ছুটন্ত ঘোড়ার চিত্রকর

আজ থেকে সতেরো-আঠারো বছর আগের কথা – মনোরম গ্রীষ্মের বেইজিং। শীতে যখন গৃহবন্দী, গ্রীষ্মে তখন সত্যি পাখা মেলে উড়তে ইচ্ছা করে। সেই রকমই একটি দিনে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছি অজানার উদ্দেশে, যেন অনেকটা দু’চোখ যেদিকে যায় চলে যাওয়া। বৈকালিক ঝিরিঝিরি বাতাস আর গাছের ছায়ায় প্রশান্তিময় সেই সময়ে সাইকেল ভ্রমণটা যেন এক অপার্থিব আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। বিকেল মানেই সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়া। প্রকৃতির এই আনন্দযজ্ঞের আহ্বান রোখে কার সাধ্য। সেই রকম একটি দিনে সাইকেলে যেতে যেতে হঠাৎ থমকে দাড়ালাম চি শুই থান নামের জায়গায় – একটি দোতলা বাড়ির সামনে। আর চোখ আটকে গেল বাড়ির সামনের একটি আবক্ষ ভাস্কর্য প্রতিকৃতির মাঝে। খুব চেনা চেনা লাগছে, পত্রপত্রিকায় যেন অনেকবার দেখেছি এই ছবিটি। পরে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এটি বিখ্যাত চীনা চিত্রকর সু পেইহোং-এর প্রতিকৃতি এবং এই বাড়িটি তাঁর শিল্পকর্মের সংগ্রহশালা। এই সেই ভুবনবিখ্যাত শিল্পী যিনি একদা রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে এসেছিলেন। সেই সময় অকস্মাৎ শিল্পী সু পেইহোং-কে (ভারতবর্ষে অবশ্য ‘পিওন সু’ নামে পরিচিত) আবিষ্কার করে বেশ একটা আত্মপ্রসাদ অনুভব করেছিলাম; সেই সাথে সংগ্রহশালায় অপরাপর চিত্রকর্মের সাথে তাঁর আঁকা রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিটি দেখে যেন নিজেকে একজন দিগ্বিজয়ী মনে হচ্ছিল, এই বিদেশ বিভুঁইয়ে রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার! পরে অবশ্য এই শিল্পী সম্পর্কে আরো কিছু জানা হয়ে যায়; চীনদেশে তিনি এত বিখ্যাত যে কথাপ্রসঙ্গে তাঁর নাম বার বার চলে আসে।

সু পেইহোং-এর আঁকা আত্মপ্রতিকৃতি

সু পেইহোং-এর আঁকা আত্মপ্রতিকৃতি

সু পেইহোং-কে (Xu Beihong) বলা হয় আধুনিক চীনা চিত্রকলার পথিকৃৎ। আমাদের জয়নুল আবেদিন, চীনাদের সু পেইহোং। দুজনই শিল্পচর্চার পাশাপাশি শিল্পকলাকে এগিয়ে নেয়ার আন্দোলনে ব্রতী হয়েছিলেন। সু পেইহোং চীনদেশে প্রথম পশ্চিমা ঘরানার চিত্রশৈলীর একজন সফল শিল্পী। চীনের চারুকলা শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সেন্ট্রাল একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর প্রথমদিকের অধ্যক্ষ সু পেইহোং চীনের জনগণের কাছে অত্যন্ত সম্মানীয়। গত মার্চ মাসে বেইজিং-এর একটি নামী মিউজিয়ামে (ইয়ান হোয়াং আর্ট মিউজিয়াম) অনুষ্ঠিত হলো তাঁর সারা জীবনের কাজ নিয়ে একটি রেট্রোস্পেকটিভ। আমি এবং আমার স্ত্রী আমন্ত্রিত হয়েছিলাম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। সু পেইহোং স্মৃতি সংগ্রহশালায় বেশ কয়েকবার গিয়েছি, কিন্তু এই মিউজিয়ামে প্রদর্শিত সেই ছবিগুলোই যেন একটু অন্যরকম লাগছিল, মিউজিয়ামের সুপরিসর আয়তনে ছবিগুলোকে আরো উপভোগ্য মনে হলো। সরকারি সংগ্রহের বাইরে ব্যক্তি-সংগ্রহের কিছু কাজও এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠান লোকে লোকারণ্য, সেই সাথে এসেছেন সব রথী-মহারথী, যথারীতি দীর্ঘ বক্তৃতার পালা এবং নানা আনুষ্ঠানিকতা। অবশেষে পৌঁছনো গেল মূল প্রদর্শনী কক্ষে; সেই চিরচেনা ছবি – বই এবং পত্রপত্রিকায় অনেক দেখেছি। এবার মূল কাজ দেখার সৌভাগ্য হলো – সেই ছুটন্ত ঘোড়ার ছবি, যা বলা যেতে পারে একটি আইকনে পরিণত হয়েছে। ধ্রুপদী চীনা শৈলীর চিত্রকলাকে যেন সমস্ত পৃথিবীর কাছে পরিচিত করিয়েছে । আমরা দেখছিলাম এবং মুগ্ধ হচ্ছিলাম। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের অপূর্ব মেলবন্ধন, একদিকে যেমন জল-মাধ্যমে ইংক অ্যান্ড ওয়াশের চীনা পদ্ধতির নিপুণ উতকর্ষ, অন্যদিকে তেল-মাধ্যমের পশ্চিমা বাস্তব রীতির সার্থক প্রয়োগ। জল আর তেল দিয়েই যেন প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যকে আলাদা করা যায়। সু পেইহোং-ই বোধহয় প্রথম চীনা শিল্পী যিনি প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের শিল্পশৈলীর মেলবন্ধন ঘটাতে পেরেছিলেন।

সু পেইহোং ১৮৯৫ সালে চিয়াংসু প্রদেশের চি থিং ছিয়াও অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সু তাজাং ছিলেন চিত্রশিল্পী, কবি এবং ক্যালিগ্রাফার। মাত্র ছয় বছর বয়সে ক্যালিগ্রাফি শিল্পে হাতেখড়ি বাবার হাতেই, আর নয় বছর বয়সে চিত্রবিদ্যায়। খুব কম বয়সেই প্রতিভার স্ফূরণ ঘটে, এবং পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে চিত্রবিদ্যাকে সহায় করে উপার্জনের পথ ধরতে হয়। ১৯১৫ সালে তিনি সাংহাইয়ে পাড়ি জমান এবং প্রকাশনা শিল্পে অলংকরণের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন, এবং যৎকিঞ্চিৎ চিত্রকর্মও বিক্রি শুরু করেন। সু পেইহোং বেশ অল্প বয়সেই শিল্পজগতের সুধীজনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন এবং তার ফলশ্রুতিতে ১৯১৯ সালে তিনি সরকারি বৃত্তি নিয়ে প্যারিস গমন করেন, মূল লক্ষ্য পাশ্চাত্য শিল্পবিদ্যা রপ্ত করা। দীর্ঘ আট বছর ইউরোপে অবস্থান করেন তিনি, প্যারিস ছাড়া বার্লিনেও কিছুদিন ছবি আকাঁ শেখেন। এই সময়ে তিনি পাশ্চাত্য কায়দার চিত্রবিদ্যা আয়ত্ত করে তেল-মাধ্যমে একজন দক্ষ শিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং বিদেশে থাকতেই বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করে খ্যাতিমান শিল্পী হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেন। মূলত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ১৯২৭ সালে। সু পেইহোং-এর সবচেয়ে বড় অবদান হলো তিনি অতি-চর্চিত প্রচলিত চীনা পদ্ধতির চিত্রধারাকে একটি নতুন অবয়ব দান করেছেন। তাঁর হাতেই নতুন করে সতেজ হয়ে ওঠে চীনা প্রাচ্যকলা। সু পেইহোং সারা জীবন আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন চীনা চিত্রকলার ঐতিহ্যকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে। সেই লক্ষ্য নিয়ে ইউরোপ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কখনো যৌথ প্রদর্শনী, কখনো-বা একক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন; ভ্রমণ করেছেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অনেকগুলো দেশে। ধীরে ধীরে তিনি চীনের সীমানা পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও অর্জন করেন ব্যাপক পরিচিতি।

১৯৪০ সালে সু পেইহোং শান্তিনিকেতন এবং কলকাতা ভ্রমণ করেন, মূল লক্ষ্য ছিল ভারতবর্ষের মহান ঋষি-কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাৎ লাভ। এই সময়ে তিনি শান্তিনিকেতনে কিছুদিন অবস্থান করে কবিগুরুর ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে আসেন। কবি সু বেইহোং-এর আঁকা ছবি দেখে বেশ মুগ্ধ হন। রবীন্দ্রনাথ বরাবরই চীনা ও জাপানি পদ্ধতির চিত্রকলার একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন, সু বেইহোং সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই জানতেন। কবি তাঁর প্রদর্শনী উপলক্ষে একটি বাণীও লিখে দেন। এই সময় তাঁর দুটোর প্রদর্শনীর খবর জানা যায় – একটি হয়েছিল শান্তিনিকেতনে, অপরটি কলকাতায়। বঙ্গদেশে ভ্রমণের সময় তিনি বেশ কিছু ছবি আঁকেন । রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি স্কেচ সহ জলরঙে চীনা পদ্ধতিতে একটি প্রতিকৃতি অঙ্কন করেছিলেন। এই সময়ে তিনি মহাত্মা গান্ধীর সাথেও সাক্ষাৎ করে তাঁরও একটি প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন।

রবীন্দ্রনাথ ও সু পেইহোং

রবীন্দ্রনাথ ও সু পেইহোং

‘শান্তিনিকেতন’

‘শান্তিনিকেতন’

‘ভারতীয় রমণী’

‘ভারতীয় রমণী’

এখানে একটি বিষয় আলোচনার অবকাশ রাখে, ১৯৪০ সালে কলকাতায় আয়োজিত সু পেইহোং-এর প্রদর্শনীটি খুব সম্ভবত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন দেখে থাকবেন, আর বোধহয় তারই ফলশ্রুতিতে তিনি কালি-তুলির ( Ink & Brush) কাজে আগ্রহী হয়ে উঠেন। অনেক শিল্পসমালোচক অবশ্য বলেছেন, জয়নুলের কাজে চীনা ক্যালিগ্রাফি ও কালি-তুলির কাজের প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায়। বিশেষ করে ১৯৪৩ সালে আঁকা দুর্ভিক্ষের চিত্রমালায়। শুধু কালি ও তুলিতে জয়নুল যে অসাধারণ চিত্র এঁকেছিলেন তার অনুপ্রেরণা হয়তো-বা চীনা চিত্রশৈলী থেকে আহরিত হতে পারে। সু পেইহোং ভারত ভ্রমণের এক পর্যায়ে শৈল-শহর দার্জিলিং-এ অবস্হান করেন এবং এখানে বসে হিমালয়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বেশ কিছু চিত্র রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত ছবি ‘বোকা বুড়োর পাহাড় সরানো’(The Foolish Old Man Removes the Mountain) তিনি এখানে বসেই আঁকেন। এই ছবিটিও স্থান পেয়েছে রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনীতে।

‘বোকা বুড়োর পাহাড় সরানো’ ছবিটির সামনে দর্শনার্থীর ভিড়

‘বোকা বুড়োর পাহাড় সরানো’ ছবিটির সামনে দর্শনার্থীর ভিড়

বিশালাকৃতির এই ছবিটি (১৪৪ x ৪২১ সেমি) চীনা লোকগাথা অবলম্বনে আঁকা, যা পরিশ্রমী চীনা জাতির চেতনাকে ধারণ করে। মাও সে তুং-এর প্রিয় গল্প এটি। তাঁর বিভিন্ন লেখায় এই গল্পটি উদাহরণ হিসাবে এসেছে। এক নাছোড়বান্দা বৃদ্ধের বাড়ির সামনে একটি পাহাড়কে কেটে সমান করে ফেলার কাহিনি। সু পেইহোং একসময় চীনা মিথ ও লোককাহিনীর বীরগাথা নিয়ে বেশ কিছু ছবি আঁকেন। তাঁর শিল্পীজীবন বেশ বর্ণাঢ্য এবং বৈচিত্র্যময়। তিনি কখনো এঁকেছেন বিড়াল হাতে সুখী রমণী, আবার কখনো-বা এঁকেছেন বিপ্লবের প্রণোদনায় বীরগাথার চিত্র।

‘বিড়ালকে আদররত রমণী’
রবীন্দ্র-প্রতিকৃতির সামনে

রবীন্দ্র-প্রতিকৃতির সামনে

‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতি’

‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতি’

সংগ্রহশালার অধিকাংশ ছবি স্থানান্তরিত হয়েছে এই মিউজিয়ামে রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনী উপলক্ষে। শিল্পীর আঁকা কবিগুরুর প্রতিকৃতির সামনে বেশ ভিড়, চীনারা বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে তাদের প্রিয় কবির ছবিটি। ঠাকুর – চীনাদের ভাষায় ‘থাই কুয়ার’। চীনদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় আমাদের প্রাণের কবি। সু পেইহোং কবিগুরুর সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরেছিলেন, এতে চীনারা বেশ গর্ব বোধ করে। রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিটি বেশ যত্ন করে এঁকেছেন শিল্পী। ধ্যানী ঋষির মতো বসে আছেন কবি ছায়াবীথি তলে, পশ্চাৎপটে তরুশাখে দুটি শালিকের অবয়ব। কবির হাতে নীলরঙের লেখার খাতা এবং আরেক হাতে সাদা কলম। চীনা পদ্ধতির কালি-তুলির কাজ। প্রকৃতিপ্রেমী কবিকে প্রকৃতির মাঝে উপস্থাপন করেছেন শিল্পী। কবির প্রতিকৃতি অনেক শিল্পীই এঁকেছেন, তবে আমার কাছে মনে হয়েছে এ ছবিটি একটি ব্যতিক্রম।

তেজোদ্দীপ্ত ঘোড়ার ছবি

তেজোদ্দীপ্ত ঘোড়ার ছবি

ধীরে ধীরে এগিয়ে যাই অশ্ব চিত্রমালার দিকে। জীবনের নানা পর্যায়ে নানা সময়ে তিনি অনেক ঘোড়ার ছবি এঁকেছেন – শুরু হয়েছিল সেই সাংহাই থেকে, যখন প্রথম শুরু করেছিলেন জীবিকার অন্বেষণ। এই আইকনিক ঘোড়ার ছবি তাঁকে বিশ্বজোড়া সম্মান এনে দেয়। শুধু কালি ও তুলির ক্ষিপ্র আঁচড়ে মূর্ত হয়ে ওঠে ছুটন্ত ঘোড়া – কখনো একাকী, কখনো দলবদ্ধ। কী অসাধারণ ড্রইং-দক্ষতা অর্জন করেছিলেন শিল্পী তা ছবিগুলোর সামনে দাঁড়ালেই অনুধাবন করা যায়। প্রত্যেক শিল্পীরই বোধহয় একটি ল্যান্ডমার্ক থাকে যা মানুষের কাছে শিল্পী হিসাবে তাঁকে পরিচিত করে তোলে; আমাদের জয়নুলের যেমন দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা তেমনই সু পেইহোং-এর এই ঘোড়ার ছবিগুলো।

ছুটন্ত ঘোড়ার ছবি

ছুটন্ত ঘোড়ার ছবি

এই প্রদর্শনীতে নানা সময়ের নানা আঙ্গিকের ছবি স্থান পেয়েছে। যেমন চীনা পদ্ধতির কালি-তুলি ও ওয়াশ পদ্ধতির কাজ, আবার তেল-মাধ্যমে পশ্চিমা রীতির ছবি। ম্যাডাম সুন দুয়োছি-র প্রতিকৃতি ফরাসি কায়দার কম্পোজিশনে তেল-মাধ্যমে আঁকা – ইজি-চেয়ারে বসে থাকা এক রমণীর প্রতিকৃতি। তেলরঙে আঁকা ‘জ্যোৎস্নারাত’ ছবিটি বেশ রোমান্টিক – চন্দ্রালোকে চার রমণীর অবগাহন। এই প্রদর্শনীটি সু পেইহোং-এর প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য ভ্রমণের সাক্ষ্য দেয়, নানা মেজাজের ছবিগুলো দেখে মোটামুটি পূর্ণাঙ্গ রূপে সু পেইহোং-কে খুঁজে পাওয়া যায়। এবং তিনি যে দুই গোলার্ধের মধ্যে অনবরত একটি মেলবন্ধনের চেষ্টা করেছেন তারও প্রমাণ মেলে।

‘ম্যাডাম সুন দুয়োছি-র প্রতিকৃতি’

‘ম্যাডাম সুন দুয়োছি-র প্রতিকৃতি’

‘জ্যোৎস্নারাত’

‘জ্যোৎস্নারাত’

‘ন্যুড স্টাডি’

‘ন্যুড স্টাডি’

১৯৫৩ সালে মহান শিল্পী সু পেইহোং আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র আটান্ন বছর। চীনা বিপ্লবের পর প্রথম অধ্যক্ষ হিসাবে তিনি যোগ দিয়েছিলেন সেন্ট্রাল একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ। সেই সাথে অলংকৃত করেছিলেন নিখিল চীন শিল্পী সঙ্ঘের সভাপতির পদ। খুব ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন নিজের আঁকাআঁকি আর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে। তাঁর অকালপ্রয়াণে অসমাপ্ত রয়ে গেছে অনেক কিছুই। তবে চীনের জনগণের অন্তরে সু পেইহোং ভাস্বর হয়ে আছেন আধুনিক চীনা চিত্রকলার পথিকৃৎ হিসাবে।

রশীদ আমিন

জ়ীবনের এই রহস্য কে করিতে পারে ভেদ, ভুবনডাঙ্গায় ঘোরা-ফিরা ক্ষণিকের বিচ্ছেদ

২৫ comments

  1. রশীদ আমিন - ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ)

    লেখাটি ২০০৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলো-র শুক্রবারের সাহিত্য সাময়িকীতে। লেখাটি ব্লগবন্ধুদের উদ্দেশে মুক্তাঙ্গনের পাতায় আবার নিবেদিত হলো।
    ধন্যবাদ ।

  2. ইমতিয়ার - ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:১৬ পূর্বাহ্ণ)

    উইকিপিডিয়া থেকে জানতে পারলাম, মাত্র বছরখানেক আগে ২০০৮ সালে এক‌ আইনী বিতর্ক দেখা দিয়েছিল সু পেইহোং-এর শিল্পকর্ম নিয়ে। এই আইনি ঠেলাঠেলির উৎস ছিল সু পেইহোং-এর দুটি সিরামিক শিল্প। আর ঠেলাঠেলিটা দেখা দিয়েছিল সিঙ্গাপুর আর্ট মিউজিয়ামে আয়োজিত ‘নানইয়াং-এ সু পেইহোং’ শীর্ষক সফল এক আর্ট প্রদর্শনীর পৃষ্ঠপোষক ও সু পেইহোং-এর পারিবারিক বন্ধুমহলের মধ্যে।
    ঘটনার শুরু হয় এভাবে : সু পেইহোং-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রয়াত শিল্পসংগ্রাহক হুয়াং ম্যান সাই এবং হুয়াং মেং সাই নামের দু ভাইয়ের উত্তরসূরিরা সু পেইহোং-এর দুটি সিরামিকশিল্পসহ কয়েকটি পেইন্টিং ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে জ্যাক বন নামের এক আর্ট ডিলারকে মে ২০০৭-এ হংকং-এর ক্রিস্টি’স অকশান হাউজের নিলামে তুলতে দেন। ১৮ সেন্টিমিটারের এই সিরামিক শিল্পকর্ম দুটির একটির নাম ছিল ‘মালয় ড্যান্সার্স’, আরেকটির নাম ছিল ‘অর্কিড’। এফিডেবিট অনুযায়ী, নিলামে বিক্রি না হলে এগুলি হুয়াং ভ্রাতৃদ্বয়ের উত্তরসূরিদের ফের দিয়ে দেবার কথা ছিল। কিন্তু এর বদলে সিরামিক শিল্পগুলির মালিকদের না জানিয়েই সেগুলি পাঠিয়ে দেয়া হয় সিঙ্গাপুর আর্ট মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে রাখবার জন্যে। এরকম ধারণা করা হয় যে, সিঙ্গাপুর আর্ট মিউজিয়ামের প্রশাসন এগুলির মালিকানাসত্ব সর্ম্পকে অন্ধকারে ছিলেন। জুলাই ২০০৮-এ প্রদর্শনী শেষ হওয়ার পর জাদুঘর তা জানতে পারে, কেননা তাদের কাছে উকিল নোটিশ আসে, যাতে জ্যাক বনের কাছ থেকে শিল্পকর্মগুলি ফিরে পাওয়ার দাবি করা হয়। শুরু হয় মালিকানাসংক্রান্ত আইনী বিতর্ক। এ-মামলা চলার সময় অবশ্য মিউজিয়ামই এগুলির সংরক্ষকের দায়িত্ব পালন করে। পরে ১২ মার্চ, ২০০৮ সালে মামলার রায় অনুযায়ী, সু পেইইয়ং-এর এ কাজগুলি হুয়ান ভ্রাতৃদ্বয়ের উত্তরসূরিরা ফেরৎ পান।
    আরও একটি ব্যাপার জানতে পারছি, হেবেই-তে টেলিভিশনে প্রদর্শনের জন্যে সু পেইইয়ং-এর কৈশোর থেকে ১৯৪৯ সাল অব্দি জীবনভিত্তিক ২৪ পর্বের একটি ইতিহাসভিত্তিক সোপ অপেরা নির্মাণ করা হচ্ছে (হিসেব অনুযায়ী এর মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা)। অপেরাটি এ বছরের শেষ দিকে চীনের টিভি চ্যানেলে ধারাবাহিকভাবে দেখানোর কথা। দেখাচ্ছে কি না জানি না,- আমিন ভাই একটু চ্যানেলগুলি উল্টেপাল্টে দেখবেন কি? যদি দেখায়, বলতেই হচ্ছে, এদিক থেকেও ভাগ্যবান রশিদ আমিন।

  3. রায়হান রশিদ - ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ)

    অনেক ধন্যবাদ আমিন ভাই। প্রায় এক নিঃশ্বাসে পড়লাম আপনার বর্ণনা। তারপর আবার পড়লাম। আবারও দেখলাম ছবিগুলো। একদম অন্য এক ভূবনের গল্প যেন।
    ইমতিয়ার ভাইয়ের কথা মতো চাইনিজ টেলিভিশনে আপনার তো কিছু দিনের মধ্যেই শিল্পীর জীবন নিয়ে সোপ অপেরাটাও দেখতে পাওয়ার কথা। আশা করি ততদিনে চীনা ভাষাটা আরও ভালমতো রপ্ত হয়ে যাবে আপনার। এমন ইনসেনটিভ থাকলে ভাষা শেখার মজাটাই বেড়ে যায়। তখন আমরাও না হয় আপনার সাথে সাথে এই শিল্পীর জীবন পরিক্রমা করতে পারবো।
    একটা বিষয় অবশ্য জানার আগ্রহ হচ্ছে। সাংস্কৃতিক বিপ্লব ইত্যাদির সময় শিল্পীর কাজ কেমনভাবে মূল্যায়িত হত শিল্পীর নিজ দেশে?

  4. রশীদ আমিন - ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:১৫ অপরাহ্ণ)

    প্রিয় শামীম ভাই, প্রিয় রায়হান,

    ধন্যবাদ মূল্যবান মন্তব্যের জন্য। এই সিরিয়ালটি দেখার ইচ্ছা আমারও আছে। অবশ্যই খুঁজে দেখবো কোন চ্যানেলে আছে। তবে এই সময় চ্যনেলগুলোতে বিপ্লবগাথার সিরিয়াল-ই বেশ নতুন উদ্যমে দেখানো হচ্ছে। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০ বৎসর পূর্তি এই সামনের অক্টোবরেই। মাও-কে নিয়ে একটি নতুন চলচ্চিত্র হয়েছে, জ্যাকি চান এবং জেটলি অভিনয় করেছে, বিষয়টি বেশ চিত্তাকর্ষক, ছবিটি দেখার ইচ্ছা আছে। চীনাদের একটি বিষয় ভালো লাগে, তা হচ্ছে ওদের দেশপ্রেম সমুন্নত রাখার জন্য প্রতিনিয়ত চীন-জাপান যুদ্ধের উপর অথবা লং মার্চ কিংবা বিপ্লবের কাহিনির উপর সিরিয়াল, সিনেমা ইত্যাদি প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো চ্যানেলে প্রচারিত হয়। সেই তুলনায় আমাদের দেশের চ্যানেলগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের উপর কাজ একেবারেই হাতে-গোনা। আমার মনে হয় সরকারের এই বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত…

  5. মুয়িন পার্ভেজ - ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৩:৩৭ অপরাহ্ণ)

    শিল্পীর আঁকা কবিগুরুর প্রতিকৃতির সামনে বেশ ভিড়, চীনারা বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে তাদের প্রিয় কবির ছবিটি। ঠাকুর – চীনাদের ভাষায় ‘থাই কুয়ার’। চীনদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় আমাদের প্রাণের কবি। সু পেইহোং কবিগুরুর সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরেছিলেন, এতে চীনারা বেশ গর্ব বোধ করে। রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিটি বেশ যত্ন করে এঁকেছেন শিল্পী। ধ্যানী ঋষির মতো বসে আছেন কবি ছায়াবীথি তলে, পশ্চাৎপটে তরুশাখে দুটি শালিকের অবয়ব। কবির হাতে নীলরঙের লেখার খাতা এবং আরেক হাতে সাদা কলম। চীনা পদ্ধতির কালি-তুলির কাজ। প্রকৃতিপ্রেমী কবিকে প্রকৃতির মাঝে উপস্থাপন করেছেন শিল্পী। কবির প্রতিকৃতি অনেক শিল্পীই এঁকেছেন, তবে আমার কাছে মনে হয়েছে এ ছবিটি একটি ব্যতিক্রম।

    প্রদর্শনীলিপির এই অংশটুকু বেশ আবেগাপ্লুতই করে ফেলল আমাকে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, মহামারীতুল্য জনসংখ্যা, জঙ্গিতৎপরতা, দুর্নীতি ইত্যাদি উপসর্গে যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে অনেকটাই খর্বিত এবং হৃদয় ক্ষুব্ধ, তখন বাঙালির গর্বের ধন রবীন্দ্রনাথের কথাই মনে পড়ে বারবার।

    ছবি নিয়ে অসাধারণ লাবণ্যময় এই লেখা পড়তে পড়তে মনে হলো যেন শিল্পী রশীদ আমিনের সঙ্গে আমিও ঘুরেফিরে দেখছি ইয়ান হোয়াং আর্ট মিউজিয়াম-এ সু পেইহোং-এর চিত্তজয়ী চিত্রমালা! ‘ছুটন্ত ঘোড়ার ছবি’র পাশে ‘জ্যোৎস্নারাত’ দেখে, কল্পনায়, বৈপরীত্যের এক সান্দ্র সহাবস্থানে পৌঁছে যাই।

    ‘বেইজিং-এ টার্নার’ প্রকাশের (1৩ জুলাই ২০০৯) ঠিক দু’মাসের মাথায় পড়া গেল ‘ছুটন্ত ঘোড়ার চিত্রকর’ — রশীদ আমিনকে আরও অল্প ব্যবধানে পেতে চাই, যদিও এই বিরতি হতাশাব্যঞ্জক নয়।

  6. রশীদ আমিন - ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৬:৪২ অপরাহ্ণ)

    ধন্যবাদ মুয়িন, আপনার মন্তব্য বেশ প্রেরণাদায়ক। আপনি ঠিকই বলেছেন, রবীন্দ্রনাথই আমাদের শেষ পরিচয়, রবীন্দ্রনাথই পৃথিবীর বুকে আমাদেরকে অনেক উচ্চতায় তুলে ধরে। … চীনারা বেশ রবীন্দ্রপ্রেমী, বলা যেতে পারে আমার একটা অভ্যাসে পারিণত হয়েছে যে চীনাদের সাথে পরিচয় হলে প্রথমে জিজ্ঞেস করি রবীন্দ্রনাথকে চেনে কিনা, শতকরা একশ ভাগের উত্তরই সন্তোষজনক। এমনকি এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও তাঁকে চেনে। একটি ছেলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, নাম সেং হুয়া, কিঞ্চিৎ কবিতা লেখার অভ্যেস আছে, সে নাকি রবীন্দ্রনাথকে স্বপ্ন দেখেছ। সে রবীন্দ্রনাথের এতোই ভক্ত যে তাঁর অনেক কবিতা মুখস্থ, যদিও চীনা অনুবাদে। রবীন্দ্রনাথের বলাকা কাব্য চীনাদের খুব প্রিয়, চীনা ভাষায় ফেই নিয়াও, ‘নিয়াও’ মানে পাখি, ‘ফেই’ মানে উড়ে যাওয়া। চীন দেশে রবীন্দ্রচর্চা নিয়ে আমার একটি কাজ করার ইচ্ছা আছে। সময়-সুযোগ বুঝে কাজে হাত দেবো। আমি ইদানীং ছবি আঁকা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় লেখাটা একটু কম হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়িই শুরু করবো, কারণ লেখালেখিটাও বাঁচার একটা প্রেরণা।

    • মুয়িন পার্ভেজ - ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৯:১৪ অপরাহ্ণ)

      অনেক ধন্যবাদ, রশীদ আমিন। আপনার কাছে দু’টি অনুরোধ :
      ১। সেং হুয়া-র সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে চাই। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর উৎসাহ বেশ উদ্দীপক। তাঁর কোনো ই-মেইল ঠিকানা কি দেওয়া সম্ভব হবে?
      ২। ‘চীনদেশে রবীন্দ্রচর্চা’ নিয়ে যদি কাজ করেন, সত্যিই খুব ভালো হয়। রবীন্দ্রচর্চার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। ছবি আঁকার ফাঁকে ফাঁকে, অবসর বুঝে, বিষয়টি নিয়ে লিখবেন, আশা করছি।

      ভালো থাকুন।

  7. রেজাউল করিম সুমন - ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৯:১৮ অপরাহ্ণ)


    বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের ‘চিত্রকর’ প্রবন্ধে চৈনিক সৌন্দর্যশাস্ত্র নিয়ে আলোচনার সূত্রে সু পেইহোং-এর (আমিন ভাইয়ের কল্যাণে সঠিক উচ্চারণটা দেরিতে হলেও জানা হলো) প্রসঙ্গ এসেছে। বিনোদবিহারী লিখেছেন,

    শ্রীমতী উ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের ছাত্রী। রবীন্দ্রনাথের কবিতা বুঝতে তাঁর খুবই অসুবিধা হতো। প্রথমত কবিতাগুলি তাঁর কাছে অত্যন্ত দীর্ঘ বলে মনে হতো, দ্বিতীয়ত কবিতাগুলির দার্শনিক তত্ত্ব তিনি কিছুতেই গ্রহণ করতে পারতেন না। যেসময় অধ্যাপক উ-র সঙ্গে আমি চৈনিক সৌন্দর্যশাস্ত্র নিয়ে আলোচনা করছিলাম সেই সময় চীনদেশের বিখ্যাত চিত্রকর Jupeon [শান্তিনিকেতনের] চীনা-ভবনে অতিথিরূপে বাস করছিলেন। তিনি প্যারিসে সাত বছর চিত্রবিদ্যা শিক্ষা করেন। এবং চীনা পদ্ধতিতে কাজ করারও তাঁর দক্ষতা ছিল। অত্যন্ত ব্যস্ত লোক, তাঁর সঙ্গে আলাপের সুযোগ একবারই আমি পেয়েছি। Jupeon-র কাছে চৈনিক শিল্পশাস্ত্রের কথা উত্থাপন করতেই তিনি অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে জুতোসুদ্ধ পা সামনের দিকে ছুঁড়ে বললেন, ‘চীনদেশের সর্বনাশ করেছে এসব শাস্ত্র, একে লাথি মেরে দেশ থেকে বের ক’রে দাও। একদল আর্টিস্ট ঘরের মধ্যে বসে বসে শিল্প-শাস্ত্রের পাতা ওল্টায় আর শাস্ত্র-মতো গাছের কোনদিকে দুটো ডাল, কোনদিকে একটা ডাল, তারই আইন অনুসন্ধান করে, বাইরের দিকে তাকায় না।’ – সাংহাই-এর সরকারী প্রদর্শনী যদি পূর্বে আমার দেখা না থাকত তাহলে Jupeon-র এই যুক্তিকে অতিরঞ্জিত মনে হতো। অবশ্য তাং-পরম্পরা সম্বন্ধে Jupeon-র বিশেষ শ্রদ্ধা ছিল, তিনি বলতেন তাং যুগের ঐতিহ্যকে আমি আবার ফিরিয়ে আনতে চাই, সেইজন্যেই আমি এত পরিশ্রম করছি। আজ পর্যন্ত বুঝতে পারি নি প্যারিসে শিক্ষাপ্রাপ্ত তৈলচিত্রকর Jupeon কি ক’রে তাং যুগের ঐতিহ্যকে বর্তমানে ফিরিয়ে আনবেন!

    অন্ধ শাস্ত্রনিষ্ঠা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যসম্পন্ন শিল্পীর অনুমোদন পাওয়ার কথা নয়। প্রসঙ্গত আমাদের মনে পড়ে যায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথা :

    নিখিল শিল্পসাগরসঙ্গমে আমার সহযাত্রী বন্ধু ও শিষ্যবর্গকে এই অনুরোধ যে, শিল্পশাস্ত্রে বচন ও শাস্ত্রোক্ত মূর্তি লক্ষণ ও তাহার মানপ্রমাণাদির বন্ধন অচ্ছেদ্য ও অলঙ্ঘনীয় বলিয়া তাঁহারা যেন গ্রহণ না করেন অথবা নিজের শিল্পকর্মকে চিরদিন শাস্ত্র প্রমাণের গণ্ডির ভিতরে আবদ্ধ রাখিয়া স্বাধীনতার অমৃত স্পর্শ হইতে বঞ্চিত না করেন।

    ইমতিয়ার ভাই উইকিপিডিয়া থেকে একটা সাম্প্রতিক খবর তুলে দেয়ায় খুব ভালো হলো। অন্য একটা ওয়েবসাইটে পাওয়া সু পেইহোং-এর কালানুক্রমিক জীবনপঞ্জি থেকে জানতে পারছি, তিনি রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীর দশটারও বেশি স্কেচ করেন। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত প্রতিকৃতিটি আমিন ভাইয়ের এই পোস্টের কল্যাণে আবারও দেখা হলো; জানতে ইচ্ছে করছে কবির ও গান্ধীর অন্য প্রতিকৃতিগুলোও প্রদর্শনীতে ছিল কি না। একজন বাঙালি চিত্রশিল্পী যে সস্ত্রীক আমন্ত্রিত হয়েছেন সু পেইহোং-এর সাম্প্রতিক প্রদর্শনীতে, আমাদের জন্য এটা যারপরনাই আনন্দের খবর।

    এখানে একটি বিষয় আলোচনার অবকাশ রাখে, ১৯৪০ সালে কলকাতায় আয়োজিত সু পেইহোং-এর প্রদর্শনীটি খুব সম্ভবত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন দেখে থাকবেন, আর বোধহয় তারই ফলশ্রুতিতে তিনি কালি-তুলির ( Ink & Brush) কাজে আগ্রহী হয়ে উঠেন। অনেক শিল্পসমালোচক অবশ্য বলেছেন, জয়নুলের কাজে চীনা ক্যালিগ্রাফি ও কালি-তুলির কাজের প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায়। বিশেষ করে ১৯৪৩ সালে আঁকা দুর্ভিক্ষের চিত্রমালায়। শুধু কালি ও তুলিতে জয়নুল যে অসাধারণ চিত্র এঁকেছিলেন তার অনুপ্রেরণা হয়তো-বা চীনা চিত্রশৈলী থেকে আহরিত হতে পারে।

    এই অনুমিতি সত্যিই ‘আলোচনার অবকাশ রাখে’। মতলুব আলীর ‘জয়নুলের জলরঙ’ (বাংলা একাডেমী, ১৯৯৬) বইটা আবার উলটেপালটে দেখলাম। এক জায়গায় (পৃ ৬৫) আছে :

    জয়নুল তাঁর শিক্ষা গ্রহণকালে ভারতে তথা পশ্চিমবঙ্গে যে শিল্প পরিবেশ পেয়েছিলেন তার মূল ধারাটিই ছিলো প্রাচ্যের বিশেষত চিন-জাপানি চিত্ররীতির সঙ্গে ওতপ্রোত। তারই সঙ্গে ভারতীয় চিত্ররীতি তথা মুঘল-পারসিক আলংকারিক-ধারার সম্মিলন আবার কিছুটা ইউরোপীয় প্রাতিষ্ঠানিক আঙ্গিকের মিশেলে ই, বি, হ্যাভেলের উৎসাহধন্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রচেষ্টায় নতুন একটি ধারার প্রচলন হয়েছিল সেখানে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল নব্য-বঙ্গীয় চিত্র আন্দোলন বলে এবং সেই পদ্ধতি একটি ধারা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো ‘ইন্ডিয়ান পেইন্টিং’ অভিধা যুক্ত হয়ে। সেই পটভূমিতেই জয়নুলের চিত্র তথা জলরঙ-চর্চার সূত্রপাত আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে তাঁর চিত্ররীতি গড়ে ওঠার পেছনে কথিত ভারতীয় রীতির প্রভাব রয়েছে। একেবারেই যে নেই তা নয়, কারণটিও সহজ কেননা ঐ রীতিধারার চর্চা করতেন এমন অনেকের সান্নিধ্যই জয়নুল পেয়েছিলেন। এছাড়া প্রভাবশালী অনেক চর্চাবিদ শিল্পস্রষ্টার কাজের সঙ্গেও জয়নুল খুব বেশিরকম পরিচিত ছিলেন।

    জয়নুলের শিক্ষক ও সমকালীন বাঙালি শিল্পীদের মধ্যে যাঁরা জলরঙে(ও) ছবি আঁকতেন তাঁদের কথাও প্রসঙ্গত এসেছে। কিন্তু তাঁদের কারো কাজ জয়নুলকে প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বলে মনে হয়নি মতলুব আলীর।

    চৈনিক ও জাপানি জলরং নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে (পৃ ১৬-১৭) ভারতীয় শিল্পীদের (অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর শিষ্য ও ভাবশিষ্যদের) ওপর জাপানি শিল্পীদের (ওকাকুরা কাকুজো সহ অন্য কয়েকজনের) প্রভাবের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। তাঁর বইয়ে সু পেইহোং-এর কোনোই উল্লেখ নেই; ১৯৪০ সালে শান্তিনিকেতনে ও কলকাতায় এই শিল্পীর প্রদর্শনীর কথা তাঁর গোচরে ছিল না বলেই মনে হয়। জয়নুলের ছবিতে ‘চীনা ক্যালিগ্রাফি ও কালি-তুলির কাজের প্রভাব’-এর কথা যাঁরা লিখেছেন সু পেইহোং-এর প্রদর্শনীর প্রসঙ্গ কি তাঁদের সকলেরই দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে?!

  8. রশীদ আমিন - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৭:৪২ পূর্বাহ্ণ)

    ধন্যবাদ সুমন, তোমার অত্যন্ত সুচিন্তিত এবং গবেষণামুলক আলোচনাটির জন্য … আরো ধন্যবাদ আমার অত্যন্ত প্রিয় একটি পুস্তক চিত্রকর-এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য। এই বইটির কথা প্রথম শুনি শ্রদ্ধেয় আবুল মনসুরের কাছে, তারপর থেকেই বইটি আমার দীর্ঘ দিনের সাথী, এবারই শুধু চীনে আসার সময় নানা ঝুটঝামেলায় বইটি আনতে ভুলে গেছি, এখন খুব মিস করছি । বইটি বাংলা সাহিত্যের শিল্পী আত্মজীবনীর অসাধারণ এক ক্লাসিক।
    এখানে বিনোদবিহারী যথার্থই বলেছেন সু পেইহোং-এর চিন্তাধারা সম্পর্কে। শিল্পী সু অতি-চর্চিত ক্লিশে হয়ে যাওয়া চীনা চিত্রশৈলীর অচলায়তনকে ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলেন এবং সে চেষ্টায় কিছুটা সফলও, আর থাং (‘তাং’ নয়, ‘থাং’ হবে) ডাইনেস্টির কথা যা বলেছেন তাও যথেষ্ট তাৎপর্য বহন করে। আসলে থাং সময় হচ্ছে চীনের শিল্প সংস্কৃতির এক স্বর্ণযুগ, আর ভারত সংস্কৃতির সাথে আদানপ্রদানের এক সুবর্ণকাল। হিঊয়েন সাং (চীনা ভাষায় থাং সান) এই সময়েই ভারত ভ্রমণ করেন। হয়তোবা শিল্পী সু সেই সুবর্ণযুগকে ফিরিয়ে আনার কথাই বলেছেন, এবং তাঁর ভারত ভ্রমণও বোধ হয় সেই আকাঙ্ক্ষারই পরিপূরক ।

    আর জয়নুলের উপর চীনা শৈলীর প্রভাব একটি ধারণা মাত্র, কারন এটির আসলে কোনো প্রমাণ আমাদের হাতে নাই, তবে এ বিষয়টি নিয়ে একটি অনুসন্ধানী গবেষণা হতে পারে। জয়নুলের কোনো রোজনামচার যদি সন্ধান পাওয়া যেত তবে হয়তো কিছু জানা যেতে পারত। জয়নুল রোজনামচা লিখতেন কিনা তা অবশ্য জানা নেই। সম্প্রতি কামরুলের খেরোখাতার বিষয়ে পত্রিকায় দেখলাম, যদি তা প্রকাশিত হয় নিঃসন্দেহে এটি হবে আমাদের শিল্পজগতের জন্য একটি সুখবর। আমরা চাই অতি দ্রুতই তা প্রকাশিত হোক।

    শিল্পী সু রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীর বেশ কিছু স্কেচ করেছিলেন; হ্যাঁ, গান্ধীর একটি স্কেচ আমি দেখেছি সু পেইহোং স্মৃতি সংগ্রহশালায়।

    • রেজাউল করিম সুমন - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:২৮ অপরাহ্ণ)

      @ রশীদ আমিন

      ধন্যবাদ আমিন ভাই, তথ্যপূর্ণ প্রত্যুত্তরের জন্য। জয়নুল আবেদিনের উপর চীনা শৈলীর প্রভাব এবং চীনদেশে রবীন্দ্রচর্চা নিয়ে আপনার কাছ থেকেই গবেষণামূলক লেখা পাব আশা করছি।

      অনন্যসাধারণ চিত্রকর ও নন্দনভাবুক বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের চিত্রকর আমারও খুব প্রিয় একটি বই। সে-কারণেই সু পেইহোং-এর সঙ্গে বিনোদবিহারীর কথোপকথনের বিবরণটি মনে পড়ে গিয়েছিল। অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে পড়বে, ‘চিত্রকর’ নামের লেখা থেকে একই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন কল্পাতি গণপতি সুব্রহ্মণ্যন্ (কে. জি. সুব্রামানিয়ান) নবযুগ আচার্য স্মারক বক্তৃতামালার (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯৯০) অন্যতম বক্তৃতায়। The Creative Circuit (১৯৯২) গ্রন্থভুক্ত ওই বক্তৃতা/প্রবন্ধ ‘Eclecticism II’-এর শুরুতে (পৃ ৩৮-৪১), বিনোদবিহারী-বর্ণিত ঘটনাটির সূত্র ধরে সু পেইহোং-এর ছবিতে চীনা ক্যালিগ্রাফিক চিত্রশৈলী ও পাশ্চাত্য রিয়ালিস্ট ধারার অনন্বয়ের কারণ অনুসন্ধান করেছেন সুব্রহ্মণ্যন্। সে-অংশটুকুও এখানে উদ্ধৃত থাক।

      Chinese calligraphic painting is by its nature craft-specific, the apparent freedom of calligraphic work being based on rigorous technical discipline with systematic work stages. Through the years there were many such systems of both professional and gentlemen painters; and, by the Sung times (eleventh to thirteenth centuries of the Christian era), every artist wanted to be introduced to them and, if possible, to master them. Naturally, this led to the growth of a kind of inbuilt eclecticism. (That such an eclecticism is the normal outcome of a long-standing tradition with various stylistic offshoots has already been discussed.) By the Ch’ing times (especially the nineteenth century) this had become rather rigid and elaborate, and artists were taken up more with what the technical handbooks said than what they saw. Xu Beihong’s objection was to this attitude. He told Benodbehari, ‘Today’s Chinese artists read treatises to find out which side of a tree should have two branches and which side one; they hardly look at a tree themselves!’

      What did Xu Beihong do to redress this? He tried to infuse a kind of Western realism into his Chinese ink painting. He tried, in the words of his devoted wife, Liao Jingwen (now Director of the Xu Beihong Museum in Beijing), to relate the old and new, the East and the West (as if to exemplify two of Mao Ze Dong’s dicta, make ancient things serve the present and foreign things serve China). He certainly had the necessary virtuosity; he was an accomplished academic realist painter with long years of training in Paris and other European centres; and coming from a traditional painter’s family in China, he had commendable control over the techniques of ink painting. He tried to combine these skills. This, however, was not an easy thing to do; it was like riding two horses at the same time, for each of these methods of painting implied distinct ways of seeing which were not quite compatible. So, in the work of his mature years where he brought these styles together, the results were not always satisfactory. In his ink paintings the representations had too much flesh or body to surrender themselves to spatial interplay with the blank ground around; in his oil paintings they were two linear and intangible and had little chromatic palpability. However, some of his most impressive and memorable paintings fall doubtless into the former category. But even in these, that strange tension between object presence and calligraphic structure which is the reigning characteristic of all good Chinese painting is only rarely seen; in most cases he sacrifices the latter for the former. If we compare his large painting, ‘The foolish old man removes the mountain’ (incidentally, done in Santiniketan, using one of the cooks in the refectory as his model for the heavily built figures), to a T’ang mural frieze, for instance, ‘Figures in a cortège in the tomb of Li Xian’, this should be evident. The same thing happens in the work of quite a few of his followers and imitators (of whom there are many in present-day China); for instance, despite its crispness of brushwork and freshness of handling, the work of Jang Kiang, a close disciple, comes very near to resembling magazine illustration or fashion drawing.

      What is the reason for this? Xu Beihong was a thoughtful artist and had the right intensions; he wanted to release traditional Chinese painting from the stranglehold of mechanical convention and reanimate it through study and observation of nature. Unfortunately, he did not take serious notice of a basic difference between the Chinese calligraphic painter’s conception of form and space and that of the European academic realist’s. For a Chinese calligraphic painter, form is, as it were, a ripple in space; there is a flowing continuum between the space inside and the space outside, the space it enfolds and the space it is surrounded by. It is this flow and its ambivalence that give it its special rhythmic life. For a European realist painter, the object form is solid and tangible; space holds it or envelops it, but does not break into it. Even in a realist line drawing with the same kind of surface inside and outside the form, the implied solidity of the form resists such infiltration. This is what makes it hard for an artist to reconcile these two concepts. Xu Beihong was not unaware of it; he is said to have always cautioned his students against striving after thoughtless verisimilitude. But acquired habits of vision die hard. And each way of seeing leads to a certain way of doing.

      When the vision and the work-system of one style are radically different from those of another, their eclectic interactions can only be superficial. This is why the interaction of Chinese traditional painting and Western realist painting, though it had a long history (from about the middle of the sixteenth century to the end of the eighteenth), has never had salutary results. True, Chinese artists and art theorists talked about reality and naturalism all the time, but by these they meant different things from the European visual realist. These differences were, however, slurred over by the wave of interest in Western civilization that swept China towards the end of the nineteenth century. Besides, the optical illusionism of Western realist painting had a kind of hypnotic appeal that blurred the established value structures. We can see instances of these even in our art scene, though it was not as fundamentally different from the Western scene as the Far Eastern one.

      সুব্রহ্মণ্যন্‌-এর লেখা থেকে জানা গেল :

      ‘The foolish old man removes the mountain’ (incidentally, done in Santiniketan, using one of the cooks in the refectory as his model for the heavily built figures) …

      ধরে নেয়া যেতে পারে, বড়ো আকারের ওই ছবিটি আঁকা হয়েছিল শান্তিনিকেতনে ও দার্জিলিং-এ – সূচনা শান্তিনিকেতনে, সমাপ্তি দার্জিলিং-এ। একটি ওয়েবসাইটে পাচ্ছি :

      … completes the monumental Chinese painting “Yu Gong Moves the Mountain” in Darjeeling. China is experiencing difficulties at that time, and the work is intended to encourage the people to be strong, with a determined spirit like Yu Gong.

      সু পেইহোং-এর ‘বোকা বুড়োর পাহাড় সরানো’ ছবির সূত্রে মনে পড়ছে, অনেকদিন আগে মুক্তাঙ্গন-এ ছাপা হয়েছিল কোনো এক অর্বাচীন পদ্যরচয়িতার দীর্ঘ এক লেখা, মাও সে তুং-এর বক্তৃতার সরল রূপান্তর – ‘বোকা বুড়ো সরিয়েছিলেন পাহাড়’। ‘ছাপা হয়েছিল’ কথাটা অবশ্য ঠিক হলো না; আমাদের স্কুল/কলেজের সেই মুক্তাঙ্গন ছিল লিখিয়ে আর আঁকিয়েদের হাত মকশো করার জায়গা – হাতে-লেখা/আঁকা কাগজ বোর্ডপিন দিয়ে সেঁটে দেয়া হতো একটা সফ্‌ট্‌-বোর্ডে। তারই নাম ছিল মুক্তাঙ্গন। … সেই ফেলে-আসা মুক্তাঙ্গন-এর স্মরণেই এই ব্লগটির নাম রেখেছে রায়হান।

      • রশীদ আমিন - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৭:১৬ অপরাহ্ণ)

        অনেক অনেক ধন্যবাদ সুমন, আরো কিছু তথ্য পেলাম সু পেইহোং সম্পর্কিত। বিশেষ করে প্রাতঃস্মরণীয় কে. জি. সুব্রামানিয়ান-এর লেখা থেকে। নিসার ভাইয়ের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পেলাম, শান্তিনিকেতনে বিদেশী অতিথি নামে একটি বই আছে, তাতে শিল্পী সু সম্পর্কে কিছু তথ্য আছে। নিসার ভাই হয়তো প্রথম আলো-তে একটি প্রতিক্রিয়া লিখতে পারেন । এইভাবে নানাবিধ আলোচনার মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হতে পারে গবেষণার নতুন দিগন্ত।

        • রেজাউল করিম সুমন - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৮:২৬ অপরাহ্ণ)


          ধন্যবাদ, আমিন ভাই। নিসার হোসেন আপনার লেখাটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া লিখবেন জেনে ভালো লাগছে। তাঁর কাছ থেকে সু পেইহোং সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য ও তাঁর নিজস্ব মূল্যায়নও হয়তো পাব।

          শান্তিনিকেতনে বিদেশী অতিথি বইটি তাঁর সংগ্রহে আছে – এটা খুবই ভালো খবর। শান্তিনিকেতনের কলাভবনে ১৯২০-এর দশকের প্রথমার্ধের শিক্ষয়িত্রী স্টেলা ক্রামরিশ (পরে তিনি দীর্ঘকাল ‘ভারত-শিল্প’ বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে), মার্গারেট মিল্‌ওয়ার্ড, আঁদ্রে কার্প্‌ল্যাস-কে নিয়ে অল্প কিছু তথ্য পেয়েছি; সবচেয়ে কম জানতে পেরেছি মার্গারেট মিল্‌ওয়ার্ড সম্পর্কে। এ বই থেকে তাঁদের সম্পর্কে আরো জানা যাবে আশা করি।

          প্রবীরকুমার দেবনাথের রবিতীর্থে বিদেশী (বুক হোম, কলিকাতা: ১৩৯০ বঙ্গাব্দ) নামে একটা বইয়ের কথা শুনেছি, সে-বইটিও খুঁজে পাইনি এখনো। উল্লিখিত তিন শিল্পশিক্ষক এবং সু পেইহোং-এর কথা সে-বইটিতেও থাকতে পারে।


          কালিদাস নাগের কবির সঙ্গে একশো দিন (প্যাপিরাস, কলিকাতা : ১৩৯৪ বঙ্গাব্দ) বইটি নতুন করে পড়লাম। ২১ মার্চ থেকে ১ জুলাই ১৯২৪-এর এই দিনপঞ্জিতে রবীন্দ্রনাথের চীন ও জাপান ভ্রমণের অন্তরঙ্গ বিবরণ ও নানা প্রসঙ্গে তাঁদের একান্ত আলাপচারির উল্লেখ আছে। তাঁদের সঙ্গী ছিলেন নন্দলাল বসু। জানা গেল, সে-সময়ে ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিল কালিদাস নাগের ধারাবাহিক রচনা – ‘পুবের চিঠি’।

          কবির সঙ্গে একশো দিন-এ সু পেইহোং-এর উল্লেখ নেই। না থাকাই স্বাভাবিক। সে-সময়ে তিনি ফ্রান্সে ছিলেন। চীনা-জাপানি শিল্পীদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় ও কয়েকটি প্রদর্শনীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ আছে এই দিনপঞ্জিতে। ৩০ এপ্রিল তারিখের দিনলিপিতে রয়েছে কয়েক পৃষ্ঠা জোড়া শিল্প ও শিল্পী-প্রসঙ্গ। তারই সূচনাংশ :

          আজ প্রথম একদল প্রবীণ চীনা শিল্পীদের সঙ্গে আলাপ-প্রসঙ্গ হল : তাঁদের নতুন প্রদর্শনীতেই ১০টায় একত্র হওয়া এবং প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে নানা বিষয় আলোচনা ও পরে তাঁদের সঙ্গে ছবি দেখা – প্রথম যেন এঁদের শিল্পের মর্ম গ্রহণ করা গেল।

          Peking Morning Post
          -এর সম্পাদক Mr. Hwang Tsi-Mei আমাদের দোভাষী হয়ে বৃদ্ধ শিল্পী Yao-Hua (President of Four Arts College), Leng wen-Yuan [-এর সঙ্গে] আলাপের সুবিধা করে দিলেন এবং তিনজন প্রবীণ চিত্রকর তাঁদের শিষ্যসমেত উপস্থিত – তাঁদের মুখপাত্রস্বরূপ Mr. Wang Chi-Lin আমাদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে যেতে লাগলেন।

          প্রথমেই জানানো গেল যে চীন ও ভারতের শিল্পীদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপন ও প্রদর্শনী ইত্যাদির মধ্য দিয়ে আদানপ্রদানের ব্যবস্থা করাই আমাদের একান্ত ইচ্ছা। শুনে তাঁদের পূর্ণ সহানুভূতি তাঁরা জানালেন এবং তাঁদের নামধাম ইত্যাদি দেবেন জানালেন।

          শান্তিনিকেতনে চীনা-ভবন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যও ছিল ‘চীন ও ভারতের … মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপন’। সু পেইহোং ১৯৪০-এ এই চীনা-ভবনেই আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন।


          ‘তাং’ নয়, ‘থাং’। কিন্তু ‘মাও সে তুং’, না কি ‘মাও জে দং’? ‘পিকিং’, ‘পেইচিং’ আর ‘বেইজিং’ কি একই চীনা শব্দের উচ্চারণভেদ? আমরা যারা চীনা ভাষার বিন্দুবিসর্গও জানি না, তারা রোমান প্রতিবর্ণীকরণের অনুসরণে সবচেয়ে প্রচলিত উচ্চারণটাই নিশ্চয়ই বেছে নেব; কিন্তু আমিন ভাইয়ের কাছ থেকে প্রতির্বণীকরণে এই উচ্চারণ/বানান-ভিন্নতার রহস্যও জেনে নিতে ইচ্ছে করছে।

          সু পেইহোং-এর নাম বাংলায় নানা বানানে লেখা হয়, ইংরেজিতেও তা-ই। একটা ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারলাম, রোমান হরফে অন্তত তিনটি বানানে লেখা হয় আমাদের প্রিয় এই শিল্পীর নাম – P’eon Hsu, Hsu Pei-hung, Xu Beihong. ফ্রান্সে ও জার্মানিতে শিল্পশিক্ষা গ্রহণের সময়ে আঁকা ছবিগুলোতে শিল্পী স্বাক্ষর করতেন P’eon Hsu; ইউরোপের বিভিন্ন শিল্পসংগ্রহে তাঁর যেসব ছবি আছে সেগুলোতেও রয়েছে এই একই স্বাক্ষর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়ে ‘অফিসিয়াল ইংরেজি অনুবাদ’ (না কি প্রতিবর্ণীকরণ?) হিসেবে চালু হয় Hsu Pei-hung, ইওরোপ-আমেরিকায় কিছু কিছু প্রকাশনায় এখনো এই বানান ব্যবহৃত হয়। আর চীন গণপ্রজাতন্ত্রে প্রচলিত রোমান হরফের বানানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ প্রতিবর্ণীকরণ হলো Xu Beihong.

          বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের ‘চিত্রকর’-এ একশব্দে ‘Jupeon’ দেখে প্রথমে অবাক লেগেছিল। পরে মনে পড়েছিল, সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ‘চিত্রকর’ বইয়ের কোনো লেখাই তিনি নিজের হাতে লেখেননি; প্রথমে ‘এক্ষণ’ পত্রিকায় (১৩শ বর্ষ, ১-২ সংখ্যা, শারদীয় ১৩৮৪) প্রকাশিত ‘চিত্রকর’ লেখাটির শ্রুতলিপির দায়িত্বে ছিলেন রমিতা ঘোষ।


          সু পেইহোং স্মৃতি সংগ্রহশালায় কি ছবি তোলা যায়? মহাত্মা গান্ধীর স্কেচটির ছবি আমিন ভাই এখানে তুলে দিলে আমরাও দেখতে পেতাম!

          শিল্পীর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জিতে পড়লাম, ১৯৫১ সালে ‘বোকা বুড়োর পাহাড় সরানো’ ছবিটি নতুন করে আঁকার সময়ে সু পেইহোং মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে-ছবিটা কি শেষ করতে পেরেছিলেন তিনি? একই আখ্যান নিয়ে বিপ্লবের আগে ও পরে আঁকা ছবি দুটি পাশাপাশি রেখে দেখতে পারলে ভালো হতো!
          দ্বিতীয়বার শিল্পীর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় ১৯৫৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। তিন দিন পরেই তাঁর মৃত্যু হয় – ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা ৫২ মিনিটে। আজ তাঁর মৃত্যুদিন!

          • রেজাউল করিম সুমন - ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:৪০ অপরাহ্ণ)

            শুভময় ঘোষের শান্তিনিকেতনের চিঠি (বিশ্বভারতী, ১৪০৪ ব.) বইয়ের ১৯ মে ১৯৫৫ তারিখের চিঠিতে (পৃ ১৩১) আছে একটা ছোট্ট খবর :

            জু পেয়ঁ বহুদিন শান্তিনিকেতনের চীনাভবনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুদিবসে শান্তিনিকেতনের যাঁরা কলাভবনের সঙ্গে যুক্ত না হলেও শিল্পচর্চা করেন, তাঁদের চিত্র ও হাতের কাজের প্রদর্শনী হয়।

            একটা ব্যাপার স্পষ্ট হলো না। সু পেইহোং-এর মৃত্যুদিবস যদি ২৬ সেপ্টেম্বর হয় তাহলে সে-দিবসে আয়োজিত প্রদর্শনীর খবর মে মাসের চিঠিতে কেন!

          • রশীদ আমিন - ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৬:১৬ অপরাহ্ণ)

            সুমন, তোমার নতুন নতুন তথ্যের উপস্থাপনায় সত্যি মুগ্ধ হচ্ছি। বলতে দ্বিধা নাই যে, অনেক কিছুই জানতাম না, তোমার এই মন্তব্য থেকে আমিও সমৃদ্ধ হচ্ছি। ২৬ তারিখে শিল্পীর মৃত্যদিবস ছিল, তবে আমাদের দেশের মতো মৃত্যুদিবসগুলোকে খুব আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে যে পালন করে তা চোখে পড়েনি। উচ্চারণ-বিভ্রাট নিয়ে যা বলেছো যুক্তিযুক্ত। রোমান উচ্চারণের সাথে বেশ পার্থক্য আছে, যেমন B-কে পি উচ্চারণ করে, D-কে তি,T-কে থি, Q-কে ছি (একটু জিহ্বার তলদেশে চাপ দিতে হয়), Z-কে জ্, S-কে স্ (জিহ্বার তলদেশে চাপ দিতে হয়), G-কে ক, K-কে খ উচ্চারণ করে। আসলে চীনা ভাষার স্বাতন্ত্র্য এত বেশী যে একে অন্য কোনো ভাষার বর্ণমালার উচ্চারণের ছকে ফেলাটা একটু মুশকিল। বেইজিং আসলে পেইচিং হবে, রেডিও পিকিং-এ পেইচিং বলে, তবে চীনারা যেটা উচ্চারণ করে তা প এবং ব-এর মাঝখানে, এবং ধীরে ধীরে বেইজিং উচ্চারণই বেশী শোনা যাচ্ছে, হয়তো ইংরেজী ভাষার প্রভাবে। আমি বেইজিং ব্যবহার করি, তার কারণ আমাদের দেশে এটাই প্রতিষ্ঠিত আর ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী এবং খোদ চীনদেশেও বেইজিং উচ্চারণটিই প্রচলিত হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং পেইচিং শব্দটা দ্বিধার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। sorry, ছোটখাটো একটা ভাষার ক্লাস নিয়ে ফেললাম।

            সু পেইহোং মিউজিয়ামে এখন ছবি তুলতে দেয় না। গান্ধীর যে-ছবিটা আছে সেটি কালি-কলমের স্কেচ, অনেকটা স্টাডি ধরনের। আমি চেষ্টা করবো ছবি তুলতে, পরে যখন যাব। আশা করি তোমার কাছ থেকে আরো তথ্য পাব এই মহান শিল্পী সম্পর্কে।

  9. অবিশ্রুত - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:৩৪ অপরাহ্ণ)

    চীনাদের ব্যক্তিত্বপ্রিয়তার তালিকায় দ্বাদশ স্থানে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেখুন এই লিংকটিতে
    আর কামরুল হাসানের খেরোখাতাটি যতদূর মনে পড়ছে, সচিত্র সন্ধানীর কোনও এক ঈদসংখ্যায় ছাপা হয়েছিল।

  10. রশীদ আমিন - ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ)

    @ মুয়িন … আমি অনেক দিন সেং হুয়ার সাক্ষাৎ পাচ্ছি না, সে এ বছরই গ্র্যাজুয়েট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছেড়েছে, তবে দেখা হলে অবশ্যই আপনার আমন্ত্রণ জানিয়ে দেব।

    @ অবিশ্রুত … সরকারিভাবে রবীন্দ্রনাথের মুল্যায়ন নিশ্চয়ই আমাদের জন্য গর্বের বিষয়, তবে একটি বিষয় — অধিকাংশ চীনাই জানে না তিনি বাংলা ভাষার কবি। অনেক মনে করেন তিনি লিখেছেন হিন্দি ভাষায়, কেউ-বা মনে করেন বাংলা ভাষায়।

    সচিত্র সন্ধানী-তে প্রকাশিত হওয়া কামরুল হাসানের খেরোখাতা আমিও পড়েছি, এটি একটি অংশ মাত্র। সম্প্রতি শিল্পীর অনুজ ৪০টি খেরোখাতা শিল্পীকন্যা সুমনার কাছে তুলে দিয়েছেন, আমি এই প্রসঙ্গটিই তুলে ধরতে চেয়েছিলাম।

    • রশীদ আমিন - ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৬:৩৫ অপরাহ্ণ)

      আরেকটি বিষয় সুমন, সু পেইহোং-এর নামের বানানের বিভ্রাটের কারণ হচ্ছে চীনদেশের লোকাল ডায়ালেক্ট; যেমন, বেইজিংবাসী যে-ভাষায় কথা বলে, সাংহাইয়ের উচ্চারণ তার চেয়ে একেবারেই আলাদা, আর ক্যান্টনিজ ডায়ালেক্ট তো পুরো আলাদা একটি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। যদিও চীনা স্ট্যান্ডার্ড ভাষায় সবাই কথা বলতে পারে।

      • রেজাউল করিম সুমন - ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:৪৭ অপরাহ্ণ)

        আমিন ভাই, ‘ভাষার ক্লাস’-এর জন্য কিন্তু সত্যিই কৃতজ্ঞ রইলাম। বোঝা গেল কেন বাংলা-ইংরেজিতে চৈনিক ব্যক্তি- ও স্থান-নাম অনেকক্ষেত্রে একাধিক বানানে লেখা হয়। চীনের নানা অঞ্চলের উপভাষার পার্থক্যের বিষয়টিও জানা হলো। ধন্যবাদ আবারও।

        সু পেইহোং সম্পর্কে প্রথম জেনেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে দেশ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ পড়ে। আপনার এই পোস্ট পড়ার আগে শিল্পীর এতগুলো ছবি আমি একসঙ্গে দেখিনি। এই লেখাটি সু পেইহোং সম্পর্কে আরো জানতে উৎসাহিত করেছে আমাকে।

        • রশীদ আমিন - ১ অক্টোবর ২০০৯ (১২:৩২ অপরাহ্ণ)

          অবাক ব্যাপার – দেশ পত্রিকার ঐ সংখ্যাটি আমিও পড়েছিলাম, এবং সু পেইহোং-এর উপর লেখাটি খুবই সুলিখিত। তোমার কাছে আছে নাকি সংখ্যাটি, সুমন?

          • রেজাউল করিম সুমন - ৩ অক্টোবর ২০০৯ (৫:৪২ অপরাহ্ণ)

            সু পেইহোং-এর ছবির লোভে সংখ্যাটি দু-বার কিনেছিলাম, অনেককাল আগে, পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে। অনেকদিন হাতে পড়েনি। খুঁজেও পাওয়া গেল না। অবশ্য ‘দেশ’গুলো একজায়গায় গোছানো নেই। পেলে আপনাকে জানাব।

  11. রেজাউল করিম সুমন - ৩০ ডিসেম্বর ২০০৯ (৭:১০ অপরাহ্ণ)

    সু পেইহোং-কে নিয়ে দেশ-এর ওই প্রবন্ধ এখনো খুঁজে পাইনি; তবে ক’দিন আগে অন্য একটা প্রয়োজনে পুরোনো প্রতিক্ষণ-এর পাতা ওলটাতে গিয়ে তৃতীয় বর্ষ পঞ্চদশ সংখ্যায় (২-১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬) পেয়ে গেলাম তাঁর প্রদর্শনীর রিভিউ (পৃ ৮০-৮১)! দেশ-এর লেখাটিও হয়তো কাছাকাছি সময়েই প্রকাশিত হয়ে থাকবে।

    প্রতিক্ষণ-এ মৃণাল ঘোষের রিভিউ থেকে জানা গেল, বেইজিং-এর চায়না এক্সিবিশন এজেন্সির সহযোগিতায় দিল্লির ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট সু পেইহোং-এর প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছিল। কলকাতায় প্রদর্শনী হয়েছিল ভারতীয় জাদুঘরের আশুতোষ হল-এ, ২৯ ডিসেম্বর ১৯৮৫ থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৮৬ পর্যন্ত। শিল্পীর সব শ্রেষ্ঠ কাজ না এলেও দেখার সুযোগ মিলেছিল ১৯১৮ থেকে ১৯৪৭ – তিন দশক ব্যাপ্ত সময়ে আঁকা প্রায় ৭০টি ছবি। সেদিক থেকে প্রদর্শনীটির মধ্যে পূর্বাপরতার চরিত্র ছিল।

    ‘শব্দহীন কবিতা : জুঁ পিঁও-র ছবি’ শিরোনামের দেড় পাতার রিভিউটির (পৃ ৮০-৮১) অংশবিশেষ :

    জুঁ পিঁও আধুনিক চীনের একজন বড় মাপের শিল্পী। এতটাই বড় মাপের যে ১৯৫৩ সালে তাঁর মৃত্যুর পর চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাঁর বাড়িটিকে ‘জুঁ পিঁও মিউজিয়মে’ পরিণত করেন। নয় বছর বয়সে তাঁর পিতার কাছেই শুরু হয় তাঁর শিল্পশিক্ষা। ১৯১৭-তে তিনি জাপান যান শিল্পশিক্ষার জন্য। ১৯১৯-এ যান প্যারিস, সেখানে ন্যাশনাল আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তী জীবনে ইওরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশে ভ্রমণ করেন ও প্রদর্শনী করেন। ১৯৩৯-এ রবীন্দ্রনাথের নিমন্ত্রণে শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। কয়েকমাস কাটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে। ১৯৪০-এ প্রদর্শনী করেছেন শান্তিনিকেতন ও কলকাতায়। সেই প্রদর্শনীর মুখবন্ধে (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০) রবীন্দ্রনাথ যে ভাষায় শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন তাঁর প্রতি, তাঁর মূল্যায়নে তা গভীর অর্থবহ। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “In rhythmic line and colour, China’s great artist Ju Pion has offered an immemorial vision without sacrificing the regional and the unique which have met in his own experience”। এই সূত্রেই জুঁ পিঁও আমাদের দেশে সুপরিচিত। একসময় তাঁর ছবি, বিশেষত তাঁর ঘোড়ার ছবি, আমাদের বাংলা ভাষার কবিদের উদ্বুদ্ধ করেছে কবিতা রচনায়।

    জীবনভর সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছেন জুঁ পিঁও। যেখানেই গেছেন ছাত্রের নিষ্ঠায় আয়ত্ত করতে চেষ্টা করেছেন সেখানকার চিত্রশৈলী। পাশ্চাত্য শৈলীতে তাঁর দক্ষতা যে কোনো বড় মাপের পাশ্চাত্য শিল্পীর সঙ্গেই তুলনীয়। ভারতে যখন এসেছেন তাঁর ছবির রেখায় ফুটে উঠেছে ভারতীয়তার সূক্ষ্ম আদল। যে আদলে সমৃদ্ধ হয়েছে মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ, নন্দলাল বা প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের মুখাবয়বগুলি। কিন্তু বৈদেশিক রীতির এই সমস্ত সঞ্চয় তাঁকে ভাসিয়ে নিতে পারে নি কখনো। পাশাপাশি চৈনিক রীতির ছবিতে কাজ করেছেন যখন, তখন মনে হয়, বিশুদ্ধ সনাতন চৈনিক শিল্পীই তিনি। কিন্তু সংস্কারাবদ্ধ নন। বাইরের অর্জনকে তিনি দেশীয় রীতিতে যে ভাবে ব্যবহার করেছেন, এবং সেই ব্যবহারে যে ভাবে মাত্রাযুক্ত করে তুলতে পেরেছেন তাকে, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব সেখানেই। এবং হয়ত এই দার্শনিক-সুলভ সংযত গ্রহণের মধ্যেই নিহিত আছে চৈনিক চিত্রকলার আধুনিকতায় তাঁর অবদান।

    … চীনের চিত্রকলাকে বলা হয় শব্দহীন কবিতা। জুঁ পিঁও সেই নিঃশব্দ কাব্যে আধুনিকতার নতুন মাত্রা এনেছেন।

    এ লেখায় দুটো কৌতূহলোদ্দীপক তথ্য পাওয়া গেল :
    (ক) ‘একসময় তাঁর ছবি, বিশেষত তাঁর ঘোড়ার ছবি, আমাদের বাংলা ভাষার কবিদের উদ্বুদ্ধ করেছে কবিতা রচনায়।’ বিস্তারিত জানতে পারলে ভালো লাগত।
    (খ) কেবল রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মা গান্ধীরই নয়, ভারতে থাকাকালে আরো কয়েকজনের প্রতিকৃতিও এঁকেছিলেন সু পেইহোং। উদ্ধৃতাংশ থেকে জানা গেল নন্দলাল বসু, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের মুখাবয়বের কথা।

    গত পরশুদিন আরো কিছু তথ্য পেলাম অধ্যাপক কে. জি. সুব্রহ্মণ্যন্-এর কাছ থেকে! বেইজিং-এর সু পেইহোং স্মৃতি সংগ্রহশালায় তিনি গিয়েছিলেন! (তাঁর মতে, কলাভবনের সংগ্রহে পেইহোং-এ যে-অল্প কয়েকটি কাজ আছে তার মধ্যে ২/৩টি শিল্পীর সেরা ছবিগুলোর অন্যতম।) পেইহোং-এর দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয় এবং তিনি শান্তিনিকেতনে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন – কারণ এখানেই পেইহোং প্রথম আন্তরিক সমাদর পেয়েছিলেন। ভদ্রমহিলা পরে শান্তিনিকতনে আসেনও। সে-সময়কার কথাও জানা গেল। তখনই সু পেইহোং-এর প্রদর্শনীও হয় ভারতে (দ্র. মৃণাল ঘোষের রিভিউ)।

    তবে একটা কথা জেনে বেশ অবাক লাগল – সু পেইহোং কলাভবনের সঙ্গে যোগাযোগের আগ্রহ বোধ করেননি, যদিও উঠেছিলেন শান্তিনিকেতনেই, চীনাভবনে! বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকেই পেইহোং-এর শান্তিনিকেতন-পর্ব সম্পর্কে জেনেছিলেন সুব্রহ্মণ্যন্। তিনি নিজে তো কলাভবনে ভর্তি হয়েছিল সু পেইহোং-এর ভারত ভ্রমণের বছর চারেক পরে – ১৯৪৪-এ।

  12. মুয়িন পার্ভেজ - ২ জানুয়ারি ২০১০ (১:০৩ পূর্বাহ্ণ)

    রেজাউল করিম সুমন

    অনেক ধন্যবাদ। অধ্যাপক কে. জি. সুব্রহ্মণ্যন্-এর সৌজন্যে কিছু নতুন তথ্য পাওয়া গেল সু পেইহোং সম্পর্কে। সুব্রহ্মণ্যন্ চট্টগ্রাম এসেছিলেন সেদিন; শিল্পকলা একাডেমীতে গেলে হয়তো দেখতে পেতাম তাঁকে। প্রায় কিছুই জানি না নাম ছাড়া — তাঁর (সুব্রহ্মণ্যন্) একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পেলে উপকৃত হব।

    • রেজাউল করিম সুমন - ২ জানুয়ারি ২০১০ (১১:১০ পূর্বাহ্ণ)

      চট্টগ্রামের শিল্পীরা কল্পাতি গণপতি সুব্রহ্মণ্যন্-এর সম্মানে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নবনির্মিত প্রদর্শনীকক্ষে একটি যৌথ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। এছাড়াও তাঁকে দেখানো হয়েছিল চট্টগ্রামের নির্বাচিত শিল্পীদের ছবির স্লাইড। একটা প্রশ্নোত্তর পর্বও ছিল। আর ছিল সুব্রহ্মণ্যন্-এর কয়েকশো শিল্পকর্মের স্লাইড দেখার দুর্লভ এক সুযোগ।

      আজ (২ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় তাঁর একটা বক্তৃতা আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হল-এ। আমিন ভাইও বেইজিং থেকে একটু আগেভাগে চলে এসেছেন ঢাকায়; গতকাল দেখাও হলো তাঁর সঙ্গে — ঢাকা আর্ট সেন্টারে (১০১ শিল্পীর একটা ক্যাম্প চলছে সেখানে)। রাতে সেখানে শুনলাম শাহাদাত হোসেন খানের সরোদ বাদন। সুব্রহ্মণ্যন্ ও তাঁর কন্যাও উপস্থিত ছিলেন।

      কে. জি. সুব্রহ্মণ্যন্-এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি আছে এমন কয়েকটি ওয়েবপেইজ : , , । তাঁর একটি প্রদর্শনীর রিভিউ পড়া যাবে এখানে

  13. রেজাউল করিম সুমন - ১ অক্টোবর ২০১৪ (১২:১৬ অপরাহ্ণ)

    রানী চন্দের স্মৃতিকথা সব হতে আপন (প্রথম প্রকাশ ২৫ বৈশাখ ১৩৯১, সংস্করণ ১৪০১, পুনর্মুদ্রণ আশ্বিন ১৪১৭) বইয়ে পাওয়া গেল সু পেইহোংকে (জ্যুঁ পিও) নিয়ে তাঁর অন্তরঙ্গ স্মৃতিচারণ (পৃষ্ঠা ১৩৭-১৩৯):

    তখনকার দিনের চীনদেশের শ্রেষ্ঠ শিল্পী জ্যুঁ পিও এলেন শান্তিনিকেতনে। অনেকদিন ছিলেন। প্রফেসর তানের বন্ধু। থাকতেন চীনভবনেই, নামেই শুধু থাকতেন সেখানে; বেশির ভাগ সময় কাটাতেন আমাদের কাছে। প্রিয়দর্শন — প্রিয়ভাষী পুরুষ, সমধুর ব্যবহার। প্যারিসে ছিলেন অনেকদিন, ফরাসী ভাষা জানেন — ইংরাজি নয়। আমার স্বামীর সঙ্গে তাঁর কথার আদানপ্রদান হয়, আমার সঙ্গে হয় হাসির বিনিময়।

    জ্যুঁ পিও ছবি আঁকেন, আমি দেখি। তাঁর টেকনিক দেখান বোঝান আমাকে। আমি ছবি আঁকি, জ্যুঁ পিও বসে থাকেন পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বড়ো ছবি আঁকতে গেলে আমার মেঝেতে ছবির কাগজ মাউন্ট করে নিতাম। অত বড়ো বোর্ড — ইজেলের ব্যবস্থা ছিল না আমাদের। মেঝের উপর বসেই ছবি আঁকতাম, জ্যুঁ পিও মেঝেতেই বসতেন। আমরা করতাম টেম্পারা পেন্টিং; জ্যুঁ পিও করতেন অয়েলে, আর কালি দিয়ে তুলির টানে। দেখে মনে হত — আমরাও বুঝি বা পারি এই রকম আঁকতে; কিন্তু ঐ একটি টান যে কতদিনের সাধনার ফল — তা তো জানি।

    জ্যুঁ পিও গাছ লতা ফুল মানুষ আকাশ — সব-কিছুই দু চোখ মেলে দেখতেন, কেবল দেখতেন। কত যে দেখতেন, তাঁর সেই দেখা দেখে ভাবতাম আমিও যদি তাঁর মতো করে দেখতে জানতাম। কোনার্কে আমাদের বাড়ির সামনে যে শিমুল গাছ ছিল — অফুরন্ত ফুল ফুটত; জ্যুঁ পিও ভোর না হতে শিমুল গাছের তলায় এসে দাঁড়াতেন। আমরা সকালে উঠে দরজা খুলেই দেখতাম এ দৃশ্য। জ্যুঁ পিও একটি-একটি করে শিমুল ফুল কুড়িয়ে বাঁ হাতে জমাতেন। বাঁ হাতের মুঠি ভরে যেত ঘন টুকটুকে লাল ফুলে। অনেকক্ষণ সেই ফুলগুলি ঐভাবে ধরে থাকতেন। দেখতেন। শেষে একসময়ে তলায় ছিটিয়ে দিয়ে ঘরে চলে আসতেন। আমরা একসঙ্গে প্রাতরাশ করতাম।

    না-বলার মধ্যেই জ্যুঁ পিওর সঙ্গে একটা যেন বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছিল — সকালে আর দুপুরে আমাদের সঙ্গেই খেয়ে নিতেন। এমন হল যে, পরে আর মনেই হত না — তিনি আমাদের পরিবারের একজন নন। সহজ ভাবেই মিশে অতি সহজে আপনার হয়ে গিয়েছিলেন। কতদিন এমন হয়েছে — আমি কলাভবন থেকে এসেছি, এগারোটা বেজেছে, দুপুরের ছুটির ঘণ্টা পড়েছে, দেখি, ভিতরের ঘরে মেঝের উপর বসে শিশু, অতিশিশু আমার অভিজিৎকে জ্যুঁ পিও ছবি এঁকে এঁকে খেলা দিচ্ছেন। তুলির দরকার পড়ে নি, রঙের বাক্সয় একটু জল দিয়ে আঙুলে করে রঙ নিয়ে আঙুল দিয়েই কাগজে ছবি এঁকে দেখাচ্ছেন অভিজিৎকে। কখনো বা নখ দিয়ে সরু লাইন টেনে চোখ নাক ফোটাচ্ছেন। অভিজিৎ দেখে দেখে বলে উঠছে, পা-খি। জ্যুঁ পিও খুব খুশি। অভিজিৎ বলছে, কুকু-র। জ্যুঁ পিও আরো খুশি। এমনিভাবে গাছ ফুল — কাগজের পর কাগজ এঁকে যাচ্ছেন, আর অভিজিৎ উপুড় হয়ে দেখছে। এই ছবির কয়েকখানা এখনো আছে আমার কাছে।

    জ্যুঁ পিও শান্তিনিকেতনের কত ছবিই-না এঁকেছিলেন। গান্ধীজী এসেছিলেন — তাঁর স্কেচ করলেন, গুরুদেবের করলেন। শালবীথি আমলকীবীথির ছবি আঁকলেন। রান্নাঘরে একজন খুব মোটা আর প্রকাণ্ড ভুঁড়িওয়ালা ঠাকুর ছিল, তার ছবি আঁকলেন। আমারও এঁকেছিলেন।

    চীনে যখন গেলাম তখন জ্যুঁ পিও আর ছিলেন না। মস্ত বাড়ি, আঙিনার পর আঙিনা ঘিরে ঘরগুলি সব জ্যুঁ পিওর ছবি আর স্মৃতি দিয়ে সাজানো। সরকার থেকেই খরচপত্র করে সাজিয়ে রেখেছে সব। তাঁর স্ত্রী দেখালো জ্যুঁ পিওর ছাপানো ছবির অ্যালবাম — দেশে গিয়ে এখানকার ছবি দিয়ে অ্যালবাম বের করেছিলেন। অ্যালবামের ছবিগুলি দেখে দেখে আশ্রমের সেই দৃশ্যগুলি মনে পড়তে লাগল, বলে উঠলাম, এই তো সেই পারুলডাঙায় যাবার পথ, এই তো আমাদের বৈতালিকের দল।

    শান্তিনিকেতন থেকে জ্যুঁ পিও একবার কলকাতায় এলেন কয়েকদিনের জন্য। সারাদিন কেবল চিড়িয়াখানায় কাটালেন। আশ্রমে ফিরে এসে আমাকে বললেন, একটা বড়ো আকারের সিল্ক মাউন্ট করে দিতে — ছবি আঁকবেন। তৈরিই ছিল মাউন্টটা ঘরে, জ্যুঁ পিও অনেকখানি চাইনিজ ইঙ্ক গুলে মোটা তুলি দিয়ে আধঘণ্টার মধ্যে এঁকে ফেললেন — প্রকাণ্ড একটা ঈগল পাখি। কী তার চোখ, শ্যেন দৃষ্টি যাকে বলে। বুঝলাম চিড়িয়াখানায় এই পাখিটিই দেখতে গিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন — ঈগলের চোখ দুটিই দেখতে। আঁকা হয়ে গেলে ছবিটি আমাকে দিলেন।

    দেশে ফিরে যাবার দিন ঘনিয়ে এল। আমি শ্যামলীর একখানা বড়ো ছবি এঁকেছিলাম — টেম্পারায়, কলকাতায় একজিবিশনে দিয়েছিলাম, জ্যুঁ পিও দেখেছেন। বললেন, আমাকে ঐ ছবিখানা দাও। আর আমি তোমাকে শিমুল ফুলের একটি ছবি পাঠাব, সিঙ্গাপুরে আমার এক বন্ধু আমার চেয়ে ভালো শিমুল ফুলের ছবি আঁকতে পারে — তার আঁকা ছবিই পাঠাব।

    মাসখানেকের মধ্যেই পেয়েছিলাম সেই ছবি।

    আজও মনে হয় জ্যুঁ পিওর কথা, মনে হয় যেন সেই বয়সেরই আছেন এখনো, দূরে আছেন এই যা।

    • রশীদ আমিন - ২ অক্টোবর ২০১৪ (৫:১৫ অপরাহ্ণ)

      খুব ভালো! সুমন। চীনারা হয়তো এই লেখাটি সম্পর্কে জানে না, তাহলে পেইহোং এর শান্তিনিকেতন-বাসের ব্যাপারে আরো তথ্য যুক্ত হতো।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.