আন্তর্জাতিক অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত আসামীর বয়স কোনো বিষয় না। পার হয়ে যাওয়া দশকের দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবে না অপরাধের দায় থেকে। অপরাধে সম্পৃক্তি (complicity)-ও গুরুতর অপরাধ, এবং বিচারযোগ্য অপরাধ।

লাজলো সাতারির বয়স এখন ৯৭ বছর, অবশেষে তাকে খুঁজে পাওয়া গেল বুদাপেস্ট শহরে। এতদিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন কুখ্যাত এই নাজি যুদ্ধাপরাধী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাঙ্গেরীর কাস্সা শহরে ইহুদীদের জন্য তৈরী ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলো এই লাজলো একজন পুলিশ কমান্ডার হিসেবে। সেখান থেকে কম পক্ষে ১৬০০০ ইহুদীকে অসউইৎজ 'মৃত্যু ক্যাম্পে' পাঠানোতে এই লাজলোর ভূমিকা ছিল, যে কারণে এখন তার বিরুদ্ধে অপরাধে সম্পৃক্তির (complicity) অভিযোগ আনা হতে পারে। লাজলোর এখন বিচার হওয়ার জোর সম্ভাবনা, ছয় (৬) দশক পেরিয়ে গেছে, তারপরও। কয়েকটি বিষয় লক্ষনীয় এখানে। এক: লাজলোর বয়স; দুই: লাজলোর অপরাধের ধরণ। প্রসঙ্গতঃ লাজলো যে অপরাধের কারণে বিচারের সম্মুখীন হবেন, ঠিক সেই একই ধরণের অপরাধে আসামী গোলাম আযমের বিচার ইতোমধ্যেই হচ্ছে বাংলাদেশের মাটিতে। অপরাধটির নাম হল সম্পৃক্তি (complicity)। কিসে সম্পৃক্তি? আইনে উল্লেখিত বিভিন্ন ধরণের আন্তর্জাতিক অপরাধে "সম্পৃক্তি"। অবশ্য গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৬ টি ভিন্ন অভিযোগের একটি হল এই "সম্পৃক্তি", অর্থাত তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগের বিচার চলছে। লাজলোর বিচারের কথাবার্তা শুরু হয়েছে যখন তার বয়স ৯৭ বছর। আর অন্যদিকে, যখন বিচার শুরু হয়, তখন গোলাম আযমের বয়স ছিল ৮৯ বছর। গোলাম আযমের আইনজীবিরা তার বার্ধক্যের অজুহাত দেখিয়ে জামিনের আবেদন করেছিল। সে আবেদন মঞ্জুর হয়নি। কারণ, যেখানে আসামীর বিরুদ্ধে “আন্তর্জাতিক অপরাধ”-এর মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে সেখানে আসামীর বয়স কিংবা কোনো স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা জামিনের পক্ষে যুক্তি হতে পারে না। [এই পোস্টে বিস্তারিত] আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে গোলাম আযমের চেয়ে আরও বেশি বয়সের আসামীকেও “আন্তর্জাতিক অপরাধের” বিচারকালে জামিন দেয়া হয়নি। উদাহরণ হিসেবে ৯১ বছর বয়স্ক নাৎসি যুদ্ধাপরাধী জন দেমইয়ানযুক (John Demjanjuk) -এর বিচারের ঘটনাটি উল্লেখ করা যেতে পারে — গোলাম আযমের জামিনের শুনানির সময় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকেও দেমইয়ানযুক এর মামলাটি উল্লেখ করা হয়েছে। দেমইয়ানযুকের ক্ষেত্রে ঘটনা কি ছিল? আসুন জেনে নিই। আমেরিকা-নিবাসী ইউক্রেনীয় দেমইয়ানযুকের বিরুদ্ধে মিউনিখের এক আদালতের অভিযোগ ছিল — তিনি ১৯৪৩ সালে ইউক্রেনের এক নাৎসি মৃত্যুশিবিরে প্রায় ২৭,০০০ ইহুদি নিধনে সহযোগিতা করেছিলেন। ২০০৯ সালে জার্মানির আদালত দেমইয়ানযুক-এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। একই বছর তাঁকে বিচারের জন্য আমেরিকা থেকে জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরো বিচারকালীন সময়টুকুতেই তাঁকে স্টাডেলহেইম জেলখানার মেডিকেল ইউনিটে…

ঠিক কি ধরণের অপরাধের বিচার হচ্ছে এখন বাংলাদেশে? এই বিষয়ে বিচার সংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনা এবং ডিসকোর্সে যতোটা সম্ভব সঠিক টার্মগুলো ব্যবহার করাটাই হয়তো উচিত হবে আমাদের [..]

বর্তমানে বাংলাদেশে ১৯৭১ এ সংঘটিত অপরাধের যে বিচার চলছে তাকে অনেকেই "মানবতাবিরোধী অপরাধ" এর বিচার হিসেবে বর্ণনা করেন। অতীতে বিষয়টিকে "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার" বলেও বর্ণনা করা হতো। বর্তমানে যে বিচার চলছে তাকে বোঝাতে টার্ম হিসেবে দু'টোর কোনোটিই সঠিক নয়। বাংলাদেশে এখন "মানবতাবিরোধী অপরাধ" এর বিচার হচ্ছে না, ট্রাইবুনালটিও "মানবতাবিরোধী অপরাধের ট্রাইবুনাল" না। হচ্ছে "আন্তর্জাতিক অপরাধ" এর বিচার, এবং ট্রাইবুনালের নাম "আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল"। মন্ত্রীরা এবং অন্যান্যরা এই বিচারকে সেই শুরু থেকে "মানবতাবিরোধী অপরাধ" এর বিচার হিসেবে অভিহিত করে যাচ্ছেন, সেখান থেকেই আসলে বিভ্রান্তির সূচনা। যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যাসহ যে কয়েক ধরণের অপরাধের বিচার হচ্ছে, তার মধ্যে "মানবতাবিরোধী অপরাধ" হল মাত্র এক জাতীয় অপরাধ - আর বিচার্য এই সব ধরণের অপরাধকে এক কথায় বলা হয় "আন্তর্জাতিক অপরাধ"। শুধু "মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার" বা "যুদ্ধাপরাধের বিচার" বললে পুরো প্রক্রিয়াটির ব্যাপ্তিকেই ধারণ না করে একে অনেক বেশী সংকীর্ণভাবে উপস্থাপন করা হয়ে যায়। তাই বিচার সংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনা এবং ডিসকোর্সে যতোটা সম্ভব সঠিক টার্মগুলো ব্যবহার করাটাই হয়তো উচিত হবে আমাদের। যে সব অপরাধের বিচার চলছে সেগুলোকে এক কথায় বর্ণনা করতে হলে বলতে হবে - "আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার"। আর যে আদালতে বিচার চলছে সেটাকে বলতে হবে - "আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল"। অপরাধ তো হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে, তাহলে এগুলোকে "আন্তর্জাতিক অপরাধ" বলা হচ্ছে কেন? বলা হচ্ছে, কারণ, ধরে নেয়া হয় এই জাতীয় অপরাধগুলো কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের সীমানার মধ্যে ঘটলেও তা আসলে সংঘটিত করা হয় পুরো মানবজাতির বিরুদ্ধে। এ কারণে যখনই এই জাতীয় অপরাধ কেউ করে তখন তা পুরো বিশ্বেরই (international community) মাথাব্যাথা (concern), তখন এটা কেউ বলতে পারে না যে - 'এসব আমাদের নিজের দেশের আভ্যন্তরীন বিষয় আশয়'! "আন্তর্জাতিক" শব্দটা যুক্ত থাকার ফলে কি বিচারটাও "আন্তর্জাতিক"? কিংবা এই ট্রাইবুনাল কি তার ফলে "আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল" হয়ে গেল? দু'টো প্রশ্নের উত্তরই হল - "না"। এখানে "আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল" কথাটার মধ্যে গুরুত্বারোপ করতে হবে অপরাধের ধরণবাচক "আন্তর্জাতিক অপরাধ" শব্দটির ওপর, ট্রাইব্যুনাল ভবনের ভৌগলিক অবস্থানের উপর না। অর্থাত, যে ধরণের অপরাধের বিচার হচ্ছে কেবল সেগুলোর নাম "আন্তর্জাতিক অপরাধ", আর বিচারটা কিন্তু হচ্ছে দেশীয় ট্রাইবুনালে, বাংলাদেশের সংসদে পাশ করা আইন দিয়েই। আইনটির…

গতকাল (৬ জুলাই ২০১২) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ তার আদেশের মাধ্যমে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত এবং পদ্ধতিগত সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছে। [...]

১৯৭১-এ সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর বিচারের গতি ত্বরান্বিত হোক, বিচারিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বিস্তৃত হোক, এটা সম্ভবত শুধু আসামীপক্ষ ছাড়া আর বাকি সকলেরই চাওয়া। এই বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার বিষয়টি মাথায় রেখে নানা ধরণের প্রস্তাব ও সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তেমনই একটি প্রস্তাব ছিল পৃথক এবং নতুন ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা করা। নাগরিক সমাজের একাংশের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার এই বছরের শুরুতে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে, যা প্রথম ট্রাইবুনালের পাশাপাশি কাজ করছে। দ্বিতীয় ট্রাইবুনাল গঠনের পরিকল্পনাটি যখন সরকারের বিবেচনাধীন ছিল, তখনই আইসিএসএফ-এর পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছিল এভাবে পৃথক একটি ট্রাইবুনাল (দ্বিতীয় ট্রাইবুনাল) প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য সমস্যাগুলো। এর পরিবর্তে আইসিএসএফ এর পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল – ‘পৃথক ট্রাইবুনাল’ গঠন না করে বিদ্যমান ট্রাইবুনালের আওতায় প্রয়োজন একাধিক ‘বেঞ্চ’ প্রতিষ্ঠা করা। সাথে আরও কিছু পন্থা সুপারিশ করা হয়েছিল যেগুলোর মাধ্যমে বিদ্যমান ট্রাইবুনাল ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও বিচারে কালক্ষেপণের যে-কোনো চেষ্টাকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে। কারণ, অহেতুক কালক্ষেপণের বিষয়গুলো একটি ট্রাইবুনাল হলে সেখানে যেমন ঘটতে পারে (এবং ঘটেছেও), সেটা একাধিক ট্রাইবুনাল হলেও সেখানেও সমানভাবে হতে পারে এবং হচ্ছেও। এই সমস্যাগুলোকে বিবেচনা করে, সেগুলোকে সরাসরি মোকাবিলার কথা মনে রেখেই, গতকাল (৬ জুলাই ২০১২) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ তার আদেশের মাধ্যমে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত এবং পদ্ধতিগত সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছে। ট্রাইবুনাল ঘোষণা করেছে যে এখন থেকে প্রথম ট্রাইবুনালে সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং জেরার সময় নির্দিষ্টভাবে বেঁধে দেয়া হবে, এবং মামলার প্রসিকিউশন এবং আসামীপক্ষের আইনজীবীদের সেই বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই সাক্ষীর জবানবন্দী এবং জেরার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। [সূত্র: http://bit.ly/OFmKAd] প্রথম ট্রাইবুনালের এই সুচিন্তিত সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এর দরকার ছিল। কারণ, গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা লক্ষ করেছি – ট্রাইবুনালে প্রতিটি সাক্ষীর ক্ষেত্রে প্রসিকিউশনের জবানবন্দী গ্রহণে সময় ব্যয় হচ্ছিল গড়ে ১-২ দিন। অন্যদিকে আসামীপক্ষের আইনজীবীরা যখন সেই সাক্ষীদের জেরা করছিলেন, সেখানেও গড়ে প্রতিটি সাক্ষীর জেরায় ব্যয় হচ্ছিল ৩-৫ দিন। অর্থাৎ, জেরা এবং জবানবন্দী মিলিয়ে প্রতিটি সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণে ব্যয় হচ্ছিল গড়ে কমপক্ষে ৩-৬ দিন। এটা নিশ্চয়ই কাউকে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন পড়বে না যে, কোনো একটি মামলায় যদি ৬০ জন সাক্ষী থাকে তাহলে কেবল সাক্ষ্যগ্রহণেই সেখানে খরচ হয়ে যাবে প্রায় ৩৬০ দিন…

১৯৭১-এর ইতিহাস আমাদের অজানা নয়। সারা দেশের মানুষের মনেও কোনো সন্দেহ নেই সেখানে অপরাধী পক্ষ এবং অপরাধী ব্যক্তিরা আসলে কারা। কিন্তু এই জানাটাই শেষ কথা নয়। আমাদের এই জানা, এবং ইতিহাসের এই সত্যকে আদালতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করাটাও সমান জরুরি।। [...]

১৯৭১-এর ইতিহাস আমাদের কারও অজানা নয়। সারা দেশের মানুষের মনেও কোনো সন্দেহ নেই সেখানে অপরাধী পক্ষ এবং অপরাধী ব্যক্তিরা আসলে কারা। কিন্তু এই জানাটাই শেষ কথা নয়। আমাদের এই জানা, এবং ইতিহাসের এই সত্যকে আদালতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করাটাও সমান জরুরি।। বিচার কোন্ গতিতে এগোচ্ছে, কোন্ গতিতে এগোনো উচিত, আদৌ ঠিক গতিতে এগোচ্ছে কি না তা নিয়ে জনমনে নানা ধরণের প্রশ্ন এবং দুর্ভাবনা রয়েছে। মিডিয়া এবং রাজনৈতিক অঙ্গনও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় সরগরম। নানা জন সুযোগ পেলেই মন্তব্য করছেন এ নিয়ে। কিন্তু বাস্তবতা হলো -- বিচারের রয়েছে নিজস্ব একটা গতি। বাস্তবতা হলো -- এই বিচার তখনই সম্পন্ন হবে যখন তা আইনানুগভাবে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার কথা। এর আগেও না, পরেও না। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালীন এই অপরাধগুলোর শুধু বিচার হলেই হবে না, সেই বিচারকে দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যও হতে হবে। এই গ্রহণযোগ্যতা শুধু যে আমাদের ইতিহাসের জন্যই জরুরি তা কিন্তু না। ১৯৭১-এর সকল ভিকটিম এবং স্বজনহারা মানুষেরও এই জাতির কাছে ন্যূনতম চাওয়া হলো একটা সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য বিচার। এ কারণে আমাদের বুঝতে হবে বিচারটা আসলে কীভাবে হচ্ছে এবং প্রতিদিন এই বিচার কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। আমাদের বুঝতে হবে সেখানে প্রতিটি ধাপের ঠিক কোথায় কতটুকু সময় লাগছে বা সময় দরকার। কেবল তখনই আমরা বুঝব বিচারটা কেমন গতিতে এগোচ্ছে। সে-সব না বুঝে বা না বুঝতে চেয়ে আমরা যদি কেবল ঢালাওভাবে 'বিচার চাই', 'দ্রুত বিচার চাই', 'এখনি ফাঁসি চাই' বলতে থাকি, তবে তা হবে এক ধরণের দায়দায়িত্বহীন হঠকারিতা। কারণ, তাতে বিচার কিংবা ১৯৭১-এর ভিকটিম কারোই কোনো মঙ্গল হবে না। এই বিচারের প্রক্রিয়াকে যদি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে দেখতে পাবো সেখানে অনেকগুলো বিষয় বুঝবার আছে, যা সরকার, বিরোধী দল, বা রাজনীতির সমীকরণের চেয়েও ভিন্ন কিছু। সেখানে চ্যালেঞ্জ আছে, ইতিবাচক দিক আছে, সীমাবদ্ধতা আছে, ইতিবাচক দিকগুলোকে পরিচর্যার ব্যাপার আছে, সীমাবদ্ধতার দিকগুলো এক এক করে কাটিয়ে ওঠারও ব্যাপার আছে। মূল কথা -- সেখানে অনেক "কাজ" আছে। আমাদের মন্তব্য বা "কথা" দিয়ে তাতে কিছু পরিবর্তন হবে না, হওয়া উচিতও হবে না। এই বিচার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, এই বিচার বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসানের জন্য, এই বিচার ১৯৭১-এর ভিকটিমদের জন্য। আমরা…

যারা ধরেই নিয়েছেন পেশাগত অসদাচারণ কেবলমাত্র দেশী আইনজীবিদের পক্ষেই বেশী সম্ভব এবং বিদেশী আইনজীবিরা ধোয়া তুলসী পাতা, তাদের সাথে একমত হওয়া কঠিন। এখানে দেশ বা বিদেশ কোন বিষয় না, অসদাচারণ করা আইনজীবির কোনো দেশ নেই, তারা যে কোন দেশেই মক্কেলের স্বার্থে পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে যাবেনই [...]

যে কোনো মামলার মতো আন্তর্জাতিক অপরাধের মামলাগুলোর ক্ষেত্রেও আইনজীবিদের দায়িত্ব হল পেশাগত আচরণবিধি এবং "আইনের সীমানার ভেতরে থেকে" তার মক্কেলের পক্ষে লড়ে যাওয়া। আইনজীবির কাজ মিথ্যাকে সত্য আর সত্যকে মিথ্যা বানানো না, বরং, আদালতের একজন সাহায্যকারী অফিসার হিসেবে বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করা। যে কারণে আইন পেশা এবং আইনজীবির ভূমিকাকে "স্বাধীন" বলে ধরে নেয়া হয়, এমনকি যখন একজন আইনজীবি কোনো একটি নির্দিষ্ট পক্ষের দ্বারা নিযুক্ত হন তখনও। বাস্তবে এই সীমানা সবসময় মানা হয় না। মামলার সাথে জড়িয়ে থাকে মামলার পক্ষরা। আর পক্ষের এই মক্কেলদের আর্থিক প্রতিপত্তি এবং সক্ষমতা সবার ক্ষেত্রে সমান না। এ কারণে আইনী দায় থেকে যে কোনো মূল্যে মুক্তির জন্য একেক মক্কেলের আর্থিক বিনিয়োগ একেকরকম। তার সাথে যুক্ত হয় সংশ্লিষ্ট আইনজীবির ব্যক্তিগত দর্শন, নৈতিক বুনিয়াদ, পেশার প্রতি একাগ্রতা, পেশাদারিত্ব ইত্যাদি নানা অনুষঙ্গ। ফলে পেশাগত দায় বনাম মক্কেলের স্বার্থ, সত্য উদঘাটন বনাম যে কোনো মূল্যে মক্কেলকে রক্ষা - এই সীমানাগুলো কখনো কখনো ঝাপসা হতে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষীণ হতে হতে এমনকি মিলিয়েও যায়! এক. গত ২৯ জুন ২০১২, কম্বোডিয়ার গণহত্যা ট্রাইবুনাল (এক্সট্রা-অরডিনারি চেম্বার্স ইন দ্য কোর্টস অব কম্বোডিয়া - ECCC) অভিযুক্ত আসামী নুওন চির নিযুুক্ত দুই আইনজীবির বিরুদ্ধে অসদাচরণ এবং পেশাগত নিয়মভঙ্গের কারণে শাস্তিমূলক এক আদেশ জারী করেছে। আইনজীবি দু'জন হলেন - মিশিল পেস্টম্যান (এ্যামস্টারডাম বার এসোসিয়েশন) এবং এনড্রুু ইয়ানুজি (নিউ ইয়র্ক বার এসোসিয়েশন)। এর এক সপ্তাহ আগে এই দুই আইনজীবিকেই ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালের আদেশে যে অভিযোগগুলো তুলে ধরা হয় সেগুলো হল: "wilful violation of court orders, unauthorized disclosure to the press of confidential or strictly confidential material, and statements in court which are disrespectful or which otherwise do not accord with the recognized standards and ethics of the legal profession." উপরোক্ত আদেশ ঘোষণার পাশাপাশি এই দুই আইনজীবির বিরুদ্ধে তাদের স্ব স্ব বার এসোসিয়েশন যাতে যথাযথ শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে সুপারিশও করা হবে বলে কম্বোডিয়া ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে জানানো হয়। [বিস্তারিত: এখানে] দুই. যে অভিযোগে দন্ডিত হলেন কম্বোডিয়া ট্রাইবুনালের দুই আসামী পক্ষের আইনজীবি, সে একই ধরণের পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.