যেসব গরুকে নাম ধরে ডাকা হয় নামহীন গরুর চাইতে তারা বেশি দুধ দেয় — এমন গবেষণা উপস্থাপন করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের ক্যাথরিন ডগলাস এবং পিটার রওলিনসন। কেবল এ দু’জনই নয়, অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানার জন্য দশটি ক্যাটাগরিতে ঘোষিত হয়েছে ২০০৯ সালের নোবেল পুরস্কার। এর মধ্যে মাথা লক্ষ্য করে নয় বরং মাথার ওপর দিয়ে বোতল ছুঁড়ে মারার পরামর্শ দেয়ার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার যেমন দেয়া হয়েছে, তেমনি সর্বোচ্চ ৫০টি জরিমানার টিকিট লেখার জন্য দেয়া হয়েছে সাহিত্যে নোবেল।
অবাক হওয়ার মতো খবর হলেও এই ঘটনা পুরোপুরি সত্যি। তবে এই নোবেল পুরস্কার সুইডিশ একাডেমি ঘোষণা করে না। আইজি নোবেল নামের মজার এই পুরস্কার দেয়া হয় একটি বিজ্ঞান বিষয়ক হাসির পত্রিকা এআইআর-এর পক্ষ থেকে। তবে পুরস্কার প্রদানের স্থান যেনতেন নয়। প্রতিবছর অক্টোবর মাসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার-হলে এই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। অভিনব আবিষ্কারকদের হাতে আইজি নোবেল তুলে দেন খ্যাতনামা নোবেল বিজয়ীরা। এই পুরস্কারের মূল স্লোগান হলো : ‘প্রথমে মানুষকে হাসতে দিন, তারপর চিন্তা করার সুযোগ দিন’। ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসে এই পুরস্কার ঘোষিত হয়ে আসছে। পশু চিকিৎসা, শান্তি, জীববিজ্ঞান, চিকিৎসা, অর্থনীতি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, জনস্বাস্থ্য এবং গণিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। আইজি নোবেল — এই নামের মধ্যেও রয়েছে কৌতুক। আইজি শব্দটি ইংরেজি ignobel শব্দের সংক্ষেপিত রূপ। এর অর্থ হল তলানি বা নিচু। অপরদিকে ডায়নামাইটের আবিষ্কারক এবং নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেলের নামও এর সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে যাঁরা আইজি নোবেল জয় করেছেন নীচে তাঁদের তালিকা ও কীর্তির কথা তুলে ধরা হলো :
পশু চিকিৎসা : যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসলের ক্যাথরিন ডগলাস ও পিটার রওলিনসন এই বিভাগে নোবেল পেয়েছেন। তাঁদের গবেষণায় দেখানো হয়েছে : নামওয়ালা গরু নামহীন গরুর চাইতে বেশি দুধ দেয়।
শান্তি : সুইজারল্যান্ডের বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মাথা লক্ষ্য করে বিয়ারের বোতল না ছুঁড়ে মাথার ওপর দিয়ে ছোঁড়ার পরামর্শ দিয়ে জিতে নিয়েছেন শান্তি পুরস্কার। এঁরা হলেন স্টেফান বোলিগার, স্টিফেন রস, লার্স্ ওস্টার্হেল্বেগ, মিশেল থালি এবং বিট কেনুবুয়েল।
জীব বিজ্ঞান : জাপানের সাগামিহারায় অবস্থিত কিটাসাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিন বিভাগের ফুমিআকি তাগুচি, সং গউফুউ এবং ঝাং গুয়াংলেই জীববিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন। এঁরা পাণ্ডার মলের সাথে নিঃসৃত ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে রান্নাঘরের আবর্জনা পচানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন।
অর্থনীতি : আইসল্যান্ডের ৪টি আইসল্যান্ডিক ব্যাংকের পরিচালক, কর্মকর্তা ও সম্পাদক এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন। পুরস্কার কমিটির মতে এঁরা দেখিয়েছেন কী করে একটি ক্ষুদ্র ব্যাংক রাতারাতি বড় ব্যাংকে পরিণত হতে পারে এবং একটি বড় ব্যাংক কী করে খুবই স্বল্প পুঁজির ব্যাংকে পরিণত হয়। উল্লেখ্য, আইসল্যান্ডের সাম্প্রতিক মন্দা মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোকে সরকারের তত্ত্বাবধানে নিয়ে নেয়ার দিকেই এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
পদার্থ বিজ্ঞান : হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাথরিন কে হোয়াইটকাম, ডেনিয়েল ই লিবারম্যান এবং লিজা সাপ্রিও পেয়েছেন পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল। তাঁরা ব্যাখ্যা করেছেন কেন গর্ভবতী নারীরা উপুড় হতে পারে না।
রসায়ন : জনপ্রিয় সুরা টাকিলা থেকে হিরা প্রস্তুতের উপায় বাতলে দিয়ে রসায়নে নোবেল পেয়েছেন মেক্সিকোর হ্যাভিয়ের মোরালেস, মিগেল আপাতিগা এবং ভিক্তর কাসতানো।
সাহিত্য : সাহিত্যে এ বছর নোবেল পেয়েছে আয়ারল্যান্ডের পুলিশ বিভাগ। বিপজ্জনক গাড়ি চালানোর জন্য এই বিভাগ থেকে ‘প্রাওজাদি’ নামের জরিমানার টিকিট প্রদান করা হয়। কমিটির মতে এর সাহিত্যমূল্য নেহাত কম নয়।
জনস্বাস্থ্য : শিকাগোর এলেনা বড্নার, রাফায়েল লি এবং সান্ড্রা মারিজনে পেয়েছেন জনস্বাস্থ্যে নোবেল পুরস্কার। এঁরা নারীদের পরিধানের বক্ষোবন্ধনী বা ব্রা-কে গ্যাস-মাস্কে রূপান্তর করে দেখিয়েছেন।
গণিত : জিম্বাবুয়ের রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর গিদেওন গনো-কে দেয়া হয়েছে গণিতের জন্য পুরস্কার। তিনি এক সেন্ট থেকে একশ’ ট্রিলিয়ন ডলারের নোট ছেপে গণিতের সংখ্যারাশির উপর নিজের ভালোবাসার প্রমাণ রেখেছেন। গণিতপাগল এই মানুষটির হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে এবারের গণিতের নোবেল পুরস্কারটি।
বিবিসি অবলম্বনে
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৭ comments
মাহতাব - ৪ অক্টোবর ২০০৯ (৫:০৩ অপরাহ্ণ)
মুনির আমরা কি তোমার মাঝে নতুন শিবরামকে পেতে যাচ্ছি? লেখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ্।
আহমেদ মুনির - ৪ অক্টোবর ২০০৯ (৭:৩৯ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ্ মাহতাব । সিরিয়াসনেসের ভিড়ে একটু হাসি টনিকের মত কাজ করে কী ?
অবিশ্রুত - ৫ অক্টোবর ২০০৯ (৫:৫০ পূর্বাহ্ণ)
কেউ কি দয়া করে মতিউর রহমানের কাছে এই লেখাটার একটা লিংক পাঠাবেন?
উনি জানতে পারলে, দৃঢ় বিশ্বাস, অচিরেই প্রথম আলো তাদের রাধুনি ও সাহিত্য পুরস্কারের পাশাপাশি এরকম একটি ‘প্রথম আলো হাসুনি পুরস্কার’ অথবা ‘প্রথম আলো হাসিত্য পুরস্কারের’ আয়োজন করবে।
ধন্যবাদ আহমেদ মুনির লেখাটির জন্য।
ইমতিয়ার - ৫ অক্টোবর ২০০৯ (৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ)
আহ্, কত অজানা রে…
ধন্যবাদ, মুনির এই টনিকের জন্যে।
জানেনই তো, আমরা হলাম বাঙালি মানুষ, ভাত না পেলেও খাট্টার জন্যে কান্নাকাটি করি।
মাঝেমধ্যে এরকম খাট্টার যোগান দেবেন, প্লিজ।
Abu Naser Robii - ১০ অক্টোবর ২০০৯ (২:১৬ পূর্বাহ্ণ)
মজার লেখা!
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ১৭ অক্টোবর ২০০৯ (১১:০৭ অপরাহ্ণ)
খুবই মজার লেখা। এমন মাথা খাটাখাটির লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
ইমন - ১৮ আগস্ট ২০১৩ (২:১২ পূর্বাহ্ণ)
Nice.. এই লেখার উপর লেখককে নবেল দেয়া উচিত ।