গতকাল (২৬ অক্টোবর ২০০৮) দৈনিক ইনকিলাবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বিষয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বাধ্যতামূলক এই বিজ্ঞপ্তিটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৭(২) এর অধীন। বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের উদ্দেশ্য – বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের এবং দলটির “দাঁড়িপাল্লা” প্রতীক ব্যবহার বিষয়ে সর্বসাধারণের মতামত বা অভিযোগ থাকলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ। স্ক্যান করা বিজ্ঞপ্তিটির পিডিএফ কপি এখান থেকে ডাউনলোড করুন।
এতে বলা হয়েছে:
উক্ত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিষয়ে কাহারো কোন আপত্তি থাকিলে প্রয়োজনীয় দলিলাদিসহ উহার কারণ উল্লেখপূর্বক ২৭-১০-২০০৮ তারিখের ভেতর নিম্ন স্বাক্ষরকারীর নিকট লিখিতভাবে জানাইবার জন্য অনুরোধ করা হইল।
-স্বাক্ষরকারী-
মুহম্মদ হুমায়ুন কবির
সচিব
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে ইতোমধ্যেই কয়েকটি সংগঠন লিখিতভাবে তাদের অভিযোগ পেশ করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে। সময়াভাবে কেবল অভিযোগগুলোই সংক্ষেপে পেশ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ ও দালিলিক অন্যান্য বিষয় পরবর্তীতে পেশ করা হবে, অভিযোগগুলি বিস্তারিতভাবে বিবেচনার সময়। সমমনা সকল ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রতি আহ্বান থাকবে দ্রুত ও সংক্ষেপে নিজেদের অভিযোগ এবং মতামত নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পেশ করে রাখার জন্য, যাতে অভিযোগের স্বপক্ষে বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ পরবর্তী পর্যায়ে পেশ করা যায়। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে সময় খুব স্বল্প।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে এখনি যে দু’টো বিষয় উল্লেখ করে রাখা জরুরী, তা হল:
১) বিজ্ঞপ্তিটিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য সর্বসাধারণকে অত্যন্ত কম সময় দেয়া হয়েছে – মাত্র একদিন। অবস্থাদৃষ্টে, একে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি দায়সারা পদক্ষেপ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। যদিও বিজ্ঞপ্তিটিতে দেয়া তারিখ অনুযায়ী সেটা লেখা হয়েছে ২৩ অক্টোবর, কিন্তু সরকারী লাল ফিতের গোলকধাঁধা পেরিয়ে সেটি ঠিক কবে ইনকিলাব কার্যালয়ে পৌঁছেছে, তা জানার কোন উপায় নেই। আর এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি কিভাবে মাত্র একদিনের সময়সীমা দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব তা আমাদের বোধগম্য নয়, তাও একটি দৈনিকের ভেতরের দিকের পাতায়। এ থেকে পুরো ব্যপারটি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং নিষ্ঠাকে প্রশ্ন করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে বলে মনে করি। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। সময়াভাবে এখনি ঠিক নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব হচ্ছেনা ইনকিলাব ছাড়াও অন্য কোন পত্রিকায় নির্বাচন কমিশনের এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ছাপানো হয়েছে কিনা। যদি ছাপানো হয়ে থাকে, তবে তা প্রকাশের তারিখ এবং স্ক্যান করা কপি যদি পাঠকদের কেউ এখানে মন্তব্যাকারে তুলে দেন, তাহলে সবাই উপকৃত হব।
২) অত্যন্ত স্বল্প নোটিশের বিষয়টি ছাড়াও আরেকটি কারণে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের দক্ষতা এবং প্রফেশনালিজমকে প্রশ্নের সম্মূখীন করে। তা হল – একদিকে সর্বসাধারণকে সময় দেয়া হয়েছে মাত্র একদিন, অন্যদিকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিটিতে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য যোগাযোগের কোন কার্যকর ঠিকানাই উল্লেখ করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে জনৈক সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করতে হবে, যাঁর ঠিকানা হল “মুহম্মদ হুমায়ুন কবির, সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়”। বাংলাদেশের ডাক বিভাগের ‘দক্ষতা’র বিবেচনায় এটি একটি অবান্তর এবং অসম্ভব দাবী, যা দেশের সব প্রান্তের এবং বিদেশে নিবাসী বাংলাদেশীদের কোনভাবেই রক্ষা করা সম্ভব না। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে একটি ফ্যাক্স নাম্বার কিংবা একটি ইমেইল এড্রেস কি দেয়া যেতো না? আর নির্বাচন কমিশনের ঠিকানাটাও একটু বিস্তারিতভাবে লিখলে কি ক্ষতি হোতো?
বিষয়টি বিচারের ভার পাঠকের। সম্ভব হলে আপনারা অভিযোগ পাঠাবেন। আর না হলে অন্তত এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবেন অনুগ্রহ করে, সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকলো।
যুগপৎ প্রকাশ: আমারব্লগ, প্রথম আলো ব্লগ, সচলায়তন

জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক ‘ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম’ (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।
