বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ নানা খ্যাতিমান লোকদের বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামাত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি প্রসঙ্গে বিভ্রান্তি মূলক মতামতে সবাই বিস্মিত হলেও এটা অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। এই বিষয়ে আমি একটি ছোট্ট ঘটনা আলোকপাত করে কিছু বলতে চাই। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ১/১১-এর পরে সেনা সমর্থিত অনির্বাচিত সরকারের প্রতি বাংলাদেশের প্রধান সারির গণমাধ্যমের সমর্থন দেখে মিডিয়া ও রাজনীতি বিষয়ে আমার আগ্রহ জন্মায়। Noam Chomsky'র বই Manufacturing Consent ও Media Control পড়ে আমি যথেষ্ট উপকৃত হই। পছন্দের মানুষ হিসেবে ব্যক্তিগত আগ্রহে Noam Chomski-এর সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করি এবং তাঁকে তৎকালীন বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে আমি জানতে চাই আমাদের কিভাবে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা উচিত। কয়েকবার কথোপকথনের পর তিনি আমাকে জানালেন, বাংলাদেশ বিষয়ে তাঁর খুব ভালো ধারণা নেই। এরপর তিনি আমাকে তাঁর চেনা কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আলোচনা করতে বলেন, যাঁরা সবাই কম-বেশি ভারত ও পাকিস্তানের পিএইচডি-করা রাজনৈতিক তাত্ত্বিক এবং এই বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। বেশির ভাগই ইউরোপ আমেরিকায় অধ্যাপনা, সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত। আমি ভড়কে গিয়ে খুব বেশি দূর আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাইনি। আমার মানুষগুলো নিয়ে কোন আপত্তি নেই। তবে, একটি বিষয় আমাকে একটু ভাবিয়েছিল -- নোম চমস্কির মতো একজন মানুষ যিনি ইসরায়েল/প্যালেস্টাইন/আমেরিকা তথা আরব মুসলিম সমস্যা নিয়ে এতো সোচ্চার, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিনীদের কট্টর সমালোচক, গণমাধ্যমের রাজনৈতিক চরিত্র বিষয়ে অনন্যসাধারণ গবেষক -- তিনি বা তাঁর মতো অনেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির বিষয়ে জানতে পারেন বা জেনে থাকেন ভারত ও পাকিস্তানের কলম দিয়ে। অবশ্য রাজনীতিবিদ বা তাঁদের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর ব্যাপারটা অন্যরকম। পাকিস্তানের ইস্যুতে ভারতের নানা দরদ আছে, যেহেতু তারা নিজেদের একধরনের জমজ ভাই হিসেবে দেখে। কিন্তু বাংলাদেশ ইস্যুতে তাদের উভয়ের আচরণটা সবসময় বৈমাত্রেয়। পাকিস্তান তো রীতিমতো বাংলাদেশকে অবাঞ্ছিত মনে করে। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম, আমরা যে নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুকে জাতীয় নেতার সম্মান দিই ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে, তাঁরই ভাইয়ের (শরৎ বসু) নাতনী শর্মিলা বসু কি করে Dead Reckoning: Memories of the 1971 Bangladesh War (যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত) বইটি লেখেন, যেখানে পাকিস্তানী শাসকদের বয়ান থেকে বাংলাদেশের যুদ্ধকে তিনি নানাভাবে ভুল ব্যাখা করেছেন? একারণে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোতে বাহবা পেলেও ভারতে (কিছু অংশে) এবং আমাদের দেশে সমালোচিতও হয়েছেন। শোনা…
শ্যামলালদের পকেট অচর্চিত অশিক্ষিত হাঁকমারা শিল্পকর্মে ঠাসা।[...]
করিবে করিতেথাকিবে করিতেথাকিতেহইবে। শিখিবারকিছুনেই শিখিবারকিছুপ্রয়োজননেই শিখিবারকিছুপ্রয়োজনথাকিতেপারিবেনা। এই হল আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনে নৃত্যাদি গানাদি নাটকাদি চলচ্চিত্রাদি দৃশ্যশিল্পাদি সাহিত্যাদির সাম্প্রতিক কয়েক দশকাদির করুণ অবস্থা। এভাবে চললে তবেই না বিপুল মানুষের অনন্ত সম্ভাবনার সার্বজনীন চাতাল সদাভাষ্যগ্রস্ত কর্মচঞ্চল শোকেস হয়ে উঠবে। এটা খুবই লজ্জাজনক আজ সকলেই সকল কিছু পারার যুগ, আজ সকলেরই ন্যূনতম পিড়িবিদ্যা না শেখার যুগ। আমাদের ক্লাশে একটি নূতন ছাত্র আসিয়াছে। সে আসিয়া প্রথম দিনই সকলকে জানাইল, "আমি পোইট্রি লিখতে পারি !" একথা শুনিয়া ক্লাশের অনেকেই অবাক হইয়া গেল; কেবল দুই-একজন হিংসা করিয়া বলিল, "আমরাও ছেলেবেলায় ঢের ঢের কবিতা লিখেছি।" নতুন ছাত্রটি বোধহয় ভাবিয়াছিল, সে কবিতা লিখিতে পারে শুনিয়া ক্লাশে খুব হুলুস্থুল পড়িয়া যাইবে এবং কবিতার নমুনা শুনিবার জন্য সকলে হা হা করিয়া উঠিবে। শেষ পর্যন্ত এই পোইট্রি বা কবিতা কিভাবে নাজেহাল হয়েছিল সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’র পাঠক মাত্রই তা জানেন। ইন্স্পেক্টর ইস্কুল দেখিতে আসিলেন। প্রায় বিশ-পঁচিশটি ছেলে সাবধানে পকেটের মধ্যে লুকাইয়া কবিতার কাগজ আনিয়াছে। বড় হলের মধ্যে সমস্ত স্কুলের ছেলেদের দাঁড় করানো হইয়াছে, হেডমাস্টার মহাশয় ইন্স্পেটরকে লইয়া ঘরে ঢুকিতেছেন— এমন সময় শ্যামলাল আস্তে আস্তে পকেট হইতে একটি কাগজ বহির করিল। আর যায় কোথা ! পাছে শ্যামলাল আগেই তাহার কবিতা পড়িয়া ফেলে, এই ভয়ে ছোট বড় একদল কবিতাওয়ালা একসঙ্গে নানাসুরে চীৎকার করিয়া যে যার কবিতা হাঁকিয়া উঠিল। মনে হইল, সমস্ত বাড়িটা কর্তালের মতো ঝন্ঝন্ করিয়া বাজিয়া উঠিল, ইন্স্পেক্টর মহাশয় মাথা ঘুরিয়া মাঝ পথেই মেঝের উপর বসিয়া পড়িলেন। ছাদের উপর একটা বিড়াল ঘুমাইতেছিল, সেটা হঠাৎ হাত পা ছুড়িয়া তিনতলা হইতে পড়িয়া গেল, ইস্কুলের দারোয়ান হইতে অফিসের কেশিয়ার বাবু পর্যন্ত হাঁ হাঁ করিয়া ছুটিয়া আসিল। সকলে সুস্থ হইলে পর মাস্টার মহাশয় বলিলেন, "এতো চেঁচালে কেন?" আমাদের সুকুমারবৃত্তির ডোবাখানায় আজ খালি হাঁকডাক চেঁচামেচি। একজন রাজমিস্ত্রির যে গাঁথুনিবিদ্যা লেখকের তা নেই, একজন রঙমিস্ত্রির যে প্রলেপবিদ্যা একজন চিত্রশিল্পীর তা নেই, একজন ঠেলাগাড়িওয়ালার যে চলনবিদ্যা একজন সঙ্গীতশিল্পীর তা নেই। নেই, নেই, নেই। কারণ একটাই রাজমিস্ত্রির রঙমিস্ত্রির ঠেলাগাড়িওয়ালার করণকৌশল শেখা আছে সুকুমারবৃত্তির ডোবাখানাবাহিনির তা নেই – তা থাকার দরকারও নেই – করণকৌশল জানা না থাকলে রাজমিস্ত্রির রঙমিস্ত্রির ঠেলাগাড়িওয়ালার কাজ জোটে না – কিন্তু সুকুমারভোম্বলদের কোনোকিছুই জানা থাকার কোনো প্রয়োজন…
আমাকে এখন একটু মরতে দিন। [...]
আমি যে বেঁচে আছি এটা আমার সমস্যা নয় অমরত্বের সমস্যা। আমি মরতেই চেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে টেনে টেনে আত্মার সূত্র ধরে ক্লান্তিহীন ভাবে চারিদিকে একাকার করে রাখা হল। এতে কার লাভ হল কার ক্ষতি হল এপ্রশ্ন তোলার কোনো অধিকার আজ আমার নেই, আর আমার নিজের কী লাভ হল কী ক্ষতি হল এপ্রশ্ন তোলার মতো বোধবুদ্ধি তো আজ আমার অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। এটি একটি চরম বিপর্যয় কথা নেই বার্তা নেই সময় নেই অসময় নেই যখন যার যেখানে ইচ্ছে আমাকে স্রেফ নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমি কে? এপ্রশ্নটাই আজ পৃথিবীর সবচেয়ে অবান্তর প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। ইংরেজের স্কুল ছেড়েছিলাম খুব সহজ কারণে, কারণ এটা আমার কাছে জলের মতো পরিস্কার ছিল ঠাকুরবাড়ির স্কুলটাই আমাকে গড়ে তুলবে, ঠাকুরবাড়ির স্কুলটাতেই আমার স্ফূর্তি আর আমি যা যা পড়তে চেয়েছি শিখতে চেয়েছি ঠাকুরবাড়ির স্কুলটাতেই তার অপূরণীয় সনিদর্শন ব্যবস্থা ছিল। অনেকে শান্তিনিকেতন নিয়ে মহাতোড়জোড়ে আমাকে গুরুদেব পর্যায়ে পর্যবসিত করে – সেই আমাকে ভুল বিবেচনার শুরু, শান্তিনিকেতন, কোনো কারণ ছাড়াই ঠাকুরবাড়ির স্কুলটারই অধিকতর সম্প্রসারণ, নিজের পড়াশুনার ধরনটাকেই অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার
চেষ্টা, তাকে একটা জনহিতকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা – সেই হিতকরতা আরো দূরে ছড়াল না, কেউ একে মডেল ধরে এগিয়ে গেল না – ওই শান্তিনিকেতন শান্তিনেকেতন হয়েই পড়ে রইল – আমিও ওই গুরুদেব পর্যন্ত উঠে নির্বাসিত হলাম। স্বাধীনতার কথা বলব না। ওই পথে বাংলার পরিবার থেকেই মানা। আমরা সেই মানাকে আজো রদ করতেই পারলাম না। জীবনের কাছে যতদিন ছিলাম জীবনটাকে নিংড়ে নিঃশেষ করে সৃষ্টির কাজে নিজেকে রাখতে পেরেছি সেটাই সার্থকতা – যদিও ওই সার্থকতা সম্পূর্ণ বিফলও হতে পারত। কারণ জীবনের ধরনটাই এমন, কখনো হাজার চেয়েও হাজার তাকিয়ে থেকেও নির্বিকল্প পথে হেঁটেও প্রাচীন বৈরিতার দেয়ালের অমোঘতার কাছে জীবনকে লাঞ্চিত হতে হয়। আমাকে এখন একটু মরতে দিন। ও, অমরত্ব। ও, পাঠক। ও, শিল্পী। ও, গায়ক। ও, কর্মবীর। ও, নায়ক। ও, রাজা। আমাকে একটু মরতে দেবেন? আরো গোপন ডায়েরি : আসব আগের দিন আজ যাই : মনমোহন সিংয়ের গোপন ডায়েরি পুতুল প্রতিভা : মওদুদ আহমেদের গোপন ডায়েরি চাণক্য নই : প্রণব মুখার্জির গোপন ডায়েরি কই মাছের প্রাণ : এরশাদের গোপন ডায়েরি এক বিয়োগ…
মেয়েকে ইতিহাসের গল্প শোনাতে গিয়ে যখন হোঁচট খাচ্ছিলাম তখন কেবলই ভাবছিলাম -- গল্পটা একটা নতুন প্রজন্মের জন্য কতটা জরুরি। এই কম্পিউটার ডিজিটাইজেশনের যুগে ইতিহাসকে কত সহজে আর কত দ্রুতই-না ছেলেমেয়েদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। [...]
আমার ছয় বছর বয়েসী মেয়ে পড়ে ১ম শ্রেণীতে। দেশের গানগুলো কেন যেন তার কাছে খুব প্রিয়। প্রায়ই তার অনুরোধে আমাকে জাতীয় সংগীত গেয়ে শোনাতে হয়। তার সঙ্গে অন্যান্য দেশের গান আর রবীন্দ্র সংগীত। আজ ২৬শে মার্চ ২০১৩। দেশের গানে ঘুম ভেঙেছে আমাদের। বিছানা ছেড়ে, শোলায় বানানো শহীদ মিনারটায় দুটো গোলাপ রেখে শহীদের জন্য প্রার্থনা করলাম আমরা দু’জন। তারপর দু’জনে মিলে একে একে গাইলাম অনেকগুলো গান। গান গেয়ে মন ভরছিল না, ভাবলাম মেয়েকে গল্প বলি। যুদ্ধের গল্প, স্বাধীনতার গল্প। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করব ? ব্রিটিশ শাসনের শুরু ? নাহ্, তার আগের পটভূমি থেকে শুরু করাই বোধ হয় ভাল হবে। তৎকালীন রাষ্ট্র আর তার শাসন ব্যবস্থা, শাসকদের ভূমিকা, প্রজা, অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে রাজা-প্রজার সম্পর্ক, দেশের সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্য আরো কত কী! তারপর আসবে ব্রিটিশ আগ্রাসন। নাহ্, মাথাটা গুলিয়ে উঠল একেবারে। “ফকির মজনু শাহ্” ছবিটা নেট থেকে নামানোর ফরমায়েশ করলাম ছোটকে। আমি “ফকির মজনু শাহ্” দেখেছিলাম – যখন ১ম শ্রেণীতে পড়ি। ঢাকায় বিমান বাহিনীর শাহীন সিনেমা হলে। শৈশবের পড়ন্ত বেলাগুলো মায়ের কোলে শুয়ে ‘সোভিয়েত নারী’ পত্রিকার শিশু পাতার গল্প শুনে কাটিয়েছি। এই চালশে বয়েসে এসে যখন ভাবি তখন উপলব্ধি করি, ন্যায়-অন্যায় বোধ আর ভালো-মন্দ বিচারের যে-ক্ষমতা আমার ভেতর ‘কিশলয়’ থেকে ‘মহীরূহ’ হয়ে উঠেছে, তার পেছনে বড় একটা অবদান ঐ গল্পগুলোর। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বইপত্র পড়বার প্রত্যয়টা ঐ পথেই শুরু হয়েছিল। আজ হঠাৎ করেই যেন আমাদের দেশের শিশুতোষ পত্রিকা আর বইপত্রগুলোর ভোল্ পালটে গেল! শওকত ওসমান, আবদার রশীদ, আলী ইমাম – এঁদের লেখা শিশুতোষ গল্পগুলো যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। রুশ-বাংলা বইপত্রগুলো ছাপা বন্ধ হয়ে গেছে আশির দশকেই। মাধ্যমিক ক্লাসে বাংলা পড়াতেন রিফাত আরা ম্যাডাম আর আখতার জাহান ম্যাডাম। শীত, গ্রীষ্ম আর উৎসবের ছুটিতে যখন স্কুল বন্ধের নোটিশ আসত ক্লাসে – একই সঙ্গে আমাদের এই দুই শিক্ষিকা নোটিশ করতেন – বন্ধে যেন কিছু প্রবন্ধ আর সাহিত্য পড়া হয়। ছুটি শেষে ক্লাস শুরু হলে, খোঁজ নিতেন – কী পড়েছি। আজকাল শুনছি স্কুল শিক্ষকেরা কেবল ‘এ+’ এর খোঁজ খবরই নেন। চকোলেট কারখানার চকোলেটের মতো তাঁরা ‘এ+’ পাওয়া মেধাবী ছাত্রছাত্রী উৎপাদন করেন মাত্র, মেধা বিকাশের খোঁজখবর রাখার সময় কোথায়!…
নীল মলাটের ছোট্ট একটা বই। ১৪৯ পাতার মধ্যেই শেষ। কিন্তু শেষ হয়ে গেলেও মুগ্ধতা শেষ হয না। তোত্তোর সঙ্গে কাটানো ১৪৯টা পাতায় ফিরে যাই বারবার। যেন আমাদের অব্যক্ত শৈশব লেখা হযে গেছে তেৎসুকো কুরোয়ানাগির কলমে। [...]
‘তোত্তো-চান’, তেৎসুকো কুরোয়ানাগি, ছবি : চিহিরো ইবাসাকি, অনুবাদ: মৌসুমী ভৌমিক, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, ইন্ডিয়া, ২০০০ . . . জাপানের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব তেৎসুকো কুরোনায়াগির (জন্ম ১৯৩৩) ছোটবেলার স্মৃতিকথা ‘তোত্তো-চান’ (১৯৮১)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার জাপানের টোকিও শহরের ঘটনা। এতে তেৎসুকোর শৈশবের সঙ্গে রয়েছে অন্যরকম একটি স্কুলের গল্প, রেলগাড়ির বাতিল কামরাগুলো ছিলো যার ক্লাসরুম। খোলামন আর স্বাধীনভাবে কিছু করার অধিকার শিক্ষার উত্তম মাধ্যম – মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোসাকু কোবায়াশি (মৃত্যু ১৯৬৩)। স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে একজন আদর্শ শিক্ষাবিদের আরাধ্য শিক্ষাব্যবস্থার অনন্যসাধারণ নানা দিক । জাপানি ভাষায় প্রকাশের প্রথম বছরেই বিক্রি হয়েছিলো ৪৫ লক্ষ কপি। নানা ভাষায় অনূদিত ‘তোত্তো-চান’ সারা পৃথিবীর লক্ষ মানুষের মন জয় করেছে। মূল জাপানি ভাষা থেকে প্রথম বাংলা অনুবাদ বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হলেও সেটা ছাপা নেই বলে জানা গেছে। অবশেষে শিল্পী গবেষক মৌসুমী ভৌমিকের অনুবাদে আমরা বাংলায় বইটি পড়বার সুযোগ পেয়েছি। নীল মলাটের ছোট্ট একটা বই। ১৪৯ পাতার মধ্যেই শেষ। কিন্তু শেষ হয়ে গেলেও মুগ্ধতা শেষ হয না। তোত্তোর সঙ্গে কাটানো ১৪৯টা পাতায় ফিরে যাই বারবার। যেন আমাদের অব্যক্ত শৈশব লেখা হযে গেছে তেৎসুকো কুরোয়ানাগির কলমে। আজ আপনাদের তোত্তো-চানের গল্প শোনাবো। আশা করি ভালো লাগবে তোত্তো-চানের ছেলেবেলা আর হেডমাস্টারমশাই সোসাকু কোবায়াশির স্বপ্ন ‘তোমোই গাকুয়েন’কে। ২ সাত বছরের ছোট্ট তোত্তো-চানকে নিয়ে জিয়ুগায়োকা স্টেশনে নেমেছেন মা। ওকে নতুন স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত। কিন্তু তোত্তোর সেসব চিন্তা নেই। টিকিট চেকারের টিকিট ভর্তি বাক্স দেখেই তোত্তো ভুলে গেলো ক’দিন আগেই সে হতে চেয়েছিল গুপ্তচর। মাকে বললো, “ধরো, এমনিতে আমি টিকেট বিক্রি করি, কিন্তু আসলে আমি একজন গুপ্তচর।” আবার রাস্তার বাজনাওয়ালাদের দলেও তার থাকা চাই, পুরোনো স্কুলের জানালায় দাঁড়িয়ে রোজ যাদের কাছে বাজনা শুনবার আবদার করত। আরো কত কী যে ওর ভালো লাগতো। ওর খুব ভালো লেগেছিল স্কুলের ঢাকনাওয়ালা ডেস্ক যার ভেতরে অনায়াসে ভরে ফেলা যায় রাজ্যের সব জিনিস, আর ডেস্কের ঢাকনা খুলে ভেতর থেকে সেসব বের করা আর ঢোকানোও ছিল ভারী আনন্দের। দিদিমণির পড়ানোর চেয়ে ওর ভালো লাগতো কার্নিশে বসে থাকা সোয়ালো পাখিদের সঙ্গে কথা বলতে। ছবি আঁকার সময়ও কল্পনার আকাশ হয়ে উঠতো সবুজ, আকাঁর খাতা…