আনাইস নিন
লোকেরা যখন আনাইস-এর প্রশংসা করে একেবারে আসমানে তুলে দেয়, যেনবা সে একজন দেবদূতী, আমাকে তখন শয়তানিতে পেয়ে বসে। আমার মনে হয় না আমি শীতল আচরণ করছি, এটা শুধুমাত্র এই যে, আমি তার দেবীত্ব বিষয়ে শুনতে শুনতে অধৈর্য হয়ে পড়েছি। সে একেবারে খাঁটি চিনি দিয়ে তৈরী নয় এবং আমি এই কথা বলতে পেরে খুশি।
আনাইস-এর দুর্বলতা ও অন্ধকার দিকগুলোই আমাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে সবচেয়ে বেশি। তার সেইসব স্বর্ণালী গুণগুলোর কথা বলার বেলায় আমিই যদিও সবার আগে থাকবো, তবু আমাকে বলতে হবে যে তার অন্য দিকটাই তাকে বেশি মানবিক ও নাজুক এবং সে-কারণে আদরণীয় করেছে আমার চোখে।
পারী-তে যখন আমাদের প্রথম পরিচয় হয় তখন একেবারে বিস্ফোরক না হলেও একটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। আমরা প্রবলভাবে দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হই। আনাইস তখন বাঁচার জন্য রীতিমত জ্বলছিল। সে তার উচ্চ-মধ্যবিত্ত জীবন ও একজন সজ্জন কিন্তু রক্ষণশীল ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিবাহিত জীবনের ক্লান্তিতে একেবারে শুকিয়ে যাচ্ছিল।
আমার বউ জুন অনিয়মিতভাবে পারী-তে আসতো আমার কাছে বেড়াতে, যদিও আমাদের সম্পর্কটা ছিল তখন একেবারে তার শেষ পর্যায়ে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে দিতে, কিন্তু সেটা এতই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ছিল যে কিছুতেই টিকছিল না। আমরা দুজন দুজনকে পাগল করে তুলছিলাম।
আর তখনই এল এই সুন্দরী নারী, আনাইস নিন, যে ক্রমেই আমার নতুন জীবন, আমার পারী-জীবনের অংশ হয়ে উঠছিল, আর সে পানির অভাবে শুকিয়ে যাওয়া একটি ফুলের মত আবার ধীরে ধীরে পাতা মেলছিল। আমার কাছে জুন-এর প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছিল, যদিও সে তার উল্টোটাই সত্যি বলে দাবী করছিল। সে আমার কাছে এলেই আমার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো, আমার কাজের ক্ষতি হতো।
আনাইস-এর সঙ্গে আমি নিশ্চিত ও নিরাপদ বোধ করতাম। সে সবকিছু সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতো যেন আমি লেখা চালিয়ে যেতে পারি। সে সত্যি ছিল একজন অভিভাবক-দেবীর মত, আমার লেখার ব্যাপারে উৎসাহী ও সহমর্মী; তখন সেটাই আমার সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল। সে খুব দয়াশীলও ছিল। আমাকে ছোটখাটো উপহারে ভরিয়ে রাখতো — হাতখরচ, সিগারেট, খাবার এইসবের যোগান দিত। আমি লেখক হয়ে ওঠার আগেই সে জগতের কাছে আমার প্রশংসার গান গাইতো। সত্যি বলতে কী, আনাইস-ই আমার ট্রপিক অফ ক্যান্সার বইয়ের প্রথম মুদ্রণের খরচ যুগিয়েছিল। এইসব কারণে আমি তার প্রতি যারপরনাই কৃতজ্ঞ ছিলাম।
একজন মানুষের মধ্যেই বন্ধু, বিশ্বস্ত সহচর, সহকর্মী, সহযোগী ও প্রেমাস্পদকে খুঁজে পাওয়া সত্যি দুর্লভ। আমরা দুজন দুজনের জন্য উপকারী ছিলাম, দুজন দুজনকে পুষ্টি যুগিয়েছি, চাঙ্গা রেখেছি, এবং যুদ্ধও করেছি। অবশ্য গায়ে হাত তোলা কিংবা চড়চাপাটির মত কিছু নয়। আনাইস কখনো তার গলার স্বর চড়া করতো না। সে জুন-এর মত এমন উদ্বায়ু স্বভাবেরও ছিল না। আমাদের কিছু কিছু বিষয়ে মতবিরোধ ছিল। এটা কোন যোগাযোগহীনতার কারণে নয়। স্রেফ তার ও আমার কিছু নিজস্ব মতামত ছিল। তার এমন অভিমত ছিল যে সত্যরূপ প্রকাশের পরিবর্তে একটি মায়ামূর্তি তৈরি করা অনেক মহৎ কাজ। “আমি আমেরিকানদের এই সত্য-বলার স্বভাব-প্রবৃত্তিকে ঘৃণা করি”, সে বলতো। “আমার মিথ্যেগুলো এক ধরণের নান্দনিক রূপান্তর যা লোকদের আঘাত পাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিতো।” আর আমি সত্যকে একটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতাম, যা দিয়ে লোককে আঘাত করে, তাদের নিজেদের ও বাস্তবতার সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে বাধ্য করতাম। সে মনে করতো আমি নিষ্ঠুর আর আমি মনে করতাম সে একজন স্বভাব-মিথ্যেবাদী।
সে যদি তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ সত্যি কথা বলে তাহলে লোকেরা কী ভাববে কিংবা কীভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে তা নিয়ে আনাইস খুবই উদ্বিগ্ন ছিল। সে অগনিত ঘণ্টা কাটিয়েছে তার ডায়রি থেকে সেইসব কথাসমূহ কেটে দিতে, যাতে হয়ত দুয়েকটা ভ্রূ উত্তোলিত হতো। সে তার নিজের সম্পর্কে এমন একটা ছবি আঁকার জন্য সচেষ্ট ছিল যা দেখে সবাই তাকে ভালোবাসবে এবং প্রশংসা করবে, যেটা বাস্তবে হাস্যকর ও অসম্ভব। কিন্তু অপেক্ষা করুন। যখন ভক্তেরা তার অসম্পাদিত ডায়রিগুলো হাতে পাবে তখন একেবারে নতুন এক ব্যক্তিত্বের উদয় হবে। সন্ত আনাইস অবশেষে সমাহিত হবেন এবং সত্যিকারের নারী, আনাইস নিন-এর নবজন্ম হবে।
আপনারা জানেন, আনাইস যে-জীবনকে আলিঙ্গনের জন্য উদগ্রীব ছিল, যার জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে ছিল, আমাকে সে সেই জীবনের প্রতীক হিসাবে দেখতো। সে যখন ডায়রিতে তার ভবঘুরে জীবনের কথা লেখে, আমি বলতে পারি সে তাতে সত্যের অপলাপ করেছে। সে তার ব্যাংকার স্বামী দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। তিনি আনাইস-এর বেশ কিছু ভবঘুরে বন্ধুকেও সাহায্য করে থাকবেন নিশ্চয়ই। তার এই দ্বিমুখিতার বদৌলতে সে অনেকের ওপর এরকম উদারতা ও ভালোত্ব বর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল।
তার স্বামীর কাছ থেকে চুপেচুপে টাকা খসানোর হাজারটা কৌশল জানা ছিল। তার এসব ষড়যন্ত্রের কথা শুনে আমার ঘাড়ের লোম খাড়া হয়ে যেত। যেমন, সে তার দর্জিকে বলতো তার মাসিক বিলকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে দেখাতে যেনবা সে তার জন্য অনেক নতুন জামা বানানো কিংবা মেরামতের কাজ করেছে। আর তার স্বামী যখন দর্জিকে টাকা দিতেন সেখান থেকে বাড়তি টাকাটা সে আনাইস-কে দিয়ে দিতো। আমি স্বীকার করছি তার উপহার আমি কোনদিন ফিরিয়ে দিই নি কেননা আমার তার প্রয়োজন ছিল খুব বেশি, তবু সে যে তার স্বামীকে ঠকিয়ে আমার উপকার করছে সেটা আমি ঠিকই বুঝতে পারতাম। তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন, উদারহৃদয় মানুষ, কিন্তু কিছুকাল পরে আমি তাঁর জন্য দুঃখবোধ করতে শুরু করি।
একদিন আমি তাকে তার স্বামীর প্রতি অবিচার করার জন্য অভিযুক্ত করি। আমরা ঠিক তাঁর নাকের ডগায় বসে এই উত্তেজিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি তাকে বলি যে তাদের সম্পর্কটা লোক-দেখানো, সে তাঁকে ব্যবহার করছে; আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি কেন সে তাঁকে ছেড়ে যাচ্ছে না যদি সে তাঁর সঙ্গে সুখীই না হয়। সে সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি যদি তাঁকে ছেড়ে যাই তাহলে আমার সন্তানদের কী হবে? তুমি আশা করতে পারো না যে আমি তাদেরও পরিত্যাগ করি, হেনরি।”
তার সন্তান, যীশু! সে মনে হয় তার পরিবার, তার বন্ধুবান্ধবের দল এবং আমাকেও তার সন্তান বলে মনে করে! যেনবা আমরা তাকে ছাড়া বাঁচতে অক্ষম। যীশু! তার কথা শুনে মনে হলো সে বুঝি কোন ধরনের দাতব্য কাজ করছে। তার এই দাতা-হাতেমতাই ভাবখানিই আমার রক্ত গরম করে তুলতো।
তারপর একদিন সে বলে, “যদি তুমি আর একবার আমার স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক নিয়ে কোন কথা বলো তাহলে আমি সোজা এই দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবো এবং আর কোনদিন ফিরে আসবো না।” বলাইবাহুল্য সে খুব কঠিন শর্ত দিয়ে বসেছিল।
আমার একদিন মনে হলো এভাবে চুরি করে আসাযাওয়া আর একটা মিথ্যের জীবন যাপন করতে করতে আমি ক্লান্ত, এবং যেহেতু আনাইস-কে আমি সত্যি খুব ভালোবাসি, সেহেতু আমাকে তার বিয়ে করা উচিত। “কী?”, সে বলে, শশার মত শীতল স্বরে, “তাহলে আমরা কী নিয়ে বাঁচবো? তুমি কিসের জন্য এই অবস্থার বদল চাচ্ছো? এখন যেভাবে আছে, সব ঠিকই তো আছে।” সে যতটা নারীসুলভ ও কমনীয় হতে পারে ঠিক ততটাই নির্দয় এমনকি মাঝেমধ্যে দানবীয় হয়ে উঠতে পারে। অবশ্যই আমি তার সে কথায় আহত হয়েছিলাম। তার চেয়েও বেশি, আমি হতাশ ও বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম।
আমি বলবো যে আনাইস প্রধানত ভয় দ্বারা পরিচালিত হতো। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কষ্ট পেতে দেখা কিংবা তাদেরকে ছাড়া চলার ভয়, তার সম্পর্কে অন্যদের খারাপ ভাবার ভয়, আর ভালোবাসা না পাবার ভয়। সে সব সময় সঠিক কাজটি করতে চাইতো। সে একজন দৃষ্টান্তমূলক ভালো মানুষ হিসাবে পরিচিত হতে চাইতো। তবে এই ভালোত্বকে প্রদর্শনের জন্য তাকে তার কুশলী দৈত্যটিকে তার হয়ে কাজ করাতে হতো।
আমি ভালো-করিয়েদের প্রতি মুগ্ধ কিংবা তাদের ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী নই। অঘটনঘটনপটিয়সীদের সঙ্গেই সবসময় আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও সংরক্ত সম্পর্কগুলো তৈরী হয়েছে। আনাইস-ও একটু ঘুরপথে এই শ্রেণীতে স্থান পেতে পারে। মিথ্যে ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া জাতীয় আত্মত্যাগ সে প্রচুর করেছে অন্যদের ভালো করার জন্য। সে অবশ্যই আমার জন্য অনেক আত্মত্যাগ করেছে, তার প্রতি আমার যে ঋণ সেটা কোনদিনই শোধ হবার নয়। তবু তাকে একবার এবং শেষবারের মত আমাকে সত্য কথাটি বলতে দিন। যদিও সে নিজেকে প্রায় শহীদের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এবং যদিও শেষবিচারে সে একজন সত্যিকার অভিভাবক-দেবদূতীই ছিল, তবু, আনাইস নিন, আমার মনে অন্তত কখনোই সন্তচরিত্র অর্জন করে উঠতে পারে নি।
……………………………………………………………………………………………
ভালোবাসা বিষয়ে
আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভালোবাসা, কেননা এটাই আমার সৃজনশীলতার রসদ জুগিয়েছে সবচেয়ে বেশি। আমি অচরিতার্থ ভালোবাসা বিষয়ে গাদাগাদা লিখতে পারি। আমি এর নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করেছি আমার প্রথম প্রেমিকা কোরা সিওয়ার্ড-এর কাছ থেকে।
আমার কিশোর জীবনের সেইসব স্মৃতি স্মরণ করে আমি খুব বিষন্ন বোধ করি। আমি একটা বিড়ালছানার মত ছিলাম তখন, ভীরু ও বেদনাদায়কভাবে লাজুক। এতই লাজুক যে ফোন করে তার সঙ্গে কথা বলার সাহস পর্যন্ত ছিল না। প্রত্যেকদিন রাতের খাবারের পর আমি কীভাবে তার বাড়ি পর্যন্ত হেঁটে যেতাম সেকথা আমি অন্যত্র লিখেছি। জানালা দিয়ে তাকে এক নজর দেখতে পাবো সেই আশাতেই আমি হেঁটে হেঁটে তার বাড়ি অব্দি যেতাম। তার বাড়ি পর্যন্ত যেতে আমার এক ঘণ্টা লাগতো, ফিরে আসতে লাগতো আরো এক ঘণ্টা, আমি এই কাজটা টানা তিন বছর প্রত্যেকদিন করে গেছি। আমি কোনদিন তার বাড়ির দরজার কড়া পর্যন্ত নাড়ি নি, এমনই ইঁদুরের মত ভীরু ও বিব্রত ছিলাম আমি। আমি ভাবি এখনকার তরুণেরা সেই সময়ের আমার মত এতটা হাবাগোবা হয় কি না। আমার খুবই সন্দেহ হয়। কী সরলই ছিলাম আমি! আমি ভাবতাম সে বোধ হয় যোনীহীন একটি মেয়ে!
আমার ধারণা মৃত্যুশয্যায়ও বোধ হয় আমি কোরা সিওয়ার্ড-কে ভাববো না। আমার কাছে সে ছিল দেবীর মত, অগম্য ও স্পর্শের অতীত। এমনভাবে কাউকে ভালোবাসার অর্থ নিজেকেই প্রত্যাখ্যান করা। আমি এতটা কষ্ট পেয়েছিলাম কেননা আমি এমন কাউকে পছন্দ করেছিলাম যার আমাকে বোঝার ক্ষমতাই ছিল না।
কোরা-র সঙ্গে আমার সম্পর্কের ধরনের পুনরাবৃত্তি করতে গিয়ে আমার পরবর্তী ভালোবাসাগুলোতেও আমি বেদম মার খাই। পেছনে তাকিয়ে এখন মনে হয় আমার ভালোবাসার সম্পর্কগুলো বাস্তবে এক ধরণের মোহাচ্ছন্নতা ছাড়া আর কিছু ছিল না। তারা আমাকে আনন্দের চেয়ে কষ্টই দিয়েছে বেশি। কখনো কখনো আমি কষ্ট আর তীব্র আনন্দকে আলাদা করতে পারি না।
আমি অনেক মেয়েকে ভালোবেসেছি, কিন্তু ভালোবাসাকে গৌরবান্বিত করে আমি সেরকম কিছুই লিখি নি। আমি লিখেছি যৌনতা বিষয়ে! আমি দেখেছি যে আমি যৌনতা ছাড়াও চলতে পারি, যেমন জল ছাড়া চলতে পারে উট। আপনি যখন সম্পর্ককে তার সামগ্রিকতায় চিন্তা করবেন তখন যৌনতাকে বালতিতে এক ফোঁটা পানির সমতুল্য মনে হবে। জগতের শ্রেষ্ঠ ভালোবাসার সম্পর্কগুলো ছিল যৌনতারহিত। আমি দেখেছি নারীদের সঙ্গে আমার যেসব সম্পর্কের ক্ষেত্রে যৌনতার সংশ্রব ছিল না সেগুলো সেইসব সম্পর্কর মতই আনন্দময় ছিল যেখানে যৌনতা ছিল মুখ্য বিষয়। আমাকে লোকেরা যেরকম যৌনতাকাতর হিসাবে দেখে আমি মোটেও সেরকম নই।
আমি একজন রোমান্টিক মানুষ এবং আমি সেরকম রোমান্টিকদের প্রতিই আকৃষ্ট হই। ভালোবাসার ক্ষেত্রে আমি কোনদিনই বাস্তববাদী হতে পারি নি। আমি কখনোই হিসেবী ও বাস্তববাদী মানুষ ছিলাম না। আমি সত্যকে চাই না, আমি চাই মায়া, মোহ ও রহস্যকে। আর সেই জন্যই এত নারী আমার কাছ থেকে এত সুবিধা নিতে পেরেছে। আমি ভালোবাসার জন্য যে কোন কিছু এবং সমস্তকিছু বিসর্জন দিতে পারি- অর্থ, চাকরি, স্ত্রী, সন্তান সব। এবং সেটা সবসময়ই একজন অপ্রাপনীয় ও অধরা নারীর জন্য। সম্পর্কটা যত বেশি অসম্ভব হত আমি তার প্রতি তত বেশি আকৃষ্ট হতাম। সেই সম্পর্কের কাছে ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে কোনকিছুই আমাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারতো না। ভালোবাসার রাজ্যে আমি এক বদ্ধ উন্মাদ।
আমি বলবো না যে আমি একজন সস্তা রোমান্টিক। আমি সত্যি সত্যি বিশ্বাস করি যে ভালোবাসা নিজেই এক অত্যাশ্চর্য বিষয়। সে তার নিজের ভেতরে সমস্ত কিছুকে ধারণ করে। আপনি সেই পর্যায়ে পৌঁছুলে আপনার নিজস্ব এক ধমের্র জন্ম হয়, আপনি ধার্মিক হয়ে ওঠেন, তবে কোন বিশেষ ধর্মের অনুসারী না। তখনই আপনি সত্যিকার অর্থে একজন মুক্ত মানব হয়ে ওঠেন। আমি মনে করি তখন যৌনতার ক্ষেত্রে দুনিয়া যাকে পাপ বলে আপনি নিশ্চিন্তে তা করতে পারেন। আমি মনে করি যারা ভালোবাসায় মগ্ন তারা যা খুশি করতে পারে, তাকে আর পাপ বলে মনে হবে না। এমন অনেক মানুষ আছে যারা কোন অন্যায় না করেই পাপী, কেননা তাদের চিন্তার মধ্যেই পাপ রয়েছে। সত্যিকার রোমান্টিকেরা হন নিষ্পাপ, আমি সেরকমই একজন মানুষ। আমার কখনোই মনে হয় নি যে আমি পাপী লোক- স্বার্থপর হতে পারি কিন্তু পাপী কখনোই নই।
ভালোবাসায় সব কিছুর শুরু ও শেষ এবং তা সর্বরোগহর। ভালোবাসাই পৃথিবীকে সচল ও ঘূর্ণ্যমান রেখেছে, তা সে যত উদভ্রান্ত ও উৎকেন্দ্রিক হোক তা কেন। ভালোবাসাই সব, এর বাইরে আর কিছুই নেই, এটুকু ছাড়া আমি আর কীইবা বলতে পারি!