আগামীকাল সোমবার ঢাকা শহরে যে হরতাল হতে চলেছে, তাকে আমি, লেখাই বাহুল্য, ন্যায়সঙ্গত মনে করি। তবে আমি এ-ও বলতে চাই, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় আন্দোলন কমিটি আরও খানিকটা সময় নিতে পারত, সারা দেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সফর ও সভা অনুষ্ঠানের পর এ-ধরণের একটি হরতাল আরও কার্যকর হতো। তবে এই চিন্তা থাকার পরও আমি বলতে চাই, যে-প্লাটফর্ম থেকে এই ঘোষণা এসেছে, সেটি দেশের একমাত্র প্লাটফর্ম যা দেশের জাতীয় সম্পদ সমূহ রক্ষার জন্যে বেশ কয়েক বছর ধরে সংগ্রাম করছে এবং তাদের আন্তরিকতা পরিক্ষিত। এখন এই প্লাটফর্মকে আরও শক্তিশালী করার ওপরেও নির্ভর করছে আমাদের জাতীয় সম্পদ সমূহের ভবিষ্যত, আমাদের দেশের ভবিষ্যত। অবশ্য এটা ভাবা ঠিক হবে না, এ-হরতাল সমর্থনকারীদের সবাই জাতীয় সম্পদ রক্ষার জন্যেই এর পক্ষাবলম্বন করছেন। আমরা দেখেছি, সৌদি আরবগামী খালেদা জিয়াকে বিদায় জানিয়ে বিমানবন্দরেই বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার এ-হরতালের প্রতি তাদের নৈতিক সমর্থন ঘোষণা করেছেন। আমার মনে হয়, জাতীয় কমিটির উচিত তাদের এ-সমর্থনকে প্রত্যাখ্যান করা। বিএনপি-জামাত সরকারের পাঁচ বছরের শাসনামলে তেল-গ্যাস নিয়ে যে-তামাশা চলেছে, তার সবই আমাদের জানা আছে। এখন তাদের ওই নৈতিক সমর্থনের জন্যে লালায়িত হওয়ার মানে এতদিন ধরে আন্দোলনের যে-ভিত্তি গড়ে তোলা হয়েছে, তাকেই দুর্বল করে ফেলা, আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। বিএনপি-জামাত আবারও চাইছে, যে-কোনও একটি জনপ্রিয় আন্দোলনকে খড়কূটোর মতো চেপে ধরে নিজেরা রাজপথে নামার মতো অবস্থানে পৌঁছতে। জাতীয় আন্দোলন কমিটি যদি তাদের ওই নৈতিক সমর্থনের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার না করেন, তা হলে তাদের সাংগঠনিক শক্তিমত্তার জন্যে আগামী দিনগুলিতে চারদলের উপাঙ্গে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আরও একটি মজার ব্যাপার। দেখতে পাচ্ছি, বিশিষ্ট সুশীল অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ একটি দৈনিক পত্রিকায় এ-হরতালের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন‍! বলাই বাহুল্য, এ-জাতীয় মানুষের সমর্থনও এ-হরতালের নৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করবে। কথিত সুশাসন ও নির্বাচনভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মুলো ঝুলিয়ে এ-ধরণের মানুষরাই দেশের স্বার্থবিরোধী একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গণভিত্তি গড়ে তোলার জন্যে গত কয়েক বছর তাদের যাবতীয় মেধাজ্ঞান ব্যয় করেছেন। তারা হরতালের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টির চেষ্টাও চালিয়েছেন। এখন যখন এরা হরতাল সম্পর্কে বলেন, হরতাল আছে এবং থাকবে, তখন বুঝতে হবে মতলব একদম ভালো নয়। ইতিমধ্যে, সংবাদের গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, দৈনিক আমাদের সময় খোলাখুলি তেল-গ্যাস সম্পর্কিত সাম্প্রতিক চুক্তির…

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সোমবার ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে। কেন এই হরতাল, এবং ইদের পুজোর লম্বা ছুটির আগে যে সপ্তাহটি শেষ পূর্ণ কর্মসপ্তাহ তার দ্বিতীয়দিনের অর্ধেক হরতালের মতো বহুপরীক্ষিত স্বতঃস্ফূর্ততাহীন কর্মসূচী দিতে জাতীয় কমিটিকে কারা প্ররোচিত করেছে? আমরা প্ররোচনাকারীদের মধ্যে যাদের নাম দেখতে পাচ্ছি তারা হল: বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি বামন রাজনৈতিক সংগঠন। কী এদের জনভিত্তি যে জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনকে হরতালের মতো একটি নষ্ট কর্মসূচী দিয়ে জনগণের কাছে হাসির পাত্র হচ্ছেন? অবশ্য উল্লেখিত প্রত্যেকটি বামন রাজনৈতিক দলের শিষ্যনেতৃত্ব এমনই হাস্যকর তাদের কাছ থেকে এরচেয়ে বেশি কিছু আশা করাই ভুল হবে। আমাদের আশা সরকারের দিকে হরতালের মতো একটা জনক্ষতিকর ব্যয়বহুল পঁচাডিম ছোঁড়ার এই সিদ্ধান্ত থেকে আপনারা সরে আসুন, অন্তত এই বামন সংগঠনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদলের কাছে আহ্বান: আপনাদের হাস্যকর শীর্ষনেতৃত্বকে একটু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চাপপ্রয়োগ করুন, আন্দোলনে থাকুন কিন্তু হরতাল পরিহার করুন। আর রাজনীতি করতে হলে মানুষের মনোভাবটা বুঝতে হয় সবার আগে, আপনাদের আগে আপনাদের দৃষ্টিতে বুর্জোয়া জুটি চোরডাকাত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যেরকম সর্দিকাশির মতো হরতাল করে গণআন্দোলনের এই মানবিক অস্ত্রটিকে পুরোপুরি ধারহীন করে গেছেন—তারাও ইদের আগের সপ্তাহে এরকম হরতাল ডাকতেন না, আর আপনারা মানুষের মনোভাবের পুরো বিপরীতে যে হরতাল ডাকলেন—এতে আপনাদের বিপ্লবী রাজনীতি আরো একবার প্রমাণ করল, যে কথা শুনলে ঘোড়াও হাসবে সেধরনের কথার প্রতি আপনাদের রক্তের প্রবল টানে হয়তো কোনোদিনই ভাটা পড়বে না।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.