দেশে থাকতে যেটা অনিয়ম ছিল প্রবাসে সেটাই অর্থাৎ টেলিভিশন দেখাটা মোটামুটি নিয়মের মধ্যে পড়েছে। কারণটা হলো ইন্টারনেট। দেশে নাটক দেখা হতো না তেমন একটা, অথচ প্রবাসে এসে বাংলাদেশী নাটক দেখা হচ্ছে অনেক। এই ঈদেও তাই প্রচুর বাংলাদেশী নাটক ডাউনলোড করে দেখতে শুরু করেছি।
ফারুকী গং অর্থাৎ এদের ভাই বেরাদারের প্রতি আমি আংশিক বিরক্ত। এদের সবার কাজের ধারা এক। একজন পরিচালকের স্বাতন্ত্র লক্ষ করা যায় না এদের নির্মাণে। এ বিষয়ে ফারুকীর বক্তব্য হলো, গুরুর ছাপ তো শিষ্যের মধ্যে থাকবেই। মানছি, কিন্তু তারপরও গুরুর শিক্ষাকে মাথায় নিয়ে নিজের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলা, বক্তব্য দেয়া পরিচালকের ধর্ম। ফারুকীর ভাই বেরাদাররা সেটা করতে পারছেন না। ইন্টারনেটে নাটক ডাউনলোড করার সময় দেখি লেখা থাকে ‘ফারুকীর নাটক’। অথচ নাটকের টাইটেলে পরিচালকের নাম উঠে আশুতোষ রানা, রেদওয়ান রনি, ফাহমী, রুমেল ইত্যাদি ভাই বেরাদারের। অনেকেই বলে, আইজকা ফারুকীর একটা নাটক দেখলাম, হেভ্ভি জোশ। শুনে আমিও আগ্রহভরে নাটকটি দেখতে গিয়ে দেখি ওটা আসলে ফারুকীর নির্মাণ নয়, তারই কোনো ভাই বেরাদারের। আফসোস, ভাই বেরাদাররা গুরুর পাকেচক্রে এমনই আটকে আছে যে তাদের কাজের লেভেল পর্যন্ত গুরুর নামে হচ্ছে।এসব ভাইবেরাদাররা আসলে গুরুর মেধাকে অনুসরণ না করে অনুকরণ করছে। ফলে দেখা যায় সংলাপ শেষে একই জায়গাতেই মিউজিক বাজছে, একই স্টাইলে সিকোয়েন্স পরিবর্তন হচ্ছে, একই স্টাইলে সংলাপ আওড়াচ্ছে। ভাষারীতি ছাড়াও ফারুকী গংয়ের বিরুদ্ধে আরো একটা অভিযোগ আছে, যে তার নাটকে ঝগড়াঝাটিই প্রাধ্যন্য পায়। সব আর্টিস্টরা এমনভাবে সংলাপ আওড়ায় যেন ঝগড়া করছে।
আমি ফারুকীর কিছু কিছু কাজের খুবই ভক্ত। তার মেধার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। মাঝে মাঝে সেটাতে ঝাটকা লাগে, অর্থাৎ মানতে পারি না ফারুকী কোনো খারাপ কাজ করবে। একুশে টেলিভিশনে প্রচারিত তার ‘প্রত্যাবর্তন’ নাটকের প্রতি মুগ্ধতা আমার কোনোদিনই শেষ হবে না। পাশাপাশি ব্যাচেলর, মেড ইন বাংলাদেশ সহ আরো কিছু কিছু (নাম মনে করতে পারছি না) নির্মাণকে আমি যাচ্ছেতাই-এর পর্যায়ে ফেলে দিতে পারি।
ফারুকীর লাস্ট নাটক যেটা দেখেছিলাম সেটা হলো ‘স্পার্টাকাস ৭১’। এ নাটকের প্রশংসা করার ভাষা আমার নেই। নাট্যাঙ্গণের যাবতীয় পুরষ্কার এ নাটকের ফারুকীকে দিয়ে দেয়া যায়। নাটকের কাহিনীটি একটু বলে নিই,
শাওন-বাঁধন নামে দুই জমজ ভাইকে নিয়ে একাত্তরের পটভূমিকায় স্পার্টাকাস ৭১ নির্মিত হয়। দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন ছিলেন বাগদত্তা, তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। সেই কারণে স্থানীয় রাজাকার মাহবুবের কোপানলে পড়ে পরিবারটি। খোঁজখবর নিতে যখনই ওই বাড়িতে মাহবুব যেত, শাওন-বাঁধনের বাবা-মা তাদের অবশিষ্ট জমজ সন্তানটিকে একবার শাওন আরেকবার বাঁধন সাজিয়ে রাজাকারকে বোঝাত যে তাদের দুই সন্তানই বাড়িতে আছে, মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। রাজাকার মাহবুব বিষয়টি ধরে ফেলে। শর্ত দেয় বাবা-মাকে, তাদের ছেলের হবু বউকে আর্মিক্যাম্পে নিয়ে গেলে তারা বেঁচে যাবে। শাওন-বাঁধনের বাবা কাজটি করতে বাধ্য হন, অর্থাৎ ছেলের হবু বউকে আর্মি ক্যাম্পে দিয়ে আসেন। কিন্তু নাটকের শেষে দেখা যায় রাজাকার মাহবুব শাওন-বাঁধনকে হত্যা করে। দুঃখ সইতে না পেরে বাবা আত্মহত্যা করেন, একমাত মা বেঁচে থাকেন এই দুঃসহ ঘটনার পরও। (স্মৃতি থেকে লেখা, একটু এদিক সেদিক হতে পারে)
এবারের ঈদে তুমুল জনপ্রিয় হওয়া এই নাটকের সিক্যুয়াল তৈরি করেন ফারুকী ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ নামে। নাটকটি যৌথভাবে রচনা/ চিত্রনাট্য করেছেন আনিসুল হক এবং ফারুক। পরিচালনায় ফারুকী ও রেদওয়ান রনি। প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে নাটকটি দেখেছি এবং যারপরনাই হতাশ হয়েছি। নাটকটি সত্য ঘটনা নিয়ে না হলে এই পোস্টে ওই নাটক নিয়ে আমার দুটি কথা আছে।
নাটকটি শুরু হয় স্পার্টাকাস ৭১ নাটকের কিছু দৃশ্য দেখিয়ে। একাত্তরের সময় নিয়ে নির্মিত ওই নাটকের বেঁচে যাওয়া মা আজ ৩৭ বছর পর কোথায় কিভাবে আছেন সেটা দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে নাটক শুরু হয়। আমি হতভম্ব হয়ে দেখি শাওন-বাঁধনের মা মাহবুব রাজাকারের বাড়িতে চাকরাণী/ বুয়ার কাজ করছেন এবং সেটা মাহবুব রাজাকার কর্তৃক দখলকৃত তারই নিজ বাড়িতে।
নিশ্চয়ই এর কোনো ব্যাখ্যা নাট্যকার দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধার মা তার সন্তানের হত্যাকারীর বাড়িতে বুয়া হয়ে ৩৭ বছর ধরে কিভাবে থাকতে পারেন তার ব্যাখ্যা পেতে নাটকটি ধৈর্য্য ধরে দেখতে থাকি। অবশেষে একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। দখল করা বাড়িতে নতুন এ্যাপার্টমেন্ট তুলতে গিয়ে রাজাকার মাহবুব জানতে পারে এজন্য এ বাড়ির সমস্ত ওয়ারিশদের স্বাক্ষর লাগবে। তখন রাজাকার মাহবুব শাওন বাঁধনের মাকে তার ভাইদের বাড়িতে পাঠায়। কেননা শাওন-বাঁধনের মা এ বাড়িটি মাহবুব রাজাকারকে লিখে দিলেও তার পরিমাণ ছিল মুল সম্পত্তির ২%, বাকি ১৪% এর মালিক শাওন-বাঁধনের মামারা। মা যখন তার ভাইদের বাড়িতে যায় তখন জানা যায়, সন্তান হত্যা এবং স্বামী আত্মহত্যা করার পর মা নাকি তার ভাইদের কাছে গিয়েছিলেন আশ্রয়লাভের জন্য, কিন্তু ভয়ে ভাইয়ের তাকে আশ্রয় না দিলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন রাজাকার মাহবুবের বাড়িতেই তিনি থাকবেন এবং বেঁচে থেকে তিনি আজীবন মাহবুব রাজাকারকে অভিশাপ দিবেন। আর এ কারণেই নাটকে আমরা দেখি তিনি মাহবুব রাজাকারের বাড়িতে বুয়ার কাজ করছেন।
হায় খোদা! এই আনিসুল হকই তো কালজয়ী ‘মা’ উপন্যাস লিখেছিলেন! যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার মাকে এতো কাছাকাছি দেখেছনে, এতো এতো মুক্তিযোদ্ধার মায়েদের সম্পর্কে জেনেছেন, তিনি পারলেন কি করে একজন মুক্তিযোদ্ধার মাকে তারই সন্তানের হত্যাকারী, স্বাধীনতা বিরোধী, দেশের শত্রুর বাড়িতে বুয়ার কাজ করাতে। তিনি কী চমক দেখাতে চাইলেন, মুক্তিযোদ্ধার মাকে রাজাকারের স্ত্রীর হাতে দুধ চুরি করে খাওয়ার অভিযোগের সিকোয়েন্স লিখে? দেশ আজ স্বাধীনতা বিরোধী, রাজাকারদের পদভারে কম্পিত। তিনি সাজেস্টিভ কিছু দেখালেন কি যে আজ দেশের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধারা এমনই ভাবে রাজাকারদের চাকর হয়ে আছে? কল্পনার ঘোড়া এমন করে দৌড়াতে হয়!
এটা মশকরা করা হয়েছে দর্শকদের সাথে, সর্বোপরি দেশের জনগণের সাথে। একজন নাট্যকার হিসেবে তার স্বাধীনতা আছে তার মতো করে নাটক লিখতে, কিন্তু তিনি যখন ইতিহাস বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লিখবেন তখন যেন আমাদের আবেগকেও সম্মান জানান।
আমি বিশ্বাস করি একজন মুক্তিযোদ্ধার মা কোনোভাবেই তার সন্তানের হত্যাকারীর বাড়িতে বুয়ার কাজ করতে পারে না। এটা সম্ভব হয় কি করে! ৩৭ বছর ধরে একজন মুক্তিযোদ্ধার মা সন্তানের হত্যাকারীর বাড়িতে ভাত খাচ্ছে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধা আজাদের মাকে আমরা দেখি ছেলের মৃত্যুর পর কখনোই ভাত না খেতে। সেই আনিসুল হক এটা কিভাবে লিখলেন? ফারুকী তা কিভাবে নির্মাণ করলেন? আমাদের মুক্তিযোদ্ধার মা-রা এতোটাই অসহায়? যে সাহসে ছেলেকে বন্দুকের মুখে ঠেলে দিতে পারেন, সেই মায়েরা এতোটাই অসহায় হয়ে যেতে পারে কি যে সন্তানের হত্যাকারীর বাড়িতে তাকে আশ্রয় নিতে হয়! টিভি পর্দায় আমাদের দেখতে হয় মুক্তিযোদ্ধার মা তার সন্তানের হত্যাকারীর জুতো পালিশ করে দিচ্ছে!
নাটকের এক পর্যায়ে দেখা যায় শাওন-বাঁধনের বন্ধুরা অনেক বছর পরে হলেও তাদের নামে স্মৃতি পরিষদ গঠন করে মাহবুব রাজাকারের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে। সেই মাহবুব রাজাকার তখন ৩৭ বছর ধরে ভরণপোষনের দোহাই দিয়ে শাওন-বাঁধনের মাকে আদালতে মিথ্যে স্বাক্ষী দিতে রাজি করায়। একটা কাগজ ধরিয়ে তাকে মুখস্থ করতে বলা হয় যেখানে লেখা থাকে, তার সন্তানের হত্যাকারী মাহবুব রাজাকার নয় বরং পাকিস্তানী মিলিটারী। মাহবুব তাকে এতো বছর ধরে দেখাশোনা করছেন আল্লাহ যেন তার ভালো করে। আমি অবাক হয়ে দেখি, সেই মা সারারাত ধরে সেটা মুখস্থ করছেন এবং সাংবাদিক সম্মেলনেসুযোগ পাওয়া স্বত্ত্বেও তার পাশে বসে থাকা রাজাকার মাহবুবকে ছেলের হত্যাকারী হিসেব সনাক্ত করেন না।
কেন কেন কেন? এসব মশকরা দেখিয়ে আনিসুল হক এবং ফারুকী গং কি বোঝাতে চেয়েছে? দেশে যে দৌর্দন্ড প্রতাপে স্বাধীনতা বিরোধিরা চরে ফিরছেন সেটাই তারা ইঙ্গিতে বোঝালেন? রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সারা দেশ যখন সোচ্চার তখন এসব ইঙ্গিত কাদের পক্ষে যায়? এসব ফালতু সাজেস্টিভ আর ইঙ্গিত আর কতোকাল আমরা সইব? সব খুলে বলতে নেই, বুঝে নিতে হয় – এমন কাঁচকলা আর কতোকাল রান্না করে খাব? একজন মুক্তিযোদ্ধার মাকে তারই সন্তানের হত্যাকারীর বাড়িতে কাজের বুয়া হিসেবে ৩৭ বছর রেখে, দুধ চুরির অপবাদ দিয়ে, শেষ পর্যন্ত ওই রাজাকারের কোনো পরিণতি না দেখিয়ে আনিসুল হক/ ফারুকীর গংরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন দিকটা হাসিল করলেন?
রাজাকারকে ঘৃণা করতে পার, তাদের সন্তানদের নয়। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি নাটকে আনিসুল হক/ ফারুকীরা প্রচ্ছণ্নভাবে এটা স্টাবিলিশড করলেন। মাহবুব রাজাকারের ছেলে বাচ্চু মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে বলে তার বয়সী বন্ধুরা সবাই ইউনিভার্সিটিতে গেলেও সে তাদের সঙ্গে ঠিকমতো মিশতে পারে না। খেলায় তাকে কেউ নিতে চায় না, রাস্তায় রাজাকারের বাচ্চা বলে পাড়ার ছেলেরা খ্যাপায়, পাশের বাসার মেয়ের সঙ্গে প্রেমটাও ঠিকমতো হয়ে উঠে না দেখিয়ে আনিসুল/ ফারুকীরা একটা সিমপ্যাথী গড়ে তুলেছে সারা নাটকে রাজাকারের সন্তানের পক্ষে। বাবার কৃতকর্মের জন্য সন্তানকে দুষতে হবে কেন এমনটাই প্রতিধ্বনি করতে চেয়েছে নাটকের নির্মাতারা। কিন্তু বাবার সামনে কখনোই ওই ছেলেকে প্রতিবাদীর ভূমিকায় আনতে পারেনি নাট্যকার/ নির্মাতা। নাটকের শেষ দৃশ্যে দেখা যায় ফোনালাপের মাধ্যমে ছেলে তার বাবাকে ইন্টারভিউ নিচ্ছেন প্রথম আলোর হয়ে (নিজের পত্রিকার নাম বেচা, কার্টুনিস্ট আরিফের সময় এই পত্রিকার ভূমিকা আমরা দেখেছি)।
আজকাল ব্লগ সহ সমাজে কিছু কিছু সুশীলের উৎপত্তি হয়েছে যারা থেকে থেকে কুয়ার ভিতর থেকে মাথা উঠিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, ৭১ এর জন্য পুরো পাকিস্তানী জনগণকে দায়ি করা কি উচিত? বাবা রাজাকার হলেও ৭১ এর পর জন্ম নিয়েছে বলে তার সন্তানকে বাবার কর্মকান্ডের জন্য ঘৃণা করা যাবে কি? এইসব প্রশ্নের আড়ালে তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় রাজাকারদের। আনিসুল হক এবং ফারুকী নিশ্চয়ই ওই পথে হাঁটছেন না।
কল্পনারও একটা সীমা থাকা দরকার। মুক্তিযোদ্ধার মায়ের এমন পরিণতি দেখিয়ে আমাদের কি বোঝাতে চাইলেন আনিসুল হক এবং ফারুকী তা আমার বোধগম্য না। তবে তাদের এমন কল্পনা স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রশ্রয় দেয়। আনিসুল হক স্বনামধন্য লেখক, ফারুকী একজন ভালো নির্মাতা। আপনাদের প্রতি অনুরোধ আপনারা এমন কিছু নির্মাণ করবেন না যা মানুষের আবেগকে খাটো করে। এমন অবাস্তব কিছু লিখবেন না যা আমাদের অপমান করে।
নাটকটি এমনভাবে শেষ হয়েছে যাতে মনে হয়েছে এর তৃতীয় পর্ব নির্মাণ সম্ভব। সারা নাটকেই আমার বিরক্তি চালু ছিল কিন্তু নাটকের শেষ দেখে এর তৃতীয় পর্ব নির্মাণের সম্ভাব্যতা দেখে আমি আশাবাদী হয়েছি যে ফারুকী গং তৃতীয় পর্ব নির্মাণ করে এমন অবাস্তব একটি নাটকের সুন্দর সমাপ্তি টানবেন। আগামী ২৬ মার্চ আপনাদের এই ভুল শুধরে নিন।
Site Default
হতে চাই ফিল্মমেকার। ১০/২০ জনের জন্য পাবলিক লাইব্রেরির ছবি না। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার সব দর্শকের জন্য নাচ-গান সমৃদ্ধ ছবি বানাতে চাই।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৪ comments
শামীম ইফতেখার - ১৬ ডিসেম্বর ২০০৮ (১০:১৯ অপরাহ্ণ)
বুদ্ধিজীবীদের এ এক নতুন ফ্যাশন। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি সিমপ্যাথি তৈরীর এই নতুন দৃষ্টিকোণটি প্রথম তুলে ধরেন শ্রদ্ধেয় কলাম লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। আমার বিশ্বাস তিনি লিখেছিলেন এক দৃষ্টিকোণ থেকে, কিন্তু তার কথা থেকে যুক্তি ধার করে এগিয়ে গেছে আরো অনেকে।
মাদ্রাসা শিক্ষাকে টিকিয়ে রাখার পক্ষে এই দলের অনুসারীরা যুক্তি দেখান দারিদ্রের, চাকুরী বাজারের বৈষম্যের, শিক্ষার সুযোগের (তা এমনকি মাদ্রাসা শিক্ষা হলেও)। আবার এঁদেরই কেউ কেউ যুক্তি দেখান : “মাদ্রাসা শিক্ষায় তো প্রচলিত শিক্ষার অনেক বিষয়ই পড়ানো হয় আজকাল”, “মাদ্রাসা ও প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা, মূল্যবোধ, শিক্ষার মান ইত্যাদিতে নাকি কোন মৌলিক পার্থক্য নেই” ইত্যাদি। কেউ কেউ আবার এমনও যুক্তি দেখান যে “মাদ্রাসা শিক্ষায় এখন কো-এড চালু হওয়ায় নাকি জেনডার সেনসিটিভিটিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসি আসি করছে”। এঁরা যতটা জোর দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার কথা বলেন, ততটা জোর দিয়ে সার্বজনীন বিজ্ঞানমূখী শিক্ষার, কিংবা সকল ধারার শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নের কথা কিন্তু তাঁরা বলেন না। খুব চাপাচাপি করলে যুক্তি দেখান – সে সব দীর্ঘমেয়াদের ব্যাপার, বাস্তবায়িত হবে কিনা বা হলে কবে হবে কে জানে। শেষ করেন এই বলে - “ততদিন কি এই সব মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে”? যেন যেনতেন একটা সার্টিফিকেট পেলেই হল, তা সে মাদ্রাসা থেকেই আসুক বা অন্য কোথাও থেকে। এঁদের কাছে জানতে ইচ্ছে করে, সার্টিফিকেট তো “অশিক্ষার” আঁধার সারাবে, কিন্তু সেই সার্টিফিকেটের আঁধার থেকে জাতিকে সারাবে কে?
কয়েকদিন আগে অন্য একটি ব্লগে এই বিষয়ে কিছু আলোচনা চলছিল। ভুল করে তাতে অংশগ্রহণ করে বসেছিলাম।
অলকেশ - ১৭ ডিসেম্বর ২০০৮ (১:১৬ পূর্বাহ্ণ)
এঁরা জনপ্রিয় নাট্যকার বলেই চারিদিকে শোনা যায়। তবে জনপ্রিয়তা যে নীচে নামার সিঁড়ি, এই কথাও পড়েছি, সম্ভবতঃ প্রয়াত হুমায়ন আজাদের কোন একটা লেখায় বা প্রবচনে।
চারিদিকে মানুষের হাততালি আর বাহবা পেতে পেতে আনিসুল হক বা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীদের কাণ্ডজ্ঞান লোপ পেতে বসেছে। টেলিভিশনে যে কোন মেগা গল্প ফেঁদে দিয়ে দু’ পয়সা আয় করা আর সস্তা নাম কামাই করা এক কথা, আর একজন মুক্তিযোদ্ধার মাকে নিয়ে নিজের ইচ্ছে মত কাহিনী বানানো ভিন্ন কথা । প্রথম ক্ষেত্রটিতে তারা দায়িত্বহীন, কল্পনাপ্রসূত, অবাস্তব ও আবিলতাপূর্ন কাহিনী বানাতে পারে। কিন্ত দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি যা তারা বেছে নিয়েছেন, তাতে হাত দেয়ার আগে তাদের ভেবে দেখা উচিত ছিল, এটা একটা জাতির অস্তিত্ব, আবেগ ও সংগ্রামের সাথে যুক্ত একটা মৌলিক রাজনৈতিক চেতনার বিষয়। ভাঁড়ামী করার জায়গা এটি নয়।
হালকা মেজাজের চটুল চটুল সংলাপ বানাতে বানাতে, সিরিয়াস বিষয় নিয়ে লেখার ক্ষেত্রে, আক্কেল জ্ঞান হারাতে বসেছেন তারা। দেশের কথা বলতে গেলে, তা সে যেখানেই হোক, নাটক-সিনেমা বা থিয়েটার, দেশপ্রেমে নিজের মনকে আগে পবিত্র করে নিতে হয়, দায়িত্ববোধের একটা বড় জায়গায় নিজেকে বসাতে হয়। এসবের ধারে কাছে না গিয়ে, এ ধরনের হালকা, স্থুল ও অপমানজনক কাহিনী যারা বানান, তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, এই পথে থেকে নিজেকে এবং দেশকে অপমানিত করবেন না।
অলৌকিক হাসানকে বিশেষ ধন্যবাদ, বিষয়টা গোচরে আনার জন্য।
রায়হান রশিদ - ১৮ ডিসেম্বর ২০০৮ (১:৩৭ পূর্বাহ্ণ)
এ নিয়ে বিতর্ক চলছে “আমার ব্লগ” এ। এখানে দেখুন।
সায়েম চৌধুরী - ১২ জুন ২০১১ (১০:০৪ অপরাহ্ণ)
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এখন তামাশা চলছে। জনপ্রিয় হতে হলে এসব করতেই হয়! সেলুকাস!
আমরা ভুলতে বসেছি আমাদের গৌরব। ৯ মাসে কিছুই অর্জিত হয়নি।
রফিকুল আনোয়ার রাসেল - ১৩ অক্টোবর ২০১৩ (১:২৬ পূর্বাহ্ণ)
একটু শুধরে নিন। আসলে নয় মাসে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিল। আর গত ৪২ বছরে আমাদের অর্জন ফারুকি অর আনিসুল হোক গং।