ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্-এর শিল্পকথা : ২

আসলে 'শিল্প' বলতে কিছু নেই। আছেন কেবল শিল্পী। এক সময় তাঁরা ছিলেন এমন কিছু মানুষ যাঁরা রঙিন মাটি দিয়ে কোনো গুহার দেয়ালে বাইসনের অবয়ব আঁকতেন। আজ তাঁরা রঙ কেনেন এবং বিলবোর্ডের জন্যে পোস্টার ডিজাইন করেন; মাঝখানের সময়টাতে তাঁরা মেলা কিছু করেছেন। এই সব কর্মকাণ্ডকে শিল্প আখ্যা দেয়ায় কোনো ক্ষতি নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মনে রাখছি যে [...]

[১. অনুবাদক ও রচয়িতার ভূমিকা]

প্রা ক্ ক থ ন

শিল্প ও শিল্পী প্রসঙ্গে

আসলে ‘শিল্প’ বলতে কিছু নেই। আছেন কেবল শিল্পী। এক সময় তাঁরা ছিলেন এমন কিছু মানুষ যাঁরা রঙিন মাটি দিয়ে কোনো গুহার দেয়ালে বাইসনের অবয়ব আঁকতেন। আজ তাঁরা রঙ কেনেন এবং বিলবোর্ডের জন্যে পোস্টার ডিজাইন করেন; মাঝখানের সময়টাতে তাঁরা মেলা কিছু করেছেন। এই সব কর্মকাণ্ডকে শিল্প আখ্যা দেয়ায় কোনো ক্ষতি নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মনে রাখছি যে এরকম একটি শব্দ বিভিন্ন সময় এবং স্থানে খুবই ভিন্ন ভিন্ন জিনিসকে বোঝাতে পারে, এবং যতক্ষণ আমরা উপলব্ধি করছি যে মহৎ কোনো শিল্পের অস্তিত্ব নেই। কারণ মহৎ শিল্প জিনিসটি হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি বিরক্তিকর ব্যাপার, অন্ধ আসক্তির বিষয়। একজন শিল্পীকে আপনি এই বলে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে পারেন যে, তিনি সদ্য যে কাজটি সৃষ্টি করেছেন সেটি সেটার নিজস্ব ধরনে যথেষ্ট ভালো হতেই পারে, তবে কথা হচ্ছে সেটা ‘শিল্প’ নয় মোটেই। এবং একটি ছবি উপভোগরত কোনো ব্যক্তিকে আপনি এই বলে হতভম্ব করে দিতে পারেন যে সেটার মধ্যে যা তার ভালো লেগেছে তা শিল্প নয়, বরং ভিন্ন কিছু।

আসলে, আমার মনে হয় না যে একটি মূর্তি বা একটি ছবি পছন্দ করার কোনো ভুল কারণ থাকতে পারে। বাড়ির কথা মনে হয় বলে কেউ একটি ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং পছন্দ করতে পারে, কিংবা কোনো বন্ধুর কথা স্মরণ হয় বলে একটি প্রতিকৃতি। এতে দোষের কিছু নেই। কোনো চিত্রকর্ম দেখলে আমাদের সবারই একশো একটা জিনিস মনে পড়ে যেতে বাধ্য, এমন সব জিনিস যা আমাদের পছন্দ-অপছন্দকে প্রভাবিত করে। আমরা যা যা দেখি সেসব জিনিস উপভোগ করার ব্যাপারে যতক্ষণ পর্যন্ত এসব স্মৃতি আমাদের সাহায্য করছে ততক্ষণ আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু যখন কোনো অপ্রাসঙ্গিক স্মৃতি আমাদেরকে পূর্বসংস্কারাচ্ছন্ন করে তোলে, পর্বতারোহণ আমাদের পছন্দ নয় বলে যখন স্বতঃপ্রবৃত্তভাবে আমরা আল্প্‌স্ পর্বতের কোনো অসাধারণ ছবি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিই, কেবল তখনই আমাদের উচিত মনের ভেতর এই বীতরাগের কারণ অনুসন্ধান করা, যে-কারণে আমরা একটি আনন্দ উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হলাম। একটি শিল্পকর্ম অপছন্দ করার ভুল কারণ কিন্তু সত্যিই রয়েছে।

১. পিটার পল রুবেন্স, পুত্র নিকোলাসের প্রতিকৃতি, আনুমানিক ১৬২০

২. আলব্রেশ্‌ট্ ডুরার, মায়ের প্রতিকৃতি, ১৫১৪

৩. বার্তোলোমে এস্তেবান মুরিজ্জো, রাস্তার ছোঁড়ার দল, আনু. ১৬৭০-৭৫

বেশিরভাগ মানুষই ছবিতে ঠিক তাই দেখতে পছন্দ করে যা তারা বাস্তবেও দেখতে চায়। এটি একটি স্বাভাবিক পছন্দ। প্রকৃতির সৌন্দর্য আমরা সবাই পছন্দ করি, এবং যেসব শিল্পী তাঁদের কাজের মধ্যে সেই সৌন্দর্য ধরে রেখেছেন তাঁদের প্রতি আমরা সবাই কৃতজ্ঞ। আমাদের রুচির কারণে স্বয়ং এই শিল্পীরাও আমাদেরকে ভরৎসনা করতেন না। মহান ফ্লেমিশ চিত্রকর রুবেন্স যখন তাঁর ছোট্ট শিশু সন্তানের একটি ড্র্ইং করেন (চিত্র ১), তখন তিনি তাঁর পুত্রের চমৎকার চেহারার জন্যে গর্ব অনুভব করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন আমরাও যেন শিশুটিকে পছন্দ করি। কিন্তু এই সুন্দর ও আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব যদি আমাদেরকে সেই সব কাজ প্রত্যাখ্যান করার দিকে নিয়ে যায় যে-কাজগুলো অপেক্ষাকৃত কম আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুর প্রতিনিধিত্ব করে তাহলে তা একটি বিঘ্নসৃষ্টিকারী বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। মহান জার্মান চিত্রকর আলব্রেশ্‌ট্‌ ডুরার নিশ্চয়ই তাঁর মায়ের ছবিটি (চিত্র ২) ঠিক একইরকম আত্মনিবেদন এবং ভালোবাসার সঙ্গে এঁকেছিলেন যা রুবেন্স তাঁর নাদুসনুদুস শিশুসন্তানের জন্যে অনুভব করেছিলেন। ডুরার-কৃত চিন্তাক্লিষ্ট বৃদ্ধ বয়েসের সত্যনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ আমাদেরকে হয়তো এমন একটি ধাক্কা দিতে পারে যাতে করে আমরা সেটা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারি। তারপরেও, আমাদের প্রাথমিক বিতৃষ্ণা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলে কিন্তু বিপুলভাবে উপকৃত হতে পারি আমরা; কারণ, যারপরনাই নিষ্ঠার সঙ্গে আঁকা ডুরারের ড্রইংটি সত্যিই একটি মহৎ কাজ। প্রকৃতপক্ষে, আমরা শিগগিরই দেখতে পাবো যে একটি ছবির সৌন্দর্য আসলে সেটার বিষয়বস্তুর সৌন্দর্যের ওপর নির্ভরশীল নয়। আমি জানি না, স্পেনদেশীয় চিত্রকর মুরিজ্জো রাস্তার যেসব ক্ষুদে ছোঁড়াদের ছবি (চিত্র ৩) আঁকতে পছন্দ করতেন তারা সত্যিই সত্যিই দেখতে সুন্দর ছিল কিনা। কিন্তু তিনি তাঁদের ছবি আঁকার পর সেসব ছবিতে নিশ্চিতভাবেই তারা অত্যন্ত মনোহর হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে পিটার ডা হোগ-এর আঁকা চমৎকার গৃহাভ্যন্তরের শিশুটিকে বেশিরভাগ মানুষই হয়তো সাদামাটাই বলবেন, কিন্তু তারপরেও এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি ছবি (চিত্র ৪)।

৪. পিটার ডা হোগ, আপেলের খোসা ছাড়ানোর কাজে রত নারী সহ গৃহাভ্যন্তর, ১৬৬৩

৫. মেলোজ্জো দা ফোর্লি, দেবদূত, আনু. ১৪৮০

সৌন্দর্য নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, সুন্দর কী সে-ব্যাপারে রুচি এবং মানের বিশাল তারতম্য রয়েছে। চিত্র ৫ এবং ৬ দুটোই পঞ্চদশ শতকে আঁকা, এবং দুটোতেই দেবদূতকে বীণাবাদনে রত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে । এই দুটো ছবির মধ্যে মেলোজ্জো দা ফোর্লি-র আঁকা আকর্ষণীয় মাধুর্য এবং মনোহারিত্ব সমৃদ্ধ ইতালীয় কাজটিই বরং বেশি পছন্দ করবেন অনেকেই, উত্তরাঞ্চলীয় সমসাময়িক শিল্পী হান্স মেমলিং-এরটির চাইতে (চিত্র ৬)। আমি নিজে দুটোই পছন্দ করি। মেমলিং-এর দেবদূতের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য খুঁজে বের করতে হয়তো একটু বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু তাঁর সামান্য খাপছাড়া ভাবটা যখন থেকে আর বিরক্তির কারণ ঘটাবে না তখন থেকেই হয়তো তাঁকে নিদারুণ ভালো লেগে যেতে পারে আমাদের।

৬. হান্স মেমলিং, দেবদূত, আনু. ১৪৯০

৭. গুইদো রেনি, কণ্টকমুকুট পরিহিত যীশু, আনু. ১৬৩৯-৪০

সৌন্দর্যের বেলায় যে-কথা সত্যি, অভিব্যক্তির বেলাতেও তাই। সত্যি বলতে কী, প্রায়ই দেখা যায় যে একটি চিত্রের একটি ফিগারের অভিব্যক্তির কারণেই কাজটিকে পছন্দ বা অপছন্দ করি আমরা। কিছু মানুষ সেরকম অভিব্যক্তিই পছন্দ করে যেটা তারা সহজেই বুঝতে পারে, ফলে, যা তাদেরকে গভীরভাবে আলোড়িত করে। সপ্তদশ শতকের ইতালীয় চিত্রকর গুইদো রেনি যখন ক্রুশবিদ্ধ যীশুর মাথার ছবি এঁকেছিলেন (চিত্র ৭) নিঃসন্দেহে তিনি চেয়েছিলেন দর্শক যেন মুখমণ্ডলটিতে প্যাশন-এর ((ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় যীশুখ্রিষ্টের যন্ত্রণাভোগ — অনুবাদক)) সমস্ত কষ্ট এবং মহিমা খুঁজে পান। পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে অনেকেই ত্রাতার এরকম একটি চিত্র থেকে শক্তি-সাহস এবং সান্ত্বনা লাভ করেছেন। ছবিটি যে অনুভূতির প্রকাশ ঘটায় তা এতোই প্রবল এবং স্পষ্ট যে কাজটির অনুলিপি সাধারণ চ্যাপেল এবং দূর-দূরান্তরের গোশালাগুলোতেও পাওয়া যায়, যেখানে লোকে ‘শিল্পের’ কোনো কিছু সম্পর্কেই অবগত নয়। কিন্তু অনুভূতির এই সুতীক্ষ্ণ অভিব্যক্তি আমাদের মনে একটি আবেদন সৃষ্টি করলেও সে-কারণে সেসব কাজ থেকে আমাদের মুখ ঘুরিয়ে নেয়া উচিত হবে না যেগুলো অপেক্ষাকৃত কম আবেদনপূর্ণ। মধ্যযুগের যে ইতালীয় চিত্রকর ক্রুশবিদ্ধ যীশুর ছবিটি (চিত্র ৮) এঁকেছেন তিনিও নিশ্চয়ই ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় যীশুর যন্ত্রণাভোগ এবং মৃত্যু সম্পর্কে রেনির মতোই আন্তরিক সহানুভূতিসম্পন্ন ছিলেন, কিন্তু তাঁর অনুভূতি বুঝতে হলে প্রথমে আমাদেরকে অবশ্যই তাঁর ছবি আঁকার পদ্ধতিগুলো জানতে হবে। এসব ভিন্ন ভিন্ন ভাষা বুঝতে শেখার পর আমরা হয়তো এমনকী সেসব শিল্পকর্মই বেশি পছন্দ করতে পারি যেগুলোর অভিব্যক্তি রেনিরটির চেয়ে কম সুস্পষ্ট। কিছু লোক যেমন সেইসব মানুষকে বেশি পছন্দ করে যারা কম কথা এবং অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে, কিছু রেখে দেয় অনুমানের জন্যে, ঠিক তেমনি কিছু কিছু মানুষ সেইসব চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যের অনুরাগী যেগুলো তাদেরকে কিছু অনুমান করে নেয়ার, কিছু নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার অবকাশ দেয়। আরো আদিম কালে শিল্পীরা যখন মানুষের মুখ এবং অঙ্গভঙ্গি আঁকায় আজকের শিল্পীদের মতো দক্ষ ছিলেন না তখন যে কী করে তাঁরা তাঁদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সেই সব অনুভূতির প্রকাশ ঘটাতে চেষ্টা করেছেন তা দেখলে প্রায়ই আরো আশ্চর্য বোধ হয় ।

৮. তাস্কেনির শিল্পী, যীশুর মস্তক, আনু. ১১৭৫-১২২৫

৯. আলব্রেশ্‌ট্ ডুরার, খরগোশ, ১৫০২

১০. রেমব্রান্ট ভ্যান রাইন, হাতি, ১৬৩৭

কিন্তু এখানে এসে মানুষ আরেকটি অসুবিধার মুখোমুখি হয়। তারা যা দেখে ঠিক সেসব জিনিস আঁকার ব্যাপারে শিল্পীর দক্ষতার কদর করতে চায় তারা। তাদের সেরা পছন্দ হলো সেই সব চিত্রকর্ম যেগুলো বাস্তবের মতো দেখায়। একমুহূর্তের জন্যেও অস্বীকার করছি না যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। দৃশ্যমান জগতের বিশ্বস্ত চিত্র অঙ্কনে যে ধৈর্য আর দক্ষতার প্রয়োজন তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। যেসব কাজে প্রতিটি ছোট ছোট খুঁটিনাটি সতর্কতার সঙ্গে আঁকা হয়েছে সেসবের পেছনে অতীতের বড়বড় শিল্পীরা প্রচুর শ্রম দিয়েছেন। ডুরার-কৃত একটি খরগোশের জলরঙ স্টাডি (চিত্র ৯) এই অনুরাগভরা ধৈর্যের সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণগুলোর অন্যতম। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম ডিটেইল রয়েছে বলেই যে রেমব্রান্ট-এর আঁকা হাতির ড্রইংটি (চিত্র ১০) সেটার তুলনায় ভালো নয় তা-ই বা কে বলবে? আসলে রেমব্রান্ট ছিলেন এমনই এক জাদুকর যিনি তাঁর কাঠকয়লার মাত্র কয়েকটি রেখাতেই হাতিটির কুঞ্চিত, খসখসে ত্বকের অনুভূতিটি আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত করেছেন।

কিন্তু যেসব মানুষ তাঁদের ছবিগুলোকে বাস্তবসদৃশ দেখতে পছন্দ করেন তাঁদেরকে যে অসম্পূর্ণতাই প্রধানত আহত করে তা নয়। তাঁদের কাছে আরো বিরক্তিকর ঠেকে সেইসব কাজ যেগুলো অশুদ্ধভাবে আঁকা হয়েছে বলে মনে হয় তাঁদের। বিশেষ করে ছবিগুলো যখন হয় আরো আধুনিক কোনো যুগের, যখন শিল্পীর আরো ভালো করে সব কিছু জানা থাকা উচিৎ ছিল বলে মনে করে তারা। আসলে আধুনিক শিল্পের আলোচনায় আমরা যেসব অভিযোগের কথা শুনি সেসব সম্পর্কে রহস্যের কিন্তু কোনো অবকাশ নেই। ডিজনীর কোনো চলচ্চিত্র বা কোনো কমিক স্ট্রিপ দেখা আছে এমন প্রত্যেকেই সে-কথা ভালো করে জানে। সে জানে যে, কোনো কিছুকে সাধারণত যেমন দেখায় সেটাকে মাঝেমধ্যে তার চেয়ে ভিন্নভাবে আঁকা বা কোনো-না-কোনোভাবে সেটাকে বদলে বা বিকৃত করে ফেলাটাই সঠিক। মিকি মাউসকে নিশ্চয়ই সত্যিকারের ইঁদুরের মতো দেখায় না। কিন্তু তারপরেও লোকজন সেটার লেজের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে পত্রিকায় বিক্ষুব্ধ চিঠি লিখে পাঠায় না। ডিজনীর মন্ত্রমুগ্ধকর জগতে যারা প্রবেশ করে তারা মহৎ শিল্প নিয়ে উৎকণ্ঠিত নয়। আধুনিক চিত্রকলার একটি প্রদর্শনীতে তারা যে-ধরনের পূর্বসংস্কারের আয়ুধে সজ্জিত হয়ে যেতে পছন্দ করে ডিজনীর অনুষ্ঠানে তারা সেরকম কোনো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যায় না। কিন্তু একজন আধুনিক শিল্পী যদি তাঁর নিজের মতো করে কিছু আঁকেন তখন তাঁকে চটজলদি এমন একজন আনাড়ী লোক বলে ধরে নেয়া হয় যিনি কিনা এর চেয়ে ভালো কিছু করতে পারেন না। তো, এখন, আধুনিক শিল্পীদের সম্পর্কে আমরা যা-ই ভাবি না কেন তাঁদেরকে আমরা নিশ্চিন্তচিত্তে এই কৃতিত্বটুকু দিতে পারি যে তাঁরা ‘সঠিকভাবে’ আঁকতে পারেন। যদি তাঁরা তা না করেন তার কারণ সম্ভবত ডিজনী মহোদয়ের কারণগুলোরই অনুরূপ। চিত্র ১১-তে একটি ছবি দেখা যাচ্ছে যেটা আধুনিকতার আন্দোলনের এক বিখ্যাত নেতা পিকাসোর আঁকা, এবং এটি নেয়া হয়েছে সচিত্র ন্যাচারাল হিস্ট্রি পত্রিকার একটি সংখ্যা থেকে। একথা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, একটি মা-মুরগি আর তার ফোলা ফোলা পালকের ছোট ছোট ছানার এই ছবিটির মধ্যে কেউ কোনো খুঁত আবিষ্কার করতে পারবে না। কিন্তু একটি বাচ্চা মোরগের ড্রইংয়ে (চিত্র ১২) পিকাসো পক্ষীটির কেবল বাহ্যিক রূপের নমুনা দেখিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। তিনি সেটার যুদ্ধংদেহী চেহারা, সেটার গর্বোদ্ধত ভঙ্গি, আর নির্বুদ্ধিতাকেও বের করে আনতে চেয়েছিলেন। অন্য কথায় বলতে গেলে, তিনি ক্যারিকেচারের আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু কী বিশ্বাসযোগ্যভাবেই না করেছেন তিনি ক্যারিকেচারটি!

১১. পাবলো পিকাসো, ছানাপোনাসহ মুরগি, ১৯৪১-৪২

১২. পাবলো পিকাসো, বাচ্চা মোরগ, ১৯৩৮

(ক্রমশ)

[৩. প্রাক্‌কথন-এর মধ্যাংশ]

জি এইচ হাবীব

জন্ম ১০ই মার্চ ১৯৬৭। পেশা: শিক্ষকতা।

৮ comments

  1. পারভেজ - ১১ জানুয়ারি ২০১১ (১:২৮ অপরাহ্ণ)

    দক্ষ হাতের নিপুণ রচনা। সুখপাঠ্য ও তথ্যবহুল। তবে আতলামো মুক্ত হওয়ায় পড়ে আনন্দ পাওয়া গেল। সাথে ফাও হিসেবে কখন যে অনেক কিছু শিখলাম বুঝতেই পারছি না। ধন্যবাদ।

  2. Pingback: মুক্তাঙ্গন | ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্-এর শিল্পকথা : ৩ | জি এইচ হাবীব

  3. জি এইচ হাবীব - ১৮ জানুয়ারি ২০১১ (৭:৫৫ অপরাহ্ণ)

    পারভেজ, ধন্যবাদ আপনাকেও।

  4. Pingback: মুক্তাঙ্গন | ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্-এর শিল্পকথা : ১ | জি এইচ হাবীব

  5. Pingback: মুক্তাঙ্গন | ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্-এর শিল্পকথা : ৪ | জি এইচ হাবীব

  6. Pingback: মুক্তাঙ্গন | ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্-এর শিল্পকথা : ৫ | জি এইচ হাবীব

  7. Pingback: মুক্তাঙ্গন | ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্-এর শিল্পকথা : ৬ | জি এইচ হাবীব

  8. Pingback: মুক্তাঙ্গন | ই. এইচ. গম্‌ব্রিখ্-এর শিল্পকথা : ৭ | জি এইচ হাবীব

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.