অভিযুক্তদের নাম তো বাজারে সবাই জানে, এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার অনেক আগে থেকেই বাজার জানে কারা কারসাজি করেছে – তদন্তের মধ্য দিয়ে তো তাদের করসাজির কৌশলগুলোর চালচলন আমরা জানতে পেরেছি মাত্র।[...]

মুহিত প্রথমেই বললেন, ইউনিপের জন্য শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। তারপর শেখ হাসিনার অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান বললেন, শেয়ার ধসের কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের যে-আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তাতে তাদের প্রতি তার কোনো সহানূভুতি নেই – না জেনে না শুনে তারা শেয়ার ব্যবসা করতে এসেছে কেন? এরপর সংসদে শেখ হাসিনা বললেন তিনি শেয়ার ব্যবসা করেন না কাজেই এ ব্যবসার সব তিনি বোঝেন না তবে তিনি অনুরোধ করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যেন ভাল শেয়ার কম দামে বিক্রি না করেন – ধরে রাখেন – বাজার ভাল হলে ভাল দামে শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন।

এখন গত বৃহষ্পতিবার শেয়ার কেলেঙ্কারির রিপোর্ট মুহিতের কাছে পেশ করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মুহিত বলেছিলেন, অভিযুক্তদের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া না পর্যন্ত তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না – এটা বাদ দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। কিন্তু অভিযুক্তদের নাম তো বাজারে সবাই জানে, এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার অনেক আগে থেকেই বাজার জানে কারা কারসাজি করেছে – তদন্তের মধ্য দিয়ে তো তাদের করসাজির কৌশলগুলোর চালচলন আমরা জানতে পেরেছি মাত্র। প্লেসমেন্ট শেয়ার, বুকবিল্ডিং, ব্যাংকের স্পন্সর শেয়ার হোল্ডারদের অতিমূল্যায়িত বাজারে অনেক শেয়ার বিক্রি করে দেয়া, মার্চেন্ট ব্যাংকিং-এর নামে ব্যাংকগুলোর একবোরেই অনিয়ন্ত্রিত শেয়ার ব্যবসা। সবই জানা ছিল, রিপোর্ট পেশ হওয়ার পর একটাই নতুন শব্দ আমার ভাণ্ডারে যোগ হয়েছে সেটা হল ‘Omnibus Account’ – আমরা ভেবেছিলাম সব বিনিয়োগকারী তার বিও একাউন্টেই তার শেয়ার ব্যবসার সব লেনদেন করেন – কিন্তু এখন জানতে পারলাম বড় বড় ব্যবসায়ীরা তা করেন না – তারা তাদের লেনদেনকে অস্বচ্ছ রাখতে মার্চেন্ট ব্যাংক বা শেয়ার ব্রোকার কোম্পানির ‘Omnibus Account’-এ বড় বড় লেনদেন করেন।

যাদের নাম অর্থমন্ত্রী জানতে দিতে আপাতত চাচ্ছিলেন না, তাদের নাম রিপোর্টের আগে যেমন সবাই জানত এখন রিপোর্টের পরে আরো ভাল করে জানে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কাজ আরো অনেক বড় – তাকে আরো বেশি কথা বলা উচিত ‘সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন’ কীভাবে চলবে, দেশে ‘ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ’ হবে কি না এসব নিয়ে পরিকল্পনা তৈরির প্রথমিক কাজ শুরু করে দেয়া। আর তার যদি মনে হয় তার একার দ্বারা এই কাজ করা সম্ভব নয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে বলা তাকে সহায়তা দিতে – অর্থমন্ত্রণালয়ের জন্য একটা উপদেষ্টা পরিষদ গড়ে দিতে, যে-পরিষদে ম্যাক্রো, মাইক্রো অর্থনীতি ও শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞের সমন্বয় ঘটবে।

আর প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন ‘সালমান ভাইরাস’কে কীভাবে মুছতে হবে সেই উপায় প্রধানমন্ত্রীকে নিজেকে ভেবে বের করতে হবে। পরপর দুই বার একই অভিযোগে অভিযুক্ত একজন মানুষকে বাঁচাতে সব দায়িত্ব শেখ হাসিনা যদি নিজের কাঁধে তুলে নেন, তাহলে ‘সালমান ভাইরাস’-এ আক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর দিকে হাত তুলে আমরা বলতে বাধ্য হব তিনিই এই ভাইরাসের জন্ম না দিলেও এই ভাইরাস থেকে তিনি অনেক কিছু পান তাই এই ভাইরাস থেকে পরিত্রাণের কোনো ইচ্ছাও তার নেই।

সাবস্ক্রাইব করুন
অবগত করুন
guest

39 মন্তব্যসমূহ
সবচেয়ে পুরোনো
সাম্প্রতিকতম সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
39
0
আপনার ভাবনাগুলোও শেয়ার করুনx
  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.