ইউনুস আমাকে ২০০৭ সালের শেষদিকে বলেছিলেন, কোথায় পড়ে থাকলেন – আমি এখন নোবেল পুরস্কার পেয়েছি, একটা ঋণ মডেল ও একটা ব্যবসা মডেল নিয়ে সারা পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছি, আর আপনি কিনা পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর গুরুতর মানুষের-ভারে-জর্জরিত কখন-জ্বলবে-তার-খবর-নেই একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীত্ব বরণ করলেন অতিবৃদ্ধ এক রাজনৈতিক ডাইনেস্টির মোহময় ক্ষমতাময়ীর অনুরোধে? যেদেশ ইউনুস বানিয়েছে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে শীর্ষবৈঠক সেরে উঠব উঠব, এমন সময় ভাবলাম হাসিনাকে কথাটা বলি। হাসিনা চুপচাপ শুনলেন, তাকে কেমন যেন উদভ্রান্ত মনে হচ্ছিল কিছুক্ষণের জন্য। কিছুই ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। আমি এবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আপনি ইউনুসের উপর এমন চটেছিলেন কেন? – আপনাকে ওই কথা বলেছিল তো, আমাকে বলল একেবারে উল্টো কথা – প্রধানমন্ত্রীত্বটা আমাকে দিয়ে দিন যেমন সোনিয়া মনমোহনকে দিয়েছিলেন, আমি আপনাকে আমার ঋণ মডেল ও ব্যবসা মডেল দিয়ে দেব, আপনি সারা পৃথিবী চষে বেড়াবেন, চান তো ওই অর্ধেক নোবেলটাও দিয়ে দেব, আপনার কতদিনের শখ!
এরপর থেকে আমি আর কোনো কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না। সবকিছুকে মায়া মনে হতে লাগল। বারবার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতে লাগল – বারবার একটা ধুনই আঘাত করছিল আমাকে নিঃশব্দে নিরবধি – জীবনে কিছুই তো করতে পারলাম না। ভারতের অর্থনীতির রিফর্ম করেছি আমি, ওই অর্থনীতিটাকে ‘হিন্দু বিকাশ’ থেকে ‘ব্যাঘ্র বিকাশ’-এর পথে নামিয়েছি আমি, তখন আমি ছিলাম অর্থমন্ত্রী। আর রিফর্মের ১৫ বছর পর দেখলাম আমার রিফর্ম ভালই এগিয়েছে, আমিও তখন দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতায় প্রায় দুবছর কাটিয়ে ফেলেছি, কিন্তু সাথে সাথে এটাও বুঝতে পারছিলাম রাজনৈতিক(!) ক্ষমতাহীন(!) আমি(!) দুই হাজার ছয় থেকে অনবরত সেই রিফর্মে ক্লোরোফর্ম ঢেলেছি – আমিই এই অঞ্চলে নয়াব্রাহ্মন্যবাদের প্রবর্তন করেছি ঘৃতাহুতির বদলে এই ক্লোরোফরম ঢালার বিধান চালু করেছি। খালি মনে হচ্ছে পৃথিবীর কোনো কিছুতে শান্তি নেই। সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ক্ষমতায়ও সর্দারজি হয়ে থাকতে হয় – পৃথিবীতে স্বীকৃত অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী হয়েও এই আমাকে নয়াব্রাহ্মন্যবাদ নিয়েই থাকতে হয়।
ভারত সন্ন্যাসের পূণ্যভূমি। আমার স্ত্রীকে দিল্লি ফিরে এসে বললাম, কিছু মনে কোরো না – মনে হয় আর এই সংসারধর্ম পালন করব না। এবারের শীর্ষবৈঠকে আমি জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে এমন কিছু জেনেছি তাতে মনে হচ্ছে, সন্ন্যাসগ্রহণ ছাড়া আমার সামনে দ্বিতীয় পথ খোলা নেই। আমার স্ত্রী অভূতপূর্ব সাড়া দিলেন, বললেন, ঠিকই বলেছ – আমিও সন্ন্যাসের কথাই ভাবছি, শুধু আরেকটি শীর্ষবৈঠকের জন্য অপেক্ষা করতে অনুরোধ করব তোমায়। আমি বিস্মিত হলাম, আশা করিনি আমার স্ত্রীও আমার সঙ্গে সন্ন্যাস নেবেন, তার চেয়ে বিস্মিত হলাম আবার বাংলাদশে আরেকটি শীর্ষবৈঠক, কেন? আমার আর একদিনের জন্যও এই রাজকার্যে মন বসছে না। স্ত্রী বললেন, তুমি যেরাজ্য থেকে রাজ্যসভায় অধিষ্ঠিত সেই আসাম রাজ্যের বিলাসী মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আমাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি জামদানি শাড়িটা উপহার দিয়েছে তো তুমি জান – ওই জামদানি শাড়িটা পরে একবার ওই বাংলাদেশে শীর্ষবৈঠকের মিডিয়া কাভারেজে যেতে চাই – সে যাওয়া যত দ্রুত তুমি ব্যবস্থা করতে পার – তত দ্রুত আমরা সন্ন্যাস ব্রত নিয়ে সংসার ছাড়তে পারি।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১২ comments
Dry cleaning in Grand Prairie Texas - ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ (১২:৩৩ অপরাহ্ণ)
এখন উনাকে ইলিশ মাছ ও খাওয়াবো।
মাসুদ করিম - ৭ মে ২০১২ (১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ)
আজকের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সম্পাদকীয়।
লিন্ক : Engaging Dhaka।
Pingback: হন্যতে : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোপন ডায়েরি | মাসুদ করিম
Pingback: রাজাকার : মতিউর রহমানের গোপন ডায়েরি | মাসুদ করিম
মাসুদ করিম - ২৫ আগস্ট ২০১৩ (২:০২ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৭ মে ২০১৫ (১০:০৭ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৭ মে ২০১৫ (১০:১৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৭ মে ২০১৫ (১০:৪০ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১১ জানুয়ারি ২০১৪ (৪:১০ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৩ মে ২০১৪ (১২:২১ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১০ জুন ২০১৫ (৯:১৭ পূর্বাহ্ণ)
হয়তো এমনও হতে পারে এই গোপন ডায়েরি মোদির হাতে পড়ায় এবং হাসিনা মোদির মাকে জামদানির উপহার পাঠানোর ঘোষণায় মোদির মুখ দিয়ে বেরিয়েছে ওই বাক্য : আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়!
হয়তো বা এই গোপন ডায়েরির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তরুণ গগৈও কিছু দিতে চেয়েছিলেন মোদির মাকে বাংলাদেশ থেকে, না পেরে হয়েছেন মনক্ষুন্ন।
মাসুদ করিম - ১১ এপ্রিল ২০১৬ (১১:৪৮ অপরাহ্ণ)