১৪তম শীতার্ত সহযোগিতা ও প্রচার কার্যক্রম ২০০৯
প্রগতির পরিব্রাজক দল, প্রপদ ‘৯৬ সাল থেকেই দেশের শীতার্ত মানুষের সহযোগিতার লক্ষ্যে শীত বস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও হাতে নিয়েছে ১৪ তম শীতার্ত সহযোগিতা ও প্রচার কার্যক্রম। এ কার্যক্রমে ব্লগমন্ডলের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ২০০৮ সালের শীতার্ত কার্যক্রমের প্রচারপত্র থেকে কিছু অংশ সবার অবগতির জন্য তুলে দেয়া হল।
শীত সংকটের সমাধানে, শীতার্ত মানুষ, জাতি ও জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে আসুন, জনগণের উপর চেপে থাকা শোষণমূলক ব্যবস্থাকে আঘাত করি
বছর বছর কয়েক শত মানুষ মৃত্যুবরণ করছে শীতে। শীত জনগণের জন্য আজও এক জীবন সংহারী সংকট। শীতে বাস্তুহীন-বস্ত্রহীন শীর্ণকায় কোন শিশু কিংবা বৃদ্ধের অসহায় কাঁপন যখন সাধারণের মানবিক অনুভূতিকে নিয়ত নাড়া দিচ্ছে, তখন এদেশের তাঁবেদার শাসক শ্রেণী এই সংকটের প্রতি নির্বিকার। তাদের শোষণ-লুণ্ঠনের “স্বাধীনতা’ ও ‘গণতন্ত্র’র এই দেশে তাদেরই হাতে শোষিত-লুণ্ঠিত-নিপীড়িত জনগণের সংকট ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে।
শীতের এই সংকট শৈত্যের সংকট নয়
বস্ত্র, বাসস্থানের আবিষ্কার ও উন্নয়নের মধ্য দিয়ে সভ্য মানুষ শৈত্যের সমস্যা দূর করেছে বহুকাল আগে। বরফ জমা ঠান্ডা আবহাওয়াতেও মানুষ জীবন-যাপন করেছে। তাহলে কেন এই একবিংশ শতকে সামান্য শীতে কোটি কোটি মানুষ সংকটাপন্ন? কেন তাদের মৃত্যুর সাথে লড়তে হচ্ছে? সরল উত্তর: এদেশের বেশিরভাগ মানুষ ভাত, কাপড়, বাসস্থান, চিকিৎসার মত মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
শীত হতে আত্মরক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকু ভোগ করতে পারছে না জনসাধারণ
সত্য আড়াল করায় যাদের স্বার্থ, তারা বলে “জনসংখ্যা বাড়ছে, দেশ গরিব, সম্পদ নাই। তাই মানুষের অভাব যায় না”। কিন্তু তথ্য কি বলে? তথ্য বলছে, ৩০ বছরে জনসংখ্যা হয়েছে দ্বিগুন অথচ মোট উৎপাদন বেড়েছে ৬০ গুণ। কিন্তু আমাদের প্রতিজনের আয় এই সময়ে ৩০ গুণ বেড়েছে কি? না বাড়েনি। বরং এক হিসাবে জানা যায়, ‘৮৩-‘৯৬ সালের মধ্যে মাত্র আট বছরে সর্বনিম্ন আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় ২৫% কমে গেছে। অন্যদিকে, ‘৭২ সালে যেখানে হাতে গোনা কয়েকজন কোটিপতি ছিল, এখন কয়েক হাজার কোটিপতি সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং, শৈত্য-জনসংখ্যা-গরিবী-সম্পদহীনতা কোনটাই শীত সংকটের উৎস নয়। ‘স্বাধীন’ ও ‘গণতান্ত্রিক’ বাংলাদেশের শোষণ, লুণ্ঠন ও বৈষম্য বৃদ্ধির অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম ফলাফল এই সংকট।
কৃষির ক্ষুদ্রাকার ও পশ্চাদপদ অবস্থা আজও অটুট রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী ও ভারতীয় সার, বীজ, কীটনাশক উচ্চমূল্যে কেনা, সরকারী ক্রয়কেন্দ্র ও ফড়িয়াদের কাছে সস্তায় ফসল বিক্রি, বর্গার ভাগ, এনজিও আর মহাজনী সুদ ইত্যাদি কেবলই নিংড়ে নিচ্ছে কৃষককে। গ্রামীণ অর্থনীতির সবটুকু শুষে নেয়া হচ্ছে, তাতে ফিরে যাচ্ছে না এতটুকুও। তাই গ্রামে সর্বগ্রাসী বেকারত্ব আর অভাব। মানুষ আসছে শহরে।
শহরেও শিল্প নেই, কাজ নেই। বৃটিশ আমল হতে এদেশের শিল্প কারখানা সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই দেশের প্রয়োজনে ব্যাপক শিল্পায়ন আজও করা হচ্ছে না। ভারতীয় পণ্যের বাজার ও সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে শিল্পায়নের চৌহদ্দি নির্ধারিত হচ্ছে। পুরনো ও দেশীয় শিল্প ধ্বংস হচ্ছে। গড়ে উঠছে ইপিজেড, গার্মেন্টস ধরনের শিল্প। শিল্পে কাজ জুটছে কম। এদেশের শ্রমিকদের বিশ্বের সস্তাতম মজুরীতে দেশী-বিদেশী শোষকেরা নিংড়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই দেশী-বিদেশী শাসক-শোষক শ্রেণী দেশের গ্যাস, বন, ব্যাংক, বন্দর, বিদ্যুৎ, শিল্প-কারখানা, বৈদেশিক ঋণ, রাজস্ব সর্বত্র হরিলুট অব্যাহত রেখেছে।
‘স্বাধীন’ ও ‘গণতান্ত্রিক’ বাংলাদেশের শোষণ, লুন্ঠন ও বৈষম্য বৃদ্ধির অর্থনীতি কি উপহার দিচ্ছে?
এদেশের ৫০% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছে। ইউএনডিপি’র এক হিসেবে দারিদ্র্যসীমার নীচের ৪০% মানুষের কোন শীতবস্ত্র নেই, ৩০% মানুষের নেই দুটো জামা। অথচ শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে করা হাজার কোটি টাকার বস্ত্র ও শীত বস্ত্র দেশের প্রধান রফতানী পন্য। এটা হল সাম্রাজ্যবাদের ‘সেবার অর্থনীতি’। দেশের সম্পত্তিবান ও অর্থনীতির মালিক-চালকেরা উৎপাদন করে দেশের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে নয়। বরং সস্তাশ্রমের যোগানদার হয়ে দালালীর টাকায় ধনবান হতে। এটাই এই দালাল শাসক শ্রেণীর ঠিকাদারীর অর্থনীতির চরিত্র।
তথ্য আরও দেখিয়ে দিচ্ছে, দারিদ্র্যসীমার নীচের ৯৬% মানুষের থাকার নিজস্ব ঘর নেই। বিপর্যস্ত গ্রামীণ অর্থনীতি যে কৃষক, মজুরকে উদ্ধাস্তু করছে তারা ভিড় করছে শহরে, ফুটপাতে আর ঘিঞ্জি-নোংরা বস্তিতে। বিপরীতে মডেল টাউন, গার্ডেন সিটি, ন্যাম ফ্ল্যাট, টাওয়ার আর টাওয়ার কি সাক্ষ্য দিচ্ছে? দুর্নীতি-লুট-শোষণ আর দেশবিক্রির কালো টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে জমিতে, দালান নির্মাণে আর ফ্ল্যাট কেনায়। চলছে রমরমা রিয়েল এস্টেট বিজনেস, দালানের জায়গা ছেড়ে দিতে পুড়ছে বস্তি, কেবল তাই নয়, অপুষ্টি ও অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েই শীতার্ত মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। দেশে কেবল শিশুদের ৯২% এবং মোট জনসংখ্যার ৫০% আজ অপুষ্টিতে ভুগছে।
মঙ্গা, খাদ্যাভাব আর জনস্বাস্থ্যের দুরাবস্থার এই দেশে চলছে ব্যয়বহুল প্রাইভেট হাসপাতাল আর ক্লিনিকের প্রসার, টিভি-পত্রিকায় রেসিপির মৌতাত। শীতার্ত শিশুটির গোঙানির শব্দ ছাপিয়ে তালে তালে শীত পোষাকের ফ্যাশন প্যারেড, পত্রিকা জুড়ে রঙ্গিন খবর, রিহ্যাব মেলা, সিনেমা টিভিতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের চাকচিক্য আর শপিংমলের জৌলুস-আজ এসবই হয়ে উঠছে অর্থনীতির প্রকাশ, শাসকশ্রেনীর সংস্কৃতির অঙ্গ।
অন্যদিকে, শীত সংকটের মূলে কি- সেদিকটি উহ্য রেখে, জনগণের দুর্দশা নিয়ে সৌখিন মানবিক বোধের বুদবুদ ছড়ায় শাসক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী, পত্রিকা-মিডিয়া আর এনজিওরা। চেষ্টা চালায় জনগণকে বিভ্রান্ত ও বোকা বানাতে।
কিন্তু প্রকৃত বিশ্লেষণ যে সত্য তুলে ধরছে
সবার জন্য নয়, প্রধানত এ দেশের শ্রমিক-কৃষক-শ্রমজীবী মানুষের উপরই চেপে আছে এ শীত সংকট। দেশী-বিদেশী শাসকশ্রেণীর তীব্র শোষণ-লুণ্ঠনই এ শীত সংকটের মূল কারণ। তাই এ শাসক শ্রেণী জনগণকে এ সংকট হতে মুক্ত করতে পারে না। তাই শীত সংকটের সমাধান চূড়ান্ত অর্থে রাজনৈতিক। কেবল শীত সংকটই নয়, সমগ্র দেশ-জাতি-জনগণের মুক্তির জন্য প্রয়োজন শোষণ-বৈষম্য-লুণ্ঠনের এই ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করা। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করা। নিজস্ব অর্থনীতি ও সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
তাই আসুন, কেবল মানবিক বিচারেই সীমাবদ্ধ না হয়ে, শীত- সংকটের সমাধানসহ সমগ্র জাতি ও জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে বর্তমান শাসক ও তাদের শোষণমূলক ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে, জাতি ও জনগণের স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি-অর্থনীতি-সংস্কৃতি গড়ে তোলার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হই।
* শীতার্ত জনতার জন্য জরুরী সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসুন।
* নিরুদ্বেগ সরকারকে জরুরী ত্রাণ সাহায্য পাঠাতে সোচ্চার হোন।
* শাসক শ্রেণীর বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে সঠিক মত তুলে ধরুন।
প্রপদ
প্রগতির পরিব্রাজক দল (প্রপদ) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ঃ ঢাকসু ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মোবাইলঃ ০১৭১২৬৭০১০৯, ০১৯১৬৩৩৩৭৯৬ স্বাধীনতা ও জনগণের পতাকা হাতে তুলে নাও, উচুতে ওড়াও! চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও! বিপ্লবী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোল। নির্মাণ কর নতুন সংস্কৃতি! ক্ষেতে কলে ক্লাসে কিংবা বাজারে; মুক্তিকামী সন্তানের রক্তধোয়া পবিত্র এ মাটিতে কেমন আছি আমরা? প্রাত্যাহিক ঘটনা-দুর্ঘটনা-প্রবঞ্চনার জের আপনাকে বলতেই হবে, 'ছায়া সমেত তলিয়ে যাচ্ছি'। তাকিয়ে দেখছি, রাষ্ট্রীয় জীবনের হাজারো সংকট আমাদের অন্ধকারের অতলে টেনে নামাচ্ছে। কিন্তু এই সব সর্বব্যাপী সংকটের কোথায় শেকড়; বিষ বৃক্ষের মর্মমূল? "আমাদের চোখ যত খোলে মুঠো তত শক্ত হয়" চিন্তার মরচে ঘষে উত্তর খুঁজি; একটি জাতির স্বাধীনতা যেখানে অধরা, জনগণের গণতন্ত্র যেখানে চির নির্বাসিত; বলুন সেখানে ভিন্ন কোন পরিণতি কি আদৌ সম্ভব! আগেও আমরা পরাধীন ছিলাম। উপনিবেশিক শক্তি ও তাদের তাঁবেদাররা নিয়ন্ত্রণ করেছে আমাদের জাতীয়-রাষ্ট্রীয়-জীবন; আমাদের অর্থনীতি-রাজনীতি-সংস্কৃতি। আমাদের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে ঘটেছে ওদের সমৃদ্ধি। আর আমরা বারবার সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে দাঁড়াতে চেয়েছি। আপনিও জানেন, এ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা আত্মোৎসর্গ করতে দ্বিধা করেনি কখনো! বিদেশী শোষণ-নিয়ন্ত্রণমুক্ত সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণ করব বলে পরাধীন আমরা চেয়েছিলাম জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। চেয়েছিলাম আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি; জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবন নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকার। নিপীড়নকারী পুরনো উপনিবেশিক-সামন্তীয়-আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রটি চুরমান করে নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম একটি স্বাধীন-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জমিন; যেখানে এদেশের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি-মধ্যবিত্ত, ছাত্র, যুব, নারী, জাতিগত-ধর্মীয়-ভাষাগত সংখ্যালঘুরা হবে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মালিক, সর্বময় নীতি নির্ধারক-বাস্তবায়নকারী; যেখানে ঘৃণ্য বিদেশী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের থাকবেনা প্রতিণিধিত্বের কোন অধিকার; যেখানে কেবল সংকট নিরসনই নয়, অসীম সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে খোদ জনগন! অনেক আগুন ও রক্তের বিনিময়ে পূর্ববাংলা হতে উৎখাত হল বৃটিশ এবং পরে পাকিস্তানি উপনিবেশিক দস্যুরা। কিন্তু, আমরা দু'বারই প্রতারিত হলাম। মার্কিনসহ সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ আমাদের স্বাধীনতা হরণ করল; নতুন করে শৃঙ্খলিত হল জাতি। তাদের তাঁবেদার প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী কুক্ষিগত করল ক্ষমতা। শাসকশ্রেণীর একদলীয়, সামরিক, সংসদীয় কত বাহারী 'গণতন্ত্র', এলোগেল, জনগণের গণতন্ত্র রইল শুধু 'মুক্তির মন্ত্র' হয়ে। বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করেছে বারবার। তাই জাতীয় মুক্তি ও গণতন্ত্রের সংগ্রাম শেষ করতে পারিনি। অনেক দাম দিয়ে বুঝেছি,লক্ষ্য যদি সুনির্দিষ্ট না হয়, বন্ধু বেশী-শত্রুর বিভ্রান্তি লক্ষ্যচ্যুত করে সহজে। "এসো নিচু হয়ে ভরি শুকনো বারুদ আশার নতুন খোলে, বীরের হৃদয় যেন লক্ষ্য না ভোলে" এ জাতি ও জনগনের শত শত বছরের স্বপ্নটিকে আমরা পুনর্বার ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে চাই। উচ্চতম কন্ঠে ঘোষণা করতে চাই, "স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই হল সেই যাদুর চাবি যা সংকট ও সম্ভাবনার প্রতিটি দ্বার দেবে একে একে খুলে! নিশানাটা ঠিক কর, গোটা জাতি এক হও, লড়াই কর!" কিন্তু, দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠীর শিক্ষা ব্যবস্থা, দালাল বুদ্ধিজীবী আর গণমাধ্যমগুলো- এ সত্যকে হাজারও উপায়ে আড়াল করে চলেছে। তারা উপনিবেশবাদকে 'উন্নয়ন সহযোগিতা', শাসক শ্রেণীর লুন্ঠনের ভাগাভাগাকিকে 'গণতন্ত্র' আর তা নিয়ে কামড়াকামড়িকে 'গণতন্ত্রের সংকট' বলে চালাচ্ছে। তাদের মিথ্য আশ্বাস, প্রতারণা ও বিভ্রান্তির জাল ছিঁড়ে সত্য উপলব্ধি করা হয়ে পড়েছে দুঃসাধ্য। আমরা দেখছি, শাসকগোষ্ঠীর সংকটের বোঝা জনগণের উপর চাপানো হচ্ছে, জনগণের টুঁটি চেপে ধরে বিদেশীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে দেশ, সাম্রাজ্যবাদের কর্মসূচী বাস্তবায়ন হচ্ছে 'দুর্নীতিমুক্ত', 'সুশাসন' ও 'দক্ষতা'র সাথে। সংকটের সুযোগ নিচ্ছে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি। অন্যদিকে,খাদের কিনারা থেকে ঘুড়র দাঁড়াচ্ছে মানুষ। খালিশপুরে, গার্মেন্টস আন্দোলনে, কানসাট ও ফুলবাড়িতে মানুষ অস্তিত্বের সংগ্রামে জীবন বিলিয়ে দিতে কার্পণ্য করছেনা। অথচ, সংগ্রামগুলো মাঝপথে দিকভ্রান্ত; স্বতঃষ্ফুর্ত-অস্থায়ী; বেড়ে ওঠার পথ পাচ্ছে না, আসছে না কাঙ্খিত ফল। জনগন আজ অসংগঠিত, দিশাহীন। "চষা মাটির মতো এবড়ো থেবড়ো সময়; চলতে কষ্ট হলেও জানি, তার গর্ভে ছড়ানো আছে বীজ" এই দুঃসময়ে আমরা চাইছ, জনগণের প্রতিটি সমস্যার ব্যবচ্ছেদ করে প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে। জনগণের সামনে আশু ও চূড়ান্ত বাধাটি কী, তা তুলে ধরতে। চাইছি, সেই বাধা উপড়ে ফেলার জন্য জনগণকে সংগঠিতক হতে ও সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জোগাতে, যেন তারা সংগ্রামের দিশা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিশানায় চির অবিচল থাকে। আজ বিরাট সংখ্যক তরুন ছাত্র-সংস্কৃতিকর্মীরা তাদের সৃজনশীল কর্মোদ্যমকে জাতি ও জনগণের সেবায় নিয়োগ করতে উদগ্রীব। তাই এখনই উৎকৃষ্ট সময়, এদেশ ও জাতির পুত্র-কন্যাদের বিপুল সৃজনশীল শক্তির স্ফুরণ ঘটিয়ে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি-মধ্যব্তি জনগণের অপরাজেয় শক্তিকে জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক অবিচল সংগ্রামে জাগরিত, সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করার, যাতে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। "সাহসে বুক বেঁধে এখন আমাদের লড়াই, চাই সচেতন সংগঠিত নিপুন আন্দোলন" প্রপদ সমাজের আমূল রূপান্তরের লক্ষ্যে জাতি ও জনগণের চেতনার রূপান্তরে প্রয়াসী। চেতনার জগত আমাদের লড়াইয়ের মাঠ। সংগ্রামী বৃদ্ধিবৃত্তিক ও শিল্প সংস্কৃতির অনুশীলন আমাদের লড়াইয়ের ধরন। আলোচনা, প্রকাশনা, গান, নাটক, প্রতিরোধ, সহযোগিতা ইত্যাদি সবকিছুই আমাদের যুদ্ধ জয়ের হাতিয়ার। উক্ত লক্ষ্য ব্যপক গণভিত্তিক আন্দোলন পরিচালনার দাবী করে। স্বল্প সংখ্যক বুদ্ধিজীবীর আলোচনার টেবিলে তা সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। তাই আমরা প্রপদকে দেশব্যাপী বিস্তৃত একটি গণ সংগঠনে রূপান্তরে প্রয়োজন অনুভব করছি। এ উদ্দেশ্যে, আমরা এক বছরের একটি সাংগঠনিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আগামী জুলাই মাসে গঠন করা হবে একটি জাতীয় সাংগঠনিক কমিটি। তা পরবর্তী নয় মাসের মধ্যে বৃহত্তর বাইশটি জেলায় জেলা কমিটি গঠন করবে। তারপর সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। প্রিয় শুভাকাঙ্খী, এ আন্দোলনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে আমরা দু'হাত প্রসারিত করছি আপনাদের দিকে। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমরা এক পা-ও এগুতে পারব না। এই মুহুর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আপনার সহযোগিতা।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২ comments
রায়হান রশিদ - ৩ নভেম্বর ২০০৯ (১:২৮ অপরাহ্ণ)
এই শতাব্দীতেও কাউকে না কাউকে এই বিষয় নিয়ে কাজ করে যেতে হচ্ছে, সেটাই আমাদের লজ্জা!
প্রপদ-কে ধন্যবাদ অত্যন্ত জরুরী এই বিষয়টিতে এত বছর পরও অব্যাহতভাবে সক্রিয় থাকার জন্য; সেইসাথে মুক্তাঙ্গনের সবার পক্ষ থেকে স্বাগতম। এই পোস্ট, এর বক্তব্য এবং সর্বোপরি এই উদ্যোগটির কথা আমাদের সর্বশক্তিতে প্রচার করা উচিত নিজেদের প্রতিটি পরিচিত মন্ডলে। এই বার্তা যত দূর, যত উঁচু এবং যত নীচুতে ছড়ানো যায় ততো ভাল। শীত তো এসেই গেল প্রায়। একজন মানুষের সচেতন হয়ে ওঠাও যদি একটি প্রাণ বাঁচাতে পারে, এক জনের শীতের কষ্ট লাঘব করতে পারে, তাও কি খুব কম? তাতে সব কিছু সমাধান হবে না, সেটা আমরা সবাই জানি এবং বুঝি। কিন্তু কাজে নেমে পড়াটা জরুরী; কারণ এবারই শেষ শীত নয়! আমরা নিজেরা যারা কিছুই করতে পারছি না বা করছি না এই বিষয়ে, তারা অন্তত পাশে এসে দাঁড়াতে পারি প্রপদ-এর মতো উদ্যোগীদের, যারা কিছু অন্তত করবার চেষ্টা করছে। আশা করছি সবার আন্তরিক এবং সক্রিয় সহযোগিতা থাকবে এই উদ্যোগে।
গৌতম - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (৯:৪০ অপরাহ্ণ)
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে প্রথমদিকে প্রপদের কাজ খুব পছন্দ করতাম। প্রপদের কয়েকজনের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগও ছিলো। আস্তে আস্তে একটা প্রশ্ন ঢুকে গেলো মাথায়— সারাজীবন কি এভাবেই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজ করে যাবে কিছু মানুষ? এই দানখয়রাতের কাজটি কি আদৌ অভাবী মানুষের কোনো উপকার করছে? মানুষের কি আসলেই এরকম অর্থ-বস্ত্র-সাহায্য দরকার, নাকি বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঘুরে দাড়ানোর মতো কিছু উপাদান, কিছু স্বপ্ন দরকার? এই কাজগুলো কি সমাজবিপ্লবের কন্ডিশনগুলোকে পিছিয়ে দেয় না? দু’একজনের সাথে এ নিয়ে কথাও বলেছিলাম— যে উত্তর শুনেছিলাম তাতে তখন সন্তুষ্ট হই নি।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে কোনো এক প্রচণ্ড শীতের সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া বাজারে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করলাম, মানুষের তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে না পারলে বিপ্লবের আগেই ধ্বংস হয়ে যেতে হবে এই অভাবী মানুষদের।
এই একুশ শতকেও যে এই কাজগুলো করতে হচ্ছে, এই লজ্জ্বা সব মানুষের।
নিজের কিছু আর সংগ্রহের কিছু কাপড় পাঠিয়ে দিবো ডাকসুর নিচের ছোট্ট ঘরটিতে।