অর্থনৈতিক মুসলমানের গর্ব

অর্থনৈতিক মুসলমানকে অবশ্যই এটা বুঝতে হবে আমরা যেরকম ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে ধর্ম খুঁজতে যাই না তেমনি কোরান ও সুন্নাহর মধ্যে অর্থনৈতিক মুক্তি খোঁজারও কোনো মানে থাকতে পারে না।[...]

রোজা ফিতরা জাকাত কোরবান এই নিয়ে অর্থনৈতিক মুসলমানের মনে হয় কল্যাণ অর্থনীতির শিখর স্পর্শ করেছে তারা। তাদের মনে হয় এখানেই ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব যে, সেধর্ম দারিদ্র বিমোচনে একটা কর্মপরিকল্পনা ধর্মবিশ্বাসীর হাতে তুলে দিয়েছে। এরপর ‘কর্জে হাসানা’ বা ‘কল্যাণ ঋণ’ যদি এসে পড়ে এই প্রসঙ্গে তাহলে আর তাদেরকে পায় কে? তাদের মনে হয় ‘সুদকে হারাম’ করার মধ্য দিয়ে যেনির্দেশনা কোরানে আছে – তার অনুসরণ করলে আজকের পৃথিবীর সব অর্থনৈতিক সমস্যার এই মুহূর্তেই সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তেমন কোনো দৃষ্টান্ত আজ পর্যন্ত কোনো ইসলামি রাষ্ট্র দেখাতে পারেনি – এবং এই প্রসঙ্গে প্রচলিত ভাষ্যটি অবশ্যই এই যে, তেমন ইসলামি রাষ্ট্র আজো পৃথিবীতে কোথাও পত্তন হয়নি। অর্থাৎ ইসলামবাদীরা কমিউনিস্টদের চেয়েও হতভাগ্য কারণ কমিউনিজম এর মধ্যে বেশ কিছু রাষ্ট্রে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মডেল পত্তন করে দেখাতে পেরেছে – সেই অর্থনীতির সাফল্য-ব্যর্থতা পৃথিবী দেখতে পেরেছে ও দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু কথা হল কমিউনিজমে যেউন্নত ইতিহাসবোধ ও অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা আছে এবং তারচেয়েও বড় কথা যে সামাজিক বিজ্ঞানের উচ্চতর ধারণা কমিউনিজমে আছে তার কিছু কি ইসলামবাদে আছে? এপ্রশ্ন এতই অবান্তর যে, এর কোনো উত্তর হয় না। কারণ ইসলামবাদ একটি ধর্মের অতিমাত্রায় সামাজিক সমস্যা সমাধানের সামর্থ নিয়ে অহেতুক লাফালাফি ছাড়া কিছুই নয়। ইসলামবাদীদের এটাও বুঝতে হবে এ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের যতগুলো ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমরা দেখেছি – সেসব রাষ্ট্রের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ‘ভাড়া’ ভিত্তিক : এই দেশগুলো তাদের তেল উত্তোলন ও বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থে ও তাদের নাগরিকরা সম্পত্তির ‘স্পনসরশিপ’দিয়ে তার বিনিময়ে পরিশ্রমী ও কৌশলী শ্রমিক ও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে চলে। এধরনের ‘ভাড়া’ ভিত্তিক অর্থনীতিতে রোজা ফিতরা জাকাত কোরবান অনেক কিছু বিলিয়ে দিতে পারে কিন্তু তাতে যে কিছুই হয় না এই এখন মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক অবস্থা দেখে কারোরই আর বোঝার অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

আমাদের মতো পৃথিবীর মূলধারার অর্থনীতি ভিত্তিক দেশগুলো, যেদেশগুলো কৃষি শিল্প ও সেবার ভিত্তিতে তাদের অর্থনীতি চালিত করে তার জন্য এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে শুধু দুটি মাত্র পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছে – একটি ধনতন্ত্র ও আরেকটি সমাজতন্ত্র – অথবা এদুটির মিশ্রণে ১৯৯১এর আগ পর্যন্ত ভারতের মিশ্র অর্থনীতি বা ইউরোপের মে১৯৬৮এর পরবর্তীতে প্রায় দুদশকের কল্যাণ অর্থনীতি অথবা চীন ভিয়েতনামের বৈজ্ঞানিক ভাবে সমাজবিদ্যার ফলিত ব্যবহারে রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বাজার অর্থনীতি। অর্থাৎ ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বাইরে তৃতীয় কোনো অর্থনীতির উদ্ভব ও বিকাশ হতে আমরা এখনো দেখিনি। যেভাবে ইসলামি ব্যাংক ইসলামি বীমা ও ইসলামি শেয়ার ব্যবসা আমরা দেখেছি এটাকে ‘হিজাব’এর মতো ব্যাংক বীমা ও শেয়ার বাজারের উপর একটা ইসলামি আবরণ ছাড়া আর কিছু বলার কোনো উপায় আমাদের নেই। ফলে এটা আমরা সহজেই বলতে পারি অর্থনৈতিক মুসলমানের গর্ব তার কোরান-সুন্নাহর অর্থনীতি কোনোদিন পৃথিবীতে পত্তন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা একেবারেই নেই – কারণ সম্ভাবনা থাকলে কোরান-সুন্নাহর এতদিনের উপস্থিতিতে কোথাও না কোথাও এই অর্থনীতির ফলিত রূপ দেখা যেতই।

কাজেই অর্থনৈতিক মুসলমানকে অবশ্যই এটা বুঝতে হবে আমরা যেরকম ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে ধর্ম খুঁজতে যাই না তেমনি কোরান ও সুন্নাহর মধ্যে অর্থনৈতিক মুক্তি খোঁজারও কোনো মানে থাকতে পারে না।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৮ comments

  1. মাহবুব কবির - ১ এপ্রিল ২০১১ (৩:০৭ অপরাহ্ণ)

    অত্যন্ত যুক্তিবাদী লেখা। ধন্যবাদ লেখককে। তবে, দুয়ে দুয়ে চার যুক্তি মেলাতে গিয়ে লেখক বোধকরি ধনতন্ত্র আর সমাজতন্ত্রে ধর্মের অস্তিত্ব প্রসঙ্গটি ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গিয়েছেন। ধনতন্ত্রের প্রেরণা দিয়েছে প্রটেষ্ট্যান্ট মৌলনীতি – এক কথা ম্যাক্ম ওয়েবার সহ আরে অনেক পণ্ডিত চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর সমাজতন্ত্রের জীবনযাত্রা নিজেই একটি ধর্ম হয়ে এসেছিল। এই ধর্মব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ তার বহুদিনের চর্চিত জীবনধারা খুঁজে পায়নি, ঈশ্বর খুঁজে পায়নি – এক সময় দেখেছে বড় কমরেডগণ বড় ঈশ্বর। হতাশ সেই মানুষদের এখন গির্জায় হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যায়। চীনারা যেমন দেশের বাইরে গেলেই সুপার ম্যাক আর ধর্মকর্মে মন দেয়। ধনতন্ত্রের ভোগবাদী জীবন একটি ধর্মীয় ব্যবস্থাপত্রই বটে। ইসলামী জীবনযাপনে পরিমিতিবোধের যে ব্যবস্থাপত্র কিতাবসমূহের সূত্রে বলা হয়, তার বেশিরভাগই লেখা শিল্পায়নের আগে। শিল্প বিপ্লবের পর পৃথিবীর চেহারা কেমন হবে, তার বিশ্লেষণে কী ধরণের জীবনযাপনপদ্ধতি হবে মুসলমানদের – তার দিকনির্দেশণা সহী (অথেনটিক) কিতাবসমূহে নেই। ফলে দেখুন, শেখেরা সব রাজাই রয়ে গেছে এখনও। ধনতন্ত্রের চুড়ান্ত বিকাশকালে ধনতন্ত্রের আশির্বাদপুষ্ট (ইসলামী) রাজতন্ত্র বালির বাধের মতো ভেঙ্গে পড়বে – সেটাই তো স্বাভাবিক। যা টিকে ছিল, সে লোক দেখানো, পরের অনুকম্পায়। লেখকের সাথে এ বিষয়ে সহমত।

  2. মোহাম্মদ মুনিম - ৫ এপ্রিল ২০১১ (২:২৩ পূর্বাহ্ণ)

    উইকিপিডিয়াতে ইসলামী অর্থনীতি নিয়ে যা আছে সেটা পড়ে মনে হল, জাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের একটা প্রক্রিয়া ক্লাসিকাল ইসলামে চালু ছিল এবং সেটা সফলও ছিল। যেহেতু জাকাত অমুসলিমদের দেওয়ার নিয়ম নেই, জাকাত পাওয়ার লোভেই বিপুল সংখ্যক স্পেন দেশীয় অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
    একই ভাবে জিজিয়া করও আদি ইসলামী অর্থনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। উইকিপিডিয়াতে দেখা যাচ্ছে ধনী অমুসলিমরা যেহেতু জাকাত দিতে বাধ্য ছিলেন না, তাই তাদের কাছ জিজিয়া কর আদায় করা হতো। জিজিয়া করের বিনিময়ে অমুলসিমরা স্বাধীনভাবে তাঁদের ধর্মচর্চা করতে পারতেন, এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধা পেতেন। দরিদ্র অমুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও কিছু ইসলামী শাসক দরিদ্র অমুসলিমদের জিজিয়া থেকে রেহাই দিতেন না। এই জিজিয়া কর এড়ানোর জন্যই অনেক দরিদ্র অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
    এটা বোঝা যাচ্ছে যে আরবরা সাম্রাজ্য বিস্তারের সাথে সাথে ধনী খৃষ্টান এবং ইহুদিদের ধর্মান্তরের চেয়ে তাঁদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়তেই বেশী আগ্রহী ছিলেন। ইসলামী আমলে ধনী খৃষ্টান এবং ইহুদিরা মুসলিমদের উদার ব্যবসা নীতির সুযোগ নিয়ে তাঁদের ব্যবসা বাণিজ্য global পর্যায়ে নিয়ে যেতে সমর্থ হন। এই গ্লোবাল ব্যবসাতে ইসলামে নিষিদ্ধ মদ্য-সামগ্রীও অন্তর্ভুক্ত ছিল। Global ব্যবসার সুবিধার্থে ‘চেক’ এর প্রবর্তন ইসলামী আমলেই করা হয়, যা আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ।
    ইসলামের স্বর্ণযুগের অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সাফল্য যতটা না ইসলামের বাহাদুরি তার চেয়ে অনেক বেশী তৎকালীন শাসকদের দূরদৃষ্টির বাহাদুরি, ধর্মকে অতি দ্রুত রাষ্ট্রের দৈনন্দিন কার্যকলাপ থেকে আলাদা করে ফেলতে পারার কারণেই তাঁরা সাফল্য পেয়েছিলেন। আদি ইসলাম থেকে শিক্ষা যদি নিতেই হয়, তবে এ শিক্ষাটাই নিতে হবে যে, ধর্মকে রাজনীতি এবং অর্থনীতি থেকে যত দূরে রাখা যায়, ততই মঙ্গল।

  3. মাসুদ করিম - ৩১ আগস্ট ২০১৪ (১১:৪২ পূর্বাহ্ণ)

  4. মাসুদ করিম - ২০ অক্টোবর ২০১৪ (৫:৫১ অপরাহ্ণ)

  5. মাসুদ করিম - ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (৩:০৯ অপরাহ্ণ)

    ইসলামী ব্যাংকিং ‘ফ্রড’: মুহিত

    ইসলামী ব্যাংকিংকে গ্রাহকের সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ‘প্রতারণা’ আখ্যায়িত করে এ রকম লেনদেনের সমালোচনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

    রোববার জাতীয় সংসদে মন্ত্রী বলেন, “ইসলামী ব্যাংকিং একান্তই একটি ফ্রড (প্রতারণা)। ভুলের ওপর নির্ভর করে ইসলামী ব্যাংকিং হচ্ছে।”

    এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, “দুর্ভাগ্য হলো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এটি চালু আছে। আইএমএফ পর্যন্ত তাদের অনুমোদন দিয়েছে। এটি বন্ধ করার সুযোগ নেই।”

    আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার সম্পূরক প্রশ্নে বলছিলেন মুহিত।

    তিনি আরও বলেন, “ইসলামী ব্যাংকিং বন্ধ হবে কি হবে না, তা মুসলিম উম্মাহর সচেতনতার ওপর নির্ভর করছে। মুসলিম উম্মাহ যখন বুঝতে পারবে, ইসলামের নামে জঘন্য কাজ চলছে, তখনই এটি বন্ধ করা যাবে।”

    “ইসলামে রিবা নিষিদ্ধ। কিন্তু রিবা ও সুদ এক নয়। রিবা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। এখানে কোনো মানবিকতা নেই। সুদ হচ্ছে কস্ট অব ফান্ড (তহবিলের ব্যয়) বা কস্ট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (প্রশাসনিক খরচ)। ধর্ম নিয়ে যারা বেশি কথা বলেন তারা সুদ আর রিবাকে এক করে ফেলেন।”

    বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক সহ দেশি-বিদেশি ২৫টি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

  6. মাসুদ করিম - ৯ অক্টোবর ২০১৫ (৫:৩৯ অপরাহ্ণ)

    Yunus Joins Ruler of Dubai in inaugurating the Global Islamic Economy Summit

    On Monday October 5, Nobel Laureate Professor Muhammad Yunus joined The UAE Prime Minister and ruler of Dubai His Highness Mohammed bin Rashid Al Maktoum to inaugurate the Global Islamic Economy Summit at Madinat Jumeirah attended by 4,000 policymakers and business leaders and finance professionals from 30 countries.

    Professor Yunus also gave the opening key note speech at the Global Islamic Economy Summit. The Prime Minister took the floor after Yunus’s speech to inaugurate the Summit. Professor Yunus said that the economy is not about businesses, it is about people. Growth rate does not reflect the condition of the people; it reflects the condition of the businesses. He argued that in order to make the world sustainable we would have to redefine business; instead of keeping the businesses to aim at one P, the profit, it should aim at three P’s with equal priority– People, Planet, and Profit. Only then business can reflect the condition of people. He warned the audience that unless we reformulate the purpose of business we would end up with a world where almost all the wealth of the planet will be concentrated in hands of a few people.

    The Summit organized by Dubai Chamber, Dubai Islamic Economy Development Centre (DIEDC) and Thomson Reuters is intended to examine the changing dynamics of the Islamic economy.

    On the previous day, October 4, Professor Muhammad Yunus was also personally invited by the UAE Prime Minister to join him in the launching ceremony of the Mohammed Bin Rashid Al Maktoum Global Initiatives Foundation, as a special guest, as he would like the foundation to be inspired by the work of Professor Yunus to help poor overcome poverty. The Prime Minister discussed with Yunus about the future programs of the Foundation and requested Professor Yunus to help him shape the agenda for the Foundation. He instructed his staff to issue resident visa to Yunus so that he can come to Dubai without any difficulty. The visa was issued on the same day.

    Others who spoke at the business sessions were Mubarak Rashed Al Mansouri, Governor of Central Bank of the UAE and prominent leaders from the UAE’s Islamic finance industry — Dr Adnan Chilwan, Group CEO of Dubai Islamic Bank, Tirad Al Mahmou d, Group CEO of Abu Dhabi Islamic Bank and Jamal Bin Ghalaita, CEO of Emirates Islamic Bank.

    Also on October 4, Professor Yunus called for reform of the financial service sector in order to respond better to world’s most pressing problem such as poverty, unemployment and environmental crisis at Abu Dhabi Islamic Bank (ADIB) Ethical Finance Innovation Challenge Awards (EFICA) ceremony

    During the event, Yunus highlighted how the global financial crisis had uncovered serious shortcomings in the global banking system, including irresponsible behavior by some individuals who influenced the marketplace. But he said that there are opportunities to correct mistakes and redesign the global financial system fundamentally. Professor Yunus said, “My greatest challenge has been to change the mindset of people. This is why it is so enriching to see initiatives, such as EFICA, that are focused on driving change across the industry and being a force for social good. By working together and collaborating across the industry, we can create a different kind of business – a business based on selflessness. “I believe the answer is, what I call, ‘Social business’,” defining this as a company with the sole purpose of solving a social problems in a financially self-sustaining way, rather than pursuing profits.

    Yunus said that the Islamic banking sector was well placed to embrace “social business” because of its ethical roots. He pointed to his experience at Grameen Bank in Bangladesh, which provides credit to the poorest in Bangladesh, without any collateral, as means to combat poverty.

    “All companies that are trying to do social good need funding to carry out their agenda – that gives banks a key role in the development of social businesses,” Yunus said. “We could have a social business funding company that will provide funding to renewable energy, healthcare or information technology, as well as funding a company that provides microfinance to the local community.

  7. মাসুদ করিম - ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ (১০:২৯ পূর্বাহ্ণ)

    ‘গুঁড়া দুধের’ ব্যবসায় লস ও ইসলামী ব্যাংকিং

    কয়েক বছর আগে ইসলামী ব্যাংকের এক গ্রাহকের কাছ থেকে একটি অদ্ভুত ধরনের সমস্যার কথা জেনেছিলাম। তিনি গুঁড়া দুধ আমদানি করেছিলেন। এ জন্য ঋণ গ্রহণ করেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে। ব্যবসার নিয়ম অনুযায়ী, ঋণ নিয়ে আমদানি করা পণ্য জমা থাকে ঋণদাতা ব্যাংকের হেফাজতে। আমদানিকৃত গুঁড়া দুধের গুণমান নিয়ে সংশয় দেখা দিলে মামলা হয় এবং এর নিষ্পত্তি হতে প্রায় তিন বছর চলে যায়। সর্বোচ্চ আদালতের রায় যায় আমদানিকারকের পক্ষে। আদালত রায়ে এটাও বলেন_ এ দুধ বাজারজাত করা যেতে পারে, যদি মেয়াদ অতিক্রান্ত না হয়।

    প্রচলিত ধারার ব্যাংক হলে আমদানিকারকের কাছে তারা ঋণ ও সুদ দাবি করত। ব্যবসায়ে লাভ কিংবা লোকসান যা-ই হোক না কেন, কেউ ঋণ নিলে তা মেয়াদান্তে ফেরত দিতে হবে এবং এ জন্য নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হবে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক শরিয়া ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। তারা ঋণগ্রহীতার কাছে সুদ নয়, বরং মুনাফার অংশ দাবি করে থাকে। কিন্তু উলি্লখিত ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী গুঁড়া দুধ আমদানি করে লাভ করেননি; পুরোটাই লোকসান গেছে। কারণ যে দুধ তিনি আমদানি করেছিলেন, প্রায় তিন বছর মামলা চলার সময় তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়; মামলা চালাতে ব্যয় হয়ে গেছে প্রচুর অর্থ। সময়ও ব্যয় হয়েছে। এ জন্য ক্ষতি হয়েছে আমদানিকারকের। শরিয়া ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালিত হলে লাভের অংশ ব্যাংক ও ঋণগ্রহীতা ভাগাভাগি করে নেবেন। আর লোকসান হলে তার দায়ও দু’পক্ষের। কিন্তু বাংলাদেশে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলো কি এ নিয়ম অনুসরণ করে? বিষয়টি নিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এ নিয়ম হুবহু অনুসরণ করতে গেলে বাংলাদেশে ব্যবসা করা কঠিন হবে। কারণ তখন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, আমদানিকারক, রফতানিকারক_ তাদের অনেকেই লোকসান দেখাবে। ফলে ব্যাংককেও লোকসানের বোঝা টানতে হবে।

    এ কারণে এ ধরনের ব্যাংক মুনাফা বা লোকসানের বণ্টন নয়; ঋণগ্রহীতার জন্য একটি নির্দিষ্ট অর্থ আগেভাগেই ঠিক করে দেয়।

    আলোচ্য ঋণের ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করতে হবে। ঋণ নিয়ে যে ব্যবসায়ী দুধ আমদানি করেছিলেন সেটা বাজারজাত করতে পারেননি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কারণে। কিন্তু এ জন্য তার কোনো দায় ছিল না। তিনি মামলায় পড়েছিলেন এবং রায় গেছে তার পক্ষে। তাহলে ঋণের আসলের অর্থের দায় কেন তার ওপর বর্তাবে? ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যবসায় ব্যবসায়ী ও ঋণদাতা ব্যাংকের চুক্তি হয়। লাভ হলে দু’পক্ষ মুনাফা বণ্টন করবে। লোকসান হলে তার দায়ও দু’পক্ষের। যদি নিম্নমানের দুধ আমদানির বিষয়টি প্রমাণিত হতো তাহলে দায় বর্তাত কেবল আমদানিকারকের। কিন্তু আদালত রায় দিয়েছেন_ আমদানিকারকের কোনো দায় নেই।

    শরিয়াভিত্তিক আরেকটি ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক পাঠানো নিয়ে সংবাদপত্রে একটি প্রতিবেদন দেখেছিলাম। ব্যাংকটি সম্পর্কে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য একটি টিম প্রেরণ করে। ওই দলে ছিলেন একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তখন একটি পত্রিকা বিষয়টির সমালোচনা করে লিখেছিল, ‘ইসলামী ব্যাংকে হিন্দু পরিদর্শক!’ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এর উত্তরে বলেছিলেন, আমরা বিভিন্ন ব্যাংকে অডিটর পাঠাই; হিন্দু বা মুসলিম নয়। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান দায়িত্ব গ্রহণের দিন বলেছেন, এ ব্যাংকে এখন থেকে যে কোনো ধর্মের অনুসারীই চাকরি করতে পারবেন, যদি তিনি যোগ্য হন। তিনি ব্যাংকের নিয়ম ও বিধিবিধান অনুসরণ করে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন কি-না, সেটাই হবে বিবেচ্য। তার এ মন্তব্য থেকে স্পষ্ট_ ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যাংকে এ ক্ষেত্রে এতদিন ব্যত্যয় ঘটেছে।

    ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এখন দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক হিসেবে গণ্য হচ্ছে। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মুদারাবা সঞ্চয়ী জমা ছিল ২৩ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা, মুদারাবা মেয়াদি জমা ছিল ১৯ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। অন্যান্য মুদারাবা জমা ১৬ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন ঘটার পর ব্যাংকটি নিয়ে গণমাধ্যমে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। শুরু থেকেই আমরা জেনেছি, এ ধরনের ব্যাংক সুদভিত্তিক নয়; লাভ-লোকসান ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এ ধরনের ব্যাংকিং কতটা সম্ভব_ সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টরা যে ধর্মের নাম ব্যবহার করছেন_ সেটা স্পষ্ট। শোনা যায়, কোথাও কোথাও মসজিদের খুতবায় ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। আর্থিক খাতের কোনো কোনো বিশ্লেষক এটাও বলেন, ব্যাংকটির যে রমরমা অবস্থা, শরিয়া ভিত্তিতে পুরোপুরি পরিচালিত হলে সেটা সম্ভব হতো না। শুরুতেই বলেছি, তারা ঋণগ্রহীতার জন্য লাভ বা লোকসানের বণ্টন নয়, একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ আগেই নির্ধারণ করে দেয়। তারা আমানত সংগ্রহেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করে। ব্যাংকিং খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, তফসিলি ব্যাংকগুলো আমানত বা জমা গ্রহণের ক্ষেত্রে আগেভাগেই একটি অঙ্ক সুদ হিসেবে নির্ধারণ করে দেয়। ইসলামী ব্যাংকও একই কাজ করে ভিন্ন নামে। তারা আমানতকারীদের বলে না_ ব্যাংকের লোকসান হলে আপনারা আমানতের জন্য জমা করা অর্থের বাড়তি কিছু পাবেন না। তারা ব্যবসায়ের জন্য ধর্মীয় অনুশাসনের ওপর জোর দেয়। কিন্তু বাস্তবে অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকের সঙ্গে

    ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম পদ্ধতিতে তেমন পার্থক্য টানা যাবে না।

    আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। ইসলামের অনুশাসন তারা অনুসরণ করেন। সুদ ইসলামে হারাম। যখন কোনো ব্যাংক থেকে বলা হয়_ তারা হারাম ব্যবসা করেন না, বরং হালাল ব্যবসা করেন, তখন ব্যাংকিং লেনদেনে আগ্রহী অনেকেই তাতে এ ধরনের ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনে আগ্রহ বোধ করেন। এ ব্যাংকের মালিকানার ৬৩ শতাংশের বেশি এসেছে দেশের বাইরে থেকে। তবে অনেক লোকের মধ্যে ধারণা রয়েছে_ ইসলামী ব্যাংক জামায়াতে ইসলামীর ব্যাংক। এ দলের একাধিক শীর্ষ নেতা ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করার কারণে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। এটাও জনশ্রুতি_ জামায়াতে ইসলামী কিংবা তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হলে এ ব্যাংকে চাকরি পাওয়া কার্যত অসম্ভব। নতুন পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি নিশ্চয় খতিয়ে দেখবে। ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি-সিএসআর তহবিলের অপব্যবহার হয়েছে কি-না, সেটা খতিয়ে দেখার কথা বলেছে।

    এটা ঠিক যে, ইসলামী ব্যাংকের আমানত ও ব্যবসা ক্রমাগত বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের অনেকেই এ ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠায়। এ জন্য ব্যাংকটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক চালু করতে পেরেছে। সন্দেহ নেই, সেবার মান উন্নত রাখার কারণেই এ অর্জন সম্ভব হচ্ছে। নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদের আমলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে, সেটাই কাম্য। একই সঙ্গে বলব, ব্যাংকটি শরিয়া ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষিত ধারা পুরোপুরি অনুসরণ করুক, যাতে দুই ধারার ব্যাংকের মধ্যে প্রকৃত প্রতিযোগিতা হয়। এখন যা চলছে তাতে কিন্তু প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ে যুক্তদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এবং আরও কয়েকটি ব্যাংক ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছে।

    শুরুর দিকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে সরকারের কিছু শেয়ার ছিল। বিএনপির শাসনামলে তা হস্তান্তর হয়ে যায়। এখন তা পুনর্বহাল হয় কি-না, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকব। সরকারের শেয়ার কাদের হাতে গেছে এবং কী প্রক্রিয়ায়, সেটারও তদন্ত হওয়া উচিত।

    বাংলাদেশে ব্যাংকিং ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয়, এখানে কোনো ব্যাংক সমস্যায় পড়লেও আমানতকারীদের স্বার্থ কখনও ক্ষুণ্ন হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ জন্য কৃতিত্ব পাবে। ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পরও তাই আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণ নেই।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.