বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ নানা খ্যাতিমান লোকদের বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামাত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি প্রসঙ্গে বিভ্রান্তি মূলক মতামতে সবাই বিস্মিত হলেও এটা অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। এই বিষয়ে আমি একটি ছোট্ট ঘটনা আলোকপাত করে কিছু বলতে চাই।
২০০৭ সালে বাংলাদেশে ১/১১-এর পরে সেনা সমর্থিত অনির্বাচিত সরকারের প্রতি বাংলাদেশের প্রধান সারির গণমাধ্যমের সমর্থন দেখে মিডিয়া ও রাজনীতি বিষয়ে আমার আগ্রহ জন্মায়। Noam Chomsky’র বই Manufacturing Consent ও Media Control পড়ে আমি যথেষ্ট উপকৃত হই। পছন্দের মানুষ হিসেবে ব্যক্তিগত আগ্রহে Noam Chomski-এর সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করি এবং তাঁকে তৎকালীন বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে আমি জানতে চাই আমাদের কিভাবে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা উচিত। কয়েকবার কথোপকথনের পর তিনি আমাকে জানালেন, বাংলাদেশ বিষয়ে তাঁর খুব ভালো ধারণা নেই। এরপর তিনি আমাকে তাঁর চেনা কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আলোচনা করতে বলেন, যাঁরা সবাই কম-বেশি ভারত ও পাকিস্তানের পিএইচডি-করা রাজনৈতিক তাত্ত্বিক এবং এই বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। বেশির ভাগই ইউরোপ আমেরিকায় অধ্যাপনা, সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত। আমি ভড়কে গিয়ে খুব বেশি দূর আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাইনি।
আমার মানুষগুলো নিয়ে কোন আপত্তি নেই। তবে, একটি বিষয় আমাকে একটু ভাবিয়েছিল — নোম চমস্কির মতো একজন মানুষ যিনি ইসরায়েল/প্যালেস্টাইন/আমেরিকা তথা আরব মুসলিম সমস্যা নিয়ে এতো সোচ্চার, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিনীদের কট্টর সমালোচক, গণমাধ্যমের রাজনৈতিক চরিত্র বিষয়ে অনন্যসাধারণ গবেষক — তিনি বা তাঁর মতো অনেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির বিষয়ে জানতে পারেন বা জেনে থাকেন ভারত ও পাকিস্তানের কলম দিয়ে। অবশ্য রাজনীতিবিদ বা তাঁদের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর ব্যাপারটা অন্যরকম।
পাকিস্তানের ইস্যুতে ভারতের নানা দরদ আছে, যেহেতু তারা নিজেদের একধরনের জমজ ভাই হিসেবে দেখে। কিন্তু বাংলাদেশ ইস্যুতে তাদের উভয়ের আচরণটা সবসময় বৈমাত্রেয়। পাকিস্তান তো রীতিমতো বাংলাদেশকে অবাঞ্ছিত মনে করে। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম, আমরা যে নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুকে জাতীয় নেতার সম্মান দিই ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে, তাঁরই ভাইয়ের (শরৎ বসু) নাতনী শর্মিলা বসু কি করে Dead Reckoning: Memories of the 1971 Bangladesh War (যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত) বইটি লেখেন, যেখানে পাকিস্তানী শাসকদের বয়ান থেকে বাংলাদেশের যুদ্ধকে তিনি নানাভাবে ভুল ব্যাখা করেছেন? একারণে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোতে বাহবা পেলেও ভারতে (কিছু অংশে) এবং আমাদের দেশে সমালোচিতও হয়েছেন। শোনা যায় বইটি আমাদের দেশের বিএনপি-জামাত ঘরানায় ব্যাপক জনপ্রিয় (অবশ্য প্রকাশ্যে নয়)। দেখলাম তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিকাল ইকোনমি নিয়ে পিএইচডি করেছেন। ফলে অনেকের কাছেই তাঁর কথার গুরুত্ব থাকবে, একে সত্যি বলে বিবেচনা করা হবে! আমাদের দেশের খেত-মজুররা যে বন্দুক হাতে যুদ্ধ করেছিল পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে; দেশের জন্য, পরিবারের জন্য, মায়ের জন্য প্রান দিয়েছিল অবলীলায় — তাদের তো অক্ষর জ্ঞানই ছিল না ঠিক মতো, পিএইচডি ওয়ালাদের সাথে যুদ্ধ বা তর্ক করে তারা সত্য প্রতিষ্ঠা করবে কি করে? ফলে তাদের কথা হল মিথ্যা আর অভিজাত হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, কেম্রিজ ওয়ালা হলেন চিরসত্য। বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ভারত-আমেরিকা-ব্রিটেন-ফ্রান্স যে দেশের নাগরিক হন না কেন, হার্ভার্ড ওয়ালারা কেবল নিজেদের লেখা বা কথাই বিশ্বাস করেন — এর বাইরের কারো না।
এরপর আসি, নতুন সময়ে (১৯৭১ সালের পটভূমি শেষে) আমাদের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর দুর্ভিক্ষ, সামরিক অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড — নানা বৈরিতার ভিতর দিয়ে চলতে চলতে ত্রাহি অবস্থা, শিক্ষা লাভের সুযোগ কোথায়। শিক্ষিত যে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়টি ছিল, তারা তাদের সীমিত শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক জোরে দেশে নিজেদের শ্রেণীর অবস্থান পাকাপোক্ত করতে নানা ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিল। এর পূর্বে জামাতসহ পাকিস্তানীরা জঘন্য ও বর্বরোচিত একটি কাজ করলো ১৪ ডিসেম্বরে — স্বাধীনতা-উত্তর দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তৈরি করবেন যে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় তাঁদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে গেলো। দেশে থাকলো বিরাট সংখ্যায় মেডিওকার বুদ্ধিজীবী — তাঁরা নিশ্চিতভাবে সর্বস্তরের জনগণের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দিকে না গিয়ে, কেবল সুবিধাবাদী মধ্যবিত্তের (তাঁর নিজের সম্প্রদায়) স্বপ্ন ও মূল্যবোধ বাস্তবায়নে নিরন্তর নিয়োজিত থাকলেন, যা যুদ্ধ-পরবর্তী সমস্ত শাসককুলকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে সুবিধা করে দিয়েছিল। এরপর আশির দশকে স্বৈরশাসক হিসেবে প্রেসিডেন্ট এরশাদ দারুণ দুটো অভাবনীয় ক্ষতি করলেন, একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা যা এই দেশকে বিশ্বের কাছে ছোট করলো এবং দ্বিতীয় কাজটি হল — ঢালাওভাবে সর্বস্তরের বাংলা ভাষা চালু। (এই বিষয়টি স্পর্শকাতর। যে কেউ আমার উপর ক্ষেপে যাওয়ার আগে অনুরোধ — লেখাটি পাঠ শেষ করে আমার উপর রাগ করুন।)
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী আমদের ভাষার লড়াইয়ে যে আত্মত্যাগ তাকে অনেক বড় জায়গায় স্থান দিতে হবে। ভাষা ছাড়া যেমন জাতির অস্তিত্ব থাকে না, তেমনি জাতি উন্নত না হলে ভাষার মর্যাদাও সুপ্রতিষ্ঠিত হয় না। আমরা বাংলা ভাষা নিয়ে যতটুকু আত্মম্ভরি ও স্পর্শকাতর, ‘বাঙালী’ জাতি চরিত্র উন্নয়নে ততটুকু উদাসীন। ফলে, জনসংখ্যার দিকে থেকে অষ্টম ভাষাভাষীর জাতি হওয়া সত্ত্বেও বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আমরা বিশ্বজনীন করতে পারিনি। আমরা ভাষা নিয়ে কেবল নিজেদের খেলার মাঠে নিজেরা ইচ্ছেমত গোল দেয়াতে চরম আত্মতৃপ্ত। আর ইংরেজ, আমেরিকান, বা পাশের ভারতীয়দের দেখে (ঘৃণা থেকে নয়, যৌক্তিকভাবে পাকিস্তানকে কোন জাতি মনে করার কারন নেই) আমরা ধরেই নিয়েছি জাতি হিসেবে আমাদের আর কোন সম্ভাবনা নেই উন্নত হবার।
কিন্তু আমাদের ভুলে যাওয়া চলবে না, পৃথিবীর পরিবর্তন হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদীরা নানাভাবে আমাদের ঘিরে ফেলেছে। এদের আক্রমন, নিপীড়ন কিংবা ঘায়েল করার কৌশলও পাল্টেছে। দেখা যায়, আমাদের একগুঁয়েমিপূর্ণ জাতীয়তাবাদ ও দেশভক্তির সুযোগ নিয়ে তারা নতুন চাল চেলে আমাদের অন্যভাবে দুর্বল করে তোলার জন্য। আমরা পৃথিবীর বাইরে কোন দেশ না। পৃথিবীতে আমরা এক ঘরে থাকতে পারি না। এমনকি আমরা অর্থনীতি বা রাজিনীতিতে ফ্রান্স,রাশিয়া, জার্মানি, জাপানের মতো নই যে ইংরেজি ছাড়া আমাদের বিশ্বে অবস্থান করে নেয়া সম্ভব। সর্বস্তরের বাংলা ভাষা চালুর সরাসরি প্রভাবটা গিয়ে আঘাত করেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা স্তরে। নব্বইয়ের দশকে এরশাদের পতন ঘটলো, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থেকে ইংরেজি বা আইন সহ গুটি কয়েক বিষয় বাদ দিলে (এবং অবশ্যই তুখোড় মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বাদ দিলে ) সাধারণ গড় ছাত্রদের ইংরেজি ভাষার দখল খুবই দুর্বল হতে শুরু করলো। বর্তমানে দেখা যায় আমাদের রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক পদের নানা ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত বেশির ভাগ লোকজনের ইংরেজি জ্ঞান তথৈবচ। মন্ত্রী বা এমপিদের কথা নাহয় বাদ দিলাম, কিন্তু সচিব বা প্রশাসনিক শ্রেণীর লোকদের যোগাযোগ দুর্বলতা কোনো ভাবে কাম্য হতে পারে না। নানা আন্তর্জাতিক হিসেব-নিকেশে প্রায়শ বাংলাদেশের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। আমি একে শুধুমাত্র ইংরেজি না-জানার দুর্বলতা বলছি না। কিন্তু দেখা যায়, একধরনের হীনমন্যতা আমাদের পেয়ে বসে ভিনদেশীদের সাথে মুখোমুখি হলে, যেখানে পর্যাপ্ত লেনদেন বিষয়ে শর্তারোপ বা তর্ক করা কঠিন হয়ে পড়ে। দেখা যায়, আমাদের ইংরেজি জানা লোকজন গণহারে বিদেশী নানাকিছু অনুবাদ কর্মে লিপ্ত থাকেন — এই ভেবে যে তাঁরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করছেন। কিন্তু ভাল ইংরেজি জানা লোকজনের এও ভাবা উচিত তাঁরা আমাদের ভাষায় লিখিত (কবি ও ঔপন্যাসিকদের ) সাহিত্যকে যথার্থ অনুবাদের মাধ্যমে কতটুকু আন্তর্জাতিক করতে পেরেছেন? বাংলা ভাষা চর্চার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে কলকাতা সেক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। কিন্তু তারা আমাদের মতো ইংরেজি বিমুখ মানসিকতার নয়। আবার এও পরিলক্ষিত হয় যে, বাংলা ভাষা নিয়ে চরমপন্থী লোকজন, নিজেদের সন্তানদের যথেষ্ট সুবিধা দিয়ে আধুনিক ও সুশৃঙ্খল উন্নত প্রতিষ্ঠানে (ইংরেজি মিডিয়াম বা কাছাকাছি স্ট্যান্ডার্ড) পড়ান, যাতে প্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতায় তাদের সন্তানদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় থাকে। সমস্যা হল কেবল সাধারণ মানুষের সন্তানদের পাঠ্যক্রম নিয়ে। আন্তর্জাতিক ভাষা চর্চার এই দুর্বলতা, দেশের আপামর প্রজন্মকে দুর্বলভাবে পরাশ্রয়ী হয়ে টিকে থাকার দিকে ঠেলে দেয়। এই বিষয়টি কি আমাদের বিদগ্ধ শিক্ষিত সমাজ জানতেন না! এই ক্ষেত্রে কলোনিয়াল ভাষা চর্চা জনিত আধো-পরিষ্কার তত্ত্বগুলো আমলে নিয়ে লাভ-ক্ষতি বিচার্য বিষয়। কলোনিয়াল মানসিকতার ঝমেলাটা কিন্তু আছে। উচ্চশিক্ষিত লোকজন দেশে বা বিদেশে সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়া মাত্র নিজেদের সাফল্য ও স্বাচ্ছন্দ্য বিষয়ে চরমভাবে উৎসাহী হয়ে পড়েন এবং এক্ষেত্রে তাঁরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শে, দেশী-বিদেশী সংস্থাগুলোর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলতে থাকেন।
এর পরও বলতে হয়, আমাদের দেশের মানুষেরা — কৃষক-শ্রমিক কিংবা ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা কিংবা ছাত্রছাত্রী — নিজস্ব বিচার, বুদ্ধিমত্তা ও শক্তিতে এই দেশকে এখনো টিকিয়ে রেখেছেন। দেশে সুযোগ না পেলেও ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের যোগ্যতায় উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে যাচ্ছে। কেননা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে একদিকে যেমন নিজস্ব অর্থায়নে গবেষণা খাতগুলোকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, বাজেট দেয়া হচ্ছে না, তেমনি অন্যদিকে এখান থেকে ডিগ্রী নিয়ে বা স্কলারশিপ নিয়ে বিশ্বের বড় বড় বিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়া সম্ভব না। দেশে অনেকগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সুবিধা তৈরি হয় কিন্তু সেটা কোনোভাবে ব্যপক বা সর্বসাধারণ-বান্ধব নয়। রাষ্ট্র এক্ষেত্রে কোন ধারাবাহিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে না। শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়া দেশগুলো বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কোটা, বা আসন সুবিধা তৈরি করে। এর মধ্যে অগ্রণী ভুমিকায় আছে চীন, ভারত, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম ইত্যাদি রাষ্ট্রসমূহ। ভারতের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রভাষা হিন্দি হলেও, সারা ভারতের লোকজনের ইংরেজির উপর নির্ভরশীলতা বেশী। ফলে তাদের পক্ষে আজ বলা সম্ভব হচ্ছে, ভারতের উল্লেখযোগ্য রপ্তানি পন্য হছে, ভারতের দক্ষ ও শিক্ষিত জনশক্তি। আমাদের দেশের গরিব লোকজনও বাইরে যায় অর্থ উপার্জন করতে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু ইউরোপ বা আমেরিকা সহ নানা উন্নত দেশে শ্রমিক হিসেবে না গিয়ে শিক্ষিত শ্রেণীর মুখপাত্র হওয়া খুব কম লোকের ভাগ্যে জোটে। ফলে বিদেশে কর্মরত অশিক্ষিত শ্রমিক শ্রেণী ওই দেশের নানা নিয়মনীতির বেড়াজালে আটকে পড়ে। ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি বড় দিক, তাদের শত বছরের ব্যবসায়িক ও সামাজিক অভিজাত শ্রেণী। তারা নিজেদের সুবিধার জন্য বিশ্বের নানা জায়গায় নিজেদের ছেলেমেয়েদের পড়তে, শিখতে পাঠিয়ে দেন। তারা হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড থেকে শিক্ষিত হয়ে এসে গণমানুষের হাল ধরেন। উপকার কতটুকু করেন তা হয়তো তাঁদের জনগণ বলতে পারবেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, মানবাধিকার, জাতিসঙ্ঘ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া সংগঠনগুলিতে এই সব উচ্চশিক্ষার মানুষেরা বসে আছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। পাকিস্তান ও ভারত মানসিকতার মধ্যে যে একটি সূক্ষ্ম ‘বাংলাদেশ স্লেশ’ (অর্থনীতি ও শিক্ষার দীনতা নিয়ে) কাজ করে তা কেবল মাত্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা বুঝতে পারেন। এই দেশেও অনেকে বোঝেন।
স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও অভিজ্ঞ, শিক্ষিত ও দক্ষতা সম্পন্ন পরিচালকের অভাবে আমাদের দেশে নানা বড় বড় ফ্যাক্টরি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও মালটি-ন্যাশনাল কোম্পানি গুলো ইউরোপ-আমেরিকা সহ ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের নানা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কাজ করছেন। এ নিয়ে আমাদের দেশীও অর্থ নিজেদের কাছে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আবার উচ্চশিক্ষিত লোকজনকে বাইরে পাঠিয়েও আমরা বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে আনতে পারছি না। একমাত্র ভরসা যে গরিব দুঃখী মানুষগুলো নিজেদের সর্বস্ব বিলীন করে মধ্যপ্রাচ্যে মানবেতর জীবনে কাজ করে দেশে টাকা পাঠান। তাঁদের জন্যও আমরা কোন সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে পারি না, রাষ্ট্রও যেন তাঁদের ক্ষেত্রে উদাসীন। যদিও তাঁরা দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখেন। বিদেশেরর মাটিতে তাঁদের একই চেহারা ও কাছাকাছি সংস্কৃতির মানুষ হওয়ার কারণে পাকি বা ভারতীয়দের হাতে নিগৃহীত হতে হয়। মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যমগুলোর (আল-জাজিরা সহ) দক্ষিণ এশীয় বিভাগে পাকিস্তানী ও ভারতীয়দের নিয়োগ দেয়। তারা ঢালাওভাবে নিজেদের লোকজনের যে-কোন গুরুতর অপরাধের আগে প্রচার করে বাংলাদেশীদের লঘু অপরাধের খবরগুলো। ফলে, কোন কথাবার্তা ছাড়াই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে গণহারে বাংলাদেশী ছাঁটাই শুরু হয়। অপরাধ না করেও একজন হয়তো পরদিন অফিসে গিয়ে পুলিশের হাত ধরে পাসপোর্ট-টিকেট সমেত এক-কাপড়ে দেশে ফিরে আসে।
আমি এইখানে ভারতীয় ও পাকিস্তানীদের আমাদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন না। তারা তাদের দেশকে ভালবাসবে, তাদের দেশের জনগণের জন্য ভাববে — এতে আমার কোন আপত্তি নেই। আমি শুধু আমাদের দেশকে নিয়ে ভাববো। আমি উদ্বিগ্ন, আমার এই কথাগুলো আমার মতো অনেকের আগে বুঝে নিয়েছিল বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। তারা আমাদের যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আন্তর্জাতিক নানা মহলে বাংলাদেশের আরেকটি পরিচয় তুলে ধরেছে। তারা এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য-সহ ইসলামী দেশগুলোতে ধর্মের সাযুজ্য তৈরি করে ইসলামী মনোভাবাপন্ন একটি পরিবেশ তৈরি করেছেন। এক্ষেত্রে তাদের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় একটু উদার ইসলামী আবহে বৃহৎ ইসলামী ও মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ডক্টরেট বা ব্যারিস্টার হয়েছেন। আমাদের হার্ভার্ডের ডিগ্রিধারীদের কাছে এদের পরিচয় ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে। পাকিস্তানী-ভারতীয়-আমেরিকান যাই হোক না কেন ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সহ দেশবিদেশের বিদ্যাচর্চার মহলে এদের অবস্থান শক্ত। এরা আধুনিক (ধার্মিক), সম্ভ্রান্ত এবং উচ্চ শিক্ষিত। ফলে এরা যখন আমাদের আভ্যন্তরীণ ও যুদ্ধাপরাধের মতো বিষয়কে ব্যাখা করেন সরকারের ইসলামপন্থীদের উপর নির্যাতন হিসেবে তখন আন্তর্জাতিক প্রগতিশীল মহল একে ইরাক, ইরান ও সিরিয়ার উপর মার্কিন ষড়যন্ত্রমূলক আক্রমণ ভেবে নেন। একইভাবে এই উচ্চশিক্ষিত মানবতাবাদী লোকগুলো সন্ত্রাসবাদের নামে ‘ইরাকের সাদ্দাম হুসেনের ফাঁসি’, ভারতের ইসলামপন্থী নিধনের নামে ‘আফজাল গুরু’র ফাঁসির সাথে আমাদের দেশের একাত্তরের গনহত্যার অপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসিকে গুলিয়ে ফেলেন। কারণ তাঁরা ওই নিজেদের ঘরানার (ডক্টরেট/ব্যারিস্টার) লোকেদের কথা বিশ্বাস করে । আমাদের খেটে খাওয়া মানুষের মনে রাখা ইতিহাস বা বিশাল তরুণ সমাজের দিনের পর দিনের কষ্টকর শ্লোগান-বিক্ষোভে তাদের কি এসে যায়।
আমি মনে করি, আমাদের সময়োপযোগী উচ্চ ও উন্নতর শিক্ষার উপর যথার্থ মনোনিবেশ করা উচিত। যে-কোন ভাবে হোক না (দারিদ্র্য, দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকা সত্ত্বেও) বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষা ও নারী শিক্ষায়নে বিশাল সাফল্য দেখিয়েছে। পত্রপত্রিকায় সারা দেশে এতো নৈরাজ্যের চিত্রের মাঝে আমাকে দারুণ আশাবাদী করে — বছরের প্রথম দিনে সরকার প্রদত্ত নতুন বই হাতে হাস্যোজ্জ্বল শিশুদের একটি ছবি । এরাই আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ করা কৃষক-স্রমিকদের উত্তরসূরি । এই শিশুদের যেমন প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হবে, তেমনি আমাদের সুচাগ্রচিত্তে লক্ষ্য হবে এদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা। আমরা যারা এখন তরুণ আছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করছি, নানা কোম্পানিতে চাকরি করছি, আমাদের কাজ হবে সেই পথ তৈরি করা যাতে ওরা দেশপ্রেমিক যথার্থ শিক্ষিত শ্রেণী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। এরা যাতে আর শ্রমিক-কুলি-মজুর হয়ে মারা না যায় মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে, নয়তো মালয়শিয়ার পাইন বনে। এই শিশুরা যেন দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশের মান-সম্মান বাড়াতে ও দেশের হাল ধরতে পারে। দেশ ও দেশের মানুষকে শুধু স্বদেশের মাটিতে নয়, যে-কোন দেশের মাটিতে, যে-কোন পরিবেশে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাখতে পারে। বাংলাদেশ আমাদের দেশ। আমাদের আর কোন ঠিকানা নাই, পরিচয়ও নাই।
পুনশ্চঃ আমি অপেক্ষা করছি, আমেরিকা বা যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রকাশনা সংস্থা ভারত বা পাকিস্তানের কোন লেখকের THE DEATH OF KADER MOLLA বইটি প্রকাশ করার দায়িত্বটি পাবেন।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৩ comments
mahtab - ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ (১:৪৫ অপরাহ্ণ)
রাসেল লেখাটা ভালো লাগলো।
এরশাদ এর আগে আরও একজন সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া কি কোনো সমস্যা করেনি মনে করেন আপনি?
রফিকুল আনোয়ার রাসেল - ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ (৪:৫২ অপরাহ্ণ)
মাহতাব ভাই, আমি মনে করি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে সমস্ত সরকারই কমবেশী দেশের সাথে অবিচার করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন রাষ্ট্র চরিত্র সম্পর্কে ১৯৭২ পরবর্তী সমস্ত সরকারের এক ধরনের অস্পষ্ট ধারনা ছিল। জাদের স্পষ্ট ধারনা ছিল তাঁদের ১৪ ডিসেম্বর শেষ করে দেয়া হয়েছিল। ১৪ ডিসেম্বর নিয়ে আমাদের উৎসাহ কম, কিন্তু বুঝতে হবে শারীরিক ভাবে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে যে ক্ষতি পাকিস্তানী বা তাঁর দোসর রা করেছে, বুদ্ধিজীবী হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীন দেশে আরও ত্রিশ লক্ষ মানুষকে মানসিক ভাবে হত্যা করা হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু-তাজউদ্দীন বিরোধ, জাসদ-আওয়ামি সংঘর্ষ, সিরাজ সিকদার হত্যা,খোন্দকার মস্তাক উত্থ্যান, (সেই সময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অনুগত এরশাদের দেশে ফেরা, জনৈক লীগ নেতার সুপারিশে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক তাঁর সেনাবাহিনীতে সংস্থাপন)মার্কিনপন্থি হবার পরেও বাকশাল সরকারে মস্তাকের শক্তিশালী অবস্থান, সেনাবাহিনী-রক্ষিবাহিনী বিরোধ,৭৪ দুর্ভিক্ষ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, হত্যাকাণ্ডে জাসদ সমর্থিত তথা কর্নেল তাহেরদের নিষ্ক্রিয়তা বা পর্যবেক্ষণ, খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান, তাঁর হত্যাকাণ্ড, সিপাহি-জনতার ৭ই নভেম্বর বিপ্লব, জিয়ার মুক্তি, কর্নেল তাহেরের ফাঁসি, জিয়ার সমর্থনে নিষিদ্ধ জামাতে ইসলামীর পুনর্যাত্রা – তাঁদের উত্থান, জেনারেল এরশাদের সেনাবাহিনী প্রধান হওয়া, বিএনপি গঠন ( তাতে আওয়ামী বিরোধীদের যোগদান) জিয়ার সামরিক বাহিনীতে নানা অত্যাচার-নিপীড়ন, সেনাবাহিনীর উস্কানিতে জিয়ার হত্যাকাণ্ড, আবার সেই সেনাবাহিনী কর্তৃক কোন ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগবিহীন জিয়ার হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড, এরশাদের ক্ষমতা দখল প্রক্রিয়া,তাঁর নয় বছরের শাসন —- আপনার কি মনে হয় না, এই সমস্ত ঘটনার কোন না কোনভাবে ( সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক) একটি ( ক্ষীণ হলেও) সরলরৈখিক যোগাযোগ আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিসাল সঙ্খ্যার শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় খুব ধূর্ততার সাথে নিশ্চুপ ছিলেন বা জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। আমি বাংলাদেশের ৪৩ বছরের অগ্রযাত্রাকে দুই ভাগে ভাগ করি । একটি ১৯৭২-১৯৯০ ( স্বৈরাচারের পতন) এবং আরেকটি ১৯৯১- ২০১৩ (বর্তমান পরিস্থিতি) । দুটো জেনারেশন ের মাঝে কিছু হারানো সুত্র কাজ করছে। কিন্তু ইতিহাস পাঠ ও বিশ্লেষণ ভিন্ন কোনো জাতির উন্নয়ন সম্ভাবনা নেই। আমাদের বা পরবর্তী প্রজন্ম অনেক স্মার্ট বা মেধাবী হলেও সম্ভব নয়। যদি সে তাঁর ইতিহাসের পথ – পরিক্রমার সত্যিকারের পাঠ নিতে না জানেন। এক্ষেত্রে আমি অনেক সাহসী হতে বলি সবাইকে। একজন দেশপ্রেমিক, রাজাকারের বিচার প্রত্যাশী তরুন যদি আবিষ্কার করেন, তাঁর পিতাও এই দেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন – এই সত্যের মুখোমুখি হবার জন্য তরুন প্রজন্মের সাহস থাকা চাই। তেমনি আমার সহযোদ্ধার এহেন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাঁর সহায়ক সক্তি না হয়ে তাকে বিদ্রুপ আর হেয় করার মধ্য দিয়ে আত্মতৃপ্তি যাতে না পেতে হয়। ৪৩ বছরের আগের যে পিতা রাজাকার ছিলেন, আর ৪৩ বছর পর যে পিতা সন্তানকে ঘুষখোর, সুদখোর,বাটপার,সন্ত্রাসী,খুনি (ত্বকী হত্যাকারী)হতে শিখায়, এদের দুজনই এক ভাবে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকারক। কারন এরা এক অপরকেঘুন পোকার মতো বাঁচিয়ে রাখে দেশ নামক সবুজবৃক্ষটিকে ভিতরে ভিতরে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য।
মাসুদ করিম - ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (১০:২৯ পূর্বাহ্ণ)
তাহলে এক কথায় বলতে হয়, সবাই জিয়ার দোষে দোষী।
mahtab - ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ (৮:১০ অপরাহ্ণ)
রাসেল ধন্যবাদ
রায়হান রশিদ - ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ (৯:৩৮ অপরাহ্ণ)
লেখককে অনেক ধন্যবাদ এই লেখাটির জন্য। উত্থাপিত বিষয়গুলো ভেবে দেখার মতো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের পক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই চালাতেও অস্ত্র লাগে। সঠিক চিন্তা পদ্ধতি, ইতিহাসবোধ, মান সম্মত শিক্ষা, বিদেশী ভাষার ওপর পর্যাপ্ত দখল – এগুলো হল সে যুদ্ধের প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। রাজপথের আন্দোলন আর পপুলার শ্লোগানের পাশাপাশি সেই বাইরের দুনিয়ার হাতিয়ারগুলো আয়ত্ত্ব করার দিকেও মনোনিবেশ জরুরী। কারণ, দু’টোর সমন্বয় না হলে এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত আমরা বেশীদূর যেতে পারবো না। কারণ, কেবল ৫৬ হাজার বর্গমাইল নিয়ে দেশটি, কিন্তু একে ঘিরে প্রশ্নগুলো এর মধ্যেই সীমিত না নিশ্চয়ই। কখনোই ছিল না।
এবার দি্বমতের জায়গাগুলো তুলে ধরছি।
আপনার মন্তব্যে ও লেখায় কিভাবে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন জন কিছু ভুল করেছেন, সে বিষয়গুলো এসেছে। কিন্তু তুলনামূলক দোষারোপের ব্যাপারটা কিন্তু অতোটা জোর দিয়ে আসেনি, যেটা আর বহু সমস্যার মূলে রয়েছে বলেই মনে করি। আবার লিখেছেন:
“৪৩ বছরের আগের যে পিতা রাজাকার ছিলেন, আর ৪৩ বছর পর যে পিতা সন্তানকে ঘুষখোর, সুদখোর,বাটপার,সন্ত্রাসী,খুনি (ত্বকী হত্যাকারী)হতে শিখায়, এদের দুজনই এক ভাবে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকারক।”
এই বাক্যটি বিভ্রান্তিকর। স্বীকার করছেন ‘ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকারক’, কিন্তু আশা করছিলাম আপনি বলবেন কে বেশী ক্ষতিকর, কিংবা কোন কারণ থেকে আর কোন্ কারণের সূত্রপাত। আমি যেভাবে দেখি তা হল: ১৯৭১ এর এতো বড়ো গণহত্যার পরও যখন অপরাধীদের শাস্তি হয় না, তখন জাতি হিসেবে আমরা বিচারহীনতাকে সহ্য করতে শিখি, আর সব অপরাধকেও গা সওয়া করে নিই। আর, গণহত্যাকারীর সাথে ঘুষখোর (সুদখোরের কথাটা কেন তুললেন বুঝলাম না, আপনি কি ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিরুদ্ধে?) আর সন্ত্রাসীকে এক পাল্লায় মাপা যায় না। একই বাক্যতে উপস্থাপনও করা যায় না বলে মনে করি। যতক্ষণ পর্যন্ত চিন্তার এই জায়গাগুলো আমরা সুনির্দিষ্ট এবং ধারালো না করতে পারছি ততক্ষণ কিন্তু আমরা কোন কার্যকর ভূমিকাও রাখতে পারবো না। আপনি হয়তো জানেন – ধোঁয়াটেভাবে, ভোতাভাবে – ইতিহাসের, নৈতিকতার, রাজনীতির বিষয়গুলো তুলে ধরা লোকজনের মধ্যে বহু ইংরেজী ভাল লেখা উচ্চশিক্ষিতও রয়েছেন – যারা ৪২ বছর ধরে দেশের আর বিদেশের মানুষকে উল্টা পাল্টা চিন্তাপদ্ধতি বিলি করে বেড়াচ্ছেন।
রফিকুল আনোয়ার রাসেল - ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (১:২৩ পূর্বাহ্ণ)
রায়হান ভাই, দুঃখিত যে আমি ঘুষখোর/সুদখোর শব্দটি হালকাভাবে ব্যবহার করেছি। তাও মন্তব্য কলামে, মুল লেখায় নয়। আসলে ২০০৭ পটভূমিতে জনাব প্রফেসর ইউনুস সাহেবের রাজনীতিতে উৎসাহ প্রসঙ্গে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ঘুষখোর আর সুদখোরের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। আমার এই কথাটা খুব মনঃপূত হয়েছিল (মজাও পেয়েছিলাম) । তাই বেখেয়ালে হয়তো উক্ত প্রসঙ্গে চলে এসেছে। তবে হত্যাকারী আর গনহত্যাকারির বিচার প্রসঙ্গে আমার কোন আপত্তি নেই, প্রায়োরিটিও নেই। আমি যদি দেখি,একই সময়ে দেশে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, বিশ্বজিৎ এর হত্যাকারীদের আটজন এর ফাঁসির রায় হয়; কিন্তু ত্বকী হত্যাকারীদের একজন শামিম ওসমানকে নারায়ণগঞ্জ এর (বর্তমান সরকারের) এমপি নমিনেশান দেয়া হয়েছে (কবরী সারওয়ার-কে বাদ দিয়ে)- তবে আমার অবশ্যই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার যথেষ্ট কারন আছে বলে বিশ্বাস করি। আপনি হয়তো ত্বকী’কে একটি কলাটের্যাল ড্যামেজ মনে করতে পারেন। যুদ্ধাপরাধী দমনে শামিম সাহেবকে একজন লড়াকু সৈনিক ভাবা যেতে পারে। কিন্তু এরমধ্যে আমি একটু ভবিষ্যৎ অন্ধকারের ইঙ্গিত খুঁজে পাই। আমি বড় বড় নায়কদের বীরোচিত কাহিনীর ভিতর দিয়ে ইতিহাস খুঁজে পেতে চাইনি। ৪৩ বছর পর আজ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবীতে যারা সোচ্চার,সেই লক্ষ-কোটি মানুষের দাবী বা সংগ্রামের সাথে আমার কোন বিরোধ নেই। সময় এটাকে এখন অনিবার্য করে তুলেছে। আমি তাঁদের জন্য শুধু খুঁজে পেতে চাই, সেই কারনগুলো – যে জন্যে ৪৩ বছরের এই ঘৃণ্য অপরাধীগুলোর বিচার হয় নাই। যদি টা খুঁজে না পাই, তাহলে আরও কত দেশদ্রোহীকে আমাদের শাস্তি দিতে হবে আজ থেকে ৪৩ বছর পরে। আশা করি, আমার এই চেষ্টাকে নিশ্চয় ষড়যন্ত্রহীন বলে ভাববেন। আর একটা বিষয়,আপনি যথার্থ বলেছেন – ধোঁয়াটে ভাবে, ভোতা ভাবে ইতিহাসের নানা বিষয়কে ইংরেজি জানা অনেক লোক পরিকল্পিত ভাবে উল্টা পাল্টা চিন্তা বিলি করে বেড়াচ্ছেন। আমি বলছি, তাঁদের সংখ্যা অনেক বেড়ে চলেছে, দেশে-বিদেশে তারা অনেক বেশী সংখ্যায় বাড়ছে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে দাড়াতে গিয়ে আরেকদল আরও বেশী বেশী উল্টোটা বলছেন। তারাও ইংরেজি জানা লোক, ডক্টরেট-পিএইচডি ধারী, তারাও ভাবছেন – তারা যাই বলছেন সত্যি বলছেন। আমরা সাধারণ মানুষেরা তাদের কথাও শুনছি। প্রশ্ন করছি আর বুঝতে চাইছি – অনুধাবন করতে চাইছি – বিশ্বাস করতে চাইছি, আর বেশী কিছু না।
শান দা,অনেক আগে আপনার সাথে একবার পরিচয় হয়েছিল চবি’তে। লেখাটি পাঠের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (১১:২৭ পূর্বাহ্ণ)
সব অপরাধকে এক করে দেখাটাই ভুল, আন্তর্জাতিক অপরাধ কেন আলাদা কেন এর বিচারের ধরন আলাদা, তার জন্য পাঠ্যতালিকা।
অথবা পোস্টারগুলোও খুব সাহায্য করতে পারে।
http://www.flickr.com/photos/muktangon/sets/72157638771117565/show
http://www.flickr.com/photos/muktangon/sets/72157632883421809/show
রফিকুল আনোয়ার রাসেল - ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (১২:২০ অপরাহ্ণ)
মাসুদ ভাই, আন্তর্জাতিক অপরাধ বা তার বিচার প্রক্রিয়া – এইসব বিষয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের তুলনায় আমি অজ্ঞ স্বীকার করছি। কিন্তু আমি সাধারণ মন থেকে বুঝতে চাইছি ব্যাপারটা – যে লোক গুলোর বিচার হচ্ছে এরা কেউই বাইরের দেশের লোক না। এমন না যে কাদের মোল্লা, সাইদি, সাকা কিংবা এরা সব আমেরিকান বা পাকিস্তানী জনগন। তাদের দেশদ্রোহিতা মূলক ভূমিকা নিয়ে এই দেশে বিচার হচ্ছে। এরা এই দেশেই ছিল, আছেও, কবর ও হচ্ছে। তাই আমি এদের বিচার কে আন্তর্জাতিক, বা দক্ষিন এশিও বা সম্পূর্ণ দেশীও বিচার – ভেবে লাভ কি ? এমন তো না যে এরা শুধু দেশের নৈতিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল কেবল। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গনহত্যা,লুটপাট,ঘরবাড়ি পোড়ান, সঙ্খ্যালঘু নির্যাতন, ত্রাস সৃষ্টি, ধর্ষণ – ইত্যাদির ভয়ঙ্কর সব অপরাধের অভিযোগ রয়েছে এবং প্রমানিত। এগুলো তারা দেশের বাইরে গিয়ে করেনি, দেশেই করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বা দেশীও যে কোন বিচারে এদের পাশ কাটানো যায় কিনা আমি জানি না। তবে, বর্তমানে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুটিকে বাদ দিয়ে অন্য কোন অপরাধ নিয়ে ভাবা যাবে না বা কেউ ভাবলে তার দিকে সংশয় নিয়ে তাকাতে হবে, বা তাকে ( ক্ষেত্র বিশেষে ) আক্রমন করতে হবে তা আমি মনে করি না। একটি বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিত, ইতিহাস পাঠ আমাদের শিক্ষা দেয় – অতীত ছাড়া যেমন বর্তমান হয় না, তেমনি ভবিষ্যৎ লুকায়িত থাকে বর্তমানে। তাই, আজকের অলক্ষ্যে ঘটে যাওয়া কিছু হয়তো সামনে ভয়াবহ দুর্যোগ বয়ে আনতে পারে। স্বীকার করছি, সব অপরাধের সাথে যুদ্ধাপরাধের অপরাধীদের এক করে দেখার কিছু নেই। “One murder makes a villain, millions a hero. Numbers sanctify, my good fellow.”
মাসুদ করিম - ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (৩:৪৮ অপরাহ্ণ)
রফিকুল আনোয়ার রাসেল - ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (১১:৪৭ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ মাসুদ ভাই।
রায়হান রশিদ - ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (৫:০০ অপরাহ্ণ)
@রফিকুল আনোয়ার
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
ত্বকীর ঘটনাকে কোলাট্যারাল ড্যামেজ মনে করি না অবশ্যই। একইভাবে শামীম ওসমানকেও আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার মনে করি না। একটু খুলে বলি: আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের ডিসকোর্সকে আর সব অন্যায়-অপরাধের সাথে মেলাতে গেলেই বিপত্তি বাধে। অনেক সময় সেটা ইচ্ছা করে মেলানোর চেষ্টাও করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের ইস্যুকে পথভ্রষ্ট করার জন্য। যেমন ধরুন: ন্যুরেমবার্গে যখন নাজি অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে – তখন কি গোটা ইউরোপে বিচার করবার মতো আরও অন্যায়-অপরাধ ছিল না? কিংবা ইসরায়েল রাষ্ট্র যখন আইখম্যানের বিচার শুরু করেছে – তখন কি মধ্যপ্রাচ্যে এই ইজরায়েল রাষ্ট্রেরই করা আরও অন্যায় অপরাধ ছিল না? ইউগোশ্লাভিয়া ট্রাইবুনালে যখন সার্বদের বিচারের প্রশ্ন উঠলো – তখন কি খোদ জাতিসংঘের কিছু কিছু উচ্চপদস্থের অপরাধও সামনে উঠে আসতে পারতো না? আমার অবস্থানটা এক্ষেত্রে বেশ সোজাসাপ্টা। কোন অপরাধই বিচারহীনভাবে ছেড়ে দেয়া উচিত না। কিন্তু, অপরাধের ধরণ, অপরাধ বিচারের ফোরাম – এই বিষয়গুলো একটা থেকে আরেকটা পৃথক না রাখলে শেষ পর্যন্ত কোন অপরাধেরই বিচার করা হয়ে ওঠে না। এই কম্পার্টমেন্টালাইজেশনটা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করি।
আমিও চাই না, কারণ সে মোটা দাগের ইতিহাস, সঠিক যদিও হয়, পূর্ণাঙ্গ নিশ্চয়ই না। এই বিষয়ে আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই আইসিএসএফ থেকে একটা নাগরিক প্রকল্প দাঁড় করানোর চেষ্টায় আছি। বিচার কাজের জরুরী ইস্যুগুলোর কারণে সে উদ্যোগটা একটু ব্যাক বার্নারে পড়ে গেছে। আশা করছি আবারও চালু করা যাবে।
কারণগুলো তো খুঁজতেই হবে। এ বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই। অবশ্য আমার ধারণা ছিল আমরা ইতোমধ্যেই জানি ঠিক কি কারণে আমাদের ৪৩ বছর লাগলো। তবে পূনঃ অনুসন্ধানে আরও নতুন কিছু বেরিয়ে আসার সুযোগ তো থাকেই। কেন নয়?
‘দেশদ্রোহী’ কথাটার প্রয়োগের সাথে একমত নই অবশ্য। বাংলাদেশে বর্তমানে কোন দেশদ্রোহীর বিচার হচ্ছে না। ১৯৭১ সালে কেউ অখন্ড পাকিস্তান চেয়েছিল – সে রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেও কারও বিচার হচ্ছে না। বিচার হচ্ছে সুনির্দিষ্ট অপরাধের – যা হল গণহত্যা, যু্দ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধের। এই বিষয়টির ব্যাপারে আরেকটু সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানাই। জামাতের প্রেস রিলিজ, পাকিস্তানী আর তুর্কী প্রতিক্রিয়াগুলো নিরীক্ষণ করলে দেখবেন – তারা কাদের মোল্লা রাজনৈতিক বিশ্বাস/অবস্থানের বলি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে, গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধী হিসেবে নয়।
অবশ্যই।
প্রথম বাক্যের সাথে একমত। আসলেই বেড়েছে। বাড়ারই কথা ছিল। ৪৩ বছরে একটি নির্দিষ্ট শ্রেনী যাবতীয় বৃত্তি, উচ্চশিক্ষা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এখনো অনেকাংশে করে। তারই ফলাফল হয়তো।
কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে আর কেউ ‘আরও বেশী উল্টোটা’ বলে বেড়াবে, সেটাও গ্রহণযোগ্য না, যদি সেটাও ‘উল্টাপাল্টা’ হয়। সে সবের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে হবে। তবে অনুরোধ থাকবে এই বক্তব্যগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করবার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পর বহুদিন পর আবার যোগাযোগ হয়ে গেল 🙂 ইন্টারনেটের কাছে এ কারণে আমি সবসময়ই কৃতজ্ঞ বোধ করি।
মুক্তাঙ্গনে আরও নিয়মিত লিখবার আবেদন থাকলো।
রফিকুল আনোয়ার রাসেল - ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (১১:৪৬ অপরাহ্ণ)
আপনার মতামত আর আহ্বান এর জন্য ধন্যবাদ রায়হান ভাই।
মোহাম্মদ মুনিম - ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (১১:০৪ অপরাহ্ণ)
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক লবিয়িংইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুতর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এজন্য যে ইংরেজি ভাষার অদক্ষতা দায়ী এটা আমি মানতে পারছি না। গতরাতেই স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলের কিছু অংশ পড়ছিলাম, সে আমলে স্বল্প সংখ্যক প্রবাসী বাঙ্গালীরা আমাদের মুক্তিসংগ্রামে যে বিপুল অবদান রেখেছেন, তার কিয়দংশও এখনকার প্রবাসী বাংলাদেশীরা রাখলে কাদের মোল্লার ফাঁসীর সময়ে যে বৈরী আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে, সেটা দেখা যেতো না। বেশ কয়েকমাস আগে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাসে গিয়েছিলাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুবাদে শেখ হাসিনা আর বঙ্গবন্ধুর নাম দেয়ালে খোদাই করা আছে বটে, কিন্তু ওই পর্যন্তই। কন্সুলার সেকশনে মার্কিন ভিসাপ্রাথীরা আসছেন, তাঁরা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছেন, তাঁদের পড়ার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ক কিছু লিটারেচর রাখলেও কিন্তু অনেকখানি প্রচারের কাজ হতো। ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক পাড়া থেকে অল্প কয়েকমাইল দুরেই মার্কিন কংগ্রেস, আমাদের রাষ্ট্রদূতের সাথে বিভিন্ন কংগ্রেসম্যান আর সিনেটরের নিশ্চয় চেনাজানা আছে, তিনি নিজে লবিয়িংইয়ের জন্য কতখানি চেষ্টা করেছেন, সেটাও দেখার বিষয়।
যুক্তরাজ্যে ICSF এর কর্মীরা বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষায় ‘এই বিচার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয়’ এই অপপ্রচারের জবাব অত্যন্ত চমৎকার ভাবে দিয়েছেন, সেই জবাবগুলোই ইংরেজি ভাষায় লন্ডনের আর ওয়াশিংটনের কর্তাব্যক্তিদের বোঝালে আর কিছুরই প্রয়োজন পড়তো না।