গত ১৩ জুন সংসদ প্রশ্নোত্তর পর্বে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব এ বি তাজুল ইসলাম বেশ চমৎকার একটি তথ্য দিয়েছেন, তথ্যটি হচ্ছে যে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কোন তালিকা সরকারের কাছে নেই [..]

গত ১৩ জুন সংসদ প্রশ্নোত্তর পর্বে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব এ বি তাজুল ইসলাম বেশ চমৎকার একটি তথ্য দিয়েছেন, তথ্যটি হচ্ছে যে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কোন তালিকা সরকারের কাছে নেই (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৫ই জুন, ২০১০)। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কোন শান্তি কমিটির কথা বুঝিয়েছেন, সেটা ঠিক বোঝা গেল না, তবে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কতৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (৭ম খন্ডের) ৭১২ নম্বর পৃষ্ঠাতে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির আহবায়ক এবং সদস্যসহ সবার নামই বলা আছে।

শান্তি কমিটির নতুন নামকরণ
গত বুধবার শান্তি কমিটি নামে পরিচিত নাগরিক শান্তি কমিটির এক সভায় সংস্থার নতুন নামকরণ করা হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি এবং পূর্ব পাকিস্তানকে এই কমিটির কাজের আওতায় আনা হয়েছে।
এপিপি পরিবেশিত এই খবরে বলা হয়েছে যে, কমিটি প্রয়োজনমত আরো সদস্য কো-অপট করতে পারবেন। জনসাধারণ যাতে দ্রুত প্রদেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য তাদের পেশার কাজ শুরু করতে পারেন তার জন্য কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি প্রদেশে সত্বর স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
কমিটি তাদের লক্ষ্য পুরনের জন্য জেলা ও মহকুমা পর্যায়ে ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেন্রীয় শান্তি কমিটি তাদের কাজ দ্রুত ও যথোপযুক্তভাবে চালিয়ে যাওয়ার ও তাদের নীতি পুর্ণ আন্তরিকতার সাথে কার্যকরী করার জন্য নিম্নলিখিত ২১ জন সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করেছেঃ – ১) আহবায়ক সৈয়দ খাজা খয়েরঊদ্দিন ২) জনাব এ কিঊ এম শফিক ইসলাম ৩) অধ্যাপক গোলাম আযম ৪) জনাব মাহমুদ আলী ৫) জনাব আব্দুল জব্বার খদ্দর ৬) মওলানা সিদ্দিক আহমেদ ৭) জনাব আবুল কাসেম ৮) জনাব মোহন মিয়া ৯) মওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুদ ১০) জনাব আব্দুল মতিন ১১) অধ্যাপক গোলাম সরওয়ার ১২) ব্যারিষ্টার আখতার উদ্দিন ১৩) পীর মহসিন উদ্দিন ১৪) জনাব এ এস এম সোলায়মান ১৫) জনাব এ কে রফিকুল হোসেন ১৬) জনাব নুরুজ্জামান ১৭) জনাব আতাউল হক খান ১৮) জনাব তোয়াহা বিন হাবিব ১৯) মেজর আফসারউদ্দিন ২০) দেওয়ান ওয়ারাসাত আলী ২১) হাকিম ইরতেয়াজুর রহমান।
দৈনিক পাকিস্তান, ১৫ এপ্রিল, ১৯৭১

আঞ্চলিক শান্তি কমিটি গুলোর কার্যকলাপ নিয়েও কিছু তথ্য একই খন্ডে আছে (পৃষ্ঠা নম্বর ৭১০ থেকে ৭২৯, স্ক্যান করা কপি এখানে)। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র ১৯৮৪ সালে ১৬ খন্ডে (সব মিলিয়ে প্রায় ১৫,০০০ পৃষ্ঠা) বিপুল অর্থ ও শ্রমব্যয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রায় ৩ লাখ পৃষ্ঠা দলিল বাছাই করে এই সঙ্কলন প্রকাশিত হয়। ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পূনঃপ্রকাশিত (আমি যদ্দুর জানি কম্পিউটার কম্পোজ করে) হয়। এই দলিল নিশ্চয় সরকারী টাকা খরচ করে বিভিন্ন পাবলিক লাইব্রেরী, সরকারী অফিস, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। বেশীর ভাগ জায়গাতেই ষোল খণ্ডের এই দলিল লাইব্রেরীর এক কোনে বছরের পর বছর পরে থাকে, কেউ ছুঁয়েও দেখে না। সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র কোন গল্প উপন্যাস নয়, কেউ শখের বসে নিশ্চয় ১৫০০০ পৃষ্ঠা পড়বেন না। শাহরিয়ার কবির বা মুনতাসীর মামুনের মত গবেষকেরা অবশ্য পরিশ্রম করে এই দলিলপত্র ঘেঁটে বই লিখেছেন বা পত্র পত্রিকায় কলাম লিখেছেন।
প্রতিমন্ত্রীর উত্তরের নমুনা থেকে বোঝা গেল, তিনি নিজের মন্ত্রণালয় কতৃক প্রকাশিত দলিলে কি আছে, সে সম্পর্কে সম্ভবত নিজেই অবহিত নন। সম্প্রতি তাঁর মন্ত্রণালয় সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বয়স ছিল ৪ বছর, এমন ব্যক্তিকে মুক্তিযুদ্ধের সনদ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও মুজিবনগর স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, এই প্রকল্প নিয়েও নিশ্চয় টেন্ডারবাজী চলছে। এসব নিয়ে এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব, উপসচিব ব্যস্ত থাকতেই পারেন। তবে তাঁদের কাছে একটি বিনীত অনুরোধ থাকবে, তাঁরা যেন এত ব্যস্ততার ফাঁকে, খানিকটা সময় করে মন্ত্রণালয়ের ওয়েব পেজ়ে মুক্তিযুদ্ধের দলিল উম্মুক্ত করে দেবার উদ্যোগ নেন, যেসব দলিল কম্পিউটার কম্পোজ করা হয়েছে, সেগুলো বাংলা ইউনিকোডে, যেগুলো এখনো কম্পোজ করা হয়নি, সেগুলোর স্ক্যান করা pdf, যাতে একটি দশম শ্রেণীর ছাত্রও জামাতের বর্তমান সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ (যিনি দাবী করছেন দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই) ৭১ এ কি বলেছেন বা করেছেন তা সহজেই খুঁজে বের করতে পারে। শর্মিলা বোসের তথাকথিত গবেষণা, যাতে তিনি দাবি করেছেন, ৭১ এর গণহত্যা বাড়িয়ে বলা হয়েছে, এর জবাবে দলিলের অষ্টম খন্ডে বিদেশি পত্র পত্রিকাতে (৬৪৭ থেকে ৬৬৭ নং পৃষ্ঠা) ৭১ এর গণহত্যার যে সামান্য কিছু বিবরণ আছে তাই যথেষ্ট। শুধু ভারত, যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের পত্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার পত্রিকা, সবখানেই এই গণহত্যার বিবরণ ছাপা হয়েছিল, আমাদের হয়ে নিহতের সংখ্যা বাড়িয়ে বলায় এতগুলো পত্রিকার কোনই ঠেকা ছিল না। দশম শ্রেণীর ছাত্র আরও দেখবে যে দলিলের ৭ম খন্ডে (পাকিস্তানী দলিলপত্র) সার্চ দিয়ে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ মেজর জিয়ার নাম একবারও উঠে আসছে না। অথচ ‘পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণকারী’ শেখ মুজিবরের নাম অন্তত কয়েকশ বার আছে। তেলের ড্রামে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন জিয়া, সে ঘোষণা শুনে লক্ষ লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ স্বাধীন করে ফেলল, অথচ খোদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার আমলে কমিশনপ্রাপ্ত এই দলিলে পাকিস্তানী সরকারী কাগজপত্রের একটিতেও বিদ্রোহী হিসাবে জিয়ার নাম দেখানো গেলনা, ব্যাপারটা খানিকটা আশ্চর্য করার মতই। তবে কি মেজর জিয়া ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনা যেমন ‘অখ্যাত মেজর’ বলে বিরাট গুনাহের কাজ করেছেন, সে রকম কিছুই ছিলেন?
বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা উঠতে বসতে বলছে, অনলাইনে টেন্ডার দেয়া যাবে, টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতি থাকবে না, কিছু ছেলেমেয়ে ‘কম্প্যুটার’ শিখে সফটওয়ার তৈরি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নিয়ে আসবে, সবই চমৎকার ব্যাপার। কিন্তু আমাদের ইতিহাসের উজ্জলতম অধ্যায়, সেই উজ্জ্বলতম অধ্যায় বখতিয়ার খলজির বংগ বিজয় নয়, তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা নয়, মাত্র ৩৯ বছর আগে ঘটে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ লক্ষ দলিল দেশে ও বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, কে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কে দালাল ছিলেন, কে দিনে দালাল রাতে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সব তথ্যই ডিজিটাল কপি করে ফেলা যায়, একবার করে ফেললে সেই দলিল আর মুছে ফেলা যাবে না, ক্রমশ হলুদ হয়ে যাবে না, ঊঁই পোকা খেয়ে ফেলবে না। কে তেলের ড্রামে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা ঘোষনা করেছেন, কে ফ্রন্টে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন আর কে মনে মনে করেছেন, সবই আর্কাইভে সার্চ দিলেই জানা যাবে। ৪০ কোটি টাকা নয়, ৪ কোটি টাকা নয়, এর চেয়ে অনেক কম খরচেই এই আর্কাইভ গড়ে তোলা সম্ভব। সত্তর বছর আগে ঘটে যাওয়া হলোকস্ট আর একশ ত্রিশ বছর আগে ঘটে যাওয়া মার্কিন গৃহযুদ্ধের যদি বিশাল অনলাইন আর্কাইভ থাকতে পারে, তবে মাত্র ৪০ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধের অনলাইন আর্কাইভে সমস্যা কোথায়।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ইতিহাস বিকৃতির কারণ মুক্তিযুদ্ধের দলিলের অভাব নয়, সেই দলিলের সহজলভ্যতার অভাব। শান্তি কমিটির সদস্য তালিকা, রাজাকার বাহিনীর সদস্য তালিকা, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা, সব কিছুই আছে, কিন্তু কোন মন্ত্রণালয়ের মহাফেজখানাতে আছে? তথ্য মন্ত্রণালয়ের মহাফেজখানাতে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহাফেজখানাতে, নাকি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মহাফেজখানাতে? এত মহাফেজখানা ঘুরে তথ্য জোগাড়ের ধৈর্য সেকালের আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ আর একালের মুনতাসীর মামুনের থাকতে পারে, কিন্তু একজন সাধারন তরুণের নেই। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা সেই তরুণের অস্তিত্বের প্রশ্ন। শায়েস্তা খানের টাকায় আট মন চালের আর সম্রাট আওরংগজেবের টুপি সেলাই করে জীবিকা নির্বাহের গালগল্পের ইতিহাসে তার কোনই প্রয়োজন নেই। তার প্রয়োজন আছে সেই ইতিহাসের, যে ইতিহাসে ১১ জন সেক্টর কমান্ডার, যাদের কারুরই পদমর্যাদা মেজরের উপরে নয়, যাদের কারুর বয়সই ৩৫ এর উপরে নয়, হারিয়ে দিয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাতি আর ঘোড়া মারা পাকিস্তানী বিগ্রেডিয়ার আর মেজর জেনারেলদের। একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের অনলাইন মহাফেজখানাই পারে এই ইতিহাসকে সহজলভ্য করতে।

মোহাম্মদ মুনিম

পেশায় প্রকৌশলী, মাঝে মাঝে নির্মাণ ব্লগে বা ফেসবুকে লেখার অভ্যাস আছে, কেউ পড়েটড়ে না, তারপরও লিখতে ভাল লাগে।

৮ comments

  1. রায়হান রশিদ - ২২ জুন ২০১০ (১১:৩১ অপরাহ্ণ)

    মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণাদাতার মন্তব্য অনেকটা ‘চিলে কান নিয়েছে’ ধরণের, আগুপিছু ভালভাবে খোঁজ না নিয়েই। এই পোস্টটির একটি কপি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া গেলে কাজের কাজ হতো। ধন্যবাদ মুনিম।
    এই লেখাটার একটা ইংরেজী সংস্করণ কি WCSF এর ইংরেজী ব্লগের জন্য প্রস্তুত করা যায়? মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, যুদ্ধাপরাধ, অপরাধী, অপরাধীর বিচার – ইত্যাদি বিষয়ে লেখাগুলো এখন থেকে অন্তত দুই ভাষায় যুগপৎ প্রচার করা গেলে মন্দ হয় না।

    • বিনয়ভূষণ ধর - ২৬ জুন ২০১০ (৪:৩৪ অপরাহ্ণ)

      অল্প কিছুদিন আগে আমাদের বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের আইন প্রতিমন্ত্রী জনাব কামরুল ইসলাম সাহেব (যিনি আবার আমাদের বাংলাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার জনাব মোরশেদুল ইসলাম-এর ভাই হন) বেশ জোরের সাথে মিডিয়াকে জানিয়েছেন যে…

      কুখ্যাত রাজাকার জনাব মীর কাশেম আলী নাকি কখনো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করেন নাই।

      তো আমার কথা হলো…
      @রায়হান!
      যে দেশে দুটো গূরত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত দু’জন মন্ত্রী যখন এধরনের বিবৃতি দেন তখন কি মনে হয় না যে “ডাল মে কুছ্ কালা হ্যায়!”…
      ঠিক সে কারনে তোমাকে ফেসবুকে সেদিন প্রশ্নটা করেছিলাম যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া থেকে আমরা ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছি কিনা?

  2. মোহাম্মদ মুনিম - ১ এপ্রিল ২০১৩ (৯:১২ পূর্বাহ্ণ)

    মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের ডিজিটাল কপি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব পেজে দিয়েছেন। এই ভাল কাজটি করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই।

  3. মোহাম্মদ মুনিম - ২১ মে ২০১৩ (৮:২২ পূর্বাহ্ণ)

    স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র সরবরাহের প্রস্তাব বাতিলের দাবি
    শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চমূল্যে স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্রের ১৫ খণ্ড সরবরাহের প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। একই সঙ্গে তারা দলিলপত্র ছাপাসংক্রান্ত আইনি জটিলতা নিষ্পত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
    গতকাল সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র নিয়ে ৪৪ কোটি টাকার বাণিজ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রকাশক সমিতি এই বিবৃতি দিয়েছে। এই সমিতিতে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল), সাহিত্য প্রকাশ, আগামী, অ্যাডর্ন, অনন্যা, সময়, অন্য প্রকাশ, দিব্য প্রকাশ, বিদ্যা প্রকাশসহ বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে। সমিতির নির্বাহী পরিচালক মিলনকান্তি নাথ বিবৃতিতে সই করেন।
    এতে বলা হয়েছে, দেশের বরেণ্য ঐতিহাসিক ও বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে সরকারি অর্থায়নে প্রকাশিত স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র গ্রন্থাবলীতে মুক্তিযুদ্ধের ৬ দফা ও ১১ দফাসহ বিভিন্ন দাবি, রাজনৈতিক দলের ইশতেহার, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও বিবৃতি, স্বাধীনতার ঘোষণা, দেশে ও বিদেশের পত্রিকায় প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিবেদন, মুক্তিযোদ্ধাদের বয়ান, নিষ্ঠুরতার শিকার মানুষের ভাষ্য ইত্যাদি হাজারো তথ্যমূলক দলিল সন্নিবেশিত হয়েছে। ১৫ খণ্ডের এই দলিল সরকারি সম্পদ, কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এগুলোর একচ্ছত্র মালিকানা দাবি করতে পারে না।
    বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি প্রকাশনা সংস্থা তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এককালীন চুক্তি ব্যবহার করে এসব দলিলপত্র মুদ্রণ, প্রকাশনা ও বাজারজাতকরণের একচ্ছত্র মালিকানার দাবিদার হয়ে উঠেছে। তারা উচ্চমূল্যে ১৪ কোটি টাকা মূল্যের দলিলপত্র বিভিন্ন স্কুলে সরবরাহে তৎপর হয়ে উঠেছে।
    বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্রের সেট সরবরাহের প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রকাশক সমিতি থেকে বলা হয়েছে, দলিলপত্রের বৈধ অধিকারের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। বিষয়টির সুরাহার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে উদ্যোগী এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আদালতে বৈধ অধিকারের বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১৫ খণ্ডের সেট সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিক হবে না। তদুপরি স্কুলপর্যায়ে এসব দলিলপত্র সরবরাহের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সমিতি। বলা হয়েছে, এসব দলিলপত্র ব্যবহারের জন্য উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষাগত মান প্রয়োজন এবং বিশেষজ্ঞরা সেই অভিমত ইতিমধ্যে দিয়েছেন।
    বিবৃতিতে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্কুলে ২৫ হাজার সেট ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ সরবরাহের বদলে ওই অর্থে মুক্তিযুদ্ধ, এর ঐতিহাসিক পটভূমি, বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের বিচার, প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য ইত্যাদি বিষয়ে স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপযোগী প্রকাশিত বই সরবরাহের দাবি জানানো হয়। এতে বলা হয়, এটি করা হলে স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত হতে পারবে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের প্রকাশকেরা প্রণোদনা পাবেন আর সরকার বড় ধরনের কেলেঙ্কারির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

  4. মোহাম্মদ মুনিম - ৯ জুন ২০১৩ (৩:১৫ পূর্বাহ্ণ)

    স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের ডিজিটাল কপি পুরোটা একত্রে পাওয়া যাচ্ছে এখানে। সৌজন্যে প্রজন্ম ব্লগের এই পোস্ট

  5. রেজাউল করিম সুমন - ২ নভেম্বর ২০১৪ (১:৫১ অপরাহ্ণ)

    ২ নভেম্বর ২০১৪ : যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায়

    চট্টগ্রামের বদর কমান্ডার মীর কাসেমের প্রাণদণ্ড

    একাত্তরে যার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে নৃশংসতা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল আলবদর রাজাকার ও আলশমস বাহিনী, স্বাধীন বাংলাদেশে যার যোগানো অর্থে জামায়াতে ইসলামী পেয়েছে শক্ত ভিত্তি, সেই মীর কাসেম আলীকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

    যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রোববার জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় দেন।

    যুদ্ধাপরাধে জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের তিন দিন পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটির টানা হরতালের হুমকির মধ্যেই এ রায় এলো।

    ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শুরার এই সদস্যের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের ১৪টি অভিযোগের মধ্যে আটটি সন্দেহাতীতভাবে ও দুটি আংশিক প্রমাণিত হয়েছে।

    আংশিক প্রমাণিত দুটি অভিযোগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ আটজনকে হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ১১ নম্বর অভিযোগে তিন বিচারক সর্বসম্মত প্রাণদণ্ডের রায় দিলেও ১২ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির সিদ্ধান্ত হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে।

    সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত আটটি অভিযোগে অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের দায়ের মীর কাসেমকে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

    ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ৩৫১ পৃষ্ঠার রায়ের ১১ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্তসার পড়ার সময় হালকা আকাশি শার্ট ও ঘিয়ে কোট পরিহিত মীর কাসেমকে শুরুতে কাঠগড়ায় বসে দৃশ্যত ফুরফুরে মেজাজে হাঁটুর ওপর আঙুল নাচাতে দেখা গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার চেহারায় উদ্বেগ বাড়তে থাকে।

    ফাঁসির সাজা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে তিনি বলে ওঠেন, “শয়তান.. শয়তান..।”

    “মিথ্য ঘটনা… মিথ্যা সাক্ষ্য… কালো আইন… ফরমায়েশি রায়। সত্যের বিজয় হবে শিঘ্রই… শিঘ্রই।”

    প্রসিকিউশন ৬২ বছর বয়সী মীর কাসেমকে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তানের খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া ‘বাঙালি খান’ হিসাবে, যিনি সে সময় জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

    মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা উঠে এসেছে এই রায়ে।

    জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পর মীর কাসেম ছিলেন আলবদর বাহিনীর তৃতীয় প্রধান ব্যক্তি। ব্যাপক যুদ্ধাপরাধে অংশ নেওয়া আলবদর বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার ছিলেন তিনি।

    একাত্তরে তার নির্দেশেই চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিস সংলগ্ন এলাকায় হিন্দু মালিকানাধীন মহামায়া ভবন দখল করে নাম দেওয়া হয় ডালিম হোটেল। সেখানে গড়ে তোলা হয় বদর বাহিনী চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঘাঁটি এবং বন্দিশিবির। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় সেখানে অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়, যাদের লাশ পরে ফেলে দেওয়া হতো চাক্তাই চামড়ার গুদাম সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীতে।

    রায় ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনালের বাইরে অপেক্ষমাণ মুক্তিযোদ্ধা, রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে উপস্থিত জনতা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ উল্লাস প্রকাশ করে। কোথাও কোথাও আনন্দ মিছিলও হয়।

    তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাসেমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, “যে সকল প্রমাণাদির ভিত্তিতে দণ্ড দেওয়া হয়েছে, তাতে এই রায় দেওয়া যায় না। প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি। এই রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”

    এর বিরুদ্ধে আপিল করার কথাও বলেন তিনি।

    অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, “এই বিচারের মধ্য দিয়ে দায়মুক্তির আরেকটি ধাপ পেরোলো জাতি।”

    যেসব অভিযোগে আসামিকে আদালত খালাস দিয়েছে, সেগুলোতে আপিল করা হবে কি-না, সে সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে বলে জানান আরেক প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ।

    ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর এটি ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাদশ রায়।

    রায়ের জন্য আসামি কাসেমকে শুক্রবারই কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। রোববার সকালে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয় একটি প্রিজন ভ্যানে করে ।

    জামায়াত নেতাদের আগের রায়গুলোর সময় সহিংসতার প্রেক্ষাপটে এবং নিজামীর রায়ের প্রতিবাদে হরতালের ঘোষণা থাকায় শনিবার থেকেই ট্রাইব্যুনাল ঘিরে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকালে ট্রাইব্যুনালে আসা সাংবাদিক ও দর্শনার্থীদেরও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তল্লাশি করে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।

    আগের রায়ের দিনগুলোর মতো এদিনও সকাল থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে মিছিল নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের ট্রাইব্যুনালের বাইরে জড়ো হতে দেখা যায়। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণারও দাবি তোলেন তারা।

    মামলা বৃত্তান্ত

    একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করার পর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে মীর কাসেমকে কারাগারে পাঠানো হয়।

    ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন গতবছর ১৬ মে মীর কাসেমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। গতবছরের ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মির কাসেমের যুদ্ধাপরাধের বিচার।

    এরপর মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয় এবং সেখানেই ১৮ নভেম্বর প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমনের সূচনা বক্তব্যের (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) মধ্য দিয়ে শুরু হয়
    শুনানি।

    গত বছরের ১১ ডিসেম্বর থেকে এবছরের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামসহ মোট ২৪ জন।

    এরপর ২১ ও ২২ এপ্রিল মীর কাসেম আলীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তার ছোট বোন মমতাজ নুরুদ্দিনসহ তিনজন।

    সাক্ষ্য-জেরা এবং দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে চলতি বছর মে মাসে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

    একাদশ রায়

    বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনেরররমধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে। পলাতক থাকায় তিনি আপিলের সুযোগ পাননি।

    ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়, যা প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয় হাজার হাজার মানুষ।

    যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সেই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে জনতার দাবির মুখে সরকার ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন আনে। এর মধ্যে দিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে দুই পক্ষেরই আপিলের সমান সুযোগ তৈরি হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ এ মামলার চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে প্রাণদণ্ড দেয়, যা কার্যকর করা হয় ১২ ডিসেম্বর।

    ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায়ে গতবছর ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হলে দলটির ঘাঁটি বলে পরিচিত এলাকাগুলোতে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হিসেবেই পুলিশসহ নিহত হয় ৭০ জনেরও বেশি মানুষ।

    ওই রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী আপিল করলে চলতি বছর ১৭ সেপ্টেম্বর ‘দেইল্যা রাজাকার’ নামে খ্যাত এই জামায়াত নেতার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

    গতবছর ৯ মে ট্রাইব্যুনালের চতুর্থ রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ মারুজ্জামানকেও মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুই পক্ষের আপিল শুনানি শেষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছে আপিল বিভাগ।

    মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও উসকানির দায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমীর গোলাম আযমকে গতবছর ১৫ জুন ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এটি ছিল ট্রাইব্যুনালের পঞ্চম রায়।

    রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি চলার মধ্যেই গত ২৩ অক্টোবর রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৯২ বছর বয়সী জামায়াতগুরু।

    গতবছর ১৭ জুলাই ষষ্ঠ রায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকেও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

    এরপর ১ অক্টোবর সপ্তম রায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রামের সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় আসে। তারাও রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছেন।

    গতবছর ৯ অক্টোবর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আদালত। যুদ্ধাপরাধের দণ্ড ভোগের মধ্যে ৮৩ বছর বয়সে গত ৩০ অগাস্ট মারা যান আলীম। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর ১১ মাস কারাবন্দি অবস্থায় হাসপাতালের প্রিজন সেলে ছিলেন তিনি।

    দ্ধিজীবী হত্যার দায়ে একাত্তরের দুই বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে গতবছর ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। তারা দুজনেই পলাতক।

    দশম রায়ে গত ২৯ অক্টোবর জামায়াত আমির একাত্তরের বদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীকেও দেওয়া হয় সর্বোচ্চ সাজা, যিনি বাঙালি জাতিকে সমূলে ধ্বংস করতে ‘স্বেচ্ছায় ও সচেতনভাবে’ ইসলামের অপব্যবহার করেন বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়।

  6. মোহাম্মদ মুনিম - ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ (১০:১৬ পূর্বাহ্ণ)

    এই ওয়েবসাইটে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রের ইউনিকোড ভার্সন পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৩ খন্ডের কাজ শেষ হয়েছে, বাকিগুলোও শিগগিরই শেষ হবে আশা করা যায়।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.