|| লেখা, পড়া, শোনা ও বলা || যখন বলি ‘রোমক সাহিত্য’ তখন আসলে কি বোঝাই আমরা? আমরা নিশ্চয়ই তখন সেসব ছাপা বই-এর কথা বলি না দোকানে যেসব বিক্রি হয়, প্রকাশকেরা যেসব ছেপে বের করার পর বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য পাঠান, এবং লেখা-ই পেশা এমন লেখকেরা তা লেখেন। রোমে খানিকটা ভিন্ন ছিল বিষয়টা। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   লেখা, পড়া, শোনা ও বলা যখন বলি ‘রোমক সাহিত্য’ তখন আসলে কি বোঝাই আমরা? আমরা নিশ্চয়ই তখন সেসব ছাপা বই-এর কথা বলি না দোকানে যেসব বিক্রি হয়, প্রকাশকেরা যেসব ছেপে বের করার পর বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য পাঠান, এবং লেখা-ই পেশা এমন লেখকেরা তা লেখেন। (অবশ্য এই শেষ ব্যাপারটা এখনো, এই একবিংশ শতকেও, খুব কম-ই দেখা যায় — অনুবাদক)। রোমে খানিকটা ভিন্ন ছিল বিষয়টা। রোমকরা এমন এক সমাজে বাস করত যেখানে লিখিত ভাষার ভূমিকা ছিল আমাদের জীবনে সেটার ভূমিকার চাইতে ঢের কম। শহরে থাকত যারা তাদের অনেকেই লিখতে পড়তে পারতো, কিন্তু মোটের ওপর পুরো জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই সম্ভবত ছিল নিরক্ষর। তাছাড়া, আজকের তুলনায় পড়ার জিনিসও যে ঢের কম ছিল তা বলাই বাহুল্য। এ পার্থক্যের একটা বড় কারণ নিশ্চয়ই প্রযুক্তি। রোমকদের তো আর কম্পিউটার, ছাপাখানা বা ফটোকপিয়ার ছিল না। প্রতিটি টেক্সট হাতে লিখতে হতো, আর, কোনো লেখার বেশ কিছু কপি বিলি করতে হলে মূল লেখাটা বার বার নকল করতে হতো যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রয়োজনীয় সংখ্যক কপি পাওয়া যাচ্ছে — সেটা কবিতা থেকে পোস্টার সব কিছুর ব্যাপারেই প্রযোজ্য ছিল। একমাত্র যে ক্ষুদে টেক্সট গণহারে তৈরি করা সম্ভব ছিল তা হলো মুদ্রায় উৎকীর্ণ লিপি। প্রচুর পরিমাণে সেগুলো ছাপ মারা যেতো মুদ্রার ওপর। কাজেই ক্ষমতাসীনরা তাঁদের প্রচার-প্রপাগান্ডার কাজে মুদ্রার ওপর উৎকীর্ণলিপি (এমনকি ছবিও) ব্যাপক হারে ব্যবহার করতেন। মুদ্রা ছাড়া টেক্সট তৈরির আর কোনো সহজ উপায় ছিল না। খানিকটা ব্যয়সাপেক্ষ একটা উপায় অবশ্য যথেষ্ট ব্যবহৃত হতো, আর সেটা ছিল পাথর বা তামার ফলকের (ট্যাবলেট) ওপর লেখা উৎকীর্ণ করা। এমন উৎকীর্ণ লিপি ছিল বেশ টেকসই, আর সেগুলো সুবিধেজনক এমন সব জায়গায় রাখা বা বসানো যেতো যাতে শহরের সব বাসিন্দা তা দেখতে পায়, বা, পড়তে পারে। এই কৌশলটা কেবল সমাধিফলক বা স্মৃতিসৌধের ক্ষেত্রেই সুবিধেজনক ছিল না, একই সঙ্গে তা আইন-কানুন, বিধি-নিষেধ, বা এরকম নানান বিষয় প্রচারের জন্যেও উপযোগী ছিল খুব। গোটা রোমক সাম্রাজ্য থেকে সংগৃহীত এ-ধরনের হাজার হাজার উৎকীর্ণ লিপি এখনো…

|| বিপ্লবের কাল || শত শত বছর ধরে রোমে কার্যত একইরকম শাসন বহাল ছিল; গণপরিষদের হাতে নির্বাচিত কর্মকর্তা আর সিনেটররাই ছিলেন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। কিন্তু ধীরে ধীরে খুবই বিশাল হয়ে পড়েছিল সাম্রাজ্যটি। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   বিপ্লবের কাল শত শত বছর ধরে রোমে কার্যত একইরকম শাসন বহাল ছিল; গণপরিষদের হাতে নির্বাচিত কর্মকর্তা আর সিনেটররাই ছিলেন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। কিন্তু ধীরে ধীরে খুবই বিশাল হয়ে পড়েছিল সাম্রাজ্যটি। তারপরেও গণপরিষদের সদস্য ছিলেন কেবল রোমের মুক্ত মানুষেরা, আর সত্যি বলতে সিনেটররা আসতেন রোমের খুব অল্পসংখ্যক অত্যন্ত ধনী পরিবার থেকে। কাজেই, সব ক্ষমতা আর প্রায় সমস্ত অর্থ-সম্পদই কুক্ষিগত ছিল একটি মাত্র শহরের গুটিকতেক মানুষের হাতে। রোমের দরিদ্র জনসাধারণ ও গোটা সাম্রাজ্যের সবার মাঝে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি করে এ-বিষয়টি। এবং শেষ পর্যন্ত অকার্যকর হয়ে পড়ে ব্যবস্থাটি। অথচ তারপরেও সেটা বদলানো সহজ ছিল না খুব একটা। এক শতকের অল্প কিছু বেশি সময় ধরে গুরুতর এক ক্ষমতার লড়াই চলে রোমে। সেটার শুরু হয় প্রস্তাবিত এক ভূমি সংস্কার নিয়ে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, ধনীরা আর বড় বড় জমির মালিক হতে পারবেন না এবং দাসদের দিয়ে সেগুলো চাষবাদ করাতে পারবেন না। উল্টো, অনেক জমিই তাঁদের ছেড়ে দিতে হবে, এবং সেগুলো তখন ছোট ছোট ভাগ করে গরীবদের মধ্যে, বিশেষ করে সেই সব সৈন্যর মধ্যে বিলি করে দেয়া হবে যাঁরা সেনাবাহিনীতে তাঁদের কাজের মেয়াদ শেষ করেছেন। এই ভূমি সংস্কারের প্রস্তাব যিনি করেন তাঁর নাম তাইবেরিয়াস গ্রকাস (Tiberius Gracchus)। ১৩৩ খৃষ্ট পূর্বাব্দে খুন হয়ে যান তিনি। শুধু তিনিই নন, দশ বছর পর খুন করা হয় তাঁর সহোদরকেও, যিনি ঠিক একই ধ্যান-ধারণার প্রবক্তা ছিলেন। তাঁদেরকে হত্যা করা হলেও তাঁদের চিন্তাকে কিন্তু হত্যা করা যায় নি। আর তা জন্ম দিল কিছু মানুষের ছোট একটি দলের, যদিও তাঁরা যে খুব সংগঠিত ছিলেন সেকথা বলা যাবে না। তাঁরা নিজেদেরকে বলতেন 'populares', আর এ-শব্দটা এসেছে 'populus', বা 'জনগণ' (people) থেকে, যার অর্থ, 'জনগণের দল' (the people's party)। তাঁদের বিরোধী পক্ষে ছিলেন ধনী সব সিনেটর আর তাঁদের অনুসারীরা, আর নিজেদেরকে তাঁরা বলতেন 'optimates', বা, 'সেরা' (the best)। তো, এক অর্থে রোমে তখন দেখা দিলো একটি পরিবর্তনকামী বা, প্রগতিবাদী, বা চরমপন্থী দল, আরেকটি রক্ষণশীল দল। একদিকে এই দুই দলের দ্বন্দ্ব নানান…

|| জনগণের জন্য থিয়েটার || সংরক্ষিত হয়েছে এমন সবচাইতে পুরানো লাতিন সাহিত্য বলতে আমরা প্লতাস নামের এক ভদ্রলোকের বেশ কিছু নাটককেই বুঝি। খৃষ্টপূর্ব ২০০ সালের দিকে লেখা হয়েছিল সেসব, আর মঞ্চস্থ হয়েছিল রোমেই। প্লতাসেরই অনুবাদ করা সমসাময়িক কিছু গ্রীক নাটককে সামনে রেখে রচিত হয়েছিল সেগুলো; রোমান পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলে নেয়া হয়েছিল স্থান-কাল-পাত্রী-পাত্র। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   জনগণের জন্য থিয়েটার সংরক্ষিত হয়েছে এমন সবচাইতে পুরানো লাতিন সাহিত্য বলতে আমরা প্লতাস নামের এক ভদ্রলোকের বেশ কিছু নাটককেই বুঝি। খৃষ্টপূর্ব ২০০ সালের দিকে লেখা হয়েছিল সেসব, আর মঞ্চস্থ হয়েছিল রোমেই। প্লতাসেরই অনুবাদ করা সমসাময়িক কিছু গ্রীক নাটককে সামনে রেখে রচিত হয়েছিল সেগুলো; রোমান পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলে নেয়া হয়েছিল স্থান-কাল-পাত্রী-পাত্র। আমরা যাকে সচ্ছল মধ্যবিত্ত বলি তাদের জীবন নিয়েই রচিত এই নাটকগুলো। বণিক, ভূস্বামী আর তাদের স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও দাসেরাই ছিল সেসবের চরিত্র। শেষ অব্দি পুনর্মিলিত হওয়া প্রেমিক-প্রেমিকা, বা হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়ের অপ্রত্যাশিতভাবে উদয় হওয়া, এসব বিষয় ঘিরেই ঘুরপাক খেতো তাঁর নাটকের প্লট। আর সেটিং বা ঘটনাস্থল হিসেবে সবসময়ই থাকত কোনো বন্দর, যেখানে নানান জায়গা থেকে জাহাজ এসে ভিড়ছে। আসলে এরকমই এক বহুজাতিক বা কসমোপলিটান সমাজ হিসেবে বিকশিত হচ্ছিল তখন রোম, কাজেই নাটকগুলো বেশ দ্রুতই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আমরা দেখতে পাই, দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছে এ-ধরনের নাটক। শেক্সপীয়র তাঁর বহু নাটকের বিষয় ও প্লট প্লতাসের কাছ থেকেই নিয়েছিলেন; যেমন, দ্য কমেডি অভ এরর্স হচ্ছে Menaechmi-র আদলে রচিত; আর এমনকি আমাদের সময়ের Dallas-এর মতো দীর্ঘ দিন ধরে চলা সোপ অপেরার কেন্দ্রেও রয়েছে একই মূল বিষয়বস্তু। কিন্তু প্লতাস ছিলেন আরো মজার। প্লট নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতেন না তিনি, তাঁর নজরটা থাকত মূলত বুদ্ধিমান দাস ও কৌতুকপ্রদ ভুল বোঝাবুঝি আর হামবাগ সেনাপতি ও দাপুটে পিতাদের নিয়ে মজা করার দিকে। এই নাটকগুলোতে দাসেরা প্রায়ই নানান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং এমন সমস্ত আচার-আচরণ করে যা করা নিষিদ্ধ ছিল রোমে। একটি নাটকে প্লতাস নান্দীপাঠে (prologue) বলছেন নাটকের এক পর্যায়ে দুই দাস-দাসী বিয়ে করবে, এবং তিনি বেশ বুঝতে পারছেন যে কেলেঙ্কারিটা সহজভাবে নেবে না দর্শকেরা। অথচ অন্যস্থানে কিন্তু কাজটি বৈধ — ‘in Graecia et Carthagini, et hic in nostra terra, in Apulia’ (গ্রীস ও কার্থেজে, এবং আমাদের নিজেদের দেশে, আপুলিয়া-তে)। আপুলিয়া-তে, (অধুনা পাগলিয়া-য়), ইতালির দূর দক্ষিণে, যা তখন কেবলই রোমক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, রীতি-নীতি ছিল গ্রীসের মতন, কিন্তু রোমকরা…

| গ্রীসের সঙ্গে সাক্ষাৎ | বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে রোমকরা যুগের প্রধান সংস্কৃতির প্রান্তসীমায় বাস করছিল। রোম যখন নেহাতই এক ক্ষুদে শহর গ্রীস তখন অনন্য বিকাশ লাভ করে ফেলেছে। নির্মাণ করেছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক সাহিত্য সম্ভার, ভিত্তি স্থাপন করেছে প্রতীচ্য দর্শন ও বিজ্ঞানের, শিল্প ও স্থাপত্যে এগিয়ে গেছে বড় বড় পা ফেলে। তাছাড়া, তারা ছিল দক্ষ প্রকৌশলী, সফল যোদ্ধা। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   গ্রীসের সঙ্গে সাক্ষাৎ বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে রোমকরা যুগের প্রধান সংস্কৃতির প্রান্তসীমায় বাস করছিল। রোম যখন নেহাতই এক ক্ষুদে শহর গ্রীস তখন অনন্য বিকাশ লাভ করে ফেলেছে। নির্মাণ করেছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক সাহিত্য সম্ভার, ভিত্তি স্থাপন করেছে প্রতীচ্য দর্শন ও বিজ্ঞানের, শিল্প ও স্থাপত্যে এগিয়ে গেছে বড় বড় পা ফেলে। তাছাড়া, তারা ছিল দক্ষ প্রকৌশলী, সফল যোদ্ধা। এসবের কোনোটিই কিন্তু তারা শূন্য থেকে শুরু করেনি, বরং বহু আগে মিশর ও মেসোপোটেমিয়ার মহত সভ্যতা যা সৃষ্টি করেছিল তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছিল নিজেদেরটি। তবে তাদের বিশেষ কৃতিত্ব হচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা ছাড়িয়ে গিয়েছিল পূর্বসূরীদের, এবং তারপর নিজেদের অর্জনগুলো তুলে দিয়েছিল অন্যদের হাতে। খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম ও চতুর্থ শতকের ব্যাপক সাংস্কৃতিক বিকাশের সময়, আধুনিক গ্রিসের সঙ্গে সেই সময়ের যে এলাকাটা মোটামুটি মিলে যায় সেটা অসংখ্য ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। চতুর্থ শতকের শেষদিকে মেসিডনিয়া রাষ্ট্রটি সেই ছোট রাষ্ট্রগুলোকে নিজের অধীনে নিয়ে আসে, আর সেটির রাজা আলেকজান্ডার নেমে পড়েন একের পর এক রাজ্য জয়ের এক অসাধারণ অভিযাত্রায়। তার ফলে গ্রীস থেকে লিবিয়া, অর্থাত পূর্ব ভূমধ্যসাগর ঘিরে থাকা প্রতিটি দেশ ও আধুনিক সময়ের ইরাক আর ইরান হয়ে একেবারে পাকিস্তান ও ভারত পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন তিনি। সে-সাম্রাজ্য শিগগিরই ভেঙে পড়লেও বিভিন্ন রাষ্ট্র গ্রীকরাই শাসন করতে থাকে, আর সেসব স্থানে গ্রীক ভাষাই রয়ে যায় দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে। কাজেই, বেড়ে উঠতে থাকা রোমক সাম্রাজ্যের পুব দিকে ছিল এক বিশাল এলাকা, এবং সেটি সব অর্থেই অনেক অগ্রগতি সাধন করেছিল। এদিকে, গ্রীকভাষী জগতটি বিস্তৃত ছিল দক্ষিণ ইতালি এবং সিসিলি অব্দিও, যেখানে খৃষ্টপূর্ব অষ্টম শতক থেকেই উপনিবেশ ছিল গ্রীসের। এসব অঞ্চল রোমকদের অধীনে আসার পর পরই তারা গ্রীকদের সংস্পর্শে আসে, পরিচিত হয় গ্রীক সংস্কৃতি ভাষার সঙ্গে। এর ফলে বিরাট এক পরিবর্তন আসবে রোমকদের নিজেদের মধ্যে, তাদের ভাষায়। এই পরিচয় হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এবং সুবিকশিত এক শিক্ষাব্যবস্থা ও মহত সাহিত্যের অধিকারী জাতিটির মধ্যে ব্যবধান ছিল বিপুল। রোমকদের হয়ত বর্ণমালা ছিল অনেক আগে থেকেই, কিন্তু…

|| প্রাচীন রোম থেকে ভেসে আসা স্বর || প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান মূলত লিখিত উৎস নির্ভর। আর একথা বলার আপেক্ষা রাখে না যে, যাঁরা সে-সময়ে জীবিত ছিলেন তাঁরা যা লিখে গেছেন সেটাই সবচাইতে নির্ভরযোগ্য ও সেরা। রোমের ক্ষেত্রে প্রাচীন কালের সে-ধরনের উপাদান খুব বেশি পাওয়া যায়নি। [. . .]

Tore Janson-এর, সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket  গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা অনুবাদ   প্রাচীন রোম থেকে ভেসে আসা স্বর প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান মূলত লিখিত উৎস নির্ভর। আর একথা বলার আপেক্ষা রাখে না যে, যাঁরা সে-সময়ে জীবিত ছিলেন তাঁরা যা লিখে গেছেন সেটাই সবচাইতে নির্ভরযোগ্য ও সেরা। রোমের ক্ষেত্রে প্রাচীন কালের সে-ধরনের উপাদান খুব বেশি পাওয়া যায়নি। রোমকদের অবশ্যই একটি বর্ণমালা ছিল এবং সেটা তারা অন্তত ৫০০ খৃষ্টপূর্বাব্দ থেকেই খানিকটা ব্যবহার করতে শুরু করেছিল, কিন্তু ২০০ খৃষ্টপূর্বাব্দর আগের লেখা তেমন কিছু পাওয়া যায় না বললেই চলে, এবং যা পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে মূলত সমাধি ফলকে উৎকীর্ণ লিপি ও সেরকম কিছু জিনিস। কিন্তু একেবারে প্রাচীন যুগ সম্পর্কে আমরা যা জানি তা আসলে লিখে গেছেন সেই সব লেখক যাঁরা ধরার বুকে এসেছিলেন আরো অনেক পরে, যীশু খৃষ্টের জন্মের কাছাকাছি সময়ে। তো, সেই প্রাচীনতম সময়ের এতো কম জিনিস-পত্র পাওয়ার কারণ সম্ভবত এই যে, লেখার মতো বা শুরু করার মতো সেরকম উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না আসলে। আর সে-সময়ে রোমকদের লেখালেখির অভ্যাসটাও গড়ে ওঠেনি তেমন একটা। যাঁদেরকে লেখক বলা যেতে পারে তাঁদের দেখা মেলেনি খৃষ্টপূর্ব ৩য় শতকের আগে। কিন্তু তাঁদের লেখার টুকরো টাকরা যা কিছু পাওয়া গেছে তা দেখে বলা যায় তাঁরা লেখক হিসেবে খুব একটা সুবিধের ছিলেন না। লাতিন রচনার কোনো লিখিত আদর্শ পাওয়া যায় না, পাঠশালাগুলোতেও ছিলো না লাতিনে লিখিত কোনো নির্দেশনা। কাজেই, আদ্দিকালের রোমকরা কি ভাবতো, কেমন ছিল নানান বিষয় সম্পর্কে তাদের আবেগ-অনুভূতি সে সম্পর্কে আসলে আমরা তেমন কিছুই জানি না। তবে, প্রাচীন রোমকরা কেমন ছিল সে-বিষয়ে একজন বিশেষ ব্যক্তির লেখা একটি বইয়ের কথা প্রায়ই বলা হয়, আর তিনি হলেন মারকাস পরকিয়াস কাতো, বা, বড় কাতো। কার্থেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি, এবং তিনি যেসমস্ত কারণে বিখ্যাত তার একটি হচ্ছে সিনেটে তাঁর অধিকাংশ বক্তৃতাই তিনি শেষ করতেন এই কথা দিয়ে: 'Praetérea cénso Cartháginem esse delendam' (তাছাড়া আমার মত হচ্ছে কার্থেজকে ধ্বংস করা উচিত। ) কাতো মারা যান ১৪৯ খৃষ্ট পূর্বাব্দে, আর যে বইটি তিনি…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.