ট্রেনে যেতে যেতে শেষবার হংকং গিয়েছিলাম ১৯৯৩ সালে। আজ থেকে ষোল বছর আগে। তখন ব্রিটিশ হংকং, বেইজিং থেকে গিয়েছিলাম ট্রেনে চেপে। আমরা যখন আশির দশকের শেষের দিকে চীনের রাজধানী বেইজিং গিয়ে পৌছাই -- পড়াশোনার লক্ষ্য নিয়ে, তখন বেশ মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এ কোথায় এলাম! স্বপ্নের সাথে যেন কোনোভাবে মেলাতে পারছি না। উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ যাত্রা, কিন্তু এ কেমন বিদেশ! শুধু সাইকেল আর সাইকেল। বৃ্দ্ধ কমরেডদের দেখতাম নীল রঙের মাও-কোর্টের ইউনিফর্ম পরে আছে, তরুণদের মধ্যে ফ্যাশনের কোনো বালাই ছিল না, জরাজীর্ণ রুশি কায়দার দালানগুলো তখনো দাঁড়িয়ে আছে স্তালিনের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসাবে। সময় যেন একটা জায়গায় থেমে আছে। সেই সময় চীনকে বড্ড ধূসর মনে হয়েছিল। কারণ চীন নামের ঘুমন্ত ড্রাগনের ঘুম যে তখনো ভাঙেনি। সদ্য সংস্কারের পথে চীন; সদ্য তেং শিয়াও ফিং-এর বিখ্যাত বিড়ালের ইঁদুর খাওয়া তত্ত্ব বাজারে এসেছে। এবং খোলা দুয়ার নীতি (open policy) অনুমোদিত হয়েছে। তথাকথিত লৌহ-যবনিকাও ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে, সৌভাগ্যের ফিনিক্স পাখি যেন পাখা মেলছে আর বেইজিং যেন সদ্য তার আড়মোড়া ভাঙছে। এ হেন অবস্থায় আজ থেকে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে বেইজিং-এ পড়তে এসে সত্যি মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে এক অগ্রজ ছাত্র সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এই বলে, 'চিন্তা কইরো না, মাঝে মাঝে হংকং যাইতে পারবা, শহর কারে কয় দেখবা।' সত্যি তারপর থেকেই যেন আমরা হংকং-এর স্বপ্নে বিভো্র। কবে যাব সেই স্বপ্নের শহরে, সেই আলো ঝলমলে শহরে। অতঃপর আমাদের যাওয়া হয়েছিল সেই শহরে। সেই সময় বেইজিং-এ থাকতে বেশ কয়েকবারই হংকং-এ যাওয়া হয়েছিল। তবে প্রথমবার যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল অন্যরকম। সেই বেইজিং থেকে ক্যান্টন (কোয়াংট্রোও) ৩৬ ঘণ্টার জার্নি, তারপর ক্যান্টন থেকে ট্রেনে করে সীমান্ত শহর শেনট্রেন দু-আড়াই ঘণ্টার পথ; শেনট্রেন স্থলবন্দর পেরোলেই হংকং। ইমিগ্রেশন আর কাস্টম্স্-এর বেড়াজাল পেরিয়ে ওপারেই যেতেই দেখি মেট্রো ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। একেবারে পুঁজিবাদী ঝকঝকে ট্রেন। আর ট্রেনে উঠতেই যেন মনে হলো আমরা পৌঁছে গেছি সব পেয়েছির দেশে। আমরা ছিলাম তিনজন -- আমি, হেলাল আর হামিদ। তিনজনই তখন বেইজিং-প্রবাসী ছাত্র। দেখছিলাম আইস-বক্সে করে এক তরুণ আইসক্রিম বিক্রি করছে। খুবই সুদৃশ্য মোড়ক দেখে হামিদ লোভ সামলাতে পারল না (বেইজিং-এর আইসক্রিম তখন বড়ই বিস্বাদ), কিনে ফেললো একটা।…
শেষবার হংকং গিয়েছিলাম ১৯৯৩ সালে। আজ থেকে ষোল বছর আগে। তখন ব্রিটিশ হংকং, বেইজিং থেকে গিয়েছিলাম ট্রেনে চেপে। [...]



মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এক ভীতি আমার মধ্যে সব সময় কাজ করে। কথাটার মানে অনেকে অনেক ভাবে করতে পারেন। তবে স্বাধীন দেশের এক আম জনতা হিসেবে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা চালিয়ে গেছি অনেক সময়। মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করেছি। সেই প্রশ্নের শিকার যেমন আমার বাবা হয়েছেন তেমনি আমার শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব, মসজিদে নামাজ পড়ার এমন কেউ। আবার বানিয়াচং এ সাগর সমান দীঘিটার সমনে যে স্কুল তার দারোয়ান, সেও বাদ যায়নি। তবে বুদ্ধিবৃত্তিজীবী করতে পারিনি বলে কে কি করল সে দিকে না তাকিয়ে নিজেই কিছু একটা করার জন্য শেষমেষ আমার পথই বেছে নিলাম। কত উচ্চতায় আমি বাংলাদেশকে নিতে পারি [...]