সাম্প্রতিক সিলেট ভ্রমণের কিছু ছবি ফ্লিকারের মাধ্যমে স্লাইড করে দিয়েছি [...]

ছবি থাকলে আর একটা শব্দও লিখতে ইচ্ছে করে না। সাম্প্রতিক সিলেট ভ্রমণের কিছু ছবি ফ্লিকারের মাধ্যমে স্লাইড করে দিয়েছি, দেখুন। ফ্লিকারের ছবিগুলো তাহমিনা আখতারের তোলা, ক্যামেরা নাইকন কুলপিক্স পি ৬০০০, আমার হাতে উঠেছে টুইটারে শেয়ার করা (আরআইএম ব্ল্যাকবেরি ৯৮১০) তাৎক্ষণিক ছবিগুলো । সিলেটের যেতিনটি জায়গায় ভ্রমণের ছবি এখানে দেয়া হয়েছে তাতে রাতারগুল জলাবন ও সারি নদী যাওয়া খুবই সহজ। কিন্তু বিছনাকান্দি যাওয়া কষ্টসাধ্য, অর্ধেকের বেশি রাস্তা এমনই ভাঙ্গা আপনার মনে হতে পারে সমুদ্রের ঢেউ ডিঙ্গিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। তারপর গোয়াইনঘাট হরদারপাড় বাজারের ঘাটে এসে নৌকা না পেলে হাঁটতে হবে গ্রামের পথে ও পাড়ি দিতে হবে জল পাথরের বাধা তাতে অনায়াসে লেগে যেতে পারে ঘণ্টা দুয়েক, আর নৌকা পেলে লাগতে পারে দেড়ঘণ্টা, বর্ষাকালে হয়ত আরো বিশ-পঁচিশ মনিটি কম। এ পর্যন্তই – একটিও শব্দ না লেখার ইচ্ছে থাকলেও বেশ কিছু শব্দ লিখে ফেলতে হল – কারণটা সহজ, এই মানবজন্মের সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান ‘শব্দ’কে উপেক্ষা করা খুবই খুবই কঠিন। ফ্লিকার স্লাইডশো রাতারগুল জলাবন ১২টি ছবি সারি নদীর সবুজ জলে ১৫টি ছবি বিছনাকান্দির পাথরের খনিতে অভিযান (হদরারপাড় বাজার) গোয়াইনঘাট ২০টি ছবি রাতারগুল সিলেট বাংলাদেশ | @UNESCO #ratargul the swamp forest in sylhet is worth to be natural world heritage pic.twitter.com/236eaGQYJI— masud karim (@urumurum) October 15, 2013 সারি নদী সিলেট pic.twitter.com/fMYFzpWovF— masud karim (@urumurum) October 16, 2013 সিলেট - বিছানাকান্দি( কোয়ারি)- সিলেট নয় দশ ঘন্টার কঠিন পথ pic.twitter.com/RBP14jEyhy— masud karim (@urumurum) October 17, 2013 বিছনাকান্দি কোয়ারি সিলেট pic.twitter.com/EorWDK0Ic0— masud karim (@urumurum) October 17, 2013

সত্তর বছর আগের পাঠশালার স্মৃতিচারণা, দীর্ঘবিস্মৃতির আবরণ উন্মোচন, কঠিন হলেও দুঃসাধ্য নয়, কেননা কিছু কিছু কৈশোরস্মৃতি মস্তিষ্কে আমৃত্যু ধৃত থাকে এবং হৃদয়েও। আমাদের গ্রামটি সিলেটের প্রত্যন্ত এলাকায়, পাহাড়ঘেঁষা অন্য দশটি গ্রামের মতোই, আকারে ছোট, টিলাটালা ও গাছগাছালিতে ভরা, ছোট একটি স্রোতস্বিনী, সচ্ছল-অসচ্ছল জনগোষ্ঠী, সমসংখ্যক হিন্দু-মুসলমান, আমার ছেলেবেলার স্বপ্নরাজ্য। [...]

সত্তর বছর আগের পাঠশালার স্মৃতিচারণা, দীর্ঘবিস্মৃতির আবরণ উন্মোচন, কঠিন হলেও দুঃসাধ্য নয়, কেননা কিছু কিছু কৈশোরস্মৃতি মস্তিষ্কে আমৃত্যু ধৃত থাকে এবং হৃদয়েও। আমাদের গ্রামটি সিলেটের প্রত্যন্ত এলাকায়, পাহাড়ঘেঁষা অন্য দশটি গ্রামের মতোই, আকারে ছোট, টিলাটালা ও গাছগাছালিতে ভরা, ছোট একটি স্রোতস্বিনী, সচ্ছল-অসচ্ছল জনগোষ্ঠী, সমসংখ্যক হিন্দু-মুসলমান, আমার ছেলেবেলার স্বপ্নরাজ্য। পূর্ব কিনারে আসাম-বেঙ্গল রেলপথ, একটি স্টেশন ও সামান্য দূরে ঘাটাঘর আর ওখানেই আমাদের পাঠশালা—আবদুল লতিফ সিদ্দিকী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিখ্যাত মৌলানা, হায়দ্রাবাদ রাজ্যের নিজামের সভাসদ, তাঁর মুরিদবর্গ ছিল সারা ভারতে। প্রথম পাঠশালা-যাত্রা, মনে আছে, ইনাই চাচার কোলে চড়ে। তিনি ছিলেন আমাদের সংসারেরই একজন। ছোটদের অভিভাবকের মতো, আমাদের সম্ভব-অসম্ভব আবদার মেটাতে কসুর করতেন না। মোটাসোটা গড়ন, হাতে লাঠি ইনাই চাচাকে গ্রামের লোকজন কেন জানি সমীহ করত, এমনকি পাঠশালার মাস্টারমশাইও। মাঝেমধ্যে স্কুলেও হানা দিতেন এবং মাস্টারমশাইকে শাসাতেন যেন আমাকে বকাঝকা না করেন। কিশোরকালের স্মৃতিভুবনে তিনি আছেন অনেকটা জায়গাজুড়ে, তাঁকে নিয়ে বড় একটা গল্প লেখাও যায়। স্কুল বলতে একটিই টিনের ঘর, লম্বা বারান্দা, সামনে রাস্তা, তারপর একসার আমগাছ, পেছনে উঠোন, এক পাশে একটি কাঁঠালগাছ, অন্য পাশে নাগেশ্বর, শেষ মাথায় বাঁশ ও গাছগাছালির জঙ্গল। পুরো ঘরে একটিই শ্রেণীকক্ষ, প্রধান শিক্ষক নীরদচন্দ্র শর্মা, সর্বদাই অগ্নিশর্মা, সহকারী আছদ্দর আলী একেবারেই উল্টো, সর্বদাই স্নেহসিক্ত। ‘বেত নেই তো ছেলে নষ্ট’—আদর্শনির্ভর সেকালের পাঠশালাগুলো ছিল কিশোরদের জন্য আনন্দহীন অকুস্থল। স্কুলে যেতাম শেক্সপিয়রের মতো ‘শম্বুকগতিতে পা দুটি টেনে টেনে’ একান্ত অনিচ্ছায়। বেঞ্চিতে বই-শ্লেট রেখেই রেললাইনে ছোটা, উত্তরমুখে একদৃষ্টিতে দাঁড়ানো, মনে দুরাশা—যদি তিনি না আসেন। কিন্তু বৃথা, অনিবার্য ছিল সেই আগমন। ক্ষণিক পরেই চোখে পড়ত পতপত উড়ছে সাদা ধুতির খুঁট, আখেরি নিশান। ছুটে গিয়ে বেঞ্চিতে বসতাম পাথরখণ্ডের মতো। কেন তাঁকে এত ভয় পেতাম? খুব যে মারধর করতেন তাও না। তবে? সেকালে গুরুজনদের ভয় পাওয়ার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল সম্ভবত সে জন্য। তবে এমন শিক্ষক সেকালেও ছিলেন, আজও আছেন, যাঁরা স্বভাবগুণেই নিষ্ঠুর। আজকাল অনেক ছেলেমেয়েরই বাড়ির চেয়ে স্কুলের প্রতি অধিক পক্ষপাত দেখি। আমাদের সময় কিন্তু এমনটি একেবারেই ছিল না। অভিভাবকেরা ছেলেদের শিক্ষকের হাতে সঁপে দিয়ে বলতেন—প্রাণটা আমার, শরীরটা আপনার। এমন বন্দোবস্ত যেখানে, সেখানে কার যেতে ইচ্ছে হবে! তাই স্কুল ফাঁকি দেওয়ার নানা…

যে-কয়েকজন গৃহশিক্ষকের কাছে আমরা পড়েছি ছেলেবেলায়, তাঁদের মধ্যে তিনজনের কথা আমার বিশেষভাবে মনে আছে : সিলেটি স্যার, জসিম স্যার ও অলিউল্লা স্যার। সিলেটি স্যারের পরে―বেশ বিরতি দিয়েই অবশ্য―এসেছিলেন জসিম স্যার এবং আরও কয়েকজনের পরে অলিউল্লা স্যার। জসিম স্যারের বাড়ি ছিল সন্দ্বীপ, অলিউল্লা স্যারের ফেনি। আর সিলেটি স্যার? জীবনকাহিনির মতো তাঁর 'সিলেটি স্যার' অভিধাও ছিল রহস্যময়! [...]

যে-কয়েকজন গৃহশিক্ষকের কাছে আমরা পড়েছি ছেলেবেলায়, তাঁদের মধ্যে তিনজনের কথা আমার বিশেষভাবে মনে আছে : সিলেটি স্যার, জসিম স্যার ও অলিউল্লা স্যার। সিলেটি স্যারের পরে―বেশ বিরতি দিয়েই অবশ্য―এসেছিলেন জসিম স্যার এবং আরও কয়েকজনের পরে অলিউল্লা স্যার। জসিম স্যারের বাড়ি ছিল সন্দ্বীপ, অলিউল্লা স্যারের ফেনি। আর সিলেটি স্যার? জীবনকাহিনির মতো তাঁর 'সিলেটি স্যার' অভিধাও ছিল রহস্যময়! জসিম স্যার জিজ্ঞেস করলেন এক সকালে, 'আচ্ছা, তোমরা কালো কালিতে লাল লিখতে পারো?' এ কেমন প্রশ্ন―কালো কালিতে লাল! কোনও বুদ্ধি মাথায় না আসায় এবং ব্যাপারটা একরকম অলৌকিক বিবেচনা করে আমরা হার মানলাম। জসিম স্যার গম্ভীরভাবে খাতা টেনে নিয়ে কালো কালিতেই গোটা-গোটা অক্ষরে লিখলেন : 'লাল'। ও, এই ঘটনা তাহলে! চমৎকৃত হয়েছিলাম কিছুটা। আর এত দিন পরেও যে জসিম স্যারকে ভুলিনি, তা সেই কালো কালির টানেই! অলিউল্লা স্যার ছিলেন বেজায় বেরসিক মানুষ। তাঁর ঘুম ভাঙত সকালে নির্বিকারচিত্তে অগ্নিসংযোগ করতে করতে। বিড়ি খেতেন প্রচুর। তাঁর শার্টের হাতায় কি বিছানার চাদরে অসংখ্য বিড়িপোড়ার সাক্ষ্য আর ছাই ছড়িয়ে থাকত যত্রতত্র। খুঁটিনাটি নিয়ে ছেলেমানুষিও করতেন আমাদের সঙ্গে। তবে রসবোধ না থাকলেও তিনি কখনও মারধর করতেন না। ছিলেন পাটিগণিতের জাদুকর। সুদকষার প্যাঁচ খুলতে তাঁর দুমিনিটও লাগত না। কিন্তু মেধায়, রসিকতায়, হুল্লোড়পনায় সিলেটি স্যারের সমকক্ষ ছিলেন না কেউই। দীর্ঘকায়, উন্নতনাসা, শ্যামবর্ণ এ-শিক্ষকটিকে ঘিরে অনেক রূপকথার জোনাকি জ্বলত সে-সময়েও। তাঁর আসল নাম না কি রাজু, ধর্ম কী আজও জানা নেই। বাড়ি আদৌ সিলেট কি না সন্দেহ। 'কমিউনিস্টের লোক', না কি কোন ব্যাংকডাকাতি করে পালিয়েছেন সবান্ধবে, আত্মগোপন করে থাকেন নানা জায়গায় ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের রক্ষণশীল বাড়ির কর্তারা কখনও তাঁকে এ-বিষয়ে প্রশ্নাক্ত করেননি, বরং তাঁর বন্ধুরা মাঝেমধ্যে এলে আপ্যায়নাদির পর খোশগল্প করতেন। এমন নিষ্কলুষ প্রশ্রয়ের প্রচ্ছন্ন একটি কারণ ছিল হয়তো এই : জংলি গ্রামের উপান্তে আমাদের বড় বাড়ি। ঝিঁঝির আহাজারি ছাড়া কোনো সাড়াশব্দ থাকত না সারাবেলা। সিলেটি স্যারের আগমনের পরেই (১৯৮৫ সালের দিকে) রাতারাতি জমে উঠল ভূতের বাড়িটা। আর না কি তিনি ঘুমাতেন না রাতে, টহল দিতেন এদিক-সেদিক―যা হোক, চোরডাকাতেরা অন্তত সন্ত্রস্ত থাকবে! সন্ত্রস্ত থাকারই কথা, যা বাজখাঁই গলা! খুব ভোরে উঠে (না কি জেগেই থাকতেন?) বাড়ির চৌহদ্দিতে বার কয়েক চক্কর মেরে এসে ঢক-ঢক করে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.