রোজা ফিতরা জাকাত কোরবান এই নিয়ে অর্থনৈতিক মুসলমানের মনে হয় কল্যাণ অর্থনীতির শিখর স্পর্শ করেছে তারা। তাদের মনে হয় এখানেই ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব যে, সেধর্ম দারিদ্র বিমোচনে একটা কর্মপরিকল্পনা ধর্মবিশ্বাসীর হাতে তুলে দিয়েছে। এরপর ‘কর্জে হাসানা’ বা ‘কল্যাণ ঋণ’ যদি এসে পড়ে এই প্রসঙ্গে তাহলে আর তাদেরকে পায় কে? তাদের মনে হয় ‘সুদকে হারাম’ করার মধ্য দিয়ে যেনির্দেশনা কোরানে আছে – তার অনুসরণ করলে আজকের পৃথিবীর সব অর্থনৈতিক সমস্যার এই মুহূর্তেই সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তেমন কোনো দৃষ্টান্ত আজ পর্যন্ত কোনো ইসলামি রাষ্ট্র দেখাতে পারেনি – এবং এই প্রসঙ্গে প্রচলিত ভাষ্যটি অবশ্যই এই যে, তেমন ইসলামি রাষ্ট্র আজো পৃথিবীতে কোথাও পত্তন হয়নি। অর্থাৎ ইসলামবাদীরা কমিউনিস্টদের চেয়েও হতভাগ্য কারণ কমিউনিজম এর মধ্যে বেশ কিছু রাষ্ট্রে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মডেল পত্তন করে দেখাতে পেরেছে – সেই অর্থনীতির সাফল্য-ব্যর্থতা পৃথিবী দেখতে পেরেছে ও দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু কথা হল কমিউনিজমে যেউন্নত ইতিহাসবোধ ও অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা আছে এবং তারচেয়েও বড় কথা যে সামাজিক বিজ্ঞানের উচ্চতর ধারণা কমিউনিজমে আছে তার কিছু কি ইসলামবাদে আছে? এপ্রশ্ন এতই অবান্তর যে, এর কোনো উত্তর হয় না। কারণ ইসলামবাদ একটি ধর্মের অতিমাত্রায় সামাজিক সমস্যা সমাধানের সামর্থ নিয়ে অহেতুক লাফালাফি ছাড়া কিছুই নয়। ইসলামবাদীদের এটাও বুঝতে হবে এ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের যতগুলো ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমরা দেখেছি – সেসব রাষ্ট্রের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ‘ভাড়া’ ভিত্তিক : এই দেশগুলো তাদের তেল উত্তোলন ও বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থে ও তাদের নাগরিকরা সম্পত্তির ‘স্পনসরশিপ’দিয়ে তার বিনিময়ে পরিশ্রমী ও কৌশলী শ্রমিক ও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে চলে। এধরনের ‘ভাড়া’ ভিত্তিক অর্থনীতিতে রোজা ফিতরা জাকাত কোরবান অনেক কিছু বিলিয়ে দিতে পারে কিন্তু তাতে যে কিছুই হয় না এই এখন মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক অবস্থা দেখে কারোরই আর বোঝার অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমাদের মতো পৃথিবীর মূলধারার অর্থনীতি ভিত্তিক দেশগুলো, যেদেশগুলো কৃষি শিল্প ও সেবার ভিত্তিতে তাদের অর্থনীতি চালিত করে তার জন্য এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে শুধু দুটি মাত্র পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছে – একটি ধনতন্ত্র ও আরেকটি সমাজতন্ত্র – অথবা এদুটির মিশ্রণে ১৯৯১এর আগ পর্যন্ত ভারতের মিশ্র অর্থনীতি বা ইউরোপের মে১৯৬৮এর পরবর্তীতে প্রায় দুদশকের কল্যাণ অর্থনীতি অথবা চীন ভিয়েতনামের…
অর্থনৈতিক মুসলমানকে অবশ্যই এটা বুঝতে হবে আমরা যেরকম ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে ধর্ম খুঁজতে যাই না তেমনি কোরান ও সুন্নাহর মধ্যে অর্থনৈতিক মুক্তি খোঁজারও কোনো মানে থাকতে পারে না।[...]