লু স্যুন লু স্যুনের (১৮৮১—১৯৩৬) মৃত্যুদিনে স্মরণ এবং তাঁর একটি লেখার অনুবাদ ...

১ চীনের চেচিয়াং প্রদেশের প্রাচীন শহর শাওসিং-এর দক্ষিণদিকে অবস্থিত তুছাংফাংখৌ-র ‘চৌ’ পদবীধারী একটি পরিবারে ১৮৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখে প্রায় মধ্যরাতে জন্মগ্রহণ করে চৌ পৌয়ি আর শ্রীমতী লুরুই-এর প্রথম পুত্রসন্তান। তাঁদের দ্বিতীয় পুত্র চৌ জুওরেন-ও (১৮৮৫--১৯৬৭) অগ্রজের মতোই সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করে সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। জাপ-সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে তিনি ধিক্কৃত হন। পরিবারের একমাত্র কন্যাসন্তানের জন্ম হয় ১৮৮৮ সালে, জন্মের ১০ মাস পরেই তার মৃত্যু হয়। তৃতীয় পুত্র চৌ চিয়ানরেন-ও (১৮৮৯--১৯৮৪) আধুনিক চীনের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান চতুর্থ পুত্র চৌ ছুনশৌ-র (১৮৯৩—১৮৯৮) মৃত্যু হয় মাত্র ৫ বছর বয়সে, বসন্ত রোগে। জ্যেষ্ঠ সন্তানের বয়স যখন পনেরো, সে-সময়ে দীর্ঘ রোগভোগের পর ভুল ও সেকেলে চিকিৎসায় মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে পরিবারের কর্তার মৃত্যু হয় (১২ অক্টোবর ১৮৯৬)। পিতার মৃত্যুর কয়েক বছর পর তিনি জাপানে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু পড়া শেষ না করেই বদলে নেন নিজের জীবনের লক্ষ্য – সাহিত্য আন্দোলনের মাধ্যমে চীনা জাতির ভাগ্য পরিবর্তনকে নিজের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৩৬ সালের ১৯ অক্টোবর তারিখে পঞ্চান্ন বছর বয়সে শাংহাই-এ তাঁর মৃত্যু হয়। জীবদ্দশাতেই তিনি স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন আধুনিক চীনা সাহিত্যের স্থপতি রূপে। যুবসমাজকে তিনি কতটা অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন তার খানিকটা আন্দাজ পাওয়া যাবে এই তথ্য থেকে – যুবকদের কাছ থেকে মোট ১২০০টি চিঠি তিনি পেয়েছিলেন এবং উত্তরে লিখেছিলেন ৩৫০০-এরও বেশি চিঠি। তাঁর যুব-সাক্ষাৎপ্রার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০। পরবর্তীকালে মাও সেতুং তাঁর সম্পর্কে বলেন : চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের তিনি ছিলেন প্রধান সেনাপতি। তিনি শুধু একজন মহান সাহিত্যিকই ছিলেন না, তিনি একজন মহান চিন্তাবিদ ও মহান বিপ্লবীও ছিলেন। লু স্যুন ছিলেন প্রস্তরের মতো দৃঢ়, সকল রকমের মোসাহেবি ও আজ্ঞানুবর্তিতা থেকে তিনি মুক্ত ছিলেন। তাঁর এই চরিত্র বৈশিষ্ট্য ঔপনিবেশিক ও আধা-ঔপনিবেশিক দেশের জনগণের এক অমূল্য সম্পদ। সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে, সমগ্র জাতির বিরাট সংখ্যাধিক্যের প্রতিনিধি হিসেবে লু স্যুন শত্রুর দুর্গ বিদীর্ণ করেন এবং তার উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়েছিলেন; এতে তিনি ছিলেন সবচেয়ে নির্ভুল, সবচেয়ে নির্ভীক, সবচেয়ে দৃঢ়, সবচেয়ে সত্যনিষ্ঠ, সবচেয়ে উৎসাহী জাতীয় বীর, আমাদের ইতিহাসে এই বীরের কোনো তুলনা নেই। লু স্যুন-এর পথ চীনা জাতির…

আজ থেকে সতেরো-আঠারো বছর আগের কথা – মনোরম গ্রীষ্মের বেইজিং। শীতে যখন গৃহবন্দী, গ্রীষ্মে তখন সত্যি পাখা মেলে উড়তে ইচ্ছা করে। সেই রকমই একটি দিনে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছি অজানার উদ্দেশে, যেন অনেকটা দু’চোখ যেদিকে যায় চলে যাওয়া। বৈকালিক ঝিরিঝিরি বাতাস আর গাছের ছায়ায় প্রশান্তিময় সেই সময়ে সাইকেল ভ্রমণটা যেন এক অপার্থিব আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। বিকেল মানেই সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়া। প্রকৃতির এই আনন্দযজ্ঞের আহ্বান রোখে কার সাধ্য। সেই রকম একটি দিনে সাইকেলে যেতে যেতে হঠাৎ থমকে দাড়ালাম চি শুই থান নামের জায়গায় – একটি দোতলা বাড়ির সামনে। আর চোখ আটকে গেল বাড়ির সামনের একটি আবক্ষ ভাস্কর্য প্রতিকৃতির মাঝে। খুব চেনা চেনা লাগছে, পত্রপত্রিকায় যেন অনেকবার দেখেছি এই ছবিটি। পরে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এটি বিখ্যাত চীনা চিত্রকর সু পেইহোং-এর প্রতিকৃতি এবং এই বাড়িটি তাঁর শিল্পকর্মের সংগ্রহশালা। এই সেই ভুবনবিখ্যাত শিল্পী যিনি একদা রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে এসেছিলেন। সেই সময় অকস্মাৎ শিল্পী সু পেইহোং-কে (ভারতবর্ষে অবশ্য ‘পিওন সু’ নামে পরিচিত) আবিষ্কার করে বেশ একটা আত্মপ্রসাদ অনুভব করেছিলাম; সেই সাথে সংগ্রহশালায় অপরাপর চিত্রকর্মের সাথে তাঁর আঁকা রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিটি দেখে যেন নিজেকে একজন দিগ্বিজয়ী মনে হচ্ছিল, এই বিদেশ বিভুঁইয়ে রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার! পরে অবশ্য এই শিল্পী সম্পর্কে আরো কিছু জানা হয়ে যায়; চীনদেশে তিনি এত বিখ্যাত যে কথাপ্রসঙ্গে তাঁর নাম বার বার চলে আসে। সু পেইহোং-কে (Xu Beihong) বলা হয় আধুনিক চীনা চিত্রকলার পথিকৃৎ। আমাদের জয়নুল আবেদিন, চীনাদের সু পেইহোং। দুজনই শিল্পচর্চার পাশাপাশি শিল্পকলাকে এগিয়ে নেয়ার আন্দোলনে ব্রতী হয়েছিলেন। সু পেইহোং চীনদেশে প্রথম পশ্চিমা ঘরানার চিত্রশৈলীর একজন সফল শিল্পী। চীনের চারুকলা শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সেন্ট্রাল একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর প্রথমদিকের অধ্যক্ষ সু পেইহোং চীনের জনগণের কাছে অত্যন্ত সম্মানীয়। গত মার্চ মাসে বেইজিং-এর একটি নামী মিউজিয়ামে (ইয়ান হোয়াং আর্ট মিউজিয়াম) অনুষ্ঠিত হলো তাঁর সারা জীবনের কাজ নিয়ে একটি রেট্রোস্পেকটিভ। আমি এবং আমার স্ত্রী আমন্ত্রিত হয়েছিলাম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। সু পেইহোং স্মৃতি সংগ্রহশালায় বেশ কয়েকবার গিয়েছি, কিন্তু এই মিউজিয়ামে প্রদর্শিত সেই ছবিগুলোই যেন একটু অন্যরকম লাগছিল, মিউজিয়ামের সুপরিসর আয়তনে ছবিগুলোকে আরো উপভোগ্য মনে হলো। সরকারি সংগ্রহের বাইরে ব্যক্তি-সংগ্রহের কিছু কাজও এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠান…

এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, বেইজিং এখন বিশ্ব শিল্পকলার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বেইজিং-এর গুরুত্ব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। পৃথিবীবিখ্যাত বড় বড় মিউজিয়ামের ট্রাভেলিং এক্সিবিশন-এর তালিকায় বেইজিং-এর নাম অনেক আগেই উঠে গেছে। বেইজিং-এর মিউজিয়ামগুলোর অবকাঠামোগত ভাবেও হয়েছে ঈর্ষণীয় উন্নতি। দু হাজার আট সালের অলিম্পিক অবশ্য বেইজিং শহরটিকেই যেন এনে দিয়েছে অন্য এক মাত্রা। ইতিমধ্যে এই শহরে ঘুরে গেছে রদ্যাঁ, দালি সহ আরো সব বিখ্যাত শিল্পীরা (মানে তাঁদের শিল্পকর্ম)। কয়েক মাস আগে দেখলাম জার্মান শিল্পী রিখটার-এর সারা জীবনের কাজ। আর এই সব প্রদর্শনীর মূল আয়োজক চীনের জাতীয় প্রদর্শনশালা "ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়াম অব চায়না", আগে যার নাম ছিল চায়না আর্ট গ্যালারি। এই মিউজিয়ামটিই এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানামুখী শিল্প-কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। সম্প্রতি প্রদর্শিত হলো বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী টার্নারের সারা জীবনের চিত্রকর্মের এক দুর্লভ সম্ভার। টেট ব্রিটেনের সংগ্রহ থেকে এই প্রদর্শনীর আয়োজন। বেইজিং-এ বসে টার্নার! এ যেন অকল্পনীয়। এ যেন এক অসম্ভব এক স্বপ্নপূরণ। কিছুতেই বিশ্বাস হতে চাইছিল না। তবে চীনা বন্ধুদের প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বুঝতে পারলাম বেইজিং-এ একটি বড় ঘটনা ঘটে গেছে। বেইজিং এতো বড় শহর -- এই প্রান্ত থেকে বোঝার উপায় নেই ওই প্রান্তে কি ঘটছে। তবে টার্নারের প্রদর্শনী যথেষ্ট প্রচার পেয়েছে, টিভি চ্যানেলগুলোতে বেশ কয়েকবার ফলাও করে এই প্রদর্শনীর খবর প্রচারিত হয়েছে। এবং রেকর্ড সংখ্যক চীনা দর্শক এই প্রদর্শনী উপভোগ করেছে। টার্নার আমারও খুবই প্রিয় শিল্পী। আমরা যখন চারুকলার প্রথম দিককার ছাত্র, তখন প্রায়ই কানে বাজতো টার্নার ও কনস্টেবল -- এই দুটি নাম। রোমান্টিসিজম শিল্প ঘরানার ব্রিটিশ মানিকজোড়। টার্নার বাস্তবিকই শিল্পকলার ইতিহাসে এক মহান অমর শিল্পী, যাঁর ক্যানভাসে প্রথম দেখা যায় এক অন্য রকমের বর্ণিল উচ্ছ্বাস। ভেসে ওঠে আধ্যাত্মিকতার ছবি, অন্তরের ছবি, আমরা দিব্যদৃষ্টিতে যা দেখি তাকে ছাপিয়ে অন্যরকম ছবি। ক্যানভাস যেন অনেক বর্ণিল হয়ে ওঠে। রঙই সর্বস্ব। ছবি মানেই রঙ, সেই ফবিস্টদের কথা – তার সূচনা কোথায় ছিল, হয়তো-বা এই টার্নারেই ছিল। যাকে বলে শিল্পের পরম্পরা। আর ইম্প্রেশনিস্টরা এতো বর্ণময় আভা কোথা থেকে পেল। কোনো কিছুই তো ভুঁইফোড় নয়, একটা যোগসূত্র তো থাকে। ব্রিটিশরা সবসময় দাবি করে আসছে, টার্নারই ইম্প্রেশনিজমের জনক, হয়তো এই ঘরানার তিনি নিঃসঙ্গ পথিক,…

৭৮৯ আর্ট জোনের প্রতীকচিহ্ন 'সেভেন নাইন এইট' একটি কারখানার নাম -- একসময় শ্রমিকের কোলাহলে মুখরিত হতো, কারখানার বাঁশি বেজে উঠলে শ্রমিকেরা দল বেঁধে কাজে যেত, ইঞ্জিনের ঘড়্ ঘড়্ শব্দ ছিল অতি পরিচিত, হাতুড়ির তালে তালে গান গেয়ে উঠত শ্রমিকের দল। সে ছিল এক অন্য রকম সময়। আজ আর এই চত্বরটি কারখানার শ্রমিকের পদধ্বনিতে মুখরিত হয় না, অনেক আগেই থেমে গেছে কারখানার বাঁশি। তবে এই পরিত্যক্ত চত্বরটির পুনর্জাগরণ ঘটেছে অন্যভাবে -- এখন এটি চারুশিল্পের এক অভাবনীয় জগৎ। বিশ্ব জুড়ে পরিচিত একটি নাম : 'বেইজিং আর্ট জোন সেভেন নাইন এইট।'

যখন থেমে গেল কারখানার বাঁশি 'সেভেন নাইন এইট' একটি কারখানার নাম -- একসময় শ্রমিকের কোলাহলে মুখরিত হতো, কারখানার বাঁশি বেজে উঠলে শ্রমিকেরা দল বেঁধে কাজে যেত, ইঞ্জিনের ঘড়্ ঘড়্ শব্দ ছিল অতি পরিচিত, হাতুড়ির তালে তালে গান গেয়ে উঠত শ্রমিকের দল। সে ছিল এক অন্য রকম সময়। আজ আর এই চত্বরটি কারখানার শ্রমিকের পদধ্বনিতে মুখরিত হয় না, অনেক আগেই থেমে গেছে কারখানার বাঁশি। তবে এই পরিত্যক্ত চত্বরটির পুনর্জাগরণ ঘটেছে অন্যভাবে -- এখন এটি চারুশিল্পের এক অভাবনীয় জগৎ। বিশ্ব জুড়ে পরিচিত একটি নাম : 'বেইজিং আর্ট জোন সেভেন নাইন এইট।' ১৯৫১ সালে গড়ে উঠেছিল কারখানাটি, মূলত সামরিক সরঞ্জামাদি ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী তৈরির লক্ষ্য নিয়ে। বিশ্বব্যাপী তখন সমাজতন্ত্রের জয় জয়কার, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর বন্ধুত্ব যেন লৌহকঠিন দৃঢ়তায় আবদ্ধ। বিশ্বকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন পৃথিবী গড়ার। এটি সেই সময়ের কাহিনী। তদানীন্তন পূর্ব জার্মানি ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল কারখানাটি। আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পূর্ব জার্মানির। কারখানার নকশা তৈরি হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত বাউহাউস স্কুলের প্রেরণায়। খোলামেলা চত্বর এবং সর্বত্র আলোর আধিক্য – এই হচ্ছে মূল বৈশিষ্ট্য। কারখানার র্কমকাণ্ড থেমে গেলেও স্থাপত্যর্কমটি এখনো অক্ষুণ্ণ আছে, তাও যেন এক র্দশনীয় বিষয়। সত্তরের দশকে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে এই কারখানাটি বিপ্লব র্চচার একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল, এখনো তার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন দেয়াল-লিখনে। এখনো চোখে পড়ে মাও স্তুতির বিভিন্ন স্লোগান। যেমন, ‘মাও টুশি ওয়ামেন দা থাইয়াং’ (চেয়ারম্যান মাও আমাদের সূর্য)। এই দেয়াল-লিখনগুলো মুছে ফেলা হয়নি, বরং সংরক্ষণ করা হয়েছে অতীত স্মৃতি হিসাবে। আশির দশকে যেন সমস্ত পৃথিবী ওলট পালট হয়ে যায় -- পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে ঘটে নতুন পালাবদল, পতন ঘটে বিশ্ববিখ্যাত বার্লিন প্রাচীরের, পূর্ব জার্মানি থেকে বিদায় নেয় সমাজতন্ত্র। আশির দশকে চীনও নতুন যুগে প্রবেশ করে। তেং শিয়াও পিং (চীনাদের উচ্চারণে ‘তেং শিয়াও ফিং’)-এর নেতৃত্বে শুরু হয় অর্থনৈতিক সংস্কার ও খোলা দুয়ার নীতি। ধীরে ধীরে ৭৯৮ কারখানাটির কার্যকারিতা হ্রাস পেতে লাগল। এবং একসময় পুরো কারখানাটি যেন অনেকটাই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। গড়ে উঠল শিল্পের ভুবন গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষার্ধে এবং নব্বই দশকের শুরুতে চীনদেশে নানা ক্ষেত্রে এক ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়; মূলত তেং শিয়াও পিং-এর অর্থনৈতিক…

স্মৃতিকে হাতড়ে বেড়ানো্র মতো কষ্টকর বিষয় আর নেই, আর তা যদি হয় বেইজিং-এর মতো শহরে। কারণ এই শহর এতটাই বদলে গেছে যে এক যুগ আগে যিনি এই শহরে এসেছেন তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠিন ধাঁধা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করা কঠিন। যাকে বলে খোলনলচে পালটে যাওয়া। অবশ্য এর একটি প্রধান কারণ হতে পারে দু’ হাজার আটের অলিম্পিক আয়োজন। পৃথিবীর কাছে একটি ঝকঝকে শহর উপহার দেয়ার বাসনা। সে চেষ্টায় চীনারা যেন অনেকটাই সফল, অলিম্পিকে আগত বিদেশী অতিথিরা সত্যিই মুগ্ধ হয়ে দেখলো বেইজিং-এর এই নব রূপ। অলিম্পিক একটি উপলক্ষ মাত্র, এমনিতে চীনাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর, তারই প্রতিফলন রাজধানী বেইজিং-এ। চীনাদের আয় উন্নতি যে যথেষ্ট হয়েছে তার ছাপ সর্বত্র। আজ থেকে বিশ বছরের বেশি সময় আগে বেইজিং শহরে এসেছিলাম। [...]

স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানোর মতো কষ্টকর বিষয় আর নেই, আর তা যদি হয় বেইজিং-এর মতো শহরে। কারণ এই শহর এতটাই বদলে গেছে যে এক যুগ আগে যিনি এই শহরে এসেছেন তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠিন ধাঁধা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করা কঠিন। যাকে বলে খোলনলচে পালটে যাওয়া। অবশ্য এর একটি প্রধান কারণ হতে পারে দু’ হাজার আটের অলিম্পিক আয়োজন। পৃথিবীর কাছে একটি ঝকঝকে শহর উপহার দেয়ার বাসনা। সে চেষ্টায় চীনারা যেন অনেকটাই সফল, অলিম্পিকে আগত বিদেশী অতিথিরা সত্যিই মুগ্ধ হয়ে দেখলো বেইজিং-এর এই নব রূপ। অলিম্পিক একটি উপলক্ষ মাত্র, এমনিতে চীনাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর, তারই প্রতিফলন রাজধানী বেইজিং-এ। চীনাদের আয় উন্নতি যে যথেষ্ট হয়েছে তার ছাপ সর্বত্র। আজ থেকে বিশ বছরের বেশি সময় আগে বেইজিং শহরে এসেছিলাম। তখন বেইজিং-এর সাইকেলের যুগ, শহর জুড়ে শুধু সাইকেল আর সাইকেল। বড় বড় রাস্তাগুলো যেন খাঁ খাঁ করতো। কিছু ট্যাক্সি, পাবলিক বাস আর সরকারি গাড়ি -- এই ছিল পথের সাথী। বরং সাইড লেন-ই ছিল জমজমাট, সারি সারি সাইকেলের মিছিল। তখন এটিই ছিল একমাত্র সমাজতান্ত্রিক বাহন। উঁচু-নিচু ভেদাভেদ নেই, সবারই এক বাহন -- সাইকেল। আর এই সাইকেলের কত গুণগান। আমার মনে আছে, আমাদের চীনা ভাষা শিক্ষা ক্লাসে সাইকেল চালানোর সুফল নিয়ে একটি প্রবন্ধ ছিল। তাতে শরীরচর্চা থেকে শুরু করে পরিবেশ-বান্ধব হিসাবে সাইকেলের নানান গুণপনার বিবরণ ছিল। এখনো অবশ্য কিছু লোককে সাইকেল চালাতে দেখা যায় কায়ক্লেশে, যারা প্রথম সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি, ধরতে পারেনি সম্ভাবনার প্রথম ট্রেনটি। প্রায় পনেরো বছর পর বেইজিং-এ এসে যখন এক চীনা বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলাম তখন তার আচার-আচরণে দেখি বিশাল পরিবর্তন, চালচলনে বন্ধুটি এখন পুরো বুর্জোয়া, গাড়ি ছাড়া এক পা-ও চলতে পারে না, অথচ আগে দেখেছি তার সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল একটি ভাঙাচোরা সাইকেল। যে-বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় অধ্যয়ন করেছি তার সামনে মোটরগাড়ির সারি, আগে যেখানে শোভা পেত শুধু সাইকেল আর সাইকেল। চীনারা যে-দিকে ঝোঁকে একেবারে বিপ্লব করেই ছাড়ে, এখানেও ঘটে গেছে এক মোটরগাড়ি বিপ্লব । চীনারা তাদের উন্নতির যে-তরিকা, তার নামকরণ করেছে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি। অর্থাৎ পুঁজিবাদি ঘুড়ি যত উপরেই উঠুক তা নিয়ন্ত্রিত হবে সমাজতান্ত্রিক লাটাইয়ে। এক দেশ দুই নীতি – সমাজতন্ত্র আর…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.