রোগই সংক্রামক, তাই চারিদিকে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের দিকের মানুষদের রাজাকারদের দিকে হেলে পড়তে দেখা যায়। রাজাকারদের মধ্যে এই হেলদোল দেখা যায় না।
রোগই সংক্রামক, তাই [...]
রোগই সংক্রামক, তাই [...]
রোগই সংক্রামক, তাই চারিদিকে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের দিকের মানুষদের রাজাকারদের দিকে হেলে পড়তে দেখা যায়। রাজাকারদের মধ্যে এই হেলদোল দেখা যায় না।
এই বিশ্বমন্দার চাপে আমাদের মতো ইমার্জিং মার্কেটের (EM) দেশের সরকারের একটা বড় ভাবনার বিষয় কিভাবে ভর্তুকি কমানো যায় এবং কী গতিতে।[...]
একথা মনে হয় যখন বিদ্যুৎ বিল হাতে পাই, যখন ঘরভাড়ার সাথে গ্যাসের জন্য নির্ধারিত মাসিক টাকাটা যোগ করি, যখন পেট্রোল কিনি -- একটা ভাউচার চাই : সরকার আমার জন্য যে ভর্তুকি দিচ্ছে তার ভাউচারটা চাই। সরকার শিক্ষায় ভর্তুকি দেয়, কৃষিতে ভর্তুকি দেয়, সরকার আরো অনেক কিছুতে ভর্তুকি দেয় -- যতটুকু সম্ভব প্রত্যেক ক্ষেত্রে ভাউচারের ব্যবস্থাটা করুক সরকার। এই বিশ্বমন্দার চাপে আমাদের মতো ইমার্জিং মার্কেটের (EM) দেশের সরকারের একটা বড় ভাবনার বিষয় কিভাবে ভর্তুকি কমানো যায় এবং কী গতিতে। এটা অর্থনীতির ভয়ংকর জটিল একটা সিদ্ধান্তের জায়গা। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাজ নয় এর সব দিক ও নির্দেশনাকে বুঝতে পারা। কিন্ত আমরা সাধারণ মানুষেরা কিছু সাধারণ জিনিস তো খুব সহজে বুঝি -- আমরা বুঝি ভর্তুকি কমাতে থাকলে মুদ্রাস্ফীতি হবে এবং ভর্তুকি কমানোর গতি দ্রুত হলে এই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। ভর্তুকি শব্দটাই আমরা পরিবর্তন করে দিই যদি -- আমরা যদি ভর্তুকিকে সরকারের বিনিয়োগ হিসেবে দেখি, তাহলে সরকার আমার জীবনে কত ভাবে কত বিনিয়োগ করছে তার একটা হদিস যদি পাই ভাউচারের মাধ্যমে -- আমার মনে হয় আমাদের দুপক্ষের মধ্যে একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। শিক্ষা খাতে সরকার এত ভর্তুকি দেয়, বিদ্যুৎ খাতে সরকার এত ভর্তুকি দেয় -- এর পরিবর্তে ভাউচারের মাধ্যমে সরকার যদি জানিয়ে দেয় তোমাকে পড়ালেখা শেখাতে আমি এই অর্থটা বিনিয়োগ করেছি, তোমার বিদ্যুৎ বিলের এই অংশটা তোমার সরকারের বিনিয়োগ, তাহলে আমি সাধারণ ভর্তুকির চেয়ে আমার খাতে সরকারের বিনিয়োগটাকে স্পষ্ট দেখতে পাব। তাই ভাউচারটা চাই।
কারণ আমি বুঝতে পেরেছি মতামতও এক ধরনের শিল্প।[...]
কয়েক দিনের মধ্যে এমাসেই আমার বয়স চল্লিশ বছর পূর্ণ হবে। জীবনের এতগুলো বছর পার করে বিষণ্ণ তো লাগছেই না, তার চেয়ে কেমন যেন নিজেকে হালকা নির্মেদ নিঃশঙ্ক লাগছে। হালকা, কারণ এতদিনে আমি বুঝতে পেরেছি যতই বিরক্তি নিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠি না কেন তার চেয়ে বেশি আসক্তি নিয়ে ঘুমোতে যাই পরদিন আবার জেগে উঠব বলে। নির্মেদ, কারণ আমি বুঝতে পেরেছি মতামতও এক ধরনের শিল্প। নিঃশঙ্ক, কারণ এই টীকাটি না দিলে পরবর্তী জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। আমরা কবিতা গান ছবি উপন্যাস গল্প ভাস্কর্য নাটক সিনেমায় শিল্প খুঁজেছি। কেন জানি নিছক মত প্রকাশের মাধ্যম মতামতে শিল্পের খোঁজ করিনি। আমরা ভুল করেছি, অত্যন্ত উঁচুমানের শিল্প হওয়ার সমস্ত কিছু মজুদ আছে মতামতে। আমাদের প্রথমে ইশারাকে জানতে হবে, তারপর অক্ষরকে, এরপর কণ্ঠস্বরকে, চিনতে হবে ভাষাকে, হৃদয় শরীর ও মনের চারপাশকে। তখন একটি ইঙ্গিত, একটি বর্ণ, একটি শব্দ, একটি বাক্য, একটি দীর্ঘশ্বাস – সবই প্রকাশ করবে মতামতকে, মতামতের শিল্পকে। শিল্প নিয়ে বাঁচার চেষ্টা কখন থেকে শুরু করেছি আজ আর মনে পড়ে না। কিন্তু এটা জানি এর
উপরই সবসময় সবচেয়ে বেশি নির্ভর করেছি এবং বাকি জীবনও এই নির্ভরতা নিয়ে জীবনচর্যা অক্ষুণ্ণ রাখব। মতামত বড় উত্তেজনাহীন, বরং সে বিরক্তিকরই। এভাবেই সে বেঁচে থাকে – উদ্বেলিত করে না, অনুধ্যান জারি রাখে। তাড়াহুড়ো করে না, তিরস্কার করে না – সতর্ক থাকে, সংকলিত থাকে। সবার উপরে মতামতের শিল্প হয়ে থাকে। মতামতের শিল্প রাজনীতির, মতামতের শিল্প অরাজনীতির। মতামতের শিল্প পরবর্তী বাংলাদেশের। ১২ অক্টোবর ২০১১ ফানুস পূর্ণিমার পরের রাত অপভূ চট্টগ্রাম
নামাজ পড়লেও লিখি না পড়লেও লিখি। শুয়োর খেলেও লিখি না খেলেও লিখি। কিন্তু এর মধ্যে পুলিশটা কে?[...]
আমি স্বাধীন তাই লিখি। লিখে কিছু পাই বা না পাই লিখি, শুধু পাই পয়সার জন্য লিখি না। পাতা পেলে লিখি ব্লগ পেলেও লিখি। নামাজ পড়লেও লিখি না পড়লেও লিখি। শুয়োর খেলেও লিখি না খেলেও লিখি। কিন্তু এর মধ্যে পুলিশটা কে? পুলিশ মানে কি পরাধীনতার শৃঙ্খল? যদি পুলিশ তাই হয় তাহলে আমাকেও ঘোষণা করতে হবে আমি স্বাধীন তাই পরাধীনতার শৃঙ্খল হাতে বসে থাকা সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লিখি। বাংলাদেশের কাছে সে-স্মৃতি মোটেই তেমন পুরনো নয়, এই তো ৪০ বছর আগেই তো আমরা ঝাড়ে-বংশে পরাধীন ছিলাম। কেউ বলতে পারবে না বাংলাদেশের লেখকরা সেই পরাধীন দিনে লেখেননি, লিখেছেন এবং তালিকাভুক্ত হয়েছেন এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। রাষ্ট্র এখন বাংলাদেশ, এই চল্লিশ পেরনো বাংলাদেশ যদি আজ চালশের ছানিতে 'স্বাধীনতা বিরোধী'দের বিরুদ্ধে তসবিহ জপতে জপতে নিজেরাই আরো বৃহত্তর অর্থে পুলিশের মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধিতার চর্চা করতে চায় তাহলে ওই কুলাঙ্গার গুণধর এএসপি রফিকুলের কথার সূত্রে আমরা যারা স্বাধীনতার জন্য লিখি তাদের বলতেই হবে : রাষ্ট্র, আমরা তোমার বিপক্ষে, এসো আমাদের নির্যাতন কর। যেজন্য চীনকে উপহাস করি -- পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শাসকদের সাধারণ মানুষের যম বলি -- যেজন্য প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সত্তার সাধনা করি : সেই মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে সেই হাত সন্ত্রাসীর হাত বলেই বিবেচিত হবে। ২০০১--২০০৮-এর অস্বাভাবিক সময়ের বিরুদ্ধে যদি দাঁড়াতে চান যদি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সত্যিই লড়তে চান মত প্রকাশের স্বাধীনতায় শস্য পরিমাণ হস্তক্ষেপ করবেন না। আমার মতের সমালোচনা করুন, যদি আমার মত বিধ্বংসী ও বিস্ফোরক বা মানহানিকর হয় মামলা করুন। কিন্তু আমার চোখ বাঁধবেন না, মুচলেকার অসভ্যতা দেখাবেন না, আমাকে শারীরিক মানসিকভাবে নির্যাতন করবেন না। জাতির অভূতপূর্ব উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে 'গুলাগ' সৃষ্টি করবেন না। উচ্চশিক্ষায় সরকার বিনিয়োগ করবে, না অভিভাবক বিনিয়োগ করবে, না দেশি-বিদেশি আর্থিক সংস্থা বিনিয়োগ করবে এটা পুরোপুরি 'পলিসি'র ব্যাপার -- 'পলিসি'র ব্যাপার নিয়ে বাকতিণ্ডা খুবই স্বাভাবিক, সেই স্বাভাবিকতার একটা অপরিহার্য কর্মপদ্ধতি হল সৃষ্ট অসন্তোষের ভেতরে পৌঁছে অসন্তোষের প্রকৃতিটাকে আগে বুঝতে পারা। তা না করে অসন্তোষ ছত্রভঙ্গের পুলিশি তৎপরতা 'দানা বাঁধতে দেব না' নামক দেউলিয়াত্বের প্রকাশ ঘটায়। যা যেকোনো সরকারের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বকেই সবার আগে সামনে নিয়ে আসে। এখন সরকার…
আমি আর কোনো কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না। সবকিছুকে মায়া মনে হতে লাগল।[...]
ইউনুস আমাকে ২০০৭ সালের শেষদিকে বলেছিলেন, কোথায় পড়ে থাকলেন – আমি এখন নোবেল পুরস্কার পেয়েছি, একটা ঋণ মডেল ও একটা ব্যবসা মডেল নিয়ে সারা পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছি, আর আপনি কিনা পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর গুরুতর মানুষের-ভারে-জর্জরিত কখন-জ্বলবে-তার-খবর-নেই একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীত্ব বরণ করলেন অতিবৃদ্ধ এক রাজনৈতিক ডাইনেস্টির মোহময় ক্ষমতাময়ীর অনুরোধে? যেদেশ ইউনুস বানিয়েছে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে শীর্ষবৈঠক সেরে উঠব উঠব, এমন সময় ভাবলাম হাসিনাকে কথাটা বলি। হাসিনা চুপচাপ শুনলেন, তাকে কেমন যেন উদভ্রান্ত মনে হচ্ছিল কিছুক্ষণের জন্য। কিছুই ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। আমি এবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আপনি ইউনুসের উপর এমন চটেছিলেন কেন? – আপনাকে ওই কথা বলেছিল তো, আমাকে বলল একেবারে উল্টো কথা – প্রধানমন্ত্রীত্বটা আমাকে দিয়ে দিন যেমন সোনিয়া মনমোহনকে দিয়েছিলেন, আমি আপনাকে আমার ঋণ মডেল ও ব্যবসা মডেল দিয়ে দেব, আপনি সারা পৃথিবী চষে বেড়াবেন, চান তো ওই অর্ধেক নোবেলটাও দিয়ে দেব, আপনার কতদিনের শখ! এরপর থেকে আমি আর কোনো কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না। সবকিছুকে মায়া মনে হতে লাগল। বারবার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতে লাগল – বারবার একটা ধুনই আঘাত করছিল আমাকে নিঃশব্দে নিরবধি – জীবনে কিছুই তো করতে পারলাম না। ভারতের অর্থনীতির রিফর্ম করেছি আমি, ওই অর্থনীতিটাকে ‘হিন্দু বিকাশ’ থেকে ‘ব্যাঘ্র বিকাশ’-এর পথে নামিয়েছি আমি, তখন আমি ছিলাম অর্থমন্ত্রী। আর রিফর্মের ১৫ বছর পর দেখলাম আমার রিফর্ম ভালই এগিয়েছে, আমিও তখন দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতায় প্রায় দুবছর কাটিয়ে ফেলেছি, কিন্তু সাথে সাথে এটাও বুঝতে পারছিলাম রাজনৈতিক(!) ক্ষমতাহীন(!) আমি(!) দুই হাজার ছয় থেকে অনবরত সেই রিফর্মে ক্লোরোফর্ম ঢেলেছি – আমিই এই অঞ্চলে নয়াব্রাহ্মন্যবাদের প্রবর্তন করেছি ঘৃতাহুতির বদলে এই ক্লোরোফরম ঢালার বিধান চালু করেছি। খালি মনে হচ্ছে পৃথিবীর কোনো কিছুতে শান্তি নেই। সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ক্ষমতায়ও সর্দারজি হয়ে থাকতে হয় – পৃথিবীতে স্বীকৃত অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী হয়েও এই আমাকে নয়াব্রাহ্মন্যবাদ নিয়েই থাকতে হয়। ভারত সন্ন্যাসের পূণ্যভূমি। আমার স্ত্রীকে দিল্লি ফিরে এসে বললাম, কিছু মনে কোরো না – মনে হয় আর এই সংসারধর্ম পালন করব না। এবারের শীর্ষবৈঠকে আমি জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে এমন কিছু জেনেছি তাতে মনে হচ্ছে, সন্ন্যাসগ্রহণ ছাড়া আমার সামনে দ্বিতীয় পথ খোলা নেই। আমার স্ত্রী অভূতপূর্ব…