অনাগত সন্তানের বা গর্ভজাত শিশু নিয়ে আশা বা শঙ্কাময় ভবিষ্যদ্বাণীর কথা পৌরাণিক, তবে অনাগত শিল্পকর্ম সম্পর্কে পূর্বাহ্ণে জ্ঞাত হলে দুচারটে কথা বলাই যেতে পারে। অনুভূতিটা এক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ অনন্য ও অদ্ভুত। তবে, দেয়ার ইজ অলোয়েজ আ ফর্স্ট টাইম ইন লাইফ। ঠিক মনে নেই আমি সুহানের লেখা আগে পড়ি নাকি দেখি ছেলেটাকে। পাপিষ্ঠ বোলগার হওয়ার সূত্রে তার লেখালেখি পড়া হয়েছে অনেক, এমনকি তার ব্যক্তিগত ব্লগস্পটেও এসেছি ঘুরে। তার সহপাঠীদের ভেতর কেউ কেউ আমার ছাত্র হওয়ায় ছেলেটা কখনো কখনো আমায় ডাকে স্যার, কখনো দাদা। এই দ্বিবাচিক সম্বোধনে ঘুরপাক খেতে খেতে একদিন জেনে যাই, সে একটি ফেসবুক গ্রুপেরও জন্মদাতা, যৌথখামারি হিসেবে। বইপড়ুয়া নামের এই দলটার সাথে আমারও জড়িয়ে আছে অনেক তিক্তমধুর সম্পর্ক, অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা, অনেক স্মৃতিবর্ণিলতা। কিন্তু, সুহানের সাথে সম্পর্কটা বরাবরই মাধুর্য বা সৌহার্দ্যের সীমারেখায় আটকেছে, বাইরে আসে নি বিশেষ। নিজস্ব মতামতে অকুণ্ঠ অথচ বিনয়ী, কৌতূহলী, মেধাবী (আবশ্যিকভাবে দরিদ্র নয়) ও প্রেমিক যুবাটি অনেকেরই প্রিয়মুখ, ধারণা করি। সুহান গল্প লেখে, সুহান ক্রীড়াপ্রেমিক বিধায় খেলা নিয়ে লেখে, একাত্তর টিভিতে ক্রীড়াযোগে সে যোগও দিয়ে তার সহাস্য চেহারা ও বিশ্লেষণ উপস্থাপনের ঈর্ষাঙ্কিত সুযোগ পায়, সুহান বই নিয়ে লেখে। তবে এতোকিছুর ভেতর উজ্জ্বল উপস্থিতি উঠে আসে একাত্তর নিয়ে তার ছোটোগল্পগুলোয়। মুনতাসীর মামুন নাকি ভাবতেন, হুমায়ূনের এক মিসির আলী নিয়ে লেখালেখিগুলোই টিকে যাবে। আমিও ভাবি, সুহান ভবিষ্যতে কী করে বসবে জানি না, তবে তার লেখনিসঞ্চয় হিসেবে এসব ছোটোগল্পগুলো টিকে যাবে এবং অনেকের হৃদয়ে জ্বালিয়ে রাখবে শিখা অনির্বাণ বা নামাবে নায়াগ্রার চাইতেও বেশি দেশপ্রেমের প্রপাত। সুহানকে আমি একাধিকবার অনুরোধ করেছি তার এসব গল্প নিয়ে এবং আরো কিছু বেশি লিখে একটা বই বের করার জন্যে, দেশের বড় কাজ হবে সেটাও। কিন্তু, সে বরাবরই হাসিমুখে এড়িয়ে গেছে তার মুকুটময় ম্যাগনাম ওপুসের কথা তুলে, আমারো কথা গেছে আটকে। এবার এই সুবাদে তাকে আবারো মনে করিয়ে দিলাম সেই গল্পগ্রন্থের প্রস্তাবটি। দীর্ঘদিন ধরে সুহান কাঁধে ব্যাকপ্যাক চাপিয়ে ও হৃদয়ের দাঁতে দাঁত চেপে পথ ও পাথেয় খুঁজে বেড়িয়েছে তার সাহিত্যজগতে অভ্যুদয়ের ও অভ্যুত্থানের গুরুভার ও গুরুত্বপূর্ণ ফসলটি তৈরির কাজে। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে শাহবাগের গণগ্রন্থাগার, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর থেকে তাজউদ্দীন আহমেদ পাঠচক্র, ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে ব্যক্তিগত স্মৃতি, সবখানে…
সব মিলিয়ে জেগে উঠুন বিস্মৃতির কৃষ্ণচক্র থেকে তাজউদ্দীন, তাঁর প্রবাসে বসেও বাংলাদেশের সময়মাখা হাতঘড়ি নিয়ে, তাঁর পরিবারের কাছ থেকে দূরে দেশের জন্যে আত্মনিয়োগের চিরকুট নিয়ে, তাঁর সুপ্রিম লিডারের প্রতি নিঃশর্ত সম্মান ও আনুগত্য নিয়ে, তাঁর লক্ষ্যাভিমুখিন দৃঢ়কঠিন সংকল্প নিয়ে, তাঁর ষড়যন্ত্র ছিন্ন করার ক্ষুরধার বুদ্ধি ও মেধা নিয়ে, তাঁর ট্র্যাজিক ভবিষ্যদ্বাণীর অমোঘ ক্ষমতা নিয়ে, তাঁর নিঃস্বার্থ দানের ও অবদানের উদারতম হৃদয় নিয়ে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের প্রজন্মের যে তাঁর কাছ থেকে এখনো অনেক কিছু শেখার আছে এখনো, চিরযুগজন্ম ধরে। [. . .]