[আমার একটি অসমাপ্ত খসড়া। বাকিটুকু আমি পাঠকদের আলোচনা ও সমালোচনার উপর ছেড়ে দিচ্ছি]
কয়েকটি বৈশিষ্ট্য মৌলবাদের মধ্যে লক্ষণীয়। যেমন:
(১)সচেতন ও মারমুখী অন্ধত্ব
কিছু অনুমান বা বিশ্বাসকে আগেভাগে প্রশ্নাতীত, বা প্রশ্নকরণ শাস্তিযোগ্য, হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। এই প্রশ্নাতীত হিসাবে ধরে নেওয়াটা কিছুটা সচেতন ভাবে হয়ে থাকে, যদিও তা অনেক সময় সম্পূর্ণ প্রকটিত ভাবে না-ও হতে পারে। এ অনুমান বা বিশ্বাসগুলিকে আমরা মৌল বিশ্বাস বলতে পারি।
(২) অন্ধ ঐকিকরণ
সবকিছুকে — কি এটি প্রাকৃতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে হোক, কিংবা জীবনযাপন সংক্রান্ত কিছু হোক — ঐ মৌল বিশ্বাসগুলি থেকে নির্ণীত/নির্দেশিত হয় বলে, অথবা সেগুলি দ্বারা যথার্থায়ন করা যায় বলে একটি অন্ধ দাবি থাকবে।
(৩) সোনালি যুগ
কম-বেশি সব মৌলবাদীর মধ্যে অতীত এবং ভবিষ্যতে সোনালি যুগের অভিক্ষেপণ থাকবে। অর্থাৎ এখানে অন্ততপক্ষে দুটি সোনালি যুগের কথা চিন্তা করা হবে — অতীতে একটি সোনালি যুগ, এবং ভবিষ্যতে একটি সোনালি যুগ। এই দুটি যুগের মধ্যে কেমন জানি একটি বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান (যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটি নিয়ে আরো বিশ্লেষণ এবং চিন্তা-ভাবনা প্রয়োজন আছে)। অনেক সময় মনে হবে যেন অতীতের সোনালি যুগটিকে ভবিষ্যতের সোনালি যুগ রূপে ফিরিয়ে আনাটাই হচ্ছে মৌলবাদের সংগ্রাম। এই সোনালি যুগগুলি অবশ্যই কিছু — মৌলবাদের দৃষ্টিতে — “অন্ধকার যুগের” সাথে তুলনা করা হবে; এ অন্ধকার যুগগুলিও সোনালি যুগগুলির মতোই অভিক্ষিপ্ত ।
শাহীন ইসলাম
I am an atheist-theist; atheist because I don't believe in a popular God (who is a "who", a person, having all those anthropomorphic attributes); theist because I disagree with Nietzsche when he declares: "God is dead" (here, I assume that Nietzsche took "God" as metaphysics or objectivity). I would rather side with Gandhi when he declares : "I knew that God is true; now, I know that Truth is God". I am a realist with respect to natural sciences, since I believe that there are some real things beneath the natural phenomena. But I am an anti-realist with respect to social sciences. I don't believe that there are some pre-given primary entities like "nations", "communities" and so on; hence notions like "patriotism", "sovereignty" make little sense to me. I remember Lalon's singing: "lalon koy jater ki rup, dekhlam na ei nojore". Yes, like Lalon, I must admit: I don't know what a nation is - or, at least - I haven't found its essence.
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২৯ comments
অবিশ্রুত - ২২ এপ্রিল ২০০৯ (৮:৪৫ অপরাহ্ণ)
অন্যান্য প্রতিটি মানুষের মতোই, মৌলবাদীরাও পরিবর্তনীয়তার মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকে, কিন্তু তাদের দৃষ্টি থাকে অপরিবর্তনীয় দূর অতীতের দিকে। তাঁরা বিশ্বাস করে সেই দূর অতীত ছিল, শাহীন ইসলামের ভাষা ধার করে বলতে হয়, তাঁদের সোনালী যুগ!
নিজেই একটু বোঝার চেষ্টা করি। একটি বিশেষ সময়কে সৌদি আরব এবং ইসলামের ইতিহাসে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়। কারন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর বাংলা বইয়ের শুরুতেই একসময় এ নিয়ে একটি রচনা ছিল (এখনও আছে হয়তো),- তখন আরবের লোকেরা আল্লাহকে বিশ্বাস করিতো না। আরও একটি কারণ, নারীদের তখন হত্যা করা হতো জন্মের সঙ্গে সঙ্গে।
অথচ, ওই সময়েই দেখুন, বিধবা হওয়ার পরও বিবি খাদিজা দাপটের সঙ্গে বাণিজ্য করতেন। এখন কিন্তু সৌদি আরবে কোনও মেয়ের পক্ষে বাণিজ্য করা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত. আল্লাহ আগেও ছিলেন। আরবে সবচেয়ে বড় মূর্তি দেবতার নাম ছিল আল্লাহ। নিরাকার ঈশ্বর প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সকলের আস্থাভাজন হওয়ার জন্যে ওই নামটিকেই নিরাকার স্রষ্টার নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কাজেই আরবের লোকেরা আল্লাহতে বিশ্বাস করতেন না, এ-ও সত্য নয়। হজ্জ্ব- আরবি ভাষায় এই শব্দটির আদি অর্থ হলো, মূর্তি দর্শন করতে যাওয়া। এবং এটিও আগে থেকেই ছিল।
একদা পরিবর্তনীয়তার মধ্যে দিয়ে যা সমাজ-বাস্তবতার আলোকে গ্রহনযোগ্য করা হয়েছিল, তাকে অপরিবর্তনীয় করে রাখার জন্যে অহেতুক অপচেষ্টা চালানোও মৌলবাদিতা। এর যুক্তি হিসেবে এখন বলা হয়, যা মৌলিক তা থেকেই মৌলবাদিতা এসেছে। অতএব এতে কোনও দোষ নেই। তাই যদি হয় তা হলে তো আল্লাহকে ফের মূর্তি হতে হয়, হজ্জ্বকে ফের মূর্তিদর্শন যাত্রা হতে হয়। এটি কি ইসলামী মৌলবাদীরা কখনও ভাবেন?
মৌলবাদ ছড়িয়ে আছে সবখানে। এমনকি পরিবর্তনে বিশ্বাসী মাকর্সবাদীদের মধ্যেও। লেনিন সে অর্গল ভাঙতে পেরেছিলেন বলেই বিপ্লব করতে পেরেছিলেন। আবারও বোঝার চেষ্টা করি : মার্কস বলেছিলেন, শিল্পোন্নত দেশগুলিতে বিপ্লব আগে হবে। কেননা সেখানকার শ্রমিক শ্রেণী বিকশিত। কিন্তু লেনিন দেখালেন, না, শিল্পে অনুন্নত দেশেও তা সম্ভব। ১৯১৭ সালে সবখানে সামন্ততন্ত্রের দাপট থাকা সত্ত্বেও লেনিন বললেন, বিপ্লব হবে পুঁজিবাদ বিরোধী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। কারণ সামন্তবাদের দাপট যতই থাক, রাষ্ট্রক্ষমতায় এখন পুঁজিবাদী শ্রেণীর প্রতিনিধিরা অধিষ্ঠিত।
আর বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের পরও মার্কস অনুসারীদের অনেকে মুৎসুদ্দী বুর্জোয়ার দেশ মনে করতেন, কেউ পরাধীন দেশই মনে করতেন। খুবই স্বাভাবিক, এরা বিপ্লব করতে পারবেন না এবং পারেনওনি।
শাহীন ইসলাম - ২৪ এপ্রিল ২০০৯ (১:৩৪ পূর্বাহ্ণ)
অবিশ্রুতির দ্বিতীয় পয়েন্টের প্রথম প্যারা’তে মনোনিবেশ করছি, যদিও তা হয়ত মূল বিষয় থেকে একটু দূরে। তিনি লিখলেন,
আমি এ প্রথম জানলাম যে “হজ্জ্ব” শব্দটির আদি অর্থ “মূর্তি দর্শন”। এ জন্য অবিশ্রুতকে ধন্যবাদ ।
আল্লাহ যে নিরাকার তা আমরা ছোট বেলা থেকে হুজুরদের মুখ থেকে শুনে আসছি। তা কি কোরানে সরাসরি আছে? খুব সম্ভব নেই। কথাটির যৌক্তিক অনুসরণ মনে হয় এ ভাবে হয়েছে। ধরে নিই, কোরানে বলা আছে আল্লাহ কে আর কিছুর সাথে শরীক না করতে, এবং বিশেষ করে যেন কোনমতে ঐ মূর্তিগুলির সাথে নয়। এবার একটু ট্যাকনিকেল হতে হ্য়।
ক এর সাথে খ শরীক তখনই হবে
যদি এবং কেবল যদি
এমন কোন গুণ গ থাকে, যাতে
ক এর গ গুণ আছে এবং খ এর গ গুণ আছে
আমরা তখন বলতে পারি ক ও খ গ গুণটি শরীক করছে। আল্লাহর একটি গুণ হচ্ছে তিনি ক্ষমতাবান — সর্বশক্তিবান। অতএব, আল্লাহ আর মূর্তি এ গুণটি যদি শরীক না করে তা হলে মূর্তির কোন ক্ষমতা থাকতে পারে না। আবার মূর্তির একটি গুণ হচ্ছে আকার, অতএব আল্লাহর আকার থাকতে পারেন না, তিনি নিরাকার। আপনি যদি অন্যথা ভাবেন তাহলে আপনি শিরিকী গুনাহ্ — একটি জগন্যতম গুনাহ্ — করবেন।
মূর্তির যে আকার তা অবশ্য আমাদের আকারের মূল ধারনা — এই অর্থে যে তা আমরা আমাদের বুদ্ধি বিকাশের প্রারম্ভে রপ্ত করেছি । বড় হয়ে আমরা কিন্তু “আকার” বিশেষণটির আরো ব্যাপ্তি ঘটিয়েছি: যেমন মানসগঠন, উপন্যাসের গঠন/আকার, রাষ্ট্রের গঠন, একটি প্রোগ্রামের গঠন ইত্যাদি। আকারের এ ব্যপকতর ব্যবহারকে “গঠন” বলা যাক। সমস্যাটি হচ্ছে কোরানকে আমরা যদি আক্ষরিক ভাবে পড়ি — যে ভাবে উলামা/হুজুররা পড়ে থাকেন — তা হলে দেখা যায় আল্লাহর গঠন আছে; তিনি অনেকটা মানুষের মত — দেখেন, জানেন, দয়া করেন, রেগেও যান, রাজত্য করেন, “হে রসুল” বলে সম্বোধন করেন, ইত্যাদি। আল্লাহ নিরাকার বটে,তবে তা “আকারের” সংকীর্ন অর্থে; কিন্তু তিনি নিগঠন নয়, কিংবা — “আকারের” ব্যপক অর্থে — নিরাকার নয়; অন্তত পক্ষে তাঁর ব্যাক্তিক গঠন আছে। তাঁকে নিয়ে ঠিক লালনের মত করে বলতে পারেন না “হস্ত পদ স্কন্ধ মাথা নাই তার”। এখানে আরেকটা কথা মনে রাখা উচিৎ: আল্লাহ (ব্রহ্মার মত!) নির্গুণ নয়।
আল্লাহ নিগঠন না হলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা এখানেই — আল্লাহরগুণ
গুলি শরীকযোগ্য নয়। প্রশ্নটি অন্য ভাবে করা যাক। আল্লাহর সাথে মূর্তি শরীক হ্য় না, এবং — আমরা দেখেছি — তা দুটি গুনের পরিপ্রেক্ষিতে একেবারে পষ্ট: ক্ষমতা ও আকার। অন্য গুণের বেলায় কি হবে? আর মূর্তি ছাড়া অন্য কিছুর বেলায় কি হবে? আল্লাহর ধারনাটি যদি সংহত বা সুসংহত করতে হয় তা হলে সে বিষয়গুলি উপেক্ষা করার মত নয়। সে বিষয়গুলি নিয়ে গোল বাধালেন — একাদশ শতাব্দির দিকে, আব্বাসি খেলাফতের কেন্দ্রবিন্দুতে — মুত্তাজিলিরা। মুত্তাজিলিদের যুক্তি ছিল আল্লাহর গুণগুলির পরিপ্রেক্ষিতে আর কোন কিছু আল্লাহর সাথে শরীক হতে পারে না — মূর্তি,দেবতা, মানুষ, … আল্লাহ ছাড়া যেটিই হোক না কেন। বেশ ! মানলাম, “লা শারীকাল্লাহু” — “আল্লাহর কোন শরীক নাই”। এখন — মুত্তাজিলিরা দেখিয়ে দিলেন — আল্লাহর একটি গুণ হচ্ছ অনন্ত; একমাত্র আল্লাই অনন্ত হতে পারেন, আর কেউ নয়, এমনকি তাঁর রাসুলও নয়। এবার কোরান আনা যাক। কোরান নিশ্চয় আল্লাহ নয়, অর্থাৎ,
কোরান ≠ আল্লাহ
অতএব কোরান অনন্ত নয়, কোরানের শুরু আছে; কোরানের আদি আছে — এমন কি হয়ত বা — অন্তও আছে। মুত্তাজিলিরা সিদ্ধান্ত টানলেন: কোরান সৃষ্ট — মানুষের দ্বারা সৃষ্ট।
[বি: দ্র: আমার উপরের নির্মিত মুত্তাজিলিদের যুক্তির শেষ ধাপটিতে — “কোরান সৃষ্ট” থেকে “কোরান মানুষের দ্বারা সৃষ্ট” — একটি যৌক্তিক ফাঁক বা ফারাক রয়ে গেছে। কিন্তু আমার মনে হয় না প্রকৃত ইতিহাসে মুত্তাজিলি’রা যুক্তিটাকে এমন ভাবে অসম্পূর্ণ রাখবেন। এখানে সমস্যাটি মনে হয় আমার ইতিহাস জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার মধ্যে । আশা করছি কোন ব্লগার এ ফাঁকটুকুর ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবেন।]
আরমান রশিদ - ১ মে ২০০৯ (৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ)
@অবিশ্রুত
আল্লাহ আর হজ্জ প্রসঙ্গে তথ্যগুলির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। তবে এর সূত্রগুলি জানাতে পারলে ভাল হত।
কোথায় যেন পড়েছিলাম এখন পর্যন্ত জানা মানব সভ্যতার ইতিহাসে নিরাকার ঈশ্বরের (বা এক ঈশ্বরবাদের) আবির্ভাব হয় খৃষ্টপূর্ব ২ থেকে ৩ হাজার বছর আগে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যেন অনেকটা স্বতস্ফুর্ত ভাবেই এই তত্তের উৎপত্তি হয় অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ের মধ্যে। মিশরের আকেনাতেন থেকে শুরু করে, বুদ্ধ, মুসা এবং পরবর্তীতে এর ধারাবাহীকতায় ইসা আর মুহাম্মদ। অনেকের মতে আকেনাতেন নাকি সূর্যের উপাসক ছিলেন না বরং সর্বশক্তিমান একক শক্তির প্রতীক হিসেবে তিনি সূর্যকে বেছে নিয়েছিলেন। সেই একই সূত্র ধরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরা বুদ্ধকেই সেই শক্তির প্রতীক হিসেবে পুজা করেন। খৃষ্টানরাও তেমনি তাদের trinity তত্তের আঙ্গিকে যেসাসকে পুজা করে। মজার ব্যাপার হল যেই ইসলামে মানুষের সৃষ্ট যে কোন প্রকার প্রতীককে পুজা করা সম্পূর্ণরূপে নিশিদ্ধ করা হয়েছে সেখানেও এক ঈশ্বরের প্রতীক হিসেবে কাবা ঘরকে সিজদা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। যতদুর জানি কোরানের মতে আদম প্রথম কাবা ঘর নির্মাণ করেন যা ইব্রাহীম পরবর্তীতে পূনর্নিমাণ করেন। তাহলে মানুষের সৃষ্ট সেই স্থাপত্যকে যদি ঈশ্বরের প্রতীক হিসেবে সিজদা করা যায় তবে ইসলামের সাথে আর সব মুর্তিপুজারীদের বিভেদ কোথায়? মুর্তিপূজারীরা নিশ্চই এক তাল মাটি/পাথরকে ঈশ্বর মনে করে না বরং এক তাল মাটিকে ঈশ্বরের প্রতীক মনে করে। কাবা শরিফ কি এক তাল মাটি/পাথর নয়?
অবিশ্রুত - ১ মে ২০০৯ (১:০২ অপরাহ্ণ)
আমার পাঠাভ্যাস খুবই অগোছালো। বলতে পারেন, বিভিন্ন ব্যঞ্জন দিয়ে খাওয়াদাওয়ার ধরণে পড়ি আমি। হয়তো একটি বইয়ের অর্ধেকে গিয়ে আরেকটাতে ঢুকে পড়ি। আবার সেটি থামিয়ে উপন্যাসে মন দেই। যথাযথ তথ্যসূত্র সংরক্ষণেও একটু অমনোযোগী। তাই আরমান রশীদের এবং অন্যান্যের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, হুবহু রেফারেন্স দিতে না পারায়, তবে এই সূত্রে উইকিপিডিয়ায় আল্লাহ এবং হজ্জ সন্ধান করে দেখলাম। উৎসাহীরা আল্লাহ সম্পর্কে এইখানে এবং হজ্জ সম্পর্কে এইখানে পড়তে পারেন। তাতে আমার কথার সত্যতা বুঝতে পারবেন এবং সেখানে যেসব তথ্যসূত্র রয়েছে তা ধরে আমি যা বলেছি তার চেয়েও উৎকৃষ্ট মণিমানিক্যের সন্ধান পাবেন।
আরমান রশীদ যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, তাতে নিশ্চয়ই যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে এইসব প্রশ্ন তুলতে গেলে ঢিলা একটিও মাটিতে পড়বে না, প্রশ্নগুলি এতই স্পর্শকাতর!
আরমান রশিদ - ৩ মে ২০০৯ (১:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
উইকির সূত্র ধরে বেশ কিছু জরুরি লিংক পেলাম। মনে হচ্ছে
উক্তিটির মাধ্যমে ‘বড় মূর্তি দেবতা’ বলতে আপনি ‘হুবাল'(Hubal) কে বুঝাতে চেয়েছেন। এই তত্তের বিপরীতে কিছু যুক্তি এখানে পেলাম। এ কথা অনস্বিকার্য যে আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে প্রাচীন আরবরা বিশ্বাস করতো তবে ইসলামে বর্ণীত আল্লাহর প্রকৃতির সাথে তাদের সেই বিশ্বাসের মিল খুব সামান্যই। আল্লাহর ধারণা যে আরবদের মধ্যে আগেও ছিল তা জানতে আমাদের বেশীদুর জাবার প্রোয়োজন নেই। মুহাম্মদের বাবার নামই ছিল আব্দুল্লাহ অর্থাৎ ‘আল্লাহর ভৃত্ত’।
ইন্টারনেট লিংক গুলিতে যা দেখলাম তাতে হুবালই যে আল্লাহ এর সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পেলাম না। আর হুবাল যদি আল্লাহ না হয়ে থাকে তবে আপনার উপরের উক্তিতে আপনি মুহাম্মদকে যেভাবে আরবদের মাঝে নিরাকার ঈশ্বরের ধারনার প্রবক্তা হবার ইঙ্গিত দিয়েছেন তা সত্য নাও হতে পারে। যতদুর জানি মুহাম্মদ কোরাইশ বংশের হাসেমি উপগোত্রের সদস্য ছিলেন। আর এই হাসেমিরা সরাসরি ইব্রাহীমের বংশধর তাই নিরাকার ঈশ্বরের ধারণা যে তাদের কাছে নতুন ছিল একথা বিশ্বাস করা কঠিন।
ঠিকই বলেছেন। মন্তব্যটি লিখার পর পোস্ট করার আগে বেশ কিছুক্ষন এ ব্যাপারে ভেবেছি। এ প্রসঙ্গে লিখার সময় ছদ্দনাম ব্যাবহার না করাটা হয়ত একটু ‘Fool’s Courage’-ই হয়ে যাচ্ছে।
শাহীন ইসলাম - ৩ মে ২০০৯ (৬:০৮ অপরাহ্ণ)
@আরমান রশীদ,
হাসেমিরা এবং তথা মুহাম্মদ যে ইব্রাহিমের বংশধর — আপনার এ দাবীর সূত্র কোথায় পাবেন? কোরানে সে সূত্র মনে হয় পাবেন না। তা হলে কি কোন হাদীসে? কোন্ হাদীসে? আর কোরান, হাদীস অথবা মুসলমানদের ভিতরের সূত্রগুলি (internal source) ছাড়া অন্য কোন বাহিরের সূত্র (external source) থেকে তা পাবেন কি? (আর ঐতিহাসিক ভাবে ইব্রাহিম’ও বা কতটুকু সত্য?)
আরমান রশিদ - ৫ মে ২০০৯ (১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
@শাহীন ইসলাম (১.২.১.১.১)
মুহাম্মদ যে ইব্রাহীমের বংশধর ছিলেন কোরানে সেই ইঙ্গিত মিলে সুরা বাকারার ১২৭,১২৮ ও ১২৯ নং আয়াতে।
যতদুর জানি মুহাম্মদের জন্মের আগেও মক্কার অধিবাসীরা হজ্জ পালন করতো ইব্রাহীম, ইসমাইল আর বিবি হাজেরার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের লক্ষ্যে। উইকিতে ইসমাইলের বংশদ্ভুত আরবদের (Arabized Arab) বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কোরান ছাড়াও জেনেসিসে ইব্রাহীম, তার পুত্র ইসমাইল/আইসাক এবং তার স্ত্রী সারাহ/হাজেরা (Hager) -র বর্ণনা মিলে। যদিও সেখানে ইসমাইলের বদলে আইসাককে কুরবানী করার ঘটনা বলা হয়েছে।
ইতিহাসে ইব্রাহীমের জায়গা বহুদিন ধরে খোজা হচ্ছে। চলছে বহু বিতর্ক। জুডাই-খৃষ্ট-মুসলিম সম্মিলিত সেই শক্তির সাথে আরকিউলজিকাল প্রমাণ আজো লুকোচুরি খেলছে।
শাহীন ইসলাম - ৬ মে ২০০৯ (৩:৪১ পূর্বাহ্ণ)
অনেক ধন্যবাদ আরমান রশিদ, ইব্রাহিম ও কাবা নিয়ে কোরান থেকে ঐ সব রেফারেন্স দেওয়ার জন্য (আপনার ১.২.১.১.২ পোস্টিং’এ)। সাফা থেকে মারওয়াতে বিবি হাজেরার দৌড়াদৌড়ি, তারপর আবে জমজম … ঐ সব ঘটনার রেফেরেন্স কোথায় পাব? কোরানে আছে কি?
অবিশ্রুত - ৮ মে ২০০৯ (১:০৩ অপরাহ্ণ)
আবারও লিখছি, তথ্যসূত্র মনে না থাকায় বোধহয় আমি নিজেই দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ছি। তবে যেখানে পড়েছি, সেখানে ঘটনাটি ছিল অনেকটা এরকম : নিরাকার ও একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ইব্রাহিম একদিন সবার অনুপস্থিতিতে আল্লাহ বাদে আর সবার মূর্তিকে বিভিন্নরকমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে রাখেন। পরে সবাই এসে এ ব্যাপারে তত্ত্বতালাশ করতে থাকলে তিনি সবার উদ্দেশে বলেন, ‘সবার বড়জন ছোটখাটোদের বেয়াদপি সহ্য করতে না পেরে তাদের একটু মারধর করেছেন।’
কোনও সময় তথ্যসূত্র উদ্ধার করতে পারলে জানাবো।
আপাতত আরেকটি প্রসঙ্গ : কয়েকদিন আগে ইরানভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আহলে বাইত নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, মক্কায় একটি আন্ডারগ্রাউন্ড গির্জার অবস্থান জানা গেছে। সেখানে তাদের সংবাদ অনুযায়ী, শত শত খ্রীস্টান ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করে। নেদারল্যান্ড ভিত্তিক আরাবিশ্চে ওয়েরেল্ড জেন্ডিং-এর (এরাবিক ওয়ার্ল্ড মিশন-এর) পরিচালক জাপ বঙ্কার এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘ঠিক কতজন খ্রীস্টান প্রার্থনায় অংশ নিচ্ছেন সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।’ তবে তার মতে, এটি এখন সৌদি আরবের স্কাইপি চার্চ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
এই সংবাদ পড়ার আগে আমার জানা ছিল না যে, মক্কা ও মদিনা শহরে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রবেশ নিষেধ!
যৌগ পা ফেললেও মূল নষ্ট হয়ে যায়,- এই না হলে মৌলবাদ!
আরমান রশিদ - ৯ মে ২০০৯ (৯:২১ অপরাহ্ণ)
@শাহীন ১।২।১।১।৩
সাফা মারোয়ার ব্যাপারে কোরানে একটা আয়াত আছে। মক্কা বিজয়ের আগে পাহাড় দুটির শীর্ষে দুটি মুর্তি ছিল তাই সে সময়ের অনেক মুসলিম পাহাড় দুটি এড়িয়ে চলতো। তাই পরবর্তীতে কোরানে নাজিল হয়(স্মৃতি থেকে লিখছি) “নিশ্চই সাফা ও মারোয়া আল্লাহর দুটি প্রতীক। তাই সেখানে তোয়াফে কোন ক্ষতি নেই”।
পরবর্তীতে একটি হাদিসে বর্নীত আছে কেউ একজন (নামটা ঠিক মনে করতে পারছি না) বিবি আয়েশা কে জিজ্ঞেস করেছিলেন “যেহেতু সাফা মারোয়ায় তোয়াফে কোন ক্ষতি নেই বলা হয়েছে তবে কি তোয়াফ না করলেও কোন ক্ষতি নেই?” বিবি আয়েশা বলেছিলেন “সেক্ষেত্রে নিশ্চই উল্লেখ করা হত- তোয়াফ না করলেও কোন ক্ষতি নেই”
জমজমের কথা কোথায় যেন পেয়েছিলাম মনে করতে পারছিনা। তবে হযরে আসওয়াদ (black stone) এর ব্যাপারে একটা হাদিসে বর্ণীত আছে হযরত ওমরকে পাথরটিতে চুমু খাবার সময় বলতে শুনা গেছে ” আমি জানি তুমি শুধুই একটা পাথর তোমার কোন ক্ষমতা নেই তবু তোমাকে চুমু খাচ্ছি কেননা রসুলও তোমাকে (সম্ভবত হজ্জের সময়) চুমু খেয়েছিলেন।”
বিভিন্ন পাথরের পুজা ইসলামের পূর্ববর্তী সময়ে কোরায়েশদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ছিল। উল্লেখ্য যে আল্লাত, ঊজ্জা আর মানাত নামে কোরায়েশদের কাছে পরিচিত আল্লাহর তিন কন্যার (কোরানেও যাদের নাম এখনো উল্লেখিত আছে এবং সেটানিক ভারসেস বইটিতে সালমান রুশদি দাবী করেন এই তিন ঈশ্বর কন্যার প্রসংসা করা কোরানের কিছু আয়াত রসুলুল্লাহ নিজে পরে সংশোধন করেন তবে এই দাবী এখনো আমার পরিক্ষা করার সুযোগ হয়নি) প্রতীকও ছিল তিনটি পাথর যেগুলি মক্কা বিজয়ের পর ধংশ করা হয়। আরো জানা যায় মক্কা ছাড়াও আরবের বিভিন্ন জায়গায় অনেক কাবা (যার প্রচলিত অর্থ cube) ছিল যেখানে প্রধানত একটি করে কালো পাথরকে পুজা করা হত। কোথায় যেন পড়েছিলাম, সম্ভবত ২০০ থেকে ৫০০ খৃষ্টাব্দের মধ্যে কোন এক সময় এমনকি রোমেও কোন এক সম্রাট এই চর্চা (cult) শুরু করেন সেখানে একটি কাবা নির্মাণ করে। এবং সবগুলি কাবাতেই প্রধান উপাস্য ছিল একটি করে কালো পাথর। ধারনা করা হয় এসব কালো পাথর হয়তো উল্কা পিন্ড থেকে নেয়া।
যদিও ইসলামে বলা হয় যে সব রকম পাথরের উপাসনা নিশিদ্ধ তবু দেখা যায় কাবার মত একটা পাথরের স্থাপত্যকে ঘিরে ৭ বার তোয়াফ করার নির্দেশ আছে যার প্রতিটি শুরু ও শেষ হয় হযরে আসওয়াদে চুমু খাবার মাধ্যমে। পূর্ববর্তী বহুঈশ্বরবাদীদের অনুকরণে মুসলিমদের উপরও নির্দেশ আছে হজ্জ্ব চলাকালে তিনটি ছোট পাথর খন্ডকে(শয়তানের) লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করার। এছাড়াও মাকামে ইব্রাহীম নামে পরিচিত আরেকটি পাথরের (বলা হয় ইব্রাহিম এই পাথরের উপর দাঁড়িয়ে কাবা নির্মাণ করেছিলেন এবং এতে ইব্রাহিমের পায়ের চিহ্ন আছে) উদ্দেশ্যে ২ রাকাত নামাজ আদায়েরও নির্দেশ আছে। নামাজের প্রসঙ্গ যখন এসেই গেল তবে বলি আরব ভুখন্ডে সেবিয়ান (Sabian or Sabean) নামের এক বহু ইশ্বরবাদি সম্প্রদায়ের বাস ছিল যারা দৈনিক পাচবার (মতান্তরে ৩ বার) কাবার দিকে ফিরে প্রর্থনা করতো বিভিন্ন তারার উদ্দেশ্যে। তাদের সেই প্রার্থনাতেও রুকু ও সিযদা ছিল। আরো উল্লেখ্য যে মৃত দেহকে সামনে রেখে তাদের প্রর্থনায় (জানাযায়) রুকু ও সিযদা নিশিদ্ধ ছিল।
তাই সমগ্রিক বিচারে মনে হতে পারে ইসলামে অনেক আইয়ামে জাহেলিয়াতি রিতিনীতি বাদ দেয়া তো হয়ইনি বরং সেগুলিকে ধর্মের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
@অবিশ্রুত ১/২/১/১/৪
মদীনার কথা জানা ছিল না তবে মক্কা বিজয়ের পর পরই কোরানের একটি আয়াতের মাধ্যমে মক্কাকে মুসলিমদের অভয়ারন্য হিসেবে ঘোষনা দেয়া হয় ও সব বিধর্মিকে মক্কায় নিশিদ্ধ করা হয়। উল্লেখ্য যে এর আগ পর্যন্ত মক্কার কাবা প্রাঙ্গন সকল ধর্মাবলম্বিদের জন্যেই অভয়ারন্য ছিল যেখানে কোন প্রকার হত্যা যুদ্ধ-বিগ্রহ নিশিদ্ধ ছিল। এমনকি ইসলামের প্রথম যুগের একটি সুরাতেও কাবা প্রাঙ্গনে আক্রান্ত না হলে রক্তপাত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ আছে।
শাহীন ইসলাম - ১০ মে ২০০৯ (৫:০৯ অপরাহ্ণ)
আমি মূলত ১.২.১.১.৪ ও ১.২.১.১.৫ পোস্টিং দুটির পরিপ্রেক্ষিতে লিখছি। (খুব অল্প সময়ের পরিসরে লিখতে হচ্ছে)
শয়তানের আয়াত (Satanic Verses )নিয়ে যে হৈ চৈ তার সূত্র ইব্নে ইসহাকের সিরাত রাসুলাল্লাহকে ঘিরে। সেখানেই নাকি বর্ণিত আছে যে তিনটি আয়াত (আমি এখন সময়ের অভাবে আয়াতগুলি বের করতে পারছিনা) মুহাম্মদ পরিবর্তন করেন। হৈ চৈ টি শুরু করেছিল ওরিয়েনটেলিস্টরা (Orientalist) [এখন Orientalist লেবেলের পরিবর্তে Islamist লেবেলটি বেশী চালু], আর মুসলিম পন্ডিতরা একটু বেকায়দায় ছিল সিরাত রাসুলাল্লাহকে সূত্রটি অস্বিকার করতে না পারায়। এখন নতুন আর একটি হৈ চৈ শুরু হয়েছে: সানা পান্ডুলিপি (Sana manuscripts) নিয়ে। ইয়েমেনে সানা শহরের একটি মসজিদ থেকে অনেকগুলি পুরান কুরানের কপি পাওয়া যায়। এই কপিগুলি এখন কুরানের সবচেয়ে পুরান কপি বলে পরিগনিত হচ্ছে (সমস্যা হচ্ছে হযরত উসমান যে কুরান সম্পাদনা করেছিলেন বলে দাবী করা হয় সে সম্পাদিত কোরানের কোন কপি — পুরাতাত্ত্বিক নমুনা হিশাবে — পাওয়া যায়নি)। Islamist’রা একটু ভ্য় পাচ্ছিলেন ইয়েমেন সরকার হ্য়ত খুব বেশী সহযোগী করবেন না — এবং তা মনে হ্য় হতে যাচ্ছে (সম্ভবত Dead Sea Scrolls নিয়ে ইস্রায়েল একি ধরনের আচরণ করেছিল)। কানা ঘুষা শোনা যাছ্ছে সানা পান্ডুলিপি আমাদের বর্তমান কোরান থেকে বেশ ভিন্ন, আর মুসলিম পন্ডিতরা বলতে চাচ্ছেন “তা নয়”।
ইব্রাহিম এবং কাবা নিয়ে যে গল্প তা নিয়েও একদা হৈ চৈ শুরু হয়েছিল (সমভবত ৭০’এর দিকে) Patracia Crone এর Hagarism: The Making of the Islamic World বইটি নিয়ে। ক্রোন এখন পোস্টমডার্নিস্ট, এবং তার আগের চরম অবস্থান থেকে সে এখন একটু সরে গিয়েছে ।
Islamic Jurisprudence নিয়ে Orientalist/Islamist দের বেশ কিছু কাজ আছে (Sacht একটি নাম শোনা যায়)।
আরমান রশিদ - ১৩ মে ২০০৯ (১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ)
@শাহীন ১.২.১.১.৬
সুরা আন-নাজম এর ১৫ থেকে ২২ নং আয়াত স্যাটানিক ভারসেস এর বিতর্কের কারণ। নিচে আয়াতগুলি তুলে ধরলামঃ
বইটিতে দাবী করা হয় যে ২০(?) আয়াতটি পরবর্তীতে বাদ দেয়া হয় শয়তানের কারসাজী হিসেবে এবং ২১ ও ২২ নং আয়াতটি সংযোজন করা হয় রসুল(সাঃ) এর নির্দেশে।
সানা পান্ডুলিপির প্রসঙ্গেঃ
কোথায় যেন পড়েছি পান্ডুলিপিটি নাকি আরবীতেই নয়। রসুল (সাঃ) এর যুগে নাকি আরবী শুধুমাত্র একটি কথ্য ভাষা ছিল। আরবী কোন লিখন পদ্ধতি বা হরফ ছিল না। পরবর্তীতে (সম্ভবত উমাইয়া শাসনামলে) সিরিয়াইক আর ফার্সি ভাষার আদলে আরবী হরফ প্রনয়ন করা হয়। এ কথা যদি সত্য হয় আর পান্ডুলিপিটি যদি সিরিয়াইক বা ফার্সি হরফে লিখা হয়ে থাকে তবে তো আলেমদের আতে ঘা লাগাই স্বাভাবিক কারন তারা যে এতদিন দাবী করে এসেছে কোরানের একটি হরফও শুরু থেকে এই পর্যন্ত হেরফের হয়নি।
শাহীন ইসলাম - ১১ মে ২০০৯ (২:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
@ অবিশ্রুত,
আপনি (১.২.১.১.৪ পোস্টিঙে) লিখেছেন
আর একটু ব্যাখ্যা করতে পারবেন কি?
অবিশ্রুত - ১৩ মে ২০০৯ (৯:২৯ অপরাহ্ণ)
# শাহীন ইসলাম (১.২.১.২)
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ভাষ্য অনুযায়ী, খ্রিস্টান ও ইহুদিরা ইসলামী উম্মাহভুক্ত। কিন্তু তারপরও খ্রিস্টান বা ইহুদিদের এখন পা মক্কায় ফেলা বারণ!আমি সৌদি শাসকদের অবস্থানের এই দিকটাই বুঝাতে চেয়েছি।
# আরমান রশীদ (১.২.১.১.৫)
সংবাদটি হজ করে এসেছেন এমন একজনকে বলার পর তিনি আমাকে জানান, মক্কা ও মদীনায় বিধর্মীদের প্রবেশ নিষেধ। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের খুব কম মুসলমানই জানেন যে, ওই মুল্লুকে বিধর্মীদের পা ফেলা নিষেধ।
শাহীন ইসলাম - ২ মে ২০০৯ (১২:০৩ পূর্বাহ্ণ)
আরমান রশিদ বেশ চমৎকার লিখেছেন,
একজন মুসলমান হ্য়ত জাবাবে বলবেন “মুসলমানরা কাবা’কে সিজদা করেন না, বরং ঐ কাবা যাঁর ঘর তাঁকে সিজদা করেন”। “তা হলে”, আমি বলব, “একজান হিন্দু গণেশের মূর্তীকে নয়, বরং ঐ মূর্তী যাঁর তাঁকে পূজা করছেন”। এ ক্ষেত্রে “আল্লার ঘর” আর “গণেশের মূর্তীর” মধ্যে কোন তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য আছে কি?
আসলে কি “মূর্তী পুজারী” বলতে মুসলমানরা যা বুঝাতে চায়, বা “savage” বলে কিছু সভ্য লোক (সে The Golden Bough এর লেখক Sir James Frazer কে ধরুন) যা বুঝাতে চায় সে ধরনের মূর্তী পূজারী/ savage আদৌ কি কখনও ছিল? আরবের মুসলমানরা যখন বুশের ছবি পোড়েন বা বুশকে বা বুশের ছবি’কে জুতা মারেন তা কি প্রতীকী কর্ম নয়? হজ্বে যখন শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর মারা হয়, তা কি প্রতীকী নয়?
আমি একটু গভিরে যেতে চেষ্টা করছি? প্রতীকী বলতে আমরা কি বুঝি? ক এর প কর্মটি যদি প্রতীকী হতে হয় তাহলে মনে হচছে ক এর মধ্যে একধরনের স্বচেতনতা থাকতে হবে। সেটি কি? অন্য ভাবে বল্লে: প কখন প্রতীকী হয়? প্রতীকের ব্যবহার মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণীকূলে দেখা যায় কি?
রায়হান রশিদ - ২২ এপ্রিল ২০০৯ (৯:৪২ অপরাহ্ণ)
শাহীন ভাইকে ধন্যবাদ আলোচনাটার সূত্রপাত করার জন্য। আমাদের আশে পাশের এমনকি নিজেদের ভেতরেও যে সব মৌলবাদী প্রবণতা রয়েছে সেগুলোকে চিহ্নিত করতে এই আলোচনাটা কাজে লাগবে আমাদের। অবিশ্রুতকেও ধন্যবাদ আরবের ইতিহাস থেকে তুলে আনা কিছু তথ্য আমাদের সাথে ভাগাভাগি করার জন্য। ব্যাপারগুলো জানা ছিল না।
দর্শনশাস্ত্র বা যে কোন তত্ত্বীয় বিষয়ে শব্দগত প্রয়োগের বিষয়টি নাকি খুব গুরুত্বপূর্ণ। শাহীন ভাই দর্শন শাস্ত্রের মানুষ, তিনি নিশ্চয়ই আরও ভাল বলতে পারবেন। সেই সচেতনতা নিয়েই খুব সাধারণ বিচারে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা যায় কিনা সেটি বিবেচনার জন্য তুলে ধরছি:
১) মৌলবাদীর একটি সাধারণ প্রবণতা হল সে যে কোন বিরুদ্ধ মতাবলম্বীকে (বা সমালোচনাকারীকে) প্রথমেই প্রতিপক্ষ কিংবা শত্রু বা ষড়যন্ত্রকারী (তার অবস্থানের বিরুদ্ধে) হিসেবে ধরে নিয়ে এগোয়।
২) মৌলবাদী তার নিজের বোধ এবং বিশ্বাসের জায়গায় নিরাপদে থাকতে চায়। যা কিছু (এমনকি যুক্তি, তথ্য, আবিষ্কার, নতুন তত্ত্ব) তার সেই বোধ বা বিশ্বাসকে প্রশ্ন বা নিরিক্ষার সম্মূখীন করতে পারে তার প্রতিই সে প্রতিরোধপ্রবণ।
৩) মৌলবাদীর আরেকটা লক্ষণ হল সে মনে করে যা কিছু সে ইতোমধ্যে জেনে গেছে (তার মূল তাত্ত্বিক অবস্থান কিংবা এর যৌক্তিকতা সম্পর্কে) তার বাইরে আর নতুন কিছু জানবার নেই, বুঝবার নেই। কারণ, তার মতে, সব কিছু তো বলা হয়েই গেছে! এবং সে অনুযায়ী, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পুরোটাকেই তার বিশ্বাসজাত পূর্বতন সেই “মূল” এর আলোকেই বিচার করতে হবে।
৪) মৌলবাদী শুধু বিশ্বাসনির্ভর নয়। যুক্তির চর্চাকারীরাও কখনো কখনো মৌলবাদী হতে পারে। এক ধরণের যুক্তির প্রতি অন্ধত্বও (একইসাথে ভিন্ন যুক্তির প্রতি অযৌক্তিক প্রতিরোধপ্রবণতাও) মৌলবাদ।
৫) মৌলবাদ সব কিছুকে তার মেটা-থিওরী (meta theory) দিয়ে বুঝতে চায় এবং বোঝাতে চায়। মেটা থিওরী হল সে থিওরী যা দিয়ে সব (বা বেশীর ভাগ) ঘটনা ও প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। যে কারণে কাউকে বলতে শুনি “ইসলাম হল পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান” (complete code of life!), আবার কাউকে বলতে শুনি “ইতিহাসের গতিপথ এবং নিয়তিকে একমাত্র মার্কসবাদ দিয়েই বোঝা সম্ভব”। তাই আমার বিনীত মতামত, যে কোন থিওরীকে আর দশটা সাধারণ থিওরী হিসেবে দেখার পরিবর্তে তার গায়ে “মেটা থিওরী”-র লেবাস চড়ানোর প্রবণতাও মৌলবাদ। মনে হয়না এটা “মেটা থিওরী”র যুগ।
৬) নিজের তত্ত্বের বা বিশ্বাসের সঠিকতা বিষয়ে মৌলবাদীর মনে কোন সংশয় থাকেনা। সে সবের সঠিকতার প্রশ্নটিও তার কাছে অবান্তর। তত্ত্বীয় বিশ্বাসে এই সম্ভাবনাটার অনুপস্থিতি (সংশয়হীনতা) দিয়েও মৌলবাদী চেনা সম্ভব।
এই ক’টিই মনে আসছে আপাতত। আরও কিছু মনে পড়লে পরে আবার লিখবো। উপস্থাপনে শব্দগত, তত্ত্বগত বা ধারণাগত কোন ভ্রান্তি থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দেবেন।
রেজাউল করিম সুমন - ২২ এপ্রিল ২০০৯ (১০:৪২ অপরাহ্ণ)
১
আলোচনার সূত্রপাতের জন্য শাহীন ভাইকে ধন্যবাদ। গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ অবিশ্রুত ও রায়হানকেও।
রায়হানের সঙ্গে আমি একমত, মতান্ধতা থেকেই মৌলবাদের জন্ম।
২
‘মেটা-থিওরি’ শব্দটা বোধহয় ঈষৎ ভিন্ন অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
রায়হান রশিদ - ২৩ এপ্রিল ২০০৯ (১২:২০ পূর্বাহ্ণ)
সুমনের কথা ঠিক। অর্থের দিক থেকে মেটা থিওরী হল থিওরীর থিওরী। আমার উপরের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আসলে “mother of all theories” জাতীয় কিছু একটা বোঝাতে চেয়েছিলাম। পরিভাষাটা কি হওয়া উচিত ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি চাচ্ছি এমন সব থিওরীকে বোঝাতে যেগুলো তাদের ব্যপ্তি কিংবা প্রয়োগে অন্য থিওরীকেও adopt/assimilate এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের ব্যাখ্যাকেও প্রভাবিত করে। শব্দটা কি তাহলে mega theory হওয়া উচিত? ঠিক নিশ্চিত না। কেউ সাহায্য করতে পারেন?
শাহীন মোহাম্মদ ইসলাম - ২৫ এপ্রিল ২০০৯ (১০:১০ পূর্বাহ্ণ)
সুমন আর রায়হান “মেটা” ব্যাপারটি এনে আর একটা গোল বাধালো।[ তার আগে আমার অনুরোধ — সব ব্লগারদের প্রতিও প্রযোজ্য: আলোচনার সুবিধার্তে আমার নামটিই যথেষ্ট, “ভাই” অথবা ঐ জাতীয় কিছু আর দরকার নেই।]
অর্থবিদ্যায় একটি সমস্যা আছে যাকে মিথ্যুকের উদ্কুট (liar’s paradox)বলে। একজন চরম মিথ্যুক — যার প্রতিটি কথাই মিথ্যা — যদি বলে “আমি মিথ্যা বলছি” তা হলে খোদ সে উক্তিটি কি সত্যি না মিথ্যা হবে? যদি মিথ্যুকের উক্তিটি সত্যি হয় তা হলে তার ঐ উক্তিটি মিথ্যা হয়ে যায়। আবার যদি তা মিথ্যা হয় তা হলে তা সত্যি হ্য়। লক্ষনীয় এখানে একধরনের প্রতিফলীতা (reflexivity) কাজ করছে, কিংবা ধরে নিচ্ছি : ঐ বাক্যটি নিজের উপর প্রযোজ্য । উদ্কুটটির সমাধানের একটি পথ হচ্ছে ঐ প্রতিফলীতাটিকে বন্ধ করে দেওয়া, এবং তার একটি ভাল উপায় হচ্ছে object-language (বাংলায় “লক্ষ্য-ভাষা” বলা যেতে পারে) ও meta-language (“অধি-ভাষা”, কিংবা আরো ভাল হয় “ব্যবহৃত-ভাষা”) এর মধ্যে পার্থক্য টানা। অর্থাৎ মিথ্যুকের ঐ উক্তিটি অধিভাষার অংশ এবং তা নিজ সম্পর্কে বলছে না বরং লক্ষ্য-ভাষার বাক্যগুলি সম্পর্কে বলছে। অনেক সময় এই পার্থক্যকে ব্যাবহার (use) বনাম উক্ত/উক্তকরন (mention) পার্থক্য বলে । আমি বল্লাম “মুহাম্মদ আল্লার রাসুল”, আর একজন বাধা দিয়ে বল্লেন “না না ঐ নামটি উচ্চারণ করবেন না”। আমি “মুহাম্মদ” নামটি ব্যাবহার করলাম, পক্ষান্তরে অন্যজন নামটির উক্তকরনের উপর জোর দিল। use/mention মিশ্রন বেশ ঝামেলা করে, কিন্তু আমার এ মূহুর্তে ভাল উদাহরণ মাথায় আসছে না। তবে গণিত থেকে একটি উদাহরণ দেওয়া যায়। আমরা যখন সংখ্যা-লিখন পদ্ধতি শিখি তখন উপরে বাম থেকে ডানে লিখি
. . . . . হাজার শতক দশক একক
তা না লিখে যদি লিখতাম
. . . . ১০৩ ১০২ ১০১ ১০০
[শেষের সংখ্যাগুলি ৩, ২, ১ , ০ সূচক, সুপারস্ক্রিপ্ট হবে; The HTML tags are not working. What’s the matter?]
তা হলে মনে হয় ব্যবহার আর উক্তি’র মধ্যে পার্থক্য গুলিয়ে ফেলতাম এবং সে ভাবে হ্য়ত কখনও সংখ্যা লিখন শিখতামনা। উপরে সে লেখাটি :
. . . . . হাজার শতক দশক একক
তা অধি-ভাষা,
আর তার নিচে যদি লিখি
২০০৯
তা হবে লক্ষ্য ভাষা।
অধি-ভাষা ও লক্ষ্য-ভাষা অনেক স্তরে বিন্যস্ত থাকতে পারে: নিচের চিত্রটি কি দেখা/বুঝা যায়?)
.
.
.
meta-meta language
meta language
language
theoryর ব্যাপারটা একি হবে।
কিন্তু আসল ঝগড়াটা রয়ে গেল text বনাম super-text পার্থক্যটা নিয়ে — যেটি একটু ভিন্ন, এবং রায়হান মনে হয় আবছা ভাবে তাই বুঝাতে চাচ্ছে; সেটির আংগিকটা ভিন্ন — যাকে আমরা post-modernism বলি; আর meta-/object- পার্থক্য আসছে অন্য আংগিক থেকে — analytic philosophy বা linguistic/semantics থেকে। উত্তর-আধুনিকরা বলতে চায় আমাদের চিন্তা/চেতনা/বিচার কিছু texts/discourses/cultures এর মধ্যে হয়ে থাকে।আমাদের সত্য-মিথ্যা বৈধ-অবৈধ বিভিন্ন texts এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত হ্য়। কিন্তু এই textগুলির উপর আবার এমন কোন super-text নেই যে পরোক্তটির মাধ্যমে আমি নির্ধারন করতে পারব যে এই text/discourse/cuture এর এ সত্য/ভাল/মন্দ ঐ text/discourse/culture এর ঐ সত্য/ভাল/মন্দের সাথে তুলনা করা যাবে। যেমন বিজ্ঞানের এই সত্যটি, উত্তরাধুনিকরা বলবেন, ধর্মের ঐ সত্যটির সাথে তুলনা করা যাবে না; কারণ বিজ্ঞনের এক discourse আর ধর্মের আর এক discourse, এবং এই দুটি discourses এর উপার আর কোনো super/meta discourse নাই । এ তো চরম আপেক্ষিকতা! মনে হয় সব রকমের বস্তুনিষ্ঠতা এখনে হারিয়ে যায় । ঝগড়াটা আরেক দিনের জন্য জমা রইল।
আরো কিছু সংযোজান:
একটি মজার ব্যাপার লক্ষ করুন। আমার খোদ এই লেখাটিতে meta-language/object-language পার্থক্যের কিছু — হয়ত’বা খুব প্রত্যক্ষ নয় — আভাস মেলে, যদিও আবার নতুন ধরনের সমস্যা তৈরী করছে। এই লেখাটির মাধ্যমে আমি পাঠকদেরকে একটি জিনিষ ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছি ভাষা ব্যবহারের কিছু সমস্য নিয়ে। কোন ভাষা? মনে করুন যে ভাষাটি নিয়ে আমি আলোচনা করছি তা লক্ষ্য-ভাষা। তা হলে এই লেখাটির ভাষা হচ্ছে অধি-ভাষা। কিন্ত আমি হঠাৎ করে মুক্তাঙ্গনকে এই অধি ভাষা নিয়ে একটি অভিযোগ করলাম, বল্লাম (উপরে খেয়াল করুন):The HTML tags are not working. What’s the matter?। এখানে আপনি একটি অধি-অধি-ভাষার গন্ধ পেতে পারেন।
কম্পিউটারের উপর একটি বই খুলুন তা হলে খুব সম্ভাবনা থাকবে — বিশেষ করে ঐ বইটি যদি প্রোগ্রামিং ভাষার উপর হয় — ঐ বইয়ের লেখক প্রথম থেকে অধি-/লক্ষ- পার্থক্য টানবেন। প্রোগ্রামিং ভাষাটি হবে লক্ষ্য-ভাষা — যেটির জন্য লেখক একটি আলাদা ফন্ট ঠিক করে রাখবেন; আর যে ভাষায় তিনি লিখবেন, ইংরেজী ধরা যাক, সেটি হবে তাঁর অধি/ব্যবহৃত-ভাষা। সাধারনত ব্যাকরণ বা ভাষার উপর কোন বইয়ের বেলায় এই পার্থক্যটি খুব জরুরী।
আর একটি চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে মুক্তাঙ্গনের এই এডিট বক্সটি –যেটি আমি এ মূহুর্তে ব্যবহার করছি। এখানে উপরে তিন সারির বোতাম দেখতে পাচ্ছি, সবগুলি বোতামের উপর ইংরেজী (বা আরো সঠিক করে বল্লে রোমান হরফে) ল্যাব্যল, অথচ আমি লেখছি বাংলায়। মাঝ সারির সর্ব ডানে লেখা আছে “Bijoy”, তার বাম পাশে বোতামটি “English” (যেটিকে টিপলে “Bangla” হয়)। এই “English” ল্যাবলটি (বাস্তবে সব ল্যবলগুলি) অধি-ভাষায়, আর আমি তা টিপে যদি ইংরেজীতে লিখতাম তাহলে আমার সে ইংরেজী হোত লক্ষ্য ভাষায়। অধি-/লক্ষ্য- পার্থক্যটি একটু আপেক্ষিকও বটে, নির্ভর করছে কোন আঙ্গীকের পরিপ্রেক্ষিতে।
মাসুদ করিম - ২৬ এপ্রিল ২০০৯ (১০:২২ পূর্বাহ্ণ)
আপনি কি ব্লগার না লেকচারার?
শাহীন ইসলাম - ২৬ এপ্রিল ২০০৯ (৪:৪৪ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ মাসুদ, আপনার প্রশ্নের জন্য।
ব্লগার’তো বটেই — যেহেতু ব্লগে লিখছি। আর লেকচারার — আপনি যে অর্থে বুঝাতে চাচ্ছেন — সে অর্থেই হয়ত লেকচারার। আমি দুটিই। এর মধ্যেই কোন বিরোধ যদি থেকে থাকে তাহলে একটু দেখিয়ে দিবেন কি প্লীজ? হ্য়ত বা কোথায় কোন ব্লাইন্ড-স্পট আছে আমার, অথবা ব্লগের কিছু নীতিমালা থেকে আমি বিচ্যুত। আমি সত্যি খুব খুশী হব — তা যদি আর একটু পষ্ট করে দিন।
রায়হান রশিদ - ২৭ এপ্রিল ২০০৯ (১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
১.
যিনি রাজা তিনি কি ঋষি হতে পারেন না? যিনি ব্লগার তিনি কি লেকচারারও হতে পারেন না? একজন আধুনিক মানুষ (কিংবা সবকালের সব মানুষই হয়তো) অনেকগুলো পরিচয় ধারণ করেন। আত্মপরিচয়বোধের (identity) ঘনত্ব ভেদে একেক সময় তার একেক পরিচয় মূর্ত হয়ে ওঠে। পরিচয়বোধের এই পার্থক্যগুলো যেমন ব্যবহারিক গুরুত্বসম্পন্ন, তেমনি কিছুটা তাত্ত্বিকও। যেমন ধরা যাক, ‘ব্লগ’ লেকচারের (কিংবা গবেষণাপত্রের) মতো শোনানো যাবে না, সেটা যেমন একটি চরম অবস্থান, তেমনিভাবে কারো লেকচার বা গবেষণাপত্রে ব্লগের গতিশীলতা এবং সাবলীলতা থাকতে পারবেনা সেটাও একটি অনুৎপাদনশীল অবস্থান। নিজেদের সুবিধার্থে আমরা ধারণাগুলোকে কিংবা অবস্থানগুলোকে নামকরণ করি, বাক্সবন্দী করার চেষ্টা করি। কিন্তু এই বাক্সবন্দীকরণই কি সব কথার শেষ কথা? বেনথাম, লুমান, ওয়েবার, হার্টদের চিন্তার ধারাবাহিকতাকে এক করে আমার এক শিক্ষক (ডেনিস গ্যালিগান) একসময় “ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক পরিমন্ডল এবং তাতে ব্যক্তি/গোষ্ঠীর অবস্থানকে” তুলে ধরেছিলেন তাঁর social sphere তত্ত্ব দিয়ে। দেখিয়েছিলেন, কিভাবে ব্যক্তি/গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত এক পরিমন্ডল থেকে অন্য পরিমন্ডলে অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। এর প্রতিটি পরিমন্ডলই যেমন সত্য ও বাস্তব তাদের কাছে, তেমনই বাধ্যকরী (coercive)। সাম্প্রতিক পিলখানা ঘটনাকে সেনা এবং অ-সেনারা সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টো আঙ্গিক থেকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছে (এবং করছে), তাতে তাই আবারো প্রমাণ হয়েছে। আমরা দেখেছি, একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কত ভিন্ন ভিন্ন ন্যারেটিভ সমান জোরের সাথে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সুতরাং ‘ব্লগার’ এবং ‘লেকচারার’ – এই দুই অবস্থানের ভেতর শাহীন ইসলামের কাছে কোনটা কখন object-role কিংবা meta-role হয়ে উঠবে, তা তিনিই বোধ হয় বিচারের ক্ষমতা রাখেন চূড়ান্ত বিবেচনায়। আমার বিনীত মতামত হল – দু’টো অবস্থানেরই ব্যবহারিক গুরুত্ব যেমন আছে, তেমনি তা অনেকটা তত্ত্বগতও বটে।
২.
ইউরগেন হাবেরমাস এর ideal speech situation তত্ত্বের (সাধারণভাবে) বিরোধিতা করার মত কিছু নেই। শাহীন ইসলামের কাছে প্রশ্ন, এটি কি আসলে বাস্তবে সম্ভব?
৩.
দ্রষ্টব্য: উপরে প্রথম অনুচ্ছেদে identity শব্দটা ব্যবহার করেছি। সাধারণ অর্থেই তা ব্যবহার করা হয়েছে, তত্ত্বীয় অর্থে নয়।
শাহীন ইসলাম - ২৮ এপ্রিল ২০০৯ (৬:৫৫ অপরাহ্ণ)
রায়হান বেশ গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করলেন
সবাই ideal speech situation কি তুলে ধরার জন্য সচেষ্ট হলে সমস্যা থাকে না। কিন্ত তা তো হয় না, আমরাতো তা এখানেই — এই পোস্টিংগুলির ভিতরেই — দেখতে পাচ্ছি । সবাই সত্যিকারের মুসলমান/ ক্রিষ্টান/হিন্দু … হলে আর ঝামেলা থাকেনা; কিন্ত তা তো হয় না। গেইম থিওরিস্টরা রায়হানের মত প্রশ্ন করেন। আমার গেইম থিওরী জানা নেই, তবে মনে করি সমাজ , রাজনিতী ও অর্থনীতি ভাবতে গেলে ঐ সাবজেক্টটা খাতিয়ে দেখা উচিৎ। হয়ত কোন ব্লগার আমাদেরকে এ বিষয়টির উপর আলোকিত করতে পারবেন।
রায়হান রশিদ - ১১ মে ২০০৯ (১১:৪২ পূর্বাহ্ণ)
@ শাহীন ইসলাম
স্যাটানিক ভার্সেস নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে “ওরিয়েন্টালিস্ট” এবং “ইসলামিস্ট” লেবেলের প্রতিস্থাপনের বিষয়টা নিয়ে আরেকটু আলোচনা করার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি এই প্রসঙ্গে এডওয়ার্ড সাঈদদের কাজের ঘরানা থেকে পোস্ট-কলোনিয়াল স্টাডিস ঘরানার উত্থান ও বিবর্তন নিয়ে একটা পৃথক লেখা পেলেও আমরা সবাই ব্যাপারগুলো জানতে পারতাম। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার এই প্রভাবশালী ঘরানাগুলোর সাথে পরিচিতি বর্তমানের বিভিন্ন ইস্যু/সংকট নিয়ে আলোচনাতেও ফলদায়ক প্রভাব রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। লেখকের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকলো বিষয়টি বিবেচনার।
হাবেরমাস এর ideal speech কিংবা মোটা দাগে কমিউনিকেটিভ এ্যকশনের সাথে মৌলবাদের সংঘর্ষের যোগাযোগটা বোঝা যাচ্ছে। গেইম থিওরী সম্বন্ধে আমার ধারণা খুব অস্পষ্ট তাই বুঝতে পারছি না যোগাযোগটা। তবে তথ্য নির্ভর সমাজতাত্ত্বিক গবেষণায় empiricist-দের দেখেছি হরহামেশা হাবেরমাসের ideal speech এর বাস্তবসম্মতাকে প্রশ্ন করতে। বিষয়গুলো নিয়ে আলাদা লেখা পেলে সবাই উপকৃত হব।
শাহীন ইসলাম - ১২ মে ২০০৯ (৩:২৪ পূর্বাহ্ণ)
@রায়হান
“Islamists” রা হচ্ছে — শব্দার্থানুযায়ী, এবং আমি যে ভাবে বুঝি — বিশেষ “Orientalists” যারা ইসলাম নিয়ে পঠন করে।
(আগে ভাগে বলে রাখা ভালো, আমি ইতিহাস বা সাহিত্যের ছাত্র নই; অতএব যা বলছি তা অনেকটা amateurish চর্চা থেকে)। একজন ওরিয়েনটেলিসট শিখ বা হিন্দু ধর্মের উপর লেখাপড়া করলে তিনি অবশ্য
ইসলামিস্ট হবেন না।
আরমান রশিদ - ১৩ মে ২০০৯ (১:১৯ পূর্বাহ্ণ)
আইয়ামে জাহেলিয়াত নিয়ে কিছু কথাঃ
বরাবরই আমরা আইয়ামে জাহালিয়া বা Time of Ignorance নিয়ে বহু সমালোচনা শুনে এসেছি। মুসলমানদের দাবী ইসলাম সেই সব রিতিনীতির সমাপ্তি ঘটিয়েছে। খুব জানতে ইচ্ছে করে ঠিক কোন কোন রীতির সমাপ্তি ঘটিয়েছে ইসলাম। আমার জানা মতে শুধু তিনটি উদাহরন আছে। আরো কিছু থাকলে দয়া করে কেউ জানাবেন।
ক) কাবা শরিফে উলঙ্গ তোয়াফ।
খ) শিশু কন্যা হত্যা।
গ) বহুঈশ্বরবাদ।
মজার ব্যাপার হল যেই জাহেলিয়া নিয়ে এত কথা, ক্ষনে ক্ষনে কিন্তু ইসলামিক বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের অযুহাতে বলা হয় “সেই যুগে এর প্রচলন ছিল”। নিচে এরকম কয়েকটি বিতর্কিত কাজের উল্লেখ করা হল।
১। দাস প্রথাঃ
অনেকেই দাবী করেন ইসলাম ১৪০০ বছর আগে দাস প্রথার বিলুপ্তি ঘটিয়েছে। কোরানের অনেক আয়াতে দাসদের মুক্তিকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে বহু দাসের মুক্তি দিয়েছেন। হাদিসেও নাকি আছে নবী বলেছেন “আমাকে পাঠানো হয়েছে মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য”। আলেমদের এসব দাবীর বিপরীতে যখন প্রশ্ন উঠে “তবে কেন মুহাম্মদ (সাঃ) বিভিন্ন যুদ্ধ শেষে যুদ্ধে পরাজীত মুক্ত মানুষদের নতুন করে দাসে পরিনত করেছিলেন?” “নবী কেন পরাজীত পক্ষের নারীদের নিজেদের মধ্যে দাস হিসেবে ভাগাভাগি করে নিতেন?” এসব প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন এসব সেই সময়ের (আইয়ামে জাহেলিয়াতের!) রীতি ছিল। ইসলাম যে দাস প্রথার অবসান ঘটায়নি তার সব চেয়ে বড় যুক্তিই হল রসুলের জিবদ্দসায় এবং তার মৃত্যুর পরও প্রায় ২৫০ বছর মুসলিম সম্রাজ্যে এই প্রথার প্রচলন ছিল। যদিও ইসলামি যুগের সূচনায় মুসলিমদের সংখ্যা বাড়াতে ঘোষনা করা হয়, কোন দাস ইসলাম গ্রহনের সাথে সাথে তাকে মুক্ত বলে বিবেচনা করা হবে, সেই আইন কখনো অমুসলিমদের জন্য বা সকল প্রকার দাসদের জন্য প্রযোজ্য হয়নি। ৮৬৮ খৃষ্টাব্দে আব্বাসি খলিফাদের শাসনামলে সমগ্র মুসলিম সম্রাজ্যে এক ব্যপক দাস বিদ্রোহ শুরু হয় যা যাঞ্জ (Zanj) বিদ্রোহ নামে পরিচিত। ৮৮৩ খৃষ্টাব্দে এই দীর্ঘ বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব হলেও সম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে এর প্রভাব বিদ্যমান ছিল আরো বহুদিন। কিছু কিছু স্থানে বিদ্রোহীদের দলে টানতে খলিফা দাসদের বিভিন্ন দাবী মেনে নেন। এসব দাবীর মধ্যে ছিল ‘দাসদের উপর অত্যাচার বন্ধ’, ‘প্রতিদিনের কাজের পরিমান (working hours) কমানো’ ইত্যাদি। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে দাসদের বেতনভুক্ত কর্মচারীদের সমমর্যাদা দেয়া হয় যা ইসলামী সম্রাজ্যে ধীরে ধীরে দাস প্রথার বিলুপ্তি ঘটায়।
২।লুটতরাজ ও গণহত্যা (genderocide)
ইসলামের ইতিহাসে কয়েকটি উদাহরন আছে যেখানে যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সকল পুরুষকে আত্মসমর্পনের পরেও নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এই সব ঘটনার পক্ষে আলেমেরা হয় যুক্তি দেন যে “এসব সেই যুগের (আইয়ামে জাহেলিয়াতের) রীতি ছিল” অথবা বলেন “রসুলের প্রথম দিককার ক্ষমাশীলতাকে প্রতিপক্ষ দুর্বলতা হিসেবে নেয়ায় তাকে মাঝে মাঝে কঠোর হতে হয়েছে”। ইতিহাস থেকে জানা যায় সেই যুগে আরবরা শত্রুভাবাপন্ন গোত্রের উপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তাদের সব কিছু কেড়ে নেয়াকে অপরাধ মনে করতো না। ইসলামেও এরূপ কর্মকান্ড জায়েয তো ছিলই ‘গনিমতের মাল’-কে মুজাহীদের হক বলেও গন্য করা হত। ছোটবেলায় ইসলামিয়াত বইয়ে মুসলিমদের সৌর্য বীর্যের বর্ণনায় বদর, ওহোদ আর খন্দকের যুদ্ধের কথা পড়েছি যেখানে কাফিররা কোন কারণ ছাড়াই(?) মুসলমানদের উপর হামলা চালায় এবং মুসলমানেরা সেসব হামলা প্রতিহত করে। মুসলমানেরা যেসব যুদ্ধে আগ্রাসী শক্তির ভুমিকায় ছিল সেসব যুদ্ধের কথা কোন পাঠ্যপুস্তকে পেয়েছি বলে মনে পড়ে না। এরূপ তিনটি ঘটনা নিচে বর্ণনা করা হলঃ
বদরের যুদ্ধ
বদরের যুদ্ধের বিজয় গাথায় লিখা ছিল কোরাইশরা মুসলিমদের উপর হামলা করে আর মুসলিমরা ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে মাত্র ৩১৩ জন মুজাহীদ নিয়ে প্রায় সহস্রাধীক কাফিরের মুকাবিলা করেন। ঘটনাটি হয়তো আংশিক সত্য। যা আমরা অনেকেই জানি না তা হল মুসলমানদের বাহিনীটি সিরিয়া থেকে ফিরতি আবু সুফিয়ানের কাফিলায় লুটের উদ্দেশ্যে হামলা করার পরিকল্পনা করে। এমবুশ সাইট হিসেবে মুসলিমরা মদীনা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দুরবর্তী বদরের মরুদ্যানটি বেছে নেয়। আবু সুফিয়ান স্কাউটদের মাধ্যমে আগে থেকেই হামলার কথা জেনে যায় এবং কাফেলা বদরের পরিবর্তে ‘ইয়ানবু’র পথে সরিয়ে নেয় আর একই সাথে মক্কায় সাহায্যের বার্তা পাঠায়। বার্তা পাওয়ার সাথে সাথে কুরাইশরা আবু জাহিলের নের্ত্রীত্ত্বে সমবেত হয়ে অনেকটা তাড়াহুড়োর মধ্যে মক্কা ত্যাগ করে বদরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে সেই দলের অনেকেই যখন জানতে পারে যে কাফেলা ইয়ানবুতে নিরাপদে আছে তখন তারা নিজ আত্মিয়দের বিরুদ্ধে (মুসলমানদের বেশিরভাগই তখন মক্কার বিভিন্ন গোত্র থেকে আসা) যুদ্ধে না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে মক্কায় ফেরত যায়। এই যুদ্ধে মুসলমানদের ১৪ জন আর কোরাইশদের ৭০ জন প্রাণ হারায়। কোরাইশদের আরো ৭০ জন বন্দী হয় যাদের মুক্তিপণ আদায়ের জন্য বাচিয়ে রাখা হয়।
বানু কুরাইযার অবরোধ
খন্দকের যুদ্ধ চলকালীন মদীনা নিবাসি বানু কুরাইযা নামের এক ইহুদি গোত্র মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। যদিও গোত্রটি সরাসরি বিপক্ষের সাথে যোগ দেয়নি তবু তাদের সাথে যোগ দেয়ার পায়তারা করছিল বলে জানা যায়। এইরূপ পরিস্থিতিতে মুসলমানেরা অনুধাবন করেন যে বানু কুরাইযা বিপক্ষের সাথে হাত মিলালে মুসলিমদের পরাজয় অবধারীত তাই মুহাম্মদ (সাঃ) কূটনীতির আশ্রয় নেন। তিনি নুয়াইম ইবনে মাসুদ নামের কুরাইশ বাহিনীর ভিতরের এক মুসলিম গুপ্তচরকে বানু কুরাইযার সাথে সকল আলোচনা পন্ড করার দায়িত্ব দেন । হাদিসে আছে নুয়াইম তখন নবীজির কাছে মিথ্যা বলার অনুমতি চান এবং প্রতোত্তরে মুহাম্মদ বলেন “তাদের সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে যা ইচ্ছা বলতে পার, যুদ্ধ মানেই বঞ্চনা” (“Say what thou wilt to draw them off of us – war is deception.”) । নুয়াইম বানু কুরাইযা আর কুরাইশদের মধ্যে আলোচনা ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হন এবং মক্কার বাহিনী তার পরপরই মদীনা ত্যাগ করে। কুরাইশরা মক্কা ত্যাগ করার সাথে সাথে মুসলিমরা বানু কুরাইযার উপর হামলা করে এবং ২৫ দিন তাদের দূর্গ অবরোধ করে রাখার পর গোত্রটি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণের পরেও মুসলিমরা গোত্রের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ এমনকি মহিলা ও শিশুদের দাসে পরিনত করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। আর গোত্রের সকল (৪০০-৯০০)পুরুষদের শীরচ্ছেদের মাধ্যমে হত্যা করে।
খাইবারের যুদ্ধ ও বানু নাদিরের পরিনতি
ওহোদের যুদ্ধের পরপরই বানু নাদির নামের মদীনার আরেক ইহুদি গোত্রকে বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে মদীনা থেকে বিতাড়িত করা হয়। এই গোত্রের অনেকেই খাইবার অঞ্চলে অন্য ইহুদি গোত্রের কাছে আশ্রয় নেয় এবং কেউ কেউ খন্দকের যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যোগদান করে। খন্দকের যুদ্ধের এক বছর পর, হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে কুরাইশদের সাথে একটি শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হবার পর মুসলিমরা এবার ইহুদিদের দিকে মনোনিবেশ করে এবং ৬২৮ খৃষ্টাব্দে অতর্কিতে খাইবার আক্রমণ করে। খাইবার অঞ্চলের বেশীরভাগ দূর্গই তখন ইহুদিদের আবাসস্থল, তারা সংখ্যায় মুসলমানদের চেয়ে অনেক গুন বেশী (১৬০০ মুসলমানের বিপক্ষে প্রায় ১৪০০০) হওয়া সত্যেও উপযুক্ত নেত্রিত্ত্বের অভাবে (যাদের কয়েক জনকে মুসলমানেরা সুপরিকল্পিত ভাবে আগেই হত্যা করে) এবং সময় সল্পতার কারণে তারা তেমন কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। প্রথম দিকে কিছুদিন মুসলমানদের ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও মুসলিমদের অবরোধের মুখে তারা দ্রুত আত্মসমর্পণ করে। খাইবার অঞ্চলের বেশীরভাগ ইহুদি গোত্র সকল অর্থসম্পদ মুসলমানদের হাতে তুলে দিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়। আর বানু নাদির? এই গোত্রের সকল পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয় এবং সকল নারী দাসে পরিণত হয়। এখানে উল্লেখ্য যে বানু নাদিরের তৎকালীন কোষাধক্ষ কিনানা ইবনে আল-রাবি তাদের সম্পদের খোজ দিতে অস্বীকৃতি জানালে রসুল তাকে নির্যাতনের মাধ্যমে তথ্য আদায় করার এবং পরে হত্যার নির্দেশ দেন। এবং তারই সদ্যবিধবা স্ত্রী সুফিয়া বিন্তে হুইয়াইকে মুহাম্মদ স্ত্রি হিসেবে গ্রহন করেন।যদিও সুফিয়াকে ঠিক কি মর্যাদা দেয়া হবে তা নিয়ে সাহাবাগণ সব সময়ই সন্দিহান ছিলেন। একটি হাদিসে আছে এ প্রসঙ্গে ওমর বলেন,”যদি দেখা যায় সে (সুফিয়া) হিযাব করছে তবে তাকে রসুলের স্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হবে অন্যথায় দাসীর”।
৩। পরিকল্পিত হত্যাকান্ড (Assasinations)
অনেক হাদিসেই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের নজির মিলে যা মুহাম্মদ(সাঃ)এর সরাসরি নির্দেশে সংঘটিত হয়। এসবের জবাবেও অলেমদের সেই একই যুক্তি, “এসব সেই যুগে প্রচলিত ছিল”। এরকম কিছু হত্যাকান্ডের ঘটনা নিচে বর্ণীত হলঃ
কা’ব বিন আল-আশরাফ হত্যাকান্ড
মদীনা থেকে বিতাড়িত হবার আগে বানু নাদির গোত্রের প্রধান ছিলেন এই কা’ব। তিনি সেই সময়ের এক প্রখ্যাত ইহুদি কবি ছিলেন এবং কথিত আছে তিনি মুসলমান নারীদের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে অশ্লিল কবিতা লিখেছিলেন যা মুসলমানদের তার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলে। এক রাতে রসুলের(সাঃ) নির্দেশে মদীনার বানু আউস গোত্রের মুহাম্মদ বিন মাসলামার নের্ত্রীত্বে ৪ (কিংবা ৩) মুসলমান সুকৌশলে কা’ব কে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। এ প্রসঙ্গে ইসলামে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য বলে খ্যাত বুখারি হাদিসে কি আছে দেখুনঃ
আবু রাফি হত্যাকান্ড
কা’ব হত্যার পরপরই আবু রাফিকে হত্যার জন্য মুহাম্মদ(সাঃ) আততায়ীদের পাঠান। নিচের বুখারি হাদিসে এর ধারাবাহিক বর্ণনা মিলেঃ
সাল্লাম ইবনে আবু-আল –হুগাইগ হত্যাকান্ড
সাল্লাম এবং তার ভাই রাবি (কিনানার বাবা) দু’জনেরই ইহুদী কবি হিসেবে সেই সময় খ্যাতি ছিল। সাল্লাম নবী এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে কটাক্ষ করে কিছু কবিতা লিখায় তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারী করা হয়। কা’ব হত্যার পরপরই বানু খাজরায গোত্রের আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস কিছু সঙ্গি সহ রসুলের(সাঃ) আদেশে এক রাতে খাইবারে গিয়ে সাল্লামকে ঘুমের মধ্যে হত্যা করে। ইসলামী যুগের শুরুর দিকের ঐতিহাসিক যারির আল তাবারির লিখায় এই ঘটনার বর্ণনা মিলে।
উসাইর ইবনে জারিম হত্যাকান্ড
উসাইর মদীনা থেকে বিতাড়িত বানু নাদিরের প্রধান হওয়া সত্যেও দ্রুত খাইবার এলাকায় ইহুদিদের সম্মান অর্জন করেন। খাইবার যুদ্ধের প্রাক্কালে একদিন মুহাম্মদ(সাঃ)এর নির্দেশে আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার নের্ত্রীত্বে একটি কূটনৈতিক দল খাইবারে উসাইরের সাথে বৈঠক করে তাকে এবং শীর্ষস্থানিয় বানু নাদির গোত্র প্রধানদের মদীনায় রসুল(সাঃ)এর সাথে দেখা করার আমন্ত্রন জানায়। ইবনে রাওয়াহার এই দলে সাল্লাম ইবনে আবু-আল হুগাইগের হত্যাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস-ও উপস্থিত ছিল। অনেক আলাপ আলোচনার পর উসাইর ত্রিশ জন সঙ্গি সহ তাদের সাথে যেতে রাজি হন। খাইবার থেকে কিছুদূর অগ্রসর হবার পরেই তার মনে মুসলমানদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দেয় এবং তিনি আর সামনে এগুতে অস্বীকৃতি জানান। এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস তার মতিগতি দ্রুত বুঝে নিয়ে তরবারির কোপে উসাইরের এক পা কেটে ফেলেন। উসাইরও দ্রুত তরবারি খাপ থেকে বের করতে না পেরে হাতের লাঠি দিয়ে আব্দুল্লাহর মাথায় আঘাত করেন। এরপর দলের মুসলমানেরা দ্রুত অবশিষ্ট ইহুদিদের হত্যা করে স্থান ত্যাগ করে। উল্লেখ্য যে ইহুদি দলের একজন দৌড়ে বধ্যভূমী থেকে পালাতে সক্ষম হয়। ইবনে ইসাক তার লিখা রসুলাল্লাহের জীবনিতে এই ঘটনার উল্লেখ করেন।
এসব ঘটনা যদি শুধুমাত্র মধ্যযুগীয় কিছু আরব রীতিনীতির বহিপ্রকাশ ঘটায় তবে আলেমদের কাছে জানতে ইচ্ছে করে রসুলের জীবদ্দশার এসব প্রেসিডেন্স কি আমাদের অনুসরণ করা উচিত? আজ যদি আমেরিকান সৈন্যরা ইরাক/আফগানিস্থানের সব মা-বোনদের ধর্ষন করে দেশের যাবতীয় সম্পদ আমেরিকায় জমা করে তবে কি তা ইসলামের রণনীতির একেবারেই পরিপন্থি হবে? আলেমেরা যদি বলেন “এসব রীতিনীতি বর্তমাণ যুগে প্রযোয্য নয়” তবে কি তা “সুন্নাহ বর্তমাণ যুগে প্রযোয্য নয়” বলার সামীল নয়? সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে কি তবে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড,গণহত্যা, লুঠতরাজ আর দাস প্রথা বিলুপ্তির চেয়ে উলঙ্গ তোয়াফ আর শুকর-গাধা-ঘোড়া খাওয়া বন্ধই বেশী প্রাধান্য পায়নি?
শাহীন ইসলাম - ১৩ মে ২০০৯ (২:১২ অপরাহ্ণ)
আরমান রশীদের এ মন্তব্য থেকে যা বেরিয়ে আসছে তার একটু সাধারাণীকরণ করতে চেষ্টা করি। বেশীরভাগ ধার্মিকরা ( আমি অবশ্য “মৌলবাদী” বলব না) তাদের ধর্মের ইতিহাসের খারাপ দিকগুলি বা ঘটনাগুলিকে — যে দিক/ঘটনাগুলিকে আমাদের বর্তমান অবস্তহান থেকে খারাপ ঠেকে — কিছু আঙ্গীকের (contexts) মাধ্যমে যথার্থ করতে চায়; সে আঙ্গীকগুলি ঐতিহাসীক (historical) বা textual হতে পারে (historical ও textual এর মধ্যে সম্পর্ক/পার্থক্য আবার আর একটি তাত্ত্বিক সমস্যা ডেকে আনছে)। আমাদের তরফ থেকে প্রশ্নটা হচ্ছে : তা হলে সার্বজনীন বা universal দিকটি — যেটি decontextualized — কোথায়? অন্য ভাবে বল্লে ধার্মিকের মধ্যে একটি সুবিধাবাদী দোদুল্যমাতা এমনকি একটি স্ববিরোধীতা (contradiction) দেখা যায় : একদিকে আঙ্গিকের বাইরে একটি চিরায়াত/সার্বজনীন বাস্তবতা নিয়ে দাবী আর এক দিকে আঙ্গিকিকরণ (contextualization)।
আপনারা (ধার্মীক পন্ডীতরা) হয়ত বলবেন এ সব interpretation এর ব্যাপার, এবং বুঝতে পারছি আপনারা এ জন্য উত্তরাধুনিকতায় আশ্রয় নিচ্ছেন; তা হলে উত্তরাধুনিকতাদের মত শুধু interpretationএর কথা বলুন, mis-interpretation কথাটি বলবেন না — উত্তরাধুনীকতার সংগে তা সংগতিপূর্ণ নয় ।
শাহীন ইসলাম - ১৪ মে ২০০৯ (২:২২ অপরাহ্ণ)
প্যাট্রিসিয়া ক্রোনের একটি সামপ্রতিক লেখা
শাহীন ইসলাম - ২২ মে ২০০৯ (১:৩৬ অপরাহ্ণ)
আমি কি বিশ্বাস করছি তা দিয়ে মনে হয় বুঝা যাবে না আমি কি মৌলবাদী না মৌলবাদী নই; বরং আমি কি ভাবে বিশ্বাস করছি — কি ভাবে আমার বিশ্বাসকে রক্ষা বা খাড়া করছি — সেখানেই মনে হয় মৌলবাদী ব্যাপারটি নিহিত। অন্য ভাবে বল্লে আধার-এ নয় বরং ঢং বা আচরণের -এর মধ্যে মৌলবাদীতা নিহিত। একজন ধার্মিক তাঁর ঢং-এর কারনে মৌলবাদী নাও হতে পারেন; আবার পক্ষান্তরে একজন প্রগতিশীল — যিনি বিশ্বাস করেন পরিবর্তন সব সময় ভালর দিকে যায় — তাঁর ঢং-এর কারনে মৌলবাদী হতে পারেন। আমি যদি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” অথবা “ইসলাম সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থা” লেখা সম্বলিত পতাকা নিয়ে ঘুরতে থাকি তা হলে মনে হয় — অথবা খুব সম্ভাবনা থাকে — অন্য কেউ তা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবেন না। সে রূপ আচরণ করলে আমি অবশ্য মৌলবাদী। একি ভাবে আমি যদি “জীবনের সর্ব স্তরে মার্ক্সবাদ কায়েম কর” ফেস্টুন নিয়ে রাজপথ আর প্রেস ক্লাব প্রদক্ষীন করি তা হলে আমার ঢংটি ঐ “ইসলাম সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থা” ঢং থেকে ভিন্ন প্রতিপন্ন হয় না; আমিও মৌলবাদী — আমার বিশ্বাসের জন্য নয়, বরং আমার বিশ্বাস আমি কি ভাবে রপ্ত করছি এবং কায়েম করছি তার জন্য।
প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছে আমাদের দেশে দুরকম মৌলবাদী আছে: দৃশ্যমান মৌলাবাদী ও বর্ণচোরা মৌলবাদী। যে “ইসলাম সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থা” কায়েম করতে চাচ্ছে তাকে আমি দৃশ্যমান বলতে চাচ্ছি, কারন সচরাচর সে পষ্ট করে প্রথম থেকে একরকম ঘোষনা দিয়ে দেয় সে মৌলবাদী। কিন্তু যে “জীবনের সর্ব স্তরে মার্ক্সবাদ কায়েম কর” বলে স্লোগান দিচ্ছে সে যেন দাবী করছে সে মৌলবাদী নয়, অথচ তার ঢং বলছে — যে ঢংটি একটু লুক্কায়ীত থাকে বা দেরীতে ধরা পরে — সে মৌলবাদী। দুঃখজনক ভাবে আমাদের অনেক টগবগে তরুণ এই বর্ণচোরা মৌলবাদীদের ফাঁদে পরে, শেষমেষ আমরা মুক্তাঙ্গনের চৌহদ্দিটি আর বাড়াতে পারছি না।