আজই দৈনিক সমকালের শেষের পাতায় একটা খবর দেখলাম সকালে এ কেমন নিয়োগ নীতিমালা, সেখানে বলা হচ্ছে
ড. সাজিদ আলী হাওলাদার। ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী থাকাকালে ফেজারভারিয়া আসমতি নামের সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির একটি ব্যাঙ আবিস্কার করেন এ তরুণ। বিশ্বের সরীসৃপ প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে তাই মিলেছে সর্বকনিষ্ঠ বিজ্ঞানীর খেতাব। ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অধ্যাপক ইয়োহা মারিলা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাজিদের কৃতিত্বে আকৃষ্ট হয়ে মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) বাদ দিয়ে বিশেষ বিবেচনায় সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে তাকে নিয়ে নেন। ফলে বয়স ৩০ পেরোনোর আগেই সাজিদ পিএইচডি সম্পন্ন করেন। দেশকে সমৃদ্ধ করতে নিজেকে নিয়োজিত করতে চেয়েছেন গবেষণায়। আর এজন্য তার পছন্দ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে। তাই আবেদন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে। তবে শিক্ষক নিয়োগের আবেদনের শর্ত হিসেবে মাস্টার্স না থাকায় তাকে ডাকাই হয়নি মৌখিক পরীক্ষায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনে এমন শর্তের কারণে গবেষণার সুযোগ চাপা পড়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
এটুকু পড়েই আমি বুঝলাম এই সাজিদ আলী হাওলাদারের কথা তো আমি ‘আজকের লিন্ক‘এ আগেও কয়েক বার শেয়ার করেছি এই ব্যাঙ গবেষকের কথা আমি তো ভুলে যাইনি, তাহলে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন তার গবেষণার কথা ভুলে শুধু তার মাস্টার্স না করার অজুহাত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সমকালকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী বলছেন:
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের যেসব নীতিমালা রয়েছে, তার মধ্যে কোনো একটি পূরণ করতে না পারলে ওই প্রার্থীকে আমরা মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকতে পারি না। প্রার্থীর আবেদনের যোগ্যতার শর্ত পূরণ হয়েছে কি-না, তা প্ল্যানিং কমিটি যাচাই করে দেখে। যাচাই শেষে পুনরায় রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠায়। সেখানে কোনো যোগ্য প্রার্থী বাদ পড়েছে কি-না, পুনরায় যাচাই করা হয়। পরে যারা আবেদনের শর্ত পূরণ করেছে, তাদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। সাজিদের হয়তো কোনো শর্ত পূরণ হয়নি, তাই তাকে ডাকা হয়নি। তবে এ ধরনের প্রার্থীকে নেওয়ার জন্য যদি নিয়ম করা হয়, তবে তার অপব্যবহার হওয়ার শঙ্কা থাকে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অপব্যবহারের ভয়ে এখনই এত কাতর কেন হয়ে পড়লেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুঝতে পারছি না, তার চেয়ে বরং সাজিদ আলী হাওলাদারের গবেষণার মানকে তো বেঞ্চমার্ক হিসেবে ব্যবহার করে বলা যেত সাজিদ আলী হাওলাদারের মানের গবেষক হলেই একমাত্র মাস্টার্স না থাকলেও কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়া যাবে। বুঝি না, আমাদের সাদা চোখের বোঝাপড়া মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিরাট জায়গায় অচল, তারা মনে হয় কালো চোখের বোঝাপড়ার চর্চা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না।
সাজিদ আলী হাওলাদারকে নিয়ে আমার প্রথম লিন্ক শেয়ারটি ছিল ফেব্রুয়ারি ২০১১তে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ সাজিদ আলি হাওলাদার Fejervarya asmati নামক এক বিরল প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করেছেন। তার গবেষণা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে এখানে: Zootaxa 2761: 1-68 (9 Feb. 2011)। দৈনিক আজাদীতে খবর
বিরল প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার চবি ছাত্রের
বিরল প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করে বাংলাদেশের প্রাণিবিদ্যা চর্চার ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কৃতী শিক্ষার্থী সাজিদ আলী হাওলাদার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের রেকর্ড করে বিশ্বের বিখ্যাত বন্যপ্রাণী বিষয়ক জার্নাল জুট্যাক্সাতে প্রতিবেদন প্রকাশ করলেন এ শিক্ষার্থী। ২৬ বছর বয়সী এ তরুণ গবেষক চবির ক্যাম্পাসে প্রাপ্ত বিরল প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করে পরিণত হয়েছেন বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রাণী আবিষ্কারক হিসেবে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত বা কোনো বাংলাদেশির উভচর, সরীসৃপ বা স্তন্যপায়ী প্রাণী আবিষ্কারের রেকর্ড এটিই প্রথম। তাছাড়া, কোনো সহায়তা ছাড়া একক ব্যক্তি কর্তৃক প্রাণী আবিষ্কার ও আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে লেখা প্রকাশেরও এটি প্রথম ঘটনা। গত ৯ ফেব্রুয়ারি জুট্যাক্সাতে তার প্রাপ্ত ব্যাঙ সম্পর্কিত প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। খবর ইউএনবির।
সাজিদ চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর আসমতের নামানুসারে তার আবিষ্কৃত ব্যাঙের নাম দিয়েছেন ’ফেজারভারিয়া আসমতি’।
আবিষ্কৃত ব্যাঙ ও প্রবন্ধ প্রকাশ করায় সাজিদকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি’র কিউরেটর ড. ড্যারেল ফ্রস্ট। বিশ্বের সরীসৃপ প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রে সাজিদই সর্বকনিষ্ঠ বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্বে সমাদৃত প্রাণিবিজ্ঞানী ড. ক্রেইগ এডলার সম্পাদিত ইনডেক্স অব অথরস অব হারপেটোলজিক্যাল ট্যাক্সোনমিস্ট’র লেখক ড. জন এস এপলেগার্থ এক অভিনন্দন বার্তায় সাজিদের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানান ও সাফল্য কামনা করেছেন।
২০০৪ সালে চবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন সাজিদ। এরপর থেকে ব্যাঙ, পাখি নিয়ে তার পথচলা। ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাঙের জীবন প্রণালী ও বংশবৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা চালান তিনি। এ সময় তিনি ব্যাঙের বংশবৃদ্ধির জন্য হটস্পট হিসেবে পরিচিত চবির কাটাপাহাড় রাস্তার দু’পাশ থেকে বিভিন্ন ব্যাঙের নমুনা সংগ্রহ করতে থাকেন। এরমধ্যে ২০০৮ সালে একদিন পেয়ে যান বিরল প্রজাতির একটি ব্যাঙ। স্বভাবমতো সেটিকে তিনি ব্যক্তিগত সংরক্ষণাগারে নিয়ে গিয়ে এটির প্রজাতি ও প্রকৃতি উদ্ধারের কাজে লেগে যান। কিন্তু সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও তালিকাভুক্ত সাড়ে ছয়শ প্রজাতির মধ্যেও এ ব্যাঙের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি তিনি। তারপর শুরু হয় অন্য ধরনের গবেষণা। এ ব্যাঙের ব্যতিক্রমী ডাক ও বৈশিষ্ট্য বের করতে তিনি যোগাযোগ করেন বিশ্বের সেরা সব প্রাণিবিজ্ঞানীদের সঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে পর্তুগাল, ইটালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় ব্যাঙের ডাকের সাউন্ড এনালাইসিস এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে, এ ধরনের ব্যাঙের অস্তিত্ব একমাত্র বাংলাদেশেই পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে তিনি বিশ্বের সেরা প্রাণিবিজ্ঞানীদের সম্পাদনায় প্রকাশিত বন্যপ্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের কাজে নিয়োজিত জার্নাল জুট্যাক্সাতে এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ পাঠান। ওই সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষ তার আবিষ্কারের সত্যাসত্য যাচাইয়ের পর চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রবন্ধটি গ্রহণ করেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি জুট্যাক্সা’র ২৭৬১ ভলিউমে এটি প্রকাশিত হয়।
একই মাসে আরেকটি শেয়ার ওই ফেব্রুয়ারি ২০১১তেই
আজকে সমকালের ফিচার ‘কালস্রোত’এ প্রকাশিত মোহাম্মদ সাজিদ আলী হাওলাদারের সাক্ষাৎকার : অণুপর্যায় বিবর্তন নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছা আছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি নতুন প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া গেছে। এর আবিষ্কারক ২৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ সাজিদ আলী হাওলাদার। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেছেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি নিউজল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রাণিবিদ্যাবিষয়ক পত্রিকা জুটেক্সা এটিকে নতুন প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৬৫০০ প্রজাতির ব্যাঙ আছে। এর মধ্যে ফেজারভারিয়া গোত্রের ৩৩টি প্রজাতি পাওয়া যায়। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই প্রজাতিগুলো বিস্তৃত। এই তরুণ বিজ্ঞানীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরছেন ডিসকাশন প্রজেক্টের আবদুর রাজ্জাক।
কালস্রোত : বাংলাদেশে ব্যাঙের প্রকৃতপক্ষে কয়টি প্রজাতি পাওয়া যায়?
হাওলাদার : ওটঈঘ-এর হিসাব অনুযায়ী ৩৫টি এবং আমার আবিষ্কৃত প্রজাতিটিসহ ৩৬টি হবে। আর আমার আবিষ্কৃত প্রজাতিটিসহ ফেজারভারিয়া গোত্রের বর্তমানে ৬টি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায়। বিস্তারিত পড়ুন : এখানে
তারপরের লিন্কটি শেয়ার করেছি জুন ২০১১তে, সাজিদ তখন বলছেন:
আমি কাজ করতে চেয়েছি। দেশের জন্য কিছু করতে চেয়েছি। আমি দেশকে দিতে চাই। কিন্তু দেশ আমার কাছ থেকে নিতে চায় না। তাই চিন্তা করছি দেশের বাইরে চলে যাবো। দেশের বাইরে গবেষণার অনেক সুযোগ আছে। আমি এখন পর্যন্ত যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার থিসিস পাঠিয়েছি, সবাই পড়ে মুগ্ধ হয়ে আমাকে তাদের সাথে কাজে নেবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু নিজের দেশে আমার প্রতি সবাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। তাই কষ্ট হয়। আমার দেশেই সম্ভব ছিল অনেক কিছু করার। আমি প্রকৃতির বিপদের পূর্বাভাস দেওয়ার বিশ্বস্ত প্রাণী ব্যাঙ নিয়ে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলামও বলব না। আমি এখনও চাই।
সাত বছর পরে ২০১৮ এর শুরুতে করেছি আরেকটি লিন্ক শেয়ার। এবার শুনতে পাওয়া গেল দেশে ফিরে উচ্চতর গবেষণা করার ইচ্ছা ড. সাজিদ আলী হাওলাদারের।
প্রাণীবিজ্ঞানী সাজিদে মুগ্ধ হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়
ড. সাজিদ আলী হাওলাদার। বাংলাদেশি তরুণ। বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রাণিবিজ্ঞানী। ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র থাকার সময়ে মাত্র ২৬ বছর বয়সে আবিষ্কার করেন ‘ফেজারভেরিয়া আসমতি’ নামের ব্যাঙ। ইংরেজ শাসনামলের পরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এটাই ছিলো নতুন কোনো চতুস্পদী মেরুদন্ডী প্রাণী আবিষ্কারের ঘটনা।
২০১৫ সালে আবিষ্কার করেন ‘ইউফ্লিকটিস কলসগ্রামেনসিস’ ও ২০১৬ সালে ‘জাকেরানা ঢাকা’ নামের আরো দুটি ব্যাঙ। অর্জনের ঝুড়ি এখানেই শেষ নয়। বিশ্বের সরীসৃপ প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে তিনি সর্বকনিষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির কিউরেটর ড. ড্যারেল ফ্রস্টের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
ড. সাজিদ আলী হাওলাদার ‘জাকেরানা’ নামের নতুন এক জাতের ব্যাঙের নামকরণ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ‘ফেজারভেরিয়া’ নামের যে জাতটি দক্ষিণ এশীয় বিভিন্ন ব্যাঙের নামের আগে যুক্ত হতো, সেটাকে বাতিল করে নতুন জাতের প্রচলন ঘটান এই তরুণ গবেষক ও বিজ্ঞানী। এছাড়া ২০১৩ সালে ফিনল্যান্ডের ‘হেলসিঙ্কি কালচারাল ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৩’ লাভ করেন তার বিভিন্ন গবেষণাকর্মের জন্য। অ্যাওয়ার্ডটি জৈব প্রযুক্তি গবেষণার জন্য প্রতিবছর একজনকেই দেয়া হয়। সে বছর আমাদের এই তরুণ প্রাণিবিজ্ঞানী সাজিদই হলেন সেই একজন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত জার্নাল ‘প্লসওয়ান’ সাজিদ আলীর ‘ইউফ্লিকটিস কলসগ্রামেনসিস’ ব্যাঙ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর আগে এ রকম আরেকটি ব্যাঙের নাম ছিল ‘ইউফ্লিকটিস সায়ানোফ্লাইকটি’। ১৭৯৯ সালে সেটি জার্মান প্রকৃতিবিদ জে জি স্কুনেইডারের দেয়া। সাজিদের ব্যাঙটির জিনগত বৈশিষ্ট্য, আকার ও গঠন আগের ব্যাঙটির চেয়ে পৃথক হওয়ায় ‘ইউফ্লিকটিস কলসগ্রামেনসিস’কে নতুন ব্যাঙ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
বরিশালের কলসগ্রাম নামের জায়গা থেকে ব্যাঙটি আবিষ্কৃত হওয়ায় সাজিদ ব্যাঙটির বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে জুড়ে দেন কলসগ্রাম শব্দটি। এছাড়া সাজিদের ‘জাকেরানা ঢাকা’ নামের ব্যাঙটির আবিষ্কারের ঘটনা আরো তাত্পর্যপূর্ণ। ঢাকার মতো প্রবল ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা, যেখানে নগরায়নের ফলে অসংখ্য বন্যপ্রাণি বিলুপ্তির মুখে রয়েছে, সেখান থেকে নতুন বন্যপ্রাণি আবিষ্কার পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা।
সাজিদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলায়। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় জন্ম নেয়া সাজিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ২০১১ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের আগেই ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে জীববিজ্ঞান বিভাগে ব্যাঙের শ্রেণিবিন্যাস বিদ্যার (ট্যাক্সনমি) ওপর গবেষণা করার জন্য আমন্ত্রণ পাঠায়। পরবর্তীতে হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাজিদকে মাস্টার্স ছাড়াই বিশেষ ব্যবস্থায় পিএইচডি শিক্ষার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। এখানেও ‘সাজিদ যাদু’তে মুগ্ধ হন হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো সায়েন্স বিভাগ থেকে তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ‘ইকোলজি এ্যান্ড ইভ্যুলেশন’ বিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এই তরুণ। বর্তমানে পপুলেশন জেনেটিক্স ও ইভোল্যুশন বায়োলজির গবেষক হিসেবে সেন্ট্রাল ফিনল্যান্ডের এভাসকুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউরোপিয়ান সবুজ ব্যাঙের উত্পত্তি ও বিবর্তনের উত্সমুখ খুঁজতে গবেষণার কাজে হাত দিয়েছেন তরুণ এই প্রাণিবিজ্ঞানী।
ড. সাজিদ আলী হাওলাদারের মতে, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ইউরোপের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। বাংলাদেশের একটা অংশ ‘ইন্দো-বার্মা বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট’এর অংশ। তাই বাংলাদেশের প্রাণীদের নিয়ে কাজ করে সারা পৃথিবীতে হৈচৈ ফেলে দেয়ার সুযোগ খুব বেশি। গোটা বিশ্বে প্রাণিবিদ্যা গবেষণায় যে কর্মযজ্ঞ চলছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে আমাদেরকে প্রচুর কাজ করতে হবে।
উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আওতায় স্বতন্ত্র প্রাণী জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেসব জাদুঘরে বাংলাদেশের নতুন প্রজাতি সনাক্তকরণ কাজের পাশাপাশি প্রাণী আবিষ্কার ও উচ্চতর গবেষণার সুযোগ তৈরি হবে। এ ধরনের উদ্যোগ বাইরের দুনিয়ায় বাংলাদেশের সুনাম যেমন বৃদ্ধি করবে, তেমনি দেশের গবেষণার মানকে আরো সামনে এগিয়ে নেবে।
প্রতি বছর অসংখ্য শিক্ষার্থী মেধাবৃত্তি নিয়ে পড়াশুনার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। এর অনেকে আর ফিরে আসেন না। পিএইচডি, পোস্ট-ডক্টরেট, গবেষণা, শিক্ষকতা করে দিব্যি দেশের বাইরে গোটা জীবন কাটিয়ে দেন। সারা জীবন দেশের সাধারণ মানুষের টাকায় পড়াশুনা করে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞানের অধিকারী হয়ে বিদেশে রয়ে যান।
ড. সাজিদ আলী হাওলাদার ফিরে আসবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমি চাই প্রাণিবিদ্যা গবেষণায় বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। পিএইচডি শেষ করেছি, এবার দেশে ফিরতে চাই। আমার সমস্ত জ্ঞান ও শিক্ষা নিংড়ে দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে চাই। সম্ভব হলে শিক্ষকতার পাশাপাশি যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্বতন্ত্র প্রাণী জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করবো, যেটা নতুন প্রজাতি সনাক্তকরণ, আবিষ্কার, সংরক্ষণ ও উচ্চতর গবেষণার একটি তারুণ্য নির্ভর প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে। আমি বিশ্বাস করি, আমার দেশ আমাকে এই সুযোগটি করে দেবে।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।