চিন্তাঝড় ২ : পিলখানা হত্যাযজ্ঞ — কারা, কেন, কীভাবে?

ঘটনার প্রথম প্রহরেই আমরা দ্রুত কিছু বিষয়ে অগ্রিম ইঙ্গিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম (এখানে)। এবার এ বিষয়গুলো নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য এবং কিছু আনুমানিক বিশ্লেষণকে ভিত্তি করে দ্রুত লিখছি [...]

[পোস্টের শিরোনাম ঈষৎ বদলে নেয়া হল]
ঘটনার প্রথম প্রহরেই আমরা দ্রুত কিছু বিষয়ে অগ্রিম ইঙ্গিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম (এখানে)। এবার এ বিষয়গুলো নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য এবং কিছু আনুমানিক বিশ্লেষণকে ভিত্তি করে দ্রুত লিখছি:

১. সাম্প্রতিক সময়ে এমন কী ঘটেছে যা এ ধরণের সশস্ত্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে?

সাম্প্রতিক সময়ের দুটো ঘটনায় এর কিছু উত্তর মিলতে পারে।

(ক) উপমহাদেশে আন্তঃদেশীয় জঙ্গিবাদের উত্থান ইস্যুকে সামনে রেখে সার্ক টাস্ক ফোর্সের উদ্যোগ এবং তাতে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার এবং সক্রিয় উদ্যোগ। এ নিয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের মধ্যে কিছু আলাপ-আলোচনার খবর ইতোমধ্যেই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বদল করার মাধ্যমে উদ্যোগটিকে অচল করা এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের কারণ হতে পারে।

(খ) আওয়ামী লীগ সরকার জাতির বহুদিনকার দাবি ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে এসেছে। এটি ছিল তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। কেবল প্রতিশ্রুতিতেই তা থেমে থাকেনি। ইতোমধ্যে সংসদে এ সংক্রান্ত পদক্ষেপকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব পাশ হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও তা নিয়ে জোরালো আলোচনা শুরু হয়েছে সরকারের উদ্যোগে। সুতরাং এটা এখন স্পষ্ট যে, সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই সব উদ্যোগে দেশের ভেতরের একটি শ্রেণীর শঙ্কিত বোধ করার কথা। তাদের পক্ষে পুরো উদ্যোগকে বিপথগামী বা (চরম জাতীয় সংকট তৈরির মাধ্যমে) নস্যাৎ করার পরিকল্পনা করা অসম্ভব নয়। যুদ্ধাপরাধী শুধু দেশের ভেতরেই নেই, দেশের বাইরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন কর্মকর্তার মধ্যেও রয়েছে। সুতরাং এ ঘটনায় বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি মদদ থাকাও বিচিত্র নয়।

২. কী অর্জন করতে চেয়েছিল সশস্ত্র আক্রমণকারীরা?

এতে এখন আর কোন সন্দেহ নেই যে, এমন মাপের হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সরকারকে পুরোপুরি অস্থিতিশীল করে দেয়া এবং দেশের মধ্যে চরম রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করা। এর ব্যাপ্তির সাথে কেবল ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর বুদ্ধিজীবী হত্যা কিংবা ১৯৭৫-এর ঘটনাবলিরই তুলনা করা যায়। কিন্তু কেন? প্রথম দৃষ্টিতে মনে হয়েছে দাবি আদায়, কিন্তু এখন আমরা নিঃসন্দেহ যে সেটি ছিল cover বা front, যা নীড়সন্ধানীর মন্তব্যেও উঠে এসেছে। এর উত্তর খুঁজতে হবে হত্যাকাণ্ড এবং অরাজকতার সংখ্যার মধ্যে নয়। খুঁজতে হবে হত্যাকাণ্ডের ও অরাজকতার ধরণ এবং ঘটনাপ্রবাহের চরিত্রের মধ্যে।

৩. হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ এবং অরাজকতার বিশেষ ধরণ

কয়েক ধরণের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ঘটনার সময়ে। নিরস্ত্র অফিসারদের ঢালাওভাবে হত্যা, পরিবারের বেসামরিক অনেক সদস্যকে নির্যাতন ও ধর্ষণ, লুটপাট, মৃতদেহের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন ও বিকৃতকরণ। এগুলোর মধ্যে দুটো ধারা রয়েছে। একটি হলো পূর্বপরিকল্পিত, আরেকটি হঠাৎ সুযোগের বশে সংঘটিত। প্রথমটির ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করেছি হত্যাকারীরা যেন অত্যন্ত পরিকল্পতিভাবে পৈশাচিক নৃশংসতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছে। মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে অল্প অল্প করে নালায় ভাসানো, বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃতদেহ থেকে চোখ ও অন্যান্য অঙ্গ উপড়ে ফেলা, পরিবারের নারী ও শিশুদের আগুনে পুড়িয়ে মারা, ধর্ষণের সাথে সাথে (এমনকী গর্ভবতী নারীরও) হাত-পা ভেঙে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়া ইত্যাদি। এর সাথে পুঞ্জীভুত বিদ্বেষ বা স্যাডিজম-এর কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। যতদূর বুঝি, এর সাথে psychological warfare-এর মিল রয়েছে, যেখানে হত্যা বা নির্যাতনটাই প্রধান উদ্দেশ্য নয়। এখানে প্রধান উদ্দেশ্যই হলো নৃশংসতার মাধ্যমে মানুষের (এ ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর এবং তাদের সহকর্মী, পরিবার, বন্ধুদের) মানবতাবোধ এবং আবেগকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়া এবং নিয়ন্ত্রণের অতীত উস্কানি সৃষ্টি করা। এ ধরণের মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কৌশলের সাথে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ধরণের মিল রয়েছে।

৪. কারা দায়ী?

ঘটনার ব্যাপ্তি ও বিস্তৃতি দেখে মনে হয় এতে অনেক ধরণের শক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ও অংশগ্রহণ রয়েছে। অনুমাননির্ভর একটি সম্ভাব্য তালিকা হতে পারে এরকম :

(ক) বিডিআর এর জওয়ানদের ভেতরকার দুটি দল। প্রথম দলটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বহুদিন ধরে বিডিআর-এর ভেতর পর্যায়ক্রমে গড়ে তোলা হয়েছে এর রিক্রুটমেন্ট ব্যবস্থাকে manipulate করার মাধ্যমে। এতে থাকার সম্ভাবনা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পুরোনো ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের। দ্বিতীয় দলটি বিডিআর-এর সাধারণ জওয়ান যাঁরা বিভিন্ন বঞ্চনা এবং বৈষম্যের কারণে ক্ষুব্ধ। এ ক্ষেত্রে প্রথম দলটি দ্বিতীয় দলটির বঞ্চনাপ্রসূত আবেগকে আরো উসকে দিয়ে একে ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য।

(খ) ঠাণ্ডা মাথায় উপরের ৩-এর আওতায় লিপিবদ্ধ করা অপরাধগুলো দল ‘ক’-এর পক্ষে বাস্তবায়ন করা একটু কঠিন। এর জন্য দরকার এ ধরণের নৃশংসতার দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আরেকটি দল। যতদূর অনুমান, এই দলটি সম্ভবত বহিরাগত এবং উন্নত সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ইতিপূর্বে এই ধরণের ক্র্যাক অ্যাসল্ট গ্রুপ ব্যবহৃত হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম) এবং রাজনৈতিক শো ডাউনের সময় (যেমন: চট্টগ্রামে গোলাম আযমের প্রথম জনসভায়)। এটি জামাতের ‘সিরাজুস সালেহীন’ ধরণের একটি দল, যার সদস্যরা সাধারণত প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্থান বা পাকিস্তান থেকে। বিভিন্ন খবরে এখন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে — ঘটনার আগের দিনই দফায় দফায় মিছিলের সাথে মিশে গিয়ে এমন একটি দলই সম্ভবত ‘ছাই রংয়ের পিকআপ’-এ করে বাক্সভর্তি অস্ত্র নিয়ে পিলখানা সদর দফতরে ঢুকে পড়েছিল। পিলখানায় এই দলটির host হলো উপরের দল ‘ক’। খুবই সম্ভাবনা রয়েছে যে, হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অব্যবহিত পরই এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আক্রমণ-দলটি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে, দল ‘ক’-এর হাতে সমঝোতা আলোচনা চালিয়ে যাবার দায়িত্ব দিয়ে। নীড় সন্ধানীর বিশ্লেষণেও সে ইঙ্গিত রয়েছে।

(গ) এত বড়ো মাপের মিশনের পেছনে সামরিক বাহিনীর ভেতর থেকেও উচ্চপদস্থ কারো সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আবেগের বশে উড়িয়ে দেয়া উচিত হবে না। কারণ, পুরো ঘটনায় গোয়েন্দা বিফলতার বিষয়টি এখনো খুব অস্পষ্ট। এমন মাপের একটি ঘটনা দানা বেঁধে উঠবে আর সামরিক গোয়েন্দারা তার কোনো অগ্রিম আভাস পাবেন না, এমনটা মেনে নেয়া যায় না। এ বিষয়ে সরকারের তদন্তে আশা করছি কিছু উত্তর মিলবে। তাছাড়া, পুরো এলাকা যখন সেনাবাহিনী ঘিরে ফেললো ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই, কিছু কিছু অংশ সম্ভবত তখনো ঘেরাওয়ের বাইরে ছিল। তা নাহলে মূল অপরাধীদের বেশির ভাগই পালিয়ে গেল কীভাবে? এ ধরণের বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর এখনো কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। সামরিক ঘেরাও-এর টেকনিক্যাল দিকগুলো তদারকির দায়িত্ব তো রাজনৈতিক সরকারের নয়। তাদের প্রায় কারোরই সে ধরণের সামরিক জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা নেই! রাজনৈতিক সরকার তো সামরিক ঘেরাওকে অনুমোদন দিয়েই রেখেছিল, কিন্তু সেটা এমন দায়সারা/ত্রুটিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হলো কেন ও কীভাবে? বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার।

(ঘ) সরকারী এবং বিরোধী দলে সেনাবাহিনীর প্রতি ক্ষোভ লালন করা এক শ্রেণীর রাজনীতিকের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ মদদ থাকতে পারে এর পেছনে।

৫. তদন্তের কিছু সূত্র

(ক) এর উত্তর উপরের ২ নম্বরে কিছুটা পাওয়া যেতে পারে। শুধু অরাজকতা সৃষ্টি বা সরকার পতনের লক্ষ্যেই এ হত্যাকাণ্ড, এমন নয়। এই পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ থাকার কথা, যার আওতায় বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে অন্য কোনো শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। সেই শক্তিটি সামরিক হতে পারে, সামরিক সমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক শক্তি হতে পারে, কিংবা শুধু রাজনৈতিক মতাদর্শিক কোনো শক্তিও হতে পারে। এ ধরণের হত্যাকাণ্ডের হোতাদের বিচারমুক্তি (indemnity) দানের ক্ষমতা রাখেন বা তা দানের ক্ষমতা পাবেন, তেমনই কেউ হয়তো আশ্বাস দিয়ে থাকবেন। এমন কেউ (ব্যক্তি বা গোষ্ঠী) ছিলেন যিনি/যাঁরা পর্দার অন্তরালে অপেক্ষা করছিলেন। খুঁজে বের করতে হবে who was that person waiting in the wings. এ বিষয়ে সাদাকালো-ও লিখেছেন।

(খ) বিগত কয়েক বছরে সেনাবাহিনী, বিডিআর, আনসার এবং পুলিশ বাহিনীতে বহুবার জামাত-শিবিরের চিহ্নিত ক্যাডারদের সুপরিকল্পিতভাবে নিয়োগ দানের অনেক খবরই আমরা পেয়েছি। এখন পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বের করতে হবে গত সাত বছরে নিয়োগকৃতদের পূর্ণ তালিকা এবং তা থেকে চিহ্নিত রাজনৈতিক ক্যাডারদের নাম। গত কয়েক বছরে তাদের প্রত্যেকের গতিবিধি তলিয়ে দেখতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফাইলে এই সব তথ্যই থাকার কথা। আরও খুঁজে বের করতে সেসব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের নাম এবং তাঁরা ঠিক কী ভূমিকা পালন করেছেন এসব নিয়োগে। এঁদের প্রত্যেককেই (যেমন: প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর) পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় এসেছে।

(গ) খবরে প্রকাশ, ২৫ ফেব্রুয়ারি ঘটনার দিন এবং তার আগের দিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এবং পিলখানায় লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণকৃত লিফলেটগুলো কোথায় ছাপা হয়েছে এবং কারা তা ছাপাতে দিয়েছে, সেটা খুব সহজেই বোধহয় বের করা সম্ভব।

(ঘ) খবরে জানা যায়, ঘটনার দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে একটি মিছিল সংগঠিত করার চেষ্টা করে কিছু সন্দেহভাজন কর্মী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা তাদের উদ্দেশ্য বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে এবং তাদের কেউ কেউ কর্তৃপক্ষের কাছে তখনই বিষয়টি অবগত করে। পরে এরকমই একটি মিছিল পিলখানা এলাকায় স্লোগান দিয়ে ঘুরতে থাকে। বিদ্রোহী সেনারা মিছিলটিকে হায়দার হুসেনের ‘বিখ্যাত’ বিডিআর সঙ্গীতটিও বাজিয়ে শোনায় সে সময়! এই মিছিলটির হোতা কারা সেটা খুঁজে বের করতে হবে। সেদিনকার টিভি ফুটেজে মিছিলের অনেকের ছবিই থাকার কথা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জানা যাওয়ার কথা এই মিছিলটি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল নাকি সুপরিকল্পিত মদদ পুষ্ট ছিল।

(ঙ) ২৫ তারিখের ঠিক আগে এবং পরে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে কোন অস্বাভাবিক লেন দেন হয়েছে কিনা তদন্ত করে দেখতে হবে। এটি হতে পারে কোন এক সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠির পক্ষ থেকে হঠাত করে অস্বাভাবিক পরিমাণের শেয়ারের ক্রয় বা বিক্রয়। এতে ইঙ্গিত মিলবে বিডিআর ঘটনাটি যে ঘটবে তা কারা আগে থেকেই জানতেন এবং তা থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হবার পরিকল্পনা করেছিলেন। এখানে প্রাসঙ্গিক হতে পারে ৯/১১ এর পূর্বাপর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টক এক্সচেঞ্জের অস্বাভাবিক কর্মতৎপরতা তদন্তের বিষয়টি যা থেকে অনেক সূত্রই বেরিয়ে এসেছিল।

(চ) ঘটনার জন্য দায়ী মূল ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবেই এখন দুশ্চিন্তার প্রহর গুনছেন। কারণ, তাদের পরিকল্পনা মত ঘটনা এগোয়নি, অন্তত এখনো তাই মনে হচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করার আরেকটি আপাত সহজ উপায় আছে। তারা হয়তো এখন জোর চেষ্টা করবেন এ ঘটনার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট তৃতীয় শক্তির দিকে জাতির নজর ফেরানোর (ঠিক যেমনটি করা হয়েছিল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর) অবান্তর গুজব ছড়িয়ে। অথবা, আরেকটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর/সংকটের দিকে সবার মনযোগ তড়িঘড়ি করে সরানোর চেষ্টা করবেন, এমনকি কৃত্রিমভাবে তা তৈরী করে হলেও। এ থেকেও এদের অনেককেই চিনে নেয়া সম্ভব হবে বলে আমার ধারণা।

(ছ) গত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ এর এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে দশ ট্রাক (মতান্তরে ট্রলার) অত্যাধুনিক অস্ত্রের একটি চালান ধরা পড়ে (এখানে এবং এখানে দেখুন)। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বরাতে – এর মধ্যে ছিল প্রায় ১০,০০০ হাতিয়ার যার মধ্যে ছিল একে-৪৭ রাইফেল, প্রায় ৫০০০ গ্রেনেড এবং আনুমানিক ৩০০,০০০ রাউন্ড এ্যামুনিশন। এ যাবতকালের আটককৃত সর্ববৃহৎ অস্ত্রের চালান সম্ভবত এটাই। ঘটনার জন্য পরবর্তীতে কেবলমাত্র গুটিকয় ট্রলার মাঝি, কুলি এবং ট্রাক ড্রাইভারকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে ঘটনার জন্য মূল সন্দেহভাজন জোট সরকারের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের তদন্ত হয়নি। অন্তত আমার জানা নেই। কিংবা হলেও সেই তদন্তকে ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল। মনে পড়ে কথিত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামটা তখন উঠে এসেছিল, যাঁর নিজস্ব শিপিং ব্যবসার সাথে এই অস্ত্র চালানের কিছু লিন্কও খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তখন। সাধারণ জ্ঞান থেকে যতদূর বুঝি, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল করতে, কিংবা এলাকায় চাঁদাবাজীর জন্য এধরণের অস্ত্রের চালান দরকার হয়না। এর পেছনে আরও সুগভীর কোন পরিকল্পনা থাকারই বরং সম্ভাবনা বেশী। এই তদন্তটি আবার শুরু করতে হবে এবং এর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ (জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ এর ছেলে) মাত্র কিছুদিন আগে এই চালানটির তদন্ত বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘ব্যাপারটা আমি শিঘ্রই তদন্ত শুরু করবো, তা করতে যদি দরকার হয় আকাশে যাবো, না হয় পাতালে যাবো’। প্রশ্ন হল, পূনঃ তদন্তের কথা তুলে সোহেল তাজ কি নিজের অজান্তেই অস্ত্র চালানকারী গোষ্ঠীটিকে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের শংকায় ফেলে দিলেন?

সবশেষে, একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। গত কয়েক দিন সেনা বাহিনীর এই অভূতপূর্ব সংযমের ব্যপারটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। চরম ব্যক্তিগত সংকটের মুখেও তাদের পেশাদারী দায়িত্ববোধ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এই দেশে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হলে তাদের সহপাঠিরা পুরো এলাকা ঘিরে আন্দোলন করে, ভাঙচুর করে, যুদ্ধাবস্থা তৈরী করে। অথচ, নিজেদের ভাই, বন্ধু, স্ত্রীদের হত্যা এবং নির্যাতনের সম্ভাবনা দেখেও সেনাবাহিনী যেভাবে রাজনৈতিক সরকারের নির্দেশ এক চুলও অমান্য না করে দায়িত্বে অনড় ছিলেন, তা যতই ভেবেছি ততই অবাক হয়েছি। এটি আস্বস্তকারী এবং প্রশংসার দাবীদার, সন্দেহ নেই। তবে এখন আরেকটি বিষয় মনে হচ্ছে আমার। ঘটনার শুরুর প্রহরগুলোতেই সম্ভবত সশস্ত্র বাহিনীর উঁচু পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ আঁচ পেয়ে গিয়েছিলেন আসল ষড়যন্ত্রকারী কারা এবং তাদের উদ্দেশ্য কী। সেটা বুঝতে পেরেই হয়তো তারা সচেতনভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে তাদের ক্রীড়নক হতে চাননি। এর অর্থ, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এমন কিছু ততক্ষণে জেনে গিয়েছিলেন, যা বাকীরা জানতেন না। এর অর্থ, ঘটনার তদন্ত এবং দায়ীদের খুঁজে বের করে ষড়যন্ত্রের মূল খুঁজে বের করায় সশস্ত্র বাহিনী এবং আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন হয়তো অনেকটাই এগিয়ে আছে। এর ফলে ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা এবং desperation খুব স্পষ্ট। সামরিক বাহিনীকে পিলখানায় আশানুরূপভাবে আক্রমণ করে বসতে না দেখে পর দিন অনেকটা ডেসপারেটভাবে ষড়যন্ত্রকারীরা (কোন নতুন উস্কানী ছাড়াই) সারা দেশের অন্যান্য ক্যাম্পগুলোতে যেভাবে বিদ্রোহ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল, এতে তাই প্রতীয়মান হয়।

রায়হান রশিদ

জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।

১৯ comments

  1. অলকেশ - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৯:৪২ অপরাহ্ণ)

    তথ্যের অবাধ প্রবাহের যুগে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র এখন আর প্রাসাদের চার দেয়ালে আটকে রাখা মুশকিল বৈকি! রায়হান রশিদের পোষ্ট পড়ে মনে হচ্ছে, সেনাবাহিনী, বিডিআর এবং তাদের ইন্টেলিজেন্স, নিজেদের দিক থেকেই এই ঘটনার তদন্ত আভ্যন্তরীন ভাবে শুরু করতে পারে। খুঁজে দেখা দরকার, এরূপ কোন রাঘব বোয়াল অফিসার আছে কিনা, যারা এই রকম একটি গুরুত্বপূর্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্টানকে নিয়ে এক ভয়ংকর খেলায় মেতেছে।

    বিডিআরএ গত ৭ বছরের রিক্রুটমেণ্টের বিষয়টা খতিয়ে দেখার প্রস্তাবটা জরুরী মনে হয়েছে। সেনাবাহিনী যদি এই অপশক্তির সন্ধান জানে, তাহলে দেশের মানুষের সাথে তাদের ভাবনা (কৌশলগত নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যু ছাড়া) সরকারের মাধ্যমে শেয়ার করা উচিত।

    আমি বিশ্বাস করি, এই ঘটনায় দেশবাসী মনে করেছে, তারা তাদের সন্তান হারিয়েছে, ঠিক যেমনটি মনে করছেন, তাদের পরিবারবর্গ। দেশবাসীর সহানুভূতি যেমন এখানে আছে, ঠিক তেমনি আছে এই ভয়ংকর শক্তিকে মোকাবেলা করার সম্মিলিত প্রতিজ্ঞা ও সাহস।

    এই জনগণকে যত বেশি ইনফর্মড রাখা যাবে, দেশের নিরাপত্তার চাদর তত বেশী নিশ্শ্ছিদ্র হবে। জনতার সহযোগীতা ছাড়া এদেশে বড় কিছু কোন দিনই হয়নি, কোনদিন হবেও না।

  2. নীড় সন্ধানী - ১ মার্চ ২০০৯ (২:৩৫ পূর্বাহ্ণ)

    বিশ্লেষণ চমৎকার হয়েছে। সেনাবাহিনীর ভেতর থেকে উচ্চপদস্থ কেউ জড়িত না থাকলে এরকম সফল অপারেশান হতে পারে না। জামাতের একটা বড় সমর্থক গ্রুপ আছে সেনাবাহিনীর ভেতর যারা বিএনপির নিরাপদ চাদরে লুকিয়ে থাকে। আমি তাদের সন্দেহ করি। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এরকম ইন্টেলিজেন্স ফেইলিওর হতে পারে না। এরাই গোয়েন্দা তথ্য সরকারের যথাযথ মহলে পৌছাতে দেয়নি।

    জামাতকে সন্দেহ করছি এই কারণে যে, কোনো একটা ব্লগে পড়েছি, এক ব্লগারের সেনা অফিসার বন্ধু ঘটনার ঠিক আগে পিলখানা থেকে বেরিয়ে যায়, কারণ সে জানতো এরকম কিছু ঘটবে। সেই অফিসার শিবির করতো ছাত্র জীবনে এবং নিজামীর সাথে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল সাম্প্রতিক কালেও। সারা বাংলাদেশে কেউ জানলো না অথচ সে জানলো কীভাবে?

  3. মাসুদ করিম - ১ মার্চ ২০০৯ (৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ)

    আরো কিছু বিষয় বিবেচনায় আনা উচিত:
    ১. খালেদা জিয়া গত বছর বন্দী অবস্থার এক পর্যায়ে বলেছিলেন সিপাহি-জনতা তাকে উদ্ধার করবে। প্রলাপ ছিল, না কোনো ভিত্তি ছিল, জানা দরকার।
    ২. সামরিক মদতপুষ্ট ২০০৭-২০০৮-এর সরকারে প্রথমে যোগাযোগ উপদেষ্টা পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল মতিন, তার মত বিতর্কিত সেনা অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা উচিত।
    ৩. সামরিক মদতপুষ্ট ২০০৭-২০০৮-এর সরকারের দ্বারা ক্ষমতাচ্যূত বিডিআর ও এনএসআই এর মহাপরিচালককেও আনা উচিত জিজ্ঞাসাবাদের আওতায়।
    ৪. আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাফরউল্লাহ এখন কোথায় এবং আওয়ামী লীগে তার বর্তমান অবস্থান এবং কর্মকাণ্ড কী, জানা উচিত।
    ৫. কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কোনো ভাষ্যকেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। জামায়াত ও সাকাচৌধুরীকে নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ভাষ্যকে যাচাই করা হোক।
    ৬. কী কী অস্ত্র এই হানাদারেরা ব্যবহার করেছে, সব অস্ত্র কী পিলখানার দুটো অস্ত্রাগারের না বাইরে থেকেও অস্ত্র এসেছিল। এবং অস্ত্রের সঙ্গে আর কী ও কারা এসেছিল।
    ৭. পুরো আক্রমণটাকে ঘিরে আমার মনে বারবার একটা বাংলা প্রবাদ হানা দিচ্ছিল, একেই কি বলে, বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা। আর আমাদের সবগুলো নিরাপত্তা বাহিনীই এই ঘোগের আওতায় কি না তা নিয়ে কাজ করা সবচেয়ে জরুরি, একাজ করতে না পারলে সরকার চালানো মুখ থুবড়ে পড়বে।
    ৮. আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসা এ আক্রমণ কি COUP না জঙ্গিহানা? আক্রমণের চরিত্রবিচার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীন থাকলে কোনো অনুসন্ধানই ফলপ্রদ হবে না।

  4. আহমেদ মুনির - ১ মার্চ ২০০৯ (১২:৪১ অপরাহ্ণ)

    যা কিছু ঘটে গেলো সেটা ভুলতে সময় লাগবে আমাদের । একটা ট্রমা আচ্ছন্ন করে আছে জাতিকে । যে কারণেই ঘটুক এমন ঘটনা তা যে এই দেশটার শেকড় ধরে টান দিয়েছে তাতে সন্দেহ কী । কারণ তো খুজবই কিন্তু পাশাপাশি দেখতে হবে কেউ যাতে এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে । বিডিআর কিন্বা সেনাবাহিনী নয় ষড়যন্ত্রকারীরা দেশটাকেই শেষ করতে চেয়েছিল ।

  5. রায়হান রশিদ - ১ মার্চ ২০০৯ (৭:৪১ অপরাহ্ণ)

    ততক্ষণে পিলখানা ট্র্যাজেডী সম্পন্ন হয়ে গেছে। বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষ্যে পূর্বে (সম্ভবত অল্প ক’দিন আগে) ধারণকৃত বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয় চ্যানেল আইতে। আমি দেখেছি ২৬ ফেব্রুয়ারী তারিখ রাত আনুমানিক তিনটায় (3:00am), যুক্তরাজ্য সময়। ঠিক বলতে পারছিনা বাংলাদেশ সময়ে ঠিক কখন প্রথম প্রচারিত হয়েছিল অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানের নাম “চ্যানেল আই এক্সক্লুসিভ”, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ রানা মুস্তফী। অদ্ভুত ছিল এই সাক্ষাৎকারটি দেখার অনুভুতি। কারণ, ততক্ষণে এটা মোটামুটি নিশ্চিত জানা যাচ্ছিল যে সাক্ষাৎকারদাতা আর বেঁচে নেই।

    মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ যে সব কথা বলেছেন সাক্ষাৎকারটিতে [স্মৃতি থেকে লিখছি]:

    ১) “বর্তমানে বিডিআর জওয়ানরা যে ধরণের বেতন ভাতা পায়, তাতে পরিবার পরিজন নিয়ে ডিগনিফাইড (এই শব্দটিই তিনি ব্যবহার করেছেন) ভাবে থাকা সম্ভব না”।

    ২) সীমান্ত প্রহরায় বিডিআর এর রয়েছে ৪৬ ব্যাটালিয়ন, বিএসএফের ৮০ ব্যাটালিয়ন।

    ৩) ভারত প্রান্তে সীমান্ত ঘেঁষে ভারতের রয়েছে উন্নত সড়ক ব্যবস্থা। যার ফলে বিএসএফের কর্মক্ষমতা আমাদের প্রায় তিন গুণ। প্রথমত, সংখ্যার দিক থেকে ওদের জনবল বেশী। আবার অনেক বড় এলাকা বিএসএফ দ্রুত এবং বারবার টহল দিতে পারে উন্নত সড়ক ব্যবস্থার কল্যাণে। সম্ভব হলে বাংলাদেশেও সীমান্তঘেঁষা এধরণের সড়ক স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে (LGRD) ধীরে ধীরে উদ্যোগ নিয়ে তৈরী করে নিতে হবে।

    ৪) আমাদের নাইট ভিশন ইকুইপমেন্ট পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। এগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আমরা তা ধীরে ধীরে কেনা শুরু করেছি। বেতার যোগাযোগের নিরাপত্তা এনক্রিপশন ক্যাপিবিলিটিতে এ মুহুর্তে বিডিআর অবশ্য বাকী বাহিনীগুলো থেকে এগিয়ে আছে।

    ৫) চট করেই বিডিআর এর জওয়ান ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা তো বাড়ানো যাবেনা, প্রয়োজন থাকলেও। ওটা ধীরে ধীরে করতে হবে।

    ৬) বাংলাদেশের প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার (নাকি মাইল?) সীমানা সম্পূর্ণ অরক্ষিত, যেটি পড়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। সেখানে বিডিআর এর কোন ব্যাটালিয়ন নেই।



    [ভিডিওটি পরবর্তীতে সংযোজিত – ব্লগ প্রশাসক]

  6. শিক্ষানবিস - ১ মার্চ ২০০৯ (৮:৪৩ অপরাহ্ণ)

    চমৎকার বিশ্লেষণ।
    পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে বিশাল কোন ষড়যন্ত্র এবং কূটকৌশল আছে সে বিষয়ে বাঙালিদের বোধহয় আর সন্দেহ নেই। আমরা তাই খুব আগ্রহভরে তদন্ত কার্যক্রমের লক্ষ্য করছি। আপনার এই লেখা আমাদের সেই পর্যবেক্ষণকে আরও শানিত করবে। নতুন তদন্ত কমিটি হচ্ছে শুনলাম। আশাকরি দ্রুত আমরা কিছু জানতে পারব, সব অপরাধী পালিয়ে যাওয়ার আগেই, ষড়যন্ত্রের নীলনকশার ছাপ মুছে ফেলার আগেই।

  7. সাদাকালোরংগিন - ১ মার্চ ২০০৯ (১১:৪৪ অপরাহ্ণ)

    চমৎকার আপনার বিশ্লেষন। এমন আর্টিকেলকে সাধারন মানুষের সামনে আনা দরকার।

  8. হাসান - ২ মার্চ ২০০৯ (১:০৯ অপরাহ্ণ)

    যত দোষ নন্দ ঘোষ!!!!
    এ’দেশে যতকিছু ঘটে তার সবই করে জামাত আর সাকা চৌ: তাই না? আর বাকি সব সাধু। এতই যদি সাধু হবে তাহলে জামাতের বিচার করে না কেন? ৯৬-২০০১ এর আওয়ামী লীগ সরকারওতো এদের বিচার করল না। না কি ভয় পায়? ভয় পেলে সময়মত দাদাদের দেশে পালিয়ে বাঁতে বলুন, না হলে কিন্তু রক্ষা নাই!!!!!

  9. অলকেশ - ৩ মার্চ ২০০৯ (১:২৪ পূর্বাহ্ণ)

    @ ব্লগ প্রশাসক :
    এই ব্লগে জামাত-সাকা প্রেমিকদের স্বাধীনভাবে মন্তব্য করতে দেয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত নয়। এতটা গণতন্ত্রী হতে পারিনি এখনো। মাপ করবেন।

    @ হাসান :
    এখানে সময় নষ্ট করা কেন?

    • আশরাফ আহমেদ - ৩ মার্চ ২০০৯ (৯:০৩ অপরাহ্ণ)

      সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সম্পর্কে ওয়েব লিংক :
      http://bidrohy.com/saka.html

      দুটি প্রশ্ন :

      ১. সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সেনা কর্মকর্তা হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। খালেদা জিয়া অভিযুক্তকে পাশে নিয়ে সংসদে বসে তদন্ত দাবি করলে সেই তদন্ত কি নিরপেক্ষ হবে?

      ২. এই অবস্থায় কেউ যদি সালাউদ্দিনের সাথে খালেদা জিয়ারও সংশ্লিষ্টতা আছে সন্দেহ করে, সেই সন্দেহ কি অমূলক হবে?

  10. রায়হান রশিদ - ৩ মার্চ ২০০৯ (১:২৪ অপরাহ্ণ)

    এই পোস্টটি অন্য একটি ব্লগেও প্রকাশিত। সেখানকার আলোচনাগুলো এখানে
    http://www.cadetcollegeblog.com/shan/4895#comments

  11. সালমান - ৪ মার্চ ২০০৯ (৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ)

    চমৎকার বিশ্লেষণমূলক এই পোস্টের “(ছ)” অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে :

    গত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ এর এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে দশ ট্রাক (মতান্তরে ট্রলার) অত্যাধুনিক অস্ত্রের একটি চালান ধরা পড়ে (এখানে এবং এখানে দেখুন)। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বরাতে – এর মধ্যে ছিল প্রায় ১০,০০০ হাতিয়ার যার মধ্যে ছিল একে-৪৭ রাইফেল, প্রায় ৫০০০ গ্রেনেড এবং আনুমানিক ৩০০,০০০ রাউন্ড এ্যামুনিশন। এ যাবতকালের আটককৃত সর্ববৃহৎ অস্ত্রের চালান সম্ভবত এটাই। ঘটনার জন্য পরবর্তীতে কেবলমাত্র গুটিকয় ট্রলার মাঝি, কুলি এবং ট্রাক ড্রাইভারকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে ঘটনার জন্য মূল সন্দেহভাজন জোট সরকারের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের তদন্ত হয়নি। অন্তত আমার জানা নেই। কিংবা হলেও সেই তদন্তকে ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল। মনে পড়ে কথিত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামটা তখন উঠে এসেছিল, যাঁর নিজস্ব শিপিং ব্যবসার সাথে এই অস্ত্র চালানের কিছু লিন্কও খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তখন।

    প্রথম আলো আজকের শীর্ষসংবাদে জানিয়েছে :
    “দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা প্রশাসনের সহায়তায় অস্ত্র খালাস হয়েছিল
    আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে প্রধান আসামি হাফিজের দাবি”

    বিস্তারিত দেখুন এখানে

    “(খ)” অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে :

    বিগত কয়েক বছরে সেনাবাহিনী, বিডিআর, আনসার এবং পুলিশ বাহিনীতে বহুবার জামাত-শিবিরের চিহ্নিত ক্যাডারদের সুপরিকল্পিতভাবে নিয়োগ দানের অনেক খবরই আমরা পেয়েছি। এখন পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বের করতে হবে গত সাত বছরে নিয়োগকৃতদের পূর্ণ তালিকা এবং তা থেকে চিহ্নিত রাজনৈতিক ক্যাডারদের নাম।

    আজকের দৈনিক জনকণ্ঠ-র সংবাদ শিরোনাম :
    “পিলখানা হত্যাকাণ্ডে মৌলবাদী সম্পৃক্ততা পরিষ্কার হচ্ছে”
    এ-খবরে বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানদের কথিত নেতা বিডিআরের উপ সহকারী পরিচালক তৌহিদুল আলম (গ্রেপ্তারকৃত) সম্পর্কে বলা হয়েছে :

    তৌহিদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি থানার রায়পুরা গ্রামে। বিএম কলেজে অধ্যয়নকালে এই তৌহিদ ইসলামী ছাত্র সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিল বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে।

    আরো বলা হয়েছে :

    চারদলীয় জোটের শাসনামলে মাদ্রাসা ছাত্রদের ব্যাপক হারে বিডিআরে নিয়োগ দেয়ার তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।

    বিস্তারিত দেখুন এখানে

    এদিকে ইনকিলাব-এর অশিক্ষিত স্টাফ রিপোর্টার হাস্যকর ভাষায় লিখেছে :

    বিদ্রোহ ও সহিংস ঘটনায় গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামী ডিএডি তৌহিদসহ তার সহযোগীদের গতকাল সরাসরি দেখে অনেকে আঁতকে ওঠেন। তাদের দেখলেই হিংস্র দানব বলে মনে হয়। লেখাপড়া জানা নেই শারীরিক চেহারাও জঙ্গীদের মতো।

    • mahmud - ১০ মার্চ ২০০৯ (৬:৫৪ অপরাহ্ণ)

      What about rapes and torture! Who takes responsibility for that in independent Bangladesh

      বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কেউ যদি বলতেন, ভাই আমি নিরপেক্ষ তাহলে, তাকে লোকে সন্দেহের চোখে দেখতো। জাতীয় জীবনে এমন কিছু সংকটকাল আসে মাঝে মাঝে যেগুলিতে নিরপেক্ষ থাকার কথা বলা মানে, সুবিধাবাদের চর্চা করা।

      ১) প্রধানমন্ত্রীর শক্তি প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল , কারন সিদ্ধান্তটি ছিলো আওয়ামী রাজনৈতিক। আওয়ামী নেতারা হিরো হতে চেয়েছিলেন। কারন, এই রুপ জাতীয় সংকটে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে অতি দ্রুত সর্বদলীয় আলোচনা করা যেতো সেটা প্রধানমন্ত্রী করেন নি। উনি সোজা কথায় ভুল করেছেন এবং ব্যথতার জন্য পদ্যত্যাগ করা উচিত ছিলো।

      (২) সাধারণ ক্ষমা হত্যাকারীদের সাহসী করেছে এবং এর সুযোগ নিয়ে তারা আরও বেশী হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে চ
      (৩) ঘটনার মোকাবেলায় নিসন্দেহে অত্যাধিক সময় নেয়া হয়েছে
      (৪) সেনাবাহিনীর পিলখানায় ঢোকার জন্য সরকারের অনুমতির দরকার ছিল
      (৫) সরকারের কোন অংশ নিজ উদ্যোগ নিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে কিনা সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ তবে সরকার ঘটনার মূল অপরাধীদের পালানোর সুযোগ করে দিয়েছে, তা জাতীয় লজ্জা। এবং প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা।

      তবে উল্লেখ থাকে সরকারের উচিত তাড়াতাড়ি যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে মামলা করা, দেরী করা ঠিক হবে না। কারন আওয়ামী সরকারের ব্যর্থতার তালিকা অতি দ্রুত দীর্ঘ হচ্ছে …

  12. রায়হান রশিদ - ৪ মার্চ ২০০৯ (২:৫৯ অপরাহ্ণ)

    নিখোঁজ অফিসারদের তালিকার মধ্যে কোন সূত্র লুকিয়ে আছে কিনা সেটাও পরীক্ষা করে দেখা দরকার মনে হয়।

    নিখোঁজ অফিসারদের নাম

    ১. কর্নেল গুলজার উদ্দীন আহমেদ – RAB এর ইন্টেলিজেন্স উইং এর প্রতিষ্ঠাতা ডিরেক্টর
    ২. লে. ক. মঞ্জুর এলাহী
    ৩. মেজর কাজী আশরাফ হোসেন
    ৪. মেজর আহমেদ আজিজুল হাকিম পলাশ
    ৫. মেজর আবু সৈয়দ গাজ্জালী দস্তগীর
    ৬. ক্যাপ্টেন তানভির হায়দার নূর

    দেখতে পাচ্ছি, কর্নেল গুলজার এর মৃতদেহ পাওয়া যায়নি এখনো। তিনি ছিলেন RAB এর প্রতিষ্ঠাতা ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টর। বাংলা ভাইসহ অন্যান্য জঙ্গি দমনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল বলে জানি। তাই, হত্যাকারীরা কিছু কিছু টার্গেট-করা জিম্মি অফিসারকে জীবিতাবস্থায় অপহরণ করেও নিয়ে যেতে পারে পালিয়ে যাবার সময় — এই সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেয়া উচিত হবে না। টার্গেট-এর ভিত্তি হতে পারে সেই অফিসারের পূর্ববর্তী কার্যক্রম। অফিসারদের কাছ থেকে সে-সব বিষয়ে ইন্টেলিজেন্স আদায় করাও এর লক্ষ্য হতে পারে। আজকের খবরে দেখলাম, বিডিআর সদর দফতর থেকে নাকি অনেক জরুরি ফাইল এবং দলিল খোয়া গেছে। এ থেকে মনে হয় ইন্টেলিজেন্স-এর গুরুত্ব রয়েছে ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে।

    এভাবে ধরে নিয়ে এগোলে দায়ী গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে কিছুটা হলেও সাহায্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে যেটা জরুরি তা হলো এই ৬জন (কিংবা তাঁদের মধ্যে দু’একজন) নিখোঁজ অফিসারের সেনাবাহিনী/RAB-এর সার্ভিস রেকর্ডে কোন common pattern রয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা।

  13. mahmud - ৮ জুন ২০০৯ (১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ)

    আশ্চয, আওয়ামী ভাইয়েরা মনের মাধুরী দিয়ে যেভাবে ইচ্ছে সেই ভাবে আকতে চাইছেন কেন ? সত্য কি লুকানো যাই?
    আওয়ামী লীগ হাই কমান্ড এখানে সুস্পটভাবে জ ড়ইত

  14. Pingback: মুক্তাঙ্গন | পিলখানা গণহত্যা: চিন্তাঝড় ৩ — গুজবের ময়না তদন্ত | রায়হান রশিদ

  15. Dr. Kalam A. Mir - ২১ নভেম্বর ২০০৯ (১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ)

    Those, particularly Mr. Raihan Rashid, who have been giving wise explanations on Pilkhana incident, I hope, will want to say something now when Jamat, BNP and other similar villains are not blamed by the AL government as ferociously as they used to at the beginning.

    My two cents are – we seldom can go beyond our party line to say or do anything in Bangladesh! That’s the greatest tragedy of Bangladesh!

    • রায়হান রশিদ - ২১ নভেম্বর ২০০৯ (৭:৫৮ অপরাহ্ণ)

      @ কালাম এ মির,
      ধন্যবাদ। “চিন্তাঝড়” ঘরানার তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কোনো পোস্ট প্রথম প্রকাশের প্রায় নয় মাস পর revisit করাটা আসলেই একটু দুঃসাধ্য। এই ঘরানার লেখা বলতে আসলে কি বোঝায় সে ব্যাপারে অভিধানে “brainstorming” দেখলে কিছু ধারণা পাওয়া যাবে। এখানেও দেখতে পারেন। বোঝাই যাচ্ছে রাজনীতির প্রধান খেলোয়াড়রা রাজনীতির নানা সমীকরণগুলো মাথায় রেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী কথা বলেছেন। দু’দুটো তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও আমরা সে ছাপ দেখছি। আমাদের প্রার্থনা, আসল সত্য উদঘাটিত হতে আরও ৩৫ বছর সময় লাগবে না।

      My two cents are – we seldom can go beyond our party line to say or do anything in Bangladesh! That’s the greatest tragedy of Bangladesh!

      একমত। আপনার মন্তব্য সেটা অনুধাবনে সাহায্য করছে!

  16. মাসুদ করিম - ৬ নভেম্বর ২০১৩ (১০:০৯ পূর্বাহ্ণ)

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.