আমাদের এই সময়টাকে সবদিক দিয়ে সর্বার্থে জড়িয়ে আছেন তিনি। তাঁরই কথায়, ‘শিকড় দিয়ে আঁকড়ে’ আছেন। তাই কবি শঙ্খ ঘোষ-এর কোনও বিশেষ পরিচয় হয় না। তাঁর অস্তিত্বই তাঁর পরিচয়। বাংল কবিতায় প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি তৈরি করে নিয়েছেন এমন এক পথ, যে-পথে স্বল্প যাত্রী, যে-পথে সামান্য আলো জ্বলে। সমালোচনায় নিয়ে এসেছেন সর্বজনবোধ্য এক জ্ঞানচর্চার দিশা, সংক্রামকভাবে বারবার সাড়া দিয়েছেন সংকট সময়ে। এই কবির সঙ্গে কথা বলেছেন সুমন্ত মুখোপাধ্যায়। লেখার কথা, জীবনের কথা, ঘরের আর বাইরের কথা। [...]

[বইয়ের দেশ (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০০৯) থেকে সংকলিত] সকলেই একটা আশ্রয়ের কথা ভাবছে আমাদের এই সময়টাকে সবদিক দিয়ে সর্বার্থে জড়িয়ে আছেন তিনি। তাঁরই কথায়, ‘শিকড় দিয়ে আঁকড়ে’ আছেন। তাই কবি শঙ্খ ঘোষ-এর কোনও বিশেষ পরিচয় হয় না। তাঁর অস্তিত্বই তাঁর পরিচয়। বাংল কবিতায় প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি তৈরি করে নিয়েছেন এমন এক পথ, যে-পথে স্বল্প যাত্রী, যে-পথে সামান্য আলো জ্বলে। সমালোচনায় নিয়ে এসেছেন সর্বজনবোধ্য এক জ্ঞানচর্চার দিশা, সংক্রামকভাবে বারবার সাড়া দিয়েছেন সংকট সময়ে। এই কবির সঙ্গে কথা বলেছেন সুমন্ত মুখোপাধ্যায়। লেখার কথা, জীবনের কথা, ঘরের আর বাইরের কথা। . . . সুমন্ত : বেশির ভাগ কবি বা লেখকেরই তো লেখা শুরুর সময়ে আটপ্রহরের লেখকবন্ধুরা এসে যায়, একসঙ্গে তারা লেখে, তর্ক করে, লেখা ছাপতে দেয়, তারপর একদিন যে যার পথে চলতে থাকে। আপনার ক্ষেত্রেও কি তেমন হয়েছিল? শঙ্খ : তেমন কোনো লেখকবন্ধুর দল? না, শুরু করবার দিনগুলিতে একেবারেই হয়নি সেটা। এ-ব্যাপারে একটু লুকিয়ে-থাকা স্বভাবই ছিল আমার। ভরসা করে কাউকে দেখাব লেখা, আবার তা নিয়ে তর্কও করব, এতটা উদ্যম ছিল না, সাহসও ছিল না। প্র : তাহলে, একেবারে শুরুতে কাদের কাছ থেকে উৎসাহ পেতেন? কাউকে-না-কাউকে তো দেখিয়েছেন? উ : স্কুলজীবনে বা কলেজজীবনের একেবারে গোড়ায় খুব ঘনিষ্ঠ দু’-একজন বন্ধু – নিজেরা যারা লিখত না – তেমন কাউকে পড়িয়েছি কখনও। তারা যে কেবল উৎসাহ দিত তা নয়, তারও চেয়ে বেশি, বাড়তি একটু বাহবাই দিত। এমনকী ছাপাবার জন্যও পীড়াপীড়ি করত। প্র : গোড়ার দিকে তিনটে কবিতার খাতা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন কেন তবে? এইরকম একটা কথা পড়েছি কোথাও। উ : হ্যাঁ, বলেছি কিছুদিন আগে। হস্টেলের এক বন্ধুর সঙ্গে একটু মান-অভিমানের ঘটনা ছিল সেটা। ও পড়েছিল কবিতা, কিন্তু সেটা আবার রটিয়েও দিয়েছিল। সবাইকে ও জানিয়ে দিল কেন? এই অভিমান থেকে কাণ্ডটা। ছেলেমানুষিই হয়েছিল। অবশ্য ছেলেমানুষই তো ছিলাম তখন। ষোলো বছর বয়সের ঘটনা ওটা। প্র : কোন হস্টেল? রামকৃষ্ণ মিশনের? উ : রামকৃষ্ণ মিশনের। এখন বেলঘরিয়াতে প্রকাণ্ড জায়গা জুড়ে যে রামকৃষ্ণ মিশন স্টুডেন্টস হোম, খুবই ছোট চেহারায় সেটা তখন – মানে দেশভাগের সময়টায় – ছিল মানিকতলার হরিনাথ দে রোডে। সেখানে কাটিয়েছি দু’বছর। বেশ নতুন রকমের অভিজ্ঞতা ছিল সেটা। প্র :…

চারটে প্যারায় মুল কবিতাটি। প্রথম স্তবকে চারলাইন। দ্বিতীয় স্তবকে ছয় লাইন। তৃতীয় স্তবকে পাঁচ লাইন। এবং চতুর্থ স্তবকে তথা শেষ স্তবকে মাত্র দুটি লাইন। প্রথম যখন কবিতাটি পড়ে আনন্দ পাই তখন আমি ভাবতে চেয়েছি কবিতাটি কি কি কারণে আমাকে আনন্দ দিয়েছে। আর আমি বার বার পড়েছি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে [...]

এইতো শোবার ঘর। অনুগ্র আলোর নীচে ঘুম, পেছনে র্নদমা আর তার পাশে ভেজা কালো মাটি- বাদাম গাছের ছায়া , নতুন কবর। প্রতি ভোরে আমিও নিজের কবর থেকে উঠে মশারি গুছিয়ে রাখি, দাঁত মাজি, ব্রেকফাষ্ট সারি ... পত্রিকার শিরোনামে দু'চোখ বুলিয়ে নেমে যাই ছাগবিষ্ঠাময় সিঁড়ি বেয়ে সন্তর্পনে পাতালের দিকে! বিকেলে অফিস ছুটি । যানজট। পায়ে হেঁটে বন্ধুর বাসায় । ফিরে আসি রাত দশটায় খাবার টেবিলে মাছি, আরশোলা, ঠান্ডা পাউরুটি। অনুগ্র আলোর নীচে আমার শোবার ঘর, আবার সকালে বেঁচে উঠা। ..................... প্রথম যখন কবিতাটি পড়ে আনন্দ পাই তখন আমি ভাবতে চেয়েছি কবিতাটি কি কি কারণে আমাকে আনন্দ দিয়েছে। আর আমি বার বার পড়েছি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে । মনে হয়েছে তিনটে কারণে কবিতাটি আমাকে আনন্দিত করেছে। ১. বাহুল্যহীনতা, ২. প্রচলিত শব্দ ব্যবহার ৩. র্দশনকেন্দ্রিক স্থিরতা ও সামঞ্জস্যপূর্ণ গ্রন্থনা। চারটে প্যারায় মুল কবিতাটি বিভক্ত। প্রথম স্তবকে চারলাইন। দ্বিতীয় স্তবকে ছয় লাইন। তৃতীয় স্তবকে পাঁচ লাইন। এবং চতুর্থ স্তবকে তথা শেষ স্তবকে মাত্র দুটি লাইন। আমার সবসময় মনে হয়েছে একজন কবি যখন একটা কবিতা লেখার জন্য তৈরী হয়েছেন তখন সে অনুপ্রেরণা কিংবা যে ঘটনার দ্বারা সে নিজের বোধের শব্দের জন্য কিংবা বাক্য তৈরীর জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন তখন সে সংকেতটা তার সমগ্র স্মৃতির ওপর প্রতিফলিত হয়। এবং হতে পারে পাঠকেরও । ফলে কোন লাইনে তার জীবনের কোন দৃশ্যটা তৈরী হচ্ছে সেটা সম্ভবত জানা কবির পক্ষেও দুঃসাধ্য। আমার মনে হয়না কবি দীর্ঘক্ষণ এই জটিল যন্ত্রনার মধ্যে থাকতে পারেন। হতে পারে এটা কোন উপন্যাসিকের ক্ষেত্রেও। ফকনার একবার বলেছিলেন 'লেখা হয়ে যাবার পর বইটা পাঠকের । পাঠক বইটার ভেতর নিজেকে পেলে সে সেটা গ্রহণ করে। আর এজন্য লেখকের সময়-জ্ঞানটা এত জরুরী; লেখককে আমি সবসময় পাঠকের চেয়ে সময় সম্পর্কে প্রাগ্রসর বলে মনে করি। এ জন্য তাকে তিনচোখা বলা যায়। যে কোনো বিপর্যয় যে কোনো সৌন্দর্য্য-চেতনা যে কোনো আঘাত সাধারণের বহু আগেই সে অনুভব করতে পারে । তা নাহলে লেখার জন্য যন্ত্রনাটা সে কোত্থেকে পাবে। পুরো কবিতাটা পড়ার পর আমরা প্রাত্যহিকতা সম্পর্কে নতুন এক অনুভব পাই। একজন নগর ক্লান্ত মানুষকেই দেখি যার জীবন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। জীবিত ও…

১৮ জুলাই বা দোসরা শ্রাবণ থেকে বিষ্ণু দে তাঁর আয়ুর দ্বিতীয় শতকে পা দিলেন। এখন থেকে তাঁর বয়সের হিসেব হবে শতক দিয়ে। এখন থেকে তাঁর জন্মদিনের উৎসব কর্তব্যকর্মের কর্মসূচির বাইরে চলে যাবে। হয়ত আরও ছড়িয়ে যাবে সেই জন্মদিন পালন। আমরা যেমন অপক্ষোয় থাকি তিন-চার শতক বা সহস্রক পূর্তিতে কোনও মহাশিল্পীর সঙ্গে আমাদের আত্মীয়তা গড়তে। ততদিনে তাঁরা নিজের ভাষার ও দেশের সীমা ও সময়ের সীমা পেরিয়ে মানব সভ্যতার মাইলফলক হয়ে যান। সেই ফলকগুলি দিয়ে আমরা মানব সভ্যতার বাঁকগুলি চিনে নিতে চাই। বাঁক ও পথ [...]

ওরকম আমারও ঘটেছে, যখন গায়ক নিজে অথবা গায়িকা হ’য়ে ওঠে গান কথা সুর, আর শ্রোতা হয়ে যায় অধরা সে গানের বিষয়, আধেয় আধার একাকার শরীর ও অশরীরী প্রাণ; তখন মুহূর্তে ধুয়ে যায় অসমাপ্ত বর্তমান সমস্ত জঞ্জাল। একবার মনে আছে একটি টপ্পার মধ্যে উদভাসিত হয়েছিল আসমুদ্রহিমালয় প্রাচীন বিশাল ভারতবর্ষের অন্তরের ঘনিষ্ঠ আকাশ মালতী ঘোষাল তাঁর স্পষ্ট স্বরে গাইলেন যখন এই পরবাসে রবে কে এ পরবাসে আজীবন দীর্ঘ পরবাস— ... গানের বাস্তবে মাঝে-মাঝে এরকম ঘটে, মনে পড়ে একবার কয়েকটি পড়া শোনা কথা দেবব্রত বিশ্বাসের উদাত্ত গলার একাত্তীকরণে কী দরদী ঢেউ তুলেছিল এক সভাঘরে, সভ্যভব্য মনে, গায়কের দুই চোখ অন্তরঙ্গ, সমগ্র চেতনা শুধু গানে, কথার গলার বৃষ্টিতে বিদ্যুতে সুরে একাকার, বাইশে বা অন্য কোনো দিন হয়তো-বা দোসরা শ্রাবণে ... ‘আজকাল’ ১৮ জুলাই ২০০৯-এর উত্তর সম্পাদকীয়তে বিষ্ণু দে-র জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে লিখেছেন দেবেশ রায়। তাঁর কাছে “ বিষ্ণু দে আমাদের সবচেয়ে মৌলিক আধুনিক কবি। সে আধুনিকতার কোনও ‘আমি’ নেই। তাই তাঁর দায়—বাছাই ঝাড়াই উপকরণগুলো খুলে দেওয়া, সাজিয়ে দেওয়া।” বিস্তারিত পড়ুন... দোসরা শ্রাবণে দেবেশ রায় বিষ্ণু দে জন্মেছিলেন ১৮ জুলাই, সেদিন ছিল দোসরা শ্রাবণ। এবার ১৮ জুলাই পড়েছে বাংলার পয়লা শ্রাবণে। এ বছরের ১৭ জুলাই বিষ্ণু দে তাঁর জীবনের আয়ুক্ষেত্রের একশো বছর পূর্ণ করলেন। ১৮ জুলাই বা দোসরা শ্রাবণ থেকে বিষ্ণু দে তাঁর আয়ুর দ্বিতীয় শতকে পা দিলেন। এখন থেকে তাঁর বয়সের হিসেব হবে শতক দিয়ে। এখন থেকে তাঁর জন্মদিনের উৎসব কর্তব্যকর্মের কর্মসূচির বাইরে চলে যাবে। হয়ত আরও ছড়িয়ে যাবে সেই জন্মদিন পালন। আমরা যেমন অপক্ষোয় থাকি তিন-চার শতক বা সহস্রক পূর্তিতে কোনও মহাশিল্পীর সঙ্গে আমাদের আত্মীয়তা গড়তে। ততদিনে তাঁরা নিজের ভাষার ও দেশের সীমা ও সময়ের সীমা পেরিয়ে মানব সভ্যতার মাইলফলক হয়ে যান। সেই ফলকগুলি দিয়ে আমরা মানব সভ্যতার বাঁকগুলি চিনে নিতে চাই। বাঁক ও পথ। এই প্রথম একশো বছরে আমরা যারা আছি—তাঁর প্রায় সমান বয়েসি, বা অসমান বয়োবৃদ্ধরাও, বা পুত্র-কন্যা তুল্য বয়েসিরা, বা তাদের সন্তান-সন্ততি, এমনকি, যারা তাঁর বয়স থেকে এতটাই দূরে যে, তাঁর বয়সের কোনও অনুগামিতা বোধ করেন না—তাদের সকলেরই একটা দায় থাকে জানানোর যে, আমরা কিন্তু খেয়াল রেখেছি সেই দায়। কাকে জানানো?…

বিগত সাত-আট দশকে বিষ্ণু দে-র কবিতা নিয়ে কম বির্তক হয়নি। পাঠকের মুগ্ধতা ও ঔদাসীন্য – দুই-ই জুটেছে এই কবির ভাগ্যে। যাঁর কবিতা ব্যক্তি, সমাজ, শিল্প-সাহিত্য-রাজনীতির সম্বন্ধসূত্রে জড়ানো, তাঁর পাঠক কি কেবল বিচ্ছিন্ন কিছু কবিতা ভালো-লাগার (বা না-লাগার) অনুভব নিয়ে সন্তুষ্ট (বা অসন্তুষ্ট) থাকবেন, না কি ছুঁতে চাইবেন তাঁর অব্যাহত সমগ্রতাকেও? সেটাই নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত। কিন্তু একালের পাঠকের কাছে কতটা প্রাসঙ্গিক বিষ্ণু দে-র কবিতা? জন্মশতবর্ষে পৌঁছনোর পর, এসব প্রশ্ন নতুন করে ওঠাই স্বাভাবিক। এরই মধ্যে উঠেছেও। বিষ্ণু দে-র কবিতার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে তেমনি একটি প্রবন্ধ, অরুণ সেনের ‘কঠিন ব্রতের গৌরব’, আমাদের জন্য আলোচনার পরিসর তৈরি করে দিতে পারে। [...]

বিগত সাত-আট দশকে বিষ্ণু দে-র কবিতা নিয়ে কম বির্তক হয়নি। পাঠকের মুগ্ধতা ও ঔদাসীন্য – দুই-ই জুটেছে এই কবির ভাগ্যে। যাঁর কবিতা ব্যক্তি, সমাজ, শিল্প-সাহিত্য-রাজনীতির সম্বন্ধসূত্রে জড়ানো, তাঁর পাঠক কি কেবল বিচ্ছিন্ন কিছু কবিতা ভালো-লাগার (বা না-লাগার) অনুভব নিয়ে সন্তুষ্ট (বা অসন্তুষ্ট) থাকবেন, না কি ছুঁতে চাইবেন তাঁর অব্যাহত সমগ্রতাকেও? সেটাই নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত। কিন্তু একালের পাঠকের কাছে কতটা প্রাসঙ্গিক বিষ্ণু দে-র কবিতা? জন্মশতবর্ষে পৌঁছনোর পর, এসব প্রশ্ন নতুন করে ওঠাই স্বাভাবিক। এরই মধ্যে উঠেছেও। বিষ্ণু দে-র কবিতার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে তেমনি একটি প্রবন্ধ, অরুণ সেনের ‘কঠিন ব্রতের গৌরব’, আমাদের জন্য আলোচনার পরিসর তৈরি করে দিতে পারে। লেখাটি এ বছরের জানুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রকাশিত বিষ্ণু দে : স্বভাবে প্রতিবাদে নামের বইয়ের অন্তর্গত। বিষ্ণু দে-কে নিয়ে একই লেখকের ইতিপূর্বে প্রকাশিত বইগুলো হলো : এই মৈত্রী এই মনান্তর ; বিষ্ণু দে-র রচনাপঞ্জি ; বিষ্ণু দে, এ ব্রতযাত্রায় ; যামিনী রায় বিষ্ণু দে: বিনিময় ; বিষ্ণু দে-র কথা ; বিষ্ণু দে-র নন্দনবিশ্ব এবং ইংরেজিতে ও বাংলায় জীবনী বিষ্ণু দে । প্রথমোক্ত বইটি উল্লিখিত কয়েকটি গ্রন্থের নতুন বিন্যাস, অবশ্যই নতুন সংযোজন সহ। বিষ্ণু দে-র শততম জন্মদিনে (নাতি)দীর্ঘ এই লেখাটি পড়ার ও আলোচনায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ রইল সকলের প্রতি। . . . ‘কঠিন ব্রতের গৌরব’ অরুণ সেন তিরিশের কবিদের প্রত্যেকেই যখন একে-একে একশো বছরে পৌঁছোচ্ছেন, তখন, প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই, এই প্রশ্ন সংগতভাবেই ওঠে : যে-কবির প্রতি আমরা একদা আগ্রহী ছিলাম, সেই কবি আজও কতটা পঠিত? সব কবিরই নিজস্ব পাঠক ছিলেন সমকালে, পরে দীক্ষিত স্থায়ী পাঠকসমাজও গড়ে উঠেছে তাঁদের এক-একজনকে ঘিরে – কিন্তু অনেকসময় পার করে সেই কবি সম্পর্কে নতুন পাঠকের উৎসাহ কি টিকে আছে এখনও? নতুন পাঠকের নতুন আবিষ্কার কি ঘটছে? মনে কি হচ্ছে, আজও সেই কবি জীবিত এবং প্রাসঙ্গিক? অবশ্য তফাত একটা হয়েই যায়, সময়-বদলের সঙ্গে-সঙ্গে। পাঠ্যসূচির প্রশ্রয় না থাকলে মাইকেল কতখানি পড়া হত? গান বাদ দিলে রবীন্দ্রনাথই-বা কতটা? বিদেশেও কি তা-ই নয়? সমকালের পরে পাঠক তো ক্রমশ সংকুচিত হয়েই যায় – এমনকি যাদের ক্লাসিক বলি, তাদের ক্ষেত্রেও কি তা সত্যি নয়? তা ছাড়া আধুনিক কবিতার পাঠক তো প্রথম থেকেই সংকুচিত। পরে সমকালের উত্তাপ কমে গেলে তার…

ছড়া নিয়ে গাঁটছড়া... ছড়া নিয়ে ছেলেমি করার ঝোঁকটা সম্ভবত ছড়ার জন্মেতিহাসের সাথেই সম্পর্কিত। কিন্তু এই ঝোঁকের মধ্যে যদি দায়বদ্ধতার কোনো ছোঁয়া না থাকে তাহলেই তা হয়ে ওঠে বিপর্যয়কর। কেমন বিপর্যয়? হতে পারে ছড়াকে তার আত্মপরিচয় থেকে হটিয়ে দেয়া বা অন্য কিছুকে ছড়া নামে প্রতিস্থাপিত করা! মানুষের ভিড়ে মানুষের মতো কতকগুলো হনুমান গরিলা ওরাংওটাং বা এ জাতীয় কিছু প্রাণী ছেড়ে দিয়ে এক কাতারে মানুষ বলে চালিয়ে দিলে যা হয়। মানুষের দুই পা দুই হাত থাকে, ওগুলোরও দুই পা দুই হাত। পায়ের উপর ভর করে এরা সবাই হাঁটে। মেরুদণ্ড কিছুটা কুঁজো করে হাঁটা মানুষের মধ্যেও রয়েছে। বিশেষ করে বার্ধক্য আক্রান্ত মানুষের জন্য। মাঝে মাঝে বাঁদরামি সুলভ আচরণ মানুষও করে। তাহলে কি মানুষ আর হনুমান গরিলা এক হয়ে গেলো! বিবেচনার বাহ্যিক দৃষ্টি ঝাপসা হলে দু’টোর মধ্যে তফাত ঘুঁচে যাওয়া বিচিত্র নয়। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রাণীগুলোর সংখ্যাধিক্য ঘটতে থাকলে এক সময়ে হনুমান গরিলাই যদি মানুষের পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করতে থাকে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু আছে কি? তবুও হনুমান গরিলার দ্বারা মানুষের স্থান দখল করা সম্ভব নয়। পার্থক্যের ভুলে কিছুকাল দাপাদাপি করলেও ঠিকই এদের আসল পরিচয়গুলো বেরিয়ে আসে। কোন্ আসল পরিচয়? এটা হলো অন্তর্গত স্বভাব, আচরণের প্রকৃতি আর সৃজনশীল প্রণোদনায় মানুষের সাথে এদের মৌলিক ও ব্যাপক পার্থক্য। কিন্তু এখানেও কি সমস্যামুক্ত আমরা? কিসের নিরিখে নির্ধারণ করবো মানুষ আর গরিলার অন্তর্গত স্বভাবের ভিন্নতা, আচরণের প্রকৃতিগত বিভেদ বা সৃজনশীল প্রণোদনার পার্থক্য? সেই নির্ধারণসূত্রটা জানা হয়ে গেলে পার্থক্য নির্ণয় করা আর দুরূহ থাকে না। তাই প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে একটা হনুমান বা গরিলাকে মানুষের পূর্ণ আকৃতি দেয়া হলেও মানুষের স্থান দখল করা তার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়, প্রকৃতিগতভাবেই। তেমনি ছড়া নিয়ে আমাদের জটিলতার শেষ নেই। ছড়া তো কোনো প্রাণী নয় যে গুঁতো দিলেই তার প্রকৃতিগত ভাষা বা স্বভাবসুলভ আচরণ দিয়ে নিজের ধাত বা পরিচয়টা জানিয়ে দেবে! ছড়া একটা শিল্প, অক্ষরের কারুকাজ, মূর্ত চেহারায় বিমূর্ত ব্যঞ্জনাধারী শব্দ বা শ্রুতিশিল্প। কবিতা, পদ্য, গান, পুঁথি, পাঁচালি এসবও তো একই পদের জিনিস, অক্ষরের কারসাজিই। তাহলে ছড়া কেন ছড়া? কিসের নিরিখে আমরা তা নির্ধারণ করবো? মানুষের জীবনে উদ্ভূত জটিল জটিল সমস্যাগুলোকে সহজ সরল উদারভাবে দেখার…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.