প্রশাসন যন্ত্র সেই পুরোনো ব্যক্তিরাই চালান। বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তারাই। যে সামরিক অফিসার পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূল করার জন্য ছিলেন সচেষ্ট, তিনি আজ আরও উচ্চপদে সমাসীন। যে পুলিশ অফিসার দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে সোপর্দ করেছেন পাকিস্তানীদের হাতে, তিনি আবার মুক্তিযোদ্ধদের নামে হুলিয়া বের করতে ব্যস্ত। যে আমলারা রাতদিন খেটে তৈরি করেছে রাজাকার বাহিনী তারা মুক্তিযোদ্ধাদের চাকুরী দিয়ে দয়া প্রদর্শনের অধিকারী। যে শিক্ষক দেশের ডাকে সাড়া দিতে পারেননি তিনিই আজ তরুণদের শিক্ষা দেয়ার গুরু দায়িত্ব বহন করেছেন। পরিকল্পনা বিভাগের যে কর্মীকে শোষণের পরিকল্পনা শেখানো হয়েছে বছরের পর বছর, তিনিই এখন সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পরিকল্পনা তৈরি করেন। যুদ্ধ চলাকালে যারা পাকিস্তানীদের হয়ে প্রচারণায় মত্ত ছিলেন, ১৬ ডিসেম্বর-এর পর তারাই ভোল পাল্টে সংস্কৃতির মধ্যমণি হয়েছেন।

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব (পূর্ব প্রকাশিতের পর...) গৌহাটি সামরিক হাসপাতালের ইমার্জেন্সি কক্ষ। জীবন শঙ্কা এখনও কাটেনি। এর মধ্যে আহত হওয়ার চারদিনের মাথায় ১৮ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে রণক্ষেত্রে ছেড়ে আসা তার প্রিয় মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তাহের একটি পত্রের ডিকটেশন দেন। আমি তার কথা শুনে তা লিখি। তার কিছু অংশ, “কামালপুরে কিছুক্ষণের জন্য যা দেখেছি তা অপূর্ব। তোমরা সম্মুখ যুদ্ধেও যে রণকৌশলের পরিচয় দিয়েছ তা যুদ্ধের ইতিহাসে বিরল। কামালপুরের যুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের ও অনন্য রণকৌশলের স্বাক্ষর। তোমরা নিয়মিত বাহিনীকেও হারিয়ে দিয়েছে। যতোদিন না আবার আমি তোমাদের মধ্যে ফিরে আসি, আশা করি সংগ্রাম চালিয়ে যাবে সাফল্যের সাথে। . . . তোমরা যুদ্ধ করছো জনসাধারণের জন্য। বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, জনগণকে অভাব, দুঃখ, অশিক্ষা থেকে মুক্ত করা এ যুদ্ধের লক্ষ্য। তোমাদের আচরণের মধ্য দিয়ে যেন জনসাধারণের মধ্যে সেই লক্ষ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাংলার অগনিত কৃষক যারা দেশের সর্বপ্রধান শ্রেনী তাদের মুক্তির জন্য এ যুদ্ধ। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণকে মুক্তির আলো দেখাও, তাদেরকে শিক্ষিত করো, যেন স্বাধীন বাংলাকে তারা একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। যখনই তোমরা কারো বাড়ীতে আশ্রয় নাও, তোমাদের উচিত তাদের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করা। এ কাজ তোমাদের কৃষকদের সঙ্গে একাত্ম করবে এবং তারা পরিস্কার বুঝতে পারবে তোমরা কাদের জন্য যুদ্ধ করছো। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ জুলুম করে, মেয়েদের সম্ভ্রম নষ্ট করে, তবে তাদের জনসাধারণের দ্বারা বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে দ্বিধা করবে না। . . . তোমরা তরুণ। তোমরা একটি পবিত্র ইচ্ছা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে নেমেছো। বাংলাদেশ তোমাদের জন্য গর্বিত। মনে রাখবে, বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব তোমাদের। জয় বাংলা। মেজর আবু তাহের”। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রের দশম খণ্ডে সশস্ত্র সংগ্রাম (২) এ সন্নিবেশিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাহেরের সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরবো: “সামরিক দিক থেকে ময়মনসিংহের চাইতে টাঙ্গাইল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই ময়মনসিংহ পাশে রেখে কামালপুর থেকে শেরপুর-জামালপুর-টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকা পৌঁছানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করলাম। রংপুর এবং বগুড়া ৭ নং সেক্টরের অধীনে থাকলেও যোগাযোগের সুবিধার জন্য ঐ সেক্টরের অনেক অপারেশন আমার নেতৃত্বেই হয়েছে। আগস্ট মাসেই টাঙ্গাইলে যুদ্ধরত কাদের সিদ্দিকী…

২৯ অক্টোবর ২০১০, চটগ্রামে অনুষ্ঠিত 'কর্নেল তাহের স্মারক বক্তৃতা' হিসেবে এই প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কর্নেল তাহের এর অনুজ ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। মুক্তাঙ্গন এর পাঠকদের জন্য বক্তৃতাটি পাঁচ পর্বে ভাগ করে উপস্থাপন করা হল।

[২৯ অক্টোবর ২০১০, চটগ্রামে অনুষ্ঠিত 'কর্নেল তাহের স্মারক বক্তৃতা' হিসেবে এই প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কর্নেল তাহের এর অনুজ ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। মুক্তাঙ্গন এর পাঠকদের জন্য বক্তৃতাটি পাঁচ পর্বে ভাগ করে উপস্থাপন করা হল] ১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব *** *** *** “আমি একটি সোনার বাংলার চিত্র দেখেছি। এই চিত্র কল্পনায় কেটেছে বহু বিনিদ্র রাত্রি। এই চিত্র আমাকে রোমাঞ্চিত করেছে, উত্তেজিত করেছে। এই কল্পনায় বার বার মনে হয়েছে জনগণের সঙ্গে একাত্ব হয়ে আমি এক অসীম শক্তির অধিকারী। সমস্ত জীর্ণতাকে ভেঙ্গে ফেলে এই চিত্রকে রূপ দিতে সক্ষম। এ চিত্র আমাকে সাহস যুগিয়েছে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আমি জনগণের সাথে একাত্ব হয়েছি। বাংলার মানুষের নিবিড় সংস্পর্শে এসে আমি দেখেছি তাদের উদ্যম, কষ্ট সহিষ্ণুতা ও দেশপ্রেম। আমি বুঝেছি বাংলার এই শিক্ষাবঞ্চিত, প্রতারিত জনগণই হচ্ছে প্রকৃত প্রগতিশীল। তারাই বাংলার সুপ্ত শক্তি। বাংলার এই জনগণকে আমি আমার চিত্র কল্পনায় অংশীদার করতে চাই। আমি চাই তারা গভীরভাবে এই চিত্র উপলব্ধি করুক। রোমাঞ্চিত হোক, উত্তেজিত হোক। তাদের শক্তির পূর্ণ প্রকাশের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের যাদুঘরে বন্দী ‘ধন ধান্য পুষ্পভরা’ সোনার বাংলাকে মুক্ত করুক” মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে’ নামের একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধে কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম উপরের কথাগুলো লিখেন। ভূমিকায় বলা কথাগুলোর পর তাহের তাঁর চিত্রের সোনার বাংলার একটি ছবি উপস্থাপন করেছিলেন প্রবন্ধে। তাঁর আঁকা চিত্রের মূল উপজীব্য নদী ও মানুষ। সোনার বাংলার রূপ-কল্পটি তিনি শেষ করেছেন এই বলে, “নদীর বাঁধের উপর গড়ে ওঠা বাংলার এ জনপদ একটি নতুন সভ্যতা ও সংস্কৃতির অধিকারী। সুশৃঙ্খল এই জনপদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রেরণা দেয় সমগ্র পৃথিবীকে”। আমরা দেখবো, বাংলাকে স্বাধীন করে সোনার বাংলায় রূপ দিতে তাহের তাঁর কিশোর বয়স থেকে স্বপ্ন দেখেছেন। তা লালন করেছেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে গেছেন। ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়’ - এই আকুতি, বেদনা এবং তা থেকে সঞ্জাত ক্ষোভ, প্রতিজ্ঞা ও স্থীর সংকল্প স্কুল জীবন থেকেই তাহেরকে আলোড়িত করেছে। এ প্রসঙ্গে মায়ের কাছ থেকে শোনা ১৯৫২ সালের একটি ঘটনার কথা বলি: আমাদের…

আমাদের তৃপ্তি হত তার প্রধান কারণ ওই বস্তুগুলো মানসম্পন্ন উপাদানে ও উপায়েই তৈরি হত।[...]

গ্রামে আমরা মুড়িটা মোয়াটা খইটা চিড়াটা ঘরের যেমন খেতাম বাইরেরও খেতাম। আমাদের মতো গ্রামের গরীব ঘরের যারা ছিলাম তারা তো এসব বাইরেরটা উৎসবে পরবে ঘরেরটার চেয়ে উৎসাহ নিয়ে খেতাম। সেশুধু দূরের বাদ্য মধুর শোনায় এই কারণে নয়, ঘরের চেয়ে বাইরের মুড়িটা মোয়াটা খইটা চিড়াটা আরো তৃপ্তিদায়ক ছিল – কারণ গরীব ঘরের উপকরণ তো অত ভাল ছিল না, আর গরীব ঘরের মা-দাদির হাতে অন্য আরো অনেক সাংসারিক কাজ সেরে এসব ভাল করে বানানোর মতো সময় দেয়াও কঠিন ছিল। তো এই বাইরের খেয়ে (যা উৎসব পরব ছাড়া জোটার প্রশ্নই আসে না, আমাদের হাতে কিছু পয়সা শুধু এসময়েই উঠত) যে আমাদের তৃপ্তি হত তার প্রধান কারণ ওই বস্তুগুলো মানসম্পন্ন উপাদানে ও উপায়েই তৈরি হত। সেই সহজ গ্রামীন জীবনে এনিয়ে আজকের মতো ম্যাজিস্ট্রেট ও মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের ছোটাছুটি করতে হত না। এই গরীব ঘরের একমাত্র পুত্রসন্তান, আমার বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম ও তার প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যের প্রসারলাভের ফলে একদিন ওই গ্রাম ছেড়ে আমরা চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করতে শুরু করি। শহরে এসেও বাইরের হাতে বানানো ও কারখানায় বানানো খাবারে তৃপ্তি অব্যাহত ছিল। আশির দশকের মিমি চকলেট, রাস্তায় বিক্রি হওয়া কুলফি, ললিপপ, আচার মান সম্পন্ন ছিল। এছাড়া ফুটবল, র‌্যাকেট, ব্যাট, বল, ব্যান্ড এসব হয়তো এখনকার মতো এত অঢেল ছিল না কিন্তু গুণেমানে আজকের চেয়ে অনেক ভাল ছিল। আমি অতীতের গুণগান করছি না, আমি আজো উপরে উল্লেখিত প্রতিটি জিনিসের ভোক্তা – তাই বলছি মানের প্রশ্নে আমরা অনেক নিচে নেমে গেছি, আমাদের দেশে তৈরি বিদেশে তৈরি প্রতিটি কুটির ও শিল্পবস্তুতে আমরা ন্যাক্কারজনকভাবে উল্টো পথের যাত্রী হয়ে উঠেছি। একটি প্রচলিত কথা আছে, দশচক্রে ভগবান ভূত – তাই কোটি হাতে শিল্প ও বাণিজ্যে ভেজাল হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এটাই তো শেষ কথা নয়, যেসব দেশ শিল্প ও বাণিজ্যে উন্নত তারা কিন্তু মানের অবনমন ঘটায়নি, তারা মাননিয়ন্ত্রণে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তারা বুঝতে পেরেছে গ্রামের সমাজে যা স্বতস্ফূর্ত তাকে মেট্রোপলিটন সমাজে অব্যাহত রাখতে হলে মাননিয়ন্ত্রণের সজাগ দৃষ্টি ও সংকল্প নিয়ে একদল লোকের প্রাতিষ্ঠানিক কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেভাবে তারা তাদের বাজারকে শাসন করেছে। আমাদের এখানে এভাবে মাননিয়ন্ত্রণের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না, আমাদের প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু…

কানাডা সফররত বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস কানাডা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য কানাডা সরকারের বরাদ্ধকৃত ঋণের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ যেন তার "সামাজিক ব্যবসা" খাতে দেওয়া হয়[..]

কানাডা সফররত বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস কানাডা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য কানাডা সরকারের বরাদ্ধকৃত ঋণের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ যেন তার "সামাজিক ব্যবসা" খাতে দেওয়া হয়। ডঃ ইউনুস কানাডা সরকারকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন যে, বরাদ্ধকৃত অর্থ ঠিক কি খাতে ব্যয় হচ্ছে, তা না জেনে কিংবা বরাদ্ধকৃত অর্থ আর কোন দিনই ফেরত পাওয়া যাবেনা, তা নিশ্চিত জেনেও বাংলাদেশ সরকারকে অর্থ বরাদ্ধ দেওয়ার চেয়ে তাঁর তথাকথিত " সামাজিক ব্যবসায় " অর্থ বরাদ্ধ দিলে তা থেকে একটি ভাল ফল পাওয়া যাবে। ডঃ ইউনুসের মত বিশ্ব পরিচিত দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত একজন নোবেল বিজয়ী যোদ্ধার কাছে সরকার ও আমরা সাধারণ জনগনের প্রত্যাশা অনেক বেশী। তিনি দেশ, সরকার ও জাতির প্রতিনিধিত্বকারী একজন হয়েও নিজের সেই কর্পোরেট বাণিজ্যকে বেগবান করার প্রত্যয়ে একটি দাতা রাষ্ট্রের কাছে ঋণ গ্রহীতা দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে কিভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যভাবে উপস্থাপন করলেন, তা আমার বোধগম্য নয়। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস যে সামাজিক ব্যবসার কথা বলেন, তা আমি যেমন বুঝিনা, বাংলাদেশের অনেক বড় বড় অর্থনীতিবিদরাও বোঝেন না বলে আমি জানি। আমি যতটুকু বুঝি, বৈদেশিক সাহায্য রাষ্ট্রের কাছে দেওয়ায়ই সবচেয়ে উত্তম। এসব সাহায্য দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অনগ্রসর খাতসমূহে ব্যয় হবে । সাধারণত কোন দেশের নীতি বাস্তবায়নের স্বার্থেই এই সব বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ সাহায্য আমাদের মত দেশে এসে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত এসব সাহায্য আমাদের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা বাড়ায়। এসব সাহায্য যত বর্জন করা যায় ততই দেশের জন্য মঙ্গল। বৈদেশিক সাহায্য ব্যক্তির সামাজিক বাণিজ্য খাতে দিয়ে জনগনের কি লাভ হবে ? তাছাড়া একটি দাতা রাষ্ট্রকে এই ধরনের প্রস্তাব দিয়ে রাষ্ট্রকে ছোট করার কোন অধিকার ডঃ ইউনুসের নেই । ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীন ব্যাংক, গ্রামীনফোনসহ বিভিন্ন ব্যবসাকে যে সামাজিক ব্যবসা বলে অভিহিত করেন সেগুলো দারিদ্রতা হ্রাসে কতটুকু ভূমিকা রেখেছে ? ডঃ ইউনুস-এর কথিত সামাজিক ব্যবসা হচ্ছে বহুজাতিক পূঁজির ছদ্মবেশী বাজার । কানাডা সরকারকে দেওয়া তার প্রস্তাবের অর্থ দাড়ায়, এদেশে বহজাতিক পূঁজিকে আমন্ত্রন জানানো । এতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কিছুই নেই। তাই, ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি আমার জিজ্ঞাসা : বৈদেশিক ঋণের টাকায় সামাজিক বাণিজ্য, নাকি ছদ্মবেশী বহুজাতিক পূঁজির বাজার তৈরী করবেন ?

জামায়াত-শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে,- ঠিক এরকম আশঙ্কাই জেগেছিল যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবি ক্রমাগত জোরদার হওয়ার ঘটনা থেকে; এখন দেখা যাচ্ছে গ্রেফতার হওয়ার আগে-আগে জামাত নেতা কামারুজ্জামানও ওরকমই বলে গেছে[....]

এক. জামায়াত-শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে,- ঠিক এরকম আশঙ্কাই জেগেছিল যুদ্ধাপরাধী বিচারের দাবি ক্রমাগত জোরদার হওয়ার ঘটনা থেকে; এখন দেখা যাচ্ছে গ্রেফতার হওয়ার আগে-আগে জামাত নেতা কামারুজ্জামানও ওরকমই বলে গেছে, দলের কর্মীদের প্রতি সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে পরোক্ষে ওরকম এক নির্দেশই রেখে গেছে। ক্রিশ্চিয়ান সাইন্স মনিটর পত্রিকার সঙ্গে ওই আলাপচারিতায় কামারুজ্জামান বলেছে, নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের জন্যে তারা আইনি পন্থাই অবলম্বন করবে, তবে সরকার যদি তাদের হয়রানি করে তা হলে বলা যায় না, তরুণ অনুসারীরা চরমপন্থা বেছে নিতে পারে। কামরুজ্জামান আরও বলেছে, এরকম স্পর্শকাতর ইস্যুতে অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এমনও হতে পারে যে, এদের অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে পারে। অবশ্য ক্রিশ্চিয়ান সাইন্স মনিটরের কাছে কামারুজ্জামান এরকম আশঙ্কা প্রকাশের অনেক আগে থেকেই আমরা দেখে আসছি, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ আন্ডারগ্রাউন্ডের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জেএমবির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক খুবই সুস্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধে গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লারা খুনি হওয়ার দীক্ষা নিয়েছিল; আর উত্তরসূরি শিবিরপ্রজন্মের জন্যে তারা রগকাটার প্রশিক্ষণই যথেষ্ট নয় জেনে উন্মুক্ত করেছিল জেএমবি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগের কোনও কোনও নেতা যতই শিবিরপ্রজন্মকে ছবক দিন না কেন, তোমরা তো বাবা যুদ্ধাপরাধী নও, তোমরা কেন, এইসব যুদ্ধাপরাধীদের দায় নিতে যাবে- এসবই বিফলে যাবে; কেননা যুদ্ধাপরাধীরা তাদের মতো করেই প্রস্তুত করেছে তাদের পরবর্তী বাহিনীকে। কামারুজ্জামানের এই কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যারা চান, তাদের কাজের পরিধি আরও বেড়ে গেছে। কামারুজ্জামান গ্রেফতারের আগে ঘোষণা দিয়ে গেল, আচানক হামলা হবে, একাত্তরের মতোই; আবারও আমাদের সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রতিভাবান দেশপ্রেমিক মানুষগুলিকে রাতের অন্ধকারে অথবা দিনের আলোতেই গুপ্ত হামলা চালিয়ে হত্যা করা হবে, যুদ্ধাপরাধী পালের গোদাগুলিতে বাঁচানোর জন্যে তাদের চেলারা মাটির নিচে চলে গেলেও যতটুকু করা সম্ভব সব টুকুই করবে। তাই এদের যদি আমরা থামাতে চাই, আমাদেরও সঠিক প্রস্তুতি নিতে হবে। শান্তির ললিত বাণী কখনো কখনো ব্যর্থ পরিহাস হয়ে ওঠে, আমাদের বোধহয় আমরা অচিরেই সেরকম এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। দেখা যাচ্ছে, মুখে জামায়াতে ইসলামী যতই বলুক না কেন- যুদ্ধাপরাধী ইস্যু নিয়ে সরকার রাজনীতি করছে, আসলে সবচেয়ে বেশি রাজনীতি তারাই করেছে, তাই সব রকম রাজনৈতিক প্রস্তুতিই তাদের নেয়া হয়ে গেছে। এমনকি ভূ-গর্ভে গিয়ে রাজনীতি করার মতো যাবতীয় প্রস্তুতিও…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.