বইয়ের বিপণন : ভাবনা-দুর্ভাবনা

মাত্র ৫ জন আগ্রহী পাঠকও কি নেই বাংলাদেশের এক-একটি জেলায়? তাঁদের কাছে পৌঁছানোর কথা আমরা ভাবছি কি? প্রতি জেলায় গড়ে যদি ৫ কপি করেও বিক্রি হয়, ৩২০ কপি বই বিক্রি হতে ৩ বছরের বদলে বড়োজোর ৩ সপ্তাহ, মানসাঙ্কের হিসাবে এমনকী ৩ মিনিট লাগার কথা! [. . .]

কোনো একটা বই বা লিটল ম্যাগাজিন বের করার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-কুমিল্লার দু-চারটা চেনা দোকানে ৫/১০ কপি দিয়ে আসা, এখন ফেসবুকেও একটু শেয়ার-টেয়ার করা এবং ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে জড়ো হওয়া — অনিয়মিত লিটল ম্যাগাজিনকর্মী হিসেবে আমাদের অপেশাদার বিপণনের দৌড় এই পর্যন্তই। (অবশ্য কেউ কেউ নিশ্চয়ই আরো গুছিয়েই করেন কাজটা।)

বগুড়ার বা রাজশাহীর বা বরিশালের বা নোয়াখালির পাঠক-পাঠিকাদের হাতের নাগালে আমাদের প্রকাশনাগুলি পৌঁছে দিতে পারলেই কি ভালো হয় না? দেশের ৬৪ জেলায় না হোক, অন্তত বেশ কিছু জেলা শহরেই নিশ্চয়ই এমন একাধিক  সুপরিচিত বইবিপণি আছে যেখান থেকে বই বা লিটল ম্যাগাজিন সচরাচর বিক্রি হয়, এবং আর্থিক লেনদেনের বিষয়েও যাঁরা আন্তরিক।

মাত্র ৫ জন আগ্রহী পাঠকও কি নেই বাংলাদেশের এক-একটি জেলায়? তাঁদের কাছে পৌঁছানোর কথা আমরা ভাবছি কি? প্রতি জেলায় গড়ে যদি ৫ কপি করেও বিক্রি হয়, ৩২০ কপি বই বিক্রি হতে ৩ বছরের বদলে বড়োজোর ৩ সপ্তাহ, মানসাঙ্কের হিসাবে এমনকী ৩ মিনিট লাগার কথা!

পাঠকের কাছে পৌঁছানো না গেলে ‘লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন’, ‘মুদ্রণশিল্পের বিপ্লব’ ইত্যাদি গালভরা কথারও তো কোনো মানে থাকে না। নিজস্ব বিপণন-ব্যবস্থা আর বিজ্ঞাপনের জোরে কেবল  বড়ো প্রকাশকরাই তাহলে টিকে থাকবে? আমাদেরও কি কিছুই করণীয় নেই? জনপ্রিয় লেখকদের বই বাদ দিলে অধিকাংশ বইয়েরই মুদ্রণ সংখ্যা কমতে কমতে এখন ৩০০-তে এসে দাঁড়িয়েছে। বই বিক্রি হয় না বলে কম ছাপা হয়, আর কম ছাপা হলে বইপিছু খরচ বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দামও যায় বেড়ে। এই দুষ্টচক্রেই আমরা ঘুরপাক খেয়ে মরব?

সেজন্যই প্রত্যেক জেলার চিহ্নিত বইবিপণিগুলোর একটা তালিকার দরকার এখন। আর সে-তালিকা ধরে সমন্বিত উদ্যোগে বিকল্প বিপণনের একটা দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাও সম্ভব। লেখক-পাঠক-প্রকাশক সবারই এই ‘সামাজিক নেটওয়ার্ক’ কাজে লাগবে।

রেজাউল করিম সুমন

একজন সামান্য পাঠক।

৩ comments

  1. মোহাম্মদ মুনিম - ৪ জানুয়ারি ২০১৫ (১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ)

    এখন যেহেতু দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে, অনলাইনে লিটল ম্যাগাজিন পিডিএফ আকারে বিক্রির চেষ্টা বোধহয় করা যায়। পিডিএফ কপির সুবিধা হচ্ছে এতে ছাপার খরচ এড়িয়ে অতি স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করা যায়। দাম কমার কারণে পাঠক সংখ্যাও বাড়ার কথা। একই সাথে অনলাইনে ‘হার্ডকপি’ও বিক্রির ব্যবস্থা রাখা যায়। এটা অবশ্য ঠিক যে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট থেকে বই কিনে পড়ার কালচারটি এখনও সেভাবে গড়ে উঠেনি, তবে আশা করি পাইরেসি রোধ করার জন্য নানা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি এ ব্যাপারে জন সচেতনতা গড়ে উঠলে অনলাইনের মাধ্যমেই লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন আবার চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে।

  2. মাসুদ করিম - ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ (১০:০৪ পূর্বাহ্ণ)

    আমার যেটা মনে হয় বইয়ের ব্যবসা থেকে ‘পরিবেশক’ সেবাটা উঠে গেছে, এবং সেজায়গাটা প্রকাশক ও বিক্রেতারা ভেবেছিলেন প্রয়োজন নেই, কিন্তু তার প্রয়োজন আছে, এখন বড় প্রকাশক বা বিক্রেতাদের মধ্যে কেউ যদি ‘পরিবেশনা’র উদ্যোগ নিতে পারেন তাহলে সারা দেশব্যাপী একটা ব্যবসার নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে পারে – সে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে শুধু বইয়ের দোকানে বই বিক্রির সাধারণ ধারণাকে ধরে না থেকে ‘পরিবেশক’ যেকোনো ধরনের ব্যবসায়িক আউটলেটে একটা বুকশেলফ দিয়ে নিয়মিত বই সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন – নেটওয়ার্ক এভাবে ব্যবসায়িকভাবে বাড়াতে পারলেই সবচেয়ে ভাল হত মনে হয়।

  3. Pingback: বইয়ের বিপণন : ভাবনা-দুর্ভাবনা » বাংলাদেশী শীর্ষ কমিউনিটি নিউজ পোর্টাল

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.