Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর
গ্রীসের সঙ্গে সাক্ষাৎ
বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে রোমকরা যুগের প্রধান সংস্কৃতির প্রান্তসীমায় বাস করছিল। রোম যখন নেহাতই এক ক্ষুদে শহর গ্রীস তখন অনন্য বিকাশ লাভ করে ফেলেছে। নির্মাণ করেছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক সাহিত্য সম্ভার, ভিত্তি স্থাপন করেছে প্রতীচ্য দর্শন ও বিজ্ঞানের, শিল্প ও স্থাপত্যে এগিয়ে গেছে বড় বড় পা ফেলে। তাছাড়া, তারা ছিল দক্ষ প্রকৌশলী, সফল যোদ্ধা। এসবের কোনোটিই কিন্তু তারা শূন্য থেকে শুরু করেনি, বরং বহু আগে মিশর ও মেসোপোটেমিয়ার মহত সভ্যতা যা সৃষ্টি করেছিল তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছিল নিজেদেরটি। তবে তাদের বিশেষ কৃতিত্ব হচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা ছাড়িয়ে গিয়েছিল পূর্বসূরীদের, এবং তারপর নিজেদের অর্জনগুলো তুলে দিয়েছিল অন্যদের হাতে।
খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম ও চতুর্থ শতকের ব্যাপক সাংস্কৃতিক বিকাশের সময়, আধুনিক গ্রিসের সঙ্গে সেই সময়ের যে এলাকাটা মোটামুটি মিলে যায় সেটা অসংখ্য ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। চতুর্থ শতকের শেষদিকে মেসিডনিয়া রাষ্ট্রটি সেই ছোট রাষ্ট্রগুলোকে নিজের অধীনে নিয়ে আসে, আর সেটির রাজা আলেকজান্ডার নেমে পড়েন একের পর এক রাজ্য জয়ের এক অসাধারণ অভিযাত্রায়। তার ফলে গ্রীস থেকে লিবিয়া, অর্থাত পূর্ব ভূমধ্যসাগর ঘিরে থাকা প্রতিটি দেশ ও আধুনিক সময়ের ইরাক আর ইরান হয়ে একেবারে পাকিস্তান ও ভারত পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন তিনি। সে-সাম্রাজ্য শিগগিরই ভেঙে পড়লেও বিভিন্ন রাষ্ট্র গ্রীকরাই শাসন করতে থাকে, আর সেসব স্থানে গ্রীক ভাষাই রয়ে যায় দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে।
কাজেই, বেড়ে উঠতে থাকা রোমক সাম্রাজ্যের পুব দিকে ছিল এক বিশাল এলাকা, এবং সেটি সব অর্থেই অনেক অগ্রগতি সাধন করেছিল। এদিকে, গ্রীকভাষী জগতটি বিস্তৃত ছিল দক্ষিণ ইতালি এবং সিসিলি অব্দিও, যেখানে খৃষ্টপূর্ব অষ্টম শতক থেকেই উপনিবেশ ছিল গ্রীসের। এসব অঞ্চল রোমকদের অধীনে আসার পর পরই তারা গ্রীকদের সংস্পর্শে আসে, পরিচিত হয় গ্রীক সংস্কৃতি ভাষার সঙ্গে। এর ফলে বিরাট এক পরিবর্তন আসবে রোমকদের নিজেদের মধ্যে, তাদের ভাষায়। এই পরিচয় হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এবং সুবিকশিত এক শিক্ষাব্যবস্থা ও মহত সাহিত্যের অধিকারী জাতিটির মধ্যে ব্যবধান ছিল বিপুল। রোমকদের হয়ত বর্ণমালা ছিল অনেক আগে থেকেই, কিন্তু সেটা তারা নানান চুক্তিপত্র, আইন-কানুন, ও সমাধিফলকের গায়ে উতকীর্ণ লিপি ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করেনি বললেই চলে। এবার তাদের জানার সুযোগ হলো যে ওসব ছাড়াও লেখ্য ভাষাকে শিল্পের নানান সৃজনশীল কাজে এবং স্রেফ পড়ার আনন্দের কাজেই ব্যবহার করা যায়।
বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রীকদের এই প্রভাবটা ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকল রোমকদের মধ্যে। আর এই সময়টায় পুব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমেই প্রবল থকে প্রবলতর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রকাশ ঘটাতে থাকল রোমকরা। যীশুর জন্মের সময় নাগাদ তারা খোদ গ্রীস আর আলেকজান্ডারের সময় থেকে যেসব এলাকা গ্রীককে নিজেদের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করতো সেগুলোকে নিজেদের অধীনে নিয়ে এসেছিল। তার ফলে গ্রীক জীবনযাপনের ধরন, গ্রীক বিজ্ঞান, গ্রীক শিল্প এবং অবশ্যই গ্রীক সাহিত্যের বিপুল প্রভাব পড়ে তাদের ওপর। এক সময় দেখা যায়, লেখাপড়া জানা যে কোনো রোমকই গ্রীক পড়তে ও লিখতে পারছে। এ-কথা অনেকটাই বলা চলে যে, গ্রীক আর রোমক সভ্যতা যেন এক সঙ্গে মিলেমিশে একটা সাধারণ সংস্কৃতিতে পরিণত হলো। তবে সেটা ছিল একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া যা কখনোই পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি।
সাহিত্যেই সম্ভবত গ্রীক আদর্শগুলো সবচাইতে ভালোভাবে ফুটে উঠেছিল। সত্যি বলতে কি, রোমকরা সাহিত্য রচনার পুরো ধারণাটিই নিয়েছিল গ্রীকদের কাছ থেকে। আর তাদের প্রথম রচনাগুলো ছিল মূল গ্রীক রচনার সরাসরি অনুবাদ। কিন্তু ধীরে ধীরে রোমকরা তাদের নিজস্ব ঘটনা ও বিষয় খুঁজে পায় এবং যেসব নমুনা বা আদর্শ সামনে রেখে তারা এসব সাহিত্য রচনা করছিল সেগুলোর সঙ্গে শিগগিরই এক প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে তারা, একসময় এমনকি সেগুলোকে ছাড়িয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করতে থাকে। লাতিন সাহিত্য ধীরে ধীরে গ্রীক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় এবং এক পর্যায়ে সেটা গোটা ইউরোপের আদর্শ হয়ে দাঁড়ায় পরবর্তী দু’হাজার বছরের জন্য।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ৫ | জি এইচ হাবীব