আমার এক কাকা, কলকাতায়, ১৯৭১এ বাংলাদেশের বিজয় দিবসের পর থেকে, আমও গেল ছালাও গেল, এই বাংলা প্রবাদ আর বলতেন না, তিনি তখন থেকে সারা জীবন বলেছেন, কাশ্মিরও গেল বাংলাদেশও গেল, যা উহ্য রাখতেন বা যা বলতে হতো না, যা সবাই জানতেন – পাকিস্তানের কাশ্মিরও গেল বাংলাদেশও গেল। সেই কথা আবার আমার মনে পড়ল এই ২০২৪এ বাংলাদেশে বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির ক্ষমতা দখল ও তার পরের বিকট সব সংবাদ-পরিক্রমায়।
১৯৬৫ সালের পাঁচই আগস্ট পাকিস্তান তাদের সেনাবাহিনী দ্বারা ট্রেনিংপ্রাপ্ত সন্ত্রাসবাদীদের ঢুকিয়ে দিয়ে ভারতের কাশ্মির দখল করতে চেয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেনি আর ২০২৪ সালের পাঁচই আগস্টে পাকিস্তানি রাজাকারি ট্রেনিং দেয়া গণজঙ্গি আর আমেরিকান ডিপস্টেট সিলমারা লাল এনজিওদের দ্বারা ঠিকই বাংলাদেশের দখল নিয়ে নিল।
এই দখল কত দূর পর্যন্ত যাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এই দখল বাংলাদেশকে এমন নির্মমভাবে বর্বর করে তুলেছে যা বাংলাদেশের বাইরে থেকে কেউ আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না বা বুঝতে পারবও না। জঙ্গি ইসলাম ও লাল এনজিও মিলে যে কী বিভৎস কী নিষ্ঠুর সমাজবাস্ততা তৈরি হতে পারে এবং সেই সমাজবাস্তবতায় শুধুমাত্র দঙ্গলের রাজত্বের তলায় একটা রাষ্ট্রশক্তির সমস্ত কিছু ভুলুণ্ঠিত হয়ে যেতে পারে তাই দেখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত এই বাংলাদেশকে।
১৯৬৫ সালের কথায় আবার এও মনে পড়ল, এটা কোথাও পড়েছিলাম বা ওই কোনো আত্মীয়ের কাছে শুনেছিলাম যে, তখন কলকাতার সাথে সকল যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল – মানে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা দিয়ে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। এবং এই ২০২৪এ এবার বাধ্য হয়েই ভারত সরকারকে বাংলাদেশের সাথে প্রায় সব ধরনের ভিসা সম্পর্কে স্থগিত করতে হয়েছে। আমি সবসময়েই এটা লক্ষ্য করেছি ওই ভারত পাকিস্তান কাশ্মির বাংলাদেশ হিন্দু মুসলমান এই সবকিছুর উত্তেজনার মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয় আমাদের বাংলার – বড় অর্থে আমাদের বাংলা ভাষার। মানে ১৯৬৫তেও সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছিল বাংলা ভাষার আর ওই ২০২৪ সালেও সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয় বাংলা ভাষার।
সম্পর্কটা তো এখন সবচেয়ে বড় হুমকির সামনে পড়েছে, বলছি এই ভাষা সম্পর্কটা, যা আমরা লালন করছিলাম দুই বাংলা মিলে, তার উপর বিভৎসতম হামলাটা হল এবার ২০২৪এ এসে – বাংলাদেশে যারা ক্ষমতা দখল করল এরা বাংলা ভাষাটাকেই এখন চরম হিংসাত্মক একটা ভাষায় রূপান্তরিত করে ফেলছে, তাদের সব ধরনের হিংসাত্মক মনোভাব ও হিংসাত্মক কার্যক্রমের প্রকাশ ঘটাচ্ছে আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলায়।
ভৌগলিক অবস্থানটাকেও তারা তিক্ত করে তুলছে প্রতিনিয়ত। আমরা আমাদের জীবনে বাংলাদেশ থেকে এমন ভৌগলিক তিক্ততার স্বাদ পাব কোনোদিন ভাবিনি। এটা যে কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের, কখনো কি বলতে পারব কোনোদিন, যে বাঙালি শান্তিপূর্ণ জাতি – তার চেয়ে বড় কথা আমাদের আগামি প্রজন্মের কাছে বাঙালি শব্দটাই না অপরিচিত শুধু নয় সেসাথে হিংসাত্মক হানাহানির সমার্থক হয়ে ওঠে।
এমনই ভয়ঙ্কর এই পাকিস্তান, অথচ আমাদের মধ্যেই অনেকেই এই পাকিস্তান বন্দনা ছাড়তেই পারেনি কোনোদিন, তারাই এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সর্বত্র, এবং সেই সাথে পশ্চিমবঙ্গেও আজ ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ গোষ্ঠীর রমরমা চলছে। বাংলাদেশ যদি এই বিধ্বংসী শক্তির করাল থাবা থেকে আর কোনোদিন মুক্ত হতে না পারে তাহলে শুধু যে বাংলাদেশ ধ্বংস হবে তা নয়, আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলা ভাষা আমাদের গভীর প্রেরণার বাঙালি সভ্যতা চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এখনো হয়তো সময় আছে, কিন্তু বেশি সময় আমাদের হাতে নেই, এই সভ্যতা বিরোধী এই বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির করাল গ্রাস থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতেই হবে। আর যদি এই মুক্তি না আসে, তাহলে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে চিরবিদায় জানাতে হবে। ওই পাকিস্তান যারা তাদের রাষ্ট্রীয় শক্তিকে সন্ত্রাসী শক্তিতে পরিণত করেছে যুগের পর যুগ শুধু আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্য, তারাই জিতে যাবে আর বাংলাদেশ হেরে যাবে? ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার শিকার হয়েছিল বাংলাদেশ কিন্তু বাংলার ভাষা সংস্কৃতিকে হারানো যায়নি বরং আরো নতুন শক্তিতে ফিরেছিল বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি। ২০২৪ সালের এই সভ্যতা বিরোধী বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির কাছে হেরে যাবে বাংলাদেশ, না, আরো নতুন শক্তিতে ফিরে আসবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি, বাংলাদেশ হারাবে এই সর্বগ্রাসী অপশক্তিকে।

দুর্মর আশাবাদী ও বিকট হতাশাবাদী উপমহাদেশীয় সংবাদ আসক্ত অরক্ষণশীল পাঠক।
