বর্তমানে কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা, শারিয়া ল’ — মুসলিম ক্যানাডিয়ান কংগ্রেস-এর পরিচালক এবং ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেস-এর সহযোগী সদস্য হাসান মাহমুদের ইসলাম ও শারিয়া বইটির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এই আলোচিত ও সমাদৃত বইটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার অবকাশ রয়েছে। বৃহত্তর পাঠক সমাজকে এই আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে লেখক ইসলাম ও শারিয়া-কে ই-বুক হিসেবেও প্রকাশ করেছেন (প্রদত্ত লিন্ক থেকে ই-বুকটি ডাউনলোড করুন)।

‘রাজনৈতিক ইসলাম’-এর উত্থানের বিপদ কেবল বাংলাদেশেই নয়, বর্তমানে বিশ্ব জুড়েই তা আলোচিত। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামের মর্মবাণী সম্পর্কে ধারণা লাভেও সহায়ক হবে হাসান মাহমুদের এই বইটি। ইসলামে মানবাধিকার প্রসঙ্গও এখানে সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে। লেখকের নিজের ভাষায় :

এ বইয়ে দেখানো হলো কিভাবে ইসলামের অপব্যবহার করে কোরাণ-বিরোধী, নারী-বিরোধী, ও মানবতা-বিরোধী এক ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী অপদর্শন প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

পর্যালোচকের (বেলাল বেগ) মতে,

একটি দীর্ঘ অনুপ্রাণিত বক্তৃতার মতো, অসাধারণ তেজস্বী ভঙ্গীতে লেখা এই বইটি ধার্মিক-অধার্মিক, মুসলমান-অমুসলমান, জামাতে ইসলামি, ছাত্রশিবির সহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, স্কুল-কলেজ এমনকি মাদ্রাসার ছাত্র সহ লেখাপড়া জানা প্রত্যেক মানুষের পড়া উচিত।

ই-বুকটি ডাউনলোড করে নিয়ে পড়ার জন্য ও আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য সকলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। লেখক নিজেও এ আলোচনায় অংশ নেবেন।

আমরা আশা করি, বাংলাদেশের ধর্মব্যবসায়ী ও ১৯৭১-এ ধর্মের নামে গণহত্যায় লিপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের স্বরূপ উন্মোচনেও সহায়ক হবে হাসান মাহমুদের এই বই। পুরো বইটি এখানে এমবেড করে দেয়া হল পাঠকরে সুবিধার্থে:

১২ comments

  1. অবিশ্রুত - ২৭ এপ্রিল ২০০৯ (১০:৪৬ অপরাহ্ণ)

    একনজর চোখ বুলিয়েই বুঝতে পারছি, খুবই নিষ্ঠা ও একাগ্রতা নিয়ে একটি প্রয়োজনীয় কাজ করেছেন হাসান মাহমুদ। অচিরেই বইটি মনযোগ দিয়ে পড়ার আশা রাখি।
    প্রসঙ্গত মনে পড়ছে আবদুল বারী-র লেখা ইসলামে নারীর বৈষয়িক অধিকার সংক্রান্ত একটি পুস্তিকার কথা। আশির দশকে প্রকাশিত এ পুস্তিকাটি এখনও নিষিদ্ধ। এ-পুস্তিকা প্রকাশের কারণে আবদুল বারীকে সাময়িক কারাভোগও করতে হয়েছিল। পরে পুস্তিকাটি নব-আকারে প্রকাশিত হয় প্র্যাক্সিস জার্নাল নামের এক ত্রৈমাসিক সংকলনে। প্র্যাক্সিস জার্নালের ওই সংখ্যাটিও নিষিদ্ধ হয়। প্রবন্ধটি প্রকাশের সুবাদে প্র্যাক্সিস জার্নালের সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি খান সাহেব প্রচুর সুনাম অর্জন করেন (অবশ্য তিনি এমনিতেও প্রচুর সুনামের অধিকারী)। খান সাহেব অবশ্য এখন আর প্র্যাক্সিসের দর্শনে বিশ্বাস করেন বলে মনে হয় না।

  2. মাসুদ করিম - ৯ মে ২০০৯ (১:৪৫ অপরাহ্ণ)

    সাধারণত আমি ধর্মবিষয়ক বই পড়ি না। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারণ আমি এই বইটিও পড়িনি,কিন্তু আবার মন্তব্য করতে যাচ্ছি। আমি বইটি নিয়ে মন্তব্য না করে ইসলাম নিয়ে আমার উপলব্ধি বলার চেষ্টা করব। একেবারে প্রথমেই আমি আমার যে সিদ্ধান্তটি জানাতে চাই তা হল — পৃথিবীর কোনো ধর্মই শান্তির ধর্ম নয়, এবং সে অর্থে ইসলামও কোনোভাবেই কোনো শান্তির ধর্ম নয়। আমরা ইদানীং ওয়াহাবি বা দেওবন্দি বা জেহাদিদের ইসলামের শান্তি নষ্ট করার জন্য দায়ী করছি — এবং সুফি বা সাধারণ সুন্নিদের শান্তিকামী মুসলমান হিসেবে দেখছি — কিন্তু কী অর্থে এরা শান্তিকামী, শুধু জেহাদ চায় না, সাম্প্রদায়িক নয় এই অর্থেই ওরা শান্তিকামী। কিন্তু এই সুফি বা সাধারণ সুন্নিরা যে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে কী পরিমাণ কুসংষ্কারাচ্ছন্ন তা আমরা বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত টের পাই। শবে বরাত, শবে কদরের রাত কী জঘন্য নামাজি ও মাজারি তামাশা তৈরি করে তা আমরা যারা চট্টগ্রাম থাকি তারা বাস্তবেই দেখতে পাই। তাই আমার মতে শুধু শরিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে নয় আমাদের একই ভাবে খেয়াল রাখতে হবে এ সুযোগে যেন কুসংষ্কারাচ্ছন্ন মাজারি ইসলাম আমাদের জনসাধারনের উপর চেপে বসতে না পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে বিজ্ঞান ও প্রগতির পথ কোনো ধর্মেই নেই। আমরা যদি ধর্মীয় জীবনযাপন করতে চাই আমরা ধর্মীয় জীবনযাপনই করি। অহেতুক ধর্মের scientific বা progressive ব্যাখ্যা খুঁজে হয়রান না হয়ে আমাদের উচিত বিজ্ঞান ও প্রগতির দিকে আমাদের নিবিষ্টতা বাড়ানো।

    আমি এখানে দুটি উপন্যাসের উল্লেখ করতে চাই। একটি সৈয়দ ওয়ালিউল্লার ‘লাল সালু’ আরেকটি হুমাযুন আজাদের ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’। এর একটিতে আমরা মাজারি ইসলামের কুসংষ্কারাচ্ছন্নতার চূড়ান্ত পরিচয় পাই, আরেকটিতে জেহাদি বা তালেবানি ইসলামের যে রূপ, জ্ঞান শরিয়া বিপ্লব সবকিছু মিলে, এক ভয়ংকর ক্লেদাক্ত ইসলামের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে : এই দুই থেকেই আমাদের দূরে সরে আসতে হবে। ধর্মের আর কিছুই দেবার নেই আমাদের।

    • কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৪ নভেম্বর ২০০৯ (১০:৩৭ অপরাহ্ণ)

      মাসুদ করিম,
      আপনার ইমোশন আমি হয়ত বুঝতে পেরেছি, হয়ত পারিনি। কিন্তু আপনি ধর্ম বিষয়ে যেভাবে নাখোশ ভাব দেখালেন তা কিন্তু সঠিক কাজ বলে মনে হয় না। আপনি যদি শুধু আপনাকে নিয়েই কাজ করেন বা থাকতে চান, তা ভিন্ন; কিন্তু জনমানসের পালস ধরতে হলে মানুষের সামগ্রিক আচরণ থেকে দূরে থাকার কোনো ব্যবস্থাই নেই।
      আর ধর্মে শান্তি বা বিজ্ঞানের কিছুই নেই? প্রতিটি ধর্মই কিন্তু তার উদ্ভবকালে মানুষের জন্য সবোর্ত্তম কাজটিই করেছে। কারণ তা না হলে এর বিস্তার তো রুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে ধর্মে আস্থাশীল মানুষের সময়জ্ঞান বলতে গেলে জিরো। তারা ছয় শতক আর একবিংশ শতকের পার্থক্য বুঝতে পারেন না। কিংবা এটা বুঝলে তো তাদের ধর্মের রাজনীতি অচল হয়ে যায়। আর হিন্দুধর্মের কিছু লৌকিক আচরণ এখনো এই অঞ্চলের সামাজিক জীবনকে কিছুটা হলেও রিলিফ দিয়েছে। কালচারালি এদের যে মাল্টিডাইমেনশন আছে, তাতে অন্য ধর্ম, বিশেষত মুসলিম আর খ্রিষ্টান ধর্মের সামাজিকতাকে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রাখতে পেরেছে। দুইটা ঈদ ছাড়া মুসলমানদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের আর কি আছে বলুন তো? বিয়ে, গায়ে-হলুদ, বার্থডে, মুসলমানি, সামাজিক আচার-ব্যবহার, এমনকি মৃত্যু নিয়ে তো সনাতন ধর্মের আচরণের অনেক দিক, মুসলিম ধর্মের মৃত্যুনিয়ন্তিত আচারের অনেকিকছুই রিলিফ দিতে দেখা যায়। ইসলাম ধর্মকে আরব্য-শৃংখলে বেধে ফেলার যে হুঙ্কার এ ধর্মে আছে, তাতে সনাতন ধর্মের লিবারেল নানান আচরণ বেশ রিলিফ দিতে পেরেছে।
      আর মাজারের প্রসঙ্গে যা বললেন, তারও কিন্তু নানাবিধ প্রায়োগিক দিক আছে। মুসলিম ধর্মে যে একরৈখিক, শৃঙ্খলমুখর প্রাতিষ্ঠানিকতা আছে, মাজার-সংস্কৃতি কিন্তু তা থেকে মুক্তচৈতন্যের মানুষকে জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে কিছুটা হলেও মুক্তি দিতে পেরেছে। অনেক পির-ফকির আবার তাদের সময়ের অন্যায়-অবিচারের বিরু্দ্ধে লড়াই-সংগ্রামও করেছেন। তেমনই একজন চাটগা-এর বদনা শাহ।
      তারচয়ে বড়ো কথা, মানুষের কথকতা জানতে-শুনতে-পরিবর্তন করতে হলে ধর্ম থেকে অত দূরে থাকলে কী করে চলবে? আমি বলতে চাচ্ছি, একজন ধার্মিকের সাথে ছলচাতুরি বা অভিনয় নয়, তাকে তার বোধ থেকে সরাতে হলেও তো তার কথা তার প্রাণের সাথে প্রাণ রেখেই শুনতে হবে। নাকি?

      হাসান মাহমুদের বইটি ই-বুক থেকে এখনও পড়া হয়নি। এটি পড়ার পর আরও হয়ত কিছু মন্তব্য করা যাবে। তবে এটি আমি মানতে রাজি নয় যে, ধর্ম থেকে রাজনীতি আলাদা। রাজনীতিবিহীন কোনো ধর্মই বেচে থাকতে পারে না। আমরা যারা ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করতে বলি, তারা আসলে একটা অতি নিরীহ কৌশল থেকেই বলি। ধর্ম তার সংক্ষুব্ধ-প্রাবল্যের জোরেই রাজনীতির গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে।

      • মোহাম্মদ মুনিম - ২৫ নভেম্বর ২০০৯ (১:০১ অপরাহ্ণ)

        আর ধর্মে শান্তি বা বিজ্ঞানের কিছুই নেই? প্রতিটি ধর্মই কিন্তু তার উদ্ভবকালে মানুষের জন্য সবোর্ত্তম কাজটিই করেছে। কারণ তা না হলে এর বিস্তার তো রুদ্ধ হয়ে যাবে।

        বিজ্ঞান বলতে যদি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বোঝানো হয় তবে এর সাথে ইসলাম বা অন্য কোন ধর্মেরই বিশেষ কোন বিরোধ নেই। তালেবানরা আণবিক বোমা বা বোমারু বিমান তৈরি করার প্রযুক্তি পেলে খুশিই হয়। কিন্তু বিজ্ঞান বলতে যদি বিশ্বব্রহ্মান্ডকে জানা, বোঝা ও ব্যাখ্যা করার একটি বিশেষ পদ্ধতিকে বোঝানো হয়, তবে এর সাথে ধর্মের কোনই সম্পর্ক নেই। প্রযুক্তির ব্যবহার ২৫ হাজার বছর আগের গুহামানবরাও করতো, এবং আগামীতেও মানবজাতি করে যাবে। কিন্তু বিজ্ঞানের ব্যবহার শুরু হয়েছে অতি সম্প্রতি, প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর অনেক স্থানে সেভাবে শুরুই হয়নি, সম্ভবত লৌকিকতা বা ধর্মের কারণেই হয়নি।

        কয়েক বছর আগে পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী এক ইসরায়েলী তরূণীর ইন্টারভিউ শুনেছিলাম, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বিষয়ে তিনি বলেছিলেন “Peace is a wonderful thing, but peace is not the goal, land is the goal”. মানে তিনি কিছুই শুনবেন না, এই বিরাট বিশ্বে তাঁর থাকার জায়গার কোন অভাব নেই, তিনি থাকতে পারেন ইউরোপে বা আমেরিকাতে, এমনকি পশ্চিম তীর থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে ইসরায়েলে, কিন্তু তিনি থাকবেন পশ্চিম তীরে, বাইবেলে বর্ণিত তাঁর promised land এর দখল নিতে। আরও গোটা বিশেক ফিলিস্তিনী শিশু বোমাতে, গুলিতে বা না খেতে পেয়ে মারা যাক, তাতে তাঁর কিছুই যায় আসে না, promised land তাঁর চাইই চাই। পৃথিবীর কোন ধর্মই শান্তির উদ্দেশ্যে আসেনি, এসেছে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসাবে। মোসেস তাঁর হিব্রু দল নিয়ে ফারাওয়ের বিরুদ্ধে সফল বিদ্রোহ করলেন, ইহুদি ধর্ম জন্ম নিল, সেই ইহুদি বিশ্বাস থেকেই খ্রীস্টান আর ইসলাম ধর্ম এলো। মোসেস এর বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে এই ধর্মগুলোর কোনটারই জন্ম হতো না, তাতে মানবজাতির যে বিরাট সর্বনাশ হতো সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

        যেটা প্রায়শই শোনা যায় যে, তালিবানদের ইসলাম ‘প্রকৃত ইসলাম’ নয়, ‘প্রকৃত ইসলামে’ নারীশিক্ষা, নারী স্বাধীনতা সব কিছুই আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ‘প্রকৃত ইসলাম’ কি সেটা নিয়ে অন্তহীন তর্ক চলতে পারে। কিন্তু প্রকৃত ইসলাম কি সেটা এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন, আধুনিক বাংলাদেশকে ‘প্রকৃত ইসলাম’ নিয়ে এতো টানাটানি করতে হবে কেন। ইসলামে গান বাজনা হারাম না হালাল, ইসলামে চিত্রকর্ম হারাম না হালাল, দাড়ি কাটলে গুনাহ হবে কিনা, মেয়েদের হিজাব ইসলামে আছে নাকি এটা আরব ঐতিহ্য, ইসলামে চার বিয়ে করা যাবে তবে স্ত্রীদের সমানাধিকার দিতে হবে, আমাদের দেশের বিভিন্ন সামাজিক বৈঠকে এই জাতীয় আলাপ ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে করা হয়। অধিকাংশ আলাপেই একজন ‘প্রকৃত ইসলাম’ বিশেষজ্ঞ থাকেন, এবং তিনি সবাইকে বোঝান যে ‘প্রকৃত ইসলামে’ গান বাজনা বা চিত্রকর্মে কোনই সমস্যা নেই, ‘প্রকৃত ইসলামের’ মাহাত্ব্যে শ্রোতৃমণ্ডলী আরেকবার প্রীত হন। একবিংশ শতকেও এ জাতীয় হাস্যকর আলাপ যে কি করে চলে, সেটাই আশ্চর্য!

        • কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৫ নভেম্বর ২০০৯ (৪:৪৬ অপরাহ্ণ)

          কিন্তু বিজ্ঞান বলতে যদি বিশ্বব্রহ্মান্ডকে জানা, বোঝা ও ব্যাখ্যা করার একটি বিশেষ পদ্ধতিকে বোঝানো হয়, তবে এর সাথে ধর্মের কোনই সম্পর্ক নেই।

          বিজ্ঞানের বয়সকে তাহলে আপনি আধুনিকতার সাথে সম্পৃক্ত করতে চান? বিজ্ঞানের বয়সকে এভাবে নির্ণয় করা যায়? আমার জানামতে লৌকিক বিজ্ঞান বলে একটা বিষয় আছে- তার বয়স মানুষের সভ্যতার সমান বয়েসি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইউনানি এমনকি আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রকে ইদানীং অনেক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এসবের বয়স কত? সাপে কাটলে যে শক্ত গিট দিতে হয়, দুর্বাঘাস চিবিয়ে ক্ষতস্থানে লাগালে রক্তপ্রবাহ কিছুটা হলেও হ্রাস পায়, আদাপাতার রস কাশিতে ভালো উপকার দেয়। এমনিভাবে বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখাতেই সনাতন বিজ্ঞানের উজ্জ্বল ইতিহাস আছে।

          পৃথিবীর কোন ধর্মই শান্তির উদ্দেশ্যে আসেনি, এসেছে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসাবে।

          মোহাম্মদ মুনিমের এই তথ্যটিও মানা যাচ্ছে না। যিশুখ্রিষ্ট তার জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিকিৎসার জন্য অনেককিছু করেছেন। এমনকি চিকিৎসা শাস্ত্রের নার্সিং-এর অনেককিছুই খ্রিষ্টধর্ম প্রভাবিত। সনাতন ধর্মের প্রভাবে এই অঞ্চলের আচরণ বিজ্ঞানের প্যাটার্নই ভিন্নরূপ ধারণ করে আছে। বৌদ্ধধর্মের মৌলিক প্রবণতাই হচ্ছেই মানুষের জ্ঞানময় কর্মময় উত্থানকে সামনে নিয়ে আসা। এতে নীরিশ্বরবাদীতার চর্চাও লক্ষ করার মতো বিষয়। ইসলাম ধর্ম বিস্তারের ফলে নারীজাতির অধিকারের বিষয়ট (আমি কিন্তু বলছি না যে, ইসলামে মেয়েদের অধিকার বেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে) কিছুটা হলেও সুরাহা হয়েছিল। আরবদেশে মেয়েশিশুকে জ্যান্ত কবর দেয়ার ইতিহাসও ছিল। হযরত মুহাম্মদ এ বিষয়টাতেও নজর দেন। দাস-প্রথা বিলুপ্তকরণেও এ ধর্ম ভালো ভূমিকাই রেখেছিল।
          সবচেয়ে বড়োকথা হচ্ছে, আমি কী মানি বা ভাবি সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ধর্মকে মোকাবেলার বিষয়টি আমাদের চৈতন্যে রাখলে ধর্মপ্রাণ মানুষ বা ধর্মজীবীর সাথে আমাদের সামাজিক বা ব্যক্তিগত সম্পর্কটি কেমন হবে তা বোঝা যায়। এবং তা না-করলে সামাজিক-প্রগতিশীলতার প্রকৃত বিকাশ সম্ভব নয়।

  3. ব্লাডি সিভিলিয়ান - ২৫ নভেম্বর ২০০৯ (৬:১৩ অপরাহ্ণ)

    “যিশুখ্রিষ্ট তার জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিকিৎসার জন্য অনেককিছু করেছেন। এমনকি চিকিৎসা শাস্ত্রের নার্সিং-এর অনেককিছুই খ্রিষ্টধর্ম প্রভাবিত।”
    পুরো নিউ টেস্টামেন্ট পড়া আছে একাধিকবার। কিন্তু এই তথ্য পেলাম এইমাত্র। অলৌকিকভাবে যেখানে তিনি রোগ সারাতে পারতেন, সেখানে চিকিৎসার জন্যে তাঁর কিছু করার কী দরকারই-বা ছিলো? আর, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গৈল বা মাদার টেরেসার কথাই বোধহয় আপনার মনে পড়েছিল লিখতে গিয়ে, নইলে নার্সিং-এর কোনদিকটি ঠিক খ্রিস্টধর্ম-প্রভাবিত জানাবেন কি?
    “দাসধর্ম বিলুপ্তকরণে এধর্ম ভালোই ভূমিকা রেখেছিলো”।
    ইতিহাস অজ্ঞতার এক চরম নজির। এভাবেই বুঝি প্রগতিশীলেরা এখন ধর্মের দার্শনিকতা আবিষ্কার করছেন?

    • কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৫ নভেম্বর ২০০৯ (১০:১৭ অপরাহ্ণ)

      ব্লাডি সিভিলিয়ানকে তার বক্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তবে কথা হচ্ছে, চিকিৎসাক্ষেত্রে অলৌকিকতার কোনো চিহ্ন আছে বলে আমার জানা নেই। যিশু তার জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই অন্ধ, কুষ্ঠরোগী, অসহায় পথচারীকে সেবা দান করেছেন। মানসিক চৈতন্যের উত্তরণ ঘটিয়ে চিকিৎসা প্রদানও করেছেন। তা-ই তার অনুসারীরা অলৌকিক কর্ম বলে চালিয়ে দিতেন বা এখনও তার নামে বহাল আছে। ফ্রোরেন্স নাইটিঙ্গল আর মাদার তেরেসার কর্মপরিধীর স্পিরিট এসেছে খ্রিষ্টধর্ম থেকেই।
      হযরত মুহাম্মদ তার কাজে-কর্মে দাসদের মুক্ত করার গল্প চালু আছে। এর বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে তেমন কিছু আমি বলতে পারব না। এর সবই ধর্মভিত্তিক জনশ্রুতি থেকে পাওয়া।

  4. মোহাম্মদ মুনিম - ২৭ নভেম্বর ২০০৯ (১২:২২ অপরাহ্ণ)

    wikipedia তে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা যেভাবে আছে

    ………. body of techniques for investigating phenomena, acquiring new knowledge, or correcting and integrating previous knowledge. To be termed scientific, a method of inquiry must be based on gathering observable, empirical and measurable evidence subject to specific principles of reasoning. A scientific method consists of the collection of data through observation and experimentation, and the formulation and testing of hypotheses.

    গাছ গাছালী থেকে পথ্য তৈরী করাকে ‘লৌকিক বিজ্ঞান’ বলা হলেও এই সমস্ত পথ্য শত শত বছরের Trial and Error এবং পর্যবেক্ষণ এর ফসল। Trial and Error এবং পর্যবেক্ষণ আমরা দৈনন্দিন জীবনেও করে থাকি, অতি অনুন্নত উপজাতির মধ্যেও শিকারের অস্ত্র, বাসস্থান, পরনের কাপড় তৈরী করার প্রযুক্তি আছে, সবই Trial and Error বা পর্যবেক্ষণ এর ফসল। এগুলোর আবিষ্কার কোন বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়াতে হয়নি।
    এখন পর্যন্ত মানবজাতির সবচেয়ে বড় ‘আবিষ্কার’ আগুনের ব্যবহার, যা করতে হাজার বছর লেগেছে, মানুষ আগুন ব্যবহার করেছে, কিন্তু আগুন কেন ধরে, কেন নিভে, সেটার ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়নি। সুতরাং আগুনের ব্যবহার করতে পারাটা কোন বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া নয়, আগুনের ধর্ম ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়াটি বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। আবার আগুনের ধর্ম পুরোপুরি বুঝে ফেলা গেছে এমন কোন দাবি করাটাও বিজ্ঞানসম্মত নয়। আর এখানেই ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ। ধর্ম দাঁড়িয়ে আছে absolute truth এর উপর, বিজ্ঞানে absolute truth বলে কিছু নেই।
    ইসলামপূর্ব আরবে মেয়েশিশু হত্যা বা female infanticide প্রচলন কেন ছিল এবং ইসলামে নারীর অধিকার বিষয়ে নিয়ে একটি লিঙ্ক এখানে।

    • কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৭ নভেম্বর ২০০৯ (৪:০৬ অপরাহ্ণ)

      এটা ঠিক যে ধর্মগ্রন্থসমূহেই শেষ কথা বলে কিছু থাকে। অন্য কোথাও তা নেই। ট্রায়াল বা অ্যারোর সর্বত্রই থাকে। কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসকে তো অস্বীকার করা মুশকিল।
      আর আপনি উইকিপিডিয়াকে এভাবে এত আস্থার সাথে উদ্ধৃত কেন করছেন? এটি সবকিছুকে সংক্ষেপে জানানোর এক প্রক্রিয়া মাত্র। সবচেয়ে বড়ো সত্য হচ্ছে, নিজের জ্ঞান নিজের সত্তার সাথে মিশিয়ে প্রকাশ করার সাহস থাকা, প্রচলিত ধারণার বিপরীতে অধিকতর কল্যাণমুখর কথকতাকে প্রকাশ করা অনেক বড়ো ব্যাপার।
      আমার জানামতে, উইকিপিডিয়া সবার কাছে গ্রহণযোগ্য গ্যাঞ্জামমুক্ত একটা ধারণা প্রকাশ করে মাত্র। আপনার বিশ্বাস, বিশ্বাসের প্রবহমানতা আপনার উপরই নির্ভর করে। আমি মনে করছি, বিজ্ঞান সম্পর্কে আপনার ধারণা একটা বদ্ধ জায়গায় আটকে আছে।

      • কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৭ নভেম্বর ২০০৯ (৯:০৮ অপরাহ্ণ)

        পুনশ্চ : আমরা আসলে আমাদের কথার তোড়ে ভুলে যেতে বসেছি যে, এই পোস্টটি মুক্তাঙ্গনের নিজস্ব এক আয়োজন। এই কর্তৃপক্ষ তাদের বাসনা রেখেছিল, মন্তব্যকারীরা হাসান মাহমুদের পুস্তিকা ইসলাম ও শরীয়া পড়ে যেন আলাপে মগ্ন হন। আমরা পাঠকসকল তা থেকে দূর থেকে দূরে সরে থাকার ব্রত নিচ্ছি! আমার এই বোধটি আরো জোরালো মনে হলো উক্ত গ্রন্থটি ডাউনলোড করে পাঠ শুরু করার পরই। এই ক্ষেত্রে আমারও বাসনা থাকল পাঠকগণ যেন পুস্তিকাটি পাঠ করেন। কারণ এতে ইসলামের দৃশ্যত মানবিক দিক, হযরত মুহাম্মদের প্রকৃত ইচ্ছা, মৃত্যুপরবর্তীকালে তার ফলোয়ারগণ মানুষকে শরীয়ার নামে কঠিন শৃংখলে ফেলার পায়তারা করছে। সর্বোপরি এই সময়ের ইসলামকে, বিশেষত কাঠমোল্লাদের মোকাবেলা করার জন্যও এর পাঠ অতি প্রয়োজনীয় এক বিষয়। শরীয়ার বিস্তৃত বিবরণ, নারীর প্রতি ইসলামের আচরণ, ব্যভিচার, মুরতাদ, হিল্লা বিয়ে, গান-বাজনা, শরীয়া নিয়ে মওদুদীর মাতব্বরী, ইসলামের সামাজিকতাকে ভয়াবহ পীড়নের মুখোমুখী করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি বেশ পরিশ্রমী কাজ করেছেন। তবে ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিকতা বিষয়ে তার অনেক কথাকেই মেনে নেয়া যায় না, এবং তা এত সহজ নয়। কারণ ইসলামের প্রাবল্যতা, নির্লজ্জ-নিয়ন্ত্রণ তার এত সহজিয়া ব্যাখ্যায় খুব বেশি কাজে আসবে বলে মনে হয় না। এই ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিকতার বিপরীতে লৌকিক ধর্ম, মাজার-সংস্কৃতির বিকাশের ধারাক্রম নিয়েও কার্যকর আলোচনা করতে পারতেন তিনি। কারণ হাসানের মূল প্রবণতা হচ্ছে, ইসলামের কাঠিন্যকে হিসাবে রাখা এবং তার বিপরীতে কার্যকর সঠিক কাজ করে যাওয়া।
        এই ক্ষেত্রে আমার যেটা মনে হয়, তার কাজসমূহ একধরনের কৌশলের সমাহারই। ধর্ম কখনও তার প্রবণতার, কাঠিন্যের, অপরকে দখলের বাইরে থাকতে পারে না।

        • মোহাম্মদ মুনিম - ২৯ নভেম্বর ২০০৯ (৯:০৭ পূর্বাহ্ণ)

          বইটি আমিও পড়েছি, লেখক বেশ পরিশ্রমসাধ্য কাজ করেছেন সন্দেহ নেই। বিশেষ করে ধর্ষণে চার সাক্ষীর ব্যাপারটা পড়ে চমৎকৃত হয়েছি। তাঁর এই বইটির মূল বক্তব্য হচ্ছে, কোরাণের মাধ্যমেই কাঠমোল্লাদের ঠেকাতে হবে। কোরাণের প্রকৃত ব্যাখ্যার মাধ্যমেই সমাজে শান্তি আসবে। কিন্তু ইসলামে নারীর অধিকার কতটুকু আছে বা ইসলামে জ্ঞান চর্চার উপর কতটুকু জোর দেয়া হয়েছে সেটাকি শুধুই academic debate এর বিষয় নয়? Classical Islam এর ব্যবচ্ছেদ করে একজন বাংলাদেশির কি উপকার হবে? বাংলাদেশে কি প্রকৃত আধুনিক রাষ্ট্র হবে, নাকি কোরান ব্যবচ্ছেদ করে দিন কাটাবে? ইদানীং ইন্দোনেশিয়ার মত দেশ নামাজ টামাজ নিয়ে মহা উৎসাহ দেখাচ্ছে, ইসলামের বন্যায় টেরোরিসম ভেসে যাবে, পশ্চিমা রাও তাতে বেশ তাল দিচ্ছে। মুসলিম দেশগুলোর লোকজন কষে নামাজ পড়লে, শরিয়া চালু করলে পশ্চিমাদের কিচ্ছু যায় আসে না, শুধু টেরোরিসম, পাথর মারা বা হাত কাটার মত র‌্যাডিকাল ব্যাপারগুলো না থাকলেই হলো। আমাদের দেশেও মার্কিনীদের তালে ইমাম প্রশিক্ষণ হচ্ছে, ইমামরা প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামে গ্রামে যাবেন, লোকজনকে কোরাণের প্রকৃত ব্যাখ্যা দিবেন, নারী শিক্ষায় বাধা দিবেন না, টেরোরিসমে উৎসাহ দিবেন না। বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে যতবার গিয়েছি, সামাজিক ব্যাপারগুলোতে (সালিশ এবং অন্যান্য ব্যাপারে) ইমামদের তেমন কোন ভূমিকা দেখিনি। মসজিদে নামাজের ইমামতি করা, শুক্রবারের খুতবাতে রুটিন কিছু কথা বলা আর মিলাদ পড়ানো এই হচ্ছে তাদের দৌড়। বাংলাদেশে শরিয়া নিয়ে যে কয়টি ঘটনা ঘটেছে, সবগুলোই কলকাঠি নেড়েছে চেয়ারম্যান শ্রেণীর লোকজন, মসজিদের ইমাম তাদের কথামত ফতোয়া দিয়ে তাদের কুকর্মে সাহায্য করেছে মাত্র। এখন ইমামদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এক ধরনের legitimacy দেয়া হচ্ছে, গ্রামে গঞ্জে সামাজিক নেতৃত্বে ইমামরা চলে আসলে দেশে ইসলামী ভাবধারার একটা বিশাল underclass তৈরি হবে, সেটা মোটেও ইতিবাচক কিছু হবে না।

          • কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৯ নভেম্বর ২০০৯ (১১:৩২ পূর্বাহ্ণ)

            আপনাকে ধন্যবাদ।
            তবে ফতোয়ার ব্যাপারে গ্রাম্য-সালিশানদের দায়ী করলেই তো সবটুকু হয় না। কারণ তাদের কাজের মৌলপ্রবণতা এসেছে মুসলমান সমাজে চলমান ফতোয়া থেকে। আমরা ধরে নিই যে, ফতোয়া মানেই একজন হুজুর সালিশে হাজির থেকে যা রায় দেন তাই। আসলে ইসলামের একরৈখিক প্রাবল্যবাদিতা অনেক গভীরে বিস্তৃত। নয় কি?

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.