[অণুব্লগ]
যারা মনে করবেন রাজাকার ত্রিদিব রায়ের লাশ সমাহিত করার ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই সুযোগে পাহাড়ী-আদিবাসীদের ওপর ঢালাওভাবে এক হাত নেবেন, সুযোগ বুঝে তাদের অধিকারকে খাটো করার চেষ্টা করবেন – তারা এই পোস্ট থেকে দূরে থাকুন। আবার যারা মনে করেন রাজা ত্রিদিব রায়ের ইস্যুকে উপলক্ষ্য করে এই সুযোগে ১৯৭১ এর চিহ্নিত এক অপরাধীর কৃতকর্মকে ‘আদিবাসী অধিকার’ ইত্যাদি ইস্যুর সাথে মিলিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সুযোগ নেবেন, এবং পক্ষান্তরে এই অপরাধীর কৃতকর্মকে জায়েজ করিয়ে নেবেন, তারাও দূরে থাকুন। এখানে কথা হচ্ছে একজন চিহ্নিত অপরাধীকে নিয়ে। অপরাধীর কোনো জাত নেই, বর্ণ নেই, সম্প্রদায় নেই। তার শেষ ঠিকানা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়। ১৯৭১ এর সকল অপরাধীর বিচারের দাবীতে আমরা সোচ্চার, ঠিক যেভাবে সবসময় সোচ্চার ছিলাম এবং আছি সকল পাহাড়ী এবং আদিবাসীদের অধিকার এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণের ইস্যুতে। পাশে আছি, পাশে থাকবো, কিন্তু ১৯৭১ এর চিহ্নিত অপরাধীর ইস্যুতে কোনো আপস নেই, তা সে যে ধর্মের, বর্ণের, সম্প্রদায়েরই হোক না কেন।
————————–
লেখক কুলদা রায় লিখেছেন ‘রাজা ত্রিদিব আর রাজাকার ত্রিদিব : ত্রিবিধ কথা‘ শিরোনামে। সেখানে তিনি চাকমা রাজার মৃতদেহ বাংলাদেেশ সমাহিত করার পক্ষে যে যুক্তিগুলো তুলে ধরলেন, সবিনয়ে সেখানকার অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করছি। কারণ, এ জাতীয় যুক্তি বিভ্রান্তিজনক।
#১: লেখক প্রশ্ন করেছেন – ‘ত্রিদিব রায়ের বিরুদ্ধে কি এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র কোনো যুদ্ধাপরাধের মামলা করেছে?’ এর পর লেখক নিজেই উত্তর দিচ্ছেন – ‘করেনি’। এটুকু লিখেই তিনি প্রসঙ্গটি ছেড়ে দিয়েছেন। (অন্তর্নিহিত সাব-টেক্সট: সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন – ত্রিদিবকে অপরাধী বলা ঠিক হচ্ছে না!)
— লেখকের এই প্রশ্নের এবং তার নিজেরই দেয়া উত্তরের শাণে নজুল বোঝা কঠিন। বুদ্ধিজীবি হত্যাকারী চৌধুরী মুঈনউদ্দিন, আশরাফুজ্জামানদের বিরুদ্ধেও এর আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপরাধ বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি। সুতরাং, প্রশ্নটা কি এভাবে আদৌ উত্থাপন করা যায়, নাকি উত্থাপন করাটা সঙ্গত? তাহলে কি তাদের নিরপরাধ ধরে নিয়ে আমাদের সবার এতদিন মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকা উচিত ছিল? আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না দায়ের হওয়ার মতো এমন সংকীর্ণ যুক্তিই মুঈনুদ্দিন-আশরাফুজ্জামানদের দেশী-বিদেশী বন্ধুরা ফলাও করে তুলে ধরতেন এতদিন, আমাদের সেটাও দেখা আছে। এখন আমার প্রশ্ন হল – রাষ্্্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের অনুপস্থিতিতে ‘৯০ এর দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এবং অন্যরা তাহলে কোন্ মুখে গোলাম আযমদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন? তাহলে ৪১ বছর বাংলাদেশের সবার কি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা উচিত ছিল – যেহেতু তাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে (ICT-তে) তখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা ওঠেনি কিংবা অভিযোগ দায়ের হয়নি? উল্লেখ্য, রাজাকার ত্রিদিব রায়ের নাম কিন্তু ১৯৭২ সালেই দালাল হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে আদালতে হাজির হওয়ার সমন জারী করা হয়েছিল দালাল আইনের আওতাতেই। সে তালিকায় তার নাম ছিল ৮ নম্বরে যে একই তালিকায় গোলাম আযমের নাম ছিল ১১ নম্বরে।
#২: লেখক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন – রাজাকার ত্রিদিব রায়ের মরদেহ ফিরলেই নাকি “মরণোত্তরকালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সুযোগটি” তৈরী হবে।
— আশাবাদে সমস্যা নেই, কিন্তু কোনো কোনো আশাবাদ ভিত্তিহীন তো বটেই, এমনকি বিভ্রান্তিকরও। যুদ্ধাপরাধের মরণোত্তর বিচারের মতো এমন উদ্ভট বিধান আমােদর আইনে আছে বুঝি? কোনো আইনেই কি আছে? তাহলে বিশ্ববাসী হিটলারের মতো অপরাধীর বিচার করা বাদ দিল কি বুঝে? লেখক এই “মরণোত্তর যুদ্ধাপরাধের বিচার তত্ত্ব” কোথায় পেলেন, এবং কিভাবে তা আমাদের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থাতেও সম্ভব তা আরেকটু বিস্তারিত জানিয়ে গেলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হয়। আর তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে এমনভাবেও “মরণোত্তর বিচার” (!) করা যায়, তাহলে আমার প্রশ্ন থাকবে – বিচারটা যেহেতু ICT-তেই হতে হবে, সেহেতু লাশ পাকিস্তানে রেখেই সেই জাতীয় বিচার করতে কি কোনো বাধা আছে? নাকি এখানে কোনোভাবে রাজাকার রাজার কফিন ICT’র এজলাসের সামনে টেনে-হেঁচড়ে এনে বিচার করবার স্বপ্ন দেখছেন লেখক? কিংবা বিকল্প হিসেবে রাঙামাটিতেই রাজার (সম্ভাব্য) সমাধির সামনে আমাদের ICT’র বিচারকদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে বিশেষ এজলাস বসানোর কল্পনা করা হচ্ছে?!!
#৩: তিনি দাবী করেছেন, “ব্যক্তি মানুষ” হিসেবে ত্রিদিব মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, রাজা হিসেবে নাকি করেননি।
— সবিনয়ে দ্বিমত পোষণ করছি। কোন রাম-শ্যাম-যদু-মধুর সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যোগাযোগ করে সাহায্য এবং আনুগত্য চায়নি। চেয়েছে “রাজা” ত্রিদিব রায়ের কাছে, তার অবস্থানের কারণেই। সুতরাং, ত্রিদিব রায়ের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতা কোনো ব্যক্তি মানুষ হিসেবে নয়। এভাবে তার পর্যায়ের একজন অপরাধীর ক্ষেত্রে “ব্যক্তি” এবং “প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানকে” পৃথক করবার চেষ্টাটা কতটা সঙ্গত? ত্রিদিব রায়ের উর্ধ্বতন অবস্থানই তাকে প্রাসঙ্গিক করেছিল পাকিস্তানীদের কাছে। সেই উর্ধ্বতন অবস্থানের জোরেই সেদিন তিনি তরুন চাকমা সমাজকে EPCAF এর মতো একটি অপরাধী মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগ দানে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন! তার উর্ধ্বতন অবন্থানের কারণেই তার বিরুদ্ধে এমন সব আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগ আমাদের বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) আইনের আওতাতেই আনার সুযোগ ছিল, যে সব অপরাধের অভিযোগ গোলাম আযম এবং নিজামীদের বিরুদ্ধেও বর্তমানে আনা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আইসিএসএফ এর ই-লাইব্রেরীতে আপলোডকৃত ফর্মাল চার্জগুলো পড়ে নেয়া যেতে পারে। যেটা স্পষ্ট হতে হবে তা হল – রাজা/ব্যক্তি ত্রিদিব এবং রাজাকার ত্রিদিব একই ব্যক্তি, এবং তাদেরকে পৃথক করা যায় না। রাজাকার ত্রিদিব রাজাকারী করার সুযোগ এবং ক্ষমতাই পেয়েছিলেন রাজা ত্রিদিব হওয়ার সুবাদে!
কেমন রাজা ছিলেন ত্রিদিব রাজাকার?
অনেকে য়ুক্তি দেখানোর চেষ্টা করছেন যে – রাজাকার ত্রিদিবের রাজাকারির পেছনে নাকি তার সম্প্রদায়ের মঙ্গলই মূল বিবেচ্য হিসেবে কাজ করেছে। এবার এক নজরে দেখা যাক, এই ব্যক্তি ত্রিদিব বা রাজা ত্রিদিব তার জনগণের জন্য আসলে কি করেছেন বা করেননি –
(ক) ১৯৭১-এ বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ (পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসিদের সিংহভাগও এতে অন্তর্ভুক্ত) যখন দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে আগ্রাসী পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে – তখন তিনি নিজ সম্প্রদায়ের মানুষকে বিপথগামী করার চেষ্টা করেছেন, রাজা হিসেবে নিজের অবস্থানকে অপব্যবহার করে। বাংলাদেশের আপামর মানুষের সাথে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ দ্বারা উদ্বুদ্ধ বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি তার জনগণকেও টেনে আনার চেষ্টা করেছেন, তার প্রতি তার জনগণের আস্থা, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধার অবস্থানকে ব্যবহার করেই। যে নেতা বা যে প্রধান নিজের অনুসারীদের এভাবে বিপথগামী করে সে কোন্ ধরনের নেতা?
(খ) যদি ধরেও নিই যে তিনি ভেবেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের চেয়েও অখন্ড পাকিস্তান তার জনগণের জন্য ‘বেশী উপকারী’, তাহলে প্রশ্ন করবো ঠিক কি বিবেচনার ভিত্তিতে তিনি সেই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন? অখন্ড পাকিস্তান কি কোনো বিচারে ‘কম সামরিকায়িত’, ‘অধিক সেকুলার’, কিংবা ‘অধিক গণতান্ত্রিক’ ছিল ১৯৭১ এর সেই পটভূমিতে? এই পাকিস্তান আমলেই কি কাপ্তাই বাঁধ নির্মিত হয়নি, তার পূর্বপুরুষের রাজপ্রাসাদসহ পার্বত্য অঞ্চলের সিংহভাগ আবাদী জমি লেকের নিচে ডুবিয়ে দিয়ে? হাজার হাজার চাকমা পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করে? সবচেয়ে বড় কথা হল – যে পাকিস্তানের সৃষ্টিই হল ধর্মের ভিত্তিতে, সেই পাকিস্তানে চাকমাদের অবস্থান কোথায়? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন – অখন্ড পাকিস্তানের আরেক সক্রিয় সমর্থক জামায়াতে ইসলামীর সাথে তিনি সেদিন ঠিক কি আদর্শিক মিল খুঁজে পেয়েছিলেন? যে জামায়াতে ইসলামীর মজ্জাগত সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে আজ প্রতিটি সাধারণ পাহাড়ী প্রতিনিয়ত লড়ে চলেছে? এটা সত্য কথা যে গত চার দশকে জিয়া-এরশাদ থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেেশর প্রতিটি সরকারের পার্বত্য ইস্যুতে নীতিগুলো ছিল আদিবাসীদের অধিকার এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণের বিরোধী, কিন্তু সেটা এক দিনে হয়নি। ভবিষ্যতের স্বাধীন বাংলাদেশ যে এমন হবে তা ১৯৭১ সালেই ত্রিদিব রায় কোন্ “ক্রিস্টাল বল” ব্যবহার করে আগেভাগেই বুঝে গিয়েছিলেন? যদি বুঝে গিয়েই থাকেন, তাহলে তো বলতে হয় তিনি অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান একজন রাজনৈতিক নেতাও ছিলেন। আর সেটাই যদি ধরে নিই, তাহলে তো একথাও বলা যায় যে গত চার দশকে তার জনগণ যখন বিভিন্ন সরকারের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছিল তখন তাদের দরকার ছিল এমনই একজন “প্রজ্ঞাবান” নেতার (রাজার)। কিন্তু সেই দুঃসময়ে তিনি নিজের জনগণকে ফেলে রেখে কোথায় ছিলেন? বাস্তবতা হল – তখন তিনি আশে পাশে ছিলেন না, কারণ, তখন তিনি ভীন দেশী সরকারের কাছ থেকে নিজের একসময়কার দাসানুগ আনুগত্যের প্রতিদানের হিসাব বুঝে নিতেই বেশী ব্যস্ত ছিলেন! সে এক মোহময় জীবন, কঠিন তার হাতছানি!
(গ) পাকিস্তানীরা পরাজিত হয়ে গেছে, দেশ ততদিনে স্বাধীনও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারপরও ১৯৭২ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বীকৃতিকে নস্যাত করার মিশন নিয়ে ত্রিদিব রায় গিয়েছিলেন তার চাকমা জনগণের কোন্ উপকার সাধন করতে? পাকিস্তান রাষ্ট্রের জামাই আদর হালাল করার জন্য সেটুকু কি সেদিন না করলেই চলতো না?
(ঘ) ত্রিদিব রায় যখন এই সব কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন (এমনকি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পরও), তখন কি তিনি একবারও ভেবেছিলেন যে তার কর্মকান্ডগুলোকেই একদিন সাম্প্রদায়িক অগণতান্ত্রিক শক্তিরা উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করবে তারই জনগণের ন্যায্য দাবীগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অজুহাত হিসেবে? তিনি কি তার সম্প্রদায়ের (পড়ুন: প্রজাদের) কথা একবারও ভেবেছিলেন? দেশের বাইরে থেকেও ত্রিদিব রায় সক্ষম হয়েছিলেন নিজ সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে। আজও কোনো সংকট হলেই, সমতল-পাহাড়ী বিতর্ক শুরু হলেই একরকম অবধারিতভাবেই এক পক্ষ তুলে ধরে ১৯৭১ এ ত্রিদিব রায়ের ভূমিকা, আর তার জবাবদিহি করতে হয় পাহাড়ীদের অধিকারের/দাবীর পক্ষের সকল একটিভিস্টকে। ত্রিদিব রায় আদিবাসীদের অধিকার, কিংবা আত্ম-নিয়ন্ত্রণের এজেন্ডার কি উপকার করেছেন তার জীবদ্দশায়, একে ক্ষতিগ্রস্ত করা ছাড়া?
(ঙ) গত ৪১ বছর তার সম্প্রদায়ের জনগণ যখন কখনো রাষ্ট্রযন্ত্র, কখনো সামরিক ছাউনি, কখনো সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে একের পর এক নিপীড়ন সহ্য করে গেছে – তখন রাজা ত্রিদিব রায় কোথায় ছিলেন? একটা বিবৃতি দিয়েও কি তিনি কখনও পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন? (আমার জানা নেই, কারও জানা থাকলে দয়া করে রেফারেন্স দিয়ে যাবেন)। নিজের আজীবন মন্ত্রীত্বের মসনদ, অনুগত দালালকে দেয়া পাকিস্তান রাষ্ট্রের সম্মানের মোহ কি তার কাছে তার জনগণের চেয়েও বেশী দামী ছিল?
১৯৭১ এ ত্রিদিব রায়ের অপরাধগুলোকে জায়েজ করার অপচেষ্টা
অনেককেই দেখছি আবার এটাও ধোয়া তোলার চেষ্টা করছেন এই বলে যে – ত্রিদিব রায় শুধু অখন্ড পাকিস্তান চেয়েছিলেন, তিনি তো কোনো অপরাধ করেননি! তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি – তিনি এর বাইরেও অপরাধ করেছেন, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারের এখতিয়ারের মধ্যেই পড়ে। এটা ঠিক যে অখন্ড পাকিস্তান চাওয়ায় কোনো আইন ভঙ্গ হয় না, কারণ কারও রাজনৈতিক অবস্থান থাকতেই পারে, সেটা অপরাধ না বরং রাজনৈতিক অবস্থান লালন করা মানুষের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু সেটা আর নির্দোষ থাকে না, যখন সেই রাজনৈতিক অবস্থান আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনে ভূমিকা রাখে, অপরাধীকে মদদ জোগায়, অপরাধ পরিকল্পনায় ভূমিকা রাখে, অপরাধকে আরও সংঘবদ্ধ এবং ত্বরাণ্বিত করে। ত্রিদিব রায় এর প্রতিটিই করেছেন। ত্রিদিব রায়ের ক্ষেত্রে অপরাধ হল নিজের ‘উর্ধ্বতন অবস্থান’ (Superior Status) কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানী অপরাধীদের সাথে কোলাবোরেশন বা সহায়তা দান (abetment), EPCAF এর মতো অপরাধী সংগঠন/মিলিশিয়াতে (criminal enterprise) যোগদানে উৎসাহ দান বা অন্যান্যভাবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে রিক্রুটমেন্টে সহায়তা করা, লজিসটিক্স সরবরাহ করা, উস্কানী প্রদান (incitement) বা উস্কানীদাতাদের সহায়তা প্রদান। আর সব বাদ দিলেও অন্তত একজন বীরশ্রেষ্ঠ এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনে ত্রিদিবের সহায়ক ভূমিকা তো ছিলোই, যা অন্যান্যদের লেখাতেও উঠে এসেছে (দেখুন)। নিজের ‘উর্ধ্বতন অবস্থান’ অপব্যবহার করা আরেক অপরাধী গোলাম আযমের অপরাধগুলোও ছকে ছক মিলিয়ে ত্রিদিব রায়ের অপরাধগুলোর সাথে মিলে যায়, কেবল অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রটুকু সেখানে আলাদা। ত্রিদিব রায়কে যদি নির্দোষ বলতে হয় তাহলে গোলাম আযম এবং নিজামীকেও নির্দোষ বলতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) আইন ১৯৭৩ পড়ে দেখার আহ্বান রইলে সবার প্রতি, সেখানেই অপরাধের তালিকা এবং এর সংঘটনের শর্তাবলী ও দায়বদ্ধতার বিধান সংক্রান্ত উত্তরগুলো পাওয়া যাবে। তিনি অভিযুক্ত হওয়ার মত কোন আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছেন কি করেননি তা আইনেই বলা আছে। আর তার কৃতকর্ম ‘যুদ্ধাপরাধ’, নাকি ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’, নাকি ‘জেনোসাইড’ নাকি ‘আন্তর্জাতিক আইনভুক্ত অন্য কোন অপরাধ’ এগুলোর ঠিক কোনটির আওতায় পড়বে, সেটাও নির্ভর করবে তদন্ত এবং চার্জের ওপর। দুঃখজনক হল সে সুযোগ আর হলো না, কিন্তু তাতেও কোনো কিছু পরিবর্তন হয় না; হিটলারকেও আনুষ্ঠানিকভাবে কাঠগড়ায় তোলা হয়নি কখনো, কিন্তু সেটা তাকে নির্দোষ প্রমাণ করেনি, ত্রিদিব রায়কেও করবে না। আজকে গোলাম আযমের যদি বিচার নাও হোতো, তারপরও বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১-এ গোলামের অপরাধী ভূমিকা অনুধাবনে কোনো ভুল করতো না।
ধন্যবাদ।
——————–
প্রাসঙ্গিক পাঠ:
১। অমি রহমান পিয়াল, ‘রাজা(কার) ত্রিদিব রায় : এ লাশ সইবে না বাংলার মাটি‘
২। ফজলুল বারী, ‘রাজাকার পাকিস্তানি কুলাঙ্গার ত্রিদিব রায়ের ডাম্পিং প্লেস আমার বাংলাদেশ না‘
৩। প্রীতম দাস, ‘এখন যৌবন যার . . . ‘
৪। নিঝুম মজুমদার, ‘প্রিয় স্বদেশ, কী করে বইবে তুমি ত্রিদিবের বোঝা?‘
৫। অমি রহমান পিয়াল, ‘প্রতিক্রিয়া নোট: রাজা ত্রিদিব ও রাজাকার ত্রিদিব : ত্রিবিধ কথা (কুলদা রায়)‘
রায়হান রশিদ
জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৪ comments
মাসুদ করিম - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ (৬:৫১ অপরাহ্ণ)
এরকম কেউ কখনো ভাবতে পারে তাই ভেবে আমি ‘থ’ হয়ে আছি। এমন সুযোগসন্ধানী লেখক ‘একপিস’ থাকলে খুশি হতাম — কিন্তু আজকাল এমন আজগুবি সুযোগ খোঁজা মস্তিষ্ক দেখছি ভুরি ভুরি।
রাজা সম্বন্ধে প্রাচীন ভারতে একটা প্রবাদ ছিল — পরে যেটা গান্ধী ব্রিটিশ রাজ সম্বন্ধে ব্যবহার করতেন, একজন রাজাই সবকিছুতে পচন ধরিয়ে দিতে পারেন। ত্রিদিব রায় তাই করতে পেরেছেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই সারাজীবন শক্তিক্ষয় করেননি, তিনি বাংলাদেশের চাকমা জনজাতি তথা সব পার্বত্য জনজাতির ইতিহাস স্বাধীনতা বিরোধী হিসাবে কলঙ্কিত করে গেছেন। পার্বত্য জনজাতির মধ্যে সব জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদেরই আজ ত্রিদিব রায়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হওয়া উচিত। কারণ
আহমেদ মুনির - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ (১২:২২ পূর্বাহ্ণ)
আবেগ বাদ দিয়ে যুক্তি দিয়ে বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছে রায়হান। দ্বিমত করার কোনো অবকাশও রখেনি। আমি সব কিছুর সঙ্গে একমত। ট্রাইবুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। এ সময় এ লেখাটা বিভ্রান্তি কাটাতে সহায়তা করতে পারে। ত্রিদিব রায় তাঁর কমিউনিটির ট্র্যাডিশনাল নেতা(রাজা) ছিলেন। সাধারণ পাহাড়িরা তাঁদের ঐতিহ্য অনুযায়ী রাজাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করেন। ত্রিদিবের ৭১ এর ভূমিকা নিয়ে বহু পাহাড়ি বিব্রত। কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবেই তাঁরা এ বিষয়ে কথা বলতে চান না। খেয়াল করলে দেখা যাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলনে তিন সার্কেলের রাজারই তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাসহ অনেকে এই আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তারপরও আদিবাসী প্রথার কারণে সমাজের অন্য জায়গায় রাজার কিছু প্রভাব এখনো আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করে ত্রিদিব নিজের গায়ে কালি লাগিয়েছেন। একটা সংগঠিত বাহিনির সঙ্গে আপোষ করেছিলেন। কাপ্তাই বাঁধের মতো এতবড় ট্র্যাজেডির জন্মদিয়েছিল যে রাষ্ট্র তাকে সমর্থন করেছিলেন। নিন্দনীয় চরম নিন্দনীয়। পাহাড়িদের অনেকেই তখন ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবন-যাপন করছেন। তিনি কী তাদের কথা ভাবলেন না? তাদের ট্র্যাজেডি কী তার হৃদয় স্পর্শ করলো না? এমনটা ভেবেই অবাক হচ্ছি। কেন এমন হবে? স্বার্থ, লোভ আর উজিরে খামাখা হবার বাসনায়? বুঝতে পারছি না। অবাক, অবাক হচ্ছি। অবাক হচ্ছি এটা ভেবে ত্রিদিব নিজে পাকিস্তানের পথ নিলেও বহু আদিবাসী যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছেন। সীমান্ত অতিক্রম করতে সাহায্য করেছেন। কিন্তু এতকিছুর পরও ত্রিদিবের কলঙ্ক পাহাড়িদের চোখে মুখে নাকে মায় শরীরে এখনো লেগে আছে। আমরা মাঝে মাঝেই বলি আরে ওরা তো একাত্তরে আমাদের বিরোধী পক্ষ ছিল। অবাক হচ্ছি বিবেকবান মানুষ ত্রিদিবের লাশ বাংলায় দাফন করা যাবে না এটা বলছেন। তাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাকারীদের দল জামায়াত সমর্থিত সম-অধিকারও ত্রিদিব ঠেকাও জিগির তুলেছে। অবাক হচ্ছি কেন এই সহমত! ত্রিদিবের লাশ নিয়ে এই বিতর্ক যখন চলছে তখন রাঙামাটিতে পাহাড়িদের উপর হামলা হয়েছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা শহরে একসঙ্গে পাহাড়িদের উপর আক্রমন হয়েছে। অবাক হচ্ছি কেন এমন হলো। কীভাবে হলো? আমি যখন রাঙামাটিতে ছিলাম তখন একজন চিকিৎসককে চিনতাম। নিপাট ভালো মানুষ। নাম সুশোভন দেওয়ান। প্রচুর বাঙালি রোগীও ছিল তাঁর। ছোট শহর রাঙামাটি। সেখানে সবাই সবাইকে চেনে। তবু ডা. সুশোভনকে নির্মমভাবে কোপানো হলো। যারা কুপিয়েছে তারা কারা? রাঙামাটির বাসিন্দা না বহিরাগত? অবাক হচ্ছি এর কোনো উত্তর নেই। এসব হামলাকারীর গ্রেফতার নয় একটা লাশই এখন পাহাড়ে ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে? কেন ত্রিদিবকে এখানে দাফন করা? আমরা এর প্রতিবাদ করবো এবং চাইবো না এটা নিয়ে পানি ঘোলা করুক কোনো পক্ষ। ত্রিদিবকে কবরে দেয়া নিয়ে নয় আমরা কথা বলতে চাই পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি কমিশন গঠন নিয়ে। হাজারো আভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু নিয়ে, শত শত সেনা, বিজিবি ক্যাম্প নিয়ে, পাহাড়িদের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ভাতৃঘাতি সংঘাত নিয়ে, বসতী স্থাপনকারী দরিদ্র বাঙালিদের পূনর্বাসন নিয়ে। রায়হানকে আবারও ধন্যবাদ লেখার শুরুতে জল ঘোলা করার বিষয়টা উল্লেখ করায়।
মোঃ নিয়েল হিমু - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ (৩:১১ পূর্বাহ্ণ)
ভাল লাগা জানাচ্ছি । পাহাড়ি উপজাতী দের অধিকার কেউ কেরে নিচ্ছে না। সরকারি প্রতিটা ক্ষেত্রে কোটা আছে তাদের জন্য । সব কিছুই ঠিকাছে কিন্তু ঝামেলা তারাই তৈরি করে । আগে তাদের ঠিক হতে বলা উচিত ।
রায়হান রশিদ - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ (৩:৫১ পূর্বাহ্ণ)
ফেসবুকে অমি রহমান পিয়াল এর এই নোটটাও প্রাসঙ্গিক পাঠ, উম্মুক্ত লিন্ক দেয়ার সুযোগ না থাকায় পুরোটাই কপি করে তুলে দিচ্ছি:
=========================
প্রতিক্রিয়া নোট: রাজা ত্রিদিব ও রাজাকার ত্রিদিব : ত্রিবিধ কথা (কুলদা রায়)
প্রিয় কুলদা রায়,
শুভেচ্ছা নেবেন।রাজা ত্রিদিব রায়কে নিয়ে লেখা এবং আমাকে ট্যাগ করা আপনার নোটটা সময়মতো পড়া হয়নি,তাই উত্তর দিতে একটু দেরি হয়ে গেলো।বিপরীত মত হলেই ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার চর্চায় আমি নেই। লেখা পড়ে একটু বিভ্রান্ত হয়েছি এই যা। কখনও কখনও এমন হয় একটা নির্দিষ্ট গন্ডীতে লিখলে সেই গন্ডীবদ্ধ লোকজনের বক্তব্য ও ভাবনার প্রভাবে প্রভাবিত হয় লেখক। এটা আমার কাছে সেরকম একটা লেখা মনে হয়েছে। মাহবুবুর রহমান জালালের সঙ্গে জুটি বেধে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখে যে কুলদা রায়, ইনি তিনি নন। যাহোক, অনুচ্ছেদক্রমে আপনার নোটের যে জায়গাগুলোতে আমার ভিন্নমত, তা প্রকাশ করছি।সেটা আপনার নোটে দিতে গিয়ে জায়গায় কুলালো না,তাই আলাদা নোটই দিলাম।
১.
আপনার ভ্রান্তি (আমার চোখে) শুরু হয়েছে নোটের একদম শুরু থেকেই। নির্দিষ্ট করে বললে চতুর্থ লাইন থেকে।
‘ত্রিদিব রায়ের দুটি পরিচয়।
এক. তিনি ব্যক্তি ত্রিদিব। দুই. তিনি চাকমাদের রাজা ত্রিদিব। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে ত্রিদিব মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। রাজাকারি করেছেন। থেকে গিয়েছিলেন পাকিস্তানে।’
ব্যক্তি ত্রিদিব রায় কিন্তু একজন চমৎকার মানুষ। অসাধারণ রসবোধসম্পন্ন, প্রচুর পড়াশোনা, সঙ্গীতজ্ঞ, গাছপ্রেমী, শিল্প রসিক,লেখক, কবি- বলে শেষ করা যাবে না এতই গুণী। তার পদবী চাকমাদের রাজা এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো তার এই স্বত্বাটাই। রাজা নিজেই শুধু যদি সমর্থন দিতেন বলতেন আমি পাকিস্তানের পক্ষে (যেমন অনেকেই ছিলেন)তাহলে তো ল্যাঠা চুকে যেত। সিদ্ধান্তটা তিনি দিয়েছেন চাকমা রাজা হিসেবে, চাকমাদের হয়ে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের অনুগামী এবং সহযোগী হিসেবে চাকমাদের পেয়েছে, তাদের রাজার নির্দেশে।কিভাবে সেটা আমি বিস্তারিতই লিখেছি আমার একটা পোস্টে। সময় পেলে একবার চোখ বোলাবেন প্লিজ:http://www.amarblog.com/omipial/posts/153188
২.
চাকমাদের রাজা একটা সম্মানিত পদ বটে, সেটা রাষ্ট্রের কাছে। আদিবাসি/উপজাতি (যেটাই বলেন)গোষ্ঠী প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রের সঙ্গে দেন-দরবার এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেই দেন-দরবারে ব্যক্তিগত লাভের বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে দেওয়া। ষাটের দশকের শুরুতে কাপ্তাই বাঁধে যে লাখো চাকমা তাদের সর্বস্ব হারিয়ে উদ্বাস্তু হলো, অরুনাচল মিজোরামে মায়ানমারে রিফিউজির তকমা নিয়ে ঘুরে বেড়ালো (এবং বেড়ায়) তাদের জন্য কি করেছেন ত্রিদিব রায়? তিনি কি বিদ্রোহ করেছেন? না, বরং আইয়ুব খানের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা দিয়েছেন গোষ্ঠীর কাছে, মেনে নিতে বলেছেন।সে সময়টাতেই তিনি রাজা হয়েছেন আর সে অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়েছেন আইয়ুব। সেই অনুষ্ঠানেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ৫ কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার ঘোষণা দেন ক্ষতিগ্রস্থ চাকমাদের। সরকারী নির্দেশে চাষের জমি একরপ্রতি আড়াইশো রুপি এবং বাড়িঘরের জন্য গড়ে চারশো রুপি নির্ধারিত হলো।কিন্তু পাহাড়ের মানুষেরা কখনও ভিটেজমির দলিল করা প্রয়োজন মনে করেনি।তাই ফুটো পয়সাও জুটলো না কারো। সাড়ে তিন দেড় কোটি রুপি অব্যবহৃত রয়ে গেলো, বাকি দেড় কোটির ভাগাভাগি যে কজনের কপালে জুটলো তাদের একজন ত্রিদিব রায়, কর্নফুলির যে জল তার রাজবাড়ির একাংশ জলমগ্ন করেছিলো তা সূরম্য লেক হয়ে গেছে তারপর।
সেই প্রেক্ষাপটে ত্রিদিবও চাকমাদের কাছে একরকম দালালই বটে। তার ছেলেও যেমন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশে বসে শান্তি সমাবেশ করেন, বুটের লাথি মেনে নিতে বলেন। তাই ত্রিদিবের লাশ সমাহিত করা চাকমাদের দাবি, এই দাবি পূরণ না হলে তারা বিদ্রোহ করবে, অপমানিত বোধ করবে- এটা একটা ফালতু কথা। ত্রিদিব ‘পাহাড়ের ঈশ্বর’ মানবেন্দ্র লারমা নন, ত্রিদিব ‘পাহাড়ের দেবতা’ সন্তু লারমা নন।যাদের প্রতি বিন্দুমাত্র কটুক্তি প্রতিটি জুম্মবাসী ব্যক্তিগত অপমান হিসেবে নেন।বরং প্রীতি চাকমাকে কেনায় ও ব্যবহারে সমঝোতার অভিযোগই রয়েছে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে। যেই অঞ্চলে মানবেন্দ্র লারমা শুয়ে, সেখানে ত্রিদিবের সমাধি চাকমা সংহতির জন্য প্রীতিকর কোনো বার্তা নয়। বরং যে মানুষটা রাজক্ষমতায় চাকমাদের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অংশ বানিয়ে বাঙালীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিলো, স্বাধীন দেশে বাঙালীদের, মুক্তিযোদ্ধাদের শত্রু বানিয়ে নিজে পালিয়ে গেলো, তাদের পাশে রইলো না,দায় কাধে নিয়ে শাস্তি ভোগ করলো না, তাকে চাকমারা নিজেদের অতি আপন শ্রদ্ধেয় একজন মানে, এটা কেনো জানি আমার কাছে কষ্টকল্পনা মনে হয়।
দ্বিতীয় অনুচ্ছদের শেষ লাইনে আপনি প্রশ্ন করেছেন ত্রিদিবের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধের মামলা করেছে কিনা। এবং নিজেই উত্তর দিয়েছেন করেনি বলে।আশ্চর্য হলাম হাতের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বকোষ মাহবুবুর রহমান জালাল ভাই, তাকে একবারও প্রশ্নটা করা প্রয়োজন মনে করলেন না!১৯৭২ সালে বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইবুনাল) আইনে (রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ নং-৮)অভিযুক্ত হয়ে নোটিশ পেয়েছিলেন রাজা ত্রিদিব রায়। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ বেলা তিনটায় রাঙামাটি কোর্টে পার্বত্য চট্টগ্রাম সদরের মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তার প্রতি সমন জারি করা হয়েছিলো। সমন নং-১১০, রাজ-৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২। একই সমন গোলাম আযমসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীও পেয়েছেন।মোশতাক ও জিয়া সরকার যখন দালাল অধ্যাদেশ বাতিল করে দেয়, তখন সেই আইনের কার্যকারিতা থাকে না বটে কিন্তু যেই ৭৩এর অধ্যাদেশের আওতায় গোলাম আযমদের বিচার চলছে। সেই সহযোগিতার দায়ে ত্রিদিব রায়ও পড়েন। অনুগত চাকমাদের ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া এবং এই সহযোগী বাহিনীর যাবতীয় যু্দ্ধাপরাধের দায়ে গোত্রপ্রধান হিসেবে তার ওপরই বর্তায়।
এবং এই নির্দেশনা তিনি স্রেফ রাজা হিসেবেই খাটাননি। তার আরেকটি সনদ ছিলো, ৭০এর নির্বাচনে নির্বাচিত সাংসদ ছিলেন তিনি, সেই আসন বাতিল করেনি পাকিস্তান সরকার, তাই গোটা পাহাড়ে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার ও প্রয়োগের আইনী হাতিয়ার তার ছিলো। ত্রিদিব তা ব্যবহারও করেছেন।
তৃতীয় অনুচ্ছদে আপনি যা বলেছেন তার উত্তর উপরেই দেওয়া হয়ে গেছে। ত্রিদিবকে সমাধিস্থ করার দাবি চাকমাদের দাবি নয়, এটা রাজপরিবারের অনুরোধ, রাজা দেবাশীষ রায়ের। ত্রিদিবকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চাকমারা মিছিল করেছে বলে শোনা যায় নি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বন্দুকের নলের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী যেসব সিদ্ধান্ত আমাদের গিলতে বাধ্য করেছে সরকার, স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন, তাদের বিরুদ্ধে আনা অধ্যাদেশ বাতিল, মামলা এবং কারাগার থেকে রেহাই- এসবের দোহাই দেওয়াটা ছেলেমানুষি।কারণ এগুলো নাগরিক দাবি ছিলো না, ছিলো মননে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সরকারী সিদ্ধান্ত। গণতান্ত্রিক আবহ ফিরে আসার পরই আবার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। নিজামী-মুজাহিদরা মন্ত্রী হতে পেরেছে বলে আমাদের সব মেনে নিতে হবে, প্রতিবাদ করা বাদ দিতে হবে, এত সুশীল তো এখনও হতে পারিনি দাদা আমরা।
ত্রিদিব রায়কে বঙ্গবন্ধুর সরকার ফিরে আসতে বলেছিলেন। তিনি তা অগ্রাহ্য করেছেন। জাতিসংঘে আমাদের সদস্যপদের বিরুদ্ধে চীনের ভেটো দেওয়ার যৌক্তিকতাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে। পাকিস্তানি হিসেবে নিজেকে জাহির করেছেন, উর্দুতে কবিতা লিখেছেন, আজীবন মন্ত্রীত্বের সম্মাননা ভোগ করেছেন।
তো সব আমাদের ভুলে যেতে হবে? ঠিক কোন যুক্তিতে বলেন তো? না তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা করতে চাইছে না কেউ। কেউ বলছে না তার মরণোত্তর শাস্তির কথা। দাবি একটাই ত্রিদিব রায়ের লাশ বাংলাদেশে সমাহিত করা যাবে না, উচিত হবে না। কারণ যিনি ঠাণ্ডা মাথায় পাকিস্তানের পক্ষে আনুগত্য জানিয়েছেন, সেই আনুগত্য চল্লিশ বছরের উপর বজায় রেখেছে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেননি, এই দেশকে নিজের মনে করেননি, এর অস্তিত্বের বিরু্দ্ধে যিনি তৎপরতা চালিয়েছেন, পাকিস্তানী হিসেবে মরেছেন- তাকে বাংলাদেশে সমাহিত করে কি প্রমাণিত হবে? এ দেশ দালালদের পূন্যভূমি? আমরা মরে গেলেই ভুলে যাই? ঘটা করে একজন পাকিস্তানীর লাশ এদেশে আসবে, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার পাবে, এটাকে কিভাবে দেখবো আমরা, রিকনসিলিয়েশনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে? ধিক্কার দেই এমন ভাবনায়।
ত্রিদিবের লাশ এ দেশে সমাহিত হলে সেটা হবে বাঙালীদের জন্য চরম এক অপমান। একইভাবে চাকমাদের জন্য এটা হবে অত্যন্ত বিব্রতকর। এবং দুই জাতিস্বত্বার বন্ধুত্বে একটা বড় কাঁটা হয়ে থাকবে যা পারস্পরিক বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটা জঘন্যতম উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।আপনার মরণোত্তর বিচারের আইডিয়াটা বরং তাদের অহমে লাগতে পারে, তার চেয়ে যেখানে সারাজীবন থাকলেন সেখানেই থাকুন,যেখানে মরলেন সেখানেই সমাহিত হোন, পাকিস্তানকে কেবলা বানিয়ে যারা তাকে ধিক্কার দেওয়ার দেবেন, যারা উপাস্য মানবেন, তারা উপাসনা।
আপডেট: নোটটির উম্মুক্ত ব্লগ লিন্ক।
Dr Asad Zaman - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ (৮:১৬ পূর্বাহ্ণ)
পাহাড়ী জনজাতি’রা আমাদের ভাই। সমান অধিকারে বাংলাদেশের নাগরিক / আমরা তাদের যেকোন যৌক্তিক দাবীর প্রতি সমর্থন জানাই। কিন্তু যে রাজাকার জীবনে কোনদিনই এই দেশকে নিজের দেশ মনে করতে পারেনি(যিনি নিজের মায়ের এবং বঙ্গবন্ধুর অনুরোধ না শুনে শান শওকত নিয়ে প্রিয় পাকিস্তানে থেকে গিয়েছেন ) তার জন্য দালালীর কোন কারন দেখি না। পাকিন্তানের দালাল পাকিস্তানেই থাক।ঐটাই তার দেশ। তার নাগরিকত্ব না থাকলে একজন বিদেশীর লাশ এদেশে আনার আইনগত জটিলতাও তো আছে ! তবে কি তার আবেদন ছাড়াই অযাচিতভাবে একজন পাকিস্তানি নাগরিক যিনি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত তাকে আমরা নাগরিকত্ব দিয়ে দেব ? তবে গোলামের নাগরিকত্ব ফেরত পাওয়া কে আমরা এত প্রশ্নবিদ্ধ করছি কেন ?আর মরণোত্তর বিচারের জন্য আইনগত বাধা না থাকলে তার মরদেহ তার প্রিয় দেশে রেখেই করা যেতে পারে /আমার যতদুর মনে পড়ে মোনায়েম খানের মরদেহ দেশপ্রেমিক কেউ তুলে লটকে রেখে লিখে রেখেছিল “বাংলার মাটিতে তোমার স্থান নেই !”
কুলদা রায় - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ (৯:৪২ অপরাহ্ণ)
আমার নোটটির প্রিতিক্রিয়া দেখে ভালোই লাগছে। একটু কথা বলা যাক।
আমার নোটটিতে আমি যে সব কথা বলেছি তার সার সংক্ষেপ হল–
১.
ত্রিদিব রায় যুদ্ধাপরাধী ছিলেন। এই অপরাধের বিচার হওয়া দরকার। এবং আমি দাবী করেছি প্রয়োজনে মরনোত্তর বিচার চাওয়া যেতে পারে।
২.
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে রাষ্ট্রশক্তির সীমাহীন দায়িত্বহীনতার ইতিহাসটি সংক্ষেপে তুলে ধরেছি। রাষ্ট্রশক্তি কখনোই জনগনের আকাংক্ষাকে মান্য করেনি। তারা তাদের নিজেদের স্বার্থটাই দেখেছেন। এর উদাহরণ হিসেবে জিয়া, এরশাদ, খালেদা, হাসিনার উদাহরণ দিয়েছি। এবং এদেশে জাহানারা ইমামকেই এগিয়ে আসতে হয়েছে জনগণের আকাংক্ষাকে মুর্ত করতে।
৩.
ত্রিদিব রায়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল ১৯৭২ সালে–এটা অমি রহমান পিয়াল তুলে ধরেছেন। জিয়া সেই মামলাগুলো তুলে নিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা কী আর জাগ্রত করার ব্যবস্থা হয়েছে? গোলাম আযমদের যখন জেলে ঢোকানো হল তখন কেনো ত্রিদিবের বিরুদ্ধে সমন জারী করা হল না? তাকে বাদ দেওয়া হল কেন?
৪.
পৌরানিককালে রাজারা রাজার প্রথা মেনে চলতেন। তার একটা বৈশিষ্ট্য ছিল–কোনো রাজা যদি অন্য কোনো রাজাকে কোনো বিষয়ে আমন্ত্রণ জানাতেন–সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করাটা তার দ্বায়িত্বের মধ্যে পড়ত। মনে করুন মহাভারতের কথা। সেখানে পাণ্ডবদের শত্রু কৌরবরা পাণ্ডবদের আপন মামা রাজা শাল্বের কাছে আগে তাদের পক্ষে যুদ্ধ করার আমন্ত্রণ নিয়ে গিয়েছিল। তিনি রাজার প্রথা অনুযায়ী সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আপন ভাগ্নেদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। তাদের সেনাপতি হয়েছিলেন। সুতরাং ত্রিদিব রায়ও রাজা ছিলেন। তাকে বিবেচনা করার ক্ষেত্রে এই প্রথাটাও মনে রাখা দরকার।
৫.
বর্তমানে রাজা একটা সম্মানিক পদ। এর কার্যত কোনো প্রশাসনিক ক্ষমতা নাই। পাকিস্তান আমলে তার অবস্থা আরো খারাপ ছিল। তিনি মনে করতে পারেন যে–পাকিস্তানের শাসকদের বিরোধিতা করলে তার জনগোষ্টীর ক্ষতি হতে পারে। তারা নানা বিষয়ে দাবী দাওয়া নিয়ে এগুচ্ছিলেন। সেটা পুরোণের আক্কাংক্ষা তার ছিল। তিনি মনে করেছিলেন–তাদের সমক্ষে থাকলে হয়ত সেটা পুরণ হতে পারে। কাপ্তাই বাঁধ নিয়েও সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপুরণ ব্যবস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু কাপ্তাই বাঁধ হওয়ার পরে শাসকরা সেটা মান্য করেনি। সেই বাঁধের ফলে রাজবাড়ীও ডুবে গিয়েছিল। তাদের সমুহ ক্ষতি হয়েছিল।
৬.
রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের থেকেছিলেন। তিনি তাদের দায় কাঁধে নিয়ে পাকিস্তানীদের পরামর্শ মোতাবেক পাকিস্তানেই থেকে গিয়েছিলেন। আর আসেননি। তাদের নানা দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। মন্ত্রীর মর্যাদায় থেকেছেন। বঙ্গবন্ধুও তাকে চলে আসতে বলেছিলেন। সে সময়ে কেনো ফিরে আসেননি সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এমন হতে পারে–রাজার অসম্মান হতে পারে এমন কোনো সময়ে যেতে চাননি। কিন্তু তিনি কি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তার চাকমা সম্প্রদায়কে নামিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের পর–যেমন করে গোলাম আযমরা করেছিল—এখনো করছে? তিনি কি কোথাও বলেছেন একাত্তরে আমি কোনো ভুল করিনি? এটা হয়তো অমি ভাল করে বলতে পারবেন।
৭.
চিনাপন্থি বাম রাজনীতিক বাহাত্তুরে পাকিস্তানে ভূট্টকে চিঠি লিখেছিলেন–পাকিস্তান পুনুরুদ্ধারে অর্থ-অস্ত্র পাঠাতে। সেই ধরনের কোনো আবেদন কী ত্রিদিব করেছিলেন? আব্দুল হক বাংলাদেশেই সমাহিত আছেন। তাকে কেউ সম্মান করে না।
৮.
আমি শুধু চাকমা জনগোষ্ঠীর আকাংক্ষাকে সম্মান দেখানোর জন্য তাদের মৃত রাজাকে দেশে আনার পক্ষে বলেছি। রাজার অপরাধ প্রজার উপর বর্তায় না। প্রজারা শুধু চেয়েছে তাদের রাজাকে। কোনো রাজাকারকে চায়নি। কোনো সম্মানও দাবী করেনি। আমি চেয়েছি–এই চাকমা জন গোষ্ঠীর সন্তোষ বিধান হোক। বাঙ্গালী-পাহাড়িদের যে বিবাদটা আছে সেটায় নতুন করে বিবাদ এড়াতে। আদিবাসীদের কোনো দাবীইতো কেউ কোনোদিন পুরণ করেনি। এভাবেই আমরা তাদেরকে শত্রু পক্ষে ঠেলে দিয়েছি।
৯.
রাজার মৃতদেহ এদেশে সমাহিত হলে তার একাত্তরের ভুমিকা প্রশ্নে কী আমাদের বিবেচনা বোধ পালটে যাবে? তার মাজারকে কি আমরা পুজা করতে ছুটব? আমার মনে হয় না। তার কৃতকর্মের ভোগ তাকে ভুগতে হবে। তাকে রাজাকার হয়েই এদেশের মাটির তলায় থাকতে হবে। এর পরও যদি কেউ যদি তাকে পুজো করতে এগিয়ে যায়–সেটা সেটা আমাদের ব্যর্থতা–আর রাজার শক্তি। কিন্তু আমি মনে করিনা আমাদের বিশ্বাসের শক্তির ঘাটতি আছে। এই শক্তি রাষ্ট্রশক্তিকেও বাধ্য করে রাজাকারদের বিচারের ব্যবস্থা করতে। তাহলে ত্রিদিবের লাশকে আমরা ভয় পাবো কেনো?
১০.
আমার কাছে ধর্মের চেয়ে দেশ বড়। আর দেশের চেয়ে মানুষ অনেক অনেক বড়। মানুষের জন্য এই সব।
রায়হান রশিদ - ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ (৮:২৬ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ কুলদা রায় আপনার উত্তরের জন্য। এখনো যে অসঙ্গতিগুলো আপনার ব্যাখ্যায় রয়েছে, তার কয়েকটা তুলে ধরছি:
> ৩ নম্বর পয়েন্টে লিখেছেন:
>> ঠিক কি বোঝাতে চাইলেন স্পষ্ট হল না। আপনি বুদ্ধিমান মানুষ; এই যুক্তিটির ফাঁক আসলে কোথায় আমার ধারণা তা আপনি নিজেও খুব ভাল করে জানেন। ২০১০ সালে যখন বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় (২০০৯ থেকে যে কথাবার্তার শুরু), তখন অনেকগুলো স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্তের একটা হল পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদের এই বিচার প্রক্রিয়া থেকে আপাতত দূরে রাখা। ত্রিদিব রায়সহ পাকিস্তানে বসবাসকারী আর সব অপরাধীর বিরুদ্ধে তখন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি তা কি শখ করে? কেন সেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল – সেটা বুঝতে হলে আপনার সে সময়কার জাতিসংঘে এবং বাংলাদেশে পাকিস্তান রাষ্ট্রদূতের কর্মকান্ডগুলো, তার সাথে আমেরিকা এবং ফ্রান্স এর মতো দু-দু’টো সুপার পাওয়ার রাষ্ট্রের এমব্যাসাডরদের সে সময়কার আদান প্রদানগুলো ফলো করতে হবে। উল্লেখ্য, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্র – দু’টোই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যাদের ভেটো পাওয়ার আছে। উইকিলিক্সেও সে সব আদান প্রদানের কথা উঠে এসেছে, আর আমরা আইসিএসএফ থেকেও এই প্রাথমিক বিষয়গুলো নিয়ে অতীতে বহুবার আলোচনা করেছি। সহজ কথা হল – পাকিস্তানে (বিশেষত পাকিস্তানে) বা অন্য কোনো দেশে অবস্থিত কোনো অপরাধীর বিরুদ্ধে সে সময় কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিটির হস্তক্ষেপ লাগতো, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতি তো লাগতোই যদি আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্কে বিচার করতে হয়। এবং ততদিনে জাতিসংঘ সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে বাংলাদেশের বিচারের সাতে পাঁচেও নেই তারা, অসম্মতির কথা তো বলাই বাহুল্য। এক পর্যায়ে তো এমনকি বাংলাদেশের মাটিতে বিচার করাও প্রায় শিঁকেয় উঠতে বসেছিল। আপনি কি সে সব জানেন না? আইসিএসএফ এর মিডিয়া-আর্কাইভ দেখুন। তার মানে কি পাকিস্তানে বসবাসকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনদিনই সমন জারী হতে পারবে না? নিশ্চয়ই হতে পারবে, কিন্তু সে এক ভিন্ন আলোচনা। সব ঠিকঠাক এগোলে অনুপস্থিত অপরাধী আবুল কালাম আজাদ (বাচ্চু রাজাকার), চৌধুরী মুঈনউদ্দিন, আশরাফুজ্জামান – এদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চয়ই হবে – সেটার সাফল্য বা ব্যার্থতা কোথায় যাবে তা ভবিষ্যতের বিষয়, এবং ভিন্ন আলোচনা।
> ৪ নম্বর পয়েন্টে লিখেছেন:
>> অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর প্রয়োগ। ১৯৭১ সাল পৌরাণিক কাল ছিল বুঝি? আর পাকিস্তান রাষ্ট্র কবে থেকে রাজশক্তি হিসেবে বর্ণিত হয়ে আসছে যে আপনি একে দুই রাজার লেনদেনের ফ্রেমওয়ার্কে ফেলছেন? আপনার প্রত্যুত্তরে বরং আমি প্রাচীন ভারত থেকে আরেকটা উক্তি উদ্ধৃত করছি মাসুদ করিমের মন্তব্য থেকে – ‘রাজা সম্বন্ধে প্রাচীন ভারতে একটা প্রবাদ ছিল — পরে যেটা মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ রাজ সম্বন্ধে ব্যবহার করতেন, “একজন রাজাই সবকিছুতে পচন ধরিয়ে দিতে পারেন।” ত্রিদিব রায় তাই করতে পেরেছেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই সারাজীবন শক্তিক্ষয় করেননি, তিনি বাংলাদেশের চাকমা জনজাতি তথা সব পার্বত্য জনজাতির ইতিহাস স্বাধীনতা বিরোধী হিসাবে কলঙ্কিত করে গেছেন।’
> ৫ নম্বর পয়েন্টে আপনি লিখেছেন:
>> ইতিহাস বিকৃতি করলেন। কাপ্তাই বাঁধ নিয়ে তরুন রাজা ত্রিদিব রায়ের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সমঝোতা আসলে কি ছিল তা অমি রহমান পিয়াল এর লেখাতেই ভালভাবে উঠে এসেছে (এখানে দেখুন: http://bit.ly/SjXk8Q)। লেখাটা আপনার উদ্দেশ্যেই লেখা হয়েছিল, পড়ে দেখেননি মনে হয়! অমি রহমান পিয়াল থেকে সরাসরি উদ্ধৃত করছি: “চাকমাদের রাজা একটা সম্মানিত পদ বটে, সেটা রাষ্ট্রের কাছে। আদিবাসি/উপজাতি (যেটাই বলেন)গোষ্ঠী প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রের সঙ্গে দেন-দরবার এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেই দেন-দরবারে ব্যক্তিগত লাভের বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে দেওয়া। ষাটের দশকের শুরুতে কাপ্তাই বাঁধে যে লাখো চাকমা তাদের সর্বস্ব হারিয়ে উদ্বাস্তু হলো, অরুনাচল মিজোরামে মায়ানমারে রিফিউজির তকমা নিয়ে ঘুরে বেড়ালো (এবং বেড়ায়) তাদের জন্য কি করেছেন ত্রিদিব রায়? তিনি কি বিদ্রোহ করেছেন? না, বরং আইয়ুব খানের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা দিয়েছেন গোষ্ঠীর কাছে, মেনে নিতে বলেছেন। সে সময়টাতেই তিনি রাজা হয়েছেন আর সে অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়েছেন আইয়ুব। সেই অনুষ্ঠানেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ৫ কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার ঘোষণা দেন ক্ষতিগ্রস্থ চাকমাদের। সরকারী নির্দেশে চাষের জমি একরপ্রতি আড়াইশো রুপি এবং বাড়িঘরের জন্য গড়ে চারশো রুপি নির্ধারিত হলো। কিন্তু পাহাড়ের মানুষেরা কখনও ভিটেজমির দলিল করা প্রয়োজন মনে করেনি। তাই ফুটো পয়সাও জুটলো না কারো। সাড়ে তিন কোটি রুপি অব্যবহৃত রয়ে গেলো, বাকি দেড় কোটির ভাগাভাগি যে কজনের কপালে জুটলো তাদের একজন ত্রিদিব রায়, কর্নফুলির যে জল তার রাজবাড়ির একাংশ জলমগ্ন করেছিলো তা সূরম্য লেক হয়ে গেছে তারপর।”
> ৬ নম্বর পয়েন্টে লিখেছেন –
>> না চাকমা সম্প্রদায়কে তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নামিয়ে দেননি, কিন্তু তিনি নিজে একাই ছিলেন যথেষ্ট। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পরও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আটকে দেয়ার মিশনের নেতৃত্ব যে ত্রিদিব রায় দিয়েছিলেন – সেটা কি আমরা ভুলে যাচ্ছি? এর পরেও তিনি কি করেছেন বা করেননি, তার ওপরও তদন্ত হওয়া দরকার, ইতিহাসের স্বার্থেই।
> ১০ নম্বর পয়েন্টে লিখেছেন:
>> তাতো বটেই! আসুন এখন আমরা গোলাম আযম এবং নিজামীর জন্য মানবিক হই। আফটার অল, তারাও তো মানুষ, আর মানুষ সবার থেকে অনেক বড়, মানুষের জন্যই যেহেতু এই সব!!
আরও কিছু অসংঙ্গতি রয়েছে আপনার প্রত্যুত্তরে, কিন্তু সেগুলো তুলে ধরার আর প্রয়োজন দেখছি না। ধন্যবাদ।
মুক্তাঙ্গন - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ (১০:৪৭ অপরাহ্ণ)
একটু আগে বর্তমান রাজা দেবাশিষ রায় এর ফেসবুক স্টেটাস মারফত জানা গেল – চাকমা রাজের পারিবারিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে স্থির করা হয়েছে রাজা ত্রিদিব রায়ের মরদেহ বাংলাদেশে সৎকার করা হবে না। পরিবর্তে, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মৃতদেহের দাহ অনুষ্ঠান পালন করা হবে। নিচে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি কপি করা হল:
=======================
CREMATION CEREMONY FOR THE 50TH CHAKMA RAJA, THE LATE RAJA TRIDIV ROY
The Chakma Raj family wishes to thank all concerned institutions, organizations, agencies, peoples, groups and individuals (Jummas, Bangalis and others) – governmental and non-governmental – for their expression of support, offers of cooperation, and goodwill, in relation to the cremation of the remains of the 50th Chakma Raja, Raja Tridiv Roy, in Rangamati, Chittagong Hill Tracts (CHT).
Despite such a cooperative atmosphere, and the expressed desire of friends, relatives and well-wishers from different parts of the CHT and other parts of Bangladesh, to participate in the cremation ceremony and/or otherwise pay their last respects to the memory of the departed Raja, the family, including the late Raja’s children who live abroad, in consultation with senior leaders of the CHT and other well-wishers from different parts of Bangladesh and elsewhere, have decided that the cremation ceremony takes place on Thursday, 27 September, 2012, in Islamabad, Pakistan, where the late Raja lived and passed away.
The decision is primarily based on the desire to perform the last rites in a peaceful and dignified manner, without any let or hindrance.
The cremation and other pre-cremation and post-cremation rites and rituals will be conducted in the presence of a Theravada Buddhist monk (bhikkhu), who will chant the customary Pali sutras. Efforts will also be made to perform as many of the ancient and relevant Chakma and Buddhist rites, as are possible in the circumstances.
The Satdinya/Dhormokam will be observed within the premises of the Rajbari, Rangamati grounds in the customary manner, on Thursday, 4 October, 2012.
Peace, Goodwill and Metta to All. May all sentient beings be happy.
Chakma Raj Family
26 September, 2012
মোঃ মাঈনুদ্দিন - ২ অক্টোবর ২০১২ (১০:২০ অপরাহ্ণ)
সুন্দর তথ্যবহূল লেখার জন্য ধন্যবাদ।এতো প্রাজ্ঞ ও যুক্তিনির্ভর আলোচনা থেকে অনেক অজানা বিষয় জানা গেল। আমদের দেশের intellectual গণ সচেতনতার সাথে এবং নিরপেক্ষতার সাথে সব বিষয়ে মনোযোগী হলে এতো সব সমস্যা থাকতোনা।’ব্লাইন্ড রাইটিং’ এবং ‘ইভিল স্পিকিং’এর কারনে আমরা ৮৫%+ স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতে পারছিনা।সারা দেশের অবস্থা আজ নানামূখী বিতর্ক ও অনাকাঙ্ক্ষিত অনভিপ্রেত ঘটনার কারণে অসস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।পার্বত্য ইস্যু নতুন কিছু নয়।পূরাতন ব্যামো।রাস্ট্রের অন্যান্য বিষয়ের মতো এটাকেও এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।সমস্যা সমাধান না করে জিইয়ে রাখা হচ্ছে শুধু রাজনৈতিক ফায়দা লূটার জন্য।সাম্প্রদায়িক ইস্যু তৈরি করে রাস্ট্রের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন এক শ্রেণীর অসাধু মহল।পাহাড়ী অধীবাসীরা যেমন বাংলাদেশের লোক তেমনি যাদেরকে বহিরাগত বলা হচ্ছে তারাও সাংবিধানিক অধিকার বলে পাহাড়ে আসার কারণে অবাংলাদেশি
হয়ে যায়নাই।সূতরাং সাধু সাবধান!নাগরিক মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ না করে প্যাঁচ লাগিয়ে দিয়ে এর দায়ভার
অন্যের ঘারে চাপানোর চেস্টা করবেননা।’পাহাড়ী-বাঙ্গালী’ ভাই-ভাই। তাছাড়া, সবাই বাংলাদেশের লোক।সবার দিকে আপনারা যারা কলম সৈনিক আছেন তারা সূক্ষ দৃষ্টি রাখবেন।সব ধরনের conspiracy কে মোকাবেলা করবেন।কিন্তু তা না করে প্রকৃত ঘটনার অনুসন্ধানী নজর না রেখে মনগড়া কিছূ লিখবেননা।পাহাড়ের বিষয়টা case sensitive ।বাংগালী-পাহাড়ী সবার সম অধীকার রক্ষাকল্পে অবশ্যই সরকারকে নিরপেক্ষতার পরম পরাকাস্টা প্রদর্শণ করতে হবে । এটা যেনো ভালভাবে হয় তার দায়িত্ব আপনাদের সব থেকে বেশী।তাই কে মারা গেল কোথায় তার লাশ গেল কোথায় এসব নিয়ে হাল্লা-গোল্লা না করে আর ও মারাত্বক ও গূরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর জন্য আহবান রাখলাম।পরিশেষে, রাজাকার দমন করার মানসে আপনাদের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।তবে, রাজাকার শূধু কোরআন -হাদিস পড়ূয়া লোকদেরকে mean করা হচ্ছে বলে দুঃখ লাগছে।সারা বিশ্বে শূধূ একটাই আওয়াজ মৌলবাদী ঠেকাও।এই অপবাদ একজন মুসলিম হিসেবে নিজেকে অসহায় করে দেয়।রাস্ট্রে আরো নানা সমস্যা থাকা সত্বেও শুশীল সমাজ তথা বুদ্ধিজীবী গণ (বেশীর ভাগ)হীরো সাজার মানসে কলম ধরেছে।যাতে পশ্চিমা বিস্ব ধন্যবাদ দেয় সেই মানের লেখা লিখে যাচ্ছে।বিশেস করে মৌলবী-মোল্লার বিরূদ্ধে কলম ধরেচ্ছে এই রকম ফায়দা লোটার জন্য।আসলে শুশীল সমাজ ভাল ভাবেই জানেন প্রকৃত অপরাধী কারা ।তবুও করছে শুধু ঐ পশ্চিমা প্রভূদের মণ জোগানোর মানসে।আপনাদের বিশেস করে যারা নিরপেক্ষতার সাথে লিখেন তাদেরকে অবশ্যই এই সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।মৌলবিদের মধ্যে অনেকেই যেমন মূক্তিযূদ্ধের সময় পাকিস্তানের সমর্থন করেছে তেমনি নিরপেক্ষ ও স্বাধীনতার পক্ষেও ছিল।তাই ভাবতেও কষ্ট হয় এই ভেবে যে আমরা কবে এই বলয় ও চক্র হতে বের হতে পারবো?
রাজনৈতিক ঊদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য ও আলোচনা ত্বারা কখনই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবেনা।আমদের দরকার আরো সাবধান হওয়া ও সতর্ক হওয়া ।
মোহাম্মদ মুনিম - ৩ অক্টোবর ২০১২ (৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
বর্তমানে দুজন রাজাকারের বিচার হচ্ছে যারা কোরআন-হাদিস পড়ুয়া নন (সাকা চৌধুরী এবং আব্দুল আলিম)। এ ছাড়া অন্যান্যরাও তেমন কোন কোরআন-হাদিস পড়ুয়া ব্যক্তি নন। কোরআন-হাদিস পড়ার চেয়ে মানুষ জবাই করাতেই এদের বেশী উৎসাহ।
আপনার কথার মাথা মুণ্ডু কিছুই বোঝা গেল না, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য ও আলোচনা দ্বারা কখনই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবেনা’, আপনি কোন সমস্যার কথা বলছেন? আর কেই বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কথা বলছেন?
সবুজ পাহাড়ের রাজা - ৭ অক্টোবর ২০১২ (২:১২ পূর্বাহ্ণ)
রায়হান ভাইয়ের সাথে শতভাগ সহমত।
ডাইনোসর - ২০ অক্টোবর ২০১২ (১০:৪০ পূর্বাহ্ণ)
কুলদা রায়ের লেখাটা এখনো পড়া হয় নাই।
তবে এই লেখাটা ভাল লেগেছে। কিন্তু রেফারেন্স গুলা সবই অনলাইন নির্ভর।
মাসুদ করিম - ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ (৬:৩৯ অপরাহ্ণ)
আজকের লিন্ক থেকে দুটো লিন্ক: চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়ের বাবা রাজা ত্রিদিব রায় নিয়ে সত্যিই আমার কিছু জানা ছিল না + রাজা ত্রিদিব রায় মারা গেছেন ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ সোমবার ৮১ বছর বয়সে
মাসুদ করিম - ২৭ এপ্রিল ২০১৬ (৯:১৪ পূর্বাহ্ণ)