স্বাধীনতা দিবস এর প্রাক্কালে, অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধাপরাধের বিচার ট্রাইবুনাল এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের নাম ঘোষিত হল। ৩৯ বছর পর, ২৫ মার্চ ১৯৭১ এর সেই ‘কাল রাত’ এর দিনটিতেই ন্যায়বিচার অন্বেষণ এবং এর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নতুন করে এই জাতির যাত্রা শুরু হল।
বিডিনিউজ এর খবরে প্রকাশ:
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিচারক প্যানেল ও তদন্ত কর্মকর্তাদের নাম ঘোষণা করেছে সরকার। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বৃহস্পতিবার একইসঙ্গে প্রকাশ করেছেন আদালতের আইনজীবীদের নামও। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচারে তিন সদস্যের বিচারক প্যানেল, সাত সদস্যের তদন্তকারী প্যানেল ও ১২ সদস্যের আইনজীবী প্যানেলের সদস্যদের নাম প্রকাশ করা হয়।
বিচারক হিসেবে থাকছেন: বিচারপতি নিজামুল হক, বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ একেএম জহির আহমেদ।
তদন্তকারী সাত কর্মকর্তা হলেন– সাবেক অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মতিন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আবদুর রহিম, সাবেক ডিআইজি কুতুবুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর এএসএম শামসুল আরেফিন, সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মীর শহীদুল ইসলাম, সিআইডি ইন্সপেক্টর নূরুল ইসলাম ও আব্দুর রাজ্জাক।
আইনজীবী প্যানেলে রয়েছেন– গোলাম আরিফ টিপু, সৈয়দ রেজাউর রহমান, গোলাম হাসনাইন, জহির আহমেদ, রানা দাশগুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, সৈয়দ হায়দার আলী, খোন্দকার আবদুল মান্নান, মোশাররফ হোসেন কাজল, নুরুল ইসলাম সুজন, সানজিদা খানম ও সুলতান মাহমুদ শিমন।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২০ comments
সুশান্ত - ২৫ মার্চ ২০১০ (৬:৪৯ অপরাহ্ণ)
বিস্তারিত পোস্ট আসা করেছিলাম। নির্মানের কেউ কি এই প্যানেল এর সম্মানিত সদস্যদের বায়োগ্রাফি নিয়ে কিছু বলবেন? এই মুহূর্তে এই বিষয়টা জানা খুব জরুরী। শর্ষের মধ্যে কোন ভূত যাতে না থাকে সেটা নিশ্চিত হওয়াটা জরুরী।
রায়হান রশিদ - ২৫ মার্চ ২০১০ (৬:৫৮ অপরাহ্ণ)
অত্যন্ত জরুরী একটি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন সুশান্ত। কেবলমাত্র ট্রাইবুনাল সংশ্লিষ্টদের নাম ঘোষিত হয়েছে। সেটা নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক খবর, কিন্তু আসলেই তেমন উল্লসিত হয়ে ওঠার মতো কিছু ঘটেনি। বরং আগের চেয়েও এখন আরও বেশী সতর্ক সজাগ হওয়ার সময় এসেছে আমাদের সবার। সবাই মিলে কিছু কাজ শুরু করতে পারি আমরা – যেমন:
– আগে আমাদের প্রশ্নগুলো সাজিয়ে ফেলা
– ভালো এবং খারাপ সম্ভাবনাগুলোও মুখ ফুটে বলে ফেলা
– এই ট্রাইবুনাল, এবং সেখানকার সবগুলো টিম এবং তাতে সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের দাবীগুলো এবং প্রত্যাশাগুলোও একে একে তালিকাবদ্ধ করে ফেলা
এর পর না হয় এই প্রক্রিয়ার পুরোটাতেই কাছাকাছি একসাথে থেকে উত্তরগুলো খোঁজা যাবে।
কি বলেন?
সুশান্ত - ২৫ মার্চ ২০১০ (৭:০২ অপরাহ্ণ)
আমার মনে হয় প্রথমেই সদস্যবৃন্দের অতীত নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করা দরকার। যদি ও এই ঘাটাঘাটি শব্দটা খারাপ মনে হতে পারে। কিন্তু আমি প্রয়োজনীয় মনে করছি। এরপর টিম সম্পর্কে পুরো কনফিডেন্স আসার পর আমি কিছু প্রশ্ন সাজানোর কথা ভাবছি।
রায়হান রশিদ - ২৫ মার্চ ২০১০ (৭:১৩ অপরাহ্ণ)
যেমনই শোনাক, আর কাজটা যতই অপ্রিয় হোক না কেন – এর প্রয়োজন আছে। আপনার সাথে পুরোপুরি একমত। এখন সময় থাকতে সতর্ক না হয়ে পরে আফসোসে মাথার চুল ছেঁড়ার পক্ষপাতি নই আমরা।
রশীদ আমিন - ২৫ মার্চ ২০১০ (৮:১১ অপরাহ্ণ)
তদন্তকারী সদস্যদের মধ্যে একজনকে জানি তিনি হচ্ছেন, শামসুল আরেফিন, যিনি দীর্ঘদিন যাবত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষনা করছেন, এই বিষয়ে তাঁর নিজের গবেষনা প্রতিষ্ঠান আছে, ব্যক্তি মানুষ হিসাবে তিনি অত্যন্ত সৎ এবং নিষ্ঠাবান।আমি মনে করি সরকারের এটি অত্যন্ত ভালো এবং যোগ্য নিয়োগ।
mmr jalal - ২৫ মার্চ ২০১০ (৯:১৩ অপরাহ্ণ)
আমিও তাই মনে করি।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৬ মার্চ ২০১০ (৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ)
সরকারের এ উদ্যোগটি খুবই ভালো, তবে তা যেন রাজনীতির কোনো কৌশল না হয়।
সৈকত আচার্য - ২৮ মার্চ ২০১০ (১১:২৬ পূর্বাহ্ণ)
আমি বিশ্বাস করি, খন্দকার দেলোয়ারের মতো করেই আপনি বলেছেন কথাটা, তবে নিশ্চয়ই আপনার নিজস্ব একটা ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে এব্যাপারে, যা তার অবস্থান থেকে আপনাকে আলাদা করবে। বিশেষতঃ এই সময়ে, এটা পরিস্কার করা জরুরী, নইলে জামাত-বিএনপি’র এই কথাটার সাথে আপনার কথার পার্থক্য করা মুশকিল বৈকি?
অবিশ্রুত - ২৬ মার্চ ২০১০ (৭:৩৮ অপরাহ্ণ)
পত্রিকান্তরে প্রকাশ, তদন্তকারী সাত কর্মকর্তার মধ্যে প্রথমে যার নাম রয়েছে, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মতিন, তিনি ২০০২ সালে অবসরে যাওয়ার পর বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধান আইন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। নয়া দিগন্তের সংবাদে এ সম্পর্কে লেখা হয়েছে, সাবেক অতিরিক্ত আইজি নূরুল আলম গত ২৫ মার্চ অপারগতা প্রকাশ করায় তড়িঘড়ি করে আবদুল মতিনকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়।
রায়হান রশিদ - ২৬ মার্চ ২০১০ (৭:৫২ অপরাহ্ণ)
(ক)
রিপোর্টটিতে দেখতে পাচ্ছি, আব্দুল মতিনকে শুধু তদন্ত কর্মকর্তাই নয়, পুরো তদন্ত সংস্থারই ‘প্রধান’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন ১: ২০০২ থেকে ২০০৯ এই সময়কালের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে যত ধরণের দূর্নীতির (এবং এমনকি ফৌজদারী অপরাধেরও) অভিযোগ এসেছে – তার সবই কি এসেছে এই ভদ্রলোক বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে?
প্রশ্ন ২: যখন এই সব দূর্নীতিগুলো সংঘটিত হচ্ছিল এবং সে সবের অভিযোগ উঠছিল, তখন ঠিক কি প্রক্রিয়ায় এবং কি ধরণের পদক্ষেপের মাধ্যমে আব্দুল মতিন (বসুন্ধরার) প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন?
প্রশ্ন ৩: দেখা যাচ্ছে তিনি সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন, অবসরগ্রহণের আগ পর্যন্ত। পুলিশ প্রশাসন বা বাংলাদেশের গোয়েন্দা দফতরগুলো ঠিক কিভাবে কাজ করে থাকে – সে সব বিষয়ে পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং গভীরভাবে ধারণা অর্জনের মতো প্রাসঙ্গিক কোন সুনির্দিষ্ট পদে/দায়িত্বে তিনি ছিলেন কি কখনো?
উত্তরগুলো কারও জানা থাকলে আমাদেরও জানানোর অনুরোধ করবো।
(খ)
একই রিপোর্টে আরও দেখা যাচ্ছে:
এই জ্যেষ্ঠতা অতিক্রম কি খুব জরুরী ছিল?
অস্মিতা - ৫ মে ২০১০ (৬:৩৫ অপরাহ্ণ)
অবশেষে জানা গেল আব্দুল মতিন বিদেয় হয়েছেন। প্রথম আলোর বরাতে জানা যাচ্ছে যে তিনি পদত্যাগ করেছেন, কারণ, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহ তাকে ‘বিব্রত এবং মর্মাহত’ করেছে। আইন প্রতিমন্ত্র্রী কামরুল, যিনি গতকাল অব্দি বলে আসছিলেন যে ‘মতিন সাহেব অত্যন্ত সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তি’, তিনি আজ বললেন – ‘আইনে তদন্ত প্রধান বলে কোন পদ নেই; মতিন নাকি ছিলেন “অন্যতম” তদন্তকারী কর্মকর্তা’! বিজ্ঞ স্বরাষ্ট্রীমন্ত্রী সাহারা বললেন – ‘তাঁর নিয়োগের সিদ্ধান্ত আসলে সঠিক ছিল, আলোচনা সমলোচনা এবং ধূম্রজালের কারণেই নাকি এই পদত্যাগ’! বোঝা গেল না সাহারা-কামরুল এত দিন কি করছিলেন! এত তোড়জোড় করে তদন্ত কমিটি ঘোষণার পর জানা গেল, তাও আবার এত মুখ ঘুরে, যে মতিন নাকি ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ছিল।
এ যেন –
মাহতাব - ২৭ মার্চ ২০১০ (৯:৪১ পূর্বাহ্ণ)
মোশারফ হোসেন কাজল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি শাসনকালে দুদক-এর আইনজীবী ছিলেন। বর্তমান সরকারের আইনজীবী হিসেবেও দায়িত্ব পারন করছেন।
নিরাভরণ - ২৭ মার্চ ২০১০ (১২:২৩ অপরাহ্ণ)
ন্যায়বিচার সম্পর্কে অমর্ত্যসেনের একটা কথা মনে পড়ছে, “কেবল ন্যায়বিচার হলেই চলবে না, ন্যায়বিচার যে হচ্ছে সেটা দৃশ্যত সবার কাছে স্পষ্ট হওয়াটাও জরুরী”। যুদ্ধাপরাধের মত এমন গুরুত্ববহ ব্যপারে এই দিকটার দিকে লক্ষ্য রাখা খুব দরকার। সফলভাবে বিচার সম্পন্ন হবার পর কারো মনে যেন এব্যপারে সামান্য সন্দেহ বা প্রশ্নের উদ্ভব না হয় যে ঠিক বিচার হল কিনা। এছাড়া বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উত্থিত যে কোন প্রশ্নের উত্তর যেন মানুষ পায় সেজন্য বিচার প্রক্রিয়া, প্রসিডিংস এসব যতটুকু সম্ভব স্বচ্ছতার সাথে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হলে তাও আরেকটা ভাল সিদ্ধান্ত হবে। এতে করে ভবিষ্যতে কোন প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকবে না আর প্রশ্ন উঠলে সেটার উত্তর দেয়াও সহজ হবে। অন্যথায় যুদ্ধাপরাধের বিচারের মত বিষয়ও শেষপর্যন্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়বে।
সৈকত আচার্য - ২৮ মার্চ ২০১০ (১২:১৭ অপরাহ্ণ)
@ নিরাভরণঃ
আপনার প্রতি প্রশ্নঃ
১। একজন সাধারন খুনের আসামী এবং একজন মতিউর রহমান নিজামী কার অপরাধ অধিকতর গুরুতর?
২। কি কারনে একজন মতিউর রহমান নিজামী একজন সাধারন খুনের আসামীর চাইতে বেশি আইনগত অধিকার এবং প্রোটেকশন দাবী করছেন এবং কেনই বা তাকে সেই অতিরিক্ত সুবিধা দিতে হবে?
৩। যতটুকু ন্যায় বিচার একজন সাধারন খুনের আসামী পাচ্ছেন এই দেশে (আত্নপক্ষ সমর্থন এবং আপীলের অধিকার ইত্যাদি) তার সবটুকুই তারাও পাবে, সেই অর্থে ন্যায়বিচার অতটুকুই দৃশ্যমান হবে বলে আশা করা যায়, এর বেশি আপনি কি প্রত্যাশা করেন, কেন করেন?
নিরাভরণ - ২৮ মার্চ ২০১০ (২:১২ অপরাহ্ণ)
প্রশ্নের জন্য অনেক ধন্যবাদ সৈকত আচার্যকে। তবে আমার কাছে ঠিক স্পষ্ট নয় যে আমার মন্তব্যের সাথে আপনার প্রশ্নগুলোর সম্পর্ক কি? তবু আমি সংক্ষপে আমার ধারনা বলছি। তবে প্রশ্নগুলোর উত্তরের ক্ষেত্রে আপনি কি মনে করেন সেটাও বলবেন।
সাদাচোখে দেখলে আমার কাছেত দু’ধরনের অপরাধকেই সমান গুরুতর বলে মনে হয়। তবে এর মধ্যে ইতর বিশেষ করার পেছনে কোন কারন আছে কিনা জানি না। এখন পর্যন্ত এমনই ভেবেছি। তবে আইনগত ভাবে সাধারন খুনের আসামির সাথে নিজামীদের একটা পার্থক্য হয়ত বিচার নিয়ে। বিচারের টেকনিকালিটির ক্ষেত্রে বেশ পার্থক্য আছে বলে ভাবা যায়। কারন তাদের অপরাধগুলি যুদ্ধকালীন। এ বিষয়ে আপনি কি ভাবেন সেটাও বলুন।
প্রশ্নের উত্তর হয়ত আরেকটা প্রশ্ন দিয়ে দেয়া যেতে পারে। যেমন কেন একটা বিশেষ আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইবুনাল করে এই বিচার কার্য সম্পাদন করতে হচ্ছে? যুদ্ধাপরাধের বিচারটি একটা জাতিগত দায়িত্ব, ইতিহাস থেকে পাওয়া দায়িত্ব। বিষয়টির সাথে আমাদের জাতিগত দাবি আর আবেগ জড়িত। কিন্তু এর আন্তর্জাতিক মাত্রা অস্বিকার করা যাবে না। নানাভাবে বহির্বিশ্ব এইবিচারটিতে জড়িয়ে পড়ছে আরো পড়বে। কাজেই আমাদের পক্ষে দায়মুক্তির সবরকম রাস্তাই নিতে হবে। তবে আরেকট বিষয় আসতে পারে। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে প্রচলিত একটা বিতর্কের উৎস্য হচ্ছে যুদ্ধে কারা জিতল তার ভিত্তিতে যুদ্ধাপরাধীকে দোষারোপ করা হচ্ছে এরকম যুক্তির ফোকর ব্যবহার করার সুযোগ থাকে অপরাধীদের। হয়ত নিজামি সেটাকেই কাজে লাগাচ্ছে। ফাঁসীর সাম্ভাব্য আসামী হিসাবে তার আচরন বোধগম্য। কিন্তু বিচারের প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই এটা স্পষ্ট করতে হবে যে, যে অপরাধগুলো তারা করেছেন তার সবই সর্বৈব ভাবে যুদ্ধাপরাধ। আমার যেমন যুদ্ধের সময়ে জন্মই হয়নি। কিন্তু বড়দের কাছে যা শুনেছি আর পত্রিকায় যা পড়েছি সেখান থেকেই যুদ্ধাপরাধের ব্যপারে তাদের অভিযুক্তির ব্যপারটা আমার জ্ঞানের উৎস্য। সেখান থেকেই বিশ্বাস জন্মে যে যেই দাবিগুলো নিজামি করছে সেটা পুরন করেই তার উপযুক্ত বিচার তাকে উপহার দেয়া যাবে। আপনার কি তা মনে হয় না?
যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি আক্রোশ নেই এমন বাংলি আছেন কিনা জানি না (তাদের একান্ত দোসরদের কথা আলাদা)। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ায় এই আক্রোশ সাধারন অর্থে একধরনের অপ্রত্যাশিত ব্যপার। আমার জানার ভুল না থাকলে আমার শত্রু যদি আসামি হয় সেক্ষেত্রে আমার বিচারক হবার সুযোগ নেই। অন্তত ন্যায়বিচারের দাবি এমন বলেই জানি আর মানি। সেক্ষেত্রে নিজামিদের বিচারে বিচারকদের মনে কি ঘৃণা থাকবে না, নাকি না থাকা সম্ভব? আমার মনে হয় এই বায়াসটাকে আমাদের মেনে নিতেই হবে। সে জন্যই এই বারতি সাবধানতার/সচ্ছতার দরকারটা পরে। বিচারকযে চোখে কাপড় বেধে রায় দিচ্ছেন সেটা সবাই দেখতে চাইবে। যাতে একজন নাগরিক হিসাবে বিচার সম্পন্ন হবার পর বলতে পারি। এটা ঘৃণা বা প্রতিশোধ স্পৃহার চরিতার্থ করার বিচার নয়। অপরাধের ন্যায়বিচার।
যাহোক এটা খুব বড় একটা কাজ। একটা শুভ সমাপ্তি দেখতে চাই এই ঘটনার। যেমন আগের মন্তব্যে বলেছি। আজ থেকে দশ বছর পর পেছনে তাকিয়ে যেন কোন রকমের খটকা না লাগে সেটা এখন নিশ্চিত করা দরকার। ফলাফল একই হবে হয়ত কিন্তু প্রক্রিয়াটাও ম্যাটার করে, আসলেই। তবে আপনার প্রশ্নগুলোর আলোকে আরেকটা মন্তব্য না দিয়ে থাকতে পারছিনা। বাংলাদেশে বিচার বহির্ভুত হত্যা কান্ডের যে মহামারি, সেটা খুব দুঃখজনক একটা অবস্থা। এটা থেকে দ্রুত উত্তরনের আশাও করি। তানা হলে ন্যায়বিচারের সপ্নপূরন সহজ হবে না। যারা এমনভাবে মারা যাচ্ছেন তারা কিন্তু ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। এই ব্যপারটা হয়ত আংশিক অফটপিক। কিন্তু এগুলো না থাকলে প্রশ্ন তোলার সুযোগ অনেক কম হত বলে বিশ্বাস করি। আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম।
ব্লাডি সিভিলিয়ান - ২৮ মার্চ ২০১০ (১২:০৮ অপরাহ্ণ)
সুশান্তের জিজ্ঞাসাটা বোধকরি আমাদের অনেকেরই, কারণ আমারও প্রথমেই মনে এই কথাটা এসেছিল। একটু হতাশ হয়েছিলাম যাঁরা এসব নিয়ে গবেষণা করেন, লেখালেখি করছেন, করেছেন, তাঁদের কারো নাম না দেখে। পরে অবশ্য শামসুল আরেফিনের নামের দিকে একজন দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
যাই হোক, আমরাও চাই ‘একটা’ কিছু হোক, কিন্তু, সেটা যেন পর্বতের মূষিক প্রসব না হয়।
এখনই বোধহয় সব মন্তব্য করার সময় আসে নি।
কিন্তু, ঘরপোড়া গরু বিধায় মনে হয়, ভয় পাই, শঙ্কা জাগে, “বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া” হবে না তো?
অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও একটা প্রশ্ন: যদি বিচারে সন্তুষ্ট হওয়া না যায়, ট্রাইবুন্যালের বাইরে কেউ কি বিচার চাইতে পারবেন? নাকি, এর রায়ই সর্বমান্য হবে?
আর, পাকিস্তানিদের বিচারের মুখোমুখি কি আদৌ করা সম্ভব হবে? এই ট্রাইবুন্যালের মাধ্যমে তো নিশ্চয়ই নয়, তাই না?
সৈকত আচার্য - ২৮ মার্চ ২০১০ (১২:৩৫ অপরাহ্ণ)
ব্লাডি সিভিলিয়ান লিখেছেনঃ
ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে আপীল দায়ের করা যাবে। ফলে ট্রাইবুনালই শেষ কথা নয়।
নিরাভরণ - ২৮ মার্চ ২০১০ (২:২৯ অপরাহ্ণ)
একটা প্রশ্ন আসলো মাথায় এটাকে পাকিস্তানিদের বাংলাদেশি দোসরদের মধ্যে যারা যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন তাদের রক্ষা কবজ হয়ে দাঁড়াবে নাতো! অর্থাৎ এরকম যুক্তিকি সামনে আসতে পারে যে যারা মূল অপরাধের সাথে জড়িত তাদের ধরতে পারা যাচ্ছেনা সহযোগিদের হেনস্তা করা হচ্ছে! আশা করি কৌশলি বিচারকেরা এগুলো মাথায় রেখেই আগাচ্ছেন।
রায়হান রশিদ - ১৪ আগস্ট ২০১০ (৫:৩৪ অপরাহ্ণ)
@ নিরাভরণ,
সৈকত আচার্যের প্রশ্ন (একজন সাধারন খুনের আসামী এবং একজন মতিউর রহমান নিজামী কার অপরাধ অধিকতর গুরুতর?) এর জবাবে আপনি লিখেছেন:
বিষয়টি সাদা চোখে দেখার কিছু নেই। অপরাধ সংঘটনের ৪০ বছর পর বিচারকার্যের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সেভাবে দেখার সুযোগ বা বিলাসিতাও নেই। সাধারণ খুনের আসামী আর আন্তর্জাতিক অপরাধের দায়ে দন্ডিত আসামীর মধ্যে পার্থক্য শুধু বিচারকার্য বা তার টেকনিক্যালিটি নিয়ে নয়। তাত্ত্বিকভাবেও আন্তর্জাতিক অপরাধকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে সাধারণ খুনের থেকে। যে কারণে এমনকি সাধারণ ফৌজদারী মামলাতেও আসামীরা এমন অনেক মানবাধিকারগত আইনী সুরক্ষা পেয়ে থাকেন, যা আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে দেয়া হয় না তাদের। এটি একটি স্বীকৃত চর্চা। আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন – আমাদের যুদ্ধাপরাধী চক্র এবং তাদের দোসররা কিন্তু শুরু থেকেই এই দুধরণের অপরাধকে এক কাতারে দেখানোর চেষ্টা করে এসেছেন, যাতে তাদের বিচার (তাদের সুবিধামত বলাই বাহুল্য) প্রচলিত ফৌজদারী আইনে হয়। কারণ, তাতে তাদের লাভ, কারণ, আমাদের বাংলাদেশের ফৌজদারী আইনে গণহত্যা, নির্যাতন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ – এই ধারণাগুলোই অনুপস্থিত।
অপর এক প্রশ্নের (কি কারনে একজন মতিউর রহমান নিজামী একজন সাধারন খুনের আসামীর চাইতে বেশি আইনগত অধিকার এবং প্রোটেকশন দাবী করছেন এবং কেনই বা তাকে সেই অতিরিক্ত সুবিধা দিতে হবে?) জবাবে আপনি লিখেছেন:
বিষয়টি আসলে এতো জটিল না, বেশ সহজই। বাংলাদেশে নরহত্যার অপরাধ মৃত্যুদন্ড। সেখানে – কেউ একটি খুন করলে তার শাস্তি হয় মৃত্যুদন্ড, আর তার বিচার দেশের প্রচলিত বিচারের মানদন্ডেই হয় আভ্যন্তরীণভাবে। এখন কেউ যদি কয়েক শত খুন করে গণহত্যার অংশ হিসেবে, তার ক্ষেত্রে কোন্ বিচারিক মানদন্ড ব্যবহার করা উচিত বলে আপনি মনে করেন? হেগ কিংবা জাতিসংঘের মানদন্ডে তো শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের অস্তিত্বও নেই! তাই এখানে পরিপ্রেক্ষিত জলাঞ্জলী দেয়ার ফলাফল বিপদজনক।
অপরাধী চক্র বিচারপ্রক্রিয়াকে victors’ justice বলে বেড়ালেই কি কোন কিছুর পরিবর্তন হয়? ফাঁদে পড়া অপরাধীরা তো বিপদে পড়লে নিজের সহযোগীদের বিক্রি করে দিতেও দ্বিধা করে না। সেটা কিভাবে সুবিচারকামী মানুষের মানদন্ড নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রভাবক\নির্ধারক হয়? আপনার বক্তব্যটি আসলে বুঝতে পারিনি। ব্যাখ্যা করলে বাধিত হবো।
কয়েকটি বিষয় একটু স্পষ্ট করা দরকার। বাংলাদেশের এই বিচার কোন আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার বিচার নয়, এটি একটি domestic বিচারকার্য, এবং পুরোপুরিই বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আর বিচার হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’ এর International Crimes (Tribunals) Act 1973 অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নয়। গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ – এগুলোকেই একসাথে বলা হয় ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’। এখানে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটিকে যেমন খুশী ব্যবহারের সুযোগ নেই। WCSF এর ইলাইব্রেরীতে বেশ কিছু এন্ট্রি রয়েছে যা ভালমতো পড়লে আপনার কাছেও এটা স্পষ্ট হবে যে:
– বহুল ব্যবহৃত ‘আন্তর্জাতিক মানদন্ড’ বা international standards কথাটি শুনতে খুব চমৎকার। কিন্তু এর উপাদান কিংবা প্রয়োগ এর বিষয়গুলো যখন আসে তখন কিন্তু তা বেশ ধোঁয়াটে হয়েই ধরা দেয়। কিংবা অধরাই থেকে যায়, আমার বিনীত মত। যুদ্ধাপরাধী চক্র তাদের লবিইং এর মাধ্যমে শুরু থেকেই বিষয়টা বারবার তুলে ধরে জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য অনুমেয়।
– এই তথাকথিত মানদন্ডের ব্যাপারে কোনো আন্তর্জাতিক বা সার্বজনীন ঐকমত্য (consensus) আসলে অনুপস্থিত। যুদ্ধাপরাধী চক্র আর তাদের ভাড়াটে লবিইস্টরা সুযোগ পেলেই বিষয়টি বিভ্রান্তিকরভাবে তুলে ধরেন এমনইভাবে যেন এটি কোথাও বুঝি পাথরে লেখা হয়ে আছে!
অবিশ্রুত - ৩০ মার্চ ২০১০ (৪:২৪ পূর্বাহ্ণ)
রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতে প্রসিকিউশন প্যানেল থেকে দু’জন আইনজীবীর নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, শুরুতেই একটি গলদ তৈরি হয়েছিল। জানি না, আরও কত গলদ বেরুবে! তবে যত দ্রুত গলদ শুধরে নেয়া যায়, ততই ভাল।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপানো কথিত ৩৬ এবং ১৭ জনের দুটি তালিকা নিয়ে এর মধ্যেই মাঠে নেমেছে। এক সাংবাদিক বন্ধুর কাছে জানতে চাইলাম, ৩৬ অথবা ১৭ জন যুদ্ধাপরাধীর এই তালিকার ব্যাপারটা আসলে কী? তিনি জানালেন, তালিকা একটি হয়েছে বটে, তবে তা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার তালিকা, যে তালিকায় অভিযুক্ত ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা রয়েছে, আরও রয়েছে যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে এমন ব্যক্তিরা। অথচ আমাদের কোনও কোনও রিপোর্টার ‘গরম রিপোর্ট’ ছাপানোর মোহে সেই তালিকাকে যুদ্ধাপরাধীর তালিকা হিসেবে ছেপে দিয়েছেন! ফল হয়েছে এই যে, জামায়াতে ইসলামী জোর গলায় বলতে শুরু করেছে, অমুকের বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় অত ছিল, সে কীভাবে যুদ্ধাপরাধী হয়?
আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরা কি আরও একটু সাবধান ও ধৈর্যশীল হবেন, দয়া করে? আর পত্রিকার যারা বার্তা সম্পাদক তাদেরও বলি, এই ব্যাপারে কি অভিজ্ঞ রিপোর্টারদের কাজে লাগানো যায় না? ক্রসচেকিং আর রিপোর্ট সম্পাদনাও কি জরুরি না?