অনেক বছর আগের কথা। কলকাতার সিটি কলেজে পড়ার সময় থাকতাম ব্যারাকপুর, ফিরতে প্রায়ই সন্ধে হয়ে যেত। দেখতাম, স্টেশনের লাগোয়া বস্তির শ্রমিকেরা ধুনি জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে পোহাতে গলা ছেড়ে গাইছেন ‘আয়েগা মার্কস বাবাকো জমানা’। [...]

অনেক বছর আগের কথা। কলকাতার সিটি কলেজে পড়ার সময় থাকতাম ব্যারাকপুর, ফিরতে প্রায়ই সন্ধে হয়ে যেত। দেখতাম, স্টেশনের লাগোয়া বস্তির শ্রমিকেরা ধুনি জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে পোহাতে গলা ছেড়ে গাইছেন ‘আয়েগা মার্কস বাবাকো জমানা’। সবে মার্ক্সবাদে দীক্ষা নিয়েছি। বসে পড়তাম তাঁদের সঙ্গে। তাঁরা জানেন না, মার্ক্স কোথাকার মানুষ, কী কী বই লিখেছেন তিনি। তবে ভালোই জানেন, মার্ক্স বাবার জমানায় গরিবের রাজত্ব কায়েম হবে, ধনীর ঠাঁই হবে না সেখানে, আর সেই রাজত্ব শুরু হয়ে গেছে রাশিয়ায়, হবে এখানেও।

স্বপ্নেও ভাবিনি, আমিও একদিন যাব রাশিয়ায়, থাকব অনেক দিন, দেখব সেই জমানার সুদিন ও করুণ পতন। ১৯৭৪ সালে মস্কোয় অনুবাদকের একটি চাকরি জুটে যায়, থাকি ২০০০ সাল পর্যন্ত। মার্ক্সের কিছু লেখাও অনুবাদ করি এবং বিস্ময়ে ভেবেছি, একজন মানুষের লেখা কীভাবে শত শত বছরের একটা টেকসই সমাজকে টলিয়ে দিতে পারে। ব্যারাকপুরের শ্রমিকদের কথাও মনে পড়ত। হ্যাঁ, মার্ক্সস বাবার জমানা ঠিকই কায়েম হয়েছে রাশিয়ায়। ধনিক শ্রেণী নেই, উচ্চপদাসীন ও হাতুড়িপেটা মজুর নির্বিশেষে সবারই সাজপোশাক, বাড়িঘর, চলাচল অভিন্ন। বরং বুদ্ধিজীবীদের তুলনায় শ্রমিকদের উপার্জন কিছুটা বেশি এবং অন্যান্য কিছু বিষয়ে তাঁরা অধিক সুবিধাভোগী। পরে অবশ্য বুঝেছি, এ ব্যবস্থাও অসংগতিমুক্ত নয়, ধনী না থাকলেও ধনী-হতে-ইচ্ছুক মানুষের সংখ্যা অনেক, আর বিত্ত সঞ্চয়ের আকাঙ্ক্ষা কতটা দুর্মর।

রাশিয়ায় ১৯৯১ সালে সমাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটলে লোকে যখন মার্ক্সের রচনাগুলো আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করছিল, তখন একদিন আমার কর্মস্থল প্রগতি প্রকাশনে গিয়ে দেখি, বিগত অর্ধশতক কালে অনূদিত বইপত্র নিয়ে বড় বড় গাঁট বাঁধা চলছে, গন্তব্য কাগজকল। বড়ই হতাশ হই। কয়েক দিন পর আমেরিকা থেকে জনৈক বন্ধুর পাঠানো সেখানকার নামী পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের একটি কাটিং পাই, তাতে ছিল রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতনের জন্য মার্ক্সকে দোষী সাব্যস্ত করা এবং তাঁর শিক্ষার অবমূল্যায়ন অযৌক্তিক; মার্ক্স একজন মনীষী, তাঁর আবিষ্কারগুলো চিরায়ত মূল্যধর এবং গোটা মানবজাতির সম্পদ। তারপর দুই দশক অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই দেখা দেয় আরেকটি বিশ্বমন্দা এবং সেই সঙ্গে আসন্ন পরিবেশবিপর্যয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ। লোকে আবার মার্ক্সকে খুঁজতে শুরু করে, এমনকি পরিবেশবাদীরাও, কেননা তিনি মানুষ কর্তৃক মানুষ শোষণ এবং মানুষ কর্তৃক প্রকৃতি শোষণের সমাধান পেয়েছিলেন কমিউনিজমে।

আমি ২০০০ সালে দেশে ফিরি, নানা কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, কিন্তু রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতনের ভাবনা থেকে রেহাই মেলে না। যত সব লেখা পড়ি, আলোচনা শুনি, সবই মনে হয় অঙ্গসংস্থানিক শারীরবৃত্তীয় নয়। মোটা দাগে এমন ধারণাও জন্মেছিল যে সিআইএ নয়, বিশ্বপুঁজিই এই পরিবর্তন ঘটিয়েছে আমাদের অজ্ঞাত কোনো নিয়মে। মনে পড়ত, বিবিসি একসময় প্রায়ই প্রচার করত যে নতুন প্রজন্মের কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় এলেই রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতন ঘটবে। ঘটলও তাই। এই বিবিসিতেই কয়েক মাস আগে ডেভিড হার্ভের একটি সাক্ষাৎকার দেখলাম। তিনি মার্ক্সবাদ নিয়ে গবেষণা করছেন, অতি সম্প্রতি তাঁর দি এনিগমা অব ক্যাপিটাল বইটি প্রকাশিত হয়েছে। যেটুকু মোটামুটি মনে আছে, তা এরূপ—

পুঁজিতন্ত্র আর কত দিন টিকবে, এই প্রশ্নের জবাবে হার্ভে জানান, মহাপ্রলয়ের দিনক্ষণ অনুমান করা গেলেও পুঁজিতন্ত্র বিলুপ্তির কাল নির্ণয় মোটেও সম্ভব নয়। পুঁজিতন্ত্রের বর্তমান সংকটের হেতু সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা, আগামী ৫০ বছর অব্যাহত ৩ শতাংশ কম্পাউন্ড গ্রোথ রেট টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। জ্বালানির প্রচুর চাহিদা, বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশের চাপ এবং নানা সামাজিক কারণে পুঁজিতন্ত্র একসময় অচল হয়ে পড়বে, প্রবৃদ্ধির হার শূন্যের কোঠায় পৌঁছাবে।

প্রশ্নকারীর জিজ্ঞাসা, কিন্তু কোনো আন্দোলন হচ্ছে না কেন? লোকজন তো নিশ্চিন্তই আছে, আরও সুখের স্বপ্ন দেখছে। হার্ভে বললেন, সবই সত্য। কিন্তু এ সুখ দীর্ঘস্থায়ী হবে না। এখনই চিন্তাভাবনার সময়, কাজ শুরু করা প্রয়োজন। প্রশ্ন: আপনি কি কমিউনিজম চান? উত্তর: অবশ্যই, তবে রাশিয়ার মডেল নয়। চাই বিকেন্দ্রীকরণ, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নানা ধরনের কাজের স্বাধীনতা। প্রশ্ন: পুঁজিতন্ত্র কি সর্বদাই অনিষ্টকর? উত্তর: না, একদা অবশ্যই সৃজনশীল ছিল, বিরাট একটা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে, কিন্তু এখন চলছে অর্থ দিয়ে অর্থ বাড়ানোর খেলা। প্রশ্ন: তা হলে সভ্যতার ভবিষ্যৎ কী? উত্তর: পুঁজিতন্ত্রের পতন ঘটবে, জ্ঞাত ধরনের বাইরে অন্যতর কোনো এক ধরনের কমিউনিজমের জন্ম হবে।

হার্ভে ছিলেন টিভিপর্দায়, আমি আমার ঘরে, তাই তাঁকে দুটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসার কোনো সুযোগ ছিল না। জিজ্ঞাসা দুটি: ১. চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পূর্ব জার্মানির মতো এককালের বিকশিত পুঁজিতান্ত্রিক শিল্পোন্নত দেশে রুশ সমাজতন্ত্রের মডেল চাপিয়ে না দিলে কি সেসব দেশে টেকসই সমাজতন্ত্রের কোনো মডেল জন্মায়? ২. পুঁজির মজ্জাগত স্বভাব কি এই যে, সে নির্বিশেষ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আবদ্ধ থাকে না, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হওয়াই তার গন্তব্য? জানি না, হার্ভের লেখা বইগুলোয় এসবের উত্তর আছে কি না।

(প্রথম প্রকাশ : প্রথম আলো)

দ্বিজেন শর্মা

জন্ম ১৯২৯, সিলেট। উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক (ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল ও নটর ডেম কলেজ, ঢাকা); অনুবাদক, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো; শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক। বসবাস ঢাকায়। শখ : উদ্যান পরিকল্পনা।

১০ comments

  1. সবজান্তা - ১ জানুয়ারি ২০১১ (১:২৮ পূর্বাহ্ণ)

    মুক্তাঙ্গনে আমি নিয়মিত না, তাই ঠিক জানি না আপনি এখানে নিয়মিত লিখেন কি না। তবে আপনার নাম দেখে খুব ভালো লাগলো।

    আমার বয়েসি অনেকের স্মৃতিতেই খুব নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে রাদুগা আর প্রগতি। সমাজতন্ত্রের পতনের চেয়েও আমার বেশি দুঃখ এই দুই প্রকাশনী বন্ধ হয়ে যাওয়াতে। কী সব চমৎকার সেই বইগুলি !

    আপনার এই লেখাটা খুব ভালো লাগলো। আমার মনে আছে বেশ কয়েক বছর আগে নীলক্ষেতে হাঁটার সময়, ফুটপাথে একটা বইয়ে চোখ আটকে গিয়েছিলো। আপনার লেখা — মম দুঃখের সাধন। যদি স্মৃতি প্রতারণা না করে, তবে সেই বইয়ের বিষয়বস্তুও তো কাছাকাছিই ছিলো। আর মনে পড়ে গেলো সুনীলের লেখা, ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ – এর কথা। এতো মানুষের স্বপ্নের সমাজ ব্যবস্থা কেন ভেঙ্গে গেল, তার থেকে সম্ভবত আমাদের সবারই অনেক কিছু শেখার আছে।

    আপনার আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।

    পুনশ্চ: আরেকটা খুবই অফটপিক প্রশ্ন, জানি না কীভাবে নেবেন — রাদুগা কিংবা প্রগতির কোন বই কি কোথাও অক্ষত আছে? সংগ্রহে রাখার জন্য বইগুলি খুঁজছি আমি বহুদিন। নিজের কেনাগুলি ছিঁড়ে গিয়েছে, নয়তো হারিয়ে। যদি কোন সন্ধান দিতে পারেন তো বড়ই উপকার হয়।

    • রায়হান রশিদ - ৭ জানুয়ারি ২০১১ (১১:৩৪ অপরাহ্ণ)

      @ সবজান্তা,
      ঠিক এই কথাগুলোই ভাবছিলাম, আপনি লিখে ফেললেন। ছোটবেলার একটা পুরো সংগ্রহ পোকায় কেটেছে, সেই থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি ‘পিতা ও পুত্র’, ‘ভয়ংকর দুঃসাহসিক অভিযান’, ‘উভচর মানুষ’, ‘রূপের ডালিখেলা’র মতো আরও ডজন ডজন প্রিয় বই। একটু বড়ো হয়ে যে বইগুলো পুরনো বইয়ের দোকান আর চট্টগ্রাম নিউ মার্কেটের মনিষা বুকস্টল থেকে সংগ্রহ করেছিলাম সেগুলোও আর হাতের নাগালে নেই। সুন্দর বাঁধানো মলাটের প্রগতি, রাদুগা আর মীর – এর বইগুলো খুব মিস্ করি, হাতে নিতে ইচ্ছে করে। রেজাউল করিম সুমন এর প্রতি সে কারণে বিশেষ ঈর্ষা বোধ করি মাঝে মাঝে, কিভাবে‍ যেন বইগুলো ও ধরে রেখেছে এতো বছর পরও। আশা করছি সুমনই সবচেয়ে ভালো খোঁজ দিতে পারবে‍, এই লুপ্তধন এর। ‍

      • সাগুফতা শারমীন তানিয়া - ৯ জানুয়ারি ২০১১ (৭:০৩ পূর্বাহ্ণ)

        রায়হানভাই, আমার কাছে পিতা-পুত্র এবং উভচর মানুষ আছে, খুঁজলে পাওয়া যাবে বনের গান কিংবা মালাকাইটের ঝাঁপি, কিন্তু কিছুতেই দেব না কাউকে!

        এই প্রকাশনাগুলি আমাদের একসময়ের প্রজন্মের শৈশবকৈশোরের আরেক নাম। সেইরকম মূল্যবান। সেইরকম শুদ্ধস্বরের বিলাবল।

  2. অরণি সেমন্তি - ১ জানুয়ারি ২০১১ (৯:৩২ পূর্বাহ্ণ)

    আমি ১১ শ্রেণীর ছাত্রী। আমি এখন জানতে চাই আপনার লেখার শেষের প্রশ্নগুেলার উত্তর আমি কোথায় পাবো। আ্পনার সাহায্য কাম্য ।

  3. মোশাররফ - ১ জানুয়ারি ২০১১ (১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ)

    কোন মডেল অনুসরণ না করলেও রাশিয়ার সফলতা ও পতনের সঠিক বিশ্লেষণ নিয়ে সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের দলের কাজ এর মাঝেই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে। অথচ আমরা তা থেকে দুরে থেকে উত্তর খোজার চেষ্টা করছি।
    সমস্ত ধরনের মালিকানা বিলোপেই সাম্যবাদ আসবে। পুজির বিলোপ না ঘটিয়ে কি পুজিবাদ বিলুপ্ত হবে?

    • অরণি সেমন্তি - ২ জানুয়ারি ২০১১ (১১:০১ পূর্বাহ্ণ)

      সঠিক বলতে আপনি ঠিক বোঝাচ্ছেন? আমি কিভাবে বুঝবো কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক?

      • অবিশ্রুত - ৮ জানুয়ারি ২০১১ (১২:০৫ পূর্বাহ্ণ)

        খুব কঠিন প্রশ্ন করেছেন আপনি অরণি সেমন্তি — সঠিক না বেঠিক কীভাবে বোঝা যাবে! একইরকম কঠিন প্রশ্ন, সঠিক না বেঠিক তা কীভাবে বোঝানো যাবে!

        এইসব বোধহয় মানুষকে তার চলার পথের মধ্যে থেকেই খুঁজে নিতে হয়, জীবনজিজ্ঞাসার মধ্যে দিয়ে জেনে নিতে হয়। আবার সেই জিজ্ঞাসা যেন, এই ব্লগেরই একটি লেখায় মাসুদ করিম যেমনটি লিখেছেন, তর্কগ্রস্ত মানুষের জিজ্ঞাসা না হয়ে ওঠে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়।
        একেক মানুষের আদর্শের বুনিয়াদ গড়ে ওঠে একেকভাবে, সেই নিরিখে সঠিক-বেঠিক-এর সংজ্ঞাও বদলে যায় বটে। কিন্তু আদর্শের সাংস্কৃতিক বুনিয়াদটি যদি পাকাপোক্ত হয়, তা হলে সেই আদর্শকে মানতে না পারলেও শ্রদ্ধাবনত চোখে তাকাতে হয়। ডিকেন্স-এর টেল অব দ্য দু সিটিস বইয়ের কথাই চিন্তা করুন — নতুন সমাজের নতুন নতুন মূল্যবোধ গড়ে উঠছে, সেগুলি মানুষকে আকৃষ্ট করছে, পুরানো মূল্যবোধগুলিকে আমরা সমর্থন করছি না, কিন্তু তারপরও নিজের অজান্তেই অভিজাত-চিন্তার নিগড় থেকে উঠে আসা বন্ধুত্বের দৃষ্টান্তে কিছুক্ষণের জন্যে অভিভূত হয়ে পড়ি।

        নিজেকে এবং মানুষকে আবিষ্কার করার মধ্যে দিয়েও মানুষ সঠিক-বেঠিক বিষয়গুলি বুঝতে শেখে। সমাজ, রাজনীতি এবং অর্থনীতির প্রত্যয়গুলি শেখার মধ্যে দিয়ে তা শাণিত হয় বটে, কিন্তু তা প্রাণহীন হয়ে পড়ে — যদি না তা পথ চলার মধ্যে দিয়ে শেখা যায়। একেক সমাজের মূল্যবোধ একেকরকম, তাই এক সমাজের সঠিক-বেঠিক বিষয়গুলি অন্য সমাজে উল্টোরকমও হয়ে যেতে পারে। এমনকি একই সমাজের মধ্যেও এরকম ঘটে, পুরানো মূল্যবোধের মানুষ ব্যক্তিগত সাংস্কৃতিক রুচির ঔদার্য্য ও বৈচিত্র্যপ্রিয়তার কারণে নতুন মূল্যবোধের মধুরতা বুঝতে পারে। নিজের জীবনে তা প্রয়োগ না করলেও অন্য কেউ যখন সেটি প্রয়োগ করে, তখন সেটিকে প্রশ্রয় দিয়ে থাকে, সহনশীলতা দেখিয়ে থাকে এবং এইভাবে নিজেরই মৃত্যুকূপ খনন করে। মানুষকে আমরা একই ছাঁচে ফেলব কেমন করে আর মানুষকে আমরা একই ছাঁচে ফেলব কি না — চিন্তার এই দ্বন্দ্ব আগেও ছিল, এখনো আছে।

        এক লেখকের ফ্ল্যাপে পড়েছিলাম, বলছেন তিনি — ‌’তিন ধরণের কোলাহল আমার খুবই প্রিয় — মানুষের কোলাহল, সমুদ্রের কোলাহল, ছাপাখানার কোলাহল’। মাঝে-মধ্যেই মনে হয় ওই কথাটা। ওই কোলাহলপ্রিয় মানুষটি যে একইসঙ্গে সঙ্গপ্রিয়, নির্জনতাবাদী ও কর্মমুখর, সেটি বুঝতে অসুবিধা হয় না। মানুষও এইরকম — জগতের বিশাল যজ্ঞে সে একেকদিন একেক রূপে উদ্ভাসিত।

        আমার মনে হয়, আপনি নিজেই আপনার প্রশ্নের জবার খুঁজে পাবেন।

  4. মাসুদ করিম - ২ জানুয়ারি ২০১১ (২:৩৯ অপরাহ্ণ)

    প্রশ্ন: তা হলে সভ্যতার ভবিষ্যৎ কী? উত্তর: পুঁজিতন্ত্রের পতন ঘটবে, জ্ঞাত ধরনের বাইরে অন্যতর কোনো এক ধরনের কমিউনিজমের জন্ম হবে।

    অর্থনীতির জ্ঞান ও রাজনীতির বিজ্ঞান নিয়ে আমাদের যাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, আমরা যারা সাধারণ পাঠক ও লেখক — সেই আমরাই যখন এসব কঠিন বিষয় নিয়ে আলাপ করি, তখন বড় বেশি শুভবোধে আমরা আক্রান্ত থাকি — আমার আশা প্রকাশ করি একদিন আমাদের কাম্য পৃথিবী আমরা পাব, আবার তাত্ত্বিকরাও যখন সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কথা বলেন তখন তারাও দেখা যায় এক ধরনের শুভবোধের আকাঙ্ক্ষা থেকে আমাদের সভ্যতার ভবিষ্যতের অমঙ্গলের পরাজয় ও মঙ্গলের জয় ঘোষণা করেন। যেমন ওপরের প্রশ্নোত্তরে হার্ভে পুঁজিবাদের পতন ঘটবে এবং নতুন এক ধরনের কমিউনিজমের উদ্ভব হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পুঁজিবাদের পতন কীকরে ঘটবে? প্রবৃদ্ধির মাত্রা শূন্য হলে কোনোদিন তখন পুঁজিবাদের পতন ঘটবে? তাহলে প্রবৃদ্ধি শূন্য হলেই পুঁজি বলে আর কিছু থাকবে না? তাহলে সেদিন যেদিন প্রবৃদ্ধি শূন্য হবে সেদিন মানুষের চলবে কীকরে? মানুষের কি সেদিন আর আয় রোজগার করতে হবে না? না কি আয় রোজগার ধীরে ধীরে ছেড়ে দিয়ে মানুষ সেই শূন্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে এখন থেকে এগিয়ে যাবে? মানুষের জমি লাগছে না, সম্পদ লাগছে না, পুঁজি তৈরি করতে হচ্ছে না — মানুষ শুধু জন্ম নিচ্ছে আর জীবনযাপন করছে — মানুষের সাধনার সেই শিখরে মানুষ যেদিন পৌঁছবে সেদিনের মানুষগুলোর জীবনটা কেমন হবে কে জানে? আমরা শুধু জানি ‘জমি সম্পদ ও পুঁজি’ ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়ে রাষ্ট্রকে দিলে এবং সেই ‘জমি সম্পদ ও পুঁজি’র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কমিউনিস্ট পার্টির হাতে দিলে ‘জমি সম্পদ ও পুঁজি’র বিলোপ হয় না — সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপ, চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা, উত্তর কোরিয়ার জন্ম হয় শুধু, — এখন আমাদের লক্ষ্য যদি হয় ‘জমি সম্পদ ও পুঁজি’র বিলোপ তাহলে সেবিলোপ কীকরে ঘটবে আমার কেউ জানি না, তাহলে আমরা কী অপেক্ষা করছি সেই বিলোপের… কখন ঘটবে? নাকি পৃথিবীর ধ্বংস বা মানবজাতির ধ্বংসের মধ্য দিয়ে তা ঘটবে? আমরা জানি না, আমরা চলি!

  5. manifesto - ২৪ জানুয়ারি ২০১১ (২:৫৪ পূর্বাহ্ণ)

    নতুন কিছু ভাবার উপাদান পেলাম আপনার লেখায়। আশা করি সামনে এমন আরো লেখা পড়তে পারব।

  6. মাসুদ করিম - ২৪ জানুয়ারি ২০১১ (১০:৪৫ অপরাহ্ণ)

    Perhaps the truth is that Marxism has, despite its founder’s famous proclamation, always contributed more to understanding the world than to changing it. Certainly, Eric Hobsbawm has done more than most to further that understanding. And if we ask what his own final view may be about the prospects for changing the world, then we are, happily, still in a position to adapt Zhou Enlai’s answer about the French revolution – that it’s too early to say.

    সম্প্রতি প্রকাশিত Eric Hobsbawm-এর বই How to Change the World: Tales of Marx and Marxism-এর রিভিউতে ওপরের কথাগুলো লিখেছেন Stefan Collini। গার্ডিয়ানে প্রকাশিত রিভিউটি বিস্তারিত পড়ুন এখানে

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.