মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন যাঁরা, তাদের কত অংশ রাজনীতি অর্থনীতির জটিল তত্ত্বপাঠ নিয়ে তারপর অংশ নিয়েছিলেন আর কত অংশ গিয়েছিলেন স্রেফ ভালোবাসার তাগিদে? মানুষের প্রতি নেতৃত্বের, আর নেতৃত্বের প্রতি মানুষের সেই ভালোবাসা [..]

১.
আর্নেস্তো চে গুয়েভারার ওপর নির্মিত স্টিভেন সডেরবার্গ এর ছবি ‘দি আর্জেন্টাইন’ দেখছিলাম। ছবিটি শুরু হয়েছে ১৯৬৪ সালে হাভানায় সাংবাদিক লিসা হাওয়ার্ডের নেয়া চে গুয়েভারার একটি সাক্ষাৎকারকে পটভূমিতে রেখে। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে লিসা জিজ্ঞেস করলেন:

– What is the most important quality for a revolutionary to possess?

– l`amour.
(‘ভালোবাসা’, চে’র উত্তর। ‘মানুষের প্রতি, ন্যায় এর প্রতি, আর সত্যের প্রতি ভালোবাসা’)।

তরুণ বয়সে চে তখনো চে হয়ে ওঠেননি, স্রেফ আর্নেস্তো। বেরিয়ে পড়েছিলেন লাতিন আমেরিকা ঘুরে দেখতে। সম্বল একটি মটরসাইকেল আর মানুষের প্রতি গভীর মমতা আর ভালোবাসা। মানুষকে ভালোবেসেই ক্রমে আর্নেস্তো হয়ে উঠেছিলেন চে। সেই ভালোবাসা মানুষও তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে দু’হাতে। চের মৃত্যুর পর ৪৩ বছরেও সেই ভালোবাসা এতটুকু ম্লান হয়নি, বরং দেশ কাল সীমানা সময় ডিঙিয়ে – লাতিন আমেরিকা ইউরোপ থেকে শুরু করে বাংলার একটি তরুন কিংবা কিশোরের চোখেও সেই ভালোবাসা সমান দীপ্তি নিয়ে জ্বলে।

২.
আরেকটি সাক্ষাৎকারের কথা বলি এবার। স্বাধীনতার ঠিক পর পরই সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেয়া বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার।

ফ্রস্ট প্রশ্ন করলেন – ‘আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি কি’?
বঙ্গবন্ধু বললেন – ‘আমি আমার মানুষকে ভালোবাসি’
ফ্রস্ট এবার জিজ্ঞেস করলেন – ‘আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কি’?
একটু থেমে বঙ্গবন্ধু বললেন – ‘আমি তাদের বড় বেশী ভালোবাসি’

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন – ‘আমি আমার দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, সেই ভালোবাসা নিয়ে মরতে চাই, আর কিছু চাই না’।

৩.
মানুষ রাজনীতি করে মানুষেরই জন্য। আর সেই মানুষও ভালোবেসেই কাউকে তাদের নেতা বানায়। নেতার এক ডাকে মুক্তির বাণী বুকে নিয়ে রাজপথে জীবন দেয়, স্টেনগান হাতে তুলে নেয়। বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যায়। কখনো কখনো এই ভালোবাসাই কয়েক দশকের মিথ্যা ক্লেদ গ্লানি স্তাবকতাকে দু’হাতে সরিয়ে সত্যের সন্ধান করে। মিথ্যাচার দেখলে প্রতিবাদ করে, মিথ্যাবাদীদেরকে এবং তাদের দোসরদের চিহ্নিত করে।

৪.
মনে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এক বন্ধুর সাথে তার নেতার বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে বন্ধুটিকে বলেছিলাম – ‘যে নেতৃত্বের প্রত্যাশা আমি করি, তার নেতার মধ্যে আমি সেটি খুঁজে পাইনি’। বন্ধুটি দুঃখিত হয়ে আমাকে একটি লম্বা লেকচার দিয়েছিল – ব্যক্তিগত ক্যারিশমা বা মমতা দিয়ে কেন একজন নেতাকে বিচার করা সঠিক নয় (বৈজ্ঞানিক তো নয়ই) – তা বোঝাতে। শুনে আমার চমক লেগেছিল। ‘ব্যক্তি মমতানিরপেক্ষ’, ‘যুক্তিনির্ভর’, ‘বৈজ্ঞানিক নেতৃত্ব’ – কি সুন্দর দ্যোতনাময় শব্দগুলো! বন্ধুটির মাথায় হয়তো যা কখনোই আসেনি তা হল – এই ক্যারিশমা বা মমতা নিয়ে কোন নেতাই জন্মান না। এক দিনে তা তৈরীও হয় না।

৫.
চেঙ্গিজ আইতমাতভ এর ‘প্রথম শিক্ষক’ (Duishen / The First teacher, 1962) আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্পগুলোর একটি। গল্পের স্বল্পশিক্ষিত সেই অসাধারন শিক্ষকের কথা মনে আছে? লেনিনের প্রতি গভীর ভালোবাসাকে সম্বল করে প্রত্যন্তের ছোট্ট একটি গ্রামে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার দায়িত্ব যিনি নিয়েছিলেন। স্কুলের শিশুদের প্রথম যে শব্দটি লিখতে শিখিয়েছিলেন, তা হল ‘লেনিন’।

লেখাটির একটি প্রিয় অংশ থেকে উদ্ধৃত করছি:

When we came into our classroom and sat down on the straw, Duishen did not go and light the stove at once as he usually did.
“Get up,” he ordered us. We did. “Bare your heads.” Obediently we took off our caps, and he took off his peaked cap, too. We did not know what it meant. And then he told us in a breaking, husky voice:

“Lenin is dead. People the world over are mourning him. And you, too, must stand where you are and not talk. Look at his picture. Remember this day.”

Our schoolroom became so quiet as if it lay buried under snow. We could hear the wind blowing in through the chinks in the walls. We could hear the straw rustling as the snowflakes fell on it.

That mournful hour when bustling towns became mute, when factories whose clamor shook the earth grew still, when rumbling trains paused on the tracks, when the whole world grieved in silence, we too, a particle of a part of the people, stood in solemn silence with our teacher in that icy barn called school, and took farewell of Lenin, believing in our hearts that none could be closer to him and none more bereft. And there was our own Lenin in his baggy jacket, and his arm in a sling, looking at us from the wall as before. And as before he seemed to speak to us, saying with his clear, trusting eyes: “Children, if only you knew what a future awaits you!” And I fancied, in those silent moments, that he really was thinking of my future.
(মূল রুশ থেকে ওলগা শার্তস এর অনুবাদ)

এই ভালোবাসাকে কি বলে? অন্ধ লেনিন পূজা? সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর আড়ম্বরে যখন লেনিনের মুর্তি ভাঙ্গা হচ্ছিল, পৃথিবী জুড়ে বিবেকবান মানুষেরা গভীর বিষাদে দীর্ঘশ্বাস চেপে ভাবছিল – কাজটা ঠিক হল না। এদের কিংবা দুশ্যেনদের কি বলা সঙ্গত হয়? লেনিন কাল্টের চর্চাকারী অবৈজ্ঞানিক মানুষের দল?

৬.
মাঝে মাঝে ভাবি – মমতা, ভালোবাসা শব্দগুলো কারও কারও কাছে এতো নেতিবাচক অর্থ নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল কিভাবে? কারা করলো? হয়তো তারাই – মানুষকে জাগিয়ে তোলার, মানুষের বিশ্বাস আস্থা অর্জন করার ক্ষমতা যাদের নেই। যারা নানান তত্ত্বের ফাঁকে পড়ে মানুষকে ভালোবাসার সেই সহজ সাধারণ তত্ত্বটিই হয়তো ভুলে গেছেন। দেশের মানুষগুলোও তাই নিতান্ত বৈজ্ঞানিক এবং যুক্তিযুক্তভাবেই গত ৩৯ বছরেও তাদের আর ভালোবাসতে পারলো না!

কি জানি হয়তো একারণেই একরকম হীনমন্যতা থেকে এই শ্রেনীটি কখনো ব্যক্তিমমতাহীন বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের তত্ত্বের আড়ালে লুকিয়ে, কখনো ‘পারসোনালিটি কাল্ট’ এর ধোঁয়া তুলে – ‘পারসোনালিটি’-গড়ে ওঠার প্রক্রিয়াটিকেই অস্বীকার করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন, একে ছোটো করার চেষ্টা করেন। স্নানের গামলা থেকে শিশুটিকে আগেই ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল, এখন যেন পড়ে থাকা জলটুকুও ছুঁড়ে ফেলার আয়োজন! কিন্তু এরা ভুলে যান, ‘পারসোনালিটি কাল্ট’ তৈরী হতে হলেও প্রথমে সেই মাপের ‘পারসোনালিটি’ লাগে। সময় এবং মানুষই নিজের হাতে বহু বছরে সেই পারসোনালিটি তৈরী করে। আর সেটি হয় এমনই পারসোনালিটি যা কোটি মানুষের আবেগ আকাঙ্খা উদ্দীপনাকে ধারণ করতে পারে। নিম্ন মাঝারী হীনমন্য নেতৃত্বের কোন জায়গা নেই সেখানে। লেনিন পেরেছিলেন, চে পেরেছিলেন, মাও সে তুং পেরেছিলেন। কারণ, তারা হীনমন্য ছিলেন না। মজার বিষয় হল, উইকিপিডিয়াতে ‘personality cult’ শব্দ দু’টো দিয়ে সার্চ করলে সেখানে‍ যে নামগুলো পাওয়া যায়, তার মধ্যে রয়েছে লেনিন, সুকার্নোর মতো মানুষদের নাম।

৭.
মাঝে মাঝে এও ভাবি, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন যাঁরা, তাদের কত অংশ অর্থনীতির পাঠ নিয়েছিলেন আর কত অংশ গিয়েছিলেন স্রেফ ভালোবাসার তাগিদে নেতার ডাকে। সেই ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে একজন মানুষের মত মানুষের প্রয়োজন হয়, নেতার প্রয়োজন হয়। নেতা এবং মানুষের সেই দ্বিমূখী স্রোতময় ভালোবাসা একটি বিন্দুতে এক হলে কেবল তখনই সাড়ে সাত কোটি মানুষ এক সাথে গর্জে ওঠে, একটি দেশের জন্ম হয়।

৮.
বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে আমরা নেতা বিশেষের একরকম ভক্ত সমর্থকগোষ্ঠী দেখতে পাই। ৭৫ এর পর থেকে একটি দীর্ঘ সময়‍‍ যে মানুষটির নাম উচ্চারণ করাও একরকম অসম্ভব ছিল, আজকে অবাক হয়ে দেখি তার নামে বিমান বন্দর হচ্ছে, সভা সমিতিতে জোর গলায় স্তাবক বাহিনী তার নানান গুণ কীর্তনে ব্যস্ত। সম্প্রতি, পত্রিকা মারফত জানতে পারি, যুদ্ধাপরাধের বিচারের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আজকাল নাকি নিজামী সাহেবও সেই স্তাবকদের দলে যোগ দিয়েছেন। আশ্চর্য নয়? কারণ, সম্ভবত তার মতো এক নিকৃষ্ট যুদ্ধাপরাধীও জানে যে এই দেশের অনেক মানুষের কাছে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ দু’টি অবিচ্ছিন্ন এবং প্রায়-সমার্থক। যেমন, সেলিনা হোসেন বলেছিলেন – ‘বঙ্গবন্ধুর নামে বাংলাদেশের ইতিহাসের দুয়ার খুলে যায়’।

এরকম একটি সময়ে এর পাশাপাশি আমরা এও দেখছি বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু সুপরিকল্পিত মিথ্যে অভিযোগ এখনো সমান গতিতে বহমান। এমনকি তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন কিনা, কিংবা তা আদৌ চেয়েছিলেন কিনা, সেটি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে, এমনকি সুপ্রীম কোর্টে মামলা পর্যন্ত হয়! এই দেশে রাতারাতি শেখ মুজিবের স্তাবক বাহিনী দাঁড়িয়ে গেছে – একথা সত্য। কিন্ত সেই সত্যের সাথে গত ৩৯ বছর ধরে এই মানুষটিকে নিয়ে যে সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার হয়ে এসেছে সেই সত্যটি মিথ্যা হয়ে যায় না। ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাজিত শক্তি তো বটেই, প্রগতিশীলদের একাংশের সক্রিয় সমর্থনে, কখনো নিরবতায়, বিস্মরণে এর অপ্রতিরোধ্য বিস্তার হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত সত্যের রূপ পেয়েছে মিথ্যেগুলো। বাটারফ্লাই এফেক্ট এর মতো এর প্রভাব পড়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায়। আমি আমার ক্ষুদ্র সামর্থে‍‍ যখনই পেরেছি এর প্রতিবাদ করেছি, পাল্টা প্রশ্ন করেছি। কখনো করেছি যে দেশটির আলো হাওয়ায় জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো পার করেছি তার সঠিক ইতিহাস জানবার দায় থেকে, স্বাধীন দেশে একটি দীর্ঘ সময় এই দেশটির স্রষ্টার নাম উচ্চারণ করতে না পারার গ্লানি থেকে, মনুষ্যত্বের দায় থেকে এবং বলতে সংকোচ নেই – ভালোবাসার দায় থেকে। আমার কিংবা আমার মতো কয়েকজনের এই ক্ষুদ্র প্রতিবাদের উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুর স্তাবক বাহিনীর দুর্নীতি, ছাত্রলীগের পান্ডাদের তান্ডব আর আওয়ামী লীগের ব্যার্থতাগুলো থেকে দায়মুক্তি ঘটানো নয়। এটি মনে রেখে যে, ভালোবাসা আর অন্ধ আনুগত্য এক জিনিস নয়, যে অন্ধ আনুগত্যে পড়ে পুরো একটি জার্মান জাতি কয়েক কোটি মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করতে তাদের নেতাকে সমর্থন জোগায়।

৯.
ভাবছি এতে আমার গায়ে কি লেবেল সাঁটা যায়? কেউ হয়তো বলবেন কট্টর আওয়ামী পন্থী, কেউবা বলবেন অন্ধ মুজিব ভক্ত। যে যাই বলুক তাতে আমার বয়েই গেল। বাংলাদেশ নামের দেশটির জন্মের এবং অভ্যুদয়ের সাথে যে মানুষটির নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, যেই দেশটির সাথে আমার নাড়ির যোগাযোগ, সেই দেশের সেই মানুষটির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যে কোন লেবেল মাথা পেতে নিতে রাজি আছি। এ হয়তো খুব সামান্য পরিসরে এক ধরণের ঋণ স্বীকার।

আহমদ ছফার কথা মনে পড়ে। ১৪ আগস্ট (১৯৭৫) এর রাতেও যিনি ছিলেন ফেরার, মুজিব আমলের আজীবন কঠোর সমালোচক সেই মানুষটি। অথচ মুজিবকে নিয়ে তাঁর গভীর ভালোবাসাপূর্ণ লেখাগুলোও তো আজ ইতিহাসেরই অংশ। তিনিই বলেছিলেন: বাঙালির শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘বলাকা’ নয়, ‘সোনার তরী’ নয়, ‘গীতাঞ্জলি’ নয়; বাঙালির শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’। [সূত্র]

তিনি আরও লিখেছেন :

আজ থেকে অনেকদিন পরে হয়ত কোন পিতা তার শিশুপুত্রকে বলবেন, জান খোকা! আমাদের দেশে একজন মানুষ জন্ম নিয়েছিল যাঁর দৃঢ়তা ছিল, তেজ ছিল আর ছিল অসংখ্য দুর্বলতা। কিন্তু মানুষটির হৃদয় ছিল, ভালবাসতে জানতেন। দিবসের উজ্জ্বল সূর্যালোকে যে বস্তু চিকচিক করে জ্বলে তা হল মানুষটির সাহস। আর জ্যোৎস্নারাতে রুপালি কিরণধারায় মায়ের স্নেহের মত যে বস্তু আমাদের অন্তরে শান্তি এবং নিশ্চয়তার বোধ জাগিয়ে তোলে তা হল তাঁর ভালবাসা। জান খোকা তাঁর নাম? শেখ মুজিবুর রহমান। (ছফা, খ. ৭, পৃ, ১৬২)

একেও বা কি বলা যায়? আহমদ ছফার মতিভ্রম? নাকি ক্ষণিকের দুর্বলতা?

অস্মিতা

"শুধু স্বপ্নহীন ক্ষোভে বসে থেকে থেকে, ঘুমে ঘুমে, আত্মগোপনে গোপনে ক্লান্ত। একটা কিছুকে উপলক্ষ করে আবার দাঁড়াতে চাই।"

২৩ comments

  1. নিরাভরণ - ৩১ মার্চ ২০১০ (১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ)

    খুব ভাল লাগল আপনার লেখাটা। আপনার ভালবাসাকে শ্রদ্ধা জানাই। আর লেখা থেকে এটাও বুঝলাম যারা সমালোচনা করেন তাদের সমালোচনা করার অধিকারকেও আপনি অশ্রদ্ধা করেননা হয়ত।

    বাঙালির শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘বলাকা’ নয়, ‘সোনার তরী’ নয়, ‘গীতাঞ্জলি’ নয়; বাঙালির শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’।

    এরপর আর কি বলার থাকতে পারে?

  2. মোহাম্মদ মুনিম - ২ এপ্রিল ২০১০ (১১:২৩ অপরাহ্ণ)

    অস্মিতা চে গুয়েভারার ভালবাসার ব্যাপারে যে বক্তব্যটি উদ্ধৃত করেছেন, সেটা আমিও অনেক দিন আগে আজিজ মার্কেটের কোন এক দোকানের পোস্টারে দেখেছিলাম। আমাকে তখন এই কথাগুলো বেশ ভাবিয়েছিল এবং এখনো ভাবায়। রাজনীতি করে অল্প কয়েকজনই তো ক্ষমতার স্বাদ পান, বাকিদের তো সারা জীবন রাস্তাতেই কাটাতে হয়। তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিবিদ হলে তো কথাই নেই, কথায় কথায় জেল, জেলে পুলিশের নির্যাতন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে যখন তখন খুন হয়ে যাবার ভয়, তারপরও তাঁরা রাজনীতি করেই যান। কিসের আকর্ষণে করেন? মানুষের প্রতি ভালবাসা থেকেই করেন। কেঊ আমি যে রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করি সে রাজনীতি করেন, কেউ অন্য রাজনীতি করেন। কিন্তু যারা মানুষকে ভালবেসে রাজনীতি করেন, তাঁদেরকে আমার শ্রদ্ধার আসন দিতেই হবে।
    বঙ্গবন্ধু আজ জাতির পিতা হিসাবে স্বীকৃত, কিন্তু তিনি তো রাজনীতি শুরু করেছিলেন সেই বারো বছর বয়সে, টুঙ্গিপাড়াতে। ব্রিটিশ রাজের পুলিশের বিরুদ্ধে মিছিল করে কয়েকদিন জেল খেটেছিলেন। ব্রিটিশ রাজের পুলিশ তো আজকের রমনা থানার ‘ওসি মোজাম্মেলের’ সাবধানী পেলব পুলিশ নয়, লালা লাজপত রায়কে পিটিয়ে মেরে ফেলা পুলিশ। সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মিছিল করতে বেজায় সাহস লাগে, বঙ্গবন্ধুর তো সেই বয়সে মার্কস আর এঙ্গেলস পড়া ছিলো না, শুধু মানুষের প্রতি ভালবাসাই ছিলো, সেই ভালবাসা থেকেই তিনি সাহসটা পেয়েছিলেন। তারপর কলকাতায় গিয়ে তিনি পাকিস্তান আন্দোলন করেছেন, আজকের বিচারে সেটা ভুল রাজনীতিই ছিলো, কিন্তু সেই রাজনীতিও মানুষকে ভালবেসেই করা, অতি পশ্চাৎপদ মুসলমান সমাজের দুরবস্থা দেখে তাদের উত্তরণের জন্য করা। এই ভালবাসা থেকেই তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রের অসারতা দ্রুত বুঝতে পেরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য রাজনীতি করেছেন।
    সব রাজনীতিবিদই অবশ্য এমন নন। কেউ কেউ সারা জীবন সাফারী পরে অফিস করেছেন, উর্দি পরে পাবলিককে আড়ালে আবডালে ‘ব্লাডি সিভিলিয়ান’ বলে গালি দিয়েছেন। তাঁরা অবসরের সময় নতুন করে দেশের প্রেমে পরে যান, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি তে নাম লিখিয়ে ফেলেন দেশের জন্য একটা কিছু করবেন এই আশাতে। গ্রামের বাড়ী গিয়ে অযথাই লোকজনকে বুকে জড়িয়ে ধরেন, আর ভাবেন জনগনের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছেন। কেউ কেউ এই করে পার্টির নমিনেশনও পেয়ে যান, সাংসদ বা মন্ত্রীও হয়ে যান, কিন্তু তাঁরা কিছুই করতে পারেন না। কারণ তাঁরা সারা জীবন বাড়ির চাকরকে পান থেকে চুন খসলে চড় থাপ্পড় দিয়েছেন, নিজের গাড়ীতে কোন রিকশাওয়ালা দাগ ফেলে দিলে সেই রিকশাওয়ালাকে পিটিয়েছেন, সেটাই তাঁদের চরিত্র, এই চরিত্র দিয়ে ‘ভিশনারী’ হওয়া যায়, ইউরোপ আমেরিকা ঘুরে দেশ অমন করে ফেলার স্বপ্ন দেখা যায়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করা যায় না।
    মার্কিন রাজনীতিতেও এই ভালবাসার ব্যাপারটাই আসল, ম্যাকেইন সাহেবের স্ত্রী বাংলাদেশের এক পতিতার শিশুকন্যাকে দত্তক নেন, ম্যাকেইন সাহেবও সেই কন্যাকে নিজের কন্যা হিসাবে মেনে নেন। ২০০০ সালে বুশের সাঙ্গপাঙ্গরা সেই কন্যা অবৈধ সন্তান সেই গুজব ছড়িয়ে বুশকে নমিনেশন পাইয়ে দেন। বুশ দু টার্মের জন্য রাষ্ট্রপতি হয়ে সারা দুনিয়াতে বোমাবাজী করে তাঁর নিজের দেশের আর বিশ্ববাসীর ঘৃণাই কুড়িয়েছেন। আজ ডালাসের কোথায় কোন আলীশান বাড়ি কিনে তিনি কি করেন সেই নিয়ে কারো কোনই আগ্রহ নেই। কিন্তু ম্যাকেইন সাহেব নির্বাচনে হেরে গিয়েও সকলের শ্রদ্ধার পাত্র, যার কাছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নমিনেশনের চেয়েও দত্তক কন্যা বড়, তিনি ভোটের যুদ্ধে হেরে গিয়েও জিতে যান।

  3. সৈকত আচার্য - ৪ এপ্রিল ২০১০ (১০:০৫ অপরাহ্ণ)

    ১। পোষ্টের বিষয় নির্বাচনটি ভালো লেগেছে। তার কারন,বিষয়টি সব সময়ের জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ন ছিল, অথচ বহুলালোচিত ছিলনা কখনো। অষ্মিতা আমাদের ভাবনার মধ্যে এটা নিয়ে এসেছেন। তাকে অভিনন্দন।

    ২। নির্মানে অষ্মিতা’র পোষ্ট একেবারেই হাতে গোণা। কিন্ত নির্মানে করা অষ্মিতা’র তীক্ষ্ণ-তীব্র মন্তব্যের সাথে বিলকুল পরিচিত আমি, হয়তো অন্যরাও। একজন সমালোচক হিসেবে নিষ্টার সাথে তলোয়ার উঁচিয়ে মাঠে নেমে পড়তে দেখা যায় তাকে, প্রায়শঃই। তাই বলে, তলোয়ার হাতে সবাইকে তিনি কচুকাটা করেন, তা বলছি না।

    ৩। অভিজিত যখন এই ব্লগে সমকামীতা নিয়ে লেখেন, তাকে তিনি কুর্ণিশ করেন। সাহসী লেখার জন্য অভিবাদন জানান। আবার ফারুক ওয়াসিফ যখন যুদ্ধাপরাধ নিয়ে বিভ্রান্তিকর অবস্থানে থেকে সাইকিয়াদের বিভ্রান্ত লেখনী নিয়ে মেতে উঠেন অষ্মিতা’র সংঙ্গীন তখন সুমনের গানের সেই মাঝ রাতের চাঁদের কাস্তের মতো আস্তে আস্তে ধারালো চকচকে হয়ে উঠতে থাকে। মনে হয়েছে, ফারুক এই ব্লগে ইতিমধ্যে চাঁদের আলোতে তেমন কিছু দেখে আক্রান্ত বোধ করেছেন।

    ৪। যা হোক, ‘ভালোবাসা’ প্রসংগ এনেছেন তিনি। সম্পূর্ন ভিন্ন মাত্রায়। অনেক কথা স্মৃতি মনে এলো। গুছিয়ে বলতে না পারার দায় নিয়ে দু’একটা কথা বলি। অস্মিতা লিখেছেনঃ

    কিন্ত সেই সত্যের সাথে গত ৩৯ বছর ধরে এই মানুষটিকে নিয়ে যে সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার হয়ে এসেছে সেই সত্যটি মিথ্যা হয়ে যায় না। ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাজিত শক্তি তো বটেই, প্রগতিশীলদের একাংশের সক্রিয় সমর্থনে, কখনো নিরবতায়, বিস্মরণে এর অপ্রতিরোধ্য বিস্তার হয়েছে।

    একটা উদাহরন দেই;
    জাসদ করা বড় ভাইদের কাছ থেকে শুনেছি, শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়েছেন তারা। ছাত্রলীগ ও গিয়েছে। তারা শ্লোগান দিচ্ছে শেখ শেখ শেখ মুজিব।। লও লও লও সালাম।। জাসদ ছাত্রলীগ পালটা শ্লোগান দিয়েছে, শেখ শেখ শেখ মুজিব।। মীর মীর মীরজাফর।। কি করে এটা সম্ভব হলো। এখন প্রশ্ন জাগে, এসব কারা শিখিয়েছিলেন তাদের?

    ৫। বাংগালীর স্বাধীনতার সংগ্রামে বংঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছিল প্রশ্নহীন। বাংঙ্গালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রধান এই পুরুষ এবং তার ঐতিহাসিক ভুমিকার মুল্যায়ন আমাদের দেশের বামপন্থী দলগুলো করতে জানেনি, পারেনি। বাস্তবতাকে স্বীকার করে কিভাবে তাদের নিজেদের কর্মকৌশল নির্ধারন করা যায়, তা ভাবতে পারেননি। কেবলমাত্র পেটিবুর্জোয়া রাজনীতির ধারক এবং মুখপাত্র বলে শেখ মুজিবকে দেখতে চাইতেন। জনগনকে ভালোবেসে কিভাবে একজন রাজনীতিবিদ দিনের পর দিন বাংগালির স্বাধীনতার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তা স্মরন করতেন না। ছোট করতে চাইতেন তাকে। এই করতে গিয়ে বিএনপি-জামাতের গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারগুলো দেশে প্রতিষ্টিত হয়ে গেল। জাসদ থেকে শুরু করে অনেক বামদল এটা উপভোগ করলো। কিন্ত প্রগতিশীল আন্দোলনের সামনে তখন কি বিপদগুলো অপেক্ষা করছিল তা নিয়ে এদের কোন মাথাব্যাথাই ছিল না। এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে নিজেদের কোন দায় দায়িত্ব ছিল কিনা, তা আর কোন কালেই ভেবে দেখলো না।

    ৬। একটা বাস্তব এবং ঐতিহাসিক কারনেই একজন শেখ মুজিবের উত্থান হয়েছিল, ইতিহাসের এই সত্যকে তারা তাদের ‘বৈজ্ঞানিক নিক্তি’ দিয়ে বিচার করতে চুড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তার এই উত্থানকে বুর্জায়াদের উত্থান বলে প্রচার করেছিলেন। কিন্ত এটা যে ইতিহাসের একটা পর্যায় (phase) জাতি অতিক্রম করছে এবং তাতে তাদের ভুমিকা রাখা উচিত এই সহজ সত্য বোঝার স্বাভাবিক জ্ঞাণটুকু অনেকেই হারিয়ে ফেলেছিলেন। সমাজতন্ত্রের প্রয়োজনে শেখ মুজিব বিরোধীতা করতে গিয়ে তারা স্বাধীনতার শত্রুদের রুখে দাঁড়ানোর কথা ভুলে গিয়েছেন। তাদের প্রশ্রয় দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় মিথ্যাচারগুলো নীরবে মেনে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বাকীরা এই মিথ্যাচার ঠেকাতে এগিয়ে আসেনি। তারা বেড়ার ফাঁক দিয়ে খেলা দেখেছে।

    ৭। মাও সে তুং চীনের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস জানতেন। শুধু জানতেন না, এটা তিনি ঠিক ঠিক ভাবে আত্নস্থ করেছিলেন। চীন বিপ্লবের জন্য জরুরী কাজ ছিল এটি। হাজার বছর বাদ দিলাম। আপাততঃ স্বাধীনতার ইতিহাসটুকু ঠিকভাবে আত্নস্থ করা এবং বাস্তবতার আলোকে তাকে ব্যাখ্যা করতে পারা বামপন্থী নেতা-কর্মীদের জন্যও খুব জরুরী বলে মনে হয় আমার। নাহলে আজন্মের বিভ্রান্তি তাদের কাটবে না।

    ৮। যারা নিজেদের দেশের আত্ননিয়ন্ত্রন অধিকারের এবং মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসকে বামপন্থার প্রয়োজনের দোহাই দিয়ে ভুল ভাবে দেখেছন এবং উপস্থাপন করেছন এবং সেই সময়ের নেতৃত্বকে খাটো করে দেখেছেন তারা জাতির সামনে রাশিয়ার এবং চীনের বিপ্লবের ইতিহাস সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হবেন (প্রয়োগ তো দুরের ব্যাপার) এটাই তো স্বাভাবিক।

    • মুয়িন পার্ভেজ - ৫ এপ্রিল ২০১০ (১২:৩২ অপরাহ্ণ)

      সৈকত আচার্য

      ৮। যারা নিজেদের দেশের আত্ননিয়ন্ত্রন অধিকারের এবং মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসকে বামপন্থার প্রয়োজনের দোহাই দিয়ে ভুল ভাবে দেখেছন এবং উপস্থাপন করেছন এবং সেই সময়ের নেতৃত্বকে খাটো করে দেখেছেন তারা জাতির সামনে রাশিয়ার এবং চীনের বিপ্লবের ইতিহাস সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হবেন (প্রয়োগ তো দুরের ব্যাপার) এটাই তো স্বাভাবিক।

      আপনার এ-কথাটি খুব মনে ধরল। ধন্যবাদ।

      • মাসুদ করিম - ৫ এপ্রিল ২০১০ (১০:৫৯ অপরাহ্ণ)

        শেখ মুজিবকে নিয়ে আমাদের বামভাইদের আচরণ নিয়ে আমি এখনো শঙ্কিত নই। ভয় হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে পশ্চিমে আমাদের বামদাদাদের যেদশা হয়েছে — প্রথমে জমিদার বলে বর্জন তারপর গুরুদেব বলে তর্পণ — তেমনটি যদি হয় শেখ মুজিবকে নিয়ে আমাদের বামভাইদের, তবে সে ভালবাসার অত্যাচারেই মুজিবের প্রাণ নিশ্চিত ওষ্ঠাগত হবে। আজো যে তিনি বেঁচে আছেন, তা অবশ্যই এজন্য যে, বামের ভালবাসার অত্যাচার এখনো মুজিবকে পেয়ে বসেনি।

  4. mosharrof - ২৮ এপ্রিল ২০১০ (১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ)

    শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ছিলেন এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। কিন্তু লেনিন, মাও সে তুং এমন কি চে’র সাথে কিভাবে লেখক শেখ মুজিবের তুলনা করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের শাসনামলে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ কিভাবে পরিচালিত হয়েছে সে সম্পর্কে লেখকের জানার কোন ত্রুটি থাকার কথা নয়। লেনিন, মাও সে তুং এর কাছ থেকে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণে ব্রতী সকলের শিক্ষণীয় অনেক কিছু আছে। কিন্তু শেখ মুজিবের মানুষের প্রতি ভালবাসা আর লেনিন, মাও সে তুং এর মানুষের প্রতি ভালবাসার ফারাক না বুঝে এক কাতারে চিন্তা করার মাঝেই শ্রেণী চিন্তার সীমাবদ্ধতা ধরা পড়ে।
    মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কেন ও আই সি তে যোগ দিল, কেন গঠন করল ইসলামিক ফাউন্ডেশন? সংবিধানের ২য় সংশোধনীতে বলা হল…সংসদের দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন পেলে সংবিধানের মৌলিক মানবাধিকারের যে কোন কিছু খর্ব করা যাবে। যার কারণে ৪র্থ সংশোধনী করে বাকশাল কায়েম করা গিয়েছিল। একই কারণে ৫ম সংশোধনী করা গিয়েছে। কারণ, দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন সংসদে থাকলে তা করা যায়। অথচ ২য় সংশোধনী না থাকলে এসব করা যেতো না। একইভাবে ৮ম সংশোধনীতে লম্পট এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করলো। দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন থাকা সত্ত্বেএ এখন মানুষকে ভালবাসে বলেই ৫ম সংশোধনী বাতিলের পরেও আওয়ামী লীগ বিসমিল্লাহ বাদ দিতে পারে না, ধমর্ভিত্তিক রাজনীতি ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে পারে না।রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে তো বলাই বাহুল্য।
    আর দুস্ট লোকদের তো আর ও কতো কথা। সিরাজ সিকদারকে কেন হত্যা করা হলো। দেশের মানুষকে ভালবেসে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিলেন শেখ মুজিব কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলেন না কেন?
    বিচারের আয়োজন চলছে অবশেষে। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গণ আদালত গঠন করে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারের দাবিকে এ প্রজেন্মর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ধ্বজাধারীদের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন। কারণ তিনি জানতেন স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানে থাকা মৌলবাদী রাজনীতি ও ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার নিষিদ্ধ না করে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ধ্বংস করা যাবে না।
    শেখ মুজিবকে যারা অন্ধভাবে ভক্তি করেন তারা বামপন্থীদের কাছে সঠিক চিন্তাধারা ও অন্ধত্ব থেকে মুক্তি যে পথে দেখেন সে পথে যারা হাঁটছেন তাদের বাম পরিচয় নিশ্চিহ্ণ হতে চলেছে।
    আবদুল গাফফার চৌধুরী বা অনেকের লেখাতেই এ ধরনের নসিহত আমরা দেখে থাকি। আলোচ্য লেখাটি কী তার চেয়ে ব্যতিক্রম?

    • অস্মিতা - ২৮ এপ্রিল ২০১০ (১০:২৪ অপরাহ্ণ)

      @ মোশাররফ ‌# ৪

      মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের শাসনামলে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ কিভাবে পরিচালিত হয়েছে সে সম্পর্কে লেখকের জানার কোন ত্রুটি থাকার কথা নয়।

      নিশ্চয়ই। স্তালিন শাসনামলে সোভিয়েত রাশিয়া কিংবা সাংস্কৃতিক বিপ্লব সমসাময়িক চীন রাষ্ট্রটিও কিভাবে পরিচালিত হয়েছে সেটিও আমরা ভুলে যাইনি। পোস্টের বিষয়টি একটি নেতৃত্বের দীর্ঘ পথ পরিক্রমার ভুলভ্রান্তি নিয়ে নয়। বিষয়টি ভুলত্রুটি সত্বেও মানুষের তাদের প্রতি ভালোবাসা, মানুষের প্রতি তাদের ভালোবাসা, মানুষকে জাগিয়ে তোলার ক্ষমতা বা তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।

      কিন্তু লেনিন, মাও সে তুং এমন কি চে’র সাথে কিভাবে লেখক শেখ মুজিবের তুলনা করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। . . . কিন্তু শেখ মুজিবের মানুষের প্রতি ভালবাসা আর লেনিন, মাও সে তুং এর মানুষের প্রতি ভালবাসার ফারাক না বুঝে এক কাতারে চিন্তা করার মাঝেই শ্রেণী চিন্তার সীমাবদ্ধতা ধরা পড়ে।

      এই তিন জন আলোচনায় এসেছেন তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের তুলনামূলক বিচারের জন্য নয়। এসেছেন এই সাধারণ সত্যটি মনে করিয়ে দিতে যে তারা তাদের নিজ নিজ মতাদর্শে থেকেও মানুষকে ভালোবাসতে পেরেছিলেন, মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছিলেন। এই সামান্য সত্যটুকুও দেখতে না পারা তখনই সম্ভব, যখন কেউ তত্ত্ব বই আর নেতাদের হাতে মগজ ধোলাইয়ের বাইরে যেয়ে অনুভব করার ক্ষমতাটি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেন। বহুদিন আগে শোনা একটি কথা মনে পড়ে গেল – ‘হৃদয় যখন ফাঁকা থাকে, মস্তিষ্ক তখন কোন কাজেই আসে না’। জানতে ইচ্ছে হয় সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শিক তত্ত্বকথার ছায়া থাকাটাই যদি নেতৃত্ব বিচারের মানদন্ড হয়, তাহলে সেই বিচারে লেনিন-চে-মাও তো বহু দূরের কথা, হালের শ্যাভেজের সাথেও কি জামান সাহেবরা এক কাতারে উচ্চারিত হওয়ার যোগ্যতা রাখেন? এতো সময় ধরে এরা রাজনীতি করলেন; উজ্জ্বল তরুণেরা তাঁদের প্রতিপালনের ব্যয় নির্বাহে শহরময় চাঁদা তুলে হয়রান হলো। তারপরও কবে তাদের সেই যোগ্যতা হবে? ৩৯ বছর ধরে অপেক্ষায় আছি। এই তরুণদের যদি বলেন, তারা হয়তো ১০৮ টা নীলপদ্মও খুঁজে এনে দেবে। তাতেও যদি হয়!

      আসলে বলতেই হচ্ছে যে আমার ভুল হয়েছে। মানুষের ভালোবাসা বিচার করবার আগে এখন মনে হচ্ছে একে খানিকটা শ্রেনীবদ্ধ করাও হয়তো জরুরী ছিল, যেমন: মানুষের তাদের নেতার প্রতি ‘সমাজতান্ত্রিক ভালোবাসা,’ ‘পূঁজিবাদী ভালোবাসা’, ‘লাল ভালোবাসা’, ‘অ-লাল ভালোবাসা’। সেখানেই বা থামি কেন? সমাজতন্ত্রের মধ্যেও রয়েছে ‘বৈজ্ঞানিক ভালোবাসা’, ‘শোধনবাদী ভালোবাসা’, ‘ইতিহাস নির্ধারিত ভালোবাসা’, ‘কমরেডীয় ভালোবাসা’, ‘মস্কোপন্থী ভালোবাসা’, ‘চীনপন্থী ভালোবাসা’ ইত্যাদি।

      লিখেছেন –

      সংবিধানের ২য় সংশোধনীতে বলা হল…সংসদের দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন পেলে সংবিধানের মৌলিক মানবাধিকারের যে কোন কিছু খর্ব করা যাবে। যার কারণে ৪র্থ সংশোধনী করে বাকশাল কায়েম করা গিয়েছিল। একই কারণে ৫ম সংশোধনী করা গিয়েছে। কারণ, দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন সংসদে থাকলে তা করা যায়। অথচ ২য় সংশোধনী না থাকলে এসব করা যেতো না। একইভাবে ৮ম সংশোধনীতে লম্পট এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করলো।

      বঙ্গবন্ধুর দোষ তাহলে দুই তৃতীয়াংশ সাংসদের ভোটে সংবিধান পাল্টে দেয়ার বিধানটি রাখা! এই যাবত ৭১-৭৫ নিয়ে বহু বাজে যুক্তি শোনার দুর্ভাগ্য হয়েছে। এটি একেবারেই নব-উদ্ভাবিত মনে হচ্ছে। বিনীত হলাম, ঋদ্ধ হলাম! এক রকম এই জ্ঞান চক্ষু উম্মীলনের আনন্দেই সোভিয়েত রাশিয়ার ১৯৩৬ সালের সংবিধানটি দেখে নিলাম। সেখানে বলা আছে:

      ARTICLE 146. The Constitution of the U.S.S.R. may be amended only by decision of the Supreme Soviet of the U.S.S.R. adopted by a majority of not less than two-thirds of the votes cast in each of its Chambers. [1936 CONSTITUTION OF THE USSR, adopted in December 1936]

      চীনের ১৯৮২ সালের সংবিধানটি দেখলাম। সেখানেও দেখি বলা আছে:

      ARTICLE 64. Amendments to the Constitution are to be proposed by the Standing Committee of the National People’s Congress or by more than one-fifth of the deputies to the National People’s Congress and adopted by a majority vote of more than two-thirds of all the deputies to the Congress. [Constitution of the People’s Republic of China, adopted on December 4, 1982]

      ক্যাস্ট্রোর কিউবার সংবিধানই বা বাদ যায় কেন? সেখানেও দেখছি লেখা আছে –

      ARTICLE 137. This Constitution can only be totally or partially modified by the National Assembly of People’s Power by means of resolutions adopted by roll-call vote by a majority of no less than two-thirds of the total number of members. [Constitution of the Republic of Cuba, 1992]

      প্রবাদ প্রতিম সমাজতান্ত্রিক তিন নেতৃবৃন্দের এই দেশগুলোতেও এই বিধানটি (দুই তৃতীয়াংশ ভোটে সংবিধান পাল্টানোর) রাখা হল কেন? মানবাধিকারকে কাঁচকলা দেখানোর জন্যই হবে হয়তো! মাঝে মাঝে ভাবি, আপনারা এই সব যুক্তি কোথায় পান? তার চেয়েও বরং জিজ্ঞেস করা উচিত – এসব কে শেখায় আপনাদের?

      লিখেছেন –

      দেশের মানুষকে ভালবেসে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিলেন শেখ মুজিব কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলেন না কেন?

      তাই? বিচার করেননি? দালাল আইন (১৯৭২) তাহলে হয়েছিল কেন? কিংবা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবুনালস) এ্যাক্ট (১৯৭৩)? প্রথম আইনটির অধীনে কত জনের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল (৩৩০০০+), কত জনের শেষ পর্যন্ত বিচার হয়েছিল (১১০০০+), কত জনের শাস্তি হয়েছিল (৭৫২+), সে সব কি ভুলে গেছেন? নাকি জানা নেই? ক্ষমা করবেন, কিন্তু বলতেই হচ্ছে – ২০১০ সালে বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে জামাত-বিএনপির সাথে গলা মিলিয়ে এই সমস্ত অজ্ঞতা বা জেনে শুনে মিথ্যাচার সম্ভবত একরকম অপরাধের পর্যায়েই পড়ে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করা বলতে যদি ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীকে ফেরত পাঠানোর কথা বুঝিয়ে থাকেন – তাহলে সেটির পটভূমি কি ছিল, কেন তা যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত করেনি এবং এখনো করেনা – সে সব বিস্তারিত জানতে ওয়ার ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের মিডিয়া-আর্কাইভ এবং ইলাইব্রেরীর এন্ট্রিগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেবেন দয়া করে। আপনি জামাত বা বিএনপি সমর্থক হয়ে থাকলে আপনার সাথে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা যেতো। কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষের প্রগতিশীল মানুষদের যে সব বিষয় নখদর্পনে থাকা কর্তব্য ছিল সেই সব বিষয়ে একজন বাম সমর্থককে বুঝিয়ে বলতে হবে ভাবতেও এক ধরণের গ্লানি বোধ করছি, তাই আর সে পথে যাচ্ছি না।

      লিখেছেন –

      বিচারের আয়োজন চলছে অবশেষে।

      সে আয়োজন কে করেছে তা উহ্য রেখেছেন। এক ধরণের সংকোচ বোধ করছেন বোধ হয়।

      আরও লিখেছেন –

      শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গণ আদালত গঠন করে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারের দাবিকে এ প্রজেন্মর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ধ্বজাধারীদের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন।

      জানতে ইচ্ছে করছে – আজকের এই বিচারের সন্ধিক্ষণে আপনাদের ভূমিকাটি কি? যেভাবে বিচার করা হবে বলা হচ্ছে তাতে কি আপনাদের কোন আপত্তি আছে? থাকলে সেটি না হয় রাজপথেই বলুন, অথবা, পৃথিবীর ২৫ টি দেশের তরুণ-বৃদ্ধ মিলে দিবারাত্র যে কর্মযজ্ঞে মেতে উঠেছে বিচারকে সফল করার জন্য তাতে এসে সামিল হউন, অথবা, নিজেরাই সমান্তরালে আন্দোলন করে একে এগিয়ে নিয়ে যান। নাকি এবারেও বসে আছেন কার্যকর অবদানহীন খুঁত সন্ধানের আশায়। সঠিক কাজটি করার দায় কি কেবল মুজিবের বা তার কন্যার? বা তাদের দলের? এই মুজিববাদের বলয় থেকে বেরিয়ে এসে নিজের দেশটির ইতিহাসের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুটিতে আপনারা দায়িত্ব নেবেন কবে? যদি এর মধ্যেই নিয়ে থাকেন, তাহলে দয়া করে এখানে জানিয়ে যাবেন হঠাত হঠাত দু’একটি অলস বিবৃতির বাইরে গত দেড় বছরে আপনারা ঠিক কি করেছেন এই ইস্যুটিকে ঘিরে যাকে ন্যূনতমভাবে হলেও কার্যকর বলা যেতে পারে।

      আরও লিখেছেন –

      কারণ তিনি (জাহানারা ইমাম) জানতেন স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানে থাকা মৌলবাদী রাজনীতি ও ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার নিষিদ্ধ না করে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ধ্বংস করা যাবে না।

      বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কবে? বঙ্গবন্ধুর আমলে ১৯৭২ এর সংবিধানের সেই ধারাটি কি ভুলে গেছেন?

      দীর্ঘদিন পরে মুক্তাঙ্গনে আপনার মন্তব্য দেখে ভাল লাগলো। ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। রাজনৈতিক জীবনের শুভ কামনা এই দফাতেও জানাতে পারছি না বলে দুঃখিত।

  5. mosharrof - ২৯ এপ্রিল ২০১০ (১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ)

    সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের সংবিধানে সংশোধনী আনার ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন নিয়ে লেনিন, মাও সে তুং, ফিডেল ক্যাস্ট্রো জনবিরোধী কোন কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন ? শেখ মুজিব তার শাসনামলে গৃহিত সংবিধানের মৌলিক নীতি পরিহার করে বাকশাল গঠন ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেন। বিশেষ ক্ষমতা আইন করতেই পারা যেতো না যদি ২য় সংশোধনী না আসতো। শুধু তাই নয়, পরবর্তী সরকারগুলোর শাসনামলেও একইভাবে কালাকানুন জারি করা গিয়েছে ঐ সংশোধনী ব্যবহার করে। ‘৭২ এর সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদে ধমর্ভিত্তিক রাজনীতি ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল যা ৫ম সংশোধনীতে বাতিল করা হয়। সংবিধানে এখন ১১ ন! অনুচ্ছেদ এর পরে ১৩ নং অনুচ্ছেদ পাওয়া যায়। ‘৭২ এর সংবিধানের গণতান্ত্রিক বিধিবিধান অক্ষুন্ন রেখে জনগণের অধিকার সম্প্রসারণের প্রশ্নে ২য় সংশোধনী কতটুকু অবদান রেখেছে? কিংবা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রেই কি কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সংবিধানে এসেছে? তারপরও কথা আছে। সোভিয়েত ইউনিয়নে সংবিধান নিয়ে ৬ লক্ষ সভার আয়োজন করা হয়েছিলো জনগণকে সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্য থেকে। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন বাদ দিলাম, সংবিধানের ২য় সংশোধনী যা ‘৭২ এর সংবিধানে ছিল না তা কি জনগণকে সম্পৃক্ত করে সংসদে গৃহিত হয়েছিল? বাসদবিরোধী অবস্থান নিতে গিয়ে আপনার অবস্থান আওয়ামী লীগের দিকে নিয়ে যাওয়ার কোন প্রচেষ্টা আমার ছিল না। বরঞ্চ চিন্তার বিভ্রান্তি যে কোন ব্যক্তির অবস্থান কোন না কোন পক্ষে নিয়ে যেতেই পারে। বাসদের রজনীতির কৈফিয়ত দেয়ার জায়গা এটি নয়। তবে এটুকু বলতে পারি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ধমর্ভিত্তিক রাজনীতি ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে সর্বোপরি সেক্যুলার চিন্তার বিস্তারে দলগতভাবে বাসদ নেতৃত্বদানকারী ভূমিকায় রয়েছে যার বিকাশ ব্যতিরেকে একটি সেক্যুলার সমাজ প্রবর্তন বাংলাদেশে অসম্ভব বলেই মনে হয়। বাসদ সফল হবে কি হবে না সেটি সময়ই বলবে।
    এখানে আমার ব্যক্তিগত মতকে বাসদের মত বলে ভুল বোঝার অবকাশ নেই। আপনার শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ। আমি লেখকও নই। নির্মাণ গ্রুপ এ আছি বলেই মতামত রাখছি।

    • অলকেশ মিত্র - ১৪ মে ২০১০ (৪:৩৭ অপরাহ্ণ)

      @ মোশারফঃ আপনি লিখেছেন,

      বিশেষ ক্ষমতা আইন করতেই পারা যেতো না যদি ২য় সংশোধনী না আসতো। শুধু তাই নয়, পরবর্তী সরকারগুলোর শাসনামলেও একইভাবে কালাকানুন জারি করা গিয়েছে ঐ সংশোধনী ব্যবহার করে। ‘৭২ এর সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদে ধমর্ভিত্তিক রাজনীতি ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল যা ৫ম সংশোধনীতে বাতিল করা হয়। সংবিধানে এখন ১১ ন! অনুচ্ছেদ এর পরে ১৩ নং অনুচ্ছেদ পাওয়া যায়। ‘৭২ এর সংবিধানের গণতান্ত্রিক বিধিবিধান অক্ষুন্ন রেখে জনগণের অধিকার সম্প্রসারণের প্রশ্নে ২য় সংশোধনী কতটুকু অবদান রেখেছে?

      আপনার কথায় একমত। আপনি বলছেন, ২য় সংশোধনী হলো Source of all black laws, তাহলে এত গুরুত্বপূর্ন এই সংশোধনীকে আপনারাতো চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন কোর্টে। আপনি নিশ্চয় দেখেছেন, মুন সিনেমার মালিকের দায়ের করা রীট পিটিশনের কল্যানে কিভাবে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়ে গেল। এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলন যেমন জরুরী, তেমনি পাশাপাশি আইনি লড়াই করাও জরুরী ছিল। ২য় সংশোধনীর ব্যাপারে রাজপথে যেভাবে সোচ্চার ছিলেন, ঠিক সেভাবেই আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আপনারা উদাসীন এবং নীরব ছিলেন। কেন?

      আপনি বলছেনঃ

      বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন বাদ দিলাম, সংবিধানের ২য় সংশোধনী যা ‘৭২ এর সংবিধানে ছিল না তা কি জনগণকে সম্পৃক্ত করে সংসদে গৃহিত হয়েছিল?

      আপনার প্রশ্নে মনে হয়েছে, ‘৭২ এর মূল সংবিধানে জনগনের আকাঙ্খার কথা বলা হয়নি। কিংবা জনগনের সম্পৃক্ততা এখানেও ছিল না। এ ব্যাপারে আপনার আর একটু পরিস্কার বক্তব্য দরকার।

      আরেক জায়গায় লিখেছেনঃ

      মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল এখন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে কি না তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

      এই প্রশ্নের সমাধান করে ফেলে থাকলে জানাবেন। ব্যাখ্যাগুলো আমাদের সবার জানা থাকা দরকার।

  6. মাসুদ করিম - ২৯ এপ্রিল ২০১০ (২:৪১ অপরাহ্ণ)

    শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ছিলেন এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। কিন্তু লেনিন, মাও সে তুং এমন কি চে’র সাথে কিভাবে লেখক শেখ মুজিবের তুলনা করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

    — ভালোবাসার জোরেই তুলনা করেছেন। লেনিন, মাও, চে–এর মতো মুজিবও মানুষকে ভালোবেসে ছিলেন। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলেন। অস্মিতা এই পোস্টে আমাদেরকে এই সহজ ভালোবাসার সূত্রই তো ধরিয়ে দিতে চেয়েছেন। ভালোবাসা সত্যিই এমন সহজ। এই সহজ সূত্রেই আমরা ফজলুল হক, ভাসানী, মুজিব, মণি সিংহকে ভালোবাসি। তারা বাংলাদেশকে ভালোবেসে ছিলেন, আমরাও তাদেরকে ভালোবাসি।

    আমি লেখকও নই। নির্মাণ গ্রুপ এ আছি বলেই মতামত রাখছি।

    — মতামত ব্যক্ত করতে তো লেখক হতে হয় না। গ্রুপে থাকলেই মতামত রাখা যায়। আর সেমতামত লেখকের লেখার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু মতামত প্রকাশিত হলে, সাথে সাথে, এর জন্যও প্রস্তুত থাকতে হয় — আমার মতেরও প্রতিমত আসতে পারে। এমনকি ব্যক্তিগত মতামতকে রাজনৈতিক মতামত হিসেবেও দেখা হতে পারে। রাজনীতির আনন্দও তো সেখানেই।

  7. mosharrof - ২৯ এপ্রিল ২০১০ (৪:০৭ অপরাহ্ণ)

    @ মাসুদ করিম,
    বামপন্থীদের একটি অংশ বাকশালে নিজেদের বিলিন করে দিয়েছিলেন। এবং শেখ মুজিবের বন্দনা গান এ রকম বামপন্থীদের সংখ্যাটাই এখনো বেশি। বাসদ এক্ষেত্রে ভিন্ন চিন্তা ধারণ করে। সামগ্রিকভাবে শেখ মুজিবকে বিশ্লেষণ করার জ্ঞান-গরিমা আপনাদের মতো আমার নেই। তথ্য-উপাত্তের ভারে আক্রান্ত করার সামর্থ্যও আমার নেই। কিন্তু ইনটুয়েশন বলে একটা কথা আছে। বামপন্থীদের বিরোধিতা করা আর বাসদের বিরোধিতা করা এক নয়। এমন বামপন্থী দল বাংলাদেশে ক্রিয়াশীল যাদের মতামত লেখকের সাথে মেলে। আমার রাজনৈতিক পরিচয় আপনাদের জানা। তা আমি আড়ালও করছি না। ভিন্নমত, প্রতিমত আসবে এই ভেবেই মতামতটা লিখেছিলাম। বলতে পারেন মৌচাকে ঢিল ছুঁড়েছি। লক্ষ্যটাও অব্যর্থ ছিল। এবং সুযোগ পেলে বাসদের বিরোধিতা করে যে আনন্দ লেখক পান তার পরিচয় ইতিপূর্বেই পেয়েছি। এখানেও তার নিদর্শণ রাখবেন এটাই প্রাথমিকভাবে প্রত্যাশিত এবং তার সাথে গলা মেলবেন এ রকম আরো থাকবেন তাও বিভিন্ন জনের মতামতে লক্ষণীয়। এতে দোষের কিছু নেই।
    কিন্তু বামপন্থী চিন্তার প্রতি বিশ্বাস না রেখে লেনিন, মাও সে তুং, চে’র মানুষের প্রতি ভালবাসার প্রতি লেখক শ্রদ্ধাশীল হোন কিরূপে? আসলেই কি তা তিনি ধারণ করেন। একদিকে আমার মতামতের জবাব দিতে গিয়ে স্তলিন শাসনামল ও মাও এর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনা আর অন্যদিকে লেনিন-মাও-চে’র মানুষের প্রতি ভালবাসার বন্দনা (বামপন্থী নেতাদের মানুষের প্রতি ভালবাসা যাকে যথার্থ অর্থে অবশ্যই সর্বহারা শ্রেণীর প্রতি ভালবাসা হিসেবেই বুঝি) লেখকের স্ববিরোধিতা বলেই মনে হয়েছে। মাও সে তুং এর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের একটি অঙ্গ ছিল এ রকম যে, সকল নেতৃবৃন্দকে জনগণের সামনে জবাবদিহি করতে হবে। কমিউনিস্ট চরিত্র বিকশিত করতে তিনি এরূপ বলেছিলেন। এতে তো দোষের কিছু আছে চরম বিরোধিও তা বলতে পারে না। আর স্ত্যালিনের নেতৃত্বে ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে ২য় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছিল।

    • মাসুদ করিম - ৩০ এপ্রিল ২০১০ (১০:০৫ পূর্বাহ্ণ)

      কিন্তু বামপন্থী চিন্তার প্রতি বিশ্বাস না রেখে লেনিন, মাও সে তুং, চে’র মানুষের প্রতি ভালবাসার প্রতি লেখক শ্রদ্ধাশীল হোন কিরূপে?

      যাদের বামপন্থী চিন্তার প্রতি বিশ্বাস নেই তারা লেনিন, মাও, চে-র মানুষের প্রতি ভালবাসার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারবেন না! এমন রক্ষণশীলতা কি বামপন্থার জন্য ভাল? মানুষকে ভালবেসে যে রাজনীতি, সেরাজনীতির মানুষদের ভালবাসা নিয়েই তো এই পোস্ট। মুসলমান না হলে মুহম্মদ, হিন্দু না হলে কৃষ্ণ, বৌদ্ধ না হলে বুদ্ধ, খ্রিস্টান না হলে খ্রিস্টের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া যাবে না! এই ধর্মীয় রক্ষণশীলতার চর্চার করছেন না কি আজকের বামপন্থীরা?

  8. mosharrof - ৬ মে ২০১০ (১২:৫৭ অপরাহ্ণ)

    @ মাসুদ করিম,
    রাশিয়া ও চীন বিপ্লব এবং তদপরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের সমাজব্যবস্থার নেতৃত্ব সম্পর্কে মার্কসবাদী হয়ে সমালোচনা কিংবা ভুল-ভ্রান্তি পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে। এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) এর চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা থেকে এও আমরা জানি প্রকৃত মাকর্সবাদী দল গড়ে তুলতে হলে দলের অভ্যন্তরে দলের কার্যক্রম ও দলের নেতৃত্ব নিয়ে খোলামেলা আলাপ আলোচনার পরিবেশ থাকতে হবে। কিন্তু সবকিছুর উদ্দেশ্য সবর্হারা শ্রেণীর বিপ্লবী আন্দোলন তথা মানবমুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে করতে হবে। মাও সে তুং বলেছিলেন, শত্রুও যদি সঠিক সমালোচনা করে তবে তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এসব নীতি থেকে বিচ্যুত হয়ে মার্কসবাদী হিসেবে নিজেকে আমি দাবি করতে পারি না।
    এক্ষেত্রে বামপন্থী চিন্তার প্রতি আস্থা না রেখে যদি যে কোন ব্যক্তি প্রকৃতঅর্থে যে কোন বাম নেতৃবৃন্দের মানুষের প্রতি ভালবাসায় শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তাতে আমি আবেগাপ্লুত হব, এটাই স্বাভাবিক। লেখকের এরূপ ভালবাসা আমাকে বাম নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাবকে বাড়াবে বৈকি। এ নিয়ে যারাই ভালবাসা প্রকাশ করছেন তাদের প্রতি শুভেচ্ছা।
    আমার দ্বি-মত একটি জায়গাতেই। সেটা হলো অপ্রাসঙ্গিকভাবে এবং কোন বিশ্লেষণ না টেনে স্ট্যালিন ও মাও’য়ের প্রতি কটাক্ষ হানা কতোখানি যুক্তিসঙ্গত হয়েছে?
    আর যুদ্ধাপরাধের বিচার পর্বের শুরুতে তদন্ত সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মতিন পদত্যাগ করলেন। অথচ এতদিন তিনি এ বিষয়ে নেতৃত্ব দিলেন। এ রকম একটি বালখিল্য ঘটনা দিয়ে যার যাত্রা শুরু হলো তাতে প্রকৃত বিচার পেতে সকলের সচেতনতাই একমাত্র রক্ষাকবচ। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল এখন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে কি না তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

  9. মোহাম্মদ মুনিম - ৭ মে ২০১০ (৩:২১ পূর্বাহ্ণ)

    আলোচনাটি ভালোবাসা বিষয়ক আলাপ থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর মত ‘মাঝারি মানের আধা সামন্তবাদী’ নেতার ভালবাসার সাথে লেনিনের মত মহান নেতার ভালবাসার কি করে তুলনা হতে পারে, সেটা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বা মহাত্মা গান্ধীর মত জাতীয়তাবাদী নেতাদের ব্যাপারে বামপন্থীদের এক ধরনের অবজ্ঞা আছে। জাতীয়তাবাদীরা কেবল মাঠ গরম করে ভারত বা বাংলাদেশ স্বাধীন করে পুঁজিবাদকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ব্রিটিশ বৃহৎ পুঁজিবাদী চলে গিয়ে ভারতীয় ক্ষুদ্র পুঁজিবাদীকে দেশ দিয়ে গেছে, একই ভাবে পশ্চিম পাকিস্তানী ২২ পরিবার চলে গিয়ে তাঁর জায়গাতে বাঙ্গালী কিছু ধনী পরিবারকে বসিয়ে দিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু বা গান্ধী স্বাধীনতা নামের এই অর্থহীণ পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, তিরিশ লক্ষ প্রাণহানির কোনই মূল্য নেই, কারণ সর্বহারার মুক্তি ঘটেনি। বামপন্থীদের কাছে আলবেনিয়ার নেতা আনোয়ার হোজ্জা বা আফগান নেতা নজিবুল্লাহ বঙ্গবন্ধুর চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ এবং পুজনীয়।
    বিএনপি, জামাত এবং অন্যান্য দক্ষিনপন্থী দলগুলো তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর চরিত্র হরণের জন্য নানা গুজব রটিয়েছে, ৭২-৭৫ এর সময়কাল খোদ মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও দুঃসহ ছিল, এমন একটা ধারণা তারা তরুন সমাজের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। একই সাথে বাসদসহ বামপন্থী দলগুলোও বঙ্গবন্ধুকে সেভাবে কখনই appreciate ¬করেনি। বঙ্গবন্ধু বড় নেতা ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এমন কিছু কথা এক দুলাইনে বলে তারপর বিশ লাইনে সবিস্তারে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আওয়ামী দুঃশাসনের বর্ণনা শুরু হয়। হাসানুল হক ইনুকে জনসভাতে বলতে শুনেছি কিভাবে বঙ্গবন্ধুকে এই দুঃশাসনের ফল হিসাবে ৩২টি বুলেট নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল, যেন বঙ্গবন্ধু হত্যা কোন ষড়যন্ত্রের ফল নয়, এক ধরনের ‘জনগণের বিচার’।
    বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধার আসনে বসালে তাঁর কাল্ট দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে, এমন একটা ধারণা সম্ভবত বামপন্থীদের আছে। কাল্ট নিয়ে এই যে ভয়টার কতটা ভিত্তি আছে এটা ভেবে দেখা প্রয়োজন। মৃত কোন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ত্বের কাল্ট কোন দেশের কি ক্ষতি করেছে সেটা আমার জানা নেই, জানতে পারলে ভাল হতো। তবে বঙ্গবন্ধুকে মাথামোটা উগ্র জাতীয়তাবাদী জাতীয় একটা ইমেজ দিয়ে গোটা পাকিস্তান আমলে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির গনতান্ত্রিক সংগ্রাম এমনকি মুক্তিযুদ্ধের পুরো আদর্শকেই খাটো করা হয়েছে। আর কোন লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে বামপন্থীরা উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর মত করে, পুর্ব ইউরোপের মধ্যমান বা নিম্নমানের নেতাদের নিয়ে (এদের একজন আলবেনিয়ার আনোয়ার হোজ্জা) নিয়ে নানা সময়ে দুরন্ত উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অগ্রগামী ভাবতে পারেন, কিন্তু জনগন থেকে তারা ক্রমশই দূরে সরে গিয়েছেন।

  10. মোশাররফ - ৯ মে ২০১০ (১১:২২ পূর্বাহ্ণ)

    রাশিয়ায় জার শাসনের অবসান ঘটাতে বলশেভিক আর মেনশেভিক উভয়েই একযোগে সংগ্রাম করেছিলো। কিন্তু জার উতখাত হওয়ার পর মেনশেভিকদের বিরুদ্ধে বলশেভিক বিপ্লব ঘটিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলো। বলশেভিকের নেতারাও শুরুতে লেনিনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আহ্বানে সাড়া দেয় নি। কিন্তু এভাবেই রুশ বিপ্লব শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে প্রথম সমাজ গঠন করে। যারা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উচ্ছেদের পরিবর্তে শুধু মুজিব শাসনামলের বিরোধিতা করে বাম আন্দোলনকে নানাভাবে বিপথগামী করেছে তাদের সাথে মুজিবভক্ত বামপন্থীদের পার্থক্য এটুকুই যে একদল বাম সুবিধাবাদী ধারা আর অন্যদল বাম হটকারী ধারার চর্চা করেছে এবং বাম আন্দোলনকে পিছিয়ে দিয়েছে।
    এখানে বাম আন্দোলনের সঠিকতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না বরং বুর্জোয়া নেতৃত্বের দুর্বলতা যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বহালের পরে স্পষ্ট হয় তাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। লেনিন এ যুগের স্বাধীনতা আন্দোলনে বুর্জোয়া নেতৃত্বের দুর্বলতার কথা বহু পূর্বেই বলে গেছেন যা আমাদের দেশের ইতিহাসেও আমরা দেখেছি। আমি নতুন কিছু হাজির করিনি।

    • অলকেশ মিত্র - ১৪ মে ২০১০ (৬:১৭ অপরাহ্ণ)

      মোশারফ বলেছেনঃ

      এখানে বাম আন্দোলনের সঠিকতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না, বরং বুর্জোয়া নেতৃত্বের দুর্বলতা যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বহালের পরে স্পষ্ট হয় তাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। লেনিন এ যুগের স্বাধীনতা আন্দোলনে বুর্জোয়া নেতৃত্বের দুর্বলতার কথা বহু পূর্বেই বলে গেছেন যা আমাদের দেশের ইতিহাসেও আমরা দেখেছি।

      বুর্জোয়াদের দুর্বলতার এই সুযোগটি নেয়া উচিত ছিল বামদের। সহজ সত্য হলো সেই সুযোগ বাম’রা নিতে পারেনি। ফলে বাম আন্দোলনের পথে ঘাটতিগুলো কি সেটাই তুলে ধরা আপনার জন্য বেশী জরুরী। নিজ দলের এবং নিজ শিবিরের সমালোচনার কোন দলিল কি বামদের/আপনাদের আছে। জনগন থেকে আপনারা কি কোন সমালোচনা শোনেন? নিজেদের ভিতর থেকে সমালোচনা কি আসে? সেগুলো কি পর্যালোচনা করে এগোন, যাতে ঘাটতিগুলো থেকে সবাই শিক্ষা নিতে পারে?

      আমার বিশ্বাস, যে কোন দলের/শিবিরের আদর্শ যতই মহত হোক, দলের কাছে প্রশ্নহীন আত্ননিবেদন যদি যুগের পর যুগ চলতে থাকে তাহলে সেখানে নেতা-কর্মীদের এবং গোটা দলের বন্ধ্যাত্ব তৈরী হয়। সেই শিবির এগোয় না। আপনি কি বলেন, মোশারফ! এটি বাম শিবির এবং আপনাদের বিষয়ে আমার একটি সমালোচনাও বলতে পারেন।

  11. mosharrof - ১৯ মে ২০১০ (৫:৩২ অপরাহ্ণ)

    @ অলকেশ,
    বামপন্থীদের সে সময়ের দুর্বলতার ব্যাপারে বাসদ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে একটা বক্তব্য দলিল আকারে উপস্থাপন করা হয়। এটা ওয়েবসাইটেও দেখতে পারেন। আর নিজেদের সমালোচনার ক্ষেত্রে দৃষ্টভঙ্গি গড়ে তোলার জন্য কিছু লেখা কর্মীদের পড়ানো এবং অনুশীলনের চেষ্টা হয়। নিশ্চয় তাকে আমরা যথেষ্ট বলতে পারি না। বাসদের সারাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃবৃন্দের কেন্দ্রীয়ভাবে ৪ মাস অন্তর, জোন ও জেলা এবং স্তরে স্তরে এ ধরনের আলোচনার বিধান আছে। প্রশ্নহীন নিবেদন সঠিকতার প্রতি থাকা দরকার যা আমরা ব্যক্তিগতভাবে অনেকে রাখতে পারি না। গোটা সমাজেই একটা অন্যায় সমঝোতার ভিত্তিতে সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে ; প্রকৃত বাম আন্দোলন সে উপায়ে গড়ে উঠবে না। কিন্তু বামপন্থার প্রতি এখনো আস্থাশীল বলেই যেটুকু অনুধাবন করি সে মতো মতামত ব্যক্ত করি। বামপন্থীদের করণীয় নিয়ে আপনার মতামতের সাথে আমি একমত।

  12. মোহাম্মদ মুনিম - ২২ মে ২০১০ (১২:১৭ পূর্বাহ্ণ)

    ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে ব্লাসফেমী আইন চালু করা নিয়ে কথা উঠেছিল, তৎকালীন বিএনপি সরকার জামাতকে খুশি করার জন্য এই আইন চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন বাসদ দ্রুত এই আইনের বিরোধিতা করে জনসভার আয়োজন করে। সেদিন জামান ভাইয়ের (খালেকুজ্জামান) বক্তৃতা চমৎকার লেগেছিল। তিনি অত্যন্ত সহজভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এই আপাত নিরীহ আইনটি কি ভয়ংকর ভাবে ব্যবহার করা হতে পারে।
    বাসদ কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়ে জামান ভাই সহ অন্যান্য নেতাদের অত্যন্ত সাধারণ (Spartan life ই বলা চলে) জীবন যাপন করতে দেখেছি। অন্যান্য নেতা আর কর্মীরাও (যারা ফুলটাইম কর্মী নন) কোন ব্যক্তিগত স্বার্থে রাজনীতি করেন না, মাঠে ময়দানে অত্যন্ত পরিশ্রম করে তাঁরা কাজ করেন। বাংলাদেশে যেখানে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির প্রায় সব নেতারই ব্যক্তিগত সততা বা ক্যারিশমা দুটোরই অভাব আছে, সেখানে সাধারণ মানুষের সৎ এবং আন্তরিক বামপন্থী নেতৃত্বের অধীনে খুব দ্রুত চলে আসার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে গত অনেক বছর ধরেই বামপন্থী আন্দোলন শতদাবিভক্ত। ভোটের সময় সবগুলো বামপন্থি দল মিলে শতকরা ৫ ভাগ ভোটও পায় না। অথচ পাশের দেশ ভারতেই বামপন্থীরা বেশ জোরালো অবস্থানে আছে। ইউরোপের বামপন্থী দলগুলো, ক্ষমতায় না থাকুক, প্রেশার গ্রুপ হিসাবে রাজনীতিতে বেশ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে চলেছে। লাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে বামপন্থীরা তো ক্ষমতাতেই আছে।
    আমার মনে হয়েছে এক ধরনের puritanical মানসিকতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং নেতাদের ব্যক্তিগত ইগোর কারণে বাংলাদেশের বামপন্থীদের এই দুর্বল অবস্থা। বাসদের বিভিন্ন স্টাডি সার্কেলে দেখেছি এমন সব বিষয়ে আলাপ হয় যার সাথে বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতির কোনই মিল নেই (যেমন রবীন্দ্রনাথের রাশিয়ার চিঠি, বা সোভিয়েট-চীন মহাবিতর্ক)। এই জাতীয় উচ্চমার্গের আলাপে দলের সাধারণ কর্মীদেরই বিশেষ আগ্রহ দেখি নি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির যে মূল সঙ্কট, ইসলামী ভাবধারার রাজনীতি, যা সত্তরের দশকে শুরু হয়ে আজ মহীরুহের আকার ধারণ করেছে। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি সকলেই রাজনীতির ইসলামীকরনে সহায়তা করেছে, বামপন্থীরাও নানা বায়বীয় আলাপে সময় নষ্ট করে মুল শত্রু চিনতে ভুল করেছে। আশির দশকে জামাতে ইসলামির রাজনীতি নিয়ে খালেকুজ্জামান বলেছেনঃ

    শুধু জামাতে ইসলামী পার্টি বলে কথা নয়, একটা স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যে কোন শক্তি – তা তাদের ভাবাদর্শ, শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গি এবং লুকানো উদ্দেশ্যের যতই ক্ষতিকারক দিক থাক না কেন এবং জনসাধারণকে সতর্ক করার বিষয়গুলো যত গুরুত্ব নিয়েই অবস্থান করুক না কেন, তারা অংশগ্রহন করতে পারে এবং সমর্থন দিতে পারে। উক্ত বিষয়সমুহকে ঠিক ঠিকভাবে আদর্শগত ও সাংগঠনিক উভয়ক্ষেত্রে উম্মোচিত এবং পরাস্ত করা গেলে এই ধরনের অংশগ্রহন এবং সমর্থন স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলনের কার্যকারিতাকে বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। আজকের দিনে স্বৈরাচার, বিশেষ করে আমাদের দেশে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন কৌশলে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিকে সুড়সুড়ি দিয়ে এবং পশ্চাদপদ সকল ধ্যানধারণাকে আশ্রয় করে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দল ও শক্তিসমূহকে তাদের সামাজিক সমর্থনের ভিত হিসাবে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিবাদী শক্তি ও আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। সেদিক থেকে বর্তমানে সামরিক স্বৈরশাসন বিরোধী মনোভাব ও প্রচারসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি জামাতে ইসলামীসহ আরও কতিপয় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দল ও শক্তিসমুহের সমর্থনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
    (জামাতে ইসলামী ও গোলাম আযমের পুনরুত্থান – শাহরিয়ার কবির, সাপ্তাহিক বিচিত্রা – ২৭ এপ্রিল, ১৯৮৪)

    উপরের এই বক্তব্য থেকে আমি যেটা বুঝলাম সেটা হচ্ছে স্বৈরাচার এরশাদ জামাতকে মিত্র হিসাবে পেতে চেয়েছিল, কিন্তু জামাত এরশাদের ফাঁদে পা না দিয়ে গনতন্ত্রের দাবীতে আন্দোলনে গেছে, সুতরাং ব্যাপারটাকে খালেকুজ্জামান ইতিবাচক ভাবেই দেখেছেন। জামাতের অতিত কীর্তিকলাপ, ফ্যাসিবাদী চরিত্র এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা তাঁকে তেমন চিন্তিত করেনি বলেই মনে হচ্ছে।

  13. mosharrof - ২২ মে ২০১০ (৪:৩৫ অপরাহ্ণ)

    @ মোহাম্মদ মুনিম,
    স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এ ধরনের বক্তব্য কমরেড খালেকুজ্জামান দিয়েছেন এর রেফারেন্স দেয়া দরকার ছিল। জামায়াতে ইসলামী ইসলামকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে, যা নিষিদ্ধ করার দাবি করে বাসদ। সেখানে তাদের কোন রাজনৈতিক অবস্থান যতোই জনগণের পক্ষে আছে মনে হোক না কেন তা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যই। ফলে একে আন্দোলনে সহায়ক বলার কথা নয়।

    • মোহাম্মদ মুনিম - ২৩ মে ২০১০ (৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ)

      স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এ ধরনের বক্তব্য কমরেড খালেকুজ্জামান দিয়েছেন এর রেফারেন্স দেয়া দরকার ছিল।

      এই কথাটার মানে ঠিক বুঝলাম না, রেফারেন্স তো দেয়াই হয়েছে, (জামাতে ইসলামী ও গোলাম আযমের পুনরুত্থান – শাহরিয়ার কবির, সাপ্তাহিক বিচিত্রা – ২৭ এপ্রিল, ১৯৮৪)। এই লেখাটি পূনর্মুদ্রণ হয়েছিল ‘একাত্তরের ঘাতক জামাতে ইসলামীর অতীত ও বর্তমান’ এই বইতে (পৃষ্ঠা ১১৮)।

  14. mosharrof - ২৩ মে ২০১০ (১২:৫৮ অপরাহ্ণ)

    শাহরিয়ার কবির কোথা থেকে এ কথা জানলেন তার রেফারেন্স বোঝাতে চেয়েছি। আওয়ামী লীগ না করলে সবাই জামাতের দোসর এভাবে যারা ভাবতে অভ্যস্ত তারা বাসদকে ও এভাবে দেখাতে চায়।
    ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের সময়ে বাসদের গণআদালত প্রসঙ্গে বইতে জামাতের রাজনীতি সম্পর্কে পার্টি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। প্রায় ১ লক্ষ কপি সে সময়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বাসদ বিক্রি করে প্রচার করে।

  15. mosharrof - ২৩ মে ২০১০ (১:৩৮ অপরাহ্ণ)

    @ মোহাম্মদ মুনিম,
    আপনি এই রেফারেন্স দিয়ে কি বোঝাতে চেয়ছেন সেটি পরিস্কার নয়।
    কথাগুলো আবার পড়লাম। মনে হলো আমি ভুল বুঝেছি হয়তো। কারণ, ধর্মভিত্তিক দল হলেও তাদের অংশগ্রহণ সমর্থন কিছু মানুষকে আন্দোলনে টেনে আনবে। সেক্ষেত্রে আদর্শগত ও সাংগঠনিকভাবে তাদের উন্মোচিত ও পরাস্ত করার কথাও বলা হয়েছে। এটার মাধ্যমে জামাতের রাজনীতিকে মহিমান্বিত করা হয়নি। বাস্তব পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরা হয়েছে। এভাবে বুঝলে আগের মন্তব্য হয়তো করতাম না।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.