আজ পেছনে তাকিয়ে মনে হয় জীবনে কোন ব্যাপারে কোন খেদ নেই এমনটা ভাবা কোন মানুষের পক্ষে অস্বাভাবিক। আমি সবসময় ভাবতে পছন্দ করেছি যে কোন বিষয়েই আমার কোন আক্ষেপ নেই, কিন্তু এখন মনে হয় এটা অসম্ভব। [...]

অনুশোচনা আজ পেছনে তাকিয়ে মনে হয় জীবনে কোন ব্যাপারে কোন খেদ নেই এমনটা ভাবা কোন মানুষের পক্ষে অস্বাভাবিক। আমি সবসময় ভাবতে পছন্দ করেছি যে কোন বিষয়েই আমার কোন আক্ষেপ নেই, কিন্তু এখন মনে হয় এটা অসম্ভব। আমি আমার জীবন ও কাজ নিয়ে এতটা ব্যতিব্যস্ত ছিলাম যে এখন এই ভেবে আফসোস হয় কেন আমি আমার ছোট বোন লরেটার সাহায্যে এগিয়ে আসি নি; বিশেষ চিকিৎসা কিংবা সুশ্রুষা পেলে সে হয়ত খুবই উপকৃত হতো। আমার মা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে একটা ব্ল্যাকবোর্ডে খুবই সাদামাটা কিছু একটা শেখানোর চেষ্টা করছেন লরেটাকে, তাঁর এক হাতে একটা চক আরেক হাতে রুলার। এই দৃশ্য আমি কোনদিন ভুলবো না। "দুয়ে দুয়ে কত হয়?" তিনি জিজ্ঞাসা করছেন। আর লরেটা তার সম্ভাব্য পরিণতির কথা ভেবে মুখে যে উত্তরটা আসছে সেটাই উগড়ে দিচ্ছে, "তিন, না পাঁচ, না তিন..." এবং যত প্রাণপণে সে চেষ্টা করতে থাকে ততই উন্মাদ হয়ে উঠতে থাকেন আমার মা। প্রতিবারই এর পরিসমাপ্তি ঘটতো মারধোরে, তারপর মা চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে আমার দিকে ফিরে, হতাশায় দু'হাত ছুঁড়ে প্রশ্ন করতেন, "এমন শাস্তি পাওয়ার মত কী অপরাধ করেছি আমি?", যেন আমি ঈশ্বর যার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে, আমি, এক ক্ষুদে বালক! লরেটা তার নিজের ধরনে ছিল খুব অন্যরকম ও স্পর্শকাতর এক মেয়ে। সে প্রায় সবসময়ই একেবারে ভেঙে পড়ে কান্নাকাটি করতো আর কেউ তার কী হয়েছে জানতে চাইলে বলতো, "আমি অসুখী নই, আমি বিষন্ন নই, আমি শুধু আমাকে সামলাতে পারছি না।" এই কথা ভেবে আমার খুব খারাপ লাগে যে আমি কখনো সময় নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে সে যেন খুব দরকারি বিশেষ সাহায্য ও মনোযোগটুকু পায়, সেটা দেখি নি। আমার তিন সন্তানের জন্যই আমার বিশেষ অনুশোচনা হয় কেননা তারা তিনজনই মন্দবিয়ের শিকার হয়েছে। আমার বড় মেয়ে বারবারা যখন নেহাত শিশু তখন আমি তার মাকে ছেড়ে যাই। আমি বারবারাকে দেখতে চাইলে তার মা সেটাকে জটিল করে তুলতো। এরপর আমি কয়েক বছরের জন্য পারী চলে গেলে সেখানে এক পর্যায়ে আমি বারবারাকে খুঁজে বার করতে চেষ্টা করি কেননা আমার মনে হয়েছিল তাকে কাছে পেলে দারুণ হবে। আমি কল্পনা করি তাকে পাশে নিয়ে রাস্তায় হাঁটছি, তাকে পারীর দৃশ্যাবলি…

পেটের ভাত যোগানো আর কোনমতে বেঁচে থাকার লড়াইই আমাকে তৈরি করেছে। আমি অবশ্য এই লড়াইয়ে নিজেকে কাবু হতে, ধ্বংস হয়ে যেতে দিই নি।

প্রথম লেখার কাজ পেটের ভাত যোগানো আর কোনমতে বেঁচে থাকার লড়াইই আমাকে তৈরি করেছে। আমি অবশ্য এই লড়াইয়ে নিজেকে কাবু হতে, ধ্বংস হয়ে যেতে দিই নি। হায় যীশু! ক'খানা ফালতু ডলার জোগাড় করার জন্য আমাকে আর জুনকে কী দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়েই না যেতে হয়েছিল! আমরা আমার কিছু কবিতা ছাপিয়েছিলাম, আর জুন সেগুলো বার, কাফে ইত্যাদিতে গিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করতো, আমি তখন বাইরে অপেক্ষা করতাম। আমরা জানতাম আমি পাশে না থাকলেই বরং জুন বেশি টাকা যোগাড় করতে পারবে। কখনো কখনো সে কয়েক ঘন্টার মধ্যেও বারের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো না। সে হয়তো কোন ব্যাটাছেলের সঙ্গে বসে কথা বলতো আর সেই ছেলে তাকে পানীয় কিনে দিত এবং স্রেফ তার কথা শোনার জন্যই তাকে টাকা দিত। সে কখনো কখনো হয়ত মাত্র পঞ্চাশ পয়সা নিয়ে বেরিয়ে আসতো, কালেভদ্রে হয়তোবা পঞ্চাশ ডলার নিয়ে, আর আমি দরজার পাশে গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে থেকে হাতে কবিতার বান্ডিল নিয়ে ঠাণ্ডায় জমে যেতাম। আমরা এমনকি একবার রেস্তোঁরায় রেস্তোঁরায় ঘুরে চমৎকার মোড়কে প্যাঁচানো চকলেট, ক্যান্ডি বিক্রি করার উদ্যোগও নিয়েছিলাম। আবারও জুনই যেত সেইসব জায়গায়, তার আগ্রহ ছিল, আমার ছিল না। লোকেরা হাসাহাসি করে আমাকে বার করে দিতো, আমি সেটা সহ্য করতে পারতাম না। জুন খুব সুন্দরী ছিল। আমি কখনো লেখার কাজ চাইতে গেলে জুনকে সঙ্গে নিয়ে যেতাম। আমি একা গেলে যতটা সহানুভূতি ও আনুকূল্য পেতাম তার সঙ্গে গেলে সচরাচর এর চেয়ে বেশিই পেতাম। আমরা একদিন লিবার্টি ম্যাগাজিন-এর প্রধানের সঙ্গে দেখা করি। আমি তাঁর কাছে সহকারি সম্পাদক পদের জন্য চাকরি প্রার্থনা করি। তিনি জুন ও আমার দিকে ভালো করে চেয়ে দেখে আমাকে বলেন, "শব্দ নিয়ে একটি রচনা লিখে নিয়ে আসো!" আমাকে ভালো চাকরি দিতে পারেন এমন একজনের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে আমি লাফিয়ে উঠি, তাছাড়া বিষয়টাও ছিল অনেক ব্যাপক, আমি এ-নিয়ে অনেক কিছুই লিখতে পারতাম। গবেষণা করার জন্য আমি ফাঙ্ক অ্যান্ড ওয়াগনাল-এর অভিধানের দপ্তরে যাই। ফ্রাঙ্ক ভিজটেলী ছিলেন এর সম্পাদক, তিনি এমন একজন মানুষ যাঁকে কোনদিনই ভুলবো না আমি। তিনি গোটা অভিধানটিই তিনবার কি চারবার পড়েছেন! আমাদের মধ্যে খুবই উজ্জীবক একটি আলোচনা হয়। আমাদের সাক্ষাৎকারের পর, কয়েকদিনের মধ্যেই,…

লোকেরা যখন আনাইস-এর প্রশংসা করে একেবারে আসমানে তুলে দেয়, যেনবা সে একজন দেবদূতী, আমাকে তখন শয়তানিতে পেয়ে বসে। আমার মনে হয় না আমি শীতল আচরণ করছি, এটা শুধুমাত্র এই যে, আমি তার দেবীত্ব বিষয়ে শুনতে শুনতে অধৈর্য হয়ে পড়েছি। [...]

আনাইস নিন লোকেরা যখন আনাইস-এর প্রশংসা করে একেবারে আসমানে তুলে দেয়, যেনবা সে একজন দেবদূতী, আমাকে তখন শয়তানিতে পেয়ে বসে। আমার মনে হয় না আমি শীতল আচরণ করছি, এটা শুধুমাত্র এই যে, আমি তার দেবীত্ব বিষয়ে শুনতে শুনতে অধৈর্য হয়ে পড়েছি। সে একেবারে খাঁটি চিনি দিয়ে তৈরী নয় এবং আমি এই কথা বলতে পেরে খুশি। আনাইস-এর দুর্বলতা ও অন্ধকার দিকগুলোই আমাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে সবচেয়ে বেশি। তার সেইসব স্বর্ণালী গুণগুলোর কথা বলার বেলায় আমিই যদিও সবার আগে থাকবো, তবু আমাকে বলতে হবে যে তার অন্য দিকটাই তাকে বেশি মানবিক ও নাজুক এবং সে-কারণে আদরণীয় করেছে আমার চোখে। পারী-তে যখন আমাদের প্রথম পরিচয় হয় তখন একেবারে বিস্ফোরক না হলেও একটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। আমরা প্রবলভাবে দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হই। আনাইস তখন বাঁচার জন্য রীতিমত জ্বলছিল। সে তার উচ্চ-মধ্যবিত্ত জীবন ও একজন সজ্জন কিন্তু রক্ষণশীল ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিবাহিত জীবনের ক্লান্তিতে একেবারে শুকিয়ে যাচ্ছিল। আমার বউ জুন অনিয়মিতভাবে পারী-তে আসতো আমার কাছে বেড়াতে, যদিও আমাদের সম্পর্কটা ছিল তখন একেবারে তার শেষ পর্যায়ে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে দিতে, কিন্তু সেটা এতই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ছিল যে কিছুতেই টিকছিল না। আমরা দুজন দুজনকে পাগল করে তুলছিলাম। আর তখনই এল এই সুন্দরী নারী, আনাইস নিন, যে ক্রমেই আমার নতুন জীবন, আমার পারী-জীবনের অংশ হয়ে উঠছিল, আর সে পানির অভাবে শুকিয়ে যাওয়া একটি ফুলের মত আবার ধীরে ধীরে পাতা মেলছিল। আমার কাছে জুন-এর প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছিল, যদিও সে তার উল্টোটাই সত্যি বলে দাবী করছিল। সে আমার কাছে এলেই আমার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো, আমার কাজের ক্ষতি হতো। আনাইস-এর সঙ্গে আমি নিশ্চিত ও নিরাপদ বোধ করতাম। সে সবকিছু সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতো যেন আমি লেখা চালিয়ে যেতে পারি। সে সত্যি ছিল একজন অভিভাবক-দেবীর মত, আমার লেখার ব্যাপারে উৎসাহী ও সহমর্মী; তখন সেটাই আমার সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল। সে খুব দয়াশীলও ছিল। আমাকে ছোটখাটো উপহারে ভরিয়ে রাখতো -- হাতখরচ, সিগারেট, খাবার এইসবের যোগান দিত। আমি লেখক হয়ে ওঠার আগেই সে জগতের কাছে আমার প্রশংসার গান গাইতো। সত্যি বলতে কী, আনাইস-ই আমার ট্রপিক অফ ক্যান্সার বইয়ের প্রথম মুদ্রণের…

ন্যুয়র্কে স্রেফ বেঁচে থাকার লড়াই করতে করতে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে আমি নিজেকে 'এই নরক থেকে বেরুতে হবে, হেনরি' এ-কথা বলে ঝোলাতে ক'টা কাপড় ভরে নিয়ে, বুড়ো আঙুল তুলে একটা গাড়ি থামিয়ে শহর থেকে বেরিয়ে পড়তাম [..]

হিচহাইকিং ন্যুয়র্কে স্রেফ বেঁচে থাকার লড়াই করতে করতে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে আমি নিজেকে 'এই নরক থেকে বেরুতে হবে, হেনরি' এ-কথা বলে ঝোলাতে ক'টা কাপড় ভরে নিয়ে, বুড়ো আঙুল তুলে একটা গাড়ি থামিয়ে শহর থেকে বেরিয়ে পড়তাম, জানি না কোন্ নিরুদ্দেশের পানে। আমার অঙুলিনির্দেশে প্রথম যে-গাড়িটি থামতো আমি সেটাতেই উঠে পড়তাম, সেটি কোথায়, কতদূর যাচ্ছে, সেখানে গিয়ে আমি কী করবো এইসব সাতপাঁচ না ভেবেই। "আপনি কোথায় যাচ্ছেন?" আমি জিজ্ঞাসা করতাম। তিনি হয়ত জবাব দিতেন, "রলে", এবং আমি সেই সম্পূর্ণ আগন্তুকের সঙ্গে সেখানেই চলে যেতাম চমৎকার আড্ডায় মজে গিয়ে। পথে আমি এমন-সব মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছি যাদের সঙ্গে খুব মনখোলাভাবে মিশতে পেরেছি, কেননা তাদের কোন লোকদেখানো ভদ্রতার ভনিতা ছিলনা। আমি সেইসব লোকের সঙ্গে জগতের যে-কোন বিষয় নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে কথা বলতে পারতাম: ট্রাক ড্রাইভার, চাষা, বেচনদার, যত ধরনের লোকের কথা আপনি ভাবতে পারেন। আমি যাদের বলি, আসল মানুষ। মাঝেমাঝে তাদের কেউ আমাকে রাতের খাবার কিনে দিত পথে, কেউবা বাড়িতে নিয়ে রাতে ঘুমাতেও দিত। সেইসব সহজসরল সাধারণ মানুষেরাই কিন্তু সত্যিকারের মানুষ। শহুরে শিক্ষিত, উন্নতভ্রু, তথাকথিত রুচিশীল মানুষেরা নয়- আমার দেখা রাস্তার মানুষগুলোর কাছে তারা প্রায় বামনতুল্য। সেইসব পথ-অভিযান থেকে আমি সবচেয়ে মূল্যবান যে শিক্ষা নিয়েছি সেটি হলো, কিছু নির্দিষ্ট ধরনের মানুষ ও জায়গা সম্পর্কে আমার যে পূর্বধারণা ও মতামত ছিল সেগুলো একেবারে ডাহা ভুল। সর্বস্তরে এবং সর্বত্রই যে অসাধারণ সব মানুষ রয়েছে আমার এই আবিষ্কারটা ছিল সত্যি চমকপ্রদ। রাস্তার সবচেয়ে সেরা অভিজ্ঞতাটি হয়েছিল আমার জুন-এর সঙ্গে। সে এত চোখে পড়ার মত সুন্দর ও আকর্ষণীয় ছিল! আমাদের দুজনের জুটি ছিল যাকে বলে অপ্রতিরোধ্য। আমি কী বলতে চাইছি আশা করি বুঝতে পেরেছেন আপনারা। এক দম্পতি আমাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে ঝাড়া পাঁচ/ছয় ঘন্টা ধরে গাড়ি চালান আর আমরা দুজনে যাবতীয় কথা বলাবলি করি। তাঁরা আমাদের তাঁদের বাড়িতে রাতের খাবার খেতে বলেন, এটা সম্ভবত দক্ষিণের কোন রাজ্যে হবে, কী সুস্বাদু ভোজই না ছিল সেটা! আমি সবসময় দক্ষিণের খাবার ভালোবেসেছি, সেখানকার রান্নাঘরে বাদাম-কাঠের ধোঁয়ার গন্ধের কথা মনে করেই আমার জিবে জল আসে। আমরা খেতে বসি এবং যাকে বলে ভুরিভোজন করি। সত্যি অসাধারণ ছিল তা। এই…

মানুষের মনোজগতে এত বেশি চলক আর এত রহস্য রয়েছে যে একটিমাত্র চাবি দিয়ে তার সবকটার তালা খোলা অসম্ভব[..]

হেনরি মিলার: দানব না দেবতা? অনেকেই আমাকে দানবের সঙ্গে তুলনা করেছেন, আবার কেউ কেউ বলেছেন দেবতা। সত্যি বলতে কি আমি কোনদিনই দেবতা হবার স্বপ্ন দেখি নি, কারণ সন্ত টমাস আকিনাস কিংবা সন্ত ফ্রান্সিসের মত ইতিহাসের বিখ্যাত দেবতাদের সঙ্গে কেউই পাল্লা দেবার ক্ষমতা রাখেন না। আমাকে আপনারা হয়ত একজন ছোটখাটো দুষ্টু সন্ত বলতে পারেন, কেননা আমার মধ্যে খানিকটা শয়তানের অস্তিত্বও রয়েছে। সম্প্রতি আমি নিষ্কলুষতা আর কৌমার্যের মধ্যেকার পার্থক্য নিয়ে ভাবছিলাম। কৌমার্য ব্যাপারটি স্বেচ্ছা-আরোপিত, অন্যদিকে নিষ্কলুষতা এক ধরনের মানসিক অবস্থা আপনি যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। আপনি চেষ্টা করে নিষ্কলুষ হতে পারেন না, হয় আপনি স্বভাবগতভাবেই নিষ্কলুষ নয় আপনি তা নন। কৌমার্য সম্ভবত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ গুণ কেননা এর সঙ্গে সচেতন প্রয়াস, শৃঙ্খলা আর কঠিন পরিশ্রম জড়িত। আমি জীবনভর একজন নিষ্কলুষ মানুষ। আমি আমার কোন কৃতকর্মের জন্যই অপরাধ বোধ করি না ! আমি বলছি না এটা আমার বিশেষ কোন গুণ, আমি স্রেফ জন্মগতভাবেই এমন। সে-রকম কোন সুযোগ দেয়া হলেও আমি সন্তজাতীয় কোন মানুষ হতে চাইবো না, কেননা আমি মনে করি, যে-মানুষ ধার্মিকতা ও দেবত্ব প্রচার না করে তার ভেতরের দানবদেরও কথা বলতে দেয় সে-মানুষ অনেক বেশি জীবন্ত ও আকর্ষণীয় । মনোবিশ্লেষণ আমি নিজে মনোবিশ্লেষণে বিশ্বাস করি না, কিন্তু আজকাল লোকে একে সর্বরোগহর বলে মনে করে। আমরা এখন মনোবিশ্লেষণের যুগে বাস করি, তাই জীবন আর সহজ-সাদামাটা নেই। আমরা বেশি বেশি ভাবছি আজ; বেচারা মস্তিষ্ক আমাদের আজ অতিপরিশ্রমে ক্লান্ত। আমাদের মন নামে বস্তুটি আজ যা করছে তা তার কাজ নয়, তার কাজ আমাদের তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা, আমাদের শরীরের সেবা করা। আজ যে আমাদের অনেকেই বিভ্রান্ত, বিপর্যস্ত এবং মানসিকভাবে অসুস্থ তার কারণ আমরা মস্তিষ্কের অপব্যবহার করছি। আমি মনে করি না কিছু বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া মনোবিশ্লেষণের আদৌ কোন দরকার আছে। মনোবিশ্লেষকদের ব্যপারে সাধারণভাবে আমার এক ধরণের গাত্রদাহ রয়েছে। প্রথমত তারা মানুষকে ঠকায়, তাদের পকেট খালি করে এবং বিনা কারণে তাদের বছরের পর বছর চিকিৎসাধীন রাখে। মনোবিশ্লেষকদের মধ্যে আত্মহত্যা ও উন্মাদগ্রস্ততার হার অনেক বেশি; অথচ আমরা কিনা তাদের আলোকিত ঈশ্বররূপে ভজনা করি! এটা কি স্রেফ পাগলামি নয় যে, আপনি আপনার জীবন এমন একজনের হাতে সঁপে দিচ্ছেন যিনি হয়তবা…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.