অনুশোচনা আজ পেছনে তাকিয়ে মনে হয় জীবনে কোন ব্যাপারে কোন খেদ নেই এমনটা ভাবা কোন মানুষের পক্ষে অস্বাভাবিক। আমি সবসময় ভাবতে পছন্দ করেছি যে কোন বিষয়েই আমার কোন আক্ষেপ নেই, কিন্তু এখন মনে হয় এটা অসম্ভব। আমি আমার জীবন ও কাজ নিয়ে এতটা ব্যতিব্যস্ত ছিলাম যে এখন এই ভেবে আফসোস হয় কেন আমি আমার ছোট বোন লরেটার সাহায্যে এগিয়ে আসি নি; বিশেষ চিকিৎসা কিংবা সুশ্রুষা পেলে সে হয়ত খুবই উপকৃত হতো। আমার মা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে একটা ব্ল্যাকবোর্ডে খুবই সাদামাটা কিছু একটা শেখানোর চেষ্টা করছেন লরেটাকে, তাঁর এক হাতে একটা চক আরেক হাতে রুলার। এই দৃশ্য আমি কোনদিন ভুলবো না। "দুয়ে দুয়ে কত হয়?" তিনি জিজ্ঞাসা করছেন। আর লরেটা তার সম্ভাব্য পরিণতির কথা ভেবে মুখে যে উত্তরটা আসছে সেটাই উগড়ে দিচ্ছে, "তিন, না পাঁচ, না তিন..." এবং যত প্রাণপণে সে চেষ্টা করতে থাকে ততই উন্মাদ হয়ে উঠতে থাকেন আমার মা। প্রতিবারই এর পরিসমাপ্তি ঘটতো মারধোরে, তারপর মা চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে আমার দিকে ফিরে, হতাশায় দু'হাত ছুঁড়ে প্রশ্ন করতেন, "এমন শাস্তি পাওয়ার মত কী অপরাধ করেছি আমি?", যেন আমি ঈশ্বর যার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে, আমি, এক ক্ষুদে বালক! লরেটা তার নিজের ধরনে ছিল খুব অন্যরকম ও স্পর্শকাতর এক মেয়ে। সে প্রায় সবসময়ই একেবারে ভেঙে পড়ে কান্নাকাটি করতো আর কেউ তার কী হয়েছে জানতে চাইলে বলতো, "আমি অসুখী নই, আমি বিষন্ন নই, আমি শুধু আমাকে সামলাতে পারছি না।" এই কথা ভেবে আমার খুব খারাপ লাগে যে আমি কখনো সময় নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে সে যেন খুব দরকারি বিশেষ সাহায্য ও মনোযোগটুকু পায়, সেটা দেখি নি। আমার তিন সন্তানের জন্যই আমার বিশেষ অনুশোচনা হয় কেননা তারা তিনজনই মন্দবিয়ের শিকার হয়েছে। আমার বড় মেয়ে বারবারা যখন নেহাত শিশু তখন আমি তার মাকে ছেড়ে যাই। আমি বারবারাকে দেখতে চাইলে তার মা সেটাকে জটিল করে তুলতো। এরপর আমি কয়েক বছরের জন্য পারী চলে গেলে সেখানে এক পর্যায়ে আমি বারবারাকে খুঁজে বার করতে চেষ্টা করি কেননা আমার মনে হয়েছিল তাকে কাছে পেলে দারুণ হবে। আমি কল্পনা করি তাকে পাশে নিয়ে রাস্তায় হাঁটছি, তাকে পারীর দৃশ্যাবলি…
আজ পেছনে তাকিয়ে মনে হয় জীবনে কোন ব্যাপারে কোন খেদ নেই এমনটা ভাবা কোন মানুষের পক্ষে অস্বাভাবিক। আমি সবসময় ভাবতে পছন্দ করেছি যে কোন বিষয়েই আমার কোন আক্ষেপ নেই, কিন্তু এখন মনে হয় এটা অসম্ভব। [...]