এবং তাতে আমার সাথে তার যে বাকবিতণ্ডা হল এবং পরবর্তীতে খোদা হাফেজ বলে বিদায় নেয়ার সময় তার মুখ থেকে যেগজব বের হল এসব সঙ্গী করে বাসায় এসে ভাবতে লাগলাম, এর সমাধান কী হবে? সেদিন রাতে আমি খুব সহজ একটা সমাধান পেয়েও গেলাম এবং তার পরের দিন থেকেই আমি কারো সাথে দেখা হলে বলি ‘কেমন আছেন/ আছ/আছিস’ এবং বিদায় নেবার সময় বলি ‘দেখা হবে’।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৪ comments

  1. চাণক্য - ৬ মে ২০১২ (৬:৪২ পূর্বাহ্ণ)

    একটা বিষয় জানার খুব ইচ্ছে। এই যে অনেকে বলেন, ইসলাম ধর্ম পালন করেন না এমন কেউ ইসলাম ধর্ম পালনকারী ব্যক্তিকে সম্ভাষণ জানানোর জন্য ” আদাব ” শব্দটি ব্যবহার করবেন। আপনার লেখায় জানলাম উত্তর ভারতীয় মুসলমানেরা ” আদাব ” বলতেন বা এখনও হয়তো বলে থাকেন। তাঁরা কি ধর্মনির্বিশেষে সবার জন্যই এই সম্ভাষণ ব্যবহার করতেন? “খোদা হাফেজ” শব্দটা এখন বলতে গেলে শোনাই যায়না। এমনকি আপাত অসাম্প্রদায়িক লোকজনও স্বাভাবিকভাবেই ” আল্লাহ হাফেজ” বলেন। ইরানেও কি ” খোদা”র জায়গায় ” আল্লাহ” চলে এসেছে?

    • মাসুদ করিম - ৬ মে ২০১২ (১০:০৮ পূর্বাহ্ণ)

      ‘আদাব’ সবার জন্য সম্বোধন। আমি ইরান সম্বন্ধে ঠিক জানি না।

  2. রায়হান রশিদ - ৯ মে ২০১২ (৪:০১ পূর্বাহ্ণ)

    “আল্লাহ হাফেজ” নিয়ে এক ধরণের খটকা সবসময়ই লাগতো। আপনার পোস্ট পড়ার পর সম্ভবত জীবনে প্রথমবারের মতো সিরিয়াসলি বিষয়টি নিয়ে ভাবতে গিয়ে খেয়াল করলাম বেড়ে উঠতে উঠতেই কিভাবে যেন “খোদা হাফেজ” কথাটার ব্যবহার কমতে কমতে একসময় প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গিয়েছে। সত্যিই অদ্ভুত! সমাজতাত্ত্বিকদের গবেষণার জন্য খুবই ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় হয়ে উঠতে পারে এর কারণ এবং সর্বব্যাপী প্রসারের প্যাটার্ণ অনুসন্ধান।

    এসব জানার পর আমি একটা পরিকল্পনা করলাম, এই শিক্ষককে একদিন কয়েকজনের উপস্থিতিতে আমি আদাব ও খোদা হাফেজ বলে দেখব তার কী প্রতিক্রিয়া হয়। সুযোগ বুঝে একদিন আদাব বলার পরপরই তার যে অগ্নিশর্মা অবস্থা দেখলাম এবং তাতে আমার সাথে তার যে বাকবিতণ্ডা হল এবং পরবর্তীতে খোদা হাফেজ বলে বিদায় নেয়ার সময় তার মুখ থেকে যে গজব বের হল এসব সঙ্গী করে বাসায় এসে ভাবতে লাগলাম, এর সমাধান কী হবে? সেদিন রাতে আমি খুব সহজ একটা সমাধান পেয়েও গেলাম এবং তার পরের দিন থেকেই আমি কারো সাথে দেখা হলে বলি ‘কেমন আছেন/ আছ/আছিস’ এবং বিদায় নেবার সময় বলি ‘দেখা হবে’।

    হা হা অসাধারণ। এখানে আরও একটা বিষয় প্রমাণিত হল যে গজবে ভয় পাওয়ারও তেমন কিছু নেই। আপনি তো দিব্যিই আছেন 🙂

  3. আলতাফ হোসেন - ১০ মে ২০১২ (৮:৫৫ পূর্বাহ্ণ)

    “…এর সমাধান কী হবে? সেদিন রাতে আমি খুব সহজ একটা সমাধান পেয়েও গেলাম এবং তার পরের দিন থেকেই আমি কারো সাথে দেখা হলে বলি ‘কেমন আছেন/ আছ/আছিস’ এবং বিদায় নেবার সময় বলি ‘দেখা হবে’।”
    এ সমাধান আমিও পেয়ে গিয়েছিলাম। বোধহয়,কৈশোর থেকেই। তবে একটা সুবিধা আমার ছিল। মিশুক বা সামাজিক নই ততটা। অন্যদিকে,বেশ বড় সংখ্যার মানুষই যে কত ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে,হয়ে উঠছে, দেখছি চারদিকে। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠার প্রবণতা কমবে কি আর?

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.