[১. অনুবাদক ও রচয়িতার ভূমিকা, ২. প্রাক্কথন-এর সূচনাংশ] প্রা ক্ ক থ ন শিল্প ও শিল্পী প্রসঙ্গে (পূর্বানুসৃতি) কাজেই, কোনো ছবির নিখুঁতত্বে দোষ খুঁজে পেলে সব সময়ই দুটো কাজ করা উচিত আমাদের। তার একটি হচ্ছে, শিল্পী যা দেখেছিলেন সেটার বাহ্যিক রূপ বদলে দেবার পেছনে কোনো কারণ রয়েছে কিনা এই প্রশ্ন করা। আমাদের এই শিল্পকথার ক্রমন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে এ-ধরনের কারণ সম্পর্কে আমরা আরো জানতে পারবো। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত না হচ্ছি যে আমরাই ঠিক, চিত্রশিল্পী নন, ততক্ষণ পর্যন্ত কখনোই কোনো চিত্রকে অশুদ্ধভাবে চিত্রিত বলে দোষারোপ করা আমাদের উচিত নয়। আমরা সবাই এরকম একটা রায় দিতে প্রায় মুখিয়েই থাকি যে, 'জিনিসগুলো দেখতে ঠিক ওরকম নয়'। যেসব ছবি দেখতে আমরা অভ্যস্ত, প্রকৃতি সবসময় অতি অবশ্যই সেগুলোর মতো দেখাবে -- এরকম একটি অদ্ভুত ধরনে চিন্তা করতেই অভ্যস্ত আমরা। অল্প কিছুদিন পূর্বের একটি অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারের সাহায্যে সহজেই এর প্রমাণ দেয়া সম্ভব। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লোকে ঘোড়াকে টগবগিয়ে ছুটতে দেখেছে, ঘোড়দৗড় আর শিকারে অংশ নিয়েছে, এমন সব চিত্রকর্ম আর স্পোর্টিং প্রিন্ট দেখে নয়ন জুড়িয়েছে যেখানে দেখা গেছে অশ্ববাহিনী শত্রুবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে কিংবা কুকুরের পশ্চাদ্ধাবন করছে; কিন্তু সম্ভবত এঁদের মধ্যে একজনও লক্ষ করে দেখেননি ঘোড়া যখন দৌড়োয় তখন সেটাকে 'আসলে ঠিক কেমন দেখায়'। ছবি এবং স্পোর্টিং প্রিন্টে সেগুলোকে সাধারণত শূন্যে পুরোপুরি পা ছড়িয়ে দেয়া অবস্থাতেই দেখানো হয়েছে -- ঠিক যেমনটি দেখিয়েছিলেন উনবিংশ শতকের মহান ফরাসী চিত্রকর জেরিকো (Théodore Géricault), এপসম-এর ঘোড়দৌড়ের একটি বিখ্যাত ছবিতে (চিত্র ১৩)। এর পঞ্চাশ বছর পরে যখন দ্রুতবেগে ধাবমান অশ্বের স্থিরচিত্র গ্রহণের মতো যথেষ্ট দক্ষ ফটোগ্রাফিক ক্যামেরা তৈরি হল তখন এসব স্থিরচিত্র প্রমাণ করল যে চিত্রকরেরা এবং জনসাধারণ উভয় পক্ষই এতোদিন ভুল করে এসেছেন। ছুটন্ত কোনো ঘোড়াই আমাদের কাছে যেটাকে এতো স্বাভাবিক বলে মনে হয় তেমন করে দৌড়োয় না। ঘোড়ার পা যখন মাটি ছেড়ে ওঠে তখন ঘোড়াটি সেগুলোকে ভেতরের দিকে টেনে নেয় (চিত্র ১৪)। খানিকটা চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারবো যে এরকমটি না হলেই বরং সেটার পক্ষে এগোনো অসম্ভব। কিন্তু তারপরেও চিত্রকরেরা যখন এই নতুন আবিষ্কারটি প্রয়োগ করতে শুরু করলেন এবং ছুটন্ত ঘোড়া আসলে যেভাবে দৌড়োয় সেভাবেই সেগুলোর ছবি আঁকলেন,…
কাজেই, কোনো ছবির নিখুঁতত্বে দোষ খুঁজে পেলে সব সময়ই দুটো কাজ করা উচিত আমাদের। তার একটি হচ্ছে, শিল্পী যা দেখেছিলেন সেটার বাহ্যিক রূপ বদলে দেবার পেছনে কোনো কারণ রয়েছে কিনা এই প্রশ্ন করা। আমাদের এই শিল্পকথার ক্রমন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে এ-ধরনের কারণ সম্পর্কে আমরা আরো জানতে পারবো। [...]