মীনাকে নিয়ে লিখব ভাবছি। ওর নাম মীনা। আমার বাসার কাজের মেয়ে। হ্যাঁ, "কাজের মেয়ে" ! ক্ষমা করবেন। গতানুগতিক ও বিশ্রী শোনালেও আমি এর চেয়ে আর ভাল বর্ণনা খুঁজে পাচ্ছি না। সে বর্ণনার সাথে আমার শ্রেণী অবস্থান বেরিয়ে আসছে । তা বেরিয়ে আসুক, আমি তা রাখঢাক করবো না। [...]

              মীনাকে নিয়ে লিখব ভাবছি। মীনা আমার বাসার কাজের মেয়ে। হ্যাঁ, "কাজের মেয়ে" ! ক্ষমা করবেন। গতানুগতিক ও বিশ্রী শোনালেও আমি এর চেয়ে আর ভাল বর্ণনা খুঁজে পাচ্ছি না। সে বর্ণনার সাথে আমার শ্রেণী অবস্থাও হয়তবা বেরিয়ে আসছে । তা বেরিয়ে আসুক, আমি তা রাখঢাক করবো না। আমি বড় লোকের ছেলে, তবে নিজে বড় লোক না হয়ে হয়েছি শিক্ষক। দর্শন, গণিত, বিজ্ঞান, যুক্তি আরো যত হাবিজাবী; আর সে হাবিজাবীর নিরেট প্রতিফলন হচ্ছে আমার অনেক বই আর কাগজ পত্র। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন একটি পড়ার রুম, এবং সে সময় প্রথমবারের মত আমি একটি পড়ার রুম পেলাম। আমার একটি মাত্র মেয়ে -- নয় দশ বছরের হবে -- এবং দুর্ভাগ্য ক্রমে সে মেয়েটি অসুস্থ -- ভয়ানক মস্তিষ্ক ব্যাধিতে সে ভুগছে। প্রয়োজনের তুলনায় আমার আয় অনেক কম; আমার স্ত্রীকেও চাকুরী করতে হয়। যুক্তিটি মনে হয় আর বিশদ করার প্রয়োজন নেই। আমাদের, মদ্দা কথা, একটি কাজের মেয়ে প্রয়োজন -- একটি "মীনা"র প্রয়োজন।               কাজের মেয়ে পাওয়া কিন্তু অত সহজ নয়। আম্মাকে যোগানের জন্য জানান দিলাম। আম্মা, সৌভাগ্যক্রমে, সেদিক দিয়ে ভালো যোগানকারী। তাঁর স্বফলতার চাবি হচ্ছে আব্দুল, আম্মার দারোয়ান। আর আব্দুল, সে আর এক চরিত্র: বর্ষি দিয়ে মাছ ধরার মত সে কাজের মেয়ে ধরে আনে। তার একটি পদ্ধতি হচ্ছে: বাড়ির গেইটের সামনে সে বসে থাকবে -- হাঁটু ভেঙ্গে, দুই পায়ের পাতার উপর ভর করে; মুখে একটি চাপা দুষ্ট হাসি; পরনে লুঙ্গি, সাদা খাটো পান্জাবী, মাথায় টুপি; বয়সে সে পঞ্চাশোর্ধ। কোন ক্রমে গেইটের সামনে সে কোন গরীব বা ফকীর মেয়ে বা মহিলাকে দেখলে সে আস্তে করে একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় : "কাম্ কোরবি নি " ? অনেক সময়, হয়ত বেশীর ভাগ সময়, তার প্রশ্নের প্রতিক্রীয়া হয় একটি কটমটে চাহনি। আব্দুল তখন তার চাপা হাসিটি আর একটু খোলাসা করে, আরও মিষ্ট হতে চেষ্টা করে, নরম সুরে বলবে : "বাসাত্ কাম্ কোরবি নি"?   বাস!   আব্দুল কাজের মেয়ে পেয়ে যায়।               মীনা নিশ্চয় আব্দুলের ধরা, তবে ঠিক কি ভাবে সে ধরা পরলো তা আমার জানা নেই। আম্মা আমাকে খবর দিল কাজের মেয়ে পাওয়া গেছে। বিকেল বেলায় আমি আম্মার বাসায় ছুটে গেলাম।…

[আমার একটি অসমাপ্ত খসড়া। বাকিটুকু আমি পাঠকদের আলোচনা ও সমালোচনার উপর ছেড়ে দিচ্ছি] কয়েকটি বৈশিষ্ট্য মৌলবাদের মধ্যে লক্ষণীয়। যেমন: (১)সচেতন ও মারমুখী অন্ধত্ব কিছু অনুমান বা বিশ্বাসকে আগেভাগে প্রশ্নাতীত, বা প্রশ্নকরণ শাস্তিযোগ্য, হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। এই প্রশ্নাতীত হিসাবে ধরে নেওয়াটা কিছুটা সচেতন ভাবে হয়ে থাকে, যদিও তা অনেক সময় সম্পূর্ণ প্রকটিত ভাবে না-ও হতে পারে। এ অনুমান বা বিশ্বাসগুলিকে আমরা মৌল বিশ্বাস বলতে পারি। (২) অন্ধ ঐকিকরণ সবকিছুকে -- কি এটি প্রাকৃতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে হোক, কিংবা জীবনযাপন সংক্রান্ত কিছু হোক -- ঐ মৌল বিশ্বাসগুলি থেকে নির্ণীত/নির্দেশিত হয় বলে, অথবা সেগুলি দ্বারা যথার্থায়ন করা যায় বলে একটি অন্ধ দাবি থাকবে। (৩) সোনালি যুগ কম-বেশি সব মৌলবাদীর মধ্যে অতীত এবং ভবিষ্যতে সোনালি যুগের অভিক্ষেপণ থাকবে। অর্থাৎ এখানে অন্ততপক্ষে দুটি সোনালি যুগের কথা চিন্তা করা হবে -- অতীতে একটি সোনালি যুগ, এবং ভবিষ্যতে একটি সোনালি যুগ। এই দুটি যুগের মধ্যে কেমন জানি একটি বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান (যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটি নিয়ে আরো বিশ্লেষণ এবং চিন্তা-ভাবনা প্রয়োজন আছে)। অনেক সময় মনে হবে যেন অতীতের সোনালি যুগটিকে ভবিষ্যতের সোনালি যুগ রূপে ফিরিয়ে আনাটাই হচ্ছে মৌলবাদের সংগ্রাম। এই সোনালি যুগগুলি অবশ্যই কিছু -- মৌলবাদের দৃষ্টিতে -- "অন্ধকার যুগের" সাথে তুলনা করা হবে; এ অন্ধকার যুগগুলিও সোনালি যুগগুলির মতোই অভিক্ষিপ্ত ।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.