আমাদের দেশে সামাজিক মদ্যপান নিষিদ্ধ। দেশের বিশেষ কিছু ক্লাব, দেশজুড়ে স্বল্পসংখ্যক একজনআরেকজনেরমুখদেখতেনাপাওয়া লাইসেন্সধারী অন্ধকার বার এবং কয়েকটা বার লাইসেন্স পাওয়া হোটেল : মদ কেনা বেচা খাওয়া সব এই কয়েকটা জায়গা ছাড়া আর সবখানে বেআইনি। তাই লুকিয়ে চুরিয়ে মদ্যপানই আমাদের সংস্কৃতি। আর মদ জোগাড় করা ও তা নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানো, হেরোইন জোগাড় ও বহন থেকেও ভীতিকর ব্যাপার। মদ খাওয়ার সবচেয়ে বড় দিক সামাজিক আনন্দ, তা কখনোই গাঁজা, ডাইল, হেরোইনের মতো একক নেশায় চুর হওয়ার অস্ত্র নয়। যদিও মদ খেয়েও নেশাগ্রস্ত হওয়া যায় কিন্তু মদ খেলেই যে নেশা হয় তা নয়। অবশ্য সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ করায়, মদের সামাজিক আনন্দ নষ্ট হওয়ায়, খেয়ে মোদোমাতাল হওয়ার প্রবণতা এখানে খুবই বেশী।
আমরা যখন এক বোতল রেড লেবেল হুইস্কি কিনতে চাই তখন আমাদের ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়, এরপর এটি নিয়ে যেভাবে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়,কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে অনেকের কাছে তা বেশ রোমাঞ্চকর মনে হলেও, কর্মজীবনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে এসব ঝক্কি যে চরম অসম্মানের তা যে কেউ স্বীকার করবেন, আশা করি। সবচেয়ে দু:খজনক একটা অতিসাধারণ বিয়ার যখন ৩৫০ থেকে ৪৫০ দিয়ে কিনতে হয়, তখন সত্যিই চরম নিরানন্দ এই সামাজিক জীবনের অসম্মান সহ্য করা যে কোনো সংবেদনশীল মানুষের জন্যই অসম্ভব বেদনাদায়ক হয়ে উঠতে পারে।
এ অসম্মান থেকে উত্তরণ হবে কী করে
আসলে খুব দ্রুত মদ কেনা বেচা ও খাওয়ার অনুমতি প্রাথমিকভাবে বড় রেস্টুরেন্টগুলোকে দিয়ে দেয়া উচিত(অবশ্যই শুধু খাওয়ার সাথেই তা বিক্রি ও পরিবেশন করা হবে, এবং একটি রেস্টুরেন্ট তার চাহিদা অনুযায়ী বিয়ার ও ওয়াইন কিনবে)। খাওয়া দাওয়ার সাথে মদ, খাওয়াকে আরো আকর্ষণীয় করে। এ এক চরম দুর্দশা যে, একটা চমৎকার শিককাবাব বিয়ার ছাড়া খেতে হচ্ছে আর চিংড়ির মালাইকারির সাথে থেকে থেকে চুমুক পড়ছে না লাল বা সাদা ওয়াইনে। এই উদ্যোগ নি:সন্দেহে সামাজিক আনন্দ বাড়াবে, অবশ্যই ডাইলের উপদ্রব কমাবে। অনেকটা খেলাধূলার সুযোগ থাকার মতো, যেখানে এ সুযোগ থাকে সেখানে অপরাধপ্রবণতা কম থাকে।
এর পাশপাশি চালু করা উচিত পাব। পাব হলো মদ খাওয়ার কাফে। এখানে আর খাওয়া দাওয়া মূখ্য নয়, মদ খাওয়াটাই মূখ্য। পাব চালু হলে আমাদের দেশের বেঢপ, বিশাল, অন্ধকার, অপরাধবোধ জাগানো বারগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত। পাবও তার চাহিদা অনুযায়ী বিয়ার, ওয়াইন, হুইস্কি, জিন, ভদকা,রাম কিনবে এবং শুধুমাত্র পাবেই খাওয়ার জন্য বিক্রি করবে।
এবং দুই ক্ষেত্রেই অবশ্যই মদ বিক্রি করতে হবে এখনকার চেয়ে অন্তত আড়াই গুণ কম দামে। প্রাথমিকভাবে কেউই বাইরে নেবার জন্য মদ কিনতে পারবেন না, অবশ্য পার্টির উদ্দেশ্যে রেস্টুরেন্ট ক্যাটারিং সেবা নিয়ে যে কেউ চাহিদা অনুয়ায়ী মদ নিজের আয়োজিত সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করতে পারবেন।
এভাবে চলতে চলতে সবকিছু এমন পর্যায়ে চলে যাবে তখন শুরু হয়ে যাবে লিকার শপ, যেখান থেকে যে কেউ যখন তখন কিনতে পারবে বিভিন্ন ধরনের মদ।
তখন শুরু করতে হবে নানা নতুন সামাজিক পরিসংখ্যান : কে কত বেশী খাচ্ছে, কীভাবে খাচ্ছে, কারো কারো মদ খাওয়া সামাজিক হুমকি তৈরী করছে কি না, ট্রাফিক পুলিশদের কর্মতৎপরতা আরো কত বাড়ানো যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ। তবে যাই কিছু হোক অসম্মানের কিছুই সেখানে ঘটবে না, এটা নিশ্চিত মানুষকে মদ খেতে না দেয়াই অসম্মানের, কম খাওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহন মোটেই অসম্মানের নয়, বরং সেটা আরো সম্মানের, কারণ, তাতে বোঝা যায়, সমাজ তার মানুষকে নিয়ে কত নিয়োজিত।
এ লেখার একটি বড় পাদটীকা আছে : এতক্ষণ আমরা যে সামাজিক আনন্দের কথা আলোচনা করলাম, তার কোনো তাৎপর্যই থাকবে না, যদি না আমাদের সমাজ রাষ্ট্র সরকার, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামাজিক আনন্দ, কর্মসংস্থানের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটাতে পরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ শুরু না করে।
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।